সালাত
বিষয়ে জ্ঞাতব্য গুলি ১ থেকে ৩১ পর্যন্তঃ-
১. ছালাতের সংজ্ঞা ( معنى الصلاة) :
২. ছালাতের ফরযিয়াত ও রাক‘আত সংখ্যা (فى فرضية الصلوة وعدد ركعاتها) :
৩. ছালাতের গুরুত্ব ( أهمية الصلاة) :
৪. ছালাত তরককারীর হুকুম ( حكم تارك الصلاة) :
৫. ছালাতের ফযীলত সমূহ ( فضائل الصلاة) :
6.মসজিদে ছালাতের ফযীলত :-- 25. জামা‘আত ও কাতার (الجماعة والصف)
7.মসজিদ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য :
8. ছালাতের শর্তাবলী (شروط الصلاة)
9. ছালাতের রুকন সমূহ ( أركان الصلاة)
10. ছালাতের ওয়াজিব সমূহ ( واجبات الصلاة)
11. ছালাতের সুন্নাত সমূহ ( سنن الصلاة)
১2. ছালাত বিনষ্টের কারণ সমূহ ( مفسدات الصلاة)
১3. ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ ( مواقيت الصلاة)
14.ছালাতের নিষিদ্ধ সময় :
15. পরিবহনে ছালাত (الصلاة فى المركب)
16. রোগীর ছালাত (صلاة المريض)
17. সুতরার বিবরণ (السترة)
18. যাদের ইমামতি সিদ্ধ (من تصح إمامتهم)
19. ফাসিক ও বিদ‘আতীর ইমামত (إمامة الفاسق والمبتدع)
20. মহিলাদের ছালাত ও ইমামত (صلاة النساء وإمامتهن)
21. অন্ধ, গোলাম ও বালকদের ইমামত (إمامة الأعمى والمملوك والصبى)
22. ইমামতের হকদার (الأحق بالإمامة)
23. ইমামের অনুসরণ (متابعة الإمام)
24. মুসাফিরের ইমামত (إمامة المسافر)
25. জামা‘আত ও কাতার (الجماعة والصف)
26. আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করা (عقد التسابيح بالأنامل)
27. আয়াত সমূহের জওয়াব (إجابة آيات القرآن)
28. সিজদায়ে সহো (سجود السهو)
29. সিজদায়ে তেলাওয়াত (سجدة الةلاوة)
30. সিজদায়ে শোকর (سجدة الشكر)
২. ছালাতের ফরযিয়াত ও রাক‘আত সংখ্যা (فى فرضية الصلوة وعدد ركعاتها) :
৩. ছালাতের গুরুত্ব ( أهمية الصلاة) :
৪. ছালাত তরককারীর হুকুম ( حكم تارك الصلاة) :
৫. ছালাতের ফযীলত সমূহ ( فضائل الصلاة) :
6.মসজিদে ছালাতের ফযীলত :-- 25. জামা‘আত ও কাতার (الجماعة والصف)
7.মসজিদ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য :
8. ছালাতের শর্তাবলী (شروط الصلاة)
9. ছালাতের রুকন সমূহ ( أركان الصلاة)
10. ছালাতের ওয়াজিব সমূহ ( واجبات الصلاة)
11. ছালাতের সুন্নাত সমূহ ( سنن الصلاة)
১2. ছালাত বিনষ্টের কারণ সমূহ ( مفسدات الصلاة)
১3. ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ ( مواقيت الصلاة)
14.ছালাতের নিষিদ্ধ সময় :
15. পরিবহনে ছালাত (الصلاة فى المركب)
16. রোগীর ছালাত (صلاة المريض)
17. সুতরার বিবরণ (السترة)
18. যাদের ইমামতি সিদ্ধ (من تصح إمامتهم)
19. ফাসিক ও বিদ‘আতীর ইমামত (إمامة الفاسق والمبتدع)
20. মহিলাদের ছালাত ও ইমামত (صلاة النساء وإمامتهن)
21. অন্ধ, গোলাম ও বালকদের ইমামত (إمامة الأعمى والمملوك والصبى)
22. ইমামতের হকদার (الأحق بالإمامة)
23. ইমামের অনুসরণ (متابعة الإمام)
24. মুসাফিরের ইমামত (إمامة المسافر)
25. জামা‘আত ও কাতার (الجماعة والصف)
26. আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করা (عقد التسابيح بالأنامل)
27. আয়াত সমূহের জওয়াব (إجابة آيات القرآن)
28. সিজদায়ে সহো (سجود السهو)
29. সিজদায়ে তেলাওয়াত (سجدة الةلاوة)
30. সিজদায়ে শোকর (سجدة الشكر)
31. ছালাত বিষয়ে অন্যান্য জ্ঞাতব্য (معلومات أخرى فى الصلاة)
ছালাত বিষয়ে জ্ঞাতব্য (معلوماة في الصلاة)
‘ছালাত’ -এর আভিধানিক অর্থ দো‘আ, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি।[1] পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘ছালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।[2]
২. ছালাতের ফরযিয়াত ও রাক‘আত সংখ্যা (فى فرضية الصلوة وعدد ركعاتها) :
নবুঅত প্রাপ্তির পর থেকেই ছালাত ফরয হয়। তবে তখন ছালাত ছিল কেবল ফজরে ও আছরে দু’ দু’ রাক‘আত করে (কুরতুবী)। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ‘আপনি আপনার প্রভুর প্রশংসা জ্ঞাপন করুন সূর্যাস্তের পূর্বে ও সূর্যোদয়ের পূর্বে’।[3] আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুরুতে ছালাত বাড়ীতে ও সফরে ছিল দু’ দু’ রাক‘আত করে।[4] এছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য ‘অতিরিক্ত’ (نَافِلَةً) ছিল তাহাজ্জুদের ছালাত (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/৭৯)। সেই সাথে ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে রাত্রির নফল ছালাত আদায় করতেন।[5] মি‘রাজের রাত্রিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয়।[6] উক্ত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত হ’ল- ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা।[7] এছাড়া রয়েছে জুম‘আর ফরয ছালাত, যা সপ্তাহে একদিন শুক্রবার দুপুরে পড়তে হয়।[8] জুম‘আ পড়লে যোহর পড়তে হয় না। কেননা জুম‘আ হ’ল যোহরের স্থলাভিষিক্ত। [9]
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতে দিনে-রাতে মোট ১৭ রাক‘আত ও জুম‘আর দিনে ১৫ রাক‘আত ফরয এবং ১২ অথবা ১০ রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যেমন(১) ফজর : ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ২ রাক‘আত ফরয (২) যোহর : ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত (৩) আছর : ৪ রাক‘আত ফরয (৪) মাগরিব : ৩ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত (৫) এশা : ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত। অতঃপর শেষে এক রাক‘আত বিতর।
জুম‘আর ছালাত ২ রাক‘আত ফরয। তার পূর্বে মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে কমপক্ষে ২ রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ এবং জুম‘আ শেষে ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত। উপরে বর্ণিত সবগুলিই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়মিত আমল দ্বারা নির্ধারিত এবং ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত, [10] যা অত্র বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় সমূহে দ্রষ্টব্য।
৩. ছালাতের গুরুত্ব ( أهمية الصلاة) :
1) কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার পরেই ইসলামে ছালাতের স্থান।[11]
2) ছালাত ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত, যা মি‘রাজের রাত্রিতে ফরয হয়।[12]
3) ছালাত ইসলামের প্রধান স্তম্ভ[13] যা ব্যতীত ইসলাম টিকে থাকতে পারে না।
4) ছালাত একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ৭ বছর বয়স থেকেই আদায়ের অভ্যাস করতে হয়।[14]
5) ছালাতের বিধ্বস্তি জাতির বিধ্বস্তি হিসাবে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।[15]
6) পবিত্র কুরআনে সর্বাধিকবার আলোচিত বিষয় হ’ল ছালাত।[16]
7) মুমিনের জন্য সর্বাবস্থায় পালনীয় ফরয হ’ল ছালাত, যা অন্য ইবাদতের বেলায় হয়নি।[17]
8) ইসলামের প্রথম যে রশি ছিন্ন হবে, তা হ’ল তার শাসনব্যবস্থা এবং সর্বশেষ যে রশি ছিন্ন হবে তা হ’ল ‘ছালাত’। [18]
9) দুনিয়া থেকে ‘ছালাত’ বিদায় নেবার পরেই ক্বিয়ামত হবে।[19]
10) ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার ছালাতের। ছালাতের হিসাব সঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর ছালাতের হিসাব বেঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে।[20]
11) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হিসাবে ‘ছালাত’-কে ফরয করা হয়েছে, যা অন্য কোন ফরয ইবাদতের বেলায় করা হয়নি।[21]
12) মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ‘ছালাত’।[22]
13) জাহান্নামী ব্যক্তির লক্ষণ এই যে, সে ছালাত বিনষ্ট করে এবং প্রবৃত্তির পূজারী হয় (মারিয়াম ১৯/৫৯)।
14) ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকটে নিজের জন্য ও নিজ সন্তানদের জন্য ছালাত কায়েমকারী হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন (ইবরাহীম ১৪/৪০)।
15) মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সর্বশেষ অছিয়ত ছিল ‘ছালাত’ ও নারীজাতি সম্পর্কে।[23]
৪. ছালাত তরককারীর হুকুম ( حكم تارك الصلاة) :
ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত তরককারী অথবা ছালাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির ও জাহান্নামী। ঐ ব্যক্তি ইসলাম হ’তে বহিষ্কৃত। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান রাখে, অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার অজুহাতে ছালাত তরক করে কিংবা উদাসীনভাবে ছালাত আদায় করে ও তার প্রকৃত হেফাযত করে না, সে ব্যক্তি সম্পর্কে শরী‘আতের বিধান সমূহ নিম্নরূপ :
(ক) আল্লাহ বলেন, فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلاَتِهِمْ سَاهُوْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ... ‘অতঃপর দুর্ভোগ ঐ সব মুছল্লীর জন্য’ ‘যারা তাদের ছালাত থেকে উদাসীন’। ‘যারা তা লোকদেরকে দেখায়’... (মা‘ঊন ১০৭/৪-৬)।
(খ) অলস ও লোক দেখানো মুছল্লীদের আল্লাহ মুনাফিক ও প্রতারক বলেছেন। যেমন তিনি বলেন,
إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ
وَإِذَا قَامُوْا إِلَى الصَّلاَةِ قَامُوْا كُسَالَى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ
وَلاَ
يَذْكُرُوْنَ اللهَ إِلاَّ قَلِيلاً- (النساء 142)-
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা প্রতারণা করে আল্লাহর সাথে। অথচ তিনি তাদেরকেই
ধোঁকায় নিক্ষেপ করেন। তারা যখন ছালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায় লোক
দেখানোর জন্য। আর
তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে’ (নিসা ৪/১৪২)। অন্যত্র আল্লাহ তাদের ‘ফাসেক্ব’ (পাপাচারী) বলেছেন এবং বলেছেন যে, ‘তিনি তাদের ছালাত ও অর্থ ব্যয় কিছুই
কবুল করবেন না’ (তওবা ৯/৫৩-৫৪)।
(গ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,... ‘যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করল না ...সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন ক্বারূণ, ফেরাঊন, হামান ও উবাই বিন খালাফের সঙ্গে থাকবে’।[24]
ছালাতের হেফাযত করা অর্থ রুকূ-সিজদা ইত্যাদি ফরয ও সুন্নাত সমূহ সঠিকভাবে ও গভীর মনোযোগ সহকারে আদায় করা। [25] উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ) বলেন, (১) যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদের মোহে ছালাত হ’তে দূরে থাকে, তার হাশর হবে মূসা (আঃ)-এর চাচাত ভাই বখীল ধনকুবের ক্বারূণ-এর সাথে। (২) রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক ব্যস্ততার অজুহাতে যে ব্যক্তি ছালাত হ’তে গাফেল থাকে, তার হাশর হবে মিসরের অত্যাচারী শাসক ফেরাঊনের সাথে। (৩) মন্ত্রীত্ব বা চাকুরীগত কারণে যে ব্যক্তি ছালাত হ’তে গাফেল থাকে, তার হাশর হবে ফেরাঊনের প্রধানমন্ত্রী হামান-এর সাথে। (৪) ব্যবসায়িক ব্যস্ততার অজুহাতে যে ব্যক্তি গাফেল থাকে, তার হাশর হবে মক্কার কাফের ব্যবসায়ী নেতা উবাই বিন খালাফের সাথে।[26] বলা বাহুল্য ক্বিয়ামতের দিন কাফের নেতাদের সাথে হাশর হওয়ার অর্থই হ’ল জাহান্নামবাসী হওয়া। যদিও সে দুনিয়াতে একজন মুছল্লী ছিল। অতএব শুধু ছালাত তরক করা নয় বরং ছালাতের হেফাযত বা রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় না হ’লেও জাহান্নামী হ’তে হবে। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমীন!)।
(ঘ) ছালাত তরক করাকে হাদীছে ‘কুফরী’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[27] ছাহাবায়ে কেরামও একে ‘কুফরী’ হিসাবে গণ্য করতেন।[28] তারা নিঃসন্দেহে জাহান্নামী। তবে এই ব্যক্তিগণ যদি খালেছ অন্তরে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয় এবং ইসলামের হালাল-হারাম ও ফরয-ওয়াজিব সমূহের অস্বীকারকারী না হয় এবং শিরক না করে, তাহ’লে তারা ‘কালেমায়ে শাহাদাত’কে অস্বীকারকারী কাফিরগণের ন্যায় ইসলাম থেকে খারিজ নয় বা চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। কেননা এই প্রকারের মুসলমানেরা কর্মগতভাবে কাফির হ’লেও বিশ্বাসগতভাবে কাফির নয়। বরং খালেছ অন্তরে পাঠ করা কালেমার বরকতে এবং কবীরা গোনাহগারদের জন্য শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শাফা‘আতের ফলে শেষ পর্যায়ে এক সময় তারা জান্নাতে ফিরে আসবে।[29] তবে তারা সেখানে ‘জাহান্নামী’ (اَلْجَهَنَّمِيُّوْنَ) বলেই অভিহিত হবে। [30] যেটা হবে বড়ই লজ্জাকর বিষয়।
(ঙ) বিভিন্ন হাদীছের আলোকে আহলেসুন্নাত বিদ্বানগণের মধ্যে ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিঃ), ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ) এবং প্রাথমিক ও পরবর্তী যুগের প্রায় সকল বিদ্বান এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, ঐ ব্যক্তি ‘ফাসিক্ব্’ এবং তাকে তওবা করতে হবে। যদি সে তওবা করে ছালাত আদায় শুরু না করে, তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ) বলেন, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ছালাত আদায় না করা পর্যন্ত জেলখানায় আবদ্ধ রাখতে হবে। [31] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তিকে ছালাতের জন্য ডাকার পরেও যদি সে ইনকার করে ও বলে যে ‘আমি ছালাত আদায় করব না’ এবং এইভাবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তখন তাকে কতল করা ওয়াজিব।[32] অবশ্য এরূপ শাস্তিদানের দায়িত্ব হ’ল ইসলামী সরকারের। ঐ ব্যক্তির জানাযা মসজিদের ইমাম বা বড় কোন বুযর্গ আলেম দিয়ে পড়ানো যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গণীমতের মালের (আনুমানিক দুই দিরহাম মূল্যের) তুচ্ছ বস্ত্তর খেয়ানতকারী এবং আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েননি বরং অন্যকে পড়তে বলেছেন। [33] এক্ষণে আল্লাহ্কৃত ফরয ছালাতের সঙ্গে খেয়ানতকারী ব্যক্তির সাথে মুমিন সমাজের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ, তা সহজেই অনুমেয়।
৫. ছালাতের ফযীলত সমূহ ( فضائل الصلاة) :
(১) আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, إِنَّ الصَّلاَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ‘নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনকে নির্লজ্জ ও অপসন্দনীয় কাজ সমূহ হ’তে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ২৯/৪৫)।আবুল ‘আলিয়াহ বলেন, তিনটি বস্ত্ত না থাকলে তাকে ছালাত বলা যায় না। (১) ইখলাছ (الإخلاص) বা একনিষ্ঠতা, যা তাকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয় (২) আল্লাহভীতি (الخشية), যা তাকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে (৩) কুরআন পাঠ (ذكر القرآن), যা তাকে ভাল-মন্দের নির্দেশনা দেয়।[34] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘একদা জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল যে, অমুক ব্যক্তি রাতে (তাহাজ্জুদের) ছালাত পড়ে। অতঃপর সকালে চুরি করে। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, তার রাত্রি জাগরণ সত্বর তাকে ঐ কাজ থেকে বিরত রাখবে, যা তুমি বলছ (إِنَّهُ سَيَنْهَاهُ مَا تَقُوْلُ)’। [35]
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ হ’তে পরবর্তী জুম‘আ এবং এক রামাযান হ’তে পরবর্তী রামাযানের মধ্যকার যাবতীয় (ছগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, যদি সে কবীরা গোনাহসমূহ হ’তে বিরত থাকে (যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না)’।[36]
(৩) তিনি বলেন, তোমাদের কারু ঘরের সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোন ময়লা বাকী থাকে কি?... পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন।[37]
(৪) তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করল, ছালাত তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর, দলীল ও নাজাতের কারণ হবে....। [38]
(৫) আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘বান্দা যখন ছালাতে দন্ডায়মান হয়, তখন তার সমস্ত গুনাহ হাযির করা হয়। অতঃপর তা তার মাথায় ও দুই স্কন্ধে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সে ব্যক্তি যখন রুকূ বা সিজদায় গমন করে, তখন গুনাহ সমূহ ঝরে পড়ে’। [39]
(৬) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, (ক) যে ব্যক্তি ফজর ও আছরের ছালাত নিয়মিত আদায় করে, সে জাহান্নামে যাবে না’। ‘সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। [40] (খ) দিবস ও রাত্রির ফেরেশতারা ফজর ও আছরের ছালাতের সময় একত্রিত হয়। রাতের ফেরেশতারা আসমানে উঠে গেলে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এলে? যদিও তিনি সবকিছু অবগত। তখন ফেরেশতারা বলে যে, আমরা তাদেরকে পেয়েছিলাম (আছরের) ছালাত অবস্থায় এবং ছেড়ে এসেছি (ফজরের) ছালাত অবস্থায়’।[41] কুরআনে ফজরের ছালাতকে ‘মাশহূদ’ বলা হয়েছে(ইসরা ১৭/৭৮)। অর্থাৎ ঐ সময় ফেরেশতা বদলের কারণে রাতের ও দিনের ফেরেশতারা একত্রিত হয়ে সাক্ষী হয়ে যায়। [42] (গ) যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মায় রইল। যদি কেউ সেই যিম্মা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাকে উপুড় অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[43]
(৭) তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যেগুলিকে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের উপরে ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি এগুলির জন্য সুন্দরভাবে ওযূ করবে, ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করবে, রুকূ ও খুশূ‘-খুযূ‘ পূর্ণ করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এগুলি করবে না, তার জন্য আল্লাহর কোন অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন, ইচ্ছা করলে আযাব দিতে পারেন’।[44]
(৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন প্রিয় বান্দার সাথে দুশমনী করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমি যেসব বিষয় ফরয করেছি, তার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চাইতে প্রিয়তর আমার নিকটে আর কিছু নেই। বান্দা বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাছিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শ্রবণ করে। চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দর্শন করে। হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধারণ করে। পা হয়ে যাই, যার সাহায্যে সে চলাফেরা করে। যদি সে আমার নিকটে কোন কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দান করে থাকি। যদি সে আশ্রয় ভিক্ষা করে, আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি’....।[45]
6.মসজিদে ছালাতের ফযীলত :--
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকটে প্রিয়তর স্থান হ’ল মসজিদ এবং নিকৃষ্টতর স্থান হ’ল বাজার’। [46](২) ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে) মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্ত্তত রাখেন’। [47]
(৩) তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশী নেকী পান ঐ ব্যক্তি যিনি সবচেয়ে দূর থেকে মসজিদে আসেন এবং ঐ ব্যক্তি বেশী পুরস্কৃত হন, যিনি আগে এসে অপেক্ষায় থাকেন। অতঃপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করেন।[48] তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার হ’ল ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে তোমরা এখানে আসার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে’।[49]
(৪) ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে যে সাত শ্রেণীর লোক আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হ’ল ঐ সকল ব্যক্তি যাদের অন্তর মসজিদের সাথে লটকানো থাকে। যখনই বের হয়, পুনরায় ফিরে আসে।[50]
(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অন্যত্র ছালাত আদায়ের চেয়ে আমার এই মসজিদে ছালাত আদায় করা এক হাযার গুণ উত্তম এবং মাসজিদুল হারামে ছালাত আদায় করা এক লক্ষ গুণ উত্তম।[51]
উল্লেখ্য যে ‘অন্য মসজিদের চেয়ে জুম‘আ মসজিদে ছালাত আদায় করলে পাঁচশত গুণ ছওয়াব বেশী পাওয়া যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [52]
7.মসজিদ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য :
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন। [53] তবে যদি ঐ মসজিদ ঈমানদারগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়, তাহ’লে তা ‘যেরার’ (ضِرَار) অর্থাৎ ক্ষতিকর মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে’ (তওবাহ ৯/১০৭)। উক্ত মসজিদ নির্মাণকারীরা গোনাহগার হবে।(২) মসজিদ থেকে কবরস্থান দূরে রাখতে হবে।[54] নিতান্ত বাধ্য হ’লে মাঝখানে দেওয়াল দিতে হবে। মসজিদ সর্বদা কোলাহল মুক্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে হওয়া আবশ্যক।
(৩) মসজিদ অনাড়ম্বর ও সাধাসিধা হবে। কোনরূপ সাজ-সজ্জা ও জাঁকজমক পূর্ণ করা যাবে না বা মসজিদ নিয়ে কোনরূপ গর্ব করা যাবে না। [55]
(৪) মসজিদ নির্মাণে সতর্কতার সাথে ইসলামী নির্মাণশৈলী অনুসরণ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই অমুসলিমদের উপাসনা গৃহের অনুকরণ করা যাবে না।
(৫) মসজিদে নববীতে প্রথমে মিম্বর ছিল না। কয়েক বছর পরে একটি কাঠের তৈরী মিম্বর স্থাপন করা হয়। যা তিন স্তর বিশিষ্ট ছিল। তিন স্তরের অধিক উমাইয়াদের সৃষ্ট। [56]
(৬) যে সব কবরে বা স্থানে পূজা হয়, সিজদা হয় বা যেখানে কিছু কামনা করা হয় ও মানত করা হয়, ঐসব কবরের বা স্থানের পাশে মসজিদ নির্মাণ করা হারাম এবং ঐ মসজিদে ছালাত আদায় করা বা কোনরূপ সহযোগিতা করাও হারাম। কেননা এগুলি শিরক এবং আল্লাহ শিরকের গোনাহ কখনই ক্ষমা করেন না (তওবা করা ব্যতীত)। [57]
(৭) মসজিদের এক পাশে ‘আল্লাহ’ ও একপাশে ‘মুহাম্মাদ’ লেখা পরিষ্কারভাবে শিরক। একইভাবে ক্বিবলার দিকে চাঁদতারা বা কেবল তারকার ছবি নিষিদ্ধ। মুসলমান ‘আল্লাহ’ নামক কোন শব্দের ইবাদত করে না। বরং তারা অদৃশ্য আল্লাহর ইবাদত করে। যিনি সূর্য, চন্দ্র, তারকা ও বিশ্বচরাচরের স্রষ্টা। যিনি সাত আসমানের উপরে আরশে সমাসীন (ত্বোয়াহা ২০/৫)। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ও শক্তি সর্বত্র বিরাজমান। যিনি আমাদের সবকিছু দেখেন ও শোনেন (ত্বোয়াহা ২০/৪৬)। তাঁর নিজস্ব আকার আছে। কিন্তু তা কারু সাথে তুলনীয় নয় (শূরা ৪২/১১)।
(৮) মসজিদে ক্বিবলার দিকে ‘আল্লাহ’ ও কা‘বা গৃহের ছবি এবং মেহরাবের দু’পাশে গম্বুজের আকৃতি বিশিষ্ট দীর্ঘ খাম্বাযুক্ত সুসজ্জিত টাইল্স বসানো যাবে না। মেহরাবের উপরে কোনরূপ লেখা বা নকশা করা যাবে না। মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) মসজিদে চাকচিক্য করাকে বিদ‘আত বলেছেন। [58]
(৯) ‘আল্লাহ’ বা ‘মুহাম্মাদ’ বা ‘কালেমা’ খচিত ভেন্টিলেটর বা জানালার গ্রীল ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে না।
(১০) মসজিদের বাইরে, মিনারে বা গুম্বজে ‘আল্লাহ’ বা ‘আল্লাহু আকবর’ এবং দেওয়ালে ও ছাদের নীচে দো‘আ, কালেমা, আসমাউল হুসনা ও কুরআনের আয়াত সমূহ লেখা বা খোদাই করা যাবে না বা কা‘বা গৃহের গেলাফের অংশ ঝুলানো যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মসজিদে এসবের কিছুই ছিল না।
(১১) মসজিদের ভিতরে-বাইরে কোথাও মাথাসহ পূর্ণদেহী বা অর্ধদেহী প্রাণীর প্রতিকৃতি বা ছবিযুক্ত পোস্টার লাগানো যাবে না। কেননা ‘যে ঘরে কোন (প্রাণীর) ছবি টাঙানো থাকে, সে ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[59]
(১২) মসজিদে অবশ্যই নিয়মিতভাবে আযান ও ইবাদতের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
(১৩) মসজিদে (নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক) ওযূখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
(১৪) মসজিদ ও তার আঙিনা সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ইবাদতের নির্বিঘ্ন ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
(১৫) মসজিদে আগত আলেম ও মেহমানদের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে ও সর্বোচ্চ আপ্যায়ন করতে হবে। কেননা তারা আল্লাহর ঘরের মেহমান।
(১৬) পুরুষের কাতারের পিছনে মহিলা মুছল্লীদের জন্য পৃথকভাবে পর্দার মধ্যে পুরুষের জামা‘আতের সাথে ছালাতের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলাগণ নিয়মিতভাবে পুরুষদের সাথে জুম‘আ ও জামা‘আতে যোগদান করতেন।[60] তবে এজন্য পরিবেশ নিরাপদ ও অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হবে এবং তাকে সুগন্ধিবিহীন অবস্থায় আসতে হবে।[61]
(১৭) কেবল মসজিদ নির্মাণ নয়, বরং মসজিদ আবাদের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে এবং নিয়মিতভাবে বিশুদ্ধ দ্বীনী তা‘লীম ও তারবিয়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন মসজিদে নববীতে ছিল। বর্তমানে মসজিদগুলিতে ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক বিশুদ্ধ দ্বীনী তা‘লীমের বদলে অশুদ্ধ বিদ‘আতী তা‘লীম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাছাড়া জামা‘আত শেষে দলবদ্ধভাবে সর্বোচ্চ স্বরে ও সুরেলা কণ্ঠে মীলাদ ও দরূদের অনুষ্ঠান করা কোন কোন মসজিদে নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফলে ঐসব মসজিদ এখন ইবাদত গৃহের বদলে বিদ‘আত গৃহে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টগণ আল্লাহকে ভয় করুন!
(১৮) সুন্নাত থেকে বিরত রাখার জন্য ‘সুন্নাতের নিয়ত করিবেন না’ লেখা বা মসজিদে লালবাতি জ্বালানোর অধিকার কার নেই..........
8. ছালাতের শর্তাবলী (شروط الصلاة)
ছালাতের বাইরের কিছু বিষয়, যা না হ’লে ছালাত সিদ্ধ হয় না, সেগুলিকে ‘ছালাতের শর্তাবলী’ বলা হয়। যা ৯টি। যেমন-
(১)
মুসলিম হওয়া[89] (২) জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া[90] (৩) বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া ও সেজন্য
সাত বছর বয়স থেকেই ছালাত আদায় শুরু করা[91] (৪) দেহ, কাপড় ও স্থান পাক হওয়া
[92] (৫) সতর ঢাকা। ছালাতের সময় পুরুষের জন্য দুই কাঁধ ও নাভী হ’তে হাঁটু
পর্যন্ত এবং মহিলাদের দুই হাতের তালু ও চেহারা ব্যতীত মাথা হ’তে পায়ের পাতা
পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর হিসাবে ঢাকা।[93] (৬) ওয়াক্ত হওয়া[94] (৭) ওযূ-গোসল
বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা (মায়েদাহ ৬)। (৮) ক্বিবলামুখী
হওয়া [95] (৯) ছালাতের নিয়ত বা সংকল্প করা।[96]
সতর ও লেবাস সম্পর্কে চারটি শারঈ মূলনীতি :
(১)
পোষাক পরিধানের উদ্দেশ্য হবে দেহকে ভালভাবে আবৃত করা। যাতে দেহের গোপনীয়
স্থান সমূহ অন্যের চোখে প্রকট হয়ে না ওঠে। [97] (২) ভিতরে-বাইরে
তাক্বওয়াশীল হওয়া। এজন্য ঢিলাঢালা, ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করা।
হাদীছে সাদা পোষাক পরিধানের নির্দেশ এসেছে।[98] (৩) অমুসলিমদের সদৃশ না
হওয়া। [99] (৪) অপচয় ও অহংকার প্রকাশ না পাওয়া। এজন্য পুরুষ যেন সোনা ও
রেশম পরিধান না করে এবং টাখনুর নীচে কাপড় না রাখে।[100]
মস্তকাবরণ :
পৃথিবীর প্রায় সকল জাতির মধ্যে মস্তকাবরণ ব্যবহারের নিয়ম আদিকাল থেকে ছিল,
আজও আছে এবং আরবদের মধ্যেও এটা ছিল। আল্লাহ বলেন, خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ
عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ ‘তোমরা ছালাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ
৭/৩১)। সেকারণ ছালাতের সময় উত্তম পোষাক সহ টুপী, পাগড়ী প্রভৃতি মস্তকাবরণ
ব্যবহার করা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অভ্যাসগত সুন্নাত ছিল।
আরবদের মধ্যে পূর্ব থেকেই এগুলির প্রচলন ছিল, যা ভদ্র পোষাক হিসাবে গণ্য
হ’ত। ইসলাম এগুলিকে বাতিল করেনি। বরং মস্তকাবরণ ব্যবহার করা মুসলমানদের
নিকট সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।[101] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শুধু টুপী অথবা
টুপীসহ পাগড়ী বা টুপী ছাড়া পাগড়ী পরিধান করতেন।[102] ছাহাবীগণ টুপী ছাড়া
খালি মাথায়ও চলতেন।[103] হাসান বাছরী বলেন, ছাহাবীগণ প্রচন্ড গরমে পাগড়ী ও
টুপীর উপর সিজদা করতেন।[104] বিশেষ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাথায় বড়
রুমাল ব্যবহার করেছেন। [105] তবে তিনি বা তাঁর ছাহাবীগণ এটিতে অভ্যস্ত
ছিলেন না। বরং ইসলামের দুশমন খায়বারের ইহুদীদের অভ্যাস ছিল বিধায় আনাস বিন
মালেক (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ এটিকে দারুণভাবে অপসন্দ করতেন।[106]
ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে আগত দাজ্জালের সাথে সত্তুর হাযার ইহুদী থাকবে। তাদের
মাথায় বড় ‘রুমাল’ (الطَيَالِسَة) থাকবে বলে হাদীছে এসেছে। [107] আরবদের
মধ্যে মাথায় ‘আবা’ (العَبَاء) নামক বড় রুমাল ব্যবহারের ব্যাপকতা দৃষ্ট হয়।
যা প্রাচীন যুগ থেকে সে দেশে ভদ্র পোষাক হিসাবে বিবেচিত।[108] তবে ছালাতের
সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম কখনো বড় রুমাল মাথায় দিয়েছেন বলে
জানা যায় না। এতে বরং ছালাতের চাইতে রুমাল ঠিক করার দিকেই মনোযোগ বেশী যায়
এবং এর মধ্যে ‘রিয়া’-র সম্ভাবনা বেশী থাকে। পাগড়ীর পরিমাপ বা রংয়ের কোন
বাধ্যবাধকতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কালো পাগড়ী ব্যবহার করতেন।[109]
মদ্বীনার সাতজন শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাবেঈ বিদ্বান খারেজাহ
(মৃঃ ৯৯ হিঃ) বিন যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) সাদা পাগড়ী ব্যবহার করতেন।[110]
মহিলাদের মাথা সহ সর্বাঙ্গ আবৃত রাখা অপরিহার্য। চেহারা ও দুই হস্ততালু
ব্যতীত’। [111] অতএব সূরা আ‘রাফে (৭/৩১) বর্ণিত আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে পূর্বে বর্ণিত পোষাকের ইসলামী মূলনীতি সমূহ অক্ষুণ্ণ রেখে, যে দেশে যেটা উত্তম পোষাক হিসাবে বিবেচিত, সেটাই ছালাতের সময় পরিধান করা আবশ্যক। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
জ্ঞাতব্য : জনগণের মধ্যে পাগড়ীর ফযীলত বিষয়ে বেশ কিছু হাদীছ প্রচলিত আছে। যেমন (১) ‘পাগড়ীসহ দু’রাক‘আত ছালাত পাগড়ীবিহীন ৭০ রাক‘আত ছালাতের চেয়ে উত্তম’ (২) ‘পাগড়ী সহ একটি ছালাত পঁচিশ ছালাতের সমান’ (৩) ‘পাগড়ীসহ ছালাতে ১০ হাযার নেকী রয়েছে’। (৪) ‘পাগড়ীসহ একটি জুম‘আ পাগড়ীবিহীন ৭০টি জুম‘আর সমতুল্য’ (৫) ফেরেশতাগণ পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় জুম‘আর দিন হাযির হন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত পাগড়ী পরিহিত মুছল্লীদের জন্য দো‘আ করতে থাকেন’ (৬) ‘আল্লাহর বিশেষ একদল ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে জুম‘আর দিন জামে মসজিদ সমূহের দরজায় নিযুক্ত করা হয়। তারা সাদা পাগড়ীধারী মুছল্লীদের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে’। [112]
হাদীছের নামে প্রচলিত উপরোক্ত কথাগুলি জাল ও ভিত্তিহীন। এগুলি ছাড়াও পাগড়ীর ফযীলত বিষয়ে কথিত আরও অনেক হাদীছ ও ‘আছার’ সমাজে চালু আছে, যার সবগুলিই বাতিল, মিথ্যা ও বানোয়াট। আল্লাহভীরু মুসলিমের জন্য এসব থেকে দূরে থাকা কর্তব্য। বর্তমানে মুসলিম নারী-পুরুষের টুপী, পাগড়ী ও বোরক্বা-র মধ্যেও তারতম্য দেখা যায়। এ বিষয়ে সর্বদা হুঁশিয়ার থাকতে হবে, তা যেন অমুসলিমদের এবং মুসলিম নামধারী মুশরিক ও বিদ‘আতীদের সদৃশ না হয়।
9. ছালাতের রুকন সমূহ ( أركان الصلاة)
‘রুকন’ অর্থ স্তম্ভ। এগুলি অপরিহার্য বিষয়। যা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলে ছালাত বাতিল হয়ে যায়। যা ৭টি। যেমন-
(১) ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো : আল্লাহ বলেন, وَقُوْمُوْا ِللهِ قَانِتِيْن َ ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)
(২) তাকবীরে তাহরীমা : অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠানো। আল্লাহ বলেন, وَلِرَبَّكَ فَكَبِّرْ ‘তোমার প্রভুর জন্য তাকবীর দাও’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩)। অর্থাৎ তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা কর। রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, تَحْرِيْمُهَا التَّكْبِيْرُ وَتَحْلِيْلُهَا التَّسْلِيْمُ- ‘ছালাতের জন্য সবকিছু হারাম হয় তাকবীরের মাধ্যমে এবং সবকিছু হালাল হয় সালাম ফিরানোর মাধ্যমে’।[113]
(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ- (লা ছালা-তা লেমান লাম ইয়াক্বরা’ বেফা-তিহাতিল কিতা-বে) ‘ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না’।[114]
( ৪ ও ৫) রুকূ ও সিজদা করা : আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا... ‘হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ কর ও সিজদা কর...’(হজ্জ ২২/৭৭)।
(৬) তা‘দীলে আরকান বা ধীর-স্থির ভাবে ছালাত আদায় করা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَدَّ وَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ يُصَلِّي كَمَا صَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ثَلاَثًا فَقَالَ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ فَعَلِّمْنِيْ ....
‘আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে ছালাত আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিলে তিনি তাকে সালামের জওয়াব দিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। এইভাবে লোকটি তিনবার ছালাত আদায় করল ও রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবার ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি ছালাত আদায় করতে জানিনা। অতএব দয়া করে আপনি আমাকে ছালাত শিখিয়ে দিন! ........ (অতঃপর তিনি তাকে ধীরে-সুস্থে ছালাত আদায় করা শিক্ষা দিলেন)’।[115] হাদীছটি حديث مسيئ الصلاة বা ‘ছালাতে ভুলকারীর হাদীছ’ হিসাবে প্রসিদ্ধ।
(৭) ক্বা‘দায়ে আখীরাহ বা শেষ বৈঠক :
হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলাগণ জামা‘আতে ফরয ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর পরে উঠে দাঁড়াতেন এবং রাসূল (ছাঃ) ও পুরুষ মুছল্লীগণ কিছু সময় বসে থাকতেন। অতঃপর যখন রাসূল (ছাঃ) দাঁড়াতেন তখন তাঁরাও দাঁড়াতেন’।[116] এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানোটাই ছিল রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত সুন্নাত।
প্রকাশ থাকে যে, কঠিন অসুখ বা অন্য কোন বাস্তব কারণে অপারগ অবস্থায় উপরোক্ত শর্তাবলী ও রুকন সমূহ ঠিকমত আদায় করা সম্ভব না হ’লে বসে বা শুয়ে ইশারায় ছালাত আদায় করবে।[117] কিন্তু জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোন অবস্থায় ছালাত মাফ নেই।
(১) ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো : আল্লাহ বলেন, وَقُوْمُوْا ِللهِ قَانِتِيْن َ ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)
(২) তাকবীরে তাহরীমা : অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠানো। আল্লাহ বলেন, وَلِرَبَّكَ فَكَبِّرْ ‘তোমার প্রভুর জন্য তাকবীর দাও’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩)। অর্থাৎ তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা কর। রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, تَحْرِيْمُهَا التَّكْبِيْرُ وَتَحْلِيْلُهَا التَّسْلِيْمُ- ‘ছালাতের জন্য সবকিছু হারাম হয় তাকবীরের মাধ্যমে এবং সবকিছু হালাল হয় সালাম ফিরানোর মাধ্যমে’।[113]
(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ- (লা ছালা-তা লেমান লাম ইয়াক্বরা’ বেফা-তিহাতিল কিতা-বে) ‘ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না’।[114]
( ৪ ও ৫) রুকূ ও সিজদা করা : আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا... ‘হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ কর ও সিজদা কর...’(হজ্জ ২২/৭৭)।
(৬) তা‘দীলে আরকান বা ধীর-স্থির ভাবে ছালাত আদায় করা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَدَّ وَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ يُصَلِّي كَمَا صَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ثَلاَثًا فَقَالَ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ فَعَلِّمْنِيْ ....
‘আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে ছালাত আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিলে তিনি তাকে সালামের জওয়াব দিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। এইভাবে লোকটি তিনবার ছালাত আদায় করল ও রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবার ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি ছালাত আদায় করতে জানিনা। অতএব দয়া করে আপনি আমাকে ছালাত শিখিয়ে দিন! ........ (অতঃপর তিনি তাকে ধীরে-সুস্থে ছালাত আদায় করা শিক্ষা দিলেন)’।[115] হাদীছটি حديث مسيئ الصلاة বা ‘ছালাতে ভুলকারীর হাদীছ’ হিসাবে প্রসিদ্ধ।
(৭) ক্বা‘দায়ে আখীরাহ বা শেষ বৈঠক :
হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলাগণ জামা‘আতে ফরয ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর পরে উঠে দাঁড়াতেন এবং রাসূল (ছাঃ) ও পুরুষ মুছল্লীগণ কিছু সময় বসে থাকতেন। অতঃপর যখন রাসূল (ছাঃ) দাঁড়াতেন তখন তাঁরাও দাঁড়াতেন’।[116] এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানোটাই ছিল রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত সুন্নাত।
প্রকাশ থাকে যে, কঠিন অসুখ বা অন্য কোন বাস্তব কারণে অপারগ অবস্থায় উপরোক্ত শর্তাবলী ও রুকন সমূহ ঠিকমত আদায় করা সম্ভব না হ’লে বসে বা শুয়ে ইশারায় ছালাত আদায় করবে।[117] কিন্তু জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোন অবস্থায় ছালাত মাফ নেই।
[114] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২, রাবী ‘উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ)। দ্রষ্টব্য : কুতুবে সিত্তাহ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থ।
[115] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০।
[116] . বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮ ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭।
[117] . বুখারী; মিশকাত হা/১২৪৮ ‘কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন’ অনুচ্ছেদ-৩৪; ত্বাবারাণী কাবীর, ছহীহাহ হা/৩২৩।
10. ছালাতের ওয়াজিব সমূহ ( واجبات الصلاة)
রুকন-এর পরেই ওয়াজিব-এর স্থান, যা আবশ্যিক। যা ইচ্ছাকৃতভাবে তরক করলে ছালাত বাতিল হয়ে যায় এবং ভুলক্রমে তরক করলে ‘সিজদায়ে সহো’ দিতে হয়। যা ৮টি। [118] যেমন-১. ‘তাকবীরে তাহরীমা’ ব্যতীত অন্য সকল তাকবীর।[119]
২. রুকূতে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’ বলা।[120]
৩. ক্বাওমার সময় ‘সামি‘আল্লা-হু লেমান হামেদাহ’ বলা।[121]
৪. ক্বওমার দো‘আ কমপক্ষে ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ অথবা ‘আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ’ বলা। [122]
৫. সিজদায় গিয়ে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’ বলা।[123]
৬. দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা ও দো‘আ পাঠ করা। যেমন কমপক্ষে ‘রবিবগফিরলী’ ২ বার বলা।[124]
৭. প্রথম বৈঠকে বসা ও ‘তাশাহহুদ’ পাঠ করা।[125]
৮. সালামের মাধ্যমে ছালাত শেষ করা।[126]
সুত্রঃ-- [118] . মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব, ‘ছালাতের আরকান ও ওয়াজিবাত’ গৃহীত: মাজমূ‘আ রাসা-ইল ফিছ ছালাত (রিয়াদ: দারুল ইফতা, ১৪০৫ হিঃ) পৃঃ ৭৮।
[119] . বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য, মিশকাত হা/৭৯৯, ৮০১, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২০।
[120] . নাসাঈ, আবুদাঊদ তিরমিযী, মিশকাত হা/৮৮১ ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩।
[121] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৮৭০, ৭৪, ৭৫, ৭৭।
[122] . বুখারী হা/৭৩২-৩৫, ৭৩৮, ‘আযান’ অধ্যায়, ৮২, ৮৩ ও ৮৫ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৮৬৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৯০৪, ৯১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়।
[123] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৮৮১।
[124] . ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭; আবুদাঊদ হা/৮৫০, তিরমিযী হা/২৮৪; নাসাঈ হা/১১৪৫, মিশকাত হা/৯০০, ৯০১ ‘সিজদা ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪; নায়ল ৩/১২৯ পৃঃ; মজমু‘আ রাসা-ইল ৭৮ পৃঃ।
[125] . আহমাদ, নাসাঈ, নায়ল ৩/১৪০; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯, ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
[126] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১; আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৯৫০-৫১, ‘তাশাহহুদের দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭ ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৬ পৃঃ।
11. ছালাতের সুন্নাত সমূহ ( سنن الصلاة)
ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত ছালাতের বাকী সব আমলই সুন্নাত। যেমনঃ(১) জুম‘আর ফরয ছালাত ব্যতীত দিবসের সকল ছালাত নীরবে ও রাত্রির ফরয ছালাত সমূহ সরবে পড়া।
(২) প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে আ‘ঊযুবিল্লাহ... চুপে চুপে পাঠ করা।
(৩) ছালাতে পঠিতব্য সকল দো‘আ
(৪) বুকে হাত বাঁধা
(৫) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা
(৬) ‘আমীন’ বলা
(৭) সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে হাত রাখা
(৮) ‘জালসায়ে ইস্তেরা-হাত’ করা
(৯) মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানো
(১০) ছালাতে দাঁড়িয়ে সিজদার স্থানে নযর রাখা
(১১) তাশাহহুদের সময় ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ করা ও শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতে থাকা। এছাড়া ফরয-ওয়াজিবের বাইরে সকল বৈধ কর্মসমূহ।
১2. ছালাত বিনষ্টের কারণ সমূহ ( مفسدات الصلاة)
১. ছালাতরত অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা।২. ছালাতের স্বার্থ ব্যতিরেকে অন্য কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে বাহুল্য কাজ বা ‘আমলে কাছীর’ করা। যা দেখলে ধারণা হয় যে, সে ছালাতের মধ্যে নয়।
৪. ইচ্ছাকৃত বা বিনা কারণে ছালাতের কোন রুকন বা শর্ত পরিত্যাগ করা।
৫. ছালাতের মধ্যে অধিক হাস্য করা।[127]
সুত্রঃ--[127] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২০৫ পৃঃ।
১3. ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ ( مواقيت الصلاة)
আল্লাহ
কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা ফরয। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا
‘মুমিনদের উপরে ‘ছালাত’ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে’ (নিসা ৪/১০৩)।
মি‘রাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়ার পরের দিন [128] যোহরের সময়
জিবরীল (আঃ) এসে প্রথম দিন আউয়াল ওয়াক্তে ও পরের দিন আখেরী ওয়াক্তে নিজ
ইমামতিতে পবিত্র কা‘বা চত্বরে মাক্বামে ইবরাহীমের পাশে দাঁড়িয়ে দু’দিনে
পাঁচ পাঁচ দশ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ছালাতের পসন্দনীয়
‘সময়কাল ঐ দুই সময়ের মধ্যে’ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।[129] তবে আউয়াল
ওয়াক্তে ছালাত আদায় করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত
করেছেন।[130] ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ নিম্নরূপ :
(১) ফজর: ‘ছুবহে ছাদিক’
হ’তে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বদা ‘গালাস’ বা ভোরের
অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করতেন এবং জীবনে একবার মাত্র ‘ইসফার’ বা
চারিদিকে ফর্সা হওয়ার সময়ে ফজরের ছালাত আদায় করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
এটাই তাঁর নিয়মিত অভ্যাস ছিল’। [131] অতএব ‘গালাস’ ওয়াক্তে অর্থাৎ ভোরের
অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করাই প্রকৃত সুন্নাত।
(২) যোহর : সূর্য পশ্চিম দিকে ঢললেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং বস্ত্তর নিজস্ব ছায়ার এক গুণ হ’লে শেষ হয়। [132]
(৩) আছর : বস্ত্তর মূল
ছায়ার এক গুণ হওয়ার পর হ’তে আছরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দু’গুণ হ’লে শেষ হয়।
তবে সূর্যাস্তের প্রাক্কালের রক্তিম সময় পর্যন্ত আছর পড়া জায়েয আছে।[133]
(৪) মাগরিব : সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যের লালিমা শেষ হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে। [134]
(৫) এশা : মাগরিবের পর
হ’তে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাতে শেষ হয়।[135] তবে যরূরী কারণ বশতঃ
ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এশার ছালাত আদায় করা জায়েয আছে।[136]
প্রচন্ড গ্রীষ্মে যোহরের ছালাত একটু দেরীতে
এবং প্রচন্ড শীতে এশার ছালাত একটু আগেভাগে পড়া ভাল। তবে কষ্টবোধ না হ’লে
এশার ছালাত রাতের এক তৃতীয়াংশের পর আদায় করা উত্তম।[137]
14.ছালাতের নিষিদ্ধ সময় :
সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্ত কালে ছালাত শুরু করা সিদ্ধ নয়। [138]
অনুরূপভাবে আছরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং ফজরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন ছালাত নেই’। [139]
তবে এ সময় ক্বাযা ছালাত আদায় করা জায়েয আছে। [140]
বিভিন্ন হাদীছের আলোকে অনেক বিদ্বান নিষিদ্ধ
সময়গুলিতে ‘কারণবিশিষ্ট’ ছালাত সমূহ জায়েয বলেছেন। যেমন- তাহিইয়াতুল
মাসজিদ, তাহিইয়াতুল ওযূ, সূর্য গ্রহণের ছালাত, জানাযার ছালাত ইত্যাদি।
[141]
জুম‘আর ছালাত ঠিক দুপুরের সময় জায়েয আছে। [142]
অমনিভাবে কা‘বা গৃহে দিবারাত্রি সকল সময় ছালাত ও ত্বাওয়াফ জায়েয আছে। [143]
সুত্রঃ--[128] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৩ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মিরাজ’ অনুচ্ছেদ-৬; নায়লুল আওত্বার ২/২৮ পৃঃ।
[129] . (الوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ) আবুদাঊদ হা/৩৯৩; তিরমিযী হা/১৪৯; ঐ, মিশকাত হা/৫৮৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮২, ‘ছালাতের ওয়াক্তসমূহ’ অনুচ্ছেদ-১; নায়লুল আওত্বার ২/২৬ পৃঃ।
[130] . سُئِلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَىُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: الصَّلاَةُ لِأَوَّلِ وَقْتِهَا- আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬০৭, ‘ছালাত আগেভাগে পড়া’ অনুচ্ছেদ-২; দারাকুৎনী হা/৯৫৬-৫৭।
[131] . আবুদাঊদ হা/৩৯৪, আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) হ’তে; নায়ল ২/৭৫ পৃঃ; অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, أَسْفِرُوْا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ ‘তোমরা ফজরের সময় ফর্সা কর। কেননা এটাই নেকীর জন্য উত্তম সময়’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৬১৪)। সাইয়িদ সাবিক্ব বলেন, এর অর্থ হ’ল গালাসে প্রবেশ কর ও ইসফারে বের হও। অর্থাৎ ক্বিরাআত দীর্ঘ কর এবং ফর্সা হ’লে ছালাত শেষে বের হও, যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) করতেন (আবুদাঊদ হা/৩৯৩)। তিনি ফজরের ছালাতে ৬০ হ’তে ১০০টি আয়াত পড়তেন। অথবা এর অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, ‘তোমরা ফজর হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হও। ধারণার ভিত্তিতে ছালাত আদায় করো না’ (তিরমিযী হা/১৫৪-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮০ পৃঃ)। আলবানী বলেন, এর অর্থ এই যে, গালাসে ফজরের ছালাত শুরু করবে এবং ইসফারে শেষ করে বের হবে’ (ইরওয়া ১/২৮৭ পৃঃ)।
[132] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১, ‘ছালাতের ওয়াক্তসমূহ’ অনুচ্ছেদ-১; আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩; ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) একটি মতে (ছহীহ হাদীছে বর্ণিত) উক্ত সময়কালকে সমর্থন করেছেন। - হেদায়া, পৃঃ ১/৮১ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সময়’ অনুচ্ছেদ।
[133] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩; নায়ল ২/৩৪-৩৫ পৃঃ ‘আছরের পসন্দনীয় ও শেষ সময়’ অনুচ্ছেদ।
প্রসিদ্ধ চার ইমাম সহ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) এই মত পোষণ করেন। তবে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) অন্য মতে ‘মূল ছায়ার দ্বিগুণ হওয়া’ সমর্থন করেছেন এবং সেটার উপরেই হানাফী মাযহাবের ফৎওয়া জারি আছে। দলীল: হাদীছ-‘তোমরা যোহরকে ঠান্ডা কর। কেননা প্রচন্ড গ্রীষ্মতাপ জাহান্নামের উত্তাপ মাত্র’ (হেদায়া ১/৮১)। ঘটনা হ’ল এই যে, ‘একদা এক সফরে প্রচন্ড দুপুরে বেলাল (রাঃ) যোহরের আযান দেওয়ার পর জামা‘আতের জন্য এক্বামত দিতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, যোহরকে ঠান্ডা কর’ অর্থাৎ দেরী কর। অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘ছালাতকে ঠান্ডা কর। কেননা প্রচন্ড দাবদাহ জাহান্নামের উত্তাপের অংশ’ (তিরমিযী, আবু যর গেফারী (রাঃ) হ’তে, হা/১৫৭-৫৮, তুহফা হা/১৫৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ১১৯ অনুচ্ছেদ; আবুদাঊদ হা/৪০১-০২)।
উক্ত হাদীছে দু’টি বিষয় রয়েছে : ১. সময়টি ছিল সফরের। যেখানে খোলা ময়দানে কঠিন দাবদাহে যোহর আদায় করা বাস্তবিকই কঠিন ছিল। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় সাধারণ আবহাওয়ায় কিংবা ছাদ, ফ্যান ও এসিযুক্ত মসজিদের বেলায় এই হুকুম চলে কি? ২. এটি ছিল গ্রীষ্মের মওসুম। কিন্তু শীতকালে যখন দুপুরের রৌদ্র মজা লাগে, তখনকার হুকুম কেমন হবে? এক্ষণে ইবনু আববাস ও জাবের (রাঃ) বর্ণিত ছহীহ হাদীছে যেখানে ‘মূল ছায়ার এক গুণ ও দু’গুণের মধ্যবর্তী সময়’কে আছরের ওয়াক্ত হিসাবে সীমা নির্দেশ করা হয়েছে, সেখানে উক্ত সাময়িক যরূরী সমস্যাযুক্ত হাদীছের দোহাই দিয়ে আছরের শেষ সময় অর্থাৎ ‘মূল ছায়ার দ্বিগুণ’ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আছরের ছালাত শুরু করা ঠিক হবে কি? বরং আবু যর (রাঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীছের সরলার্থ এটাই যে, অনুরূপ সাময়িক তাপদগ্ধ আবহাওয়ায় যোহরের ছালাত একটু দেরী করে পড়বে। এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর অন্য মতটি গ্রহণ করলে এবং ছহীহ হাদীছ এবং তিন ইমাম ও ছাহেবায়েনের মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘মূল ছায়ার এক গুণ’ হওয়ার পর থেকে আছরের ওয়াক্ত নির্ধারণ করলে অন্ততঃ এই ক্ষেত্রে মুসলমানগণ এক হ’তে পারতেন।
সুত্রঃ--[134] ও ১৫১. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১।
[136] . মুসলিম হা/১৫৬২ (৬৮১/৩১১) ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়-৫, ‘ক্বাযা ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ-৫৫, আবু ক্বাতাদাহ হ’তে; ফিক্ব্হুস সুন্নাহ ১/৭৯।
[137] . বুখারী, মিশকাত হা/৫৯০-৯১, ‘ছালাত আগেভাগে পড়া’ অনুচ্ছেদ-২; আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬১১; ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ‘যোহরের ওয়াক্ত’ অনুচ্ছেদ ১/৭৬।
[138] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/১০৩৯-৪০ ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮১-৮৩ পৃঃ।
[139] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪১, ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২।
[140] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪৩; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১২৭৭।
[141] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।
[142] . তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী, দ্রষ্টব্য: হা/১৮৩-এর ব্যাখ্যা, ১/৫৪১ পৃঃ ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।
[143] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ১০৪৫, ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২।
[129] . (الوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ) আবুদাঊদ হা/৩৯৩; তিরমিযী হা/১৪৯; ঐ, মিশকাত হা/৫৮৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮২, ‘ছালাতের ওয়াক্তসমূহ’ অনুচ্ছেদ-১; নায়লুল আওত্বার ২/২৬ পৃঃ।
[130] . سُئِلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَىُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: الصَّلاَةُ لِأَوَّلِ وَقْتِهَا- আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬০৭, ‘ছালাত আগেভাগে পড়া’ অনুচ্ছেদ-২; দারাকুৎনী হা/৯৫৬-৫৭।
[131] . আবুদাঊদ হা/৩৯৪, আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) হ’তে; নায়ল ২/৭৫ পৃঃ; অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, أَسْفِرُوْا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ ‘তোমরা ফজরের সময় ফর্সা কর। কেননা এটাই নেকীর জন্য উত্তম সময়’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৬১৪)। সাইয়িদ সাবিক্ব বলেন, এর অর্থ হ’ল গালাসে প্রবেশ কর ও ইসফারে বের হও। অর্থাৎ ক্বিরাআত দীর্ঘ কর এবং ফর্সা হ’লে ছালাত শেষে বের হও, যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) করতেন (আবুদাঊদ হা/৩৯৩)। তিনি ফজরের ছালাতে ৬০ হ’তে ১০০টি আয়াত পড়তেন। অথবা এর অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, ‘তোমরা ফজর হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হও। ধারণার ভিত্তিতে ছালাত আদায় করো না’ (তিরমিযী হা/১৫৪-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮০ পৃঃ)। আলবানী বলেন, এর অর্থ এই যে, গালাসে ফজরের ছালাত শুরু করবে এবং ইসফারে শেষ করে বের হবে’ (ইরওয়া ১/২৮৭ পৃঃ)।
[132] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১, ‘ছালাতের ওয়াক্তসমূহ’ অনুচ্ছেদ-১; আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩; ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) একটি মতে (ছহীহ হাদীছে বর্ণিত) উক্ত সময়কালকে সমর্থন করেছেন। - হেদায়া, পৃঃ ১/৮১ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সময়’ অনুচ্ছেদ।
[133] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩; নায়ল ২/৩৪-৩৫ পৃঃ ‘আছরের পসন্দনীয় ও শেষ সময়’ অনুচ্ছেদ।
প্রসিদ্ধ চার ইমাম সহ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) এই মত পোষণ করেন। তবে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) অন্য মতে ‘মূল ছায়ার দ্বিগুণ হওয়া’ সমর্থন করেছেন এবং সেটার উপরেই হানাফী মাযহাবের ফৎওয়া জারি আছে। দলীল: হাদীছ-‘তোমরা যোহরকে ঠান্ডা কর। কেননা প্রচন্ড গ্রীষ্মতাপ জাহান্নামের উত্তাপ মাত্র’ (হেদায়া ১/৮১)। ঘটনা হ’ল এই যে, ‘একদা এক সফরে প্রচন্ড দুপুরে বেলাল (রাঃ) যোহরের আযান দেওয়ার পর জামা‘আতের জন্য এক্বামত দিতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, যোহরকে ঠান্ডা কর’ অর্থাৎ দেরী কর। অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘ছালাতকে ঠান্ডা কর। কেননা প্রচন্ড দাবদাহ জাহান্নামের উত্তাপের অংশ’ (তিরমিযী, আবু যর গেফারী (রাঃ) হ’তে, হা/১৫৭-৫৮, তুহফা হা/১৫৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ১১৯ অনুচ্ছেদ; আবুদাঊদ হা/৪০১-০২)।
উক্ত হাদীছে দু’টি বিষয় রয়েছে : ১. সময়টি ছিল সফরের। যেখানে খোলা ময়দানে কঠিন দাবদাহে যোহর আদায় করা বাস্তবিকই কঠিন ছিল। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় সাধারণ আবহাওয়ায় কিংবা ছাদ, ফ্যান ও এসিযুক্ত মসজিদের বেলায় এই হুকুম চলে কি? ২. এটি ছিল গ্রীষ্মের মওসুম। কিন্তু শীতকালে যখন দুপুরের রৌদ্র মজা লাগে, তখনকার হুকুম কেমন হবে? এক্ষণে ইবনু আববাস ও জাবের (রাঃ) বর্ণিত ছহীহ হাদীছে যেখানে ‘মূল ছায়ার এক গুণ ও দু’গুণের মধ্যবর্তী সময়’কে আছরের ওয়াক্ত হিসাবে সীমা নির্দেশ করা হয়েছে, সেখানে উক্ত সাময়িক যরূরী সমস্যাযুক্ত হাদীছের দোহাই দিয়ে আছরের শেষ সময় অর্থাৎ ‘মূল ছায়ার দ্বিগুণ’ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আছরের ছালাত শুরু করা ঠিক হবে কি? বরং আবু যর (রাঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীছের সরলার্থ এটাই যে, অনুরূপ সাময়িক তাপদগ্ধ আবহাওয়ায় যোহরের ছালাত একটু দেরী করে পড়বে। এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর অন্য মতটি গ্রহণ করলে এবং ছহীহ হাদীছ এবং তিন ইমাম ও ছাহেবায়েনের মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘মূল ছায়ার এক গুণ’ হওয়ার পর থেকে আছরের ওয়াক্ত নির্ধারণ করলে অন্ততঃ এই ক্ষেত্রে মুসলমানগণ এক হ’তে পারতেন।
সুত্রঃ--[134] ও ১৫১. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১।
[136] . মুসলিম হা/১৫৬২ (৬৮১/৩১১) ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়-৫, ‘ক্বাযা ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ-৫৫, আবু ক্বাতাদাহ হ’তে; ফিক্ব্হুস সুন্নাহ ১/৭৯।
[137] . বুখারী, মিশকাত হা/৫৯০-৯১, ‘ছালাত আগেভাগে পড়া’ অনুচ্ছেদ-২; আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬১১; ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ‘যোহরের ওয়াক্ত’ অনুচ্ছেদ ১/৭৬।
[138] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/১০৩৯-৪০ ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮১-৮৩ পৃঃ।
[139] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪১, ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২।
[140] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪৩; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১২৭৭।
[141] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।
[142] . তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী, দ্রষ্টব্য: হা/১৮৩-এর ব্যাখ্যা, ১/৫৪১ পৃঃ ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।
[143] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ১০৪৫, ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২।
15. পরিবহনে ছালাত (الصلاة فى المركب)
পরিবহনে
কিংবা ভীতিকর অবস্থায় ক্বিবলামুখী না হ’লেও চলবে।[1] অবশ্য পরিবহনে
ক্বিবলামুখী হয়ে ছালাত শুরু করা বাঞ্ছনীয়।[2] যখন পরিবহনে রুকূ-সিজদা করা
অসুবিধা মনে হবে, তখন কেবল তাকবীর দিয়ে ও মাথার ইশারায় ছালাত আদায় করবে।
সিজদার সময় মাথা রুকূর চেয়ে কিছুটা বেশী নীচু করবে।[3] যখন ক্বিবলা ঠিক করা
অসম্ভব বিবেচিত হবে, কিংবা সন্দেহে পতিত হবে, তখন নিশ্চিত ধারণার ভিত্তিতে
ক্বিবলার নিয়তে একদিকে ফিরে সামনে সুৎরা রেখে ছালাত আদায় করবে।[4] নৌকায়
দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে, যদি ডুবে যাওয়ার ভয় না থাকে।[5] এ সময় বা অন্য যে
কোন সময় কষ্টকর দাঁড়ানোর জন্য কিছুতে ঠেস দেওয়া যাবে। [6]
16. রোগীর ছালাত (صلاة المريض)
পীড়িতাবস্থায়
দাঁড়াতে অক্ষম হলে কিংবা রোগবৃদ্ধির আশংকা থাকলে বসে, শুয়ে বা কাত হয়ে
ছালাত আদায় করবে।[7] সিজদার জন্য সামনে বালিশ, টুল বা উঁচু কিছু নেওয়া যাবে
না। যদি মাটিতে সিজদা করা অসম্ভব হয়, তাহ’লে ইশারায় ছালাত আদায় করবে।
সিজদার সময় রুকূর চেয়ে মাথা কিছুটা বেশী নীচু করবে।[8] জানা আবশ্যক যে,
শারঈ ওযর ব্যতীত ‘বসা মুছল্লী দাঁড়ানো মুছল্লীর অর্ধেক নেকী পেয়ে
থাকেন’।[9]
17. সুতরার বিবরণ (السترة)
মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে যাওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত যে, এতে তার কত বড় পাপ রয়েছে, তাহ’লে তার জন্য সেখানে চল্লিশ দিন বা চল্লিশ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হ’ত অতিক্রম করে চলে যাওয়ার চাইতে।[10] ইমাম ও সুৎরার মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাদীছে ‘শয়তান’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।[11] এজন্য কিবলার দিকে লাঠি, দেওয়াল, মানুষ বা যেকোন বস্ত্ত দ্বারা মুছল্লীর সম্মুখে সুৎরা বা আড়াল করতে হয়।[12] তবে জামা‘আত চলা অবস্থায় অনিবার্য কারণে মুক্তাদীদের কাতারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে।[13] সিজদার স্থান থেকে সুৎরার মধ্যে একটি বকরী যাওয়ার মত ফাঁকা রাখা আবশ্যক।[14] অতএব মসজিদে বা খোলা স্থানে মুছল্লীর সিজদার স্থান হ’তে একটি বকরী যাওয়ার মত দূরত্ব রেখে অতিক্রম করা যেতে পারে। তবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম। উল্লেখ্য যে, সুৎরা না পেলে সম্মুখে রেখা টানার হাদীছ ‘যঈফ’। [15] আজকাল বিভিন্ন মসজিদে সুৎরা বানিয়ে রাখা হয়। যা মুছল্লীর সামনে রেখে যাতায়াত করা হয়। এটি সামনে দিয়ে যাবার শামিল এবং শরী‘আতে এর কোন প্রমাণ নেই।18. যাদের ইমামতি সিদ্ধ (من تصح إمامتهم)
(১) বুঝদার বালক
(২) অন্ধ ব্যক্তি
(৩) বসা ব্যক্তির ইমামত দাঁড়ানো ব্যক্তির জন্য
(৪) দাঁড়ানো ব্যক্তির ইমামত বসা ব্যক্তির জন্য
(৫) নফল আদায়কারীর ইমামত ফরয আদায়কারীর জন্য
(৬) ফরয আদায়কারীর ইমামত নফল আদায়কারীর জন্য
(৭) তায়াম্মুমকারীর ইমামত ওযূকারীর জন্য
(৮) ওযূকারীর ইমামত তায়াম্মুমকারীর জন্য
(৯) মুক্বীমের ইমামত মুসাফিরের জন্য
(১০) মুসাফিরের ইমামত মুক্বীমের জন্য।[16]
(২) অন্ধ ব্যক্তি
(৩) বসা ব্যক্তির ইমামত দাঁড়ানো ব্যক্তির জন্য
(৪) দাঁড়ানো ব্যক্তির ইমামত বসা ব্যক্তির জন্য
(৫) নফল আদায়কারীর ইমামত ফরয আদায়কারীর জন্য
(৬) ফরয আদায়কারীর ইমামত নফল আদায়কারীর জন্য
(৭) তায়াম্মুমকারীর ইমামত ওযূকারীর জন্য
(৮) ওযূকারীর ইমামত তায়াম্মুমকারীর জন্য
(৯) মুক্বীমের ইমামত মুসাফিরের জন্য
(১০) মুসাফিরের ইমামত মুক্বীমের জন্য।[16]
19. ফাসিক ও বিদ‘আতীর ইমামত (إمامة الفاسق والمبتدع)
ফাসিক
ও বিদ‘আতীর পিছনে ছালাত আদায় করা মাকরূহ।[17] তবে বাধ্যগত অবস্থায় জায়েয
আছে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, يُصَلُّوْنَ لَكُمْ فَإِنْ أَصَابُوْا
فَلَكُمْ وَإِنْ أَخْطَئُوْا فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ ‘ইমামগণ তোমাদের ছালাতে
নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এক্ষণে তারা সঠিকভাবে ছালাত আদায় করালে তোমাদের জন্য
নেকী রয়েছে। আর তারা ভুল করলে তোমাদের জন্য রয়েছে নেকী, কিন্তু তাদের জন্য
রয়েছে গোনাহ’। [18] এ বিষয়ে মহান খলীফা ওছমান (রাঃ)-কে বিদ্রোহীদের দ্বারা
গৃহে অবরুদ্ধ অবস্থায় জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, الصلاةُ أحسنُ ما يعملُ
الناسُ فإذا أحسنَ الناسُ فأَحْسِنْ معهم وإذا أَسَاؤُا فَاجْتَنِبْ
إِسَاءَتَهُمْ ‘মানুষের শ্রেষ্ঠ আমল হ’ল ছালাত। অতএব যখন তারা ভাল কাজ করে,
তখন তুমি তাদের সাথী হও। আর যখন তারা মন্দ কাজ করে, তখন তুমি তাদের মন্দ
কাজ থেকে দূরে থাক’। হাসান বছরীকে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, صَلِّ و
عليه بِدْعَتُهُ ‘তুমি তার পিছনে ছালাত আদায় কর। আর বিদ‘আতের গোনাহ
বিদ‘আতীর উপরে বর্তাবে’। যুহরী বলেন, বাধ্যগত অবস্থায় ব্যতীত আমরা এটা
জায়েয মনে করতাম না’।[19] আল্লাহ বলেন, مَعَ الرَّاكِعِيْنَ وَارْكَعُوْا
‘তোমরা রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর’(বাক্বারাহ ২/৪৩)। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন যে, তিন ব্যক্তির ছালাত কবুল হয়না। তার মধ্যে একজন হ’ল ঐ ইমাম, যাকে
মুছল্লীরা পসন্দ করে না’। [20]
সুন্নাত অমান্যকারী ব্যক্তিকে ইমাম বানানো
যাবে না। এমনকি ফাসিক ও বিদ‘আতী কোন লোককে মসজিদ কমিটির সভাপতি বা সদস্য
করা যাবে না। কেননা এতে তাকে সম্মান দেখনো হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
তোমাদের মধ্যে কেউ ‘মুনকার’ কিছু দেখলে তা যেন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে। নইলে
যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান।[21]
20. মহিলাদের ছালাত ও ইমামত (صلاة النساء وإمامتهن)
(ক)
পুরুষ ও মহিলাদের ছালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই। ছালাতে নারীরা
পুরুষের অনুগামী।[22] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারী-পুরুষ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘তোমরা সেভাবে ছালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’।[23]
মসজিদে নববীতে নারী-পুরুষ সকলে তাঁর পিছনে একই নিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ও
জুম‘আ আদায় করেছেন।[24]
(খ) তবে মসজিদে পুরুষের জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ও জুম‘আ আদায় করা তাদের জন্য ফরয নয়। [25] অবশ্য মসজিদে যেতে তাদেরকে বাধা দেওয়াও যাবে না। এ সময় তারা সুগন্ধি মেখে (বা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে) মসজিদে জামা‘আতে যেতে পারবে না।[26] মহিলাদের জন্য বাড়ীতে গৃহকোণে নিভৃতে একাকী বা জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা উত্তম।[27]
(গ) মহিলাগণ (নিম্নস্বরে) আযান ও ইক্বামত দিবেন এবং মহিলা জামা‘আতের প্রথম কাতারের মধ্যস্থলে সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে ইমামতি করবেন।[28] ফরয ও তারাবীহর জামা‘আতে তাদের ইমামতি করার স্পষ্ট দলীল রয়েছে।[29] মা আয়েশা (রাঃ) ও উম্মে সালামাহ (রাঃ) প্রমুখ মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করতেন। [30] বদর যুদ্ধের সময় উম্মে ওয়ারাক্বাহ (রাঃ)-কে তার পরিবারের ইমামতি করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তার জন্য একজন বৃদ্ধ মুওয়াযযিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।[31] অন্য বর্ণনায় খাছভাবে এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) তাকে তার পরিবারের মহিলাদের ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন’।[32]
(ঘ) মহিলারা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না।[33] কেননা আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’ (নিসা ৪/৩৪)। তাছাড়া এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর কোন নির্দেশ নেই এবং তাঁর ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এর কোন নযীর বা প্রচলন নেই। আর এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সময় যা দ্বীন ছিল না, পরে তা দ্বীন হিসাবে গৃহীত হবে না।[34]
(খ) তবে মসজিদে পুরুষের জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ও জুম‘আ আদায় করা তাদের জন্য ফরয নয়। [25] অবশ্য মসজিদে যেতে তাদেরকে বাধা দেওয়াও যাবে না। এ সময় তারা সুগন্ধি মেখে (বা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে) মসজিদে জামা‘আতে যেতে পারবে না।[26] মহিলাদের জন্য বাড়ীতে গৃহকোণে নিভৃতে একাকী বা জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা উত্তম।[27]
(গ) মহিলাগণ (নিম্নস্বরে) আযান ও ইক্বামত দিবেন এবং মহিলা জামা‘আতের প্রথম কাতারের মধ্যস্থলে সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে ইমামতি করবেন।[28] ফরয ও তারাবীহর জামা‘আতে তাদের ইমামতি করার স্পষ্ট দলীল রয়েছে।[29] মা আয়েশা (রাঃ) ও উম্মে সালামাহ (রাঃ) প্রমুখ মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করতেন। [30] বদর যুদ্ধের সময় উম্মে ওয়ারাক্বাহ (রাঃ)-কে তার পরিবারের ইমামতি করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তার জন্য একজন বৃদ্ধ মুওয়াযযিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।[31] অন্য বর্ণনায় খাছভাবে এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) তাকে তার পরিবারের মহিলাদের ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন’।[32]
(ঘ) মহিলারা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না।[33] কেননা আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’ (নিসা ৪/৩৪)। তাছাড়া এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর কোন নির্দেশ নেই এবং তাঁর ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এর কোন নযীর বা প্রচলন নেই। আর এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সময় যা দ্বীন ছিল না, পরে তা দ্বীন হিসাবে গৃহীত হবে না।[34]
21. অন্ধ, গোলাম ও বালকদের ইমামত (إمامة الأعمى والمملوك والصبى)
(ক)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-কে
দু’বার মদ্বীনার ইমামতির দায়িত্ব দেন।[35] অন্ধ ছাহাবী উৎবান বিন মালেক
(রাঃ) তার কওমের ইমামতি করতেন। [36]
(খ) আবু হুযায়ফা (রাঃ)-এর গোলাম সালেম ক্বোবা-র ‘আছবাহ (العصبة) নামক স্থানে হিজরতের পূর্বে মুসলমানদের ইমামতি করতেন। ওমর ও আবু সালামা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী তার মুক্তাদী হ’তেন।[37] হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর গোলাম আবু ‘আমর মুক্ত হওয়ার পূর্বে লোকদের ইমামতি করতেন (মুসনাদে শাফেঈ)।
(গ) ‘আমর বিন সালামাহ বিন ক্বায়েস (রাঃ) ভাল ক্বারী হওয়ার কারণে ৬, ৭ বা ৮ বছর বয়সে ইমামতি করেছেন।[38]
(খ) আবু হুযায়ফা (রাঃ)-এর গোলাম সালেম ক্বোবা-র ‘আছবাহ (العصبة) নামক স্থানে হিজরতের পূর্বে মুসলমানদের ইমামতি করতেন। ওমর ও আবু সালামা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী তার মুক্তাদী হ’তেন।[37] হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর গোলাম আবু ‘আমর মুক্ত হওয়ার পূর্বে লোকদের ইমামতি করতেন (মুসনাদে শাফেঈ)।
(গ) ‘আমর বিন সালামাহ বিন ক্বায়েস (রাঃ) ভাল ক্বারী হওয়ার কারণে ৬, ৭ বা ৮ বছর বয়সে ইমামতি করেছেন।[38]
22. ইমামতের হকদার (الأحق بالإمامة)
(১) বালক বা কিশোর হলেও ক্বিরাআতে পারদর্শী ব্যক্তিই ইমামতির প্রথম হকদার। (২) ইলমে হাদীছে পারদর্শী ও সুন্নাতের পাবন্দ ব্যক্তি। (৩) সেদিকে সমান হ’লে বয়সে যিনি বড় তিনিই ইমাম হবেন।[39][39] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১১৭; বুখারী, মিশকাত হা/১১২৬।
23. ইমামের অনুসরণ (متابعة الإمام)
ইমামের
অনুসরণ করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ
لِيُؤْتَمَّ بِهِ ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয়, কেবল তাঁকে অনুসরণ করার জন্য’।[40]
ইমামের পিছে পিছে মুক্তাদী তাকবীর, রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরাবে।
[41] বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সিজদায় গিয়ে মাটিতে
চেহারা না রাখা পর্যন্ত আমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পিঠ ঝুঁকাতো
না।[42] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুক্তাদী যদি ইমামের আগে মাথা উঠায়
(অর্থাৎ রুকূ-সিজদা থেকে বা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়), তবে (ক্বিয়ামতের
দিন) তার মাথা হবে গাধার মাথা’ (অর্থাৎ তার ছালাত কবুল হবে না)। [43]
ইমামের অনুসরণ হবে এক অবস্থা থেকে অন্য
অবস্থায় যাওয়ার জন্য। যেমন তাকবীর, রুকূ, ক্বিয়াম, সুজূদ, সালাম ইত্যাদি
সময়ে। এর অর্থ এটা নয় যে, ইমাম সুন্নাত তরক করলে মুক্তাদীকেও সুন্নাত তরক
করতে হবে। অতএব ইমাম বুকে হাত না বাঁধলে বা সশব্দে আমীন না বললে বা রাফ‘উল
ইয়াদায়েন না করলেও মুক্তাদী ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী সেগুলি আমল করবেন। এর ফলে
তিনি সুন্নাত অনুসরণের নেকী পাবেন। ওযরের কারণে ইমাম বা কোন মুক্তাদী বসে
পড়তে পারেন। কিন্তু অন্যেরা দাঁড়িয়ে পড়বেন।[44] ইমাম অবশ্যই প্রথম রাক‘আত
তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ করবেন। ওযূ টুটে গেলে তিনি তাঁর পিছন থেকে একজনকে
ইমামতি দিয়ে বেরিয়ে যাবেন। ইমাম যদি ভুলবশত: নাপাক অবস্থায় ইমামতি করে
থাকেন, তাহ’লে জামা‘আত শেষে পাক হয়ে তিনি তা পুনরায় পড়বেন। কিন্তু
মুক্তাদীদের পুনরায় পড়তে হবে না।[45]
24. মুসাফিরের ইমামত (إمامة المسافر)
ইমাম
ক্বছর করলে মুক্বীম পুরা পড়বেন এবং ইমাম পুরা পড়লে মুসাফির পুরা পড়বেন।
যদিও কিছু অংশ পান।[46] কেউ কোথাও গেলে সেই এলাকার লোকই ইমামতি করবেন।[47]
তবে তাদের অনুমতিক্রমে তিনি ইমামতি করতে পারবেন। [48]
25. জামা‘আত ও কাতার (الجماعة والصف)
(ক)
দু’জন মুছল্লী হলে জামা‘আত হবে। ইমাম বামে ও মুক্তাদী ডাইনে দাঁড়াবে।[49]
তিনজন মুছল্লী হলে ইমাম সম্মুখে এবং দু’জন মুক্তাদী পিছনে দাঁড়াবে।[50] তবে
বিশেষ কারণে ইমামের দু’পাশে দু’জন সমান্তরালভাবে দাঁড়াতে পারেন। তার বেশী
হ’লে অবশ্যই পিছনে কাতার দিবেন।[51] সামনের কাতারে পুরুষগণ ও পিছনের কাতারে
মহিলাগণ দাঁড়াবেন। [52] পুরুষ সকলের ইমাম হবেন। কিন্তু নারী কখনো পুরুষের
ইমাম হবেন না। নারী ও পুরুষ কখনোই পাশাপাশি দাঁড়াবেন না। দু’জন বয়স্ক
পুরুষ, একটি বালক ও একজন মহিলা মুছল্লী হ’লে বয়স্ক একজন পুরুষ ইমাম হবেন।
তাঁর পিছনে উক্ত পুরুষ ও বালকটি এবং সকলের পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। আর
যদি দু’জন পুরুষ ও একজন মহিলা হন, তাহ’লে ইমামের ডাইনে পুরুষ মুক্তাদী
দাঁড়াবেন এবং পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। [53] একজন পুরুষ ও একজন মহিলা
হ’লে সামনে পুরুষ ও পিছনে মাহিলা দাঁড়াবেন। ইমামকে মধ্যবর্তী ধরে কাতার
ডাইনে ও বামে সমান করতে হবে। তবে ডাইনে সামান্য বৃদ্ধি হবে। কিন্তু
কোনক্রমেই ডান প্রান্ত থেকে বা মসজিদের উত্তর দেওয়াল থেকে ২য় ও পরবর্তী
কাতার সমূহ শুরু করা যাবে না। প্রয়োজনে ইমাম উঁচুতে ও মুক্তাদীগণ নীচে
দাঁড়াতে পারেন।[54] ইমামের আওয়ায পৌঁছলে এবং ইক্তেদা সম্ভব হ’লে ইবনু হাজার
বলেন, ইমাম নীচে থাকুন বা উপরে থাকুন ছালাত আদায় করা জায়েয।[55] তবে
ইমামের নীচে থাকাই উত্তম। এক ব্যক্তি দ্বিতীয়বার জামা‘আতে ইমাম বা মুক্তাদী
হিসাবে যোগদান করতে পারেন। তখন দ্বিতীয়টি তার জন্য নফল হবে। [56] ইমাম অতি
দীর্ঘ করলে কিংবা অন্য কোন বাধ্যগত কারণে মুক্তাদী সালাম ফিরিয়ে জামা‘আত
ত্যাগ করে একাকী শুরু থেকে ছালাত আদায় করতে পারবেন।[57]
(খ) কাতার সোজা করা (تسوية الصفوف)
সম্মুখের কাতারগুলি আগে পূর্ণ করতে হবে।[58]
কেননা ফেরেশতাগণ আল্লাহর সম্মুখে এভাবেই কাতার দিয়ে থাকেন। [59] কাতার
সোজা করতে হবে এবং কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ
الصَّلاَةِ ‘তোমরা কাতার সোজা কর, কেননা কাতার সোজা করা
ছালাত প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত’। [60] আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের শুরুতে আমাদের কাঁধগুলিতে হাত দিয়ে পরস্পরে
মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ
قُلُوبُكُمْ ‘তোমরা কাতার সোজা কর, বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ো না। তাতে তোমাদের
অন্তরগুলি বিভক্ত হয়ে যাবে’।[61] আনাস (রাঃ) বলেন, وَكَانَ أَحَدُنَا
يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَ قَدَمَهُ بِقَدَمِهِ ‘আমাদের
মধ্য থেকে একজন পরস্পরের কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে দিতেন’। ছাহাবী
নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ
بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَرُكْبَتَهُ بِرُكْبَةِ صَاحِبِهِ وَكَعْبَهُ
بِكَعْبِهِ ‘অতঃপর দেখলাম যে, একজন ব্যক্তি মুছল্লীদের পরস্পরের কাঁধে
কাঁধ, হাঁটুতে হাঁটু ও গোড়ালিতে গোড়ালি মিলিয়ে দিচ্ছেন’।[62] যার ভিত্তিতে
ইমাম বুখারী অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে- بَابُ إِلْزَاقِ الْمَنْكِبِ
بِالْمَنْكِبِ وَالْقَدَمِ بِالْقَدَمِ فِى الصَّفِّ ‘ছালাতের কাতারে কাঁধে
কাঁধ ও পায়ে পা মিলানো অনুচ্ছেদ’। [63]
এখানে পা মিলানো অর্থ পায়ের সাথে পা লাগিয়ে
দেওয়া। যাতে কোনরূপ ফাঁক না থাকে এবং কাতারও সোজা হয়। বুখারীর অন্য বর্ণনায়
এসেছে أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَ تَرَاصُّوْا ‘তোমরা কাতার সোজা কর এবং
পরস্পরে ভালভাবে (কাঁধ ও পা) মিলাও’।[64] আবুদাঊদের অন্য বর্ণনায় এসেছে,
حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ... وَلاَ تَذَرُوْا
فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ ‘কাঁধগুলি সমান কর ও ফাঁক বন্ধ কর এবং শয়তানের
জন্য কোন জায়গা খালি ছেড়োনা’। ‘কেননা আমি দেখি যে, শয়তান ছোট কালো বকরীর
ন্যায় (كأَنَّها الْحَذَفُ) তোমাদের মাঝে ঢুকে পড়ে’। [65] ইবনু হাজার বলেন,
নু‘মান বিন বাশীরের বর্ণনার শেষাংশে كَعْبَه بكَعْبِه ‘গোড়ালির সাথে
গোড়ালি’ কথাটি এসেছে। এর দ্বারা পায়ের পার্শ্ব বুঝানো হয়েছে, পায়ের পিছন
অংশ নয়, যেমন অনেকে ধারণা করেন’।[66] এখানে মুখ্য বিষয় হ’ল দু’টি: কাতার
সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা। অতএব পায়ের সম্মুখভাগ সমান্তরাল রেখে পাশাপাশি
মিলানোই উত্তম।
পুরুষ ও মহিলা মুছল্লী স্ব স্ব কাতারে দু’পা
স্বাভাবিক ফাঁক করে দাঁড়াবেন। যাতে পায়ের মাঝখানে নিজের জুতা জোড়া রাখা
যায়। [67] দেহের ভারসাম্যের অধিক পা ফাঁক করবেন না। মহিলা মুছল্লী তার দুই
গোড়ালি একত্রিত করে দাঁড়াবেন না। এগুলি স্রেফ কুসংস্কার মাত্র। পরস্পরে
কাঁধ, হাঁটু ও গোড়ালি মিলানোর কঠোর নির্দেশ উপেক্ষা করে বানোয়াট যুক্তিতে
নিয়মিতভাবে পরস্পরে পা ফাঁক করে কাতার দাঁড়ানোর মধ্যে কোন নেকী নেই, স্রেফ
গোনাহ রয়েছে। এই বাতিল রেওয়াজ থেকে দ্রুত তওবা করে পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ
মিলিয়ে ভাই ভাই হয়ে কাতার দাঁড়ানো কর্তব্য।
উল্লেখ্য যে, দুই পিলারের মাঝখানে কাতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।[68]
(গ) ১ম কাতারের নেকী :
১ম
কাতারে নেকী বেশী। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যদি লোকেরা জানতো ১ম
কাতারে কি নেকী আছে, তাহ’লে তারা লটারী করত। [69] তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার
হ’ল ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে
তোমরা এখানে আসার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে’।[70] অবশ্য ১ম কাতারে
জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণ ইমামের নিকটবর্তী থাকবেন, অতঃপর মর্যাদা অনুযায়ী
অন্যান্যগণ। এ সময় মসজিদে বাজারের মত শোরগোল করা নিষেধ (إِيَّاكُمْ
وَهَيْشَاتِ الأَسْوَاقِ)। [71]
(ঘ) একাকী কাতারের পিছনে না দাঁড়ানো :
কাতারের
পিছনে একাকী দাঁড়াবে না। কেননা অনুরূপভাবে ছালাত আদায়ের কারণে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) এক ব্যক্তিকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে বলেন।[72] তবে সামনের কাতারে
জায়গা না থাকলে বাধ্যগত অবস্থায় পিছনে একাকী দাঁড়ানো জায়েয আছে। [73]26. আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করা (عقد التسابيح بالأنامل)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
وَأَعْقِدْنَ بِالأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولاَتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ
‘তোমরা তাসবীহ সমূহ আঙ্গুলে গণনা কর। কেননা আঙ্গুল সমূহ ক্বিয়ামতের দিন
জিজ্ঞাসিত হবে এবং তারা কথা বলবে’।[74] দানা বা কংকর দিয়ে তাসবীহ গণনার
হাদীছটি যঈফ [75] এবং ‘তাসবীহ মালায় গণনাকারী ব্যক্তি কতই না সুন্দর’
(نِعْمَ الْمُذَكِّرُ السُّبْحَةَ) মর্মে বর্ণিত মরফূ হাদীছটি মওযূ বা
জাল।[76] অতএব প্রচলিত তাসবীহ মালায় বা অন্য কিছু দ্বারা তাসবীহ গণনা করা
সুন্নাত বিরোধী আমল। তাছাড়া এতে ‘রিয়া’ অর্থাৎ লোক দেখানোর সম্ভাবনা বেশী
থাকে। আর ‘রিয়া’ হ’ল ছোট শিরক’।[77] ফলে তাসবীহ পাঠের সকল নেকী বরবাদ হবার
সম্ভাবনা থাকবে।
তাসবীহ দু’হাতে বা বাম হাতে নয়। বরং ডান হাতে গণনা করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খানাপিনাসহ সকল শুভ ও পবিত্র কাজ ডান হাতে করতেন এবং পায়খানা-পেশাব ও অন্যান্য কাজ বামহাতে করতেন।[78] আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি।[79] আর এটা স্বত:সিদ্ধ কথা যে, ডান হাতের গণনা কড়ে আঙ্গুল দিয়ে শুরু করতে হয়, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নয়। কেননা ডান হাতের ডান পাশ কড়ে আঙ্গুল দিয়েই শুরু হয়েছে এবং এ আঙ্গুল দিয়ে গণনা শুরু করাটাই সহজ ও স্বভাবগত।
তাসবীহ দু’হাতে বা বাম হাতে নয়। বরং ডান হাতে গণনা করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খানাপিনাসহ সকল শুভ ও পবিত্র কাজ ডান হাতে করতেন এবং পায়খানা-পেশাব ও অন্যান্য কাজ বামহাতে করতেন।[78] আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি।[79] আর এটা স্বত:সিদ্ধ কথা যে, ডান হাতের গণনা কড়ে আঙ্গুল দিয়ে শুরু করতে হয়, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নয়। কেননা ডান হাতের ডান পাশ কড়ে আঙ্গুল দিয়েই শুরু হয়েছে এবং এ আঙ্গুল দিয়ে গণনা শুরু করাটাই সহজ ও স্বভাবগত।
27. আয়াত সমূহের জওয়াব (إجابة آيات القرآن)
(১)
সূরা আ‘লা-তে ‘সাব্বিহিস্মা রব্বিকাল আ‘লা’-এর জওয়াবে ‘সুবহা-না রব্বিয়াল
আ‘লা’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক, যিনি সর্বোচ্চ)। [80]
(২) সূরা ক্বিয়ামাহ-এর শেষ আয়াতের জওয়াবে ‘সুবহা-নাকা ফা বালা’ (মহাপবিত্র আপনি! অতঃপর হাঁ, আপনিই মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন)। [81]
(৩) সূরা গাশিয়া-র শেষে ‘আল্লা-হুম্মা হা-সিবনী হিসা-বাঁই ইয়াসীরা’ বলে প্রার্থনা করা (অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি সহজভাবে আমার হিসাব গ্রহণ কর’)। [82] হাদীছে নির্দিষ্ট কোন সূরার নাম বলা হয়নি। তবে অর্থের বিবেচনায় এখানে অত্র দো‘আ পাঠ করা হয়ে থাকে। অন্য আয়াতে ‘হিসাব’-এর বিবরণ আসলে সেখানেও এ দো‘আ পড়া যাবে।
(৪) সূরা রহমান-য়ে ‘ফাবে আইয়ে আ-লা-য়ে রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন’-এর জওয়াবে ‘লা বেশাইয়িম মিন নি‘আমিকা রব্বানা নুকাযযিবু ফালাকাল হাম্দ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার কোন একটি নে‘মতকেও আমরা অস্বীকার করি না। অতঃপর তোমার জন্যই সকল প্রশংসা)।[83]
উল্লেখ্য যে, (ক) সূরা তীন-এর শেষে ‘বালা ওয়া আনা ‘আলা যা-লিকা মিনাশ শা-হেদ্বীন’ এবং (খ) সূরায়ে মুরসালাত-এর শেষে ‘আ-মান্না বিল্লাহ’ বলার হাদীছ ‘যঈফ’।[84] (গ) সূরা বাক্বারাহর শেষে ‘আমীন’ বলার হাদীছ ‘যঈফ’। [85] (ঘ) সূরা মুল্কের শেষে দো‘আ পাঠের কোন ভিত্তি নেই।
মিশকাত-এর ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, ছালাতের মধ্যে হৌক বা বাইরে হৌক, পাঠকারীর জন্য উপরোক্ত আয়াত সমূহের জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব। যা বর্ণিত হাদীছ সমূহে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু শ্রোতা বা মুক্তাদীর জন্য উপরোক্ত আয়াত সমূহের জওয়াব দেওয়ার প্রমাণে স্পষ্ট কোন মরফূ হাদীছ আমি অবগত নই। তবে আয়াত গুলিতে প্রশ্ন রয়েছে। সেকারণ জওয়াবের মুখাপেক্ষী। কাজেই পাঠকারী ও শ্রোতা উভয়ের জন্য উত্তর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। [86] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, বক্তব্যটি মুৎলাক্ব অর্থাৎ সাধারণ ভাবে এসেছে। অতএব তা ছালাত ও ছালাতের বাইরে এবং ফরয ও নফল সব ছালাতকে শামিল করে। তিনি ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা’র বরাতে একটি ‘আছার’ উদ্ধৃত করেন এই মর্মে যে, ছাহাবী আবু মূসা আশ‘আরী ও মুগীরা বিন শো‘বা (রাঃ) ফরয ছালাতে উক্ত জওয়াব দিতেন। ওমর ও আলী (রাঃ) সাধারণভাবে সকল অবস্থায় জওয়াব দিতেন। [87]
(২) সূরা ক্বিয়ামাহ-এর শেষ আয়াতের জওয়াবে ‘সুবহা-নাকা ফা বালা’ (মহাপবিত্র আপনি! অতঃপর হাঁ, আপনিই মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন)। [81]
(৩) সূরা গাশিয়া-র শেষে ‘আল্লা-হুম্মা হা-সিবনী হিসা-বাঁই ইয়াসীরা’ বলে প্রার্থনা করা (অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি সহজভাবে আমার হিসাব গ্রহণ কর’)। [82] হাদীছে নির্দিষ্ট কোন সূরার নাম বলা হয়নি। তবে অর্থের বিবেচনায় এখানে অত্র দো‘আ পাঠ করা হয়ে থাকে। অন্য আয়াতে ‘হিসাব’-এর বিবরণ আসলে সেখানেও এ দো‘আ পড়া যাবে।
(৪) সূরা রহমান-য়ে ‘ফাবে আইয়ে আ-লা-য়ে রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন’-এর জওয়াবে ‘লা বেশাইয়িম মিন নি‘আমিকা রব্বানা নুকাযযিবু ফালাকাল হাম্দ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার কোন একটি নে‘মতকেও আমরা অস্বীকার করি না। অতঃপর তোমার জন্যই সকল প্রশংসা)।[83]
উল্লেখ্য যে, (ক) সূরা তীন-এর শেষে ‘বালা ওয়া আনা ‘আলা যা-লিকা মিনাশ শা-হেদ্বীন’ এবং (খ) সূরায়ে মুরসালাত-এর শেষে ‘আ-মান্না বিল্লাহ’ বলার হাদীছ ‘যঈফ’।[84] (গ) সূরা বাক্বারাহর শেষে ‘আমীন’ বলার হাদীছ ‘যঈফ’। [85] (ঘ) সূরা মুল্কের শেষে দো‘আ পাঠের কোন ভিত্তি নেই।
মিশকাত-এর ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, ছালাতের মধ্যে হৌক বা বাইরে হৌক, পাঠকারীর জন্য উপরোক্ত আয়াত সমূহের জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব। যা বর্ণিত হাদীছ সমূহে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু শ্রোতা বা মুক্তাদীর জন্য উপরোক্ত আয়াত সমূহের জওয়াব দেওয়ার প্রমাণে স্পষ্ট কোন মরফূ হাদীছ আমি অবগত নই। তবে আয়াত গুলিতে প্রশ্ন রয়েছে। সেকারণ জওয়াবের মুখাপেক্ষী। কাজেই পাঠকারী ও শ্রোতা উভয়ের জন্য উত্তর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। [86] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, বক্তব্যটি মুৎলাক্ব অর্থাৎ সাধারণ ভাবে এসেছে। অতএব তা ছালাত ও ছালাতের বাইরে এবং ফরয ও নফল সব ছালাতকে শামিল করে। তিনি ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা’র বরাতে একটি ‘আছার’ উদ্ধৃত করেন এই মর্মে যে, ছাহাবী আবু মূসা আশ‘আরী ও মুগীরা বিন শো‘বা (রাঃ) ফরয ছালাতে উক্ত জওয়াব দিতেন। ওমর ও আলী (রাঃ) সাধারণভাবে সকল অবস্থায় জওয়াব দিতেন। [87]
28. সিজদায়ে সহো (سجود السهو)
ছালাতে
ভুলক্রমে কোন ‘ওয়াজিব’ তরক হয়ে গেলে শেষ বৈঠকের তাশাহহুদ শেষে সালাম
ফিরানোর পূর্বে ‘সিজদায়ে সহো’ দিতে হয়। রাক‘আতের গণনায় ভুল হলে বা সন্দেহ
হ’লে বা কম বেশী হয়ে গেলে বা ১ম বৈঠকে না বসে দাঁড়িয়ে গেলে ইত্যাদি কারণে
এবং মুক্তাদীগণের মাধ্যমে ভুল সংশোধিত হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ আবশ্যক হয়।
শাওকানী বলেন, ওয়াজিব তরক হলে ‘সিজদায়ে সহো’ ওয়াজিব হবে এবং সুন্নাত তরক
হলে ‘সিজদায়ে সহো’ সুন্নাত হবে।[88] অতএব ছালাতে ক্বিরাআত ভুল হ’লে বা
সের্রী ছালাতে ভুলবশত ক্বিরাআত জোরে বা তার বিপরীত হয়ে গেলে সহো সিজদার
প্রয়োজন নেই।
নিয়ম :
(১) যদি ইমাম ছালাতরত অবস্থায় নিজের ভুল সম্পর্কে নিশ্চিত হন কিংবা সরবে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার মাধ্যমে লোকমা দিয়ে মুক্তাদীগণ ভুল ধরিয়ে দেন, তবে তিনি শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ শেষে তাকবীর দিয়ে পরপর দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিবেন। অতঃপর সালাম ফিরাবেন।[89]
(২) যদি রাক‘আত বেশী পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন, অতঃপর ভুল ধরা পড়ে, তখন (পূর্বের ন্যায় বসে) তাকবীর দিয়ে ‘সিজদায়ে সহো’ করে সালাম ফিরাবেন। [90]
(৩) যদি রাক‘আত কম করে সালাম ফিরিয়ে দেন। তখন তাকবীর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাকী ছালাত আদায় করবেন ও সালাম ফিরাবেন। অতঃপর (তাকবীর সহ) দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিয়ে পুনরায় সালাম ফিরাবেন।[91]
(৪) ছালাতের কমবেশী যাই-ই হৌক সালামের আগে বা পরে দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিবেন।[92]
মোট কথা ‘সিজদায়ে সহো’ সালামের পূর্বে ও পরে দু’ভাবেই জায়েয আছে। কিন্তু তাশাহহুদ শেষে কেবল ডাইনে একটি সালাম দিয়ে দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ করে পুনরায় তাশাহ্হুদ ও দরূদ পড়ে দু’দিকে সালাম ফিরানোর প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই।[93] সিজদায়ে সহো-র পরে ‘তাশাহ্হুদ’ পড়ার বিষয়ে ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হ’তে যে হাদীছটি এসেছে, সেটি ‘যঈফ’।[94] তাছাড়া একই রাবী কর্তৃক বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমের ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কেননা সেখানে তাশাহ্হুদের কথা নেই।[95]
ইমামের ভুল হ’লে পুরুষ মুক্তাদী সরবে ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলে এবং মহিলা মুক্তাদী হাতের পিঠে হাত মেরে শব্দ করে ‘লোকমা’ দিবে (কুরতুবী)। [96] অর্থাৎ ভুল স্মরণ করিয়ে দিবে। এখানে নারী ও পুরুষের লোকমা দানের পৃথক পদ্ধতির কারণ হ’ল এই যে, নারীর কণ্ঠস্বরটাও লজ্জার অন্তর্ভুক্ত (لِأَنَّ صَوْتَهُنَّ عَوْرَةٌ)। যা প্রকাশ পেলে পুরুষের মধ্যে ফিৎনার সৃষ্টি হ’তে পারে। বস্ত্তত: একারণেই নারীদের উচ্চকণ্ঠে আযান দিতে নিষেধ করা হয়েছে।[97]
(১) যদি ইমাম ছালাতরত অবস্থায় নিজের ভুল সম্পর্কে নিশ্চিত হন কিংবা সরবে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার মাধ্যমে লোকমা দিয়ে মুক্তাদীগণ ভুল ধরিয়ে দেন, তবে তিনি শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ শেষে তাকবীর দিয়ে পরপর দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিবেন। অতঃপর সালাম ফিরাবেন।[89]
(২) যদি রাক‘আত বেশী পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন, অতঃপর ভুল ধরা পড়ে, তখন (পূর্বের ন্যায় বসে) তাকবীর দিয়ে ‘সিজদায়ে সহো’ করে সালাম ফিরাবেন। [90]
(৩) যদি রাক‘আত কম করে সালাম ফিরিয়ে দেন। তখন তাকবীর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাকী ছালাত আদায় করবেন ও সালাম ফিরাবেন। অতঃপর (তাকবীর সহ) দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিয়ে পুনরায় সালাম ফিরাবেন।[91]
(৪) ছালাতের কমবেশী যাই-ই হৌক সালামের আগে বা পরে দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিবেন।[92]
মোট কথা ‘সিজদায়ে সহো’ সালামের পূর্বে ও পরে দু’ভাবেই জায়েয আছে। কিন্তু তাশাহহুদ শেষে কেবল ডাইনে একটি সালাম দিয়ে দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ করে পুনরায় তাশাহ্হুদ ও দরূদ পড়ে দু’দিকে সালাম ফিরানোর প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই।[93] সিজদায়ে সহো-র পরে ‘তাশাহ্হুদ’ পড়ার বিষয়ে ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হ’তে যে হাদীছটি এসেছে, সেটি ‘যঈফ’।[94] তাছাড়া একই রাবী কর্তৃক বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমের ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কেননা সেখানে তাশাহ্হুদের কথা নেই।[95]
ইমামের ভুল হ’লে পুরুষ মুক্তাদী সরবে ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলে এবং মহিলা মুক্তাদী হাতের পিঠে হাত মেরে শব্দ করে ‘লোকমা’ দিবে (কুরতুবী)। [96] অর্থাৎ ভুল স্মরণ করিয়ে দিবে। এখানে নারী ও পুরুষের লোকমা দানের পৃথক পদ্ধতির কারণ হ’ল এই যে, নারীর কণ্ঠস্বরটাও লজ্জার অন্তর্ভুক্ত (لِأَنَّ صَوْتَهُنَّ عَوْرَةٌ)। যা প্রকাশ পেলে পুরুষের মধ্যে ফিৎনার সৃষ্টি হ’তে পারে। বস্ত্তত: একারণেই নারীদের উচ্চকণ্ঠে আযান দিতে নিষেধ করা হয়েছে।[97]
29. সিজদায়ে তেলাওয়াত (سجدة الةلاوة)
পবিত্র
কুরআনে এমন কতকগুলি আয়াত রয়েছে, যেগুলি তেলাওয়াত করলে বা শুনলে মুমিন পাঠক
ও শ্রোতা সকলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করতে হয়। এই সিজদা যেহেতু
ছালাত নয়, সে কারণে এর জন্য ওযূ বা ক্বিবলা শর্ত নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
সাথে মুশরিকরাও একবার সিজদা দিয়েছিল। এক স্থানে দীর্ঘক্ষণ থাকলে এ সিজদা
সঙ্গে সঙ্গে না করে কিছু পরেও করা যায়। স্থান পরিবর্তন হ’লে আর সিজদা করতে
হয় না, ক্বাযাও আদায় করতে হয় না। জেহরী বা সের্রী ছালাতে তেলাওয়াত করলেও এ
সিজদা দিতে হয়। একই আয়াত বারবার পড়লে তেলাওয়াত শেষে একবার সিজদা দিলেই
যথেষ্ট হবে। গাড়ীতে চলা অবস্থায় সিজদার আয়াত পড়লে বা শুনলে ইশারায় বা নিজের
হাতের উপরে সিজদা করবে। এই সিজদা ফরয নয়। করলে নেকী আছে, না করলে গোনাহ
নেই।
নিয়ম : প্রথমে তাকবীর দিয়ে
সিজদায় যাবে। অতঃপর দো‘আ পড়বে এবং পুনরায় তাকবীর দিয়ে মাথা উঠাবে।[98]
সিজদা মাত্র একটি হবে। এতে তাশাহহুদ নেই, সালামও নেই।[99]
ফযীলত : সিজদার আয়াত শুনে
বনু আদম সিজদায় চলে গেলে শয়তান কাঁদতে থাকে আর বলে যে, হায়! বনু আদমকে
সিজদার আদেশ দিলে সে সিজদা করল ও জান্নাতী হ’ল। আর আমাকে সিজদার আদেশ দিলে
আমি অবাধ্যতা করলাম ও জাহান্নামী হ’লাম।[100] একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
সূরায়ে নাজম তেলাওয়াত শেষে সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করলে ঐ সময় কা‘বা চত্বরে
উপস্থিত মুশরিক কুরায়েশরা সবাই সিজদায় পড়ে যায়। কিন্তু একজন বৃদ্ধ কুরায়েশ
নেতা একমুঠো মাটি কপালে ঠেকিয়ে বলে যে, আমার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। রাবী
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি তাকে পরে কাফের অবস্থায় নিহত হ’তে
দেখেছি। [101] এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বাকী যারা ঐদিন সিজদা করেছিল,
পরবর্তীতে তারা সবাই ইসলাম কবুলের সৌভাগ্য লাভ করেন।
সিজদায়ে তেলাওয়াতের দো‘আ :
অন্যান্য সিজদার ন্যায় ‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’ বলা যাবে। তবে আয়েশা (রাঃ) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে একটি খাছ দো‘আ বর্ণিত হয়েছে, যা তিনি রাত্রির ছালাতে সিজদায়ে তেলাওয়াতে পাঠ করতেন। যেমন-
سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهُ وَ شَقَّ سَمْعَهُ وَ بَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَ قُوَّتِهِ فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ-
‘সাজাদা ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহূ ওয়া শাক্ক্বা সাম‘আহূ ওয়া বাছারাহূ বেহাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহী; ফাতাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লেক্বীন ।
অন্যান্য সিজদার ন্যায় ‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’ বলা যাবে। তবে আয়েশা (রাঃ) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে একটি খাছ দো‘আ বর্ণিত হয়েছে, যা তিনি রাত্রির ছালাতে সিজদায়ে তেলাওয়াতে পাঠ করতেন। যেমন-
سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهُ وَ شَقَّ سَمْعَهُ وَ بَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَ قُوَّتِهِ فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ-
‘সাজাদা ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহূ ওয়া শাক্ক্বা সাম‘আহূ ওয়া বাছারাহূ বেহাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহী; ফাতাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লেক্বীন ।
অর্থ : আমার চেহারা সিজদা
করছে সেই মহান সত্তার জন্য যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় ক্ষমতা ও
শক্তি বলে এতে কর্ণ ও চক্ষু সন্নিবেশ করেছেন। অতএব মহাপবিত্র আল্লাহ যিনি
সুন্দরতম সৃষ্টিকর্তা (মুমিনূন ২৩/১৪)।[102]
পবিত্র কুরআনে সিজদার আয়াত সমূহ ১৫টি।[103] যা নিম্নরূপ : [104]
আ‘রাফ ২০৬, রা‘দ ১৫, নাহ্ল ৫০, ইস্রা/বনু
ইস্রাঈল ১০৯, মারিয়াম ৫৮, হজ্জ ১৮, ৭৭, ফুরক্বান ৬০, নমল ২৬, সাজদাহ ১৫,
ছোয়াদ ২৪, ফুছসালাত/হামীম সাজদাহ ৩৮, নাজম ৬২, ইনশিক্বাক্ব ২১, ‘আলাক্ব ১৯।
30. সিজদায়ে শোকর (سجدة الشكر)
কোন
খুশীর ব্যাপার ঘটলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের
জন্য সিজদায় পড়ে যেতেন।[105] সিজদায়ে তেলাওয়াতের ন্যায় এখানেও একটি সিজদা
হবে এবং এই সিজদাতেও ওযূ বা ক্বিবলা শর্ত নয়। হাদীছে তাকবীর দেওয়ার স্পষ্ট
বক্তব্য নেই। তবে সম্ভবতঃ অন্যান্য সিজদার উপরে ভিত্তি করে ছাহেবে ‘বাহরুর
রায়েক্ব’ তাকবীর দেওয়ার কথা বলেছেন।[106]
31. ছালাত বিষয়ে অন্যান্য জ্ঞাতব্য (معلومات أخرى فى الصلاة)
(১) মসজিদে প্রবেশের দো‘আ : প্রথমে ডান পা রেখে বলবে,
اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
(আল্লা-হুম্মাফ্তাহ্লী আবওয়া-বা রহমাতিকা)
‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও’।[107] অন্য
বর্ণনায় শুরুতে দরূদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। যেমন, اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى
مُحَمَّدٍ وَّسَلِّمْ (আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া সাল্লিম)
‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ
কর’।[108] ইমাম নববী বলেন, বাড়ীতে প্রবেশকালে সেখানে লোক থাক বা না থাক,
যেভাবে সালাম দেওয়া মুস্তাহাব (নূর ২৪/২৭, ৬১), তেমনিভাবে মসজিদে মুছল্লী থাক বা না থাক, সালাম দিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব। [109]
(২) মসজিদ থেকে বের হওয়ার দো‘আ : প্রথমে বাম পা রেখে বলবে, اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিকা) ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি’।[110] অন্য বর্ণনায় শুরুতে দরূদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। যেমন, اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّسَلِّمْ (আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া সাল্লিম) ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর’।[111]
(৩) যখন খাদ্য হাযির হবে, ওদিকে জামা‘আতের এক্বামত হবে, তখন প্রথমে খাওয়া সেরে নিতে পারবে।[112]
(৪) জামা‘আতে ছালাত দীর্ঘায়িত করা উচিৎ নয়। কেননা সেখানে কোন রোগী, দুর্বল ও বয়স্ক ব্যক্তি বা যরূরী কাজে ব্যস্ত ব্যক্তি থাকতে পারেন। তবে একাকী যত খুশী দীর্ঘ করা যাবে।[113] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জামা‘আত অবস্থায় কোন শিশুর কান্না শুনলে ছালাত সংক্ষেপ করতেন। যাতে বাচ্চার মা সমস্যায় না পড়ে।[114] অতএব জামা‘আত চলাকালে লোডশেডিং বা অনুরূপ হঠাৎ কোন সমস্যা দেখা দিলে ইমাম ছালাত সংক্ষেপ করবেন।
(৫) ফরয বা সুন্নাত-নফল পড়া অবস্থায় প্রয়োজনে ক্বিবলার দিকের দরজা খুলে দেওয়া যাবে’।[115] অতএব যরূরী প্রয়োজনে (ডাইনে-বামে না তাকিয়ে) সম্মুখ দিকের বিদ্যুতের সুইচ অন বা অফ করার মত ছোট-খাট কাজ করা যাবে।
(৬) ওযূ করে ছালাতের জন্য মসজিদে যাওয়া অবস্থায় (সম্মুখ দিয়ে হউক বা পিছন দিক দিয়ে হৌক) দু’হাতের আঙ্গুল পরস্পরের মধ্যে ঢুকানো অর্থাৎ ‘তাশবীক’ করা যাবেনা’। কেননা সে তখন ছালাতের মধ্যে থাকে। অথচ এতে ছালাতের প্রতি অনীহা প্রকাশ পায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একে শয়তানী কাজ বলে অভিহিত করেছেন।[116] ছালাতের মধ্যে আঙ্গুল মটকানো যাবে না। [117] তাছাড়া ছালাতে হাস্য করা, নাক-মুখ চুলকানো, বারবার কাপড় গুছানো বা ঘুমানো সবই অমনোযোগিতার পর্যায়ে পড়ে।
(৭) ছালাত অবস্থায় পুরুষের জন্য জামার হাতা সমূহ বা কাপড় গুটিয়ে রাখা যাবে না। বরং খোলামেলা ছেড়ে দিতে হবে।[118] তবে পুরুষের কাপড় ছালাত ও ছালাতের বাইরে সর্বদা টাখনুর উপরে রাখতে হবে।[119] কেননা টাখনুর নীচে যতটুকু যাবে, ততটুকু জাহান্নামে পুড়বে’। [120]
(৮) ছালাত অবস্থায় কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানো[121] কিংবা আসমানের দিকে বা ডানে-বাঁয়ে তাকানো নিষেধ। [122]
(৯) সিজদার স্থান একবার ছাফ করা যাবে।[123] সেখানে প্রচন্ড গরম থাকলে বা অন্য কোন সমস্যা থাকলে পরিহিত কাপড়ের একাংশ বিছিয়ে বা অন্য কিছু রেখে তার উপর সিজদা করা যাবে।[124]
(১০) অনেকে দু’হাঁটুর উপর অথবা মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর ভর করে সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ান। এটা ঠিক নয়। কেননা এর দ্বারা মাটিতে পুরা ভর করা যায় না। ইবনু ওমরের হাদীছে كَانَ يَعْجِنُ শব্দ এসেছে। যার অর্থ আটার খামীর যেমন হাতের পুরা চাপ দিয়ে করতে হয়, অনুরূপভাবে মাটিতে হাতের পুরা চাপ দিয়ে উঠতে হয়। [125]
(১১) হাই উঠলে ‘হা’ করে শব্দ করা যাবে না। তাতে শয়তান হাসে অথবা মুখে ঢুকে পড়ে। এ সময় মুখে হাত দিয়ে চেপে রাখতে হবে। [126] কারণ এতে ছালাতে ক্লান্তি প্রকাশ পায়। একইভাবে হাঁচি-কাশির শব্দ চেপে রাখতে হবে। কেননা তা অন্যের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়।
(১২) ছালাতরত অবস্থায় সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রাণী মারা যাবে।[127] এ অবস্থায় চোর ধরার জন্য ছালাত ছেড়ে দেওয়া যাবে।[128]
(১৩) হাঁচি এলে ‘আলহাম্দুলিল্লা-হ’ বলা যাবে।[129] তবে হাঁচির জওয়াব দেওয়া যাবে না।[130] মুখে সালামের জওয়াব দেওয়া যাবে না। তবে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় জওয়াব দেওয়া যাবে। [131]
(১৪) বাচ্চা কোলে নিয়েও ছালাত আদায় করা যাবে।[132]
(১৫) কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করা যাবে না এবং কবরের উপরে বসা যাবে না।[133] যে কবরে পূজা হয় এবং কবরবাসীর কাছে কিছু চাওয়া হয়, তার পাশে মসজিদ থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করা যাবে না।
(১৬) মুছল্লীদের নিকটে আওয়ায পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে ইমামের তাকবীরের পিছে পিছে ‘মুকাবিবর’ উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দিতে পারবে। অসুস্থ রাসূল (ছাঃ)-এর তাকবীরের পিছে পিছে আবুবকর (রাঃ) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ‘মুকাবিবর’।[134]
(১৭) যে সব ছালাতের শেষে সুন্নাত নেই, অর্থাৎ ফজর ও আছরের শেষে মুছল্লীদের দিকে ফিরে বসা এবং অন্য সময় না বসা, একইভাবে কেবল ফরয ছালাতে ইমামের পাগড়ী মাথায় দেওয়া এবং সালাম ফিরানোর পরে তা খুলে রাখা, সম্পূর্ণরূপে সুন্নাত পরিপন্থী কাজ।
(১৮) পোষাক, টুপী ও পাগড়ীতে অমুসলিমদের এবং শিরক ও বিদ‘আতপন্থীদের অনুকরণ করা নিষেধ।[135]
(১৯) মেয়েদের পুরুষালী পোষাক এবং পুরুষদের মেয়েলী পোষাক পরা নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসব লোককে ঘর থেকে বের করে দিতে বলেছেন। [136]
(২০) ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে ছালাত শুরু করতে হবে।[137] ‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া’... বলে মুখে নিয়ত পাঠের মাধ্যমে ছালাত শুরু করা বিদ‘আত। যারা একে ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলেন, তাদের জবাবে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে সৃষ্ট ‘সকল বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’। আর ‘সকল ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।[138]
(২১) তাকবীর দ্বারা ছালাত শুরু হয় এবং সালাম দ্বারা শেষ হয়।[139] অনুরূপভাবে ছালাতে প্রবেশকালে তাকবীর দিয়ে বাম হাতের উপর ডান হাত বুকে বাঁধতে হয়’।[140] বুকে হাত বাঁধা ব্যতীত অন্যভাবে ছালাত আদায় করা হয় ভিত্তিহীন, না হয় যঈফ।[141]
(২২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের মধ্যে তিনটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন : (১) মোরগের মত ঠোকর দিয়ে দ্রুত ছালাত আদায় করা (২) বানর বা কুকুরের মত চার হাত-পা একত্র করে বসা (৩) শৃগালের মত এদিক-ওদিক তাকানো।[142]
(২৩) ছালাতের সময় নকশা করা পোষাক পরিধান করা উচিৎ নয়, যা নিজের বা অন্য মুছল্লীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।[143] মুছাল্লা বা জায়নামাযের ব্যাপারেও একই কথা বলা যেতে পারে। ডান, বাম বা সম্মুখ থেকে ছবিযুক্ত সবকিছু দৃষ্টির আড়ালে সরিয়ে ফেলতে হবে। [144]
(২৪) ‘বাচ্চাদের মসজিদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখো’ বলে যে হাদীছ প্রচলিত আছে, তা যঈফ।[145] একইভাবে বাচ্চাদের পৃথকভাবে পিছনের কাতারে দাঁড়ানোর হাদীছও যঈফ।[146]
(২৫) ‘যে ব্যক্তি ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তার ছালাত বিনষ্ট হবে’ এবং ‘যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে, তার মুখ আগুন দিয়ে ভরে দেওয়া হবে’ বলে যেসব হাদীছ প্রচলিত আছে, তা ‘মওযূ’ বা জাল[147] এবং মাটি দিয়ে ভরে দেওয়ার হাদীছ ‘মওকূফ’ ও যঈফ। [148]
(২৬) ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কথা বলার আগেই ছয় রাক‘আত (নফল) ছালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পঞ্চাশ বছরের গোনাহ মাফ হবে’। ‘যে ব্যক্তি ঐ ছয় রাক‘আতের মধ্যে কোন মন্দ কথা বলবে না, সে ব্যক্তি বারো বছরের ইবাদতের সমান নেকী পাবে’। ‘মাগরিব ও এশার মধ্যে যে ব্যক্তি বিশ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীছ সমূহ অত্যন্ত যঈফ।[149] মাগরিব হ’তে এশার মধ্যে পঠিত নফল ছালাত সমূহকে ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ বলার হাদীছটিও যঈফ।[150] বরং ছালাতুয যোহাকেই রাসূল (ছাঃ) ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ বলেছেন’।[151]
(২৭) সারা রাত্রি ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়া যাবে না।[152] আল্লাহ বলেন, ‘তুমি রাত্রিতে ছালাত আদায় কর কিছু অংশ বাদ দিয়ে’ (মুযযাম্মিল ৭৩/২-৪)। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কদাচিৎ পুরা রাত্রি জাগরণ করেছেন।[153] তিনি কখনো একরাতে কুরআন খতম করেননি।[154] এক্ষণে ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হিঃ/৬৯৯-৭৬৭ খৃঃ) একরাতে কুরআন খতম করতেন ও তাতে এক হাযার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন’। ‘তিনি যেখানে মৃত্যুবরণ করেন, সেখানে সাত হাযার বার কুরআন খতম করেন’। ‘তিনি একটানা ৪০ বছর এশার ওযূতে ফজরের ছালাত আদায় করেছেন’ এবং ‘প্রতি রাক‘আতে কুরআন খতম করেছেন[155] ইত্যাদি যেসব কথা প্রচারিত হয়েছে, তা স্রেফ অতিভক্তির বাড়াবাড়ি ও ইমামের নামে মিথ্যা অপবাদ মাত্র।[156]
(২৮) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সবচেয়ে বড় চোর হ’ল ‘ছালাত চোর’। সে হ’ল ঐ ব্যক্তি যে ছালাতে রুকূ ও সিজদা পূর্ণ করে না’। [157] তিনি বলেন, যদি সে ঐ অবস্থায় মারা যায়, তবে সে ‘মুহাম্মাদী মিল্লাতের বহির্ভূত (مَاتَ عَلَى غَيْرِ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ) হিসাবে মৃত্যুবরণ করবে’।[158]
(২৯) ফরয ও নফলের মধ্যে কথা বলা বা বের হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পার্থক্য করা উচিৎ।[159] অমনিভাবে ফরয ছালাত আদায়ের স্থান হ’তে কিছুটা সরে গিয়ে সুন্নাত-নফল ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব।[160] ইমাম বুখারী ও ইমাম বাগাভী বলেন, এর দ্বারা ইবাদতের স্থানের সংখ্যা বেশী হয় এবং সিজদার স্থান সমূহ আল্লাহর নিকটে সাক্ষী হয়। যেমন সূরায়ে যিলযালের ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন যমীন নিজেই আল্লাহর হুকুমে (তার উপরে কৃত বান্দার আমল সম্পর্কে) খবর দিবে’। অনুরূপভাবে সূরা দুখান ২৯ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, কোন মুমিন মারা গেলে তার সিজদার স্থান সমূহ কাঁদতে থাকে এবং তার সৎকর্ম সমূহ আসমানে উঠানো হয়। কিন্তু আসমান ও যমীন কোন কাফেরের জন্য কাঁদবেনা। [161] কারণ ওরা কখনো আল্লাহর উদ্দেশ্যে মাটিতে সিজদা করেনি।
(৩০) চোখে দেখা বা কানে শোনার মাধ্যমে যদি ইমামের ইক্বতিদা করা সম্ভব হয়, তবে কাছাকাছি হ’লে তাঁর ইক্বতিদা করা জায়েয। যদিও সেটা মসজিদের বাইরে হয় কিংবা উভয়ের মধ্যে কোন দেওয়াল, রাস্তা বা অনুরূপ কোন প্রতিবন্ধক থাকে।[162]
(৩১) ছালাতের মধ্যে আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় ক্বিরাআত ও তাসবীহ পাঠ করা যাবে না। মুখস্থ না থাকায় যদি কেউ কুরআনের কিছুই পড়তে না পারে অথবা অনারব হওয়ার কারণে কুরআন না জানে, তখন সে কেবল সুবহানাল্লাহ, ওয়াল-হামদুলিল্লাহ, অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, অলা হাওলা অলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে। ঐসঙ্গে এ দো‘আও করতে পারবে, আল্লা-হুম্মারহামনী, ওয়া ‘আফেনী, ওয়াহদেনী, ওয়ারঝুক্বনী (হে আল্লাহ! আমাকে অনুগ্রহ কর, আমাকে সুস্থতা দাও, আমাকে সঠিক পথ দেখাও এবং আমাকে রূযী দাও!)।[163] তবে এটি স্রেফ একবার অথবা সাময়িক কালের জন্য। কেননা সূরায়ে ফাতিহা ব্যতীত ছালাত সিদ্ধ হয় না।[164]
0 Comments