নারীদের পর্দা বিষয়ক ১৫ টি হাদিস....
1⃣দেবর মৃত্যু সমতুল্য। (মৃত্যু থেকে মানুষ যেভাবে পলায়ন
বা সতর্কতা অবলম্বন করে এক্ষেত্রে তাই করতে হবে) (বুখারীঃ ৫২৩২, মুসলিমঃ ২১৭২, তিরমিযীঃ
১১৭১)
2⃣কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হলে নিঃসন্দেহে
তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (তিরমিযীঃ ১১৭১)
3⃣তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো না যাদের স্বামীরা বিদেশে
আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্ত শিরায় প্রবাহিত হয়। (তিরমিযীঃ ১১৭২)
4⃣কোন অবৈধ নারীকে স্পর্শ করার চেয়ে মাথায় লোহার পেরেক
পুঁতে যাওয়া ভালো। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহঃ ২২৬)
5⃣রাসূল (সঃ) বলেন, “দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী
যাদেরকে আমি দেখিনি। তারা ভবিষ্যতে আসবে। প্রথম শ্রেণী হবে একদল অত্যাচারী, যাদের
সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক যার দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয়
শ্রেণী হল সে নারীর দল, যারা কাপড় পরিধান করবে কিন্তু তবুও তারা উলঙ্গ অবস্থায়
থাকবে, নিজেরা অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট এবং অন্যদেরকেও তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে, যাদের
মস্তক (খোঁপা বাধার কারণে) উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ
করবে না। তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ বহু দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া
যাবে।” (মুসলিমঃ ২১২৮)
6⃣রাসূল (সঃ) মসজিদের বাহিরে দেখতে পান যে, নারীরা রাস্তায়
পুরুষের সাথে মিশে গেছেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সঃ) নারীদের বলেন, তোমরা অপেক্ষা কর,
কারণ, তোমাদের জন্য রাস্তার মাঝে হাটা উচিত নয়, তোমাদের জন্য হল রাস্তার পাশ। এ
কথা শোনে নারী দেয়াল ঘেঁসে হাটা শুরু করে তখন দেখা গেল তাদের অনেকের কাপড় দেয়ালের
সাথে মিশে যেত। (আবু দাউদঃ ৫২৭২)
7⃣কোন মহিলা যেন মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকিনী সফর না করে,
তার নিকট যেন মাহরাম ছাড়া কোনো বেগানা পুরুষ প্রবেশ না করে, এ কথা শোনে এক ব্যক্তি
জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমি অমুক অমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সৈন্য
দলে নাম লিখিয়েছি অথচ আমার স্ত্রী হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন এখন আমি কি
করব? রাসূল (সঃ) তাকে উত্তর দিলেন তুমি তার সাথে বের হও। (বুখারীঃ ১৮৬২)
8⃣নারী গুপ্ত জিনিস, সুতরাং যখন সে(বাড়ি হতে) বের হয়, তখন
শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে রমণীয় করে দেখায়। (তিরমিযীঃ ১১৩৭)
9⃣রাসূল (সঃ) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যে, “আমরা যেন মহিলাদের
নিকট তাদের স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না করি।” (তিরমিযীঃ ২৭৭৯)
🔟প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী।
আর নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায়
তাহলে সে এক বেশ্যা। এমন কি এই অবস্থায় নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ। রাসূল (সঃ)
বলেন, “যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত
কোনো নামায কবুল হবে না।” (সহীহ আল-জামে আস-সগীর আযযিয়াদাতুহঃ ২৭০)
1⃣1⃣আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের
কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চোখের ব্যভিচার হল
দৃষ্টি, দুই কানের ব্যভিচার হল শ্রবণ, মুখের ব্যাভিচার হল কথা বলা, হাতের ব্যভিচার
হল স্পর্শ করা এবং পায়ের ব্যভিচার হল খারাপ উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া। আর অন্তর আশা
ও আকাঙ্ক্ষা করতে থাকে। লজ্জা স্থান তাকে বাস্তবায়ন করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।
(মুসলিমঃ ২৬৫৭)
1⃣2⃣যে নারী স্বগৃহ, স্বামীগৃহ
বা মায়ের বাড়ি ছাড়া অন্য স্থানে নিজের পর্দা রাখে (কাপড় খোলে) সে তার ও তার রবের
মধ্যকার পর্দা ও লজ্জাশীলতাকে বিদীর্ণ করে দেয়। (তিরমিযীঃ ২৮০৩)
1⃣3⃣কোন নারীর উপর তোমার দৃষ্টি
পড়লে তার প্রতি) বারবার দৃষ্টিপাত করো না। বরং নজর অতিসত্তর ফিরিয়ে নিও, কারণ,
তোমার জন্য প্রথমবার ক্ষমা, দ্বিতীয়বার নয়। (আহমদঃ ১৩৬৯)
1⃣4⃣নারীদের বেশ ধারী পুরুষের
উপর অভিশাপ এবং পুরুষদের বেশ ধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। (ইবনে মাজাহঃ ১৯০৪)
1⃣5⃣যে নারী তার মাথায় এমন চুল
বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে। (সহীহ আল-জামিউস
সাগীরঃ ২৭০৫)
লেখাটি ভালো লাগলে এবং উপকৃত হলে শেয়ার করে পৌঁছিয়ে দিন অন্যের কাছে।
কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য
ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]
ADMIN BY RASIKUL ISLAM
ইসলামে নারীর পর্দা
পর্দা-বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ-ব্যবস্থার
এবং বিশেষভাবে উম্মতের মায়েদের জন্য অনেক বড় ইহসান। এই বিধানটি মূলত ইসলামী শরীয়তের
যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা ও সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল। পর্দা
নারীর মর্যাদার প্রতীক এবং ইফফাত ও পবিত্রতার একমাত্র উপায়। অনেকে মনে করেন, পর্দার-বিধান
শুধু নারীর জন্য। এ ধারণা ঠিক নয়। পুরুষের জন্যও পর্দা অপরিহার্য। তবে উভয়ের পর্দার
ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যে শ্রেণীর জন্য যে পর্দা উপযোগী তাকে সেভাবে পর্দা করার
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কোনো ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিই কুরআন-সুন্নাহর পর্দা সম্পর্কিত
আয়াত ও হাদীসসমূহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে এই বাস্তবতা স্বীকার করবেন যে, ইসলামে পর্দার
বিধানটি অন্যান্য হিকমতের পাশাপাশি নারীর সম্মান ও সমাজের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই
দেওয়া হয়েছে। এজন্য এই বিধানের কারণে প্রত্যেককে ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।
কৃতঘ্ন হয়ে এ বিধান সম্পর্কে অযথা আপত্তি করা উচিত নয়। প্রাশ্চাত্যের ও প্রাশ্চাত্য
প্রভাবিত পুরুষদের অন্তরে পর্দা পড়ে যাওয়ার কারণে তারা এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে
না পারলেও আজকের পশ্চিমা নারীরা এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছে। আর এই বিধানটিই তাদেরকে
ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার মাধ্যম হয়েছে। নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি
সহজ ও কার্যকর উপায় হল ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই
হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। পর্দার এই সুফল স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা
করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব,আয়াতঃ৫৩) সুতরাং মানবসমাজকে পবিত্র ও পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে পর্দা-বিধানের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে বর্তমান সমাজের যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা ও নারীজাতির নিরাপত্তার জন্য পর্দা-বিধানের পূর্ণ অনুসরণ এখন সময়ের দাবি। শরয়ি পর্দার তিনটি স্তর ও প্রকার প্রথম স্তরঃ নারীর শরীর ও তার প্রত্যেক কাজ কর্ম না মাহরাম পুরুষের আড়ালে থাকা, যা বাড়ির বেষ্টনী,তাবু,পালকি,কাপড়ের ঘেরাও,বঙ্গিন কাঁচের প্রাইভেট গাড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে হয়ে থাকে। পর্দার ব্যাপারে ৭টি কুরআনের আয়াত তথা আল্লাহর বাণী এবং ৭০টি হাদিস তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী অবতীর্ণ ও বর্ণীত হয়েছে। সব বাণীরই নির্যাস হলো এই পর্দাই ইসলামের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পর্দার অন্য দুই স্তর হলো প্রয়োজন ও ঠেকার ভিত্তিতে রাখা হয়েছে। যা শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদিত।বিনা প্রয়োজনে এ দু’প্রকার পর্দা ইসলামে অনুমতি নেই। وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَٰعًا فَسْـَٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٍ তোমরা তাদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। (সূরা আহযাব,আয়াতঃ ৫৩) এই আয়াত থেকেও বোঝা যায়, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দা-বিধানের বাইরে নয়। উম্মুল মুমিনীনগণের আমলও তা প্রমাণ করে। এই আয়াতে যখন পর্দার বিধানকে সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মুল মুমিনীনদের জন্যও অধিকতর পবিত্রতার উপায় বলা হয়েছে তখন উম্মতের আর কে আছে যে এই বিধানের বাইরে থাকতে পারে? وَقَرْنَ فِى بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ ٱلْأُولَىٰ وَأَقِمْنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعْنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجْسَ أَهْلَ ٱلْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সলাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব,আয়াতঃ ৩৩) এ আয়াত আরো পরিস্কার যে, নারীরা পর পুরুষদের নজরের বাইরে থাকবে। দ্বিতীয় স্তরঃ বিশেষ কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে যেমন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে,মা-বাবাকে দেখার জন্য বাপের বাড়িতে,রোগীর খবর নেয়ার জন্য কোনো মুসলিম আত্মীয়য়ের বাডি ইত্যাদি যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে পরিহিত কাপড়ের উপর মাথা থেকে পা পর্যন্ত লম্বা একটা চাদর অথবা বোরকা পরে একজন মুসলিম নারী ঘর থেকে বের হতে পারবে। তবে রাস্তা দেখার জন্য একটি চোখ খোলা রাখতে পারবে। অথবা মুখের ওপর পথ দেখার মতো পাতলা কাপড় অথবা জালিওয়ালা কাপড় ঝুলিয়ে দিবে। এর সাথে সাথে যদি কালো চশমা ব্যবহার করা হয় তাহলে তো ভালো। প্রথম প্রকার এবং প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় প্রকার পর্দার ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ قُل لِّأَزْوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰٓ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্তুা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব,আয়াতঃ ৫৯) উল্লেখিত আয়াতে জালাবিব শব্দ ব্যবহার হয়েছে,অর্থ হলো এমন এক চাদর যা মহিলার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখে যা প্রচলিত শরয়ি বোরকা এর অন্তর্ভুক্ত। বরং বোরকা পর্দার জন্য লম্বা চাদর থেকে পরিমাণ খোলা রাখা জায়েয আছে। ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে এ লম্বা চাদর বা বোরকা ব্যবহার করা জরুরী। এ পর্দার মাধ্যমে ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয আছে। তবে শর্ত সাপেক্ষ। যেমন- ১। আকর্ষনীয় পোশাক ও খুশবদার বস্তু ব্যবহার করতে পারবে না। ২। আওয়াজ হয় এমন অলঙ্কার পরতে পারবে না। ৩। পরনের অলঙ্কারের শব্দ না শুনার লক্ষ্যে যমিনে জোরে পদাঘাত না করা। ৪। পথের এক পাশে হাঁটতে হবে,মাঝখানে নয়। ৫। পুরুষের ভিড়েফ্র মধ্যে ঢুকতে পারবে না। ৬। মাথা থেকে পা পর্যন্ত অতিরিক্ত সাধারণ পোশাকে ঢাকা থাকতে হবে। ৭। স্বামীর অনুমতি নিয়ে বের হতে হবে। ৮। স্বামীর অনুমতি ছাড়া কারো সাথে কথা বলতে পারবে না। ৯। কথা মিষ্টি ও নরম সুরে হতে পারবে না। ১০। পর পুরুষ থেকে নিজের চোখকে সংযত রাখতে হবে। ১১। কামনীয় ভাব-ভঙ্গিমা সহকারে এবং ঠাক-ঠমক দেখিয়ে হাঁটতে পারবে না।দ্বীনি অথবা দুনিয়াবী প্রয়োজনের খাতিরে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য একজন মুসলিম নারীর এ ১২টি শর্ত পালন করা জরুরী অন্যথায় নারীর ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয নেই। তৃতীয় স্তরঃ যখন বিশেষ প্রয়োজনে নারী ঘর থেকে বের হয় তখন দ্বিতীয় প্রকার পর্দার মতো বড় চাদর অথবা বোরকা নিয়েই বের হবে। তবে কোনো কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে মুখমণ্ডল ও দু’হাতের পাঞ্জা না-মহরামের সম্মুখে খোলা রাখতে পারবে। ১। যেমন কোনো মহিলা, পুরুষ বিচারপতির সম্মুখে কোনো বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করার সময় তার মুখ ও হাতের পাঞ্জা খোলা রাখা জায়েয, অন্য কোনো অঙ্গ নয়। ২। অনুরূপভাবে বিচারপতি কোন মহিলার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো রায় প্রদান করার সময় সে মহিলার চেহরা ও হাতের পাঞ্জা খোলা রাখা ইসলামি শরিয়াত মতে জায়েয, অন্য কোনো অঙ্গ নয়। ৩। বিয়ের প্রস্তাবিত মহিলার মুখ ও দু’হাতের পাঞ্জা দেখাও না মাহরামের জন্য জায়েয। ৪। মুখ, হাত ও যে কোনো রুগ্ন অঙ্গ না-মাহরাম পুরুষ ডাক্তার দেখতে পারবে,সুস্থ কোনো অঙ্গ দেখা জায়েয নেই। ৫। এভাবে বিয়ের অনুপযুক্ত বৃদ্ধাও না-মাহরামের সম্মুখে মুখ ও পাঞ্জা খোলা রাখতে পারবে, তবে উত্তম নয়। কেননা, এর প্রতিও কোনো কুরুচি পুরুষের বদনজর পড়তে পারে। ৬। পাঞ্জা ও মুখের কাপড় অনিচ্ছাকৃত খুলে গেলে গুনাহ নেই। বিঃদ্রঃ উল্লেখ্য যে, পর্দার একটি আয়াতে إلاَّ ماَظَهَرَ مِنْهاَ এর তাফসিরকে কেন্দ্র করে হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, ইমাম মালেক,ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহ আলাইহিম মত প্রকাশ করেন যে, ফিতনার ভয় হোক অথবা না হোক একজন মুসলিম যুবতি নারী না-মাহরাম পুরুষের সম্মুখে বিনা শরয়ি জরুরতে তার মুখ ও পাঞ্জা খোলা জায়েয নেই।আর হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, ফিৎনার হুয় হলে খোলা রাখা জায়েয নেই।আর ভয় না হলে জায়েয। কিন্তু সাধারণত যুবতি নারীর মুখ খোলা রাখার মাঝেই ফিতনার বেশি আশঙ্কা বিশেষভেবে এ যুগে। তাই শেষ যুগের হানাফী আলেমদের ফতুয়া মতে ফিতনার ভয় হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় যুবতি নারীর মুখ ও পাঞ্জা না-মাহরামের সম্মুখে খোলা রাখা জায়েয নেই।সুতরাং ইমাম আবু হানিফা (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি)-এর শর্ত ভিত্তিক মতামতকে বাহানা করে ভোগবাদিদের খুশি হওয়ার কিছু নেই। وَٱلْقَوَٰعِدُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِى لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَٰتٍۭ بِزِينَةٍ وَأَن يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের প্রত্যাশা করে না, তাদের জন্য কোন দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে এবং এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। (সূরা নুর, আয়াতঃ ৬০) পর্দা-বিধান কুরআন মজীদ পর্দার বিধানটি ইসলামের একটি অকাট্য বিধান। কুরআন মজীদের অনেকগুলো আয়াতে এই বিধান দেওয়া হয়েছে। সুতরাং কোনো ঈমানদারের পক্ষে এই বিধানকে হালকা মনে করার সুযোগ নেই। এখানে কয়েকটি আয়াত সংক্ষিপ্ত আলোচনাসহ তুলে ধরা হল। এক وَقُل لِّلْمُؤْمِنَٰتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَٰرِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا হে নবী! মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর,আয়াতঃ ৩১) দুই وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। (সূরা নূর,আয়াতঃ ৩১) আল্লামা শানকীতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, উপরোক্ত মহিলা সাহাবীগণ বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মুখমন্ডল আবৃত করারও আদেশ করেছেন। তাই তারা আল্লাহ তাআলার আদেশ পালনার্থে নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল আবৃত করেছেন। তিন وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর,আয়াতঃ ৩১) এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানদার নারীর কর্তব্য। কারণ পরপুরুষকে নুপুরের আওয়াজ শোনানোর উদ্দেশ্যে সজোরে পদবিক্ষেপ যখন নিষেধ করা হয়েছে তখন যে সকল কাজ, ভঙ্গি ও আচরণ এর চেয়েও বেশি আকৃষ্ট করে তা নিষিদ্ধ হওয়া তো সহজেই বোঝা যায়। মুসলিম নারীদের জন্য এটি আল্লাহ রাববুল আলামীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। যাদের সাথে পর্দা নেই মাহরাম পুরুষের সাথে নারীর পর্দা নেই। মাহরাম পুরুষ দ্বারা উদ্দেশ্য হল এমন পুরুষ আত্মীয়, যার সাথে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোনো অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। যেমন-পিতা, ভাই ইত্যাদি। আর যে পুরুষের সাথে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে সাময়িক প্রতিবন্ধকতা (যেমন-নারীর বোন বা এমন নারীর বিবাহে থাকা, যাদের দু’জনকে বিবাহসূত্রে একত্র করা জায়েয নয়) দূর হওয়ার পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয সে হল গায়র-মাহরাম। তার সাথে পর্দা করা ফরয। পুরুষের জন্য মাহরাম ও গায়র-মাহরাম নারী একজন পুরুষের মাহরাম নারী হল এমন নারী, যার সাথে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোনো অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। যেমন-মা, মেয়ে ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যে নারীর সাথে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে সাময়িক প্রতিবন্ধকতা (যেমন-নারীর অন্য পুরুষের বিবাহে থাকা) দূর হওয়ার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয সে হল গায়র-মাহরাম। মাহরামের প্রকারভেদ সাধারণত তিন ধরনের সম্পর্ককে শরীয়ত মাহরাম হওয়ার কারণ সাব্যস্ত করেছে। যথাঃ (ক) বংশীয়/ঔরসজাত সম্পর্ক। (খ) দুধ সম্পর্ক ও (গ) বৈবাহিক সম্পর্ক। বংশগত সম্পর্কের কারণে মাহরাম নারীর বংশ সম্পর্কিত মাহরাম পুরুষগণ হলেন- ১। পিতা, দাদা-নানা ও তদোর্ধ্ব পুরুষ। ২। পুত্র, পৌত্র ও তদস্তন পুরুষ। ৩। ভাই-সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়। ৪। ভ্রাতুষ্পুত্র ও তদস্তন পুরুষ। ৫। ভাগ্নে (সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের ছেলে)। ৬। চাচা। ৭। মামা। আল্লাহ তাআলার বাণী- وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ ءَابَآئِهِنَّ أَوْ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَآئِهِنَّ أَوْ أَبْنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَٰنِهِنَّ أَوْ بَنِىٓ إِخْوَٰنِهِنَّ أَوْ بَنِىٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوْ نِسَآئِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيْرِ أُو۟لِى ٱلْإِرْبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفْلِ ٱلَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا۟ عَلَىٰ عَوْرَٰتِ ٱلنِّسَآءِ তারা যেন নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্য কারো নিকট। (সূরা নূর,আয়াতঃ ৩১) পুরুষের বংশ সম্পর্কিত মাহরাম নারীগণ হলেন- ১। মা ২। কন্যা ৩। ভগ্নী ৪। ফুফু, ৫। খালা ৬। ভ্রাতুষ্পুত্রী ৭। ভাগ্নী। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَٰتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَٰتُكُمْ وَعَمَّٰتُكُمْ وَخَٰلَٰتُكُمْ وَبَنَاتُ ٱلْأَخِ وَبَنَاتُ ٱلْأُخْتِ وَأُمَّهَٰتُكُمُ ٱلَّٰتِىٓ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَٰتُكُم مِّنَ ٱلرَّضَٰعَةِ وَأُمَّهَٰتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَٰٓئِبُكُمُ ٱلَّٰتِى فِى حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ ٱلَّٰتِى دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا۟ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَٰٓئِلُ أَبْنَآئِكُمُ ٱلَّذِينَ مِنْ أَصْلَٰبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا۟ بَيْنَ ٱلْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নিসা, আয়াতঃ ২৩) বিখ্যাত মুফাসসির আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন- একজন নারী যদি কোনো শিশুকে দুধ পান করায় তাহলে সে দুগ্ধ পানকারীর জন্য হারাম হয়ে যায়। কারণ সে তার মা। তেমনি দুধমার মেয়ে, বোন হওয়ার কারণে; দুধমার বোন, খালা হওয়ার কারণে; দুধমার মা, নানী হওয়ার কারণে; দুধমার স্বামীর অন্য পক্ষের কন্যা, বোন হওয়ার কারণে; স্বামীর বোন, ফুফু হওয়ার কারণে; স্বামীর মা, দাদী হওয়ার কারণে ঐ শিশুর জন্য হারাম হয়ে যায়। তেমনি দুধমার ছেলে-মেয়ের সন্তানাদিও হারাম হয়ে যায়। কারণ তারা তার ভাই-বোনের সন্তানাদি। (তাফসীরে কুরতুবী ৫/৭২) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আবুল কুয়াইসের ভাই আফলাহ (যিনি আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর দুধ চাচা) একবার আমার নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। আমি অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে আসার পর তাঁকে ঘটনাটি জানালাম। তিনি আমাকে অনুমতি প্রদানের আদেশ করলেন। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম মাহরাম সাব্যস্ত হওয়ার তৃতীয় কারণ হল বিবাহ। বৈবাহিক সম্পর্কের দ্বারাও নারী-পুরুষ একে অপরের মাহরাম সাব্যস্ত হয়। নারীর বিবাহ সম্পর্কীয় মাহরাম পুরুষ হল স্বামীর পিতা (শ্বশুর), স্বামীর অন্য পক্ষের পুত্র ইত্যাদি। তেমনিভাবে নিজের শাশুড়ি, স্ত্রীর গর্ভজাত অন্য পক্ষের কন্যা ইত্যাদি নারীও পুরুষের জন্য মাহরাম গণ্য হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَٰتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَٰتُكُمْ وَعَمَّٰتُكُمْ وَخَٰلَٰتُكُمْ وَبَنَاتُ ٱلْأَخِ وَبَنَاتُ ٱلْأُخْتِ وَأُمَّهَٰتُكُمُ ٱلَّٰتِىٓ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَٰتُكُم مِّنَ ٱلرَّضَٰعَةِ وَأُمَّهَٰتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَٰٓئِبُكُمُ ٱلَّٰتِى فِى حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ ٱلَّٰتِى دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا۟ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। (সূরা নিসা,আয়াতঃ ২৩) ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-বিবাহ সম্পর্কীয় মাহরাম নারী চার প্রকারঃ ১। স্ত্রীর মা (শাশুড়ি) ২। স্ত্রীর কন্যা ৩। পিতার স্ত্রী (সহোদর মা, সৎ মা) ও ৪। পুত্রবধু। (তাফসীরে কুরতুবী ২/৭৪) উল্লেখ্য, শাশুড়ি বলতে স্ত্রীর মা, দাদী-নানী এভাবে উপরের দিকের সকলকে বোঝাবে। তবে স্ত্রীর খালা, ফুফু অর্থাৎ খালা শাশুড়ি, ফুফু-শাশুড়ি মাহরাম নয়। এঁদের সাথে পর্দা আছে। একই কথা নারীর ক্ষেত্রে। স্বামীর পিতা, দাদা ও নানার সাথে পর্দা নেই। তবে স্বামীর চাচা, মামা অর্থাৎ চাচা-শ্বশুর, মামা-শ্বশুরের সাথে পর্দা আছে। উপরের আলোচনা থেকে পর্দার বিধান পালন সম্পর্কে আমরা যা পেয়েছি তা হচ্ছে- (এক) পর্দার বিধান পালন করার অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করা, যা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ- وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অবকাশ থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট হবে। (সূরা আহযাব,আয়াতঃ ৩৬) (দুই) পর্দার বিধান মেনে চলা হচ্ছে ঈমানের দাবি। কেননা আল্লাহ তাআলা পর্দা-বিধানের ক্ষেত্রে শুধু ঈমানদার নারীপুরুষকেই সম্বোধন করেছেন। এক নববধুকে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট আনা হল, যার পরনে ছিল রঙ্গিন কিবতী চাদর। তখন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘যে নারী এ রকম পোশাক পরিধান করে তার তো সূরা নূরের প্রতি ঈমান নেই।’ (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/২৪৪) (তিন) পর্দাপালন হল সতর। عَنْ يَعْلَى، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا يَغْتَسِلُ بِالْبَرَازِ بِلَا إِزَارٍ، فَصَعَدَ الْمِنْبَرَ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَيِيٌّ سِتِّيرٌ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسَّتْرَ فَإِذَا اغْتَسَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَتِرْ ইয়া‘লা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উলঙ্গ হয়ে খোলা জায়গায় গোসল করতে দেখলেন। অতঃপর মিম্বারে উঠে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জাশীল, গোপণীয়তা অবলম্বনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পছন্দ করেন। তোমাদের কেউ গোসল করতে চাইলে সে যেন গোপনীয়তা অবলম্বন করে। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪০১২) আল্লাহ তাআলা পিতা আদম ও হওয়া আ.-এর প্রতি পর্দার নেয়ামতকে বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন- إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَىٰ তোমার জন্য এ-ই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবে না এবং নগ্নও হবে না। (সূরা ত্বহা,আয়াতঃ ১১৮) অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন- يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَٰرِى سَوْءَٰتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম। এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আ’রাফ,আয়াতঃ ২৬) পর্দার উপকারিতা ১। পর্দা-পুশিদা দ্বারা নারী-পুরুষ যিনা-ব্যভিচার থেকে মুক্ত থাকতে পারে। ২। সতী-সাধবী মহিলাদের চেহেরা দুঃচরিত্রবান লোকদের অপবিত্র চক্ষু থেকে হিফাজতে থাকে। ৩। সতী মহিলাদের সন্তান-সন্ততির প্রতি কারো সন্দেহ পোষণ করার সুযোগ থাকে না। কোনো অসৎ লোক পর্দানশীল মহিলার সন্তান সম্পর্কে এ অপবাদ দেয়ার সাহসই পাবে না যে, এ সন্তান এ মহিলার স্বামীর ঔরসজাত নয়। পক্ষান্তরে, বেপর্দা মহিলার সন্তান সম্পর্কে গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না যে, এ সন্তানটি সে মহিলার স্বামীর ঔরসজাত। ইউরোপ আমেরিকাসহ পশ্চিমাদেশগুলোতে পর্দাহীনতার ব্যাপকতার কারণে যিনা ব্যভিচারও ব্যাপকতা লাভ করেছে,ফলে সে দেশগুলোর কোনো ছেলে মেয়ে সম্পর্কে গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না যে, এ ছেলে মেয়েগুলোর সঠিক বাবা কে? একথাটি এত সুস্পষ্ট যা প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় না। ৪। পর্দা দ্বারা নারী-পুরুষ উভয়ের অন্তর শয়তানের কুপ্রবঞ্চনা থেকে পরিস্কার থাকে। কেননা, নারী-পুরুষ যখন একে অপরের প্রতি দৃষ্টিবান ছুড়ে তখন শয়তান তাদের অন্তরসমূহে খারাপ ধারণা জন্মানোর মোক্ষম সুযোগ পায়। ৫। পর্দানশীল নারীর সতীত্ব ও পবিত্রতা স্বামী ও তার বংশের লোকদের নিকটও নিশ্চিতভাবে স্বীকৃত হয়। ফলে সাংসারীক জীবন সুখময় হয়। ৬। কন্যা দায়গ্রস্ততা ও যৌতুক দেয়া-নেয়া বেশির ভাগ পর্দাহীনতার কারণেই হয়। এ কুপ্রথা পূর্বে ছিল হিন্দু সমাজে সীমিত। তাদের মেয়েরা পিতার সম্পত্তিতে উত্তরধিকারিণী হয় না, তাই পিতা-মাতা মেয়ের বিবাহের সময়ই কিছু যৌতুক দিয়ে দেয়- যা তাদের বেলায় যুক্তিসঙ্গত, দোষের কিছু নয়। কিন্তু মুসলিম সমাজে কন্যা দায়গ্রস্ত অভিভাবকগণই যৌতুক প্রথার জন্ম দিয়েছে। যা আজ একটি সামাজিক লা’নত হিসেবে পরিণত হয়েছে এবং তা বন্ধ করার জন্য সংসদে নতুন আইন তৈরি করতে হয়েছে। আর এ হিন্দুয়ানী কুপ্রথার উৎস হলো পর্দাহীনতা। পর্দাহীনতার পরিণতি হলো নিম্নরূপ ১। এসিড নিক্ষেপ, ২। স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা, ৩। স্ত্রী কর্তৃত স্বামী হত্যা, ৪। যিনার পথ উন্মুক্ত, ৫। স্বাস্থ্যহানী, ৬। নারীদের আত্মহত্যার হিড়িক, ৭। বিবাহ বিচ্ছেদ, ৮। নারী অপহরণ, ৯। অপব্যয়, ১০। ইভটিজিং, ১১। পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। |
0 Comments