যিনাকারীনী মহিলা যদি গর্ভবতী হয়ে যায় তাহলে সে অবস্থায় কি যিনাকারীর সাথে তার বিবাহ বৈধ?
▬▬▬➰▬▬▬
প্রশ্ন: প্রেমের সম্পর্কের পর প্রেমিক যুগলের মধ্যে কোনও নতুন জীবন চলে আসার উপক্রম হয়েছে (অর্থাৎ মেয়েটি গর্ভবতী হয়েছে)।
এমতাবস্থায় অনেকে যিনার কারণে গর্ভবতী মেয়েকে যিনাকারী পুরুষের সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। সম্ভবত: বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এই বিয়ে বৈধ। কিন্তু শরিয়ত মোতাবেক এইসব বিয়ে কি বৈধ হয়ে থাকে?
উত্তর:
জিনা-ব্যভিচার জঘন্য গুনাহ (কবিরা গুনাহ)। ইসলামের দৃষ্টিতে এর শাস্তি হল, প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যদি জেনা কারি/জেনাকারি নি বিবাহিত হয়। ইসলামে এর চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কিছু নেই।
অথবা ১০০ বেত্রাঘাত এবং এক বছর দেশান্তর (বর্তমানে জেল) যদি জেনাকারী/জেনাকারীনি অবিবাহিত হয়।
কিন্তু বর্তমানে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, গার্মেন্টস, অফিস-আদালত সহ সর্বত্র নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, আল্লাহর ভয় না থাকা, ইসলামের কঠোর আইনের অনুপস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এই ভয়ানক অপরাধ আমাদের সমাজে পানির মত সহজ হয়ে গেছে!! যা একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক!
যাহোক, আল্লাহ আমাদের সমাজকে এই অভিশপ্ত পাপাচার থেকে পবিত্র করেন-এই দুআ করি।
অত:পর কথা হল, কথিত প্রেমের নামে দেহ ভোগের এই ঘৃণিত অপরাধে জড়িত হওয়ার ফলশ্রুতিতে যদি মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে যায় তাহলে উক্ত যিনাকারী পুরুষের সাথে তার বিবাহ বন্ধন বৈধ দুটি শর্ত সাপেক্ষ। যথা:
🔸 ১. আল্লাহর নিকট খাঁটি ভাবে তওবা করা। (ব্যভিচারী পুরুষ ও নারী উভয়কেই তওবা করে পবিত্র হতে হবে)।
🔸 ২. গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া।
তওবা করা এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত মহিলাটির বিবাহ বৈধ নয়।
এটি অধিকাংশ আলেমের অভিমত এবং হাদিসের আলোকেও এটি অধিক বিশুদ্ধ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
▪ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تُوْطَأُ حَامِلٌ حَتَّى تَضَعَ، وَلَا غَيْرُ ذَاتِ حَمْلٍ حَتَّى تَحِيْضَ حَيْضَةً.
‘‘কোন গর্ভবতী বান্দির সাথে সঙ্গম করা যাবে না যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে এবং গর্ভবতী নয় এমন কোন বান্দির সাথেও সঙ্গম করা যাবে না যতক্ষণ না সে একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম করে। [তা হলে সে যে গর্ভবতী নয় তা নিশ্চিত হওয়া যাবে’’।] (আবূ দাউদ ২১৫৭, সুনানে আবু দাউদ, সনদ সহীহ)
▪ রুওয়াইফি’ বিন্ সাবিত আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَّسْقِيَ مَآءَهُ زَرْعَ غَيْرِهِ، وَلَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَّقَعَ عَلَى امْرَأَةٍ مِنَ السَّبْيِ حَتَّى يَسْتَبْرِئَهَا بِحَيْضَةٍ.
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন পুরুষের জন্য হালাল হবে না কোন গর্ভবতী বান্দির সাথে সঙ্গম করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন পুরুষের জন্য হালাল হবে না গর্ভবতী নয় এমন কোন বান্দির সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না সে একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম করে তার গর্ভবতী না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়’’। (আবূ দাউদ ২১৫৮, শাইখ আলবানী বলেন, সনদ হাসান)
উপরোক্ত হাদিসের আলেমগণ আলোকে গর্ভবতী নারীর বিবাহকে হারাম বলেছেন।
▪ তওবার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّـهِ إِلَـٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّـهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا - يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا - إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَـٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّـهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّـهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
"বরং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।" (সূরা ফুরকান: ৭০, ৭০ ও ৭১)
সৌদি আরবে গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রা. এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
যদিও ইমাম আবু হানিফা রাহ. সহ কোনো কোনো আলেম গর্ভবতী অবস্থায় যিনাকারীর সাথে বিবাহকে বৈধ বলেছেন। কিন্তু অধিক নির্ভরযোগ্য অভিমত হল, যিনাকারী ও যিনাকারীনী উভয়কে এই অন্যায় কর্ম সম্পাদনের কারণে খাঁটি তওবা করে পবিত্র হতে হবে। তারপর মহিলার গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর উক্ত যিনারকারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে; এর আগে নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬➰▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
▬▬▬➰▬▬▬
প্রশ্ন: প্রেমের সম্পর্কের পর প্রেমিক যুগলের মধ্যে কোনও নতুন জীবন চলে আসার উপক্রম হয়েছে (অর্থাৎ মেয়েটি গর্ভবতী হয়েছে)।
এমতাবস্থায় অনেকে যিনার কারণে গর্ভবতী মেয়েকে যিনাকারী পুরুষের সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। সম্ভবত: বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এই বিয়ে বৈধ। কিন্তু শরিয়ত মোতাবেক এইসব বিয়ে কি বৈধ হয়ে থাকে?
উত্তর:
জিনা-ব্যভিচার জঘন্য গুনাহ (কবিরা গুনাহ)। ইসলামের দৃষ্টিতে এর শাস্তি হল, প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যদি জেনা কারি/জেনাকারি নি বিবাহিত হয়। ইসলামে এর চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কিছু নেই।
অথবা ১০০ বেত্রাঘাত এবং এক বছর দেশান্তর (বর্তমানে জেল) যদি জেনাকারী/জেনাকারীনি অবিবাহিত হয়।
কিন্তু বর্তমানে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, গার্মেন্টস, অফিস-আদালত সহ সর্বত্র নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, আল্লাহর ভয় না থাকা, ইসলামের কঠোর আইনের অনুপস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এই ভয়ানক অপরাধ আমাদের সমাজে পানির মত সহজ হয়ে গেছে!! যা একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক!
যাহোক, আল্লাহ আমাদের সমাজকে এই অভিশপ্ত পাপাচার থেকে পবিত্র করেন-এই দুআ করি।
অত:পর কথা হল, কথিত প্রেমের নামে দেহ ভোগের এই ঘৃণিত অপরাধে জড়িত হওয়ার ফলশ্রুতিতে যদি মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে যায় তাহলে উক্ত যিনাকারী পুরুষের সাথে তার বিবাহ বন্ধন বৈধ দুটি শর্ত সাপেক্ষ। যথা:
🔸 ১. আল্লাহর নিকট খাঁটি ভাবে তওবা করা। (ব্যভিচারী পুরুষ ও নারী উভয়কেই তওবা করে পবিত্র হতে হবে)।
🔸 ২. গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া।
তওবা করা এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত মহিলাটির বিবাহ বৈধ নয়।
এটি অধিকাংশ আলেমের অভিমত এবং হাদিসের আলোকেও এটি অধিক বিশুদ্ধ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
▪ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تُوْطَأُ حَامِلٌ حَتَّى تَضَعَ، وَلَا غَيْرُ ذَاتِ حَمْلٍ حَتَّى تَحِيْضَ حَيْضَةً.
‘‘কোন গর্ভবতী বান্দির সাথে সঙ্গম করা যাবে না যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে এবং গর্ভবতী নয় এমন কোন বান্দির সাথেও সঙ্গম করা যাবে না যতক্ষণ না সে একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম করে। [তা হলে সে যে গর্ভবতী নয় তা নিশ্চিত হওয়া যাবে’’।] (আবূ দাউদ ২১৫৭, সুনানে আবু দাউদ, সনদ সহীহ)
▪ রুওয়াইফি’ বিন্ সাবিত আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَّسْقِيَ مَآءَهُ زَرْعَ غَيْرِهِ، وَلَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَّقَعَ عَلَى امْرَأَةٍ مِنَ السَّبْيِ حَتَّى يَسْتَبْرِئَهَا بِحَيْضَةٍ.
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন পুরুষের জন্য হালাল হবে না কোন গর্ভবতী বান্দির সাথে সঙ্গম করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন পুরুষের জন্য হালাল হবে না গর্ভবতী নয় এমন কোন বান্দির সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না সে একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম করে তার গর্ভবতী না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়’’। (আবূ দাউদ ২১৫৮, শাইখ আলবানী বলেন, সনদ হাসান)
উপরোক্ত হাদিসের আলেমগণ আলোকে গর্ভবতী নারীর বিবাহকে হারাম বলেছেন।
▪ তওবার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّـهِ إِلَـٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّـهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا - يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا - إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَـٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّـهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّـهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
"বরং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।" (সূরা ফুরকান: ৭০, ৭০ ও ৭১)
সৌদি আরবে গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রা. এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
যদিও ইমাম আবু হানিফা রাহ. সহ কোনো কোনো আলেম গর্ভবতী অবস্থায় যিনাকারীর সাথে বিবাহকে বৈধ বলেছেন। কিন্তু অধিক নির্ভরযোগ্য অভিমত হল, যিনাকারী ও যিনাকারীনী উভয়কে এই অন্যায় কর্ম সম্পাদনের কারণে খাঁটি তওবা করে পবিত্র হতে হবে। তারপর মহিলার গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর উক্ত যিনারকারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে; এর আগে নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬➰▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
0 Comments