Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

▌নিহত ব্যক্তিকে শহিদ খেতাব দেওয়ার হুকুম

▌নিহত ব্যক্তিকে শহিদ খেতাব দেওয়ার হুকুম
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

প্রশ্ন: ‘অমুক ব্যক্তি শহিদ’—এ কথা বলার বিধান কী?

উত্তর: ‘শহিদ’ আখ্যা দেওয়ার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। যথা:

এক. কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে শহিদ বলা। যেমন বলা হয়—‘যে ব্যক্তিই আল্লাহ’র রাস্তায় নিহত হয়, সে ব্যক্তিই শহিদ’, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহিদ’, ‘যে ব্যক্তি প্লেগ বা মহামারিতে নিহত হয় সে শহিদ’ প্রভৃতি। এভাবে বলা জায়েজ আছে, যেমনটি এ ব্যাপারে বর্ণিত দলিলে ব্যক্ত করা হয়েছে। কেননা আপনি (এর মাধ্যমে) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বক্তব্যের সাক্ষ্য প্রদান করছেন। আমরা আমাদের ‘এভাবে বলা জায়েজ রয়েছে’—কথাটির দ্বারা এটা বুঝিয়েছি যে, এভাবে বলা নিষিদ্ধ নয়। যদিও এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়া হলো ওয়াজিব, কেননা এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সংবাদকে সত্যায়ন করা হয়।

দুই. কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শহিদ বলা। যেমন আপনি কোনো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে বললেন যে, সে শহিদ। এভাবে বলা জায়েজ নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা স্বতন্ত্র, যাকে নাবী ﷺ ‘শহিদ’ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন, অথবা যার ‘শহিদ’ হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যমত পোষণ করেছে। এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, باب لا يقال: فلان شهيد “পরিচ্ছেদ: অমুক ব্যক্তি শহিদ—এ কথা বলা যাবে না’।” [সাহীহ বুখারী, জিহাদ অধ্যায় (৫৬); পরিচ্ছেদ- ৭৭]

হাফিয ইবনু হাজার আল-‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন,

أي على سبيل القطع بذلك إلا إن كان بالوحي وكأنه أشار إلى حديث عمر أنه خطب فقال: تقولون في مغازيكم: فلان شهيد، ومات فلان شهيداً ولعله قد يكون قد أوقر راحلته، ألا لا تقولوا ذلكم، ولكن قولوا كما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من مات في سبيل الله، أو قُتل فهو شهيد وهو حديث حسن أخرجه أحمد وسعيد بن منصور وغيرهما من طريق محمد بن سيرين عن أبي العجفاء عن عمر.

“অর্থাৎ, অহির মাধ্যমে অবগত হওয়া ব্যতিরেকে কাউকে অকাট্যভাবে ‘শহিদ’ বলা যাবে না। সম্ভবত তিনি ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র এই কথার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যে কথাটি তিনি ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা তোমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে বলে থাক—‘অমুক ব্যক্তি শহিদ’, ‘অমুক ব্যক্তি শহিদ অবস্থায় মারা গেছে’। হতে পারে সে ব্যক্তি নিজের বাহনের (আরোহণের প্রাণী) ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়েছে। সাবধান! তোমরা এরকম কথা বোলো না। বরং তোমরা বলো, যেমনটি রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ’র রাস্তায় মারা যায়, অথবা নিহত হয়, সে ব্যক্তি শহিদ।” এটি হাসান সনদের হাদীস। হাদীসটি আহমাদ, সা‘ঈদ বিন মানসূর প্রমুখ বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন সীরীনের সনদে, যিনি (ইবনু সীরীন) বর্ণনা করেছেন আবূ ‘উজফা থেকে, আর আবূ ‘উজফা ‘উমার থেকে।” [ফাতহুল বারী, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৯০]

কেননা না জেনে কাউকে কোনো কিছুর সার্টিফিকেট দেওয়া যায় না। আর কোনো ব্যক্তির ‘শহিদ’ হওয়ার জন্য শর্তই হলো তাকে আল্লাহ’র কালিমা বুলন্দ করার জন্য স্বশস্ত্র জিহাদ করতে হবে। এটি মূলত অপ্রকাশ্য নিয়াত বা অন্তরস্থ অভিলাষ, যা জানার কোনো উপায় নেই। নাবী ﷺ এদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, مَثَلُ الْمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُجَاهِدُ فِيْ سَبِيْلِهِ كَمَثَلِ الصَّائِمِ الْقَائِمِ “আল্লাহ’র রাস্তার মুজাহিদ—অবশ্য আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন, কে তাঁর রাস্তায় জিহাদ করছে—সর্বদা সিয়াম পালনকারী ও সালাত আদায়কারীর মতো।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৭৮৭]

তিনি ﷺ আরও বলেছেন, وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَا يُكْلَمُ أَحَدٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُكْلَمُ فِيْ سَبِيْلِهِ إِلَّا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاللَّوْنُ لَوْنُ الدَّمِ وَالرِّيحُ رِيْحُ الْمِسْكِ “সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কোনো ব্যক্তি আল্লাহ’র রাস্তাই আহত হলে—আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন, কে তাঁর রাস্তায় আহত হয়—কেয়ামতের দিন সে তাজা রক্তবর্ণে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে কস্তুরীর সুগন্ধি ছড়াবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৮০৩]

তবে যে ব্যক্তির বাহ্যিক অবস্থা ভালো, আমরা তাঁর ‘শহিদ’ হওয়ার আশা রাখব। আমরা তাকে ‘শহিদ’ বলব না, আবার তার ব্যাপারে কুধারণাও করব না। আশা রাখার ব্যাপারটি হলো উক্ত দুই অবস্থার মধ্যবর্তী পর্যায়। কিন্তু আমরা দুনিয়ায় তার ওপর শহিদের বিধিবিধান প্রয়োগ করব। সে যদি আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে নিহত হয়, তাহলে তাকে জানাযাহ’র নামাজ ছাড়াই তার রক্তমাখা কাপড়ে দাফন করতে হবে। আর সে যদি অন্যান্য শহিদদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তাকে গোসল করাতে হবে, কাফনের কাপড় পরাতে হবে এবং তার জনাযাহ’র নামাজ পড়তে হবে।

কেননা আমরা যদি কাউকে নির্দিষ্টভাবে ‘শহিদ’ বলি, তাহলে এই সার্টিফিকেট দেওয়ার মাধ্যমে তাকে ‘বেহেশতবাসী’ বলে সার্টিফিকেট দেওয়া আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অথচ এটি আহলুস সুন্নাহ’র আদর্শ পরিপন্থি। কেননা নাবী ﷺ যে কাজের কাজিকে অথবা নির্দিষ্টভাবে যাদেরকে ‘বেহেশতবাসী’ বলেছেন, তাদেরকে ছাড়া আহলুস সুন্নাহ’র লোকেরা অন্য কাউকে জান্নাত বা বেহেশতের সার্টিফিকেট দেয় না।

তবে আহলুস সুন্নাহ’র একদল বিদ্বান এই মত পোষণ করেছেন যে, কোনো ব্যক্তির প্রশংসার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যমত পোষণ করলে তাকে এই সার্টিফিকেট দেওয়া জায়েজ আছে। এই মত পোষণ করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)।

এ আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ’র দলিল অথবা উম্মাহ’র সর্ববাদিসম্মত মত ব্যতীত নির্দিষ্টভাবে কাউকে ‘শহিদ’ বলা বৈধ নয়। তবে যার বাহ্যিক অবস্থা ভালো, আমরা তার ‘শহিদ’ হওয়ার আশা রাখব, যেমনটি কিছুপূর্বে বলা হয়েছে। এই আশা রাখাটাই তার মর্যাদা ও সম্মান হিসেবে যথেষ্ট। আর এ ব্যাপারে প্রকৃত জ্ঞান তার মহামহিমান্বিত স্রষ্টার নিকট রয়েছে।
·
তথ্যসূত্র:

ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১১৫-১১৭; দারুল ওয়াত্বান, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৩ হিজরী (সর্বশেষ প্রকাশ)।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Post a Comment

0 Comments