প্রশ্ন (১/৪৪১) :
হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষ্ণোভী একত্রে তিন তালাক সম্পর্কে যে ফৎওয়াটি
দিয়েছেন তা বিস্তারিত জানতে চাই।
প্রশ্ন (১৯/৪৫৯) :
যেসব নারীরা স্বামীর অনুমতি ছাড়া অথবা তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একাকী বিদেশে
চাকুরী করছে, তাদের স্বামীরা কি দাইয়ূছ হিসাবে
গণ্য হবে? এছাড়া স্বামী উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বে্ও এরূপ
স্ত্রীর উপার্জন তার জন্য হালাল হবে কি?
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaite
-আব্দুর রঊফ, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
উত্তর : উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হানাফী আলেম আব্দুল হাই
লাক্ষ্ণৌভী (১২৬৪-১৩০৪ হি./১৮৪৮-১৮৮৭ খৃ.) একত্রিত তিন তালাক সম্পর্কিত এক
প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই অবস্থায় হানাফী মাযহাব অনুযায়ী তিন তালাক পতিত হবে
এবং ‘তাহলীল’ ব্যতীত তার সাথে পূর্ব স্বামীর পুনর্বিবাহ সিদ্ধ হবে না। কিন্তু এমন
যরূরী অবস্থায় যেমন স্বামীর নিকট থেকে উক্ত মহিলার পৃথক হওয়া কঠিন কিংবা তাতে ক্ষতির
আশংকা বেশী, সেই অবস্থায় অন্য কোন ইমামের তাক্বলীদ করায়
ক্ষতি নেই। যেমন এর দৃষ্টান্ত রয়েছে নিরুদ্দিষ্ট স্বামীর ক্ষেত্রে। এখানে হানাফীগণ
ইমাম মালেক (রহঃ)-এর মাযহাব (চার বছর)-এর উপরে আমল করা জায়েয মনে করেন। অতএব তিন
তালাকের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম হবে যে, ঐ ব্যক্তি যেন কোন
শাফেঈ আলেমের নিকট থেকে ফৎওয়া জেনে নিয়ে তার উপরে আমল করে’ (ফাতাওয়া রশীদিয়াহ, করাচী :
মুহাম্মাদ আলী কারখানায়ে কুতুব, তাবি ৪৬২ পৃ.)।
প্রশ্ন (২/৪৪২) :
স্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ যেনার অপবাদ দিলে সেটা কি লে‘আন হিসাবে গণ্য হবে এবং স্ত্রী
তালাক হয়ে যাবে?
-ইমরান হোসাইন, বড়বনগ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেনার অপবাদ দিলেই তা লে‘আন হিসাবে
গণ্য হবে না এবং এতে বিবাহ বিচ্ছেদও হবে না। বরং এরূপ ক্ষেত্রে করণীয় হ’ল স্বামী
প্রথমতঃ স্ত্রীর যেনার পক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থাপন করবে। তা সম্ভব না হ’লে আদালতে
বিচারকের উপস্থিতিতে লে‘আন করবে। আর লে‘আন হ’ল- কোন স্বামী যদি স্ত্রীর উপর যেনার
অভিযোগ দেয় এবং তার কাছে সাক্ষী না থাকে, তখন আদালতে দাঁড়িয়ে
সে চারবার সাক্ষ্য দিবে যে, স্ত্রী সম্পর্কে সে যা বলেছে
তা সত্য। আর পঞ্চমবারে বলবে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয়,
তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেন তার উপর লা‘নত বর্ষিত হয়। অতঃপর
স্ত্রীও আদালতে দাঁড়িয়ে চার বার বলবে যে, স্বামী তার
অভিযোগে মিথ্যাবাদী। আর পঞ্চমবারে বলবে, যদি স্বামী
সত্যবাদী হয় তবে তার (নিজের) উপর যেন আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয়। অতঃপর আদালত তাদের
মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাবে (নূর
২৪/৬-৯; ইবনু তায়মিয়া, আল-ফাতাওয়াল
কুবরা ৫/৫০৭)।
আর স্বামী বা স্ত্রী যেনার অভিযোগ
প্রদানের পর যদি সাক্ষী হাযির করতে না পারে এবং লে‘আন করতেও অক্ষমতা প্রকাশ করে, তবে
বিচারক অভিযোগকারী স্বামী/স্ত্রীর উপর হদ জারী করবে। অর্থাৎ মিথ্যা অপবাদের শাস্তি
হিসাবে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে (নূর
২৪/৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘
১৪/২৮৪)।
প্রশ্ন (৩/৪৪৩) :
রাসূল (ছাঃ)-এর মুওয়াযযিন কতজন ছিলেন? কারা কোথায় আযান
দিতেন?
-আব্দুল্লাহ আল-মামূন, শেখপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : চারজন। তন্মধ্যে মদীনায় ছিলেন দু’জন- (১) বেলাল বিন
রাবাহ ও (২) আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ), তাঁকে আমরও বলা হয়।
ক্বোবায় ছিলেন- (৩) ‘আম্মার বিন ইয়াসিরের মুক্তদাস সা‘দ আল-ক্বারয এবং মক্কায়
ছিলেন (৪) আবু মাহযূরাহ আউস বিন মুগীরাহ আল-জুমাহী (যাদুল মা‘আদ ১/১২০; সীরাতুর
রাসূল (ছাঃ), ৩য় মুদ্রণ, ৮২৭
পৃ.)।
প্রশ্ন (৪/৪৪৪) :
পিতা-মাতাকে যাকাত দেয়া দেওয়া যাবে কি? যাকাতের টাকা দিয়ে
কি তাদের ঋণ পরিশোধ করা যাবে?
-জেসমীন খাতুন, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : সন্তানের দায়িত্ব হ’ল পিতা-মাতার ভরণপোষণ করা। এজন্য
বিদ্বানগণ এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, পিতা-মাতা বা
সন্তান-সন্ততিকে যাকাত প্রদান করা যাবে না। কেননা তা প্রকারান্তরে নিজেকেই যাকাত
প্রদানের শামিল (ইবনু
কুদামাহ, আল-মুগনী ২/২৬৯)। তবে দু’টি ক্ষেত্রে ইবনু তায়মিয়াসহ কতিপয় বিদ্বান যাকাত প্রদানের পক্ষে মত
ব্যক্ত করেছেন। যেমন (১) পিতা বা সন্তান যদি ঋণগ্রস্ত হন এবং তাদের উপার্জন
ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট না হয়। কেননা পিতা বা সন্তান পরস্পরের ঋণ পরিশোধে বাধ্য নন।
(২) পিতা বা সন্তান যদি পরস্পরের খরচ বহনে সক্ষম না হন, তাহ’লে
তারা যাকাতের হকদার হবেন’ (ইবনু
তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩৭৩; আল-ইখতিয়ারাত ১০৪ পৃ. উছায়মীন, আশ-শারহুল
মুমতে‘ ৬/২৫৯-২৬০)।
প্রশ্ন (৫/৪৪৫) :
নির্দিষ্ট স্থানে কবর দেওয়ার ব্যাপারে পিতা-মাতার অছিয়ত পূর্ণ করা কি আবশ্যিক?
-আল-আমীন, দয়ালের
মোড়, নওগাঁ।
উত্তর : আবশ্যিক নয়, তবে উত্তম। কারণ
পিতা-মাতার অছিয়ত পূর্ণ করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা সন্তানের একান্ত দায়িত্ব।
তবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে লাশ নিয়ে যাওয়ার কোন বিধান নেই। বরং কাছাকাছি এলাকার
কোন মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করতে হবে (আবূদাউদ
হা/৫১৪২; মিশকাত হা/৪৯৩৬; ছহীহ
ইবনু হিববান হা/৪১৮; বিন বায, ফাতাওয়া
নূরুন আলাদ-দারব ১৩/৪২৩)।
প্রশ্ন (৬/৪৪৬) :
আমাদের এলাকায় অনেক মহিলা মাথা থেকে ঝরে পড়া অতিরিক্ত চুল বিক্রয় করে। এটি কি
জায়েয হবে?
-মা‘ছূমা বেগম, পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : চুল বিক্রয়যোগ্য বস্ত্ত নয়। কারণ চুল দেহেরই একটি
অংশ। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা আদম সন্তানকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি’ (ইসরা ১৭/৭০)। তাই এটি জায়েয হবে না যে, এভাবে মানব দেহের কোন অংশ অপদস্থ
ও অপমানিত হৌক’ (আল-ইনাইয়া
শারহুল হেদায়া ৬/৪২৫; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৬/১০২)। ইমাম নববী বলেন, যা মানব দেহের যে অংশ লেগে থাকা অবস্থায় বিক্রয় নিষিদ্ধ
তা বিচ্ছিন্ন অবস্থাতেও নিষিদ্ধ যেমন মানুষের চুল’ (আল-মাজমূ‘ ৯/২৫৪)। ইমাম মালেক (রহঃ)-কে মানুষের মুন্ডন করা চুল বিক্রয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা
হ’লে তিনি বিষয়টিকে চরম অপসন্দ করেন (ইবনু
আব্দিল বার্র, আল-কাফী ফী ফিক্বহি আহলিল মদীনাহ ২/৬৭৬)।
প্রশ্ন (৭/৪৪৭) :
যারা চৌদ্দশ’ বছর আগে কিংবা এর আগে মারা গিয়েছে এবং যারা কিয়ামতের দিন মারা যাবে, তাদের
শাস্তি আর চৌদ্দশ’ বছর আগের মৃতের শাস্তি তো সমান হচ্ছে না। বিষয়টি স্পষ্টভাবে
জানিয়ে বাধিত করবেন।
-আব্দুল হাদী তাহমীদ, মেলান্দহ, জামালপুর।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিন জন ব্যক্তির
উপর আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন। (১) নিয়মিত মদ্যপায়ী (২) পিতা-মাতার অবাধ্য
সন্তান (৩) দাইয়ূছ। যে তার পরিবারে ফাহেশা কাজ স্থায়ী রাখে’ (নাসাঈ হা/২৫৬২; আহমাদ হা/৫৩৭২;
মিশকাত হা/৩৬৫৫; ছহীহাহ হা/৬৭৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী বলেন, যার
চুপ থাকার কারণে তার স্ত্রী-কন্যা, দাসী প্রভৃতি নিকটতম
মহিলাদের মধ্যে ব্যভিচার, মদ্যপান ও ব্যভিচারমূলক কাজ-কর্ম
স্থায়িত্ব ও ব্যাপকতা লাভ করে (মিরক্বাত,
হা/৩৬৫৫)।
যাহাবী বলেন, ‘দাইয়ূছ’ সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু
তার প্রতি ভালোবাসার কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার
স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই
বলে না এবং যার আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’ (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের ১/৫০
পৃঃ)।
প্রশ্ন অনুযায়ী স্বামী যেহেতু স্ত্রীর
বিদেশ গমনে নিষেধ করেছেন এবং চুপ থাকেননি, সেহেতু তিনি
‘দাইয়ূছ’ হবেন না। বরং স্ত্রী গোনাহগার হবে। কেননা প্রথমতঃ সে স্বামীর অবাধ্যতা
করেছে। দ্বিতীয়তঃ উপার্জনের জন্য একাকী বিদেশে গমন করেছে। তবে তার উপার্জন স্বামী
ও সন্তানদের জন্য অবৈধ নয়। কারণ একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না (আন‘আম ৬/১৬৪)। এক্ষেত্রে স্বামীর জন্য স্ত্রীর উপার্জিত অর্থ গ্রহণ না করাই উত্তম হবে এবং
তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। কোনভাবেই স্ত্রীকে ফিরানো না গেলে
চূড়ান্ত অবস্থায় তাকে তালাক প্রদান করবে।
প্রশ্ন (৮/৪৪৮) :
নারীরা কি জামা‘আতে বা একাকী চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের ছালাত আদায় করতে পারে?
-মুফাখখারুল ইসলাম, আমচত্বর, রাজশাহী।
উত্তর : মহিলাগণ পুরুষদের পিছনে দাঁড়িয়ে জামা‘আতে সূর্যগ্রহণ
বা চন্দ্রগ্রহণের ছালাত আদায় করতে পারেন। হযরত আয়েশা, আসমা
ও আনছার মহিলাগণ পুরুষের জামা‘আতের পিছনে এই ছালাত আদায় করেছিলেন (বুখারী হা/৯২২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূর্য গ্রহণের দীর্ঘ ছালাত শেষে খুৎবায় বলেন, সূর্য
বা চন্দ্র গ্রহণ কারু মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং এর দ্বারা আল্লাহ তাঁর
বান্দাদের ভয় দেখান। অতএব যখন তোমরা এগুলি দেখবে, তখন
আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তোমরা দ্রুত তাঁর স্মরণ, দো‘আ ও ক্ষমাপ্রার্থনার দিকে ধাবিত হবে’ (বুখারী হা/১০৫৯; মুসলিম হা/৯১২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যতক্ষণ না গ্রহণ দূর হয়’ (মুসলিম হা/৯১৫)।
উপরোক্ত হাদীছের আদেশ মুমিন নর-নারী
সকলের জন্য প্রযোজ্য। অতএব উক্ত ‘আম হাদীছের নির্দেশ অনুযায়ী মহিলাগণ বাড়িতে
জামা‘আতের সাথে বা একাকী উক্ত ছালাত পড়বেন। জামা‘আতের সাথে পড়লে তারা খুৎবা দিবেন
না। তবে উক্ত বিষয়ে তাদের মধ্যে থেকে একজন আলোচনা করবেন (নববী, আল-মাজমূ‘ শারহুল
মুহাযযাব ৫/৫৯; উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১৬/৩১০)।
প্রশ্ন (৯/৪৪৯) :
সূর্য ওঠার সামান্য পূর্বে ঘুম ভেঙ্গেছে। এমতাবস্থায় ফরয ছালাত আদায় করে তারপর কি
সুন্নাত পড়তে হবে? আর সেটি হ’লে সেটা কি সূর্যোদয়ের
পর পড়তে হবে?
-আয়েশা আখতার, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : এমতাবস্থায় সুন্নাত সহই ফজরের দু’রাক‘আত ফরয ছালাত
আদায় করবে। সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। কেননা ঘুম ভাঙ্গার উপর বান্দার
কোন এখতিয়ার নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ ছালাত ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে
গেলে তার কাফফারা হ’ল, ঘুম ভাঙ্গলে অথবা স্মরণে আর সাথে
সাথে সেটি আদায় করা। এটি ব্যতীত তার কোন কাফফারা নেই (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৬০৩-৪)। কোন কারণে ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ক্বাযা হ’লে তা ফজরের ছালাতের পরে আদায়
করে নিবে (বুঃ
মুঃ মিশকাত হা/১০৪৩; আবূদাঊদ, তিরমিযী,
মিশকাত হা/১০৪৪; দ্র. ছালাতুর রাসূল ১৩৫
পৃ.)।
প্রশ্ন (১০/৪৫০) :
ভারতে সম্প্রতি জনৈক মুসলিম ব্যক্তিকে জোরপূর্বক জয় শ্রীরাম বলিয়ে নেয়া হয়েছে।
উক্ত ব্যক্তি যদি তওবার সুযোগ না পায় তবে কি সে মুশরিক হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছে?
-মুহায়মিনুল হক, শ্যামলী, ঢাকা।
উত্তর : আল্লাহর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস থাকলে সে তওবা করার
সুযোগ না পেলেও মুশরিক হবে না। বরং সে ঈমানের অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করবে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১২/৩১২;
ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তামহীদ ১/১২০)। আল্লাহ বলেন, ‘যার উপরে (কুফরীর জন্য) যবরদস্তি করা হয়, অথচ তার হৃদয় ঈমানের উপর অটল থাকে, সে
ব্যতীত’... (নাহল
১৬/১০৬)। আয়াতটি আম্মার বিন
ইয়াসির (রাঃ) সম্পর্কে নাযিল হয়। ইসলামের প্রথম মহিলা শহীদ তার মা সুমাইয়া ও তার
পিতা ইয়াসিরকে হত্যা করার পর পুত্র আম্মারকেও তার ঈমানের জন্য চরমভাবে নির্যাতন
করা হয়। অবশেষে তাকে তাদের মূর্তি-প্রতিমাগুলির প্রশংসা এবং রাসূল (ছাঃ)-কে গালি
দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর তিনি ছাড়া পেয়ে সোজা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এসে ঘটনা বর্ণনা
করেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন ‘ঐ সময় তোমার অন্তর কিরূপ ছিল’? তিনি
বললেন, ‘ঈমানের উপর অবিচল ছিল’। রাসূল (ছাঃ) বললেন ‘যদি
ওরা আবার বলতে বলে, তাহ’লে তুমি আবার বল’ (অর্থাৎ উক্ত
অবস্থায় ঈমানের উপর অটল থাকলে শিরকী বাক্যের কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে না)। তখন
অত্র আয়াত নাযিল হয়’ (হাকেম
হা/৩৩৬২, ২/৩৫৭ পৃ., সনদ ছহীহ;
বায়হাক্বী ৮/২০৮-০৯; তাফসীর ইবনু জারীর,
কুরতুবী, ইবনু কাছীর)।
প্রশ্ন (১১/৪৫১) :
ইহরাম অবস্থায় বা তাওয়াফের সময় মহিলারা নেক্বাব বা হাতমোজা পরিধান করলে হজ্জ বা
ওমরার কোন ক্ষতি হবে কি?
-আফীফা খাতূন, শ্যামপুর, ঢাকা।
উত্তর : ইহরাম অবস্থায় মহিলারা নেক্বাব ও হাতমোজা পরবে না।
কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুহরিম মহিলাগণ নেক্বাব এবং হাতমোজা লাগাবে না’ (বুখারী হা/১৮৩৮; মিশকাত
হা/২৬৭৮)। তবে ফেৎনার আশংকা
থাকলে তারা ভিন্ন কাপড় দ্বারা মুখ ও হাত ঢাকতে পারবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/১৯২-১৯৩)। শায়খ বিন বায বলেন, এজন্য আলাদা সেলাইযুক্ত স্কার্ফ
বা মোজা পরবে না। বরং বড় কাপড় দিয়ে মুখমন্ডল ও হাত ঢেকে রাখবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/২২৩; আশ-শারহুল
মুমতে‘ ৭/১৬৫)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, (হজ্জ মওসুমে) আমরা ইহরাম অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এসময় কোন
কাফেলা আমাদের অতিক্রম করলে আমাদের মহিলারা মাথার কাপড় টেনে মুখ ঢাকতেন। আর তারা
আমাদের সম্মুখ হ’তে দূরে সরে গেলে আমরা আমাদের চেহারা খুলতাম’ (আবূদাউদ হা/১৮৩৩; মিশকাত
হা/২৬৯০; ইরওয়া হা/১০২৩, সনদ
ছহীহ)। তবে কেউ ভুলক্রমে বা
অজ্ঞতাবশে নেক্বাব বা হাতমোজা পরিধান করে থাকলে তাকে কোন কাফফারা দিতে হবে না (বাক্বারাহ ২/২৮৬; উছায়মীন,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/৪৩৩-৪৩৪)।
প্রশ্ন (১২/৪৫২) :
ইসলামে গণপিটুনীর কোন শাস্তি আছে কি? যদি কোন ব্যক্তিকে
হত্যায় অসংখ্য লোক অংশগ্রহণ করে, তবে প্রত্যেকের শাস্তি
কি একইরূপ হবে?
-শামীম শাহেদ, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : আদালত কর্তৃক বিচার শেষে ক্বিছাছ ব্যতীত সর্বাবস্থায়
মানুষ হত্যা করা হারাম। এমনকি কোন স্পষ্ট অপরাধীকেও বিচারহীনভাবে মারা যাবে না।
এক্ষণে কাউকে গণপিটুনী দিয়ে হত্যা করা হ’লে সংশ্লিষ্ট সকলেই অপরাধী সাব্যস্ত হবে
এবং নিহতের উত্তরাধিকারীরা ক্ষমা না করলে সকলকেই ক্বিছাছ হিসাবে হত্যা করা হবে।
ওমর (রাঃ) একজন লোককে হত্যার অপরাধে ছান‘আর সাতজন ব্যক্তিকে হত্যা করে বলেছিলেন, যদি
পুরো ছান‘আবাসী এতে জড়িত থাকত, তাহ’লে সকলকেই আমরা হত্যা
করতাম (বুখারী
হা/৬৮৯৬; মিশকাত হা/৩৪৮১)। আলী (রাঃ) একজনকে হত্যার অপরাধে তিনজনকে হত্যা করেছিলেন (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনান
হা/৫০৬৩; ইরওয়া হা/২২০২, সনদ
যঈফ)। ইবনু আববাস (রাঃ)
একজনকে হত্যার অপরাধে একদল লোককে হত্যার শাস্তি দিয়েছিলেন (আব্দুর রাযযাক হা/১৮০৮২; ইরওয়া
৭/২৬১)। সর্বোপরি বিচারক
অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী বিচার করবেন। যদি গণপিটুনী হত্যার উদ্দেশ্যে না হয়ে থাকে, তবে
আদালত ক্বিছাছের পরিবর্তে আসামীদের নিকট থেকে দিয়াত বা রক্তমূল্য আদায় করবে (নিসা ৪/৯২)। আর যদি আদালতের বিচারে নিহত ব্যক্তি প্রকৃতই অপরাধী সাব্যস্ত হয়, তবে
আদালত আসামীদের শাস্তি মওকূফ করতে পারেন।
প্রশ্ন (১৩/৪৫৩) :
সম্প্রতি কল্লাকাটা নিয়ে সমাজে ব্যাপক আতংক তৈরী হয়েছে। গুজবের কারণে অনেক নিরীহ
মানুষকে হত্যা পর্যন্ত করা হচ্ছে। এক্ষণে এমন মিথ্যা গুজবে কান দেওয়ার পরিণতি কি
এবং গুজব প্রতিরোধে করণীয় কি?
-শায়লা শবনম, ঝিকরগাছা, যশোর।
উত্তর : যে কোন অবস্থায় গুজবে কান দিয়ে বা স্রেফ ধারণার
ভিত্তিতে কোন অপপ্রচার বা অনাকাঙ্ক্ষিত কর্ম করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা
শোনে তা-ই প্রচার করে (মুসলিম
হা/৫; মিশকাত হা/১৫৬)। আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অধিক অনুমান বা ধারণা থেকে দূরে
থাক। কারণ কোন কোন অনুমান পাপ (হুজুরাত
৪৯/১২)। তিনি আরও বলেন, আর
তাদের অধিকাংশ কেবল অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে
অনুমান তো কোন কাজে আসে না, তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে
বিষয়ে সবিশেষ অবগত (ইউনুস
১০/৩৬)। এক্ষণে গুজবের পিছনে
ছোটার পরিণাম এবং গুজব প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সূরা হুজুরাতের ৬ আয়াতে আল্লাহ
সুস্পষ্টভাবে বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! যদি কোন ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের নিকট কোন
খবর নিয়ে আসে, তাহ’লে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে;
যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়কে আঘাত না কর এবং পরে
তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা হ’ল সবচেয়ে বড় মিথ্যা সংবাদ (বুখারী হা/৬০৬৪; মুসলিম হা/২৫৬৩;
মিশকাত হা/৫০২৮)। অতএব গুজব প্রচার থেকে যেমন বিরত থাকা কর্তব্য, তেমনি
গুজবের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ। অতএব যারা গুজব রটায় ও গুজব
শুনে কাজ করে তারা উভয়ে পাপী। তওবা না করা পর্যন্ত তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা পাবে
না।
প্রশ্ন (১৪/৪৫৪) :
হজ্জ পালনকালে প্রায় ৪৫ দিন সেখানে অবস্থানকালে কোন কোন নফল ছালাত আদায় করা যাবে
এবং কোনগুলি বর্জন করতে হবে?
-বদীউয্যামান, ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।
উত্তর : এসময় হাজীগণ কেবল যোহর, মাগরিব
ও এশার সুন্নাতগুলি বাদ দিবেন। তাছাড়া অন্য সকল প্রকার নফল ছালাত আদায় করবেন। যেমন
তাহাজ্জুদ, ছালাতুয যোহা, ছালাতুল
ইস্তেখারাহ, ছালাতুল হাজত, ছালাতুত
তওবা ও অন্যান্য নফল ছালাত (উছায়মীন,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৩৫৬)। তবে রাসূল (ছাঃ) মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা এক আযান ও দুই ইক্বামতসহ আদায়
করেন। কিন্তু এ দু’য়ের মাঝে কোন সুন্নাত বা নফল পড়লেন না (বুখারী হা/১৬৭৩; মিশকাত
হা/২৬০৭)। হযরত জাবের (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত বিদায় হজ্জের দীর্ঘ হাদীছে দেখা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা জমা ও ক্বছর শেষে ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি
ফজর পড়েন’ (মুসলিম
হা/১২১৮ (১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫)। এতে বুঝা যায় যে, তিনি এই রাতে বিতর বা তাহাজ্জুদ পড়েননি (‘হজ্জ ও ওমরাহ’ বই ৮৯ পৃ.)।
ফজরের পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত, বিতর
ও তাহাজ্জুদের ছালাত সবসময় আদায় করা যায়। কেননা রাসূল (ছাঃ) এই ছালাতগুলি সাধারণতঃ
পরিত্যাগ করতেন না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)
ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করার প্রতি যত কঠোরভাবে খেয়াল রাখতেন অন্য কোন নফল
ছালাতের প্রতি ততখানি রাখতেন না (বুঃ
মুঃ মিশকাত হা/১১৬৩)।
প্রশ্ন (১৫/৪৫৫) :
একটি কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা যাবে কি?
-পারভিন বেগম, হেতম খাঁ, কলাবাগান, রাজশাহী।
উত্তর : স্বাভাবিকভাবে একটি কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন
অনুচিৎ। তবে স্থান সংকুলান না হ’লে বা মহামারির কারণে একাধিক কবর খনন করার মত লোক
পাওয়া না গেলে কেবল তখনই এক কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২৪৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৩৬৯)। ওহোদ যুদ্ধের দিন একাধিক শহীদকে একই কবরে দাফন করা হয়েছিল (দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৮৫ পৃ.)। হিশাম ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমরা ওহোদের দিন রাসুলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের পক্ষে প্রত্যেক
শহীদের জন্য পৃথক পৃথক কবর খনন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,
তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে গভীর কর এবং দু’জন বা তিন জনকে এক এক
কবরে দাফন কর। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কাকে
প্রথমে রাখব? তিনি বললেন, যে
কুরআন বেশী জানে তাকে প্রথমে রাখ। রাবী বলেন, এভাবে আমার
পিতা একই কবরের তিনজনের অন্যতম ছিলেন’ (নাসাঈ
হা/২০১০; ইবনু মাজাহ হা/১৫৬০; মিশকাত হা/১৭০৩)।
প্রশ্ন (১৬/৪৫৬) :
নারীদের নাম হিসাবে কানীয ফাতেমা রাখা যাবে কি? এর
অর্থ কি?
-আব্দুল ওয়াজেদ, টাঙ্গাইল।
উত্তর : কানীয শব্দটি ফার্সী (كنيز)। যার অর্থ বাঁদী, দাসী
প্রভৃতি। সুতরাং আল্লাহর বান্দী অর্থে কানীয নাম রাখা যায়। তবে সম্বন্ধবাচক অর্থে
কানীয ফাতেমা নাম থেকে যদি ফাতেমা (রাঃ)-এর বাঁদী উদ্দেশ্য নেওয়া হয়, তাহ’লে এই নাম রাখা বৈধ নয়। উল্লেখ্য যে, শী‘আ
আলেমদের মধ্যে আব্দুল হাসান, আব্দুল হুসাইন প্রভৃতি নামের
প্রচলন রয়েছে। এদ্বারা তারা হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর দাস বা বান্দা হিসাবে
নিজেদের প্রকাশ করে থাকেন। যা সিদ্ধ নয়।
প্রশ্ন (১৭/৪৫৭) :
গল্পচ্ছলে অনেক সময় অকারণ এমন কিছু মিথ্যা কথা বলে ফেলি বা অতিরঞ্জন করি, যাতে
অন্যের কোন ক্ষতি হয় না বা তাতে কোন অসৎ উদ্দেশ্যও থাকে না। এরূপ মিথ্যা কথা বলায়
কি গুনাহ হবে?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মাদারটেক, ঢাকা।
উত্তর: মিথ্যা বলা সর্বাবস্থায় হারাম। আল্লাহ বলেন, হে
মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবাহ ৯/১১৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দুর্ভোগ সেই ব্যক্তির, যে মিথ্যা বলে লোকদেরকে হাসায়। দুর্ভোগ তার জন্য, দুর্ভোগ তার জন্য’ (আবুদাউদ
হা/৪৯৯০; আহমাদ হা/২০০৩৫; ছহীহুত
তারগীব হা/২৯৪৪)। তিনি আরো বলেন, মিথ্যা
গুরুত্বের সাথে এবং ঠাট্টাচ্ছলেও সংগত নয়। আর তোমাদের কেউ তার সন্তানকে কিছু দেয়ার
ওয়াদা করলে তাকে তা না দেওয়াটাও সংগত নয় (আল-আদাবুল
মুফরাদ হা/৩৮৭; তাবারাণী কাবীর হা/৮৫২৩, সনদ ছহীহ)। রাসূল (ছাঃ) মিথ্যা
পরিহারের ফযীলত সম্পর্কে বলেন, আমি জান্নাতের সমতলে এক গৃহের
যিম্মাদার হব সেই ব্যক্তির জন্য, যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া
সত্ত্বেও তর্ক বর্জন করে। আর আমি জান্নাতের মধ্যখানে এক গৃহের যিম্মাদার হব তার
জন্য, যে উপহাসচ্ছলেও মিথ্যা পরিত্যাগ করে এবং আমি
জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরের এক গৃহের যিম্মাদার হব তার জন্য, যার চরিত্র সুন্দর হয়’ (আবূদাউদ
হা/৪৮০০; ছহীহাহ হা/২৭৩)। অতএব মিথ্যা সর্বাবস্থায় বর্জনীয় এবং গল্পচ্ছলেও মিথ্যা বলা যাবে না। বলে
ফেললে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করতে হবে।
প্রশ্ন (১৮/৪৫৮) :
আমি দশ বছর পূর্বে স্বামী থেকে একটি কন্যাসহ তালাকপ্রাপ্তা হয়েছি। পরে আমি অন্যত্র
বিবাহিতা হই। আমার দ্বিতীয় স্বামী আমার মেয়েকে প্রতিপালন করে। এক্ষণে আমার মেয়ের
বিয়েতে আমি বা তার পালক পিতা কি অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে পারবে? পূর্বের
স্বামী দাবী করলে করণীয় কী?
-কামরুন নাহার, রসূলপুর, নওগাঁ।
উত্তর : বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়ের অভিভাবক পিতাই হবেন। যদিও
স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হন। পালক পিতা নিজ পিতার স্থলাভিষিক্ত হ’তে পারবেন না, যদিও
তিনি লালন-পালন করে থাকেন। এক্ষণে মূল পিতা যদি মেয়ের অলী হ’তে ইচ্ছুক হন, তবে তিনিই অভিভাবক হবেন। আর যদি ইচ্ছুক না হন, তাহ’লে সরকারের পক্ষে আদালত বা কাযী অভিভাবক হয়ে বিয়ে দিবেন। কেননা
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার অলী নেই, শাসক
তার অলী’ (ইবনু
মাজাহ হা/১৮৭৯; মিশকাত হা/৩১৩১)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে মহিলা তার অলীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, বাতিল এবং বাতিল। যদি এরপর স্বামী তার সাথে সহবাস করে তবে স্ত্রী
মহরানার হকদার হবে; যেহেতু তার স্বামী তার লজ্জাস্থানকে
হালাল মনে করে ভোগ করেছে। আর অলী তথা অভিভাবকরা যদি বিবাদে লিপ্ত হয়, তবে যার অভিভাবক নেই তার অলী বা অভিভাবক হবে দেশের শাসক (মিশকাত হা/৩১৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন নারী কোন নারীকে বিবাহ দিতে
পারে না এবং কোন নারী নিজেকে নিজে বিবাহ দিতে পারে না। এরূপ করলে সে ব্যভিচারিণী
হিসাবে গণ্য হবে’ (দারাকুৎনী
হা/৩৫৮৪; ইরওয়া হা/১৮৪১)।
প্রশ্নের আলোকে মূল পিতা অভিভাবক
হিসাবে তার দায়িত্ব পালন না করলে আল্লাহর নিকটে গোনাহগার হবে। আর পালক পিতা নেকীর
হকদার হবেন। পালক মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে তিনি শরী‘আত মেনে কাজ করবেন।
প্রশ্ন (১৯/৪৫৯) :
যেসব নারীরা স্বামীর অনুমতি ছাড়া অথবা তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একাকী বিদেশে
চাকুরী করছে, তাদের স্বামীরা কি দাইয়ূছ হিসাবে
গণ্য হবে? এছাড়া স্বামী উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বে্ও এরূপ
স্ত্রীর উপার্জন তার জন্য হালাল হবে কি?
নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক, ওমরপুর, রাজশাহী।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিন জন ব্যক্তির উপর আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন। (১) নিয়মিত
মদ্যপায়ী (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৩) দাইয়ূছ। যে তার পরিবারে ফাহেশা কাজ
স্থায়ী রাখে’ (নাসাঈ
হা/২৫৬২; আহমাদ হা/৫৩৭২; মিশকাত হা/৩৬৫৫;
ছহীহাহ হা/৬৭৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী বলেন, যার চুপ থাকার কারণে তার স্ত্রী-কন্যা, দাসী
প্রভৃতি নিকটতম মহিলাদের মধ্যে ব্যভিচার, মদ্যপান ও
ব্যভিচারমূলক কাজ-কর্ম স্থায়িত্ব ও ব্যাপকতা লাভ করে (মিরক্বাত,
হা/৩৬৫৫)।
যাহাবী
বলেন,
‘দাইয়ূছ’ সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত।
কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার
স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই
বলে না এবং যার আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’ (যাহাবী,
কিতাবুল কাবায়ের ১/৫০ পৃঃ)।
প্রশ্ন
অনুযায়ী স্বামী যেহেতু স্ত্রীর বিদেশ গমনে নিষেধ করেছেন এবং চুপ থাকেননি, সেহেতু তিনি ‘দাইয়ূছ’ হবেন না। বরং স্ত্রী গোনাহগার হবে। কেননা প্রথমতঃ
সে স্বামীর অবাধ্যতা করেছে। দ্বিতীয়তঃ উপার্জনের জন্য একাকী বিদেশে গমন করেছে। তবে
তার উপার্জন স্বামী ও সন্তানদের জন্য অবৈধ নয়। কারণ একের পাপের বোঝা অন্যে বহন
করবে না (আন‘আম
৬/১৬৪)। এক্ষেত্রে স্বামীর
জন্য স্ত্রীর উপার্জিত অর্থ গ্রহণ না করাই উত্তম হবে এবং তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য
সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। কোনভাবেই স্ত্রীকে ফিরানো না গেলে চূড়ান্ত অবস্থায় তাকে
তালাক প্রদান করবে।
প্রশ্ন (২০/৪৬০) :
মা তার সন্তানকে জানাযার অছিয়ত করে যায়। কিন্তু সন্তানের বদলে স্বামী তার জানাযা
পড়ান। এ কারণে প্রায় বিশজন লোক ছালাত আদায় থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে অছিয়ত পালনের
স্বার্থে বাকীদের নিয়ে সন্তান পুনরায় জানাযার ছালাত আদায় করে। এমনটি করা সঠিক
হয়েছে কি?
-আব্দুস সাত্তার, জামদই, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : পারতপক্ষে অছিয়ত পূরণ করাটাই কর্তব্য। যেমন আবুবকর
(রাঃ) তার স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইসকে, ফাতেমা (রাঃ) তার স্বামী আলী (রাঃ)-কে
এবং আনাস (রাঃ) তার ছাত্র ইবনু সীরীনকে তাঁর গোসল দেওয়ানোর অছিয়ত করে যান এবং তারা
তা পালন করেন (দারাকুৎনী,
বুলুগুল মারাম হা/৫৫৩; নায়লুল আওতার
১/২৯৯)। তবে কোন কারণে তা
পূরণ করা সম্ভব না হ’লে তা নিয়ে মতভেদ করা এবং ছালাতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা
সমীচীন নয়। কারণ এরূপ অছিয়ত পূরণ করা ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব (উছায়মীন, আশ-শারহুম মুমতে‘
৫/২৬৫-৬৬)। সুতরাং অছিয়ত পালন
করতে গিয়ে পুনরায় জানাযার ছালাত আদায় করা ঠিক হয়নি।
প্রশ্ন (২১/৪৬১) :
চুল-নখ কর্তন থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা কি হজ্জ পালনকারীদের জন্যও প্রযোজ্য?
-সাইফুল ইসলাম, কাজলা, রাজশাহী।
উত্তর : হজ্জ পালনকারীর জন্য উক্ত বিধান প্রযোজ্য নয়। তবে
হাদঈ ব্যতীত আলাদাভাবে কুরবানী করার নিয়ত থাকলে বিধানটি তাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৯০;
উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব
২৫/২২৫)। কারণ রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেওয়ার এরাদা রাখে,
তারা যেন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর হ’তে কুরবানী সম্পন্ন করা
পর্যন্ত স্ব স্ব চুল ও নখ কর্তন করা হ’তে বিরত থাকে’ (মুসলিম হা/১৯৭৭; মিশকাত
হা/১৪৫৯)।
প্রশ্ন
(২২/৪৬২):‘আলেমের এক ঘন্টা ইলম চর্চা একজন আবেদের সত্তর বছর ইবাদতের সমান’ মর্মে
বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
-শরীফুল ইসলাম, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত বর্ণনাটি জাল (দায়লামী,
সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৯৭৮)। অনুরূপ ‘এক ঘণ্টা ইলম অন্বেষণ করা এক ঘণ্টা ইবাদত করার চেয়ে উত্তম’ এই
বর্ণনাটিও যঈফ (দারেমী,
মিশকাত হা/২৫৬)। তবে এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ হ’ল এই যে, ‘আবেদের উপরে
আলেমের মর্যাদা নক্ষত্র সমূহের উপরে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়’ অথবা ‘যেমন আমার
মর্যাদা তোমাদের উপরে’ (তিরমিযী,
আবূদাঊদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/২১২-১৩)।
প্রশ্ন (২৩/৪৬৩) :
প্রতিবছর সরকারী খরচে তথা জনগণের করের অর্থে কয়েকশ’ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী
হজ্জ পালন করে থাকে। উক্ত অর্থ দ্বারা হজ্জ পালন করা জায়েয হবে কি? এছাড়া
তা কবুলযোগ্য হবে কি?
-আবুল কালাম আযাদ, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সরকারী খরচে হজ্জ করা জায়েয। কেননা অন্যের খরচে হজ্জ
করা যায় এবং এতে হজ্জের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ৬৫৯৩)।
প্রশ্ন (২৪/৪৬৪) :
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে শিশুর খাৎনা করা, পশু যবেহ করা যাবে
কী?
-ইহসানুল করীম, রাজপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনে খাৎনা করা ও পশু যবেহ
করায় কোন বাধা নেই। কেবলমাত্র যারা কুরবানী করার নিয়ত করেছে তাদের জন্য বিধান হ’ল
তারা এই দশদিনে নখ ও যাবতীয় চুল কাটা থেকে বিরত থাকবে (মুসলিম হা/১৯৭৭)। তবে যাদের কুরবানী নেই অথচ উক্ত আমল করবে এবং ঈদের ছালাত আদায় করে নখ, নাভির
নীচের পশম, মাথার চুল ও গোঁফ কাটবে তারাও একটি পূর্ণাঙ্গ
কুরবানীর ছওয়াব পেয়ে যাবে (আবূদাউদ
হা/২৭৮৯; আহমাদ হা/৬৫৭৫; মিশকাত
হা/১৪৭৯; ইবনু হিববান হা/৫৯১৪, সনদ
ছহীহ)। অতএব নখ-চুল কাটা
যাবে না বলে খাৎনা বা পশু যবেহ করা যাবে না এরূপ কথা ঠিক নয়।
প্রশ্ন (২৫/৪৬৫) :
আমার মা আমাদের ভাই-বোনদের আর্থিক সহযোগিতা না করে নিজের ভাই-বোনদেরকে গোপনে
আর্থিক সহযোগিতা করেন। জিজ্ঞাসা করলে তিনি অস্বীকার করেন। এক্ষেত্রে করণীয় কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রাজশাহী।
উত্তর : মায়ের জন্য এরূপ করা ঠিক নয়। কারণ তিনি স্বামীর সংসার
ও সন্তানদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল (বুখারী
হা/৫২০০, মিশকাত হা/৩৬৮৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সর্বোত্তম দীনার সেইগুলো যা
পরিবারের জন্য খরচ করা হয় (তিরমিযী
হা/১৯৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১১০৩)। অতএব নিজ সন্তানদের জন্য খরচ করার পর অতিরিক্ত থাকলে সেখান থেকে তিনি
ছাদাক্বা করতে পারেন এবং নিজের ভাই-বোনদের দান করতে পারেন। এক্ষণে সন্তানদের জন্য
করণীয় হ’ল, মাকে এ বিষয়ে নছীহত করা ও বিরত রাখা।
প্রশ্ন (২৬/৪৬৬) :
কুরবানীদাতা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে চুল-নখ কর্তন করে তবে তাকে কাফফারা কি দিতে হবে?
-আবুল কালাম, শ্যামপুর, ঢাকা।
উত্তর : ভুলক্রমে বা অজ্ঞতাবশতঃ কেটে ফেললে কোন পাপ নেই। আর
ইচ্ছাকৃতভাবে কাটলে তাকে তওবা করতে হবে, তবে তাতে কাফ্ফারা
নেই।
প্রশ্ন (২৭/৪৬৭) :
চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম তাশাহহুদে ভুলক্রমে দরূদ পড়লে কি সহো সিজদা দিতে
হবে?
-মোবারক হোসাইন, বনানী, ঢাকা।
উত্তর : না, এজন্য সহো সিজদা দিতে হবে না।
প্রশ্ন (২৮/৪৬৮) :
ক্বিয়ামতের দিন কি মানুষকে তার বুঝ মোতাবেক বিচার করা হবে? পথে-ঘাটে,
রেলস্টেশনে বাস্ত্তহারা বহু মানুষ দেখা যায় যারা ধর্ম সম্পর্কে
কিছুই জানে না এবং কোন আমলও করে না। মূলতঃ এদের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে কোন বোধশক্তিই
নেই। এদের বিচার কিভাবে হবে?
-যিল্লুর রহমান, গোবরচাকা, খুলনা।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন চার
ব্যক্তি ঝগড়া করবে। (১) বধির (الأصم) (২) নির্বোধ (الأحمق)
(৩) অতিবৃদ্ধ (الهرم)
এবং (৪) যে ইসলামের দাওয়াত পায়নি (من ماة في الفةرة)। বধির বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ইসলাম এসেছে, অথচ আমি কিছুই শুনতে পাইনি। নির্বোধ বলবে, ইসলাম
আগমন করেছে, অথচ শিশুরা আমার দিকে পশুর বিষ্ঠা নিক্ষেপ
করেছে। অতিবৃদ্ধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ আমি কিছুই বুঝতে সক্ষম হইনি। আর ইসলামের দাওয়াত না পাওয়া ব্যক্তি
বলবে, হে আল্লাহ! তোমার কোন দাওয়াতদাতা আমার নিকট আসেনি।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট হ’তে আনুগত্যের শপথ নিবেন। এরপর তাদের নিকট একজন
দূত প্রেরণ করবেন এই মর্মে যে, তোমরা আগুনে প্রবেশ কর।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি,
যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, আগুন তার
উপর ঠান্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে না, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮৪১; সিলসিলা
ছহীহাহ হা/১৪৩৪)।
উক্ত হাদীছের আলোকে ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল
ক্বাইয়িম, হাফেয ইবনু কাছীর, ইবনু
হাজার, শায়খ উছায়মীন সহ বহু বিদ্বান ফৎওয়া প্রদান করেছেন (মাজমূঊল ফাতাওয়া ৪/৩০৩-৪; আহকামু
আহলিল যিম্মাহ ২/১১৪৮-৫২; ফাৎহুল বারী ৩/২৪৬; তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/৫৮; মাজমূ‘ ফাতাওয়া
১২/০৭)। সর্বোপরি এদের বিচার
সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
তবে إنَّمَا أُجَازِي الْعِبَادَ عَلَى قَدْرِ عُقُولِهِمْ
‘আমি মানুষকে তার জ্ঞান অনুযায়ী প্রতিদান দেব’ বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেটি
মুনকার বা যঈফ (বায়হাক্বী,
শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩১৯)। আলবানী বলেন, হাদীছটি জাবের (রাঃ)-এর নিজস্ব বক্তব্য হওয়ার সম্ভাবনাই
বেশী। সম্ভবতঃ তিনি আহলে কিতাবদের নিকট থেকে বর্ণনাটি শুনেছিলেন। অতএব এ ঘটনা
বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের প্রয়োজন নেই (সিলসিলা
যঈফাহ, ১৪/৮৭৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৯/৪৬৯) :
একটি হাদীছে অসুখের জন্য সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী,
সূরা নাস, ফালাক্ব, বাক্বারা, আলে-ইমরান, হাশর, মুমিনূন, জীন
প্রভৃতি সূরার কিছু কিছু আয়াত পড়ার কথা এসেছে। উক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা কোন অমুসলিমকে
ঝাড়-ফুঁক করা যাবে কি?
-হাফীযুর রহমান, কুষ্টিয়া।
উত্তর : প্রথমতঃ উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫৪৯, আহমাদ
হা/২১২১২)। তবে পবিত্র কুরআনের
যেকোন অংশ পড়ে ফুঁক দেওয়া যাবে। কেননা কুরআনকে আল্লাহ ‘শিফা’ বা ‘আরোগ্য’ বলেছেন (বনু ইসরাঈল ১৭/৮২)। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর কালাম দ্বারা অমুসলিমকে ঝাড়-ফুঁক করায় কোন বাধা নেই (বুখারী হা/৫৭৩৬)।
প্রশ্ন (৩০/৪৭০) :
পিতামাতার ঋণ থাকলে সন্তান কিভাবে তা শোধ করবে? নিজের
উপার্জিত সম্পদ থেকে সন্তান পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য কি?
-ছফীউল্লাহ, গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর : সন্তান পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তাদের ঋণ
পরিশোধ করবে। মীরাছের আলোচনা শেষে আল্লাহ বলেন, মৃতের
অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর.. (নিসা ৪/১১)। তবে নিজ সম্পত্তি থেকে পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করা সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক
নয় (ইবনু
তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ৫/২৩২)। যদিও ঋণ পরিশোধ করা পিতা-মাতার খেদমতের অংশ ও অফুরন্ত ছওয়াবের কাজ হওয়ায় সন্তান
নিজ দায়িত্বে তা পালন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। কেননা ঋণ অবশ্য পূরণীয় বিষয়।
এমনকি কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয়, তবুও সে জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হয় (নাসাঈ হা/৪৬৮৪; মিশকাত হা/২৯২৯)। জাবের (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মারা গেলে মাত্র দুই
দীনার ঋণ থাকায় রাসূল (ছাঃ) তাঁর জানাযা পড়াননি। তখন আবু ক্বাতাদাহ উক্ত ঋণ
পরিশোধের দায়িত্ব নিল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঋণগ্রস্ত
নির্ধারিত হ’ল এবং মাইয়েত দায়মুক্ত হ’ল? আবু ক্বাতাদাহ
বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জানাযা পড়ালেন।
একদিন পরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ঐ দুই দীনারের অবস্থা কি?
আবু ক্বাতাদাহ বলল, মাত্র গতকালই লোকটি
মারা গেছে। পরের দিন রাসূল (ছাঃ) তার নিকটে পুনরায় এলেন। আবু ক্বাতাদাহ বলল,
আমি তার দুই দীনার পরিশোধ করেছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,
‘এখন ঐ মাইয়েতের চামড়া ঠান্ডা হ’ল’ (আহমাদ হা/১৪৫৭৬, সনদ হাসান)। এতে বুঝা যায় যে, কেবল দায়িত্ব নিলেই মাইয়েতের আযাব দূর হবেনা, যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হবে (শাওকানী,
নায়লুল আওত্বার ৫/২৮৫ ‘ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত ঋণগ্রস্ত
ব্যক্তি দায়মুক্ত হবেনা’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৩১/৪৭১) :
প্রতিদিন সূরা ইখলাছ ২০০ বার পড়লে ৫০ বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। শুধু ঋণ মাফ হয় না
হাদীছটি কি ছহীহ?
- আব্দুল করীম, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/২৮৯৮; সিলসিলা যঈফাহ
হা/৩০০; মিশকাত হা/২১৫৮)। তবে সূরা ইখলাছ পাঠের অনন্য ফযীলত রয়েছে। যেমন- রাসূল (ছাঃ) বলেন, সূরা
ইখলাছ একবার পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠের সমান নেকী পাওয়া যায় (মুসলিম, মিশকাত হা/২১২৭
‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (৩২/৪৭২) :
সন্তানের সকল সৎকর্মের ছওয়াব পিতা-মাতা পাবেন কি?
-তৈয়েবুর রহমান, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : সন্তানের সকল সৎকর্মের ছওয়াব পিতা-মাতা সমানভাবে
পাবেন মর্মে সুস্পষ্ট কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং যে সকল সৎকর্ম পিতা-মাতার
মাধ্যমে বা প্রচেষ্টায় সন্তান শিখেছে তার ছওয়াব পিতা-মাতা পাবেন (ইবনু তায়মিয়াহ, জামেঊল মাসাইল,
৪/২৬৬-২৭৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ
যদি কাউকে সুপথ প্রদর্শন করে, তবে সে ব্যক্তি তার অনুসারী
সকলের ছওয়াবের সমান ছওয়াব পাবে। এতে তাদের নিজস্ব ছওয়াবে কোনরূপ কম করা হবে না’ (মুসলিম হা/২৬৭৪; মিশকাত হা/১৫৮)। এছাড়া সন্তানের বিশেষ কোন সৎকর্মের ছওয়াব পিতা-মাতাও পাবেন। কারণ সন্তান
পিতা-মাতারই উপার্জন (আবুদাউদ,
তিরমিযী, মিশকাত হা/২৭৭০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে,
কুরআনের ইলম অর্জন করবে ও সে অনুযায়ী কাজ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাঁর পিতা-মাতাকে নূরের মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর মতো এবং তাঁর পিতা-মাতাকে দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে
মূল্যবান পোশাক পরানো হবে। তারা বলবেন, কিসের জন্য আমাদের
এসব পরানো হয়েছে? তাঁদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তান কুরআন শিক্ষা করেছে, এজন্য
তোমাদেরকে এভাবে সম্মানিত করা হচ্ছে’ (হাকেম
হা/২০৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৩৪; ছহীহাহ হা/২৮২৯)। অত্র হাদীছ থেকে
বুঝা যায়, সন্তানের তেলাওয়াতসহ অন্যান্য সৎকর্মে পিতা-মাতা উপকৃত
হবেন। তবে শায়খ আলবানী (রহঃ) বিভিন্ন হাদীছের সমন্বয়ে মন্তব্য করেন, নেক সন্তানের প্রতিটি সৎকর্মের ছওয়াব পিতা-মাতা সমানহারে পাবেন (আহকামুল জানায়েয ১৭১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৩৪/৪৭৪) :
স্ত্রী যদি বিবাহ পূর্ব জীবনে এক বা একাধিক জনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে থাকে এবং
সেটা সে তার পরিবার গোপন রাখে। একই সাথে বিবাহ পরবর্তী জীবনে স্বামীর হক্ব আদায় ও
সম্মান প্রদান করতে না চাইলে করণীয় কি?
-পাপেল*, গাইবান্ধা।
[* আরবীতে ইসলামী নাম রাখুন!- (স. স.)]
[* আরবীতে ইসলামী নাম রাখুন!- (স. স.)]
উত্তর : এক্ষেত্রে প্রথমে তাকে উপদেশ দিতে হবে (বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/১৪৬৮;
মিশকাত হা/৩২৩৮)। এতে সমাধান না হলে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের মাধ্যমে মীমাংসা করতে হবে (নিসা ৪/৩৫; আহমাদ হা/৬৫৬)। তাতে সমাধান না হ’লে বিছানা পৃথক করতে হবে (নিসা
৪/৩৪)। এতেও সমাধান না হ’লে
তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ করে দিতে হবে।
প্রশ্ন (৩৫/৪৭৫) :
অনেক পাওনাদার টাকা দিতে না পারলে যাকাত থেকে টাকা কেটে রাখতে অনুরোধ জানায়।
তাছাড়া যে টাকা দেয় তার নিয়ত থাকে, যদি কোন পাওনাদার
টাকা দিতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে উক্ত টাকা
যাকাত থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে। এটা জায়েয হবে কি?
-ফরীদুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া, নাটোর।
উত্তর : উক্ত টাকা যাকাত হিসাবে বাদ দেওয়া যাবে না। কারণ
যাকাতের বিধান হ’ল ধনীদের নিকট থেকে নিয়ে তা গরীবদের মাঝে বিতরণ করা (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১৭৭২)। এখানে সেটি নেই। তাছাড়া ঋণগ্রহীতা এক্ষেত্রে যাকাতের হকদার নাও হ’তে পারে।
আর যদি হকদার হয়ও তবুও এ কাজটি মূলতঃ নিকৃষ্ট সম্পদই যাকাত হিসাবে দেওয়ার সমতুল্য
হবে। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা সেখান থেকে নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করার সংকল্প
করো না’ (বাক্বারাহ
২/২৬৭)। অতএব প্রয়োজনে
ঋণগ্রহীতাকে আরো সময় দিতে পারে অথবা হকদার হিসাবে তাকে যাকাতের সম্পদ থেকে দিতে
পারে। পরে ঋণগ্রহীতা সেই অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে তা গ্রহণে কোন দোষ নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২১০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৮০-৮১)।
প্রশ্ন (৩৬/৪৭৬) :
লেখাপড়া ও পরীক্ষা আরম্ভ করার সময় নির্দিষ্ট কোন দো‘আ আছে কি?
-হাসীবুর রশীদ, কাযীপুর, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : এর জন্য নির্দিষ্টভাবে কোন দো‘আ হাদীছে বর্ণিত হয়নি।
তবে যে কোন কাজ শুরুর পূর্বে বিসমিল্লাহ পাঠ করবে (আল-মাওসূ‘আতুল
ফিক্বহিয়া ৮/৯২)। আর পরীক্ষা যেহেতু
একটি মনের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী বিষয় সেজন্য নিম্নোক্ত দো‘আগুলো পাঠ করতে
পারে-
‘রবিব যিদ্নী ইল্মা’। ‘রবিবশ্রহ্লী
ছদ্রী, ওয়া ইয়াসসিরলী আম্রী, ওয়াহ্লুল
উক্বদাতাম মিল লিসা-নী ইয়াফক্বাহূ ক্বওলী’। আল্ল-হুম্মা আইয়িদ্নী বেরূহিল কুদুস।
রবিব ইয়াসসির অলা তু‘আসসির ওয়া তাম্মিম বিল খায়ের’।
অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান
বৃদ্ধি কর!’ (ত্বোয়াহা
১১৪)। ‘হে আমার পালনকর্তা!
তুমি আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও’ ও ‘আমার কাজ সহজ করে দাও’ এবং ‘আমার জিহবার জড়তা
দূর করে দাও’। ‘যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে’ (ত্বোয়াহা
২৫-২৮)। ‘হে আল্লাহ! তুমি
আমাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তি বৃদ্ধি কর’ (বুখারী
হা/৪৫৩; মুসলিম হা/২৪৮৫; মিশকাত
হা/৪৭৮৯)। ‘হে আমার প্রতিপালক!
তুমি সহজ করে দাও, কঠিন করো না এবং কল্যাণের সাথে সমাপ্ত করে দাও’ (বায়হাক্বী কুবরা হা/৭০০৩, ১১২৯৯)।
প্রশ্ন (৩৭/৪৭৭) :
মা আমার কাছে ঢাকায় থাকেন। ছোটবেলা থেকেই আমি মায়ের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার। আমার
বিয়ের পর দ্বন্দ্ব আরো বেড়ে গেছে। তার কারণে আমার দাম্পত্য জীবনেও কিছু সমস্যা হয়।
কিন্তু মা আমার বাসা ছাড়া কোথাও যেতে চান না। এই অবস্থায় আমার করণীয় কি?
-কামরুন নাহার, মীরপুর, ঢাকা।
উত্তর : মা সন্তানের জন্য অমূল্য নে‘মত। তাই তার পক্ষ থেকে
কষ্ট পেলেও তা ছোট করে দেখতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সাধ্যমত মাকে বুঝানোর
চেষ্টা করতে হবে। কোন অবস্থায় তাকে পরিত্যাগ করা যাবে না। কারণ পিতা-মাতার
সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি’ (বায়হাক্বী,
শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮৩০; ছহীহুল
জামে‘ হা/৩৫০৭)। পিতা হ’লেন
জান্নাতের মধ্যম দরজা। এক্ষণে তুমি তোমার পিতা-মাতাকে হেফাযত কর অথবা পরিত্যাগ কর’ (ইবনু মাজাহ হা/২০৮৯; মিশকাত
হা/৪৯২৮; ছহীহাহ হা/৯১৪)। জান্নাত পেতে গেলে সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলতে হবে ও
তাদের ভরণপোষণ করতে হবে (ইসরা
৩০; লোকমান ১৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতামাতার উভয়কে
কিংবা কোন একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না; তার নাক নাক ধূলায় ধূসরিত হৌক! একথা তিনি তিনবার বলেন’ (মুসলিম হা/২৫৫১; মিশকাত হা/৪৯১২)। ইবনু ওমর (রাঃ) জনৈক কবীরা গুনাহকারীকে বলেন, আল্লাহর কসম! তুমি
মায়ের সাথে নম্র ভাষায় কথা বললে এবং তার ভরণপোষণ করলে তুমি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ
করবে, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাক’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/০৮, সনদ
ছহীহ)।
প্রশ্ন (৩৮/৪৭৮) :
মেহরাবের দু’পাশের পিলারে মিনার বিশিষ্ট টাইল্স ব্যবহার করা যাবে কি? উক্ত
মসজিদে ছালাত আদায় দোষের হবে কি?
-মুহাম্মাদ, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : ছালাতের মধ্যে মুছল্লীর দৃষ্টি আকর্ষণকারী যেকোন ছবি
মসজিদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছালাতের মধ্যে
(আল্লাহর প্রতি) নিবিষ্টতা থাকে’ (বুখারী
হা/১২১৬; মুসলিম হা/৫৩৮)। এক্ষণে যে সব মসজিদ মিনারের ছবিসহ নির্মিত হয়েছে, সেগুলি
থেকে এসব ছবি সরিয়ে দিতে হবে, যাতে ছালাতের মধ্যে তা
মুছল্লীর দৃষ্টি ছিনিয়ে না নেয় ও খুশূ-খুযূ বিনষ্ট না হয় (বুঃ মুঃ, মিশকাত হা/৭৫৭)। যদিও এরূপ অবস্থায় ছালাত হয়ে যাবে এবং অবশ্যই ছবির দিকে না তাকিয়ে সিজদার
স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। আর মসজিদ অবশ্যই জাঁকজমক মুক্ত ও সাদামাটা হ’তে
হবে (আবুদাঊদ
হা/৪৪৮; নাসাঈ, মিশকাত
হা/৭১৮-১৯)।
প্রশ্ন (৩৯/৪৭৯) :
আমাদের গ্রাম নদী ভাঙ্গনের কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে গেছে। এখানে সকলেই
নাভির নীচে হাত বাঁধে। আমি যখন মসজিদে যাই তখন তারা আমাকে জোর করে ওদের মতো ছালাত
পড়তে বাধ্য করে। এখন আমার করণীয় কি?
-জাবের আহমাদ, মেলান্দহ, জামালপুর।
উত্তর : জামা‘আতের সাথে ছালাত পড়বেন এবং সাধ্যমত ছহীহ সুন্নাহ
মোতাবেক ছালাত আদায় করবেন। কারণ জামা‘আতে ছালাত আদায়ে সাতাশ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া
যায়’ (বুঃ
মুঃ মিশকাত হা/১০৫২)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন
৬৪/১৬)। যদি তারা বাধা দেয়, সেজন্য
তারাই পাপী হবে। আর ধৈর্য ধারণ করলে আপনার নেকী বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ বলেন,
‘তোমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা কর ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে। আর তা
অবশ্যই কঠিন কাজ, তবে বিনীত বান্দাগণ ব্যতীত’ (বাক্বারাহ ২/৪৫)।
প্রশ্ন (৪০/৪৮০) :
তিরমিযী হা/২৫৭-এর ব্যাখ্যা জানতে চাই।
-রূহুল আমীন, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
উত্তর : হাদীছটি হ’ল- আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত তিনি একদিন উপস্থিত লোকদের বললেন, ‘আমি কি তোমাদের
নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের ন্যায় ছালাত পড়ব? অতঃপর তিনি
ছালাত পড়লেন এবং তাতে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন না’
অর্থাৎ দু’হাত তুললেন না (তিরমিযী
হা/২৫৭; আহমাদ হা/৪২১১; আবুদাউদ
হা/৭৪৮; মিশকাত হা/৮০৯)।
হাদীছটির সনদ ছহীহ হ’লেও তা ‘শায’
(অর্থাৎ অন্য ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীত)। সুতরাং তা আমলযোগ্য নয়। তাছাড়া হাদীছটি
জানাযার ছালাতের তাকবীর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে বলে মুহাদ্দিছগণ মত প্রকাশ করেছেন (আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১১৬)।
উল্লেখ্য যে, রুকূতে
যাওয়া ও রুকূ হ’তে ওঠার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার খলীফাসহ প্রায় ২৫
জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহ রয়েছে। একটি হিসাব মতে, ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছের রাবী সংখ্যা ‘আশারায়ে মুবাশ্শারাহ’ ১০জন
সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী (ফাৎহুল
বারী ২/২৫৮) এবং সর্বমোট ছহীহ
হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন চারশত (মাজদুদ্দীন
ফীরোযাবাদী, সিফরুস সা‘আদাত ১৫ পৃ.)। ইমাম বুখারী বলেন, কোন ছাহাবী রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক
করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি। তিনি আরও বলেন ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছ সমূহের সনদের
চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই’ (ফাৎহুল
বারী ২/২৫৭)।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের শুরুতে, রুকূতে
যাওয়াকালীন ও রুকূ হ’তে ওঠাকালীন
সময়ে... এবং ২য় রাক‘আত থেকে উঠে দাঁড়াবার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করতেন’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী,
মিশকাত হা/৭৯৩-৯৪)। হাদীছটি বায়হাক্বীতে বর্ধিতভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘এভাবেই তাঁর ছালাত জারী ছিল, যতদিন না তিনি
আল্লাহর সাথে মিলিত হন’। অর্থাৎ আমৃত্যু তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন সহ ছালাত আদায়
করেছেন। হাসান বছরী ও হামীদ বিন হেলাল বলেন, সকল ছাহাবী
উক্ত তিন স্থানে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’ (বায়হাক্বী,
মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/৮১৩, ‘মুরসাল হাসান’ ২/৪৭২, দ্র.
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১০৮-১১১)।
[সংশোধনী : গত আগস্ট’১৯ সংখ্যায় (১০/৪১০) প্রশ্নোত্তরে ‘কুরবানীর
চামড়া, গোশত এবং কুরবানীর প্রাণীর কোন অংশ বিক্রয় করা যাবে না’
বলা হয়েছে, যা ভুল। বরং সঠিক উত্তর হল, চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে
(মির‘আত ৫/১২১)।]
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaite
0 Comments