❓প্রশ্নঃ ছহীহ বুখারীতে ‘যাকাতুল ফিতর’ ঈদের ছালাতের পূর্বে বণ্টন করার কথা রয়েছে। কিন্তু মাসিক আত-তাহরীকে ছালাতের পরে বন্টন করাকে সুন্নাত বলা হয়েছে। এমতাবস্থায় কোন্টি সঠিক? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।
ছহীহ বুখারীতে নাফে‘-এর সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর
(রাঃ) হ’তে ঈদের ছালাতের পূর্বে ছাদাকাতুল ফিতর আদায় করার কথা এসেছে (বুখারী, হা/১৫১১
‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৭৭)। কিন্তু পরবর্তী অনুচ্ছেদে নাফে‘ (রাঃ) ইবনু ওমর (রাঃ)
হ’তে ছাদাক্বাতুল ফিতর সংক্রান্ত আরেকটি হাদীছ বর্ণনার পর বলেন, وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْطِيْهَا الَّذِيْنَ يَقْبِلُوْنَهَا-‘ইবনু
ওমর (রাঃ) ছাদাক্বাতুল ফিতর জমাকারীদের নিকট ফিতরা প্রদান করতেন’ (ঐ, হা/১৫১২; ইবনু
হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী, ৩/৪৭৯ পৃঃ)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন,كَانُوْا يُعْطُوْنَ لِلْجَمْعِ لاَ لِلْفُقَرَاءِ ‘তাঁরা
জমা করার জন্য দিতেন, ফকীরদের জন্য নয়’। ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে আব্দুল ওয়ারেছের সূত্রে
আইয়ূব থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল ইবনু ওমর (রাঃ) ছাদাক্বাতুল ফিতর
কখন প্রদান করতেন? তিনি বললেন, আদায়কারী বসলে। তিনি আবার বললেন, আদায়কারী কখন বসতেন?
তিনি বললেন, ঈদের ছালাতের একদিন বা দু’দিন পূর্বে (ফাৎহুল বারী, ৩/৪৮০ পৃঃ)। ইমাম মালিক
(রহঃ) নাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, أَنَّ عَبْدَ اللهِ ابْنِ عُمَرَ كَانَ يَبْعَثُ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ إِلَى الَّذِيْ تُجْمَعُ عِنْدَهُ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةٍ- ‘আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রাঃ)
ঈদুল ফিতরের দু’দিন বা তিনদিন পূর্বে যাদের নিকট ছাদাক্বাতুল ফিতর জমা করা হয় তাদের
নিকট ফিতরা প্রেরণ করতেন’ (মুওয়াত্ত্বা মালিক, ১/২৮৫ পৃঃ ‘যাকাত’ অধ্যায় ‘যাকাতুল ফিতর
প্রেরণ’ অনুচ্ছেদ)। তেমনি আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, وَكَّلَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ‘রাসূলুল্লাহ আমাকে রামাযানের
যাকাত রক্ষার বা হেফাযতের দায়িত্ব প্রদান করেন’(ফাৎহুল বারী, ৩/৪৮০ পৃঃ)। যা দ্বারা
বুঝা যায় যে, তিনি জমাকৃত ছাদাক্বাতুল ফিতর পাহারা দিচ্ছিলেন। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে,
ঈদের পূর্বে ছাদাক্বাতুল ফিতর জমা করা সুন্নাত। তাছাড়া ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে ঈদের ছালাতের পূর্বে ছাদাক্বাতুল ফিতর বের করার
নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তা ছালাতের পূর্বে বের করতাম এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত শেষে
তা বণ্টন করতেন’(ইরওয়াউল গালীল, ৩/৩৩২-৩৩ পৃঃ)। অতএব ছাদাক্বাতুল ফিতর ঈদের পূর্বে
জমা করতে হবে এবং ঈদের ছালাতের পরে বণ্টন করতে হবে। এটাই সুন্নাতী তরীকা (বিস্তারিত
দ্রঃ ফাৎহুল বারী, হা/১৫১১ ‘যাকাত’ অধ্যায় ৭৭ অনুচ্ছেদ, ৩/৪৩৯-৪০ পৃঃ)।
❓প্রশ্নঃ আমি এযাবৎ ধন-সম্পদের যাকাত প্রদান করিনি। এখন যাকাত দিতে চাই।
যাকাত দেওয়ার পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন?
যত বছর থেকে আপনি নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন,
তার হিসাব সহ বর্তমান সম্পদের হিসাব করে যাকাত প্রদান করতে হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৭৩)।
কারণ হকদারদের হক পরিশোধ করা যরূরী (মা‘আরিজ ২৪-২৫)। যদি সঠিক হিসাব করা সম্ভব না হয়,
তাহ’লে সাধ্যমত হিসাব করে বকেয়া যাকাত আদায় করতে হবে এবং আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাইতে
হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে সাধ্যমত ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)।
❓প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, যে ইমাম বা খত্বীবের হজ্জ করা ও যাকাত দেওয়ার
সাধ্য নেই, তিনি হজ্জ ও যাকাতের আলোচনা করতে পারবেন না। উক্ত দাবী কি ঠিক?
উক্ত দাবী সঠিক নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
তোমরা আমার পক্ষ হ’তে একটি আয়াত জানা থাকলেও তা অন্যকে পৌঁছে দাও’ (বুখারী, মিশকাত
হা/১৯৮, ‘ইলম’ অধ্যায়)।
❓প্রশ্নঃ যাকাতের অর্থ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা যাবে কি?
রাস্তা নির্মাণের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা বৈধ
নয়। কেননা এটা এলাকার দুস্থ-মিসকীনদের হক। এ অর্থ ঐ সকল খাতেই ব্যয় করতে হবে, যা মহান
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন (ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়িমাহ ১০/৪৩-৪৪, ফৎওয়া নং
২৩০৬)। যাকাত বণ্টনের খাত সমূহ হচ্ছে ফকীর, মিসকীন, যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী,
ইসলামের প্রতি বিধর্মীদের আকৃষ্টকরণ, দাস মুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে ও মুসাফির
(তওবা ৬০)।
❓প্রশ্নঃ টমেটো মূলত সবজি হিসাবে চাষ হ’ত। বর্তমানে এটি বাণিজ্যিক হিসাবে
চাষ করা হচ্ছে। কিভাবে এর যাকাত আদায় করতে হবে?
টমেটো সবজির অন্তর্ভুক্ত। আর শাক-সবজির কোন ওশর নেই।
কাজেই এ ধরনের শস্যের ওশর দেওয়ার প্রয়োজন নেই (ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১ম খন্ড, পৃঃ ৪২০)।
তবে এ ধরনের শস্যের বিক্রয়লব্ধ অর্থ যদি নেছাব পরিমাণ হয় এবং তাতে এক বছর অতিবাহিত
হয়, তাহ’লে তার যাকাত দিতে হবে।
❓প্রশ্নঃ টাকার যাকাত নির্ধারিত হবে কিভাবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত
করবেন।
সোনা-চাঁদীর নিছাব অনুযায়ী টাকার যাকাত নির্ধারিত
হবে। অর্থাৎ বর্তমান ওযন অনুযায়ী ৮৫ গ্রাম সোনা এবং ৫৯৫ গ্রাম চাঁদী। প্রয়োজনীয় খরচ
বাদে যা অবশিষ্ট থাকবে এবং এক বছর তার উপর অতিবাহিত হলে সঞ্চিত টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব
হবে। শতকরা আড়াই ভাগ হিসাবে (ইবনে মাজাহ হা/১৭৮০)। স্বর্ণের মূল্যমান রূপা অপেক্ষা
স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য বিধায় অধিকাংশ বিদ্বান স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী
যাকাত দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
❓প্রশ্নঃ টাকার যাকাত নির্ধারিত হবে কিভাবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত
করবেন।
সোনা-চাঁদীর নিছাব অনুযায়ী টাকার যাকাত নির্ধারিত
হবে। অর্থাৎ বর্তমান ওযন অনুযায়ী ৮৫ গ্রাম সোনা এবং ৫৯৫ গ্রাম চাঁদী। প্রয়োজনীয় খরচ
বাদে যা অবশিষ্ট থাকবে এবং এক বছর তার উপর অতিবাহিত হলে সঞ্চিত টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব
হবে। শতকরা আড়াই ভাগ হিসাবে (ইবনে মাজাহ হা/১৭৮০)। স্বর্ণের মূল্যমান রূপা অপেক্ষা
স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য বিধায় অধিকাংশ বিদ্বান স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী
যাকাত দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
❓প্রশ্নঃ যাকাতের মাল দ্বারা মাদরাসার ছাত্রদের আবাসিক ব্যবস্থা করা
যাবে কি?
যাবে। যাকাত বণ্টনের খাতগুলোর মধ্যে একটি খাত আছে
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ বা আল্লাহর রাস্তা (তওবা ৬০)। আর আল্লাহর দ্বীন টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে
বড় মাধ্যম হচ্ছে দ্বীনী প্রতিষ্ঠান। যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রকৃত দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার
উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হয়, সেসব প্রতিষ্ঠান যাকাতের
বড় হকদার। যেখানে কোন সরকারী অনুদান দেওয়া হয় না।
❓প্রশ্নঃ টিভি চ্যানেলের অধিকাংশ বক্তা বলছেন যে, ব্যবহার্য স্বর্ণালংকারের
যাকাত দিতে হবে না। যেমন ব্যবহার্য দামী আসবাবপত্রের যাকাত নেই। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
অলঙ্কারে যাকাত দেওয়া সম্পর্কিত হাদীছগুলি ছহীহ (আবুদাঊদ
হা/১৫৬৩; নাসাঈ হা/২৪৭৯; তিরমিযী হা/৬৩৫; মিশকাত হা/১৮০৮-১০ ‘যাকাত’ অধ্যায় ১ অনুচ্ছেদ)।
পক্ষান্তরে অলঙ্কারের যাকাত নেই মর্মে জাবের (রাঃ) বর্ণিত মওকূফ হাদীছটি ভিত্তিহীন
(باطل لا أصل له) (ইরওয়াউল গালীল হা/৮১৭; য‘ঈফুল
জামে‘ হা/৪৯০৬)।
❓প্রশ্নঃ কারো উপর ফিতরা ফরয হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিছাব আছে কি? পাগলের
উপর ফিতরা আদায় করা কি ফরয?
ফিৎরার কোন নিছাব নেই। কারণ গোলামের উপরও ফিৎরা ফরয
করা হয়েছে (বুখারী হা/১৫১১; মিশকাত হা/১৮১৫)। পাগলের অভিভাবক তার পক্ষ থেকে ফিতরা
আদায় করবে। আর অভিভাবকহীন পাগলের ক্ষেত্রে তার সম্পদ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে। আর
সম্পদ না থাকলে আদায় করার প্রয়োজন নেই। কারণ ফিতরা পুরুষ-নারী, দাস-দাসী, ছোট-বড়
সকলের উপর ফরয' (বুখারী হা/১৫০৩, মুসলিম হা/৯৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫, 'ছাদাক্বাতুল ফিৎর'
অনুচ্ছেদ)।
Rea
❓প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংকে নিছাব পরিমাণ টাকা ৫ বছর মেয়াদের জন্য রাখা
হয়েছে। উক্ত অর্থের লভ্যাংশই পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। এক্ষণে যাকাত কি মূল
অর্থ না লভ্যাংশসহ মোট অর্থের উপর দিতে হবে?
প্রথমতঃ
টাকা ব্যাংকে রেখে লভ্যাংশ ভোগ করা যাবে না। কারণ উক্ত লভ্যাংশ সূদের অন্তর্ভুক্ত।
ব্যবসায় যুক্ত মূল টাকার সাথে লভ্যাংশ যদি একত্রিত হয়, আর একবছর গচ্ছিত থাকে, তাহ’লে
লভ্যাংশসহ যাকাত দিতে হবে। অথবা খরচ করার পর লভ্যাংশের যে পরিমাণ অর্থ মূল টাকার সাথে
গচ্ছিত থাকবে, তার যাকাত দিতে হবে। আর প্রতি মাসে লভ্যাংশ খরচ হয়ে গেলে তার যাকাত দিতে
হবে না। কেবল মূল টাকার যাকাত দিতে হবে।
❓প্রশ্নঃ নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কাদেরকে যাকাত-ফিতরার অর্থ প্রদান করা
যায় এবং কাদেরকে যায় না?
নিকটাত্মীয় বলতে নিজের স্বামীও যদি অভাবী হন, তবে
তাকে আগে দিতে হবে। তারপর তার ভাই-বোন, মামু-চাচা প্রমুখ। নিকটাত্মীয়কে প্রদানের মাধ্যমে
দ্বিগুণ নেকী হয়। ছাদাক্বার নেকী ও আত্মীয়তাসম্পর্ক বজায় রাখার নেকী’ (বুখারী হা/১৪৬৬,
মুসলিমহা/১০০০; মিশকাত হা/১৯৩৪-৩৫)।
❓প্রশ্নঃ যাকাত-ওশর না
দেওয়ার পরিণাম কি?
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা
করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা, (হে নবী) তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির
সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে ঐগুলোকে উত্তপ্ত করে তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ
এবং পৃষ্ঠদেশে দাগানো হবে, (আর বলা হবে) এটা হচ্ছে ওটাই যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয়
করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন নিজেদের সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ কর (তওবা ৩৪, ৪০)। উল্লেখিত
আয়াতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের কথা বলা হ’লেও উদ্দেশ্য সকল জমাকৃত অপবিত্র সম্পদ, যাকে যাকাত
দিয়ে পবিত্র করা হয়নি। কেননা কান্য বলা হয় প্রত্যেক সঞ্চিত সম্পদকে(কুরতুবী)
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে তার যাকাত আদায় করেনি, ক্বিয়ামতের দিন তার সেই সম্পদকে টেকো মাথা বিষাক্ত সাপে রূপান্তরিত করা হবে। যার দু’চোখে দু’টি কালো বিন্দু থাকবে। ক্বিয়ামতের দিন ঐ সাপ তার গলা পেঁচিয়ে ধরবে এবং দু’চোয়াল কামড়ে ধরে বলতে থাকবে, আমি তোমার সঞ্চিত ধন। আমি তোমার সঞ্চিত ধন’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৭৭৪ ‘যাকাত’ অধ্যায়)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে তার যাকাত আদায় করেনি, ক্বিয়ামতের দিন তার সেই সম্পদকে টেকো মাথা বিষাক্ত সাপে রূপান্তরিত করা হবে। যার দু’চোখে দু’টি কালো বিন্দু থাকবে। ক্বিয়ামতের দিন ঐ সাপ তার গলা পেঁচিয়ে ধরবে এবং দু’চোয়াল কামড়ে ধরে বলতে থাকবে, আমি তোমার সঞ্চিত ধন। আমি তোমার সঞ্চিত ধন’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৭৭৪ ‘যাকাত’ অধ্যায়)।
❓প্রশ্নঃ আমার খালাতো
ভাই আমাদের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে খাটিয়েছিল। কিন্তু তার অনেক ক্ষতি
হওয়ায় এখন সে উক্ত টাকা ফেরত দিতে অক্ষম। এক্ষণে উক্ত অর্থের যাকাত দিতে হবে কি?
উক্ত অর্থ করায়ত্ত হওয়ার পর এক বছর অতিক্রান্ত হলে
যাকাত দিবে (মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছাইমীন, শারহুল মুমতে‘ ৬/২৭ পৃঃ)।
❓প্রশ্নঃ স্ত্রীর মোহরের
যাকাত এবং মায়ের অলংকারের যাকাত আদায় করা কি স্বামীর উপর আবশ্যক? এছাড়া স্ত্রী এবং
কন্যার অলংকার পৃথকভাবে নিছাব পরিমাণ না হ’লে, তা একত্রিত করে যাকাত দিতে হবে কি?
স্ত্রীর মোহর আর মায়ের স্বর্ণের যাকাত আদায় করা তাদের
উপরই ফরয। স্বামী বা সন্তানের উপর নয়। তবে স্বামী বা সন্তান স্বেচছায় তাদের যাকাত আদায়
করতে পারে। আর স্ত্রী এবং কন্যার সম্পদ পৃথক হ’লে এবং নিছাব পরিমাণ হ’লে তারা পৃথকভাবেই
যাকাত দিবে। একত্রিত করে যাকাত দেওয়ার কোন বিধান শরী‘আতে নেই (আবুদাউদ ১৫৭৩, ৭৪, ৭৯,
৮০; মিশকাত হা/১৭৯৯)। তবে স্ত্রী, কন্যা ও নিজের সম্পদ যদি একত্রিত থাকে তাহ’লে এক
সঙ্গে মিলিয়ে যাকাত দিবে।
❓প্রশ্নঃ অবৈধ খাতে অর্থ
ব্যয় করে যদি কেউ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাহ’লে সে ‘গারেমীন’ হিসাবে যাকাতের হকদার হবে কি?
অবৈধ পথে ব্যয়কারী ব্যক্তি যদি সত্যিকারভাবে অনুতপ্ত
হয়ে এরূপ কাজ থেকে খালেছ অন্তরে তওবা করে, তবে তাকে ঋণ পরিশোধের জন্য যাকাতের টাকা
দেওয়া যেতে পারে। নইলে তাকে হারাম পথে ব্যয়ে উৎসাহিত করা হবে, যা সিদ্ধ নয় (মায়েদাহ
২)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে একজন লোক ফল বাগান কিনে,
পরে বাগানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে তার ঋণ হয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) তাকে দান করার জন্য বলেন,
মানুষ তাকে দান করে। তাতেও তার কর্য পরিশোধ হয় না। নবী করীম (ছাঃ) ঋণদাতাদের বলেন,
তোমরা যা পেয়েছ তা গ্রহণ কর, এটাই তোমাদের জন্য শেষ(মুসলিম হা/১৫৫৬)।
❓প্রশ্নঃ ঋণগ্রস্তের
জন্য যাকাত আদায় করা ফরয কি?
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হ’লে
এবং তা এক বছর পূর্ণ হ’লে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরয (তিরমিযী হা/৬৩১, মিশকাত হা/১৭৮৭)।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যাকাত আদায়ের পূর্বে তার ঋণ পরিশোধ করবে। হযরত ওছমান (রাঃ) বলেন,
এটি (রামাযান) যাকাতের মাস। অতএব যদি কারো উপর ঋণ থাকে তাহলে সে যেন প্রথমে ঋণ পরিশোধ
করে। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পরিমাণ হ’লে সে তার যাকাত আদায় করবে (মুওয়াত্ত্বা মালেক
হা/৮৭৩, ইরওয়া ৩/৩৪১ সনদ ছহীহ)। যদি ঋণ পরিশোধ না করে, তাহ’লে যাকাতযোগ্য সব সম্পদের
উপরেই যাকাত আদায় করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তাদের সম্পদ হ’তে ছাদাক্বা (যাকাত) গ্রহণ কর। যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে’ (তওবা ৯/১০৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামনের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে বললেন, তুমি তাদেরকে জানিয়ে দিবে, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে ছাদাক্বা (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে’ (বুখারী হা/১৩৯৫)। এখানে ঐ ধনী ব্যক্তিরা ঋণগ্রস্ত কি-না, সেটা শর্ত করা হয়নি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তাদের সম্পদ হ’তে ছাদাক্বা (যাকাত) গ্রহণ কর। যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে’ (তওবা ৯/১০৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামনের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে বললেন, তুমি তাদেরকে জানিয়ে দিবে, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে ছাদাক্বা (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে’ (বুখারী হা/১৩৯৫)। এখানে ঐ ধনী ব্যক্তিরা ঋণগ্রস্ত কি-না, সেটা শর্ত করা হয়নি।
❓প্রশ্নঃ কুরবানীর চামড়ার
মূল্য কি যাকাত বা ছাদাক্বার ৮টি খাতে দান করতে হবে? দান না করে তা নিজে ভক্ষণ করলে
শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?
যেহেতু কুরআনে বর্ণিত ছাদাক্বার খাত ৮টি এবং রাসূল
(ছাঃ) কুরবানীর চামড়া ছাদাক্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেহেতু এর বাইরে তা দান করা বৈধ
হবে না (তওবা ৬০, বুখারী, মুসলিম হা/১৩১৭; মিশকাত হা/২৬৩৮)। এছাড়া দান না করে তার মূল্য
ভক্ষণ করাও নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করল (অর্থাৎ
বিক্রয়লব্ধ মূল্য ভোগ করল) তার কুরবানী হ’ল না (হাকেম, বায়হাক্বী; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১১৮)।
❓প্রশ্নঃ দরিদ্র ও বিধবা
হওয়ার কারণে সহোদর বোনকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে কি?
সহোদর ভাই-বোন যাকাতের হকদার হ’লে তাকে যাকাত প্রদান
করা যাবে। বরং এতে দ্বিগুণ নেকী রয়েছে। যয়নব (রাঃ) স্বীয় স্বামীকে যাকাতের অর্থ দিতে
চাইলে রাসূল (ছাঃ) তাকে অনুমতি দিয়ে বলেন, এতে দ্বিগুণ নেকী রয়েছে। (১) ছাদাক্বার নেকী
(২) আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার নেকী’ (বুখারী হা/১৪৬৬, মুসলিম হা/১০০০; মিশকাত হা/১৯৩৪-৩৫)।
❓প্রশ্নঃ বার বার বলা
সত্ত্বেও পিতা যাকাত আদায় করে না। এক্ষণে সন্তানের জন্য তার অর্থ গ্রহণ করা শরী‘আত
সম্মত হবে কি?
সন্তান যতদিন উপার্জনক্ষম না হয়, ততদিন পিতার অর্থ
গ্রহণ করবে। কারণ সাধ্যের বাইরে আল্লাহ মানুষের উপর কোন কাজ চাপিয়ে দেন না (বাক্বারাহ
২/১৮৬)। তবে কর্মক্ষম হলে তাকে নিজে হালাল রূযীর চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, হে
মানুষ পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র, তা থেকে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ
করো না। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ ১৬৮)।
❓প্রশ্নঃ ৩ মাস পূর্বে একটি ট্রাক ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যে ক্রয় করেছি। যার
মধ্যে ২৪ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। এক্ষণে আমার উপর যাকাত ফরয হয়েছে কি?
ট্রাকের ক্রয় মূল্যের উপর যাকাত লাগবে না। বরং ট্রাক
থেকে উপার্জিত অর্থ যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং তা একবছর সঞ্চিত থাকে, তাহলে ২.৫% হিসেবে
যাকাত দিতে হবে। তবে নিছাব পরিমাণ সম্পদ সঞ্চিত না রেখে যদি ঋণ পরিশোধ করে সেক্ষেত্রে
যাকাত প্রদানের প্রয়োজন হবে না। হযরত ওছমান (রাঃ) বলতেন, এটি (রামাযান) যাকাতের মাস।
অতএব যদি কারো উপর ঋণ থাকে তাহলে সে যেন প্রথমে ঋণ পরিশোধ করে। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ
নিছাব পরিমাণ হ’লে সে তার যাকাত আদায় করবে(মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৮৭৩, ইরওয়া ৩/৩৪১,
সনদ ছহীহ)।
❓প্রশ্নঃ যৌথ পরিবারে সকলেই বিবাহিত, সবারই সন্তান-সন্ততি রয়েছে এবং
সকলে একত্রে বসবাস করে এবং একান্নভুক্ত। এক্ষণে যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে সকলের সম্পদ
একত্রিত করে যাকাত বের করতে হবে কি?
যৌথ পরিবারের সকল সম্পদের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ যদি
একজনের হাতে থাকে, তবে তিনিই পুরো সম্পদের উপর যাকাত আদায় করবেন। আর যদি পৃথক থাকে,
সেক্ষেত্রে প্রত্যেকে পৃথকভাবে তা আদায় করবে। কেননা যাকাতের পরিমাণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে
পৃথক মালিকানাধীন সম্পদসমূহ একত্রিত করে যাকাত দেওয়ার অনুমতি নেই(আবুদাউদ হা/১৫৭৯-৮০,
সনদ হাসান)।
❓প্রশ্নঃ ওশর-যাকাত এগুলো টাকা দিয়ে আদায় করা শরী‘আতসম্মত হবে কি? না
নির্দিষ্ট প্রাণী, শস্য বা বস্ত্তর যাকাত সেই জিনিস দিয়েই আদায় করতে হবে?
ফসলের যাকাত ফসল দিয়ে, পশুর যাকাত পশু দিয়ে, ব্যবসায়রত
সম্পদের যাকাত মূল্য দিয়ে, স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত মূল্য দিয়ে এবং ফিৎরার যাকাত খাদ্যবস্ত্ত
দিয়ে আদায় করবে। তবে দূরবর্তী কোন স্থানে যাকাত প্রেরণ করতে চাইলে ঐ বস্ত্তই প্রেরণ
করা সবসময় সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে তার বিক্রয়মূল্য প্রেরণ করা জায়েয। কারণ আল্লাহপাক
মানুষের উপর সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু চাপিয়ে দেননি (বাক্বারাহ ২৮৬)।
❓প্রশ্নঃ যাকাত ফান্ডের অর্থ ছহীহ আক্বীদা আমলের প্রচারের স্বার্থে নির্মিত
মসজিদের সম্প্রসারণ, ইমাম ও মুওয়াযযিনের বেতন ইত্যাদি খাতে ব্যয় করা যাবে কি?
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন যাকাত বণ্টনের যেসব খাত উল্লেখ
করেছেন, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয় (তওবা ৯/৬০)। অতএব যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ সম্প্রসারণ
করা যাবে না (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৭৬, ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, মাসআলা নং ৩৬৮)। ইমাম
বা মুওয়াযযিন অভাবগ্রস্থ হ’লে তাদেরকে দেওয়া যাবে। কিন্তু বেতন হিসাবে দেওয়া যাবে না।
স্মর্তব্য যে, ইমাম-মুওয়াযযিন হচ্ছেন সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের দায়-দায়িত্ব সমাজের
উপর ন্যস্ত। সুতরাং সমাজের লোকদের উচিত সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মানজনক ভাতা বা বেতনের
ব্যবস্থা করা (আবুদাঊদ হা/৩৫৮৮, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩৭৪৮)।
❓প্রশ্নঃ স্থাবর সম্পদ যেমন জমি, বাড়ি, গাছ-পালা এসবের যাকাত দিতে হবে
কি?
এসবের কোন যাকাত দিতে হবে না। তবে জমি থেকে উৎপাদিত
ফসলের যাকাত দিতে হবে (বুখারী, মিশকাত হা/১৭৯৭)। শাক-সবজিতে কোন যাকাত নেই (তিরমিযী
হা/৬৩৮; মিশকাত হা/১৮১৩)। বসবাসের জন্য নির্মিত বাড়িতে কোন যাকাত নেই। তবে বাড়ী বা
দোকান থেকে প্রাপ্ত ভাড়া অথবা রিয়েল স্টেট ব্যবসার প্রাপ্ত লভ্যাংশ নিছাব পরিমাণ হ’লে
এবং এক বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত দিতে হবে (আবুদাউদ হা/১৫৭৩; তিরমিযী হা/৬৩১)। গাছের
কোন যাকাত নেই। তবে গাছ হতে উৎপন্ন শস্য নিছাব তথা পাঁচ ওয়াসাক্ব পরিমাণ হলে তাতে ২০
ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে(বাক্বারাহ ২/২৬৭; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৯৪)।
উল্লেখ্য যে, ৫ ওয়াসাক্ব সমান ৬০ ছা‘ বা ৭৫০ কেজি।
❓প্রশ্নঃ যাকাত ফান্ডের অর্থ ছহীহ আক্বীদা আমলের প্রচারের স্বার্থে নির্মিত
মসজিদের সম্প্রসারণ, ইমাম ও মুওয়াযযিনের বেতন ইত্যাদি খাতে ব্যয় করা যাবে কি?
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন যাকাত বণ্টনের যেসব খাত উল্লেখ
করেছেন, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয় (তওবা ৯/৬০)। অতএব যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ সম্প্রসারণ
করা যাবে না (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৭৬, ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, মাসআলা নং ৩৬৮)। ইমাম
বা মুওয়াযযিন অভাবগ্রস্থ হ’লে তাদেরকে দেওয়া যাবে। কিন্তু বেতন হিসাবে দেওয়া যাবে না।
স্মর্তব্য যে, ইমাম-মুওয়াযযিন হচ্ছেন সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের দায়-দায়িত্ব সমাজের
উপর ন্যস্ত। সুতরাং সমাজের লোকদের উচিত সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মানজনক ভাতা বা বেতনের
ব্যবস্থা করা (আবুদাঊদ হা/৩৫৮৮, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩৭৪৮)।
❓প্রশ্নঃ সরকারী এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় যাকাত, ফেৎরা, ওশর, কুরবানীর চামড়া
ইত্যাদি গ্রহণ করা এবং তা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা যাবে কি?
সরকারী এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় এসব অর্থ গ্রহণ করা যাবে
না। বরং এযুগে বেসরকারী মাদরাসা সমূহের মধ্যে যারা ছহীহ আক্বীদা ও আমল প্রচার ও প্রসারের
লক্ষ্যে এবং একদল দাঈ ইলাল্লাহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং যাদের পর্যাপ্ত
আর্থিক সক্ষমতা নেই, কেবল তারাই এসব ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতের দানগুলি গ্রহণ করতে পারবে
ইনশাআল্লাহ।
❓প্রশ্নঃ আলু, কলা ও পানের ওশর দিতে হবে কি?
দিতে হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘শাক-সবজিতে
কোন যাকাত (ওশর) নেই’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪১১; মিশকাত হা/১৮১৩)।
তবে এসবের ব্যবসার অর্থ যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর সঞ্চিত থাকে, তাহ’লে উক্ত অর্থের
১/৪০ ভাগ যাকাত দিবে (আবুদাঊদ হা/১৫৭৩-৭৪)। অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে। তবে ঐসব
ফসল উঠানোর সময় গরীব-মিসকীনকে কিছু দান করবে (বুখারী হা/২৩৩৭)।
❓প্রশ্নঃ ওশরের ধান থেকে ইমাম-মুওয়াযযিনকে কিছু দেওয়া যাবে কি?
যাকাত বণ্টনের যে নির্ধারিত খাত সমূহ রয়েছে, তা ব্যতীত
অন্য খাতে যাকাত বণ্টন করা যাবে না (তাওবাহ ৯/৬০)। মসজিদের ইমাম-মুওয়াযযিন উক্ত খাতগুলির
অন্তর্ভুক্ত নন। অতএব তাদেরকে তা দেওয়া যাবে না। তবে তারা নিতান্ত গরীব হ’লে কিছু দেওয়া
যাবে (আবুদাঊদ হা/১৬৩৫, মিশকাত হা/১৮৩৩)। উল্লেখ্য যে, মসজিদ কমিটির উচিৎ হবে ইমাম-মুওয়াযযিনের
জন্য এমন ভাতা নির্ধারণ করা যাতে তাদের অভাব দূরীভূত হয় (আবুদাঊদ হা/২৯৪৩; মিশকাত হা/৩৭৪৮)।
❓প্রশ্নঃ শাড়ী-লুঙ্গি ইত্যাদি কাপড় দিয়ে যাকাত আদায় করা যাবে কি?
যাবে। তবে যাকাতের হিসাব সর্বাগ্রে সম্পন্ন করতে হবে।
অতঃপর উক্ত অর্থ দ্বারা এগুলি ক্রয় করে বিতরণ করতে হবে। স্মর্তব্য যে, যাকাত ও ছাদাক্বাসমূহ
মুসলিম আমীরের নিকট জমা করে তাঁর মাধ্যমে হকদারগণের মধ্যে বিতরণ করাই হ’ল ইসলামী বিধান।
বর্তমান যুগে কোন হকপন্থী ইসলামী সংগঠন বা সংস্থার মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে। তারা
তা কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল ফান্ডে জমা করে যাকাতের খাত সমূহে বিতরণ করবেন। এছাড়া নিজ
গ্রামে বা মহল্লায় দ্বীনদার কমিটির নিকট বায়তুল মাল জমা করার ব্যবস্থা থাকলে সেখানে
কিছু অংশ জমা করার মাধ্যমে বিতরণ করা যেতে পারে। এরূপ সুন্নাতী তরীকা বাদ দিয়ে নিজ
হাতে বিতরণ করতে গিয়ে একদিকে গরীবরা লাইনে পদদলিত হয়ে মারা পড়ছে, অন্যদিকে দাতা রিয়া
ও শ্রুতির পাপে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে তার যাকাত কবুল হচ্ছে না। অতএব ইসলামী বিধান মেনে
যাকাত আদায় করাই উত্তম।
❓প্রশ্নঃ আমি একজন কাপড় ব্যবসায়ী। এখানে মূলধন সবসময় কমবেশী হয়। নির্দিষ্ট
মূলধন বছর অতিক্রম করে না। এক্ষেত্রে আমি যাকাত
বছর শেষে ব্যবসায়রত সম্পদ কমবেশী গড় হিসাব করে তা
নিছাব পরিমাণ হ’লে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে (তিরমিযী হা/৬২৮, বায়হাক্বী,
সুনানুল কুবরা হা/৭৩৯৪; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ৩৬৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ)। পুংখানুপুংখ হিসাব
রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি আল্লাহ ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ।
❓প্রশ্নঃ ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি শস্য চাষের জমিতে আগে ওশর দিতাম। বর্তমানে
পুকুর কেটে মাছ এবং কলার চাষ করছি। এক্ষণে এই ফসলের ওশর বা যাকাত আদায় করব কিভাবে?
মাছ বা কলার শরী‘আত নির্ধারিত কোন যাকাত নেই। তবে
উভয়টিই যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে করা হয় তবে বছর শেষে মূলধন ও লভ্যাংশ হিসাব করে নিছাব
পরিমাণ হলে তা থেকে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করতে হবে।
❓প্রশ্নঃ কাউকে যাকাতের মাল প্রদানের সময় তাকে জানানো যরূরী কি?
শরী‘আতে যাকাতের মাল হকদারদের মাঝে বণ্টন করার নির্দেশ
এসেছে (তওবা ৯/৬০)। এজন্য তাদেরকে জানানোর কোন আবশ্যকতা নেই। কাউকে জানানো হ’লে বরং
তাকে ছোট করা হয়, যা খোটা দানের শামিল। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা খোটা দিয়ে তোমাদের
ছাদাক্বাগুলিকে বিনষ্ট করো না’ (বাক্বারাহ ২/২৬৪)।
❓প্রশ্নঃ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে কি? তাদের জন্য
এ টাকা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
পিতা-মাতার ন্যায় শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর ব্যয়ভার বহন করা
জামাইয়ের জন্য আবশ্যিক নয়। তবে হকদার হ’লে জামাই তাদেরকে যাকাতের টাকা দিতে পারবে এবং
তাদের জন্য এ টাকা গ্রহণ করাও জায়েয হবে (বুখারী হা/১৪৬২; ইরওয়া হা/৮৭৮; ফাৎহুল বারী
৩/৩২৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/৬২)। বরং এধরনের নিকটাত্মীয়কে দান করলে দ্বিগুণ ছওয়াব
পাওয়া যাবে (তিরমিযী হা/৬৫৮; ইবনু মাজাহ হা/১৮৪৪; মিশকাত হা/১৯৩৯)।
❓প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, ২৫ উক্বিয়া বা ২০০ দিরহাম যা বাংলাদেশী মুদ্রায়
৮ হাযার টাকা, একবছর থাকলে যাকাত দিতে হবে। এর সত্যতা আছে কি?
একথা ভিত্তিহীন। উক্ত আলেম হাদীছে বর্ণিত দিরহাম ও
দীনারের মান বুঝতে ভুল করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বিশ দীনারের কম স্বর্ণে
যাকাত ফরয নয়’ (আবূদাউদ হা/১৫৭৩) এবং ‘পাঁচ উক্বিয়ার কম পরিমাণ রৌপ্যে যাকাত নেই’
(বুখারী হা/১৪৮৪)। হাদীছে বর্ণিত ২০ দীনার সমান ৮৫ গ্রাম তথা ৭ ভরি ৫ আনা ৫ রতি স্বর্ণ।
আর ১ উক্বিয়া সমান ৪০ দিরহাম হিসাবে ৫ উক্বিয়া সমান ২০০ দিরহাম তথা ৫৯৫ গ্রাম সমান
৫১.০২ ভরি রৌপ্য (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/১৩৮)। অতএব ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা ৫৯৫ গ্রাম
রৌপ্যের মধ্যে যেটির মূল্যমান অপেক্ষাকৃত কম থাকবে সেটি অনুযায়ী নিছাব পরিমাণ হলে যাকাত
আদায় করতে হবে (ফাতাওয়া হাইআতু কিবারিল ওলামা ১/৩৭৩, ৩৮৮, ৪১১ পৃঃ, ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা
৯/২৫৭)।
তবে স্বর্ণের মূল্যমান রৌপ্য অপেক্ষা স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য বিধায় অধিকাংশ বিদ্বান স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী যাকাত দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
তবে স্বর্ণের মূল্যমান রৌপ্য অপেক্ষা স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য বিধায় অধিকাংশ বিদ্বান স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী যাকাত দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
❓প্রশ্নঃ জনৈক মৃত ব্যক্তির পরিবার তার রেখে যাওয়া ইসলামী ব্যাংকে ফিক্সড
ডিপোজিট থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করে। তারা নিজেরাই যাকাত পাওয়ার
হকদার। এক্ষণে তাদের ডিপোজিটকৃত মূল টাকা থেকে যাকাত বের করতে হবে কি?
প্রথমতঃ
কোন ব্যাংকেই টাকা রেখে লভ্যাংশ ভোগ করা যাবে না। কারণ উক্ত লভ্যাংশ সূদের অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়তঃ জমাকৃত সম্পদ নিছাব পরিমাণ হ’লে যাকাত বের করা আবশ্যক। দরিদ্রতা এর জন্য
বাঁধা নয়। অতএব আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে উক্ত টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে কোন হালাল
ব্যবসা সম্ভব হ’লে নিজে করবে অথবা সেখানে বিনিয়োগ করবে।
❓প্রশ্নঃ বাড়ী করার জন্য ব্যাংকে নিয়মিত টাকা জমা করি। প্রতি বছর জমাকৃত
টাকার যাকাত দিতে হবে কি?
জমাকৃত টাকা বছর শেষে নিছাব পরিমাণ হ’লে শতকরা আড়াই
টাকা হারে যাকাত দিতে হবে (আবুদাউদ হা/১৫৭৩; তিরমিযী হা/৬৩১-৩২)। স্মর্তব্য যে, উক্ত
জমাকৃত টাকার সূদ ভোগ না করে নেকীর উদ্দেশ্য ব্যতীত দান করে দিতে হবে এবং যাকাতের নির্ধারিত
অংশ সূদ থেকে নয় বরং মূলধন থেকেই পরিশোধ করতে হবে।
❓প্রশ্নঃ ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে যাওয়ার পর যাকাতের হকদার হলে পিতা স্বীয় যাকাতের
অর্থ ছেলে-মেয়েকে দিতে পারবে কি?
অনুযায়ী বুঝা যায় যে, উক্ত পিতা যাকাত প্রদানের হকদার
হিসাবে সম্পদশালী এবং সন্তান যাকাত গ্রহণের হকদার হিসাবে দুস্থ। এমতাবস্থায় উক্ত সন্তানের
জন্য যাকাতের অর্থ নয় বরং সাধারণভাবে নিজ মাল থেকে খরচ করা পিতার জন্য যরূরী কর্তব্য
(ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৪/১০৫; ইবনুল মুনযির, আল-ইজমা ৫৭ পৃঃ)। রাসূল (ছাঃ)
দানের ক্ষেত্রে স্বীয় পরিবারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন (বুখারী
হা/৫৩৫৫; মিশকাত হা/১৮৬৩)। এছাড়া সন্তানের জন্য খরচ করা পিতার নৈতিক দায়িত্ব (বুখারী
হা/; মিশকাত হা/৩৩৪২)।
❓প্রশ্নঃ আমি পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট রেখে তা থেকে প্রাপ্ত
লভ্যাংশ দিয়ে যাকাত দিয়েছি এবং বাকী অংশ দান করেছি। এক্ষণে আমার যাকাত কবুলযোগ্য হবে
কি? না মূল টাকা থেকে যাকাত বের করতে হবে?
গৃহীত লভ্যাংশ সূদমুক্ত না হওয়ায় উক্ত যাকাত কবুলযোগ্য
হবে না। বরং মূল অর্থ হ’তে যাকাত দিতে হবে। কারণ বর্তমানে প্রচলিত কোন ব্যাংকই পুরোপুরি
সূদমুক্ত নয়। বরং সন্দেহযুক্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হালাল স্পষ্ট ও হারাম স্পষ্ট।
এর মধ্যবর্তী বিষয়সমূহ অস্পষ্ট, যা অনেক মানুষ জানে না। অতএব যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বস্ত্তসমূহ
থেকে বেঁচে থাকবে, সে ব্যক্তি তার দ্বীন ও সম্মানকে পবিত্র রাখবে। আর যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ
কাজে লিপ্ত হ’ল, সে হারামে পতিত হ’ল (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬২)। তিনি আরো বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্ত্ত ভিন্ন কবুল করেন না’ (মুসলিম হা/
১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০)। তবে ব্যাংকে টাকা রাখা যাবে কেবল সংরক্ষণের জন্য, লভ্যাংশ ভোগ
করার জন্য নয়।
❓প্রশ্নঃ বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন মেয়াদী ডি.পি.এস একাউন্ট খোলার সুযোগ
রয়েছে। এসব একাউন্ট খোলা যাবে কি? এখানে জমাকৃত টাকা নিছাব পরিমাণ হ’লে যাকাত দিতে
হবে কি?
দেশের কোন ব্যাংকেরই কার্যক্রম শতভাগ সূদমুক্ত নয়।
তাই ব্যাংকে ডি.পি.এস খোলা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। তবে যে কোন একাউন্টে হৌক বা অন্য
কোথাও হৌক তাতে নিজস্ব মালিকানা সাব্যস্ত থাকলে এবং সেখানে নিছাব পরিমাণ অর্থ এক বছর
সঞ্চিত থাকলে তা থেকে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে (ইবনু মাজাহ হা/১৭৯২; আবুদাউদ
হা/১৫৭৩; মিশকাত হা/১৭৯৯)।
❓প্রশ্নঃ বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন মেয়াদী ডি.পি.এস একাউন্ট খোলার সুযোগ
রয়েছে। এসব একাউন্ট খোলা যাবে কি? এখানে জমাকৃত টাকা নিছাব পরিমাণ হ’লে যাকাত দিতে
হবে কি?
দেশের কোন ব্যাংকেরই কার্যক্রম শতভাগ সূদমুক্ত নয়।
তাই ব্যাংকে ডি.পি.এস খোলা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। তবে যে কোন একাউন্টে হৌক বা অন্য
কোথাও হৌক তাতে নিজস্ব মালিকানা সাব্যস্ত থাকলে এবং সেখানে নিছাব পরিমাণ অর্থ এক বছর
সঞ্চিত থাকলে তা থেকে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে (ইবনু মাজাহ হা/১৭৯২; আবুদাউদ
হা/১৫৭৩; মিশকাত হা/১৭৯৯)।
❓প্রশ্নঃ স্বর্ণের ক্রয়মূল্য না বিক্রয়মূল্য অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে
হবে?
বিক্রয় মূল্যের পরিমাণ ধরে যাকাত দিতে হবে। সাড়ে ৭
ভরি স্বর্ণ কারো নিকটে এক বছর যাবৎ থাকলে তার উপর উক্ত স্বর্ণের বর্তমান বিক্রয় মূল্যের
হিসাবে মোট সম্পদের ২.৫০% যাকাত দেওয়া ফরয।
❓প্রশ্নঃ যাকাতের টাকা দিয়ে কুরআন-হাদীছ ও ইসলামী বই কিনে মানুষের মাঝে
বিতরণ করা যাবে কি?
যাকাতের টাকা এরূপ ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যবহার করা
যাবে। এগুলো ফী সাবীলিল্লাহ খাতের অন্তর্ভুক্ত হবে (মাজমু‘ ফাতাওয়া উছায়মীন ১৮/২৫২)।
0 Comments