মাস্ক পড়ে সালাত আদায়ের বিধান....

নামাজে মুখ ঢেকে রাখা বিষয়াদি………….

http://eshodinshikhi.com/playlists/complete-audio-set-corona-virus/?channel=audio

পরিচ্ছেদঃ ৮. 

মিস্কাতঃ- ৭৬৪-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সময় ‘সাদল’ করতে ও কারও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]

হাসান : আবূ দাঊদ ৬৪৩, তিরমিযী ৩৭৮, সহীহ আল জামি‘ ৬৮৮৩। তবে আত্ তিরমিযীতে শুধু প্রথম অনুচ্ছেদটি রয়েছে আর তার সানাদেও কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে।

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَهَى عَنِ السَّدْلِ فِي الصَّلَاةِ وَأَنْ يُغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কালে ‘সাদল’ করতে নিষেধ করেছেন। সাদ্ল এর একাধিক অর্থ রয়েছে। পরিধেয় কাপড়কে জমিন পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেয়া। দুই পার্শ্বকে একত্র না করে পায়ের নিচ পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেয়া।

এ হাদীস সালাতে ‘সাদল’ হারাম হওয়ার প্রমাণ বহন করে। তাতে সাদল এর উপর কামীস বা পাজামা থাক বা কিছুই না থাক। বর্ণিত রয়েছে যে, সাদল ইয়াহূদীদের বৈশিষ্ট্য।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে মুখকে ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন। তবে সালাতে ‘হাই’ আসলে তখন মুখে হাত চাপা দেয়া যাবে। এ হাদীস মুখ ঢেকে সালাত আদায় হারাম করেছে। মুখ ঢেকে সালাত আদায় নিষিদ্ধ করার কারণ হচ্ছে মুখ ঢেকে রাখা সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) ও যিকর-আযকার পাঠ করতে বাধা দেয়। কাপড় দ্বারা মুখ ঢাকা অগ্নিপূজকদের সাদৃশ্যমূলক। কারণ তারা আগুন পূজা করার সময় কাপড় দ্বারা মুখ ঢেকে রাখতো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কারো যদি সালাতের মধ্যে হাই আসে তাহলে সাধ্য অনুযায়ী তা দমনের চেষ্টা করবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে যেন তার হাত মুখে রেখে হাইকে আটকে রাখে। তা না হলে শায়ত্বন (শয়তান) তার মুখে ঢুকে যাবে।

 হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

প্রশ্ন : আমরা যাঁরা ফ্ল্যাট বাসায় থাকি, তাঁরা মুখে মাস্ক পরে কি নামাজ পড়তে পারব? ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

উত্তর : কোনো ওজরের কারণে মুখে মাস্ক পরে কেউ যদি সালাত আদায় করেন, তাহলে তাঁর সালাত হয়ে যাবে। কান থেকে মুখ পর্যন্ত ঢেকে রাখার জাহেলি যুগে একটা প্রচলন ছিল, এটা রাসুল (সা.) সালাতের মধ্যে অপছন্দ করেছেন। এটা অপছন্দ করেছেন, কিন্তু এতে সালাত নষ্ট হবে না। পরিস্থিতির কারণে কেউ যদি মাস্ক পরে সালাত আদায় করে থাকে, তাহলে তার সালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত

حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ سُفْيَانُ بْنُ زِيَادٍ الْمُؤَدِّبُ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَاشِدٍ، عَنْ الْحَسَنِ بْنِ ذَكْوَانَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ فِي الصَّلَاةِ»

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,রাসূলুল্লাহ সাঃ নামাযে মুখকে ঢেকে রাখতে নিষেধ করোছেন।(সুনানু ইবনি-মা'জা-৯৬৬)

টিকাকার ফুয়াদ আব্দুল বাকী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যাখায় ইবনে মা'জা শরীফের টিকায় লিখেন,

(أن يغطي الرجل فاه) أي يربط فمه بطرف العمامة. وكان ذلك من دأب العرب فنهوا عن ذلك]

মুখ ঢাকা অর্থ,পাগড়ীর পার্শ দ্বারা মুখকে বাধা।এটা আরবদের রীতিনীতি একটি ছিলো।এভাবে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

 কিন্তু করোনা পরিস্থিতে উযরের কারণে রুখসত দেয়া যেতে পারে।সুত্র-দারুল ইফতা দেওবন্দ-জবাব নং১৭৪৮২

পূর্বে আমরা https://www.ifatwa.info/8258 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ করেছি যে,

উসূলঃ প্রয়োজন অনেক নিষিদ্ধ জিনিষকে সিদ্ধ করে দেয়।

ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﺤﻈﻮﺭﺍﺕ

স্থান-কাল-পাত্র বেধে সময়ের  প্রয়োজনে ফুকাহায়ে কিরামগন সহজতার স্বার্থে আসল হুকুম থেকে সরে এসে তার বিপরীত সাময়িক হুকুম মাঝেমধ্যে প্রয়োগ করে থাকেন।একেই পরিভাষায় জরুরত বলে। জরুরত বা সময়ের চাহিদায় অনেক বিধিত সিদ্বান্তকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক পরিবর্তন করে দেয়।এরকম কিছু ফিকহী মূলনীতি 'উসূলে ফিকহ' এর কিতাবাদিতে সবিস্তারে বর্ণিত আছে,তন্মধ্যে কিছু মূলনীতি হল।

  যথাক্রমেঃ-

(১) ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﺤﻈﻮﺭﺍﺕ

(প্রয়োজন অনেক নিষিদ্ধ জিনিষকে বৈধ করে দেয়)

এটা একাটা নীতিসিদ্ধ মৌলিক ফিকহী ক্বায়দা/ধারা যা কোরআন এবং হাদিসের থেকে চয়ন করা হয়েছে।

যেমনঃ-কোরআন থেকে 

 ﻭَﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻻَّ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﻣِﻤَّﺎ ﺫُﻛِﺮَ ﺍﺳْﻢُ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻗَﺪْ ﻓَﺼَّﻞَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﺍﺿْﻄُﺮِﺭْﺗُﻢْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻭَﺇِﻥَّ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻟَّﻴُﻀِﻠُّﻮﻥَ ﺑِﺄَﻫْﻮَﺍﺋِﻬِﻢ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻋِﻠْﻢٍ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻫُﻮَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﺎﻟْﻤُﻌْﺘَﺪِﻳﻦ

তরজমাঃ-কোন কারণে তোমরা এমন জন্তু থেকে ভক্ষণ করবে না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, অথচ আল্লাহ ঐ সব জন্তুর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যেগুলোকে তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন; কিন্তু সেগুলোও তোমাদের জন্যে হালাল, যখন তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও। অনেক লোক স্বীয় ভ্রান্ত প্রবৃত্তি দ্বারা না জেনে বিপথগামী করতে থাকে। আপনার প্রতিপালক সীমাতিক্রম কারীদেরকে যথার্থই জানেন।(সূরা আন-আম-আয়াতঃ-১১৯)

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

সুতরাং বিশেষ প্রয়োজনে মাস্ক পড়ে নামায পড়া যাকে।মাকরুহ হবে না।

২.  মাস্ক পড়ে সালাত আদায়ের বিধান

এ প্রসঙ্গে নিম্নে কয়েকজন বড় আলেমের ফতোয়া তুলে ধরা হল:

 ১. সালাতে মুখ ঢাকা জায়েজ কি না এ বিষয়ে শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
“কোন কারণ ছাড়া সালাতে মুখ ঢাকা মাকরূহ”। (ইবনু বায, মাজমুঊল ফাতাওয়া, ১১/১১৪।)
শায়েখের এ কথা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, বিশেষ কোনো কারণ পাওয়া গেলে সালাতে মুখ ঢাকা মাকরূহ নয় বরং জায়েজ।

 ২. এক প্রশ্নের জবাবে ইবনু উছায়মীন (রাহঃ) বলেছেনঃ

“সালাতে মুখ ঢাকা মাকরূহ। কিন্তু যদি প্রয়োজন দেখা দেয় যে, কেউ হয়তো সর্দিতে আক্রান্ত তাহলে তার মুখ ঢাকার প্রয়োজন তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা সে মা’যুর (অপারগ)।
এমনিভাবে কারো যদি অ্যালার্জি থাকে এবং ঠাণ্ডা বা ধূলাবালি অথবা বাতাসের কারণে তার সমস্যা হয় তাই চাদর দিয়ে সে মুখ ঢেকে রাখে তাহলে এটাও একটা প্রয়োজন। সুতরাং তা তার সালাতে কোন প্রভাব ফেলবে না।
উত্তরের লিংক: https://youtu.be/-eDy_e_rhGc

– ইবনু আব্দুল বার রাহিমাহুল্লাহও বলেছেনঃ প্রয়োজন দেখা দিলে এ কারাহাত (মাকরূহ হওয়ার বিধান) দূর হয়ে যাবে। (আল-মুগনী)

 ৩. প্রশ্নকর্তা: করোনার ভয়ে মাস্ক পড়ে সালাত আদায় করার বিধান কি?

উত্তর দিচ্ছেন ড. আব্দুল আযীয আর-রাইস হাফিযাহুল্লাহ:

“সালাতে মুখ বা নাক-মুখ উভয়টি ঢাকা মাকরূহ। এ বিষয়ে আবু দাউদে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীস এসেছে। তা হল:
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত আদায় করার সময় ‘সাদল’ করতে ও কারও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন।” (আবু দাঊদ/৬৪৩০

কিন্তু হাদীসটি মারফু (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখ নি:সৃত বাণী) হিসেবে ছহীহ নয়। তবে মাওকুফ (সাহাবীর বক্তব্য হিসেবে) ছহীহ। তবে এ বিষয়ে সাহাবী ও তাবেঈদের থেকে আছার (উক্তি ও মতামত) রয়েছে।

সুতরাং সালাতে মুখ ঢাকা মাকরূহ। তবে মূলনীতি হচ্ছেঃ “প্রয়োজনের সময় মাকরুহ দূর হয়ে তা বৈধ হয়ে যায়।”

সুতরাং যখন সাব্যস্ত হয় যে, মাস্ক পরিধান রোগ-ব্যাধি থেকে হেফাজত থাকার ক্ষেত্রে উপকারী এবং মুসল্লী তা পরিধানও করে তাহলে ঠিক আছে। কেননা, প্রয়োজনের সাথে কারাহাত (মাকরূহ হওয়ার বিধান) দূর হয়ে গেছে। অথবা যদি সাব্যস্ত হয় যে, মাস্ক পরিধান আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে রোগ বিস্তার না হওয়ার ক্ষেত্রে উপকারী অতঃপর সে তা পরিধান করে তাহলে কোনরকম কারাহাত (মাকরূহ হওয়া) ছাড়াই তার জন্য এটা পরিধান করা বৈধ।

উত্তরের লিংক: https://youtu.be/kOU9ApXEOj4

 প্রশ্নকর্তাঃ করোনার ভয়ে মাস্ক পড়ে সালাত আদায় করার বিধান কি?

উত্তর দিচ্ছেন আব্দুল আযীয আর-রাইস হাফিযাহুল্লাঃ

"সালাতে মুখ বা নাক-মুখ উভয়টি ঢাকা মাকরুহ

 বিষয়ে আবু দাঊদে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীস এসেছে { রাসূল (সাঃসালাত আদায় করার সময় সাদল করতে  কারও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন আবূ দাঊদ ৬৪৩}

কিন্তু হাদীসটি মারফু হিসেবে ছহীহ নয় তবে মাওকুফ হিসেবে ছহীহ তবে  বিষয়ে সাহাবী  তাবেঈদের থেকে আছার রয়েছে

সুতরাং সালাতে মুখ ঢাকা মাকরুহ আর মূলনীতি হচ্ছেঃ "প্রয়োজনের সময় মাকরুহ দূর হয়ে তা বৈধ হয়ে যায়"

সুতরাং যখন সাব্যস্ত হয় যেমাস্ক পরিধান রোগ-ব্যাধি থেকে হেফাজত থাকার ক্ষেত্রে উপকারী এবং মুসল্লী তা পরিধানও করে তাহলে ঠিক আছে কেননাপ্রয়োজনের সাথে কারাহাত দূর হয়ে গেছে অথবা যদি সাব্যস্ত হয় যেমাস্ক পরিধান আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে রোগ বিস্তার না হওয়ায় ক্ষেত্রে উপকারী অতঃপর সে তা পরিধান করে তাহলে কোনরকম কারাহাত ছাড়াই তার জন্য এটা পরিধান করা বিশুদ্ধ

সালাতে মুখ ঢাকা জায়েজ কি না  বিষয়ে ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ

"কোন কারণ ছাড়া সালাতে মুখ ঢাকা মাকরুহ"

(ইবনু বাযমাজমুঊল ফাতাওয়া১১/১১৪)

শায়েখ  কথা দ্বারা বুঝা যাচ্ছেকারণ পাওয়া গেলে মুখ ঢাকা মাকরুহ নয়তথা জায়েজ

এক প্রশ্নের জবাবে ইবনু উছায়মীন (রাহঃবলেছেনঃ সালাতে মুখ ঢাকা মাকরুহ কিন্তু যদি প্রয়োজন দেখা দেয় যেকেউ হয়তো সর্দিতে আক্রান্ততার মুখ ঢাকার প্রয়োজন তাহলে কোন সমস্যা নেই কেননা সে মা'যুর এমনিভাবে কারো যদি অ্যালার্জি থাকে এবং ঠান্ডা বা ধূলাবালি অথবা বাতাসের কারণে তার সমস্যা হয় তাই চাদর দিয়ে সে মুখ ঢেকে রাখে তাহলে এটাও একটা প্রয়োজন সুতরাং তা তার সালাতে কোন প্রভাব ফেলবে না

ইবনু আব্দুল বার রাহিমাহুল্লাহও বলেছেনঃ প্রয়োজন দেখা দিলে  কারাহাত দূর হয়ে যাবে

(আল-মুগনী,/৪৩২)

২৮/০৩/২০২০

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়মদিনা মুনাওয়ারাহ

Post a Comment

0 Comments