Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

সুরা ফাতিহা না পড়লে সলাত হয় না, তাহলে রুকু পেলে রাকআত হবে কি


 প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
আমি আজ যোহরের নামায পড়তে যখন মসজিদে যাই তখন দেখি ইমাম সাহেব সিজদায় চলে গেছে। আমি তখন রুকু না করে ইমাম সাহেবের সাথে ‍ সিজদায় শরীক হয়ে যাই।
এখন আমার জানার বিষয় হলো যে, আমি যে রাকাতের রুকু পাই নাই আমার কি সে রাকাত আবার পড়তে হবে?
         উত্তরঃ
ওয়ালাকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

হাদীস এবং ফিকাহ ফাতওয়ার কিতাব থেকে জানা যায় য়ে, কোন ব্যক্তি যদি ইমাম সাহেবের সাথে রুকু পায় তাহলে তার সে রাকার হিসাবে গণ্য করা হবে। আর যদি রুকু না পায় সিজদাতে গিয়ে ইমাম সাহেবকে পায় তাহলে তার সে রাকাত হিসাবে গণ্য করা হবে না। তাকে আবার সে রাকাত পূনরায় পড়ে দিতে হবে।
হাদীসে আছে রাসূল সাঃ বলেন।
حدثنا محمد بن يحيى بن فارس أن سعيد بن الحكم حدثهم أخبرنا نافع بن يزيد حدثني يحيى بن أبي سليمان عن زيد بن أبي العتاب وابن المقبري عن أبي هريرة قال
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ” إذا جئتم إلى الصلاة ونحن سجود فاسجدوا ولا تعدوها شيئا ومن أدرك الركعة فقد أدرك الصلاة
অর্থ, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেন যখন তোমরা নামাযে আসবে আর আমরা সিজদায় থাকি (ইমামরা সিজদায় থাকে) তখন তোমরা সিজদা করবে। তবে এ সিজদাকে রাকাত হিসাবে গণ্য করবে না। আর যে ব্যক্তি রুকু পেলো সে রাকাত পেলো।
(সুনানে আবু দাউদঃ ১/২৯৮ হাদীস নং ৪৯৩, সুনানে কুবরা লিল বাইহাকীঃ ২/৮৯ হাদীস নং ২৪০৭, সুনানে দারা কুতনীঃ ১/ ৩৬৫)

এছাড়াও হাদীসটি অসংখ্য হাদীসের কিতাবে আছে। আর হাদীসের মান হলো হাসান। অর্থাৎ আমলযোগ্য।
উল্লিখিত হাদীস থেকে প্রমানীত হয় যে, যে ব্যক্তি শুধু সিজদা পেলো রুকু পেলো না তার সে রাকাতটি রাকাত হিসাবে গন্য করা হবে না।

বুখারী শরীফের হাদীসে আছে,

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ عَنْ الْأَعْلَمِ وَهُوَ زِيَادٌ عَنْ الْحَسَنِ عَنْ أَبِي بَكْرَةَ أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ رَاكِعٌ فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَصِلَ إِلَى الصَّفِّ فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ
অর্থ, হযরত আবু বকরা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল সাঃ রুকুতে থাকা অবস্থায় মসজিদে এসে পোঁচলেন। এবং কাতারে যাওয়ার পূর্বেই তিনি রুকুতে চলে গেলেন। পরে তিনি যখন রাসূল সাঃ কে এই বিষয়ে বললেন তখন রাসূল সাঃ বললেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিক। তবে এমনটি আর করো না। অর্থাৎ কাতারে আসার আগে রুকুতে চলে যেওনা।
(ছহীহুল বুখারীঃ ১/১৫৬ হাদীস নং ৭৮৩, মসনদে আহমদ; ইবনে হাম্বলঃ ৩৪/ ১১০ হাদীস নং ২০৪৫৮, সুনানে বাইহাকী কুবরাঃ ৩/১০৬ হাদীস নং ৪৯৯৮)

হাদীসটির মান নিয়ে আলোচনা করার দরকার নাই। কারন হাদীসটি বুখারী শরীফের হাদীস। যা ছহীহ হওয়ার মধ্যে কারো মতানক্য নাই।

এ হাদীস থেকেও বুঝা গেলো যে রুকু পেলো সে রাকাত পেলো। কারন, রুকু পেলে যদি রাকাত না পাওয়া যেত তাহলে রাসূল সাঃ আবু বকরা রাঃ কে আবার সে রাকাত পড়ে নিতে বলতেন। অথচ রাসূল সাঃ এমন কথা বলেছেন কোন প্রমাণ নাই।
সুতরাং আপনি যখন রুকু পেলেন না তাই আপনার রাকাতটা গণ্য করা হবে না। আপনাকে রাকাতটি আবার পুনরায় পড়ে দেয়া লাগবে। ...................

QA.. যে ব্যক্তি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেল এবং রুকুতেই ইমামের সাথে শরীক হলো, তার এ রাকাত গণ্য হবে কী না, আপনাদের মতামত জানতে চাই?.....................
উত্তর: আহলে ইলমগণ এ মাসআলায় দ্বিমত পোষণ করেছেন:
প্রথম মত হচ্ছে: এ রাকাত গণ্য হবে না। কারণ, সূরা আল-ফাতিহা পড়া ফরয ছিল যা সে পড়তে পারে নি। এ অভিমত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। ইমাম বুখারী নিজের লিখা ‘জুযউল কিরাআহ’ গ্রন্থে এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এটাকে তিনি তাদের প্রত্যেকের অভিমত হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যারা বলেন মুক্তাদির জন্য সূরা আল-ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। আউনুল মা‘বুদ গ্রন্থেও এরূপ এসেছে। ইবন খুযাইমাহ ও একদল শাফে‘ঈ আলেম থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত আছে। শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’ গ্রন্থে এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তার সপক্ষে বিস্তর আলোচনা করেছেন।

দ্বিতীয় মত হচ্ছে: এ রাকাত গণ্য করা হবে। হাফেয ইবন আব্দুল বার এ অভিমত আলী, ইবন মাসউদ, যায়েদ ইবন সাবেত ও ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখদের থেকে বর্ণনা করেছেন। জমহুর ইমামদের থেকেও তিনি উক্ত অভিমত বর্ণনা করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন: চার ইমাম, আওযা‘ঈ, সাওরী, ইসহাক ও আবু সাওর। একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকায় শাওকানী এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন, আওনুল মা‘বুদের গ্রন্থকার স্বয়ং লিখকের বরাতে উক্ত পুস্তিকা সম্পর্কে বলেছেন। এ অভিমত আমার নিকট অধিক বিশুদ্ধ। সাহাবী আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস তার দলীল। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রাকাত কাযা করার নির্দেশ দেন নি, (অথচ তিনি রুকু অবস্থায় জমাতে শরীক হয়েছেন, যে জামা‘আতের ইমাম ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।) যদি তার ওপর রাকাত কাযা করা ওয়াজিব হত তাহলে অবশ্যই তিনি তার নির্দেশ করতেন। কারণ, প্রয়োজনের মুহূর্ত থেকে নির্দেশ বিলম্ব করা বৈধ নয়, আর হাদীসে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (زادك الله حرصاً ولا تعد) (আল্লাহ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিন, কিন্তু পুনরায় এরূপ করো না [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৩]) এর অর্থ হচ্ছে ‘কাতারে অংশ গ্রহণ না করে দ্বিতীয়বার এরূপ করে সালাতে প্রবেশ করো না’। কারণ, মুসলিমের প্রতি নির্দেশ হচ্ছে ইমামকে যে হালতে পাবে সে হালতেই সালাতে অংশ গ্রহণ করবে। জমহুর আলেমদের আরো দলীল হচ্ছে আবু দাউদ, ইবন খুযাইমাহ, দারাকুতনী ও বায়হাকী কর্তৃক বর্ণিত 
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মারফু‘ হাদীস:
»إذا جئتم إلى الصلاة ونحن سجود فاسجدوا ولا تعدوها شيئاً ومن أدرك الركعة فقد أدرك الصلاة«
“যখন তোমরা সালাতের জন্য আস এবং আমরা সাজদাহয় থাকি, তোমরা সাজদাহ কর, তবে সেটাকে কিছু গণ্য কর না। আর যে ব্যক্তি রাকাত পেল সে সালাত পেল”।[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৯৩] হাদীসটি ইবন খুযাইমাহ, দারাকুতনী ও বায়হাকীর বর্ণনায় এসেছে এভাবে:
»ومن أدرك ركعة من الصلاة فقد أدركها قبل أن يقيم الإمام صلبه«
“আর যে ইমামের পিঠ সোজা করার পূর্বে সালাতের রাকাত (রুকু) পেল সে তা (রাকাত) পেয়ে গেল”। [ইবন খুযাইমাহ: (খ. ৩), হাদীস নং ১৫৯৫]
এ হাদীস জমহুর আলেমদের স্পষ্ট দলীল। তা কয়েকটি কারণে:
এক. ‘সাজদাহ অবস্থায় অংশ গ্রহণ করো’ (ولا تعدوها شيئاً) এবং তা রাকাত হিসেবে গণ্য করো না। এ থেকে স্পষ্ট হয়, যে ব্যক্তি রুকু পেল সে রুকুকে রাকাত হিসেবে গণ্য করবে।
দুই. সাজদাহর সাথে রাকাত শব্দ উল্লেখ হলে তার অর্থ হয় রুকু। এরূপ অর্থ একাধিক হাদীসে এসেছে। তন্মধ্যে বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসটি হচ্ছে:
»رمقت الصلاة مع محمد صلى الله عليه وسلم، فوجدت قيامه فركعته فاعتداله بعد ركوعه فسجدته… «
“আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত পর্যবেক্ষণ করেছি, তাই আমি দেখতে পেয়েছি তার কিয়াম, অতঃপর তার রাকাত (রুকু) অতঃপর রুকুর পর তার স্থির দাঁড়ানো অতঃপর তার সাজদাহ… ”।[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭১]
অনুরূপ কুসুফের সালাত সম্পর্কিত একাধিক হাদীস ও তার ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট হয়, যা সাহাবীগণ করেছেন। সেখানেও ‘রাকাত’ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ রুকু, যেমন তারা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুসুফের সালাত চার রাকাত (রুকু) ও চার সাজদাহয় পড়েছেন। এখানে চার ‘রাকাত’ অর্থ চার রুকু।

তিন. ইবন খুযাইমাহ, দারাকুতনী ও বায়হাকীর বর্ণনা মোতাবেক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: (قبل أن يقيم صلبه) স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি ‘রাকাত’ দ্বারা রুকু বুঝিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর এ হাদীস দু’টি সনদে এসেছে, একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। হাদীস শাস্ত্রের স্বীকৃত নীতি অনুসারে এ জাতীয় দু’টি হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যায়। অধিকন্তু এখানে উল্লেখ করা সাহাবীগণের আমল দ্বারাও হাদীসের অর্থ শক্তিশালী হয়। এতদসংক্রান্ত আলোচনা শেষে ইমাম নাওয়াবী ‘শারহুল মুহাযযাব’ (খ. ৪, পৃ. ২১৫) গ্রন্থে বলেন: “আমরা যে রাকাত পাওয়ার অর্থ রুকু পাওয়া করেছি এটাই ঠিক, ইমাম শাফে‘ঈ তা স্পষ্ট বলেছেন। এ কথাই বলেছেন অধিকাংশ বন্ধু ও আহলে ইলমগণ। এ অর্থের ওপর একাধিক হাদীস ও মনীষীদের ঐকমত্য রয়েছে। এ মাসআলায় একটি দুর্বল মত রয়েছে যে, (রুকু পেলে) রাকাত পাবে না। মতটি উদ্ধৃত করেছেন ‘তাতিম্মাহ’ গ্রন্থের লিখক মুহাম্মাদ ইবন খুযাইমার বরাত দিয়ে, যিনি আমাদের ফকীহ মুহাদ্দিসদের অন্যতম। রাফে‘ঈ উক্ত মত ‘তাতিম্মাহ’ গ্রন্থ ও আবু বকর সিগি থেকে বর্ণনা করেছেন। ‘তাতিম্মাহ’ গ্রন্থের লিখক বলেন, এ মত বিশুদ্ধ নয়। কারণ, সমসাময়িক সবাই একমত যে, রুকু পেলে রাকাত পাবে। অতএব, তাদের পরবর্তী কারো ইখতিলাফ গ্রহণযোগ্য নয়”। ইমাম নাওয়াবীর কথা শেষ হল। হাফিয ইবন হাজার রহ. ‘তালখিসুল হাবির’ গ্রন্থে ইবন খুযাইমাহ থেকে যা বর্ণনা করেছেন, তার দ্বারা প্রমাণ হয় ইবন খুযাইমাহও জমহুরের সাথে আছেন, আর তা হলো রুকু পেলে রাকাত পাবে। আল্লাহ ভালো জানেন।

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায (রহঃ)

রুকূ পেলে রাকআত গণ্য :

ইমামের সাথে রুকূ পেলে রাকআত গণ্য হবে কি না সে বিষয়টি বিতর্কিত। বর্তমান বিশ্বের সত্যানুসন্ধানী উলামাগণের সুচিন্তিত মতানুসারে রুকু পেলে রাকআত গণ্য হবে।

এ ব্যাপারে যে সকল স্পষ্ট হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাতে কিছু কিছু দুর্বলতা থাকলেও এক জামাআত সাহাবার আমল এ কথার সমর্থন করে।

এ ব্যাপারে ইবনে মাসঊদ, ইবনে উমার, যায়দ বিন সাবেত, আব্দুল্লাহ বিন আম্‌র প্রভৃতি কর্তৃক রুকূ পেলে রাকআত গণ্য হওয়ার কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। পক্ষান্তরে আবূ বাকরার সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকলেও অনেকে হাদীসটিকে রুকূ পেলে রাকআত গণ্য হওয়ার দলীল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। আবূ বাকরাহ্‌ একদা মসজিদ প্রবেশ করতেই দেখলেন নবী (সাঃ) রুকূতে চলে গেছেন। তিনি তাড়াহুড়ো করে কাতারে শামিল হওয়ার আগেই রুকূ করলেন। অতঃপর রুকূর অবস্থায় চলতে চলতে কাতারে গিয়ে শামিল হলেন। একথা নবী (সাঃ)-কে বলা হলে তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, “আল্লাহ তোমার আগ্রহ্‌ আরো বৃদ্ধি করুন। আর তুমি দ্বিতীয় বার এমনটি করো না। (অথবা আর তুমি ছুটে এসো না। অথবা তুমি নামায ফিরিয়ে পড়ো না।)” (বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১১১০নং)

উক্ত হাদীসে রুকূ পেলে রাকআত পেয়ে নেওয়ার কথা ইঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আর একটি সুন্নতের কথা বর্ণিত হয়েছে যে, যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করে ইমামকে রুকূর অবস্থায় দেখে তাহলে কাতারে শামিল হওয়ার আগেই তার জন্য রুকূ করা সুন্নত। তাতে যদি সে ইমামের মাথা তোলার পর কাতারে শামিল হয় তাহলেও তার ঐ রাকআত গণ্য হয়ে যাবে। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৮৬পৃ:)

ইবনুয যুবাইর (রাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করে দেখে যে (জামাআতের) লোকেরা রুকূর অবস্থায় আছে, তাহলে সে যেন প্রবেশ করেই রুকূ করে। অতঃপর রুকূর অবস্থায় চলতে চলতে কাতারে শামিল হয়। কারণ, এটাই হল সুন্নাহ্‌।” (ত্বাবরানী, আওসাত্ব, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ১৫৭১,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২১৪, বায়হাকী ৩/১০৬, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২২৯নং, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২/২৬০-২৬৫)

মোট কথা, কেউ যদি ইমামকে রুকূর অবস্থায় পেয়ে তাঁর সাথে রুকূর (কমপক্ষে একবার) তাসবীহ পড়তে সক্ষম হয়, তাহলে তার সে রাকআত গণ্য হয়ে যাবে। কিয়াম ও সূরা ফাতিহা না পেলেও রাকআত হয়ে যাবে। সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না। কিন্তু কিয়াম অবস্থায় পড়ার সুযোগ না পেয়ে ইমামের সাথে রুকূতে চলে গেলে মুক্তাদীর হ্‌ক্কে তা মার্জনীয়। কারণ, সাধারণ দলীল থেকে এ ব্যাপারটাও ব্যতিক্রম। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৪৪) পরন্তু ইচ্ছা করে যদি কেউ কিয়ামে শামিল না হয়ে (লম্বা তারাবীহ্‌র) রুকূতে শামিল হয়, তাহলে তার ঐ রাকআত হবে না। কারণ সে ইচ্ছাকৃত নামাযের একটি রুক্‌ন কিয়াম ও সূরা ফাতিহা ত্যাগ করে।

সতর্কতার বিষয় যে, ইমাম রুকূ অবস্থায় থাকলে মসজিদে প্রবেশ করে অনেক মুক্তাদী তাকে রুকূ পাইয়ে দেওয়ার আশায় গলা ঝাড়া দিয়ে ইমামকে সতর্ক করে। এমন করা বৈধ নয়।

ইমাম কওমার অবস্থায় থাকলে যথানিয়মে দাঁড়িয়ে দুইহাত তুলে তাকবীরে তাহ্‌রীমা দেওয়ার পর কওমার দুআ পাঠ করবে। এ ক্ষেত্রে আর রাকআত গণ্য হবে না।

ইমাম সিজদায় চলে গেলে যথানিয়মে দাঁড়িয়ে দুইহাত তুলে তাকবীরে তাহ্‌রীমা দেওয়ার পর (বুকেহাত না বেঁধে) আবার তকবীর বলে সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করবে। আর এ ক্ষেত্রেও রাকআত গণ্য হবে না এবং ইমামের দ্বিতীয় রাকআতে কিয়ামে দাঁড়ানোর সময় ইস্তিফতাহও পড়বে না। বরং ‘আঊযু বিল্লাহ্‌-বিসমিল্লাহ্‌’ পড়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “আমরা সিজদারত থাকা অবস্থায় তোমরা নামাযে এলে তোমরাও সিজদা কর এবং সেটাকে কিছুও গণ্য করো না।” (বুখারী ৫৫৬, মুসলিম, সহীহ ৬০৭-৬০৮, আবূদাঊদ, সুনান ৮৯৩নং)

ইমাম দুই সিজদার মাঝের বৈঠকে থাকলে মুক্তাদী যথানিয়মে দাঁড়িয়ে দুইহাত তুলে তাকবীরে তাহ্‌রীমা দেওয়ার পর পুনরায় তকবীর দিয়ে (বুকেহাত না বেঁধে) সরাসরি ইমামের মত বসে যাবে এবং ঐ বৈঠকের দুআ পাঠ করবে।

ইমাম শেষ সিজদায় থাকলেও তাঁর জন্য উঠে দাঁড়ানোর অপেক্ষা বৈধ নয়। বরং যথানিয়মে সিজদায় যেতে হবে এবং যথানিয়মে ইমামের সাথে উঠে দাঁড়িয়ে ‘আঊযু বিল্লাহ্‌-বিসমিল্লাহ্‌’ পড়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

এখানে দাঁড়িয়ে থেকে একটা সিজদা খামাখা নষ্ট করা উচিৎ নয়। কারণ, মহানবী (সাঃ) বলেন, “তুমি আল্লাহর জন্য অধিকাধিক সিজদা করাকে অভ্যাস বানিয়ে নাও; কারণ যখনই তুমি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে তখনই আল্লাহ তার বিনিময়ে তোমাকে এক মর্যাদায় উন্নীত করবেন এবং তার দরুন একটি গুনাহ মোচন করবেন।” (মুসলিম, সহীহ ৪৮৮নং তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান)

আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক বান্দাই, যখন সে আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করে তখনই তার বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য একটি সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন, তার একটি গুনাহ ক্ষালন করে দেন এবং তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন। অতএব তোমরা বেশী বেশী করে সিজদা কর।” (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, সহিহ তারগিব ৩৭৯নং)

বলাই বাহুল্য যে, ইমামের রুকূ থেকে মাথা তোলার পর রাকআতের কোন অংশে শামিল হলে ঐ রাকআত গণ্য হবে না। ইমাম সালাম ফিরে দিলে ঐ নামাযী সালাম না ফিরে তকবীর দিয়ে উঠে ছুটে যাওয়া ঐ রাকআত একাকী যথানিয়মে পূরণ করে সালাম ফিরবে।

অনুরুপ দ্বিতীয় রাকআতে শামিল হলে অনুরুপভাবে রাকআত গণ্য ও অগণ্য হবে।

ইমাম তাশাহ্‌হুদে থাকলে মুক্তাদী যথানিয়মে দাঁড়িয়ে দুইহাত তুলে তাকবীরে তাহ্‌রীমা দেওয়ার পর পুনরায় তকবীর দিয়ে (বুকে হাত না বেঁধে) সরাসরি ইমামের মত বসে যাবে এবং ঐ তাশাহহুদের দুআ পাঠ করবে। এর ফলে কোন কোন ৪ রাকআত বিশিষ্ট নামাযে ৩ বার, ৩ রাকআত বিশিষ্ট নামাযে ৩ থেকে ৪ বার এবং ২ রাকআত বিশিষ্ট নামাযে ২ বার তাশাহহুদ হয়ে যেতে পারে।

যেমন যোহ্‌র, আসর বা এশার নামাযের প্রথম তাশাহ্‌হুদে জামাআতে শামিল হলে মুক্তাদী ইমামের সাথে ২ রাকআত নামায পড়ে শেষ তাশাহহুদ পড়বে। আর তার হবে প্রথম তাশাহহুদ। তারপর ইমামের সালাম ফিরার পর তকবীর দিয়ে উঠে বাকী ২ রাকআত নামায পড়ে শেষ তাশাহহুদ পাঠ করবে। এইভাবে মুক্তাদীর হয়ে যাবে ৩ তাশাহহুদ।

অনুরুপভাবে দ্বিতীয় রাকআতে বা শেষ তাশাহ্‌হুদে শামিল হলে ইমামের সালাম ফিরার পর উঠে বাকী নামায আদায় করলেও যথানিয়মে তার ৩টি তাশাহহুদ হবে।

মাগরেবের নামাযের দ্বিতীয় রাকআতে রুকূর পর বা প্রথম তাশাহ্‌হুদে জামাআতে শামিল হলে ইমামের সাথে শেষের রাকআত পড়ে শেষ তাশাহহুদ পড়বে। তারপর ইমামের সালাম ফিরার পর তকবীর দিয়ে উঠে বাকী ২ রাকআত নামায পড়তে প্রথম যে রাকআত সে একাকী পড়বে সেটি তার দ্বিতীয় রাকআত। ফলে সে তার হিসাবে সে প্রথম তাশাহহুদ পড়বে। তারপর উঠে তৃতীয় রাকআত পড়ে শেষ তাশাহহুদ পাঠ করবে। এইভাবে ঐ মুক্তাদীর হয়ে যাবে ৩ রাকআতে ৪টি তাশাহহুদ।

কিন্তু এই নামাযের দ্বিতীয় রাকআতে রুকূর আগে বা রুকূতে শামিল হলে প্রত্যেক রাকআতে ১টি করে মোট ৩টি তাশাহহুদ হয়ে যাবে। যেমন শেষ তাশাহ্‌হুদে শামিল হলেও যথানিয়মে ৩টি তাশাহহুদ হবে।

ফজরের নামাযে দ্বিতীয় রাকআতে অথবা তাশাহ্‌হুদে শামিল হলে ২ রাকআত নামাযে ২টি তাশাহহুদ হয়ে যাবে।

অবশ্য তাশাহহুদ বেশী হওয়ার জন্য কোন সহু সিজদা লাগবে না।

প্রকাশ থাকে যে, মুক্তাদী ইমামের সালাম ফিরার পর উঠে একাকী যে নামায পড়বে সেগুলো তার শেষ রাকআত। অতএব শেষ রাকআত গুলো সে একাকী যে নিয়মে পড়ে ঠিক সেই নিয়মে আদায় করবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৭/৬৬, ১৮/১০৭, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩০৮) জেহরী নামায হলে জেহরী ক্বিরাআতে যদি পাশের নামাযীর ডিষ্টার্ব না হয়, তাহলে জেহরী, নচেৎ সির্রী ক্বিরাআত করে নামায শেষ করবে। যেহেতু একাকী নামাযে জোরে জোরে ক্বিরাআত বাধ্যতামূলক নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৪০)

ইমাম সালাম ফিরে দিলে আর জামাআতে শামিল না হয়ে অন্য নামাযী থাকলে তাকে নিয়ে দ্বিতীয় জামাআত করে নামায পড়বে।
ইমাম প্রথম সালাম ফিরে শেষ করলেই মসবূক নিজের বাকী নামায পড়ার জন্য উঠতে পারে। কারণ, এক সালামেও নামায হয়ে যায়। তবে সতর্কতার বিষয় যে, তাঁর সালাম শুরু করার সাথে সাথে উঠবে না। পক্ষান্তরে অনেকে বলেছেন, ইমাম যতক্ষণ দ্বিতীয় সালাম থেকে ফারেগ না হয়েছেন, ততক্ষণ উঠা বৈধ নয়। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন, কোন মসবূক যেন ইমামের উভয় সালাম ফিরে শেষ না করা পর্যন্ত তার বাকী নামায আদায় করতে না উঠে। (মুখতাসারু মুখালাফাতু ত্বাহারাতি অসস্বালাহ, আব্দুল আযীয সাদহান ৪১পৃ:) মহানবী (সাঃ) বলেন, “হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। অতএব আমার আগে তোমরা রুকূ করো না, সিজদা করো না, বসো না এবং সালাম ফিরো না।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সহীহ)
অনেকে বলেছেন, ইমামের দুই সালাম ফিরার আগে উঠে গেলে মসবূকের নামায বাতিল হয়ে যাবে। (ফাতাওয়াশ শায়খ ইবনি সা’দী ১৭৪পৃ:, মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ৯৬-৯৭পৃ:) অতএব নামাযী সাবধান!

নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন sahih-akida.simplesite.com jannaterpoth.wildapricot.org