Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

#সাহাবিদের_চরিত্রে_অভিনীত_সিনেমা হালালকারী মুফতি জনাব দিদূ


#সাহাবিদের_চরিত্রে_অভিনীত_সিনেমা হালালকারী মুফতি জনাব দিদূ এবং বঙ্গদেশের আবেগী সালাফীদের প্রসঙ্গে দুটো কথা

রহিম রহমান আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। যাবতীয় হামদ ও সানা আল্লাহর জন্য নিবেদিত, আর দয়া ও শান্তি হোক রাসুলের ওপর বর্ষিত।
পর সমাচার এই যে, আজকাল একটি বিষয় নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়েছে। জনৈক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দাঈ আরবের তিনজন ইখওয়ানী দাঈকে রেকমেন্ড করেছেন, ফতোয়া নেওয়ার জন্য।
তারা হলেন যথাক্রমে
#মুহাম্মাদ_হাসান_আদ_দিদূ
#আব্দুল_আযীয_আত_তারীফী
#আর_মুহাম্মাদ_আল_মুনাজ্জিদ। শেষোক্ত দুজনের ব্যাপারে ইতঃপূর্বে যথেষ্ট আলোচনা হলেও জনাব দিদূর ব্যাপারে খুব একটা আলোচনা হয়নি।
দিদূ হলেন মৌরতানিয়ার শাইখ। তিনি বর্তমান সময়ের ইখওয়ানী ও মডার্নিস্টদের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তাঁর ভ্রষ্টতা ও বিপথগামিতার লিস্টটা অনেক বড়ো। কতক বিভ্রান্তির ওপর ডিটেইলে আলোচনা করতে চাইলে কয়েকশ পৃষ্ঠা লেখা যাবে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডকে হকপন্থি দল মনে করেন। আর ব্রাদারহুডের ব্যাপারে আমরা কয়েকশ পৃষ্ঠা লিখেছি, ওয়ালিল্লাহিল হামদ, যা আমাদের পরিচিত ভাইদের প্রায় সবাই জানেন। এটা গেল একটামাত্র ভ্রান্তি, তাঁর এরকম ভ্রান্তি আরও অনেক আছে। তবে আমরা বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে শুধু একটি বিভ্রান্তি নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করব, ইনশাআল্লাহ

জনাব মুহাম্মাদ হাসান আদ-দিদূ (হাদাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে, “আপনি কি আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের চরিত্রে অভিনয় করা জায়েজ মনে করেন?” তিনি উত্তরে বলেছেন, “হ্যাঁ, মনে করি। কেননা এটা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোনো দলিল বর্ণিত হয়নি। আর এসব বিষয়ের মৌলিক মান বৈধতা।” [পোস্টে সংযুক্ত ভিডিয়োর ১ মিনিট ১ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত]

উদ্ধৃত বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, জনাব দিদূ মহামান্য সাহাবিদের চরিত্রে অভিনয় করা হালাল মনে করেন। অভিনয় করা যেখানে হালাল, সেখানে সাহাবিদের চরিত্রে অভিনীত নাটক-সিনেমা দেখাও তাঁর কাছে হালাল বলেই বিবেচিত হয়। অনেক সালাফী ভাইকে বলতে শুনছি, রেকমেন্ডকারী দাঈ নাকি জনাব দিদূকে স্রেফ ফিক্বহী ইস্যুতে রেকমেন্ড করেছেন। যদিও তাঁর বলার ভাবভঙ্গিতে মোটেই তা মনে হয়নি। আর যদি ফিক্বহী ইস্যুতেও রেকমেন্ড করা হয়ে থাকে, তাহলে দেখে রাখেন, জনাব দিদূর বিশ্বমানের সহিহ ফিক্বহ। যা কিনা মহামান্য খোলাফায়ে রাশেদীনের চরিত্রে অভিনয় করাকে হালাল করে দেয়! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন।
·
ভালো করে মনে রাখুন, সাহাবিদের চরিত্রে অভিনয় করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ এবং রাবেতায়ে আলম আল-ইসলামির প্রাতিষ্ঠানিক বোর্ডের সিদ্ধান্ত আছে। দুটো পরিষদের উলামারা উক্ত কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখুল ইসলাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, “এ প্রসঙ্গে একাধিকবার জবাব দেওয়া হয়েছে। পূর্বেই বলা হয়েছে, সাহাবি ও নবিদের চরিত্রে অভিনয় করা না-জায়েজ। সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ এবং রাবেতার প্রাতিষ্ঠানিক বোর্ডে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভাইয়েরা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে, সাহাবি ও নবিদের চরিত্রে অভিনয় করা না-জায়েজ, তা যে স্থানেই করা হোক না কেন। কারণ এটা মানুষকে অসংখ্য অকল্যাণের দিকে ঠেলে দেয়। এটা কখনো কখনো তাঁদের ওপর মিথ্যাচারের দিকে নিয়ে যায়। কখনো এমন হতে পারে, অভিনীত সাহাবি বা নবিকে এমন ছবি দ্বারা চিত্রায়িত করা হয়, যা তাঁর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আবার এ অভিনয় কখনো কখনো তাঁদের নিয়ে হাসিঠাট্টা ও উপহাস করার (মতো কুফরের) দিকে নিয়ে যায়। তাই এ কাজ করা জায়েজ নয়, চাই তা নবিদের অভিনয় হোক, কিংবা সাহাবিদের।” [দ্র.: https://tinyurl.com/ybu6tey5 (ইমাম ইবনু বাযের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের আর্টিকেল)]

কেউ কেউ সাহাবিদের চরিত্রে অভিনয় করার মাসআলাহকে ইখতিলাফী ইস্যু বলে ভাওতাবাজি করার চেষ্টা করেন। এ ব্যাপারে মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মসজিদে নাবাউয়ীর মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মাননীয় ইমাম ও খতিব, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, “যে মাসআলাহর ব্যাপারে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে ইখতিলাফ আছে, তা ইজতিহাদি মাসায়েলের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা যে মতটি গানবাজনাকে হালাল করে, সাহাবিদের চরিত্রে অভিনয় করাকে হালাল করে, সে মতটি বাতিল, যার কোনো দলিল নেই। সে মতের দিকে ভ্রুক্ষেপও করা হবে না। এই মতের বিরোধিতা করতে হবে। ইদানীং কিছু লোক একটি কথা বলছে।

বর্তমানে সাহাবিদের চরিত্রে অভিনয় করার মাসআলাহ, বরং জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ও সুপথপ্রাপ্ত খলিফা ওমর ফারুক (রাদিয়াল্লাহু আনহু)’র চরিত্রে অভিনয় করার মাসআলাহ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। তারা বলছে, ‘এটি উম্মতের উলামাদের মধ্যে একটি ইখতিলাফী (মতদ্বৈধতাপূর্ণ) বিষয়। এটা নতুন মাসআলাহ। মতানৈক্যপূর্ণ মাসআলাহয় কারও বিরোধিতা করা ঠিক নয়। যে ব্যক্তি যে মত পোষণ করে, সে সেই মত অনুযায়ী আমল করবে।’

কিন্তু বিষয়টি এরকম নয়। কেননা এ মাসআলাহ ইজতিহাদনির্ভর মাসায়েলের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং উম্মতের উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, সাহাবিদের চরিত্রে অভিনয় করা—বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদিনের চরিত্রে অভিনয় করা—হারাম ও না-জায়েজ। আর পরবর্তীতে যেসব নতুন কথার উদ্ভাবন ঘটেছে, সেসবের কোনো মূল্য নেই এবং সেসবের দিকে ভ্রুক্ষেপও করা হবে না।” [দ্র.: https://youtu.be/DSYTDmx2YzQ (১ মিনিট ০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত)]

কিন্তু কী বলব দুঃখের কথা, জনৈক বঙ্গদেশী দাঈকে বলতে শুনলাম, জনাব দিদূ নাকি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো আলিম! কারণ তাঁর সিহাহ সিত্তাহ মুখস্থ। আর এ ব্যাপারে নাকি মদিনার সকল আলিম একমত হয়েছেন! কী সেলুকাস! তাঁর কথার জবাবে বলতে হয়, প্রথমত, সিহাহ সিত্তাহ মুখস্থ করে ফেললেই বড়ো আলিম হওয়া যায় না, মুখস্থ ছাড়াও বড়ো আলিম হতে ফিক্বহ বা সমঝ লাগে। সুতরাং কে সবচেয়ে বড়ো ‘আলিম—তা কিবার ‘উলামারা বলবেন, সাধারণরা এরকম কথা বলতে পারেন না। এ বিষয়ে আমরা ইতঃপূর্বে “আলিম কে?” শীর্ষক নিবন্ধে নাতিদীর্ঘ আলোচনা পেশ করেছি। [দ্র.: https://tinyurl.com/y44h3bge]

দ্বিতীয়ত, মদিনার সকল আলিম এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন, এ কথা ভুল, বরং চরম ভ্রমাত্মক। একমত হওয়া তো দূরের কথা, মদিনার অন্যতম কিবার ‘আলিম আল্লামা সালিহ আস-সুহাইমী (হাফিযাহুল্লাহ) জনাব দিদূকে ‘ভাঁড়’ আখ্যা দিয়ে তাঁর থেকে সতর্ক করেছেন। তদনুরূপ মদিনার ফাক্বীহ আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) জনাব দিদূ থেকে সাবধান করেছেন।
রচনাকাল—
রাত ৯ টা ৫ মিনিট।
মঙ্গলবার।
১০ই শাওয়াল, ১৪৪১ হিজরি।
১৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
২রা জুন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।
কালেক্ট আব্দুল্লাহ মৃধা

Post a Comment

0 Comments