জিজ্ঞাসা ও জওয়াব 1to 35

জিজ্ঞাসা ও জওয়াব 1to 35,  ikhlasbd copy......

প্রশ্ন (১) : যারা নিজেকে ‘আহলে কুরআন’ দাবী করে বলে, আমরা কেবল কুরআন মানব, হাদীছ মানব না। এমন ব্যক্তিদেরকে কাফির বলা যাবে কি?

উত্তর :আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত মতানুযায়ী আহলে কুরআন বা হাদীছ অস্বীকারকারীরা কাফির। কারণ কুরআনের অনুসারীদের উপর হাদীছ মানাও ফরয। হাদীছের সত্যতা ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ আহলে কুরআন হতে পারে না। বুঝা যাচ্ছে যে, ‘আহলে কুরআন’ নামক দলটি কুরআন-সুন্নাহ তথা শরী‘আতের দলীলাদি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তারা কুরআনের কিছুই বুঝে না। কারণ হাদীছ ছাড়া কুরআন বুঝা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। এদের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘জেনে রাখ! আমাকে কুরআন এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে। জেনে রাখ! এমন এক সময় আসবে যখন কোন প্রাচুর্যবান ব্যক্তি তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই আঁকড়ে ধর, তাতে যা হালাল পাবে তাকে হালাল হিসাবে এবং যা হারাম পাবে তাকে হারাম হিসাবে গ্রহণ কর। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘জেনে রাখ! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুও নয়’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৪-৪৬০৫; তিরমিযী, হা/২৬৬৩-২৬৬৪, সনদ হাসান)।ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘হাদীছ অস্বীকারকারীদের ধ্বংস অনিবার্য’ (শারহু উছূলি ‘ইতিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৭৮)। ইমাম ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াইহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যার কাছে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন একটি ছহীহ হাদীছ পৌঁছেছে, অতঃপর সে কোন ভয়ের আশঙ্কা ছাড়াই তাকে অস্বীকার করেছে, তবে সে নিশ্চিতরূপে কাফির’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৯, ফৎওয়া নং-১১৫১২৫)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যারা মনে করে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করা অপরিহার্য নয়, তারা কাফির, তাদের হত্যা করা অপরিহার্য’ (আল-ওয়াসিয়্যাতুল কুবরা লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১৫)। ইমাম সুয়ূত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যারা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীছকে অস্বীকার করে তারা কাফির এবং তারা ইসলামের গণ্ডি ও চৌহদ্দি থেকে বের হয়ে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান অথবা অন্য কোন ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে’ (মিফতাহুল জান্নাহ ফিল ইহতিজাজি বিস সুন্নাহ, পৃ. ১৪)। ইমাম ইবনু দাক্বীক্ব ঈদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীছ প্রমাণিত হওয়ার পরেও যারা তা প্রত্যাখ্যান করে তারা স্পষ্ট কাফির’ (শারহুল ইলমাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭৭-১৭৮)। ইমাম ইবনু হায্ম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি বলে, আমরা শুধু কুরআনের বিধানই মানব, হাদীছ মানব না, তবে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির’ (আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৮০)।শায়খ আবূ বাকর আল-আজুর্রী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলিমগণ বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের মধ্যে যে সমস্ত বিধানকে ফরয করেছেন, তার পদ্ধতি ও নিয়ম-কানুন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত ছাড়া উপলব্ধি করা অসম্ভব। আর যারা এর বিপরীত বলবে, অর্থাৎ যারা বলবে যে, সুন্নাত ছাড়াও ইসলাম মানা সম্ভব তারা কাফির। তারা ইসলামী দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে নাস্তিকদের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে বিবেচিত হবে’ (আশ-শরী‘আহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১২)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে তারা কাফির ও স্বধর্মত্যাগী। কেননা সুন্নাতকে অস্বীকার করা কুরআনকে অস্বীকার করার নামান্তর। যে কিতাব ও সুন্নাতকে অস্বীকার করে অথবা এর কোন একটিকে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। অবশ্যই তাকে এ সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করা দরকার’ (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪০৩ ও ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৭৬-১৭৮)।সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘যারা সুন্নাত অনুযায়ী আমল করাকে অস্বীকার করে তারা কাফির’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৯৪ ও ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৯-২০)। দলীল হিসাবে তাঁরা নিন্মের হাদীছদ্বয় উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِيْ فَلَيْسَ مِنِّيْ ‘সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি ঔদাসীন্য ও বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৫৩৪)।অন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ أَطَاعَنِيْ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ عَصَى اللهَ ‘যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ তা‘আলারই আনুগত্য করল। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহ তা‘আলারই নাফরমানী করল’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭, ৭১৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫)।প্রশ্নকারী :আল-মামুন, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রশ্ন (২) : কোন বিদ‘আতী মারা গেলে তার জন্য দু‘আ করা এবং তার প্রশংসা করা যাবে কি?

উত্তর :শিরকের পর সবচেয়ে জঘন্য ও ক্ষতিকর পাপ হল বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদ‘আতের ভয়াবহতা সম্পর্কে উম্মতে মুহাম্মাদীকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; মুসলিম, হা/১৭১৮)। কারণ বিদ‘আতী সুন্নাতকে অবজ্ঞা করে। বিদ‘আতীর প্রতি, আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতাম-লী ও সমস্ত মানুষের লা‘নত। তার কোন আমল কবুল হবে না (বুখারী হা/১৮৭০; মুসলিম হা/১৩৬৬)। তওবাও কবুল হবে না (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪২০২, সনদ ছহীহ)। সে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শাফা‘আত পাবে না (ছহীহ বুখারী হা/৭০৫০-৭০৫১)।ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আহলুর রায় বা বিদ‘আতীরা আসলে আল্লাহর শত্রু’ (তাবাক্বাতুল হানাবিলাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫-৩৬)। তারা বিদ‘আত মহব্বত করে আর সুন্নাহকে এবং সুন্নাতের ধারক-বাহকদের ভর্ৎসনা করে, তাচ্ছিল্য করে, ব্যঙ্গ করে। ইমাম আহমাদ ইবনু সিনান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পৃথিবীর প্রত্যেক বিদ‘আতীই আহলেহাদীছদেরকে গালি দেয়। আর যখন কোন লোক বিদ‘আত করে, তখন তার অন্তর থেকে হাদীছের মহব্বত ছিনিয়ে নেয়া হয়’ (মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪)। তাই কোন বিদ‘আতী যদি কুফরী পর্যায়ের বিদ‘আতে নিমজ্জিত থাকে এবং তার কাছে শরী‘আত পৌঁছার পরও যদি বিদ‘আতের উপর অটল থাকে, কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারীদেরকে গালমন্দ করে, জেনে বুঝে সুন্নাহকে কটাক্ষ ও তাচ্ছিল্য করে, তাহলে তার জন্য দু‘আ করা যাবে না এবং তার প্রশংসাও করা যাবে না। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাদের বিদ‘আত যদি কুফরীর পর্যায়ে না পৌঁছায়, তাহলে তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখা ও ভীতি প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে তাদের জানাযার ছালাত না পড়াই ভালো। কিন্তু যদি তাদের বিদ‘আত কুফরীর পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যেমন খারেজী, মু‘তাযিলা এবং জাহমিয়াদের বিদ‘আত, তাহলে তাদের জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে না (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৬১)। অর্থাৎ এমতাবস্থায় তার জন্য দু‘আ করা যাবে না।প্রশ্নকারী :মাহমূদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রশ্ন (৩) : সিজার করে সন্তান প্রসাব করানো কি শরী‘আত সম্মত?

উত্তর :সিজার আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। যখন স্বাভাবিক নিয়মে বাচ্চা হয় না অথবা মা বা শিশুর জীবন ও স্বাস্থ্যের ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়, তখনই সিজার করা হয়। এক্ষেত্রে আলিমগণের বক্তব্য হল, ‘বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসা স্বরূপ সিজার করে সন্তান প্রসাব করানো বৈধ। বাধ্যগত কারণে সিজার করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা হওয়ার পর্যায় থাকলে সিজার করা জায়েয নয়। নিছক প্রসব বেদনা থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছায় সিজার করাতে চাইলে তা জায়েয হবে না। কোন চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে সিজার করাতে বাধ্য করলে তা গর্হিত অন্যায়ের শামিল হবে। এটা ধ্বংসাত্মক ক্ষতি ও মারাত্মক অপরাধ’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৯২৮৩১; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-১০৫২৫১)।ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালাসমূহের মধ্যে অন্যতম হল- الضرورات تبيح المحظورات ‘বিশেষ প্রয়োজন অবৈধ জিনিসকে বৈধতার অনুমতি প্রদান করে’। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ‘কিন্তু যে নিরুপায় হয়ে অন্যায়কারী এবং সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে তা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে তার কোন পাপ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭৩; আল-আন‘আম : ১৪৫; আন-নাহল : ১১৫)।ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সিজারের মধ্যে বেশ কিছু নিষিদ্ধ দিক রয়েছে। যেমন, (১) বিবিধ রোগের কারণ : সিজারের দ্বারা নিজ শরীরে নানাবিধ ক্ষতি সাধিত হয়। যেমন, কটিদেশে আজীবন ব্যথা অনুভূত হয়। সারা জীবন এর কষ্ট ভোগ করতে হয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু’ (সূরা আন-নিসা : ২৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না এবং অন্যেরও ক্ষতি করা যাবে না’ (ইবনু মাজাহ, হা/২৩৪০, ২৩৪১; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৭৫১৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৫০)। (২) Silent killingবা গোপন হত্যার পথ তৈরি করে : অধিক সন্তান গ্রহণের বড় অন্তরায় এই সিজার। এর কারণে দু’টি অথবা তিনটির বেশি সন্তান নেয়া যায় না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ مِّنۡ اِمۡلَاقٍ ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُکُمۡ وَ اِیَّاہُمۡ ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫১)। জাহেলী যুগের এই জঘন্য অপকর্ম বর্তমানে জন্ম-নিয়ন্ত্রণের নামে চলছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা এমন নারীকে বিবাহ কর, যে প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারিণী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করব’ (আবূ দাঊদ, হা/২০৫০; নাসাঈ, হা/৩২২৭, সনদ হাসান)। (৩) বিনা প্রয়োজনে কোন পরপুরুষকে নারী দেহ প্রদর্শন করা হারাম (সূরা আন-নূর : ৩১)। অথচ বর্তমানে সিংহভাগ মহিলা নিজেকে অত্যাধুনিক প্রমাণ করতে কোন কারণ ছাড়াই সিজার করাচ্ছে। এটা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। (৪) সর্বোপরি সিজারিয়ানের মাধ্যমে মুসলিম দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কাফিরদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা হচ্ছে।প্রশ্নকারী :মানিক, ময়মনসিংহ।

প্রশ্ন (৪) : সন্তান নেশার সাথে জড়িত হলে করণীয় কী? শাসনের জন্য সামাজিক বা প্রশাসনিক সাহায্য নেয়া যাবে কি?

উত্তর :যাবে। প্রথমতঃ তাকে সৎ পথে ফিরানোর চেষ্টা করবে। সাধ্যানুযায়ী দাওয়াত দিবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। যদি সে উপদেশ গ্রহণ করে তাহলে আল-হামদুলিল্লাহ, অন্যথা তার গুনাহে লিপ্ত হওয়ার এবং কর্তব্য পালনে অবহেলা করার জন্য শাসকের কাছে উত্থাপন করতে হবে। যাতে শাসক তাকে অপকর্মে লিপ্ত হতে বাধা প্রদান করতে এবং অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারে... (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২২তম খণ্ড, পৃ. ৮১-৮২)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাকে অপকর্ম ও অসৎ সঙ্গী-সাথী থেকে বিরত রাখতে আপনার জন্য করণীয় হল- (১) অবিরাম উপদেশ দিতে থাকা, (২) ভালোবাসার সাথে কথাবার্তা বলা। (৩) অন্যায় ও অসৎ কাজে সাহায্য না করা। (৪) যে তাকে অপকর্ম থেকে মুক্ত করতে পারবে এমন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অথবা বিচারক অথবা কর্তৃত্বশীলের কাছে তার বিষয়টি উত্থাপন করা এবং (৫) তার জন্য হেদায়াত ও কল্যাণপ্রাপ্তির দু‘আ করতে থাকা’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১০৪৯৭৬)।প্রশ্নকারী :নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নওগাঁ।

প্রশ্ন (৫) : মেয়ের বিয়ের পরে পিতা তাকে শাসন করতে পারবে কি?

উত্তর :পারবে। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ছহীহুল বুখারীতে ‘শাসক ব্যতীত অন্য কেউ যদি নিজ পরিবার কিংবা অন্য কাউকে শাসন করে’ মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন (অধ্যায় নং-৮৬, অনুচ্ছেদ নং-৪০)। অতঃপর নিন্মের হাদীছটি বর্ণনা করেছেন যে, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘একবার আবূবকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় মাথা আমার ঊরুর ওপর রেখে আছেন। তখন তিনি বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও লোকদেরকে আটকে রেখেছ, এদিকে তাদের পানির কোন ব্যবস্থা নেই। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন ও নিজ হাত দ্বারা আমার কোমরে আঘাত করতে লাগলেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, أَقْبَلَ أَبُوْ بَكْرٍ فَلَكَزَنِيْ لَكْزَةً شَدِيْدَةً ‘আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এসে আমাকে জোরে থাপ্পড় লাগালেন। আর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবস্থানই আমাকে নড়াচড়া হতে বিরত রেখেছিল। তখন আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করলেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৮৪৪; মুসলিম, হা/৩৬৭)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, বিবাহের পরেও একজন পিতা তার মেয়েকে শাসন করতে পারে। এক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন নেই’ (ফাৎহুল বারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৩)। হাফিয ইরাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, একজন পিতা তার সন্তানকে কথার মাধ্যমে, কর্মের মাধ্যমে অথবা প্রহার করেও শাসন করতে পারে। সে প্রাপ্ত বয়স্ক হোক অথবা বিবাহিতা নারী হোক’ (ত্বারহুত তাছরীব ফী শারহিত তাক্বরীব, ২য় খণ্ড, পৃ. ৯৭)।প্রশ্নকারী :শরীফুল ইসলাম, সিলেট।

প্রশ্ন (৬) : মসজিদের ক্বিবলা বরাবর টয়লেট বা পেশাবখানা থাকলে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায়ে কোন বাধা আছে কি? উল্লেখ্য, মসজিদের দেয়াল এবং টয়লেট ও পেশাবখানার দেয়াল একটাই।

উত্তর :মসজিদের ক্বিবলা বরাবর টয়লেট থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করা উচিত নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছালাতের স্থান বিষয়ে ৩টি বিষয় নিষেধ করেছেন। ১. পায়খানা ২. সাধারণ গোসলখানা এবং ৩. কবরস্থান (মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হা/১৫৮৩; আলবানী, ছামারুল মুস্তাতাবা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৯২)। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, মুছল্লীদের জন্য উচিত নয় যে, ক্বিবলার দিকে কবর, বাথরুম অথবা পায়খানা নিয়ে ছালাত আদায় করবে’ (আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৭৩)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ক্বিবলার দিকে কবর থাকলে মূর্তির সামনে ছালাত আদায়ের শামিল, যা হারাম। যদিও মুছল্লী মূর্তিপূজার নিয়ত না করে। অনুরূপ বাথরুম ও পায়খানা শয়তানের আবাস, যা থেকে বাঁচার জন্য আমরা দু‘আ পড়ে থাকি। তাহলে ছালাতের সময় আমরা কিভাবে সেগুলোকে সামনে নিয়ে ছালাত আদায় করতে পারি’ (শারহুল উমদাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৮১)।প্রশ্নকারী :মাসুদ রানা, পুঠিয়া, রাজশাহী।

প্রশ্ন (৭) : একজন মেয়ে বিয়ে হওয়ার পরে তার স্বামীর হুকুম মানবে, না পিতার হুমুক মানবে? যদি পিতার অবাধ্য হয় তাহলে কি সে গুনাহগার হবে?

উত্তর :স্বামীর আনুগত্যকেই প্রাধান্য দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য নফল ছিয়াম পালন বৈধ নয় এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না (ছহীহ বুখারী, হা/৫১৯৫; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৩১২৩)। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে মহিলার স্বামী ও অসুস্থ মা আছে, এক্ষেত্রে তার মায়ের পূর্বে স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য। স্বামীর অনুমতি ব্যতীত সে মায়ের কাছে যেতে পারবে না’ (শারহু মুনতাক্বাল ইরাদাত, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৭)।শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লাহর তাওফীক্বে তারা তা হেফাযত করে’ (সূরা আন-নিসা : ৩৪)। সুতরাং পুরোপুরিভাবে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর অপরিহার্য। যেমন সেবা-যত্নে, ভ্রমণে, শক্তিশালীকরণে এবং অন্যান্য বিষয়ে, যা ছহীহ সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত। বিবাহের পূর্বে যেমন পিতা-মাতার আনুগত্য করা ওয়াজিব ছিল, বিবাহের পর ঠিক তেমনি স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য। পিতা-মাতার কাছ থেকে সমস্ত আনুগত্য স্বামীর কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। পিতা-মাতার আর কোন আনুগত্য অবশিষ্টই নেই’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৩২তম খণ্ড, পৃ. ২৬০-২৬১)। তিনি আরো বলেন যে, ‘নিজের পিতা-মাতার বাড়িতে যাওয়ার পরও স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য, বাড়ির বাহিরে কোথাও যাওয়ার জন্য স্বামীর অনুমতি প্রয়োজন’ (ফাতাওয়া আল-কুবরা লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪৭)।ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি স্বামীর সহবাসের ইচ্ছা পূরণ করা স্ত্রীর উপর অপরিহার্য হয়, তাহলে তো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা অধিকতর যরূরী। যেমন সন্তান লালন-পালন পরিকল্পনা, পরিবার সংরক্ষণ করা ইত্যাদি’ (আদাবুয যিফাফ, পৃ. ২১০-২৮২)। হাদীছে এসেছে, স্বামীর আনুগত্য করার মাধ্যমে স্ত্রী যেকোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬১; সনদ হাসান, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৯৩২)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদাহ করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদাহ করতে। সেই প্রতিপালকের শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার রবের প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী কোন কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলেও স্ত্রীর পক্ষে তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়’ (ইবনু মাজাহ, হা/১৫১৫, ১৮৫৩; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১২০৩; আদাবুয যিফাফ, পৃ. ১৭৮)।ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন বা বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বা অন্যান্য বিষয়ে পিতা-মাতার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য নয়। বরং স্বামীর আনুগত্য করা অধিকতর যরূরী’ (আল-ইনসাফ, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৩৬২)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে সমস্ত নারী কোন উপযুক্ত কারণ ছাড়াই স্বামীর নিকট ত্বালাক্ব চায়, তার উপর জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম’ (তিরমিযী, হা/১১৮৬-১১৮৭; আবূ দাঊদ, হা/২২২৬)।প্রশ্নকারী :রুবেল সিনহা, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম।

প্রশ্ন (৮) : এক মুসলিম অপর মুসলিমের মাঝে কোন পার্থক্য আছে কি? কেউ ছালাত আদায় না করলে ইসলামে তার হুকুম কী? ছালাত কি জান্নাতের চাবি?

উত্তর :এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই (সূরা আল-হুজুরাত : ১০)। ঈমান গ্রহণ করার পর সবাই মুসলিম হয়ে যায়। পার্থক্যের কথা নেই। তবে প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য ইসলামের বিধি-বিধানকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। শুধু ছালাত নয়; আরো যে সমস্ত বিধান আছে তার সবই মেনে চলতে একজন মুসলিম বাধ্য। তবে ছালাতকে ইসলামী শরী‘আতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘ছালাতই একজন মুসলিম-মুশরিক বা কাফিরের মধ্যে পার্থক্য’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬)। তাছাড়াও ছালাত ছাড়া অন্য কোন ইবাদত ছেড়ে দেয়াকে ছাহাবীরা কাফের মনে করতেন না (তিরমিযী, হা/২৬২২, সনদ ছহীহ)। ছালাত পড়া না পড়া অবশ্যই ঈমানের তারতম্য হবে, যা হাদীছে পার্থক্য বিদ্যমান (নাসাঈ, হা/৪৬৪, সনদ ছহীহ)।উল্লেখ্য যে, ‘ছালাত জান্নাতের চাবি’ মর্মে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদীছটি যঈফ (যঈফুল জামে‘, হা/৫২৬৫)। বরং জান্নাতের চাবি হল- ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (ছহীহ বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়-২৩, অনুচ্ছেদ-১)।প্রশ্নকারী :আব্দুল আলীম, মালদা, ভারত।

প্রশ্ন (৯) : মেয়েরা হাতে-পায়ে আলতা দিতে পারবে কি?

উত্তর :মহিলারা স্বামীকে মুগ্ধ করার জন্য সাজসজ্জা গ্রহণ করতে পারে। হাত-পা আকর্ষণীয় করে এবং নিজেকে সাজিয়ে স্বামীকে উপহার দেয়া দাম্পত্য জীবন সুখময় হওয়ার একটি মাধ্যম। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মহিলাদের হস্তদ্বয় ও পাদ্বয়কে রঙ্গিন করা বৈধ’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২৯তম খণ্ড, পৃ. ৪৭)। তিনি আরো বলেন, ‘মহিলাদের নখগুলোকে মেহেদী বা অন্য কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা সুশোভিত করা দোষণীয় নয়। তবে শর্ত হচ্ছে, বস্তুটা যেন অপবিত্র না হয় এবং ওযূ-গোসলের পানির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ওযূ বা গোসলের পানি পৌঁছতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে তা ওযূ বা গোসলের পূর্বে অপসারিত করা অপরিহার্য’ (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৪৩-২৪৪)। তদানুরূপ ছিয়াম থাকা অবস্থায় মহিলাদের জন্য হাতে মেহেদী, পায়ে আলতা অথবা চুলে (কালো ছাড়া অন্য রঙের) খিযাব ব্যবহার বৈধ। এগুলো ছিয়ামের উপর কোন (মন্দ) প্রভাব ফেলে না (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১২৭)। শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মেহেদী দ্বারা পদযুগল ও হস্তদ্বয়কে রঙ্গিন করা মহিলাদের বৈশিষ্ট্য’ (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং ১২৬)। এতদ্ব্যতীত মেহেদী বা এ জাতীয় বস্তুগুলো মহিলাদের সৌন্দর্য ও লাবণ্য বৃদ্ধির অন্যতম উপকরণ এবং এগুলো তাদের নারীসুলভ পরিচয় বহন করে (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৪তম খণ্ড, পৃ. ১০৬)।প্রশ্নকারী :আজাদুল ইসলাম, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।

প্রশ্ন (১০) : যদি কেউ কোন কথা আমানত রাখতে বলে আর অন্য কেউ সেই বিষয় জানতে চায়, তাহলে ‘আমি জানি না’ বলা যাবে কি?

উত্তর :কেউ কোন আমানত দিলে মুসলিম ব্যক্তি হিসাবে তা রক্ষা করা উচিত। আমানত রক্ষা করাও মুমিনের আলামত, আর খেয়ানত করা মুনাফিকের আলামত (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩)। সম্পদের সাথে সাথে কেউ কোন কথা আমানত রাখলেও তা আমানত হিসাবেই গণ্য হবে। তাই যেকোনভাবে তা এড়িয়ে চলা অথবা কোন মন্তব্যই না করা উচিত।প্রশ্নকারী :আবূ হুরায়রা, মান্দা, নওগাঁ।

প্রশ্ন (১১) : জনৈক ব্যক্তি আগে ওযনে কম দিত। তখন ইসলাম সম্পর্কে তেমন জানত না। এই পাপ থেকে মুক্তির উপায় কী?

উত্তর :কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে ওযনে কম দেয়া গর্হিত অপরাধ (সূরা হূদ : ৮৪-৮৫)। আল্লাহ বলেন, ‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকের নিকট হতে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওযন করে দেয়, তখন কম দেয়’ (সূরা আল-মুত্বাফফিফীন : ১-৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে জাতিই মাপ ও ওযনে কম দেবে, সে জাতিই দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে’ (ইবনু মাজাহ, হা/৪০১৯;, সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১০৬)।মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ে তওবাহ করার পূর্বে অধিকারীর নিকট তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা তার থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে (ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪৯, ৬৫৩৪)। ঐ ব্যক্তিদের পাওয়া সম্ভব না হলে পরিমাণ অনুযায়ী মালিকের নামে ফকীর-মিসকীনদের জন্য ছাদাক্বাহ করে দিবে (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ১১তম খণ্ড, পৃ. ২২৭-২২৮; মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১৯তম খণ্ড, পৃ. ৪৩৮)।প্রশ্নকারী :এসকে রাহুল, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

প্রশ্ন (১২) : পুরুষরা হাতে-পায়ে মেহেদি লাগাতে পারবে কি?

উত্তর :পুরুষের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ (নাসাঈ, হা/৫০৮৯, সনদ হাসান)। তাই বিবাহ উপলক্ষে হোক কিংবা অন্য কোন উপলক্ষে উভয়াবস্থাতেই পুরুষের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি লাগানো হারাম, বরং এটা কাবীরা গুনাহ। কেননা এতে মহিলাদের সাদৃশ্য আছে (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৪১৫-৪১৬)। হাত-পায়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য মেহেদি ব্যবহার করা শুধু নারীদের বৈশিষ্ট্য, পুরুষের জন্য জায়েয নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদের অভিসম্পাত করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুমিন পুরুষের জন্য কোন ক্ষেত্রেই মহিলাদের অনুকরণ করা বৈধ নয়। তা সে মেহেদির ক্ষেত্রে হোক কিংবা অন্য কোন সাজসজ্জার ক্ষেত্রে’ (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২৯তম খণ্ড, পৃ. ৪৭)। তবে ‘নারী-পুরুষ উভয়ে পাকা চুলে এবং পুরুষরা দাড়িতে মেহেদি বা অন্য রং ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু কোনভাবেই কালো রং ব্যবহার করতে পারবে না (ছহীহ মুসলিম, হা/২১০২; আবূ দাঊদ, হা/৪২০৪; নাসাঈ, হা/৫০৯১)।প্রশ্নকারী :আব্দুর রহমান, বরিশাল।

প্রশ্ন (১৩) : বর্তমানে মেয়ের অভিভাবক চাকুরিহীন দ্বীনদার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চায় না। এতে অনেকে পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। প্রশ্ন হল, কর্মহীন দ্বীনদার ছেলের সাথে মেয়েকে বিবাহ দেয়ার জন্য অভিভাবক কী কী বিষয় বিবেচনা করবেন?

উত্তর :রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা যার দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্র দ্বারা সন্তুষ্ট, তোমাদের নিকট যদি সেই ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তবে তার সাথে (তোমাদের পাত্রীর) বিবাহ দিয়ে দাও। অন্যথা পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ, বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তার মাঝে কিছু থাকলেও কি? (অর্থাৎ সে যদি অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র হয়?) তিনি বললেন, ‘তোমরা যে লোকের দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্র দ্বারা সন্তুষ্ট আছ, তোমাদের নিকট যদি সেই ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তবে তার সাথে (তোমাদের পাত্রীর) বিবাহ দিয়ে দাও’। রাবী বলেন, এ কথা তিনি তিনবার বললেন (তিরমিযী, হা/১০৮৪-১০৮৫; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১০২২; ইরওয়াউল গালীল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৬৭)।ইসলাম পাত্র-পাত্রী উভয় পক্ষকেই কিছু বিষয়ে বিবেচনা করার অধিকার দিয়েছে। পাত্রীর অভিভাবক যে সমস্ত বিষয়গুলো পরিদর্শন করতে পারেন সেগুলো হল- (১) পাত্র স্ত্রীর ভরণপোষণ বা অন্নবস্ত্র দিয়ে তত্ত্বাবধান করতে পারবে কি-না? যেমন, ফাতিমা বিনতু ক্বায়স (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘...অতঃপর যখন আমার ইদ্দত পূর্ণ হল তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানালাম যে, মু‘আবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) ও আবূ জাহম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবূ জাহম এমন ব্যক্তি যে, তার কাঁধ থেকে লাঠি নামিয়ে রাখে না (অর্থাৎ স্ত্রীকে খুবই মারধর করে)। আর মু‘আবিয়া তো কপর্দকহীন দরিদ্র মানুষ। তুমি উসামা ইবনু যায়দের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও। কিন্তু আমি তাঁকে পসন্দ করলাম না। পরে তিনি আবার বললেন, তুমি উসামাকে বিয়ে কর। তখন আমি তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। আল্লাহ এতে (তাঁর ঘরে) আমাকে বিরাট কল্যাণ দান করলেন। আর আমি ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হলাম’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৮০; আবূ দাঊদ, হা/২২৮৪)। (২) পাত্র স্ত্রীর জন্য বসবাস যোগ্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে কি-না? কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যে স্থানে বাস কর, তাদেরকেও সে স্থানে বাস করতে দাও। আর সংকটে ফেলার উদ্দেশ্যে তাদেরকে উত্ত্যক্ত কর না’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ৬)। তবে পাত্র-পাত্রী উভয় পক্ষকে দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দিতে হবে (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩; ছহীহ বুখারী, হা/৫০৯০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৬৬)।প্রশ্নকারী :মাহমূদ, বিরল, দিনাজপুর।

প্রশ্ন (১৪) : কেউ যদি এমন পাপ করে যার কারণে ঐ ব্যক্তির শাস্তি সরাসরি হত্যা। এমন ব্যক্তির তওবার সুযোগ আছে কি?

উত্তর :অবশ্যই তওবা করার সুযোগ আছে। আল্লাহ তা‘আলা খালিছ তওবার মাধ্যমে শিরকের মত ধ্বংসাত্মক, হত্যার মত মারাত্মক ও ব্যভিচারের মত জঘন্য গুনাহকেও ক্ষমা করার ঘোষণা করেছেন (সূরা আল-ফুরকান : ৬৮-৭০)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, اَلتَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ‏ ‘গুনাহ থেকে তওবাহকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য’ (ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫০, সনদ হাসান)। তওবাহ কবুলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। যেমন, (১) পাপকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে, (২) কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে এবং (৩) ঐ পাপ পুনরায় না করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। সুতরাং যদি এর মধ্যে একটি শর্তও বিলুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবাহ বিশুদ্ধ হবে না। পক্ষান্তরে যদি সেই পাপ মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা কবুলের জন্য চারটি শর্ত আছে। উপরিউক্ত তিনটি এবং চতুর্থ শর্ত হল- অধিকারীর অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে, সেটাও ফিরিয়ে দিতে হবে’ (রিয়াযুছ ছালিহীন, পৃ. ১৪-২২ ‘তওবাহ’ অনুচ্ছেদ)।উল্লেখ্য যে, হত্যা যোগ্য পাপ যেমন কোন বিবাহিত পুরুষ ব্যভিচার করলে তার শাস্তি রজম বা মৃত্যুদণ্ড(ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭০-৫২৭১), কোন অবিবাহিত পুরুষ ব্যভিচার করলে তার শাস্তি একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন (সূরা আন-নূর : ২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৯০) এবং যারা মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী, যারা আল্লাহদ্রোহী বা ইসলাম বিদ্বেষী তাদেরও শাস্তি মৃত্যুদণ্ড(ছহীহ বুখারী, হা/৬৯২২, ৬৯২৩)।উক্ত গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিদের ইসলামী শরী‘আহ অনুযায়ী মুসলিম শাসকের নির্দেশে হত্যা করা অনুমোদিত। কিন্তু ইসলামী শাসকের অনুমতি ব্যতীত কোন পাপের শাস্তি স্বরূপ কাউকে হত্যা করা নিষিদ্ধ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৭-২২; তাফসীরে কুরতুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৫৬)। যেহেতু আমাদের দেশে ইসলামী শাসক নেই। তাই হদ্দ (দণ্ডবা শাস্তি) প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর নয়। এক্ষেত্রে গুনাহগার ব্যক্তি দুনিয়াবী তুচ্ছ শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেলেও কিন্তু পরকালের ভয়াবহ শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে না। তাই পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট একনিষ্ঠভাবে তওবাহ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।প্রশ্নকারী :মাশরোফ শাহরিন, জামালপুর।

প্রশ্ন (১৫) : টিভি, ফ্রিজ, এসি, রাইস কুকার, গান বাজানোর সাউন্ডবক্স, কম্পিউটার, ক্যামেরা, স্মার্ট মোবাইল ইত্যাদি সার্ভিসিং বা মেরামতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা কি হালাল হবে?

উত্তর :এমন প্রত্যেক জিনিস যা মানুষের সুবিধার্থে শুধু কল্যাণকর কাজে ব্যবহৃত হয়, তার সার্ভিসিং বা মেরামতের কাজ করা নিশ্চিতরূপে বৈধ। আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি পৃথিবীর সব কিছুই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ ‘যা তোমার জন্য কল্যাণকর তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/৭৯, ৪১৬৮)। পক্ষান্তরে টিভি, গান-বাজানোর সাউন্ডবক্স ইত্যাদি সার্ভিসিং বা মেরামত করার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে সামান্য মতপার্থক্য রয়েছে। তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী এ সমস্ত জিনিস মেরামত করা জায়েয নয়। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘এ সমস্ত যন্ত্র ও পণ্যসামগ্রীর মাধ্যমে যা কিছু সম্প্রচার করা বা দেখানো হয়, তার কিছু হারাম এবং কিছু হালাল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ যন্ত্রগুলো হারাম জিনিস দর্শন ও শ্রবণ করার কাজেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে, আর এটাই বাস্তবতা। সেজন্য সকল মুসলিমের উচিত এমন প্রত্যেক জিনিসের সার্ভিসিং বা মেরামতের কাজ থেকে বিরত থাকা যা ন্যায়ের তুলনায় অন্যায় কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ২৭৩)। তাঁরা অন্যত্র বলেন, ‘কেননা তা অন্যায় ও পাপাচারে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত, যা নিষিদ্ধ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ২৭৪-২৭৫, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ৪২০)।ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালাসমূহের মধ্যে অন্যতম হল- إذا اجتَمَع الحلالُ والحرامُ غُلِّبَ الحرامُ ‘যখন কোন বিষয়ে হালাল ও হারামের মাসআলা একত্রিত হয়, তখন হারামের মাসআলা প্রাধান্য পায় অর্থাৎ সেটাকে হারাম বলে গণ্য করতে হবে। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু সত্য হল শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হল দ্বিধা-সন্দেহ’ (তিরমিযী, হা/২৫১৮, সনদ ছহীহ)।প্রশ্নকারী :রনি মিয়া, গাইবান্ধা।

প্রশ্ন (১৬) : ফরয ছালাতের পর বিভিন্ন দু‘আর সাথে সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব, নাস ইত্যাদি পড়ার পর বুকে ফুঁ দিয়ে এবং হাতে ফুঁ দিয়ে গোটা শরীর মাসাহ করা কি ঠিক?

উত্তর :ফরয ছালাতের পর যিকির, তাসবীহ ও আয়াতুল কুরসীসহ বিভিন্ন সূরা পড়ার কথা হাদীছে স্পষ্ট এসেছে। কিন্তু সেগুলো পড়ে শরীর মাসাহ করার বিষয়ে কোন ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না। তাই এগুলো পরিহার করাই উচিত। বিশেষ করে কেউ যদি তা নিয়মিত করে তাহলে বিদ‘আতে পরিণত হবে। তবে রুকইয়া তথা ঝাড়ফুঁকের উদ্দেশ্যে যদি কেউ করে থাকে তাহলে তাতে বাধা নেই (ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৩৯, ৫৭৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৯২)। ঘুমের পূর্বে হাত দ্বারা মাসাহ করার কথা হাদীছে এসেছে; ছালাতের পরে নয় (ছহীহ বুখারী, হা/৫৪০৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৯২)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন রোগ বা যাদু-টোনা থেকে মুক্তির জন্য যেকোন সময় পড়ে রুকইয়ার জন্য মাসাহ করা যেতে পারে; ছালাতের পর সময়কে নির্দিষ্ট করা যাবে না (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৮৮)।প্রশ্নকারী :ছালাহুদ্দীন, বাসাইল, টাঙ্গাইল।

প্রশ্ন (১৭) : কোন টাকা বা মূল্যবান বস্তু পাওয়া গেলে কী করা উচিত? অনেকেই বলেন, ফকীরকে বা মসজিদে দিয়ে দিতে। এটি কতটুকু সঠিক?

উত্তর :পড়ে পাওয়া বস্তুর ব্যাপারে নিম্নের পাঁচটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে। (১) যদি সে উক্ত অর্থ সংরক্ষণ করতে এবং তার সম্পর্কে প্রচার ও ঘোষণা করে তার মালিকের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম না হয়, তাহলে তার জন্য পড়ে থাকা অর্থ উঠানো জায়েয নয়। কেননা এটি এক প্রকারের আমানত। (২) উঠানোর পূর্বে তার পরিমাণ, প্রকার, বৈশিষ্ট্য-বিশেষণ ও আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। (৩) পূর্ণাঙ্গ এক বছর প্রচার ও ঘোষণা করতে হবে। প্রথম সপ্তাহের প্রত্যেক দিন ঘোষণা করতে হবে। অতঃপর সাধ্যানুযায়ী করতে থাকবে। (৪) যখন তার দাবীদার আসবে এবং উত্তমরূপে তার পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট্য ও বিবরণ বর্ণনা করবে, তখন তাকে তার মাল ফিরিয়ে দিতে হবে। (৫) এক বছর প্রচার করার পরেও যদি তার মালিক না আসে, তাহলে কুড়িয়ে পাওয়া ব্যক্তিই তার মালিক হিসাবে বিবেচিত হবে। তবে খরচ করার পূর্বে তার বৈশিষ্ট্যসমূহ সংরক্ষণ করে রাখা অপরিহার্য। যাতে পরবর্তীকালে কোন সময়ে তার মালিক আসলে তাকে তার মাল ফিরিয়ে দিতে অথবা মূল্য পরিশোধ করতে পারে (ছহীহ বুখারী, হা/৯১; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৫০৪৯)।প্রশ্নকারী :তানযীল, নারায়ণগঞ্জ।

প্রশ্ন (১৮) : স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ইদ্দত ৪ মাস ১০ দিন। বৃদ্ধ নারী বা যার সন্তান হওয়ার সম্ভবনা নেই তার ক্ষেত্রেও কি এটিই প্রযোজ্য? আর উক্ত ইদ্দত চলাকালীন কী কী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে?

উত্তর :স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৪)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র স্ত্রী জাতিকে সম্বোধন করেছেন। প্রাপ্তবয়স্কা, অপ্রাপ্তবয়স্কা, যুবতী, বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা সব ধরনের স্ত্রী এর অন্তর্ভুক্ত (ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট)। ইমাম ইবনু কুদামা, ইবনু আব্দিল বারর, ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলিমগণ বলেছেন, এই আয়াত প্রমাণ করে যে, স্বামী মারা গেলে প্রত্যেক স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। এখানে ছোট-বড়, প্রাপ্তবয়স্কা, অপ্রাপ্তবয়স্কা, বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা সহ সব ধরনের স্ত্রীদের সম্বোধন করা হয়েছে, স্বামীর সাথে তার বাসররাত হোক কিংবা না হোক। এ আয়াত সাধারণভাবে সকল স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে (আল-মুগনী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ১১৫; আল-ইসতিযকার, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৭৮)। তবে শুধু গর্ভবতী স্ত্রী ব্যতীত। কেননা গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ৪)। এছাড়া বিবাহের পর বাসররাত না হয়ে থাকলেও স্বামীহারা নারী ঐ ইদ্দত পালন করবে। নাবালিকা কিশোরী অথবা অতিবৃদ্ধা হলেও ইদ্দত পালন করতে হবে (মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ১১৪, ১২০, ১৩২)।ইদ্দতের সময়কালে স্বামীহারা স্ত্রীর করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়সমূহ সম্পর্কে উম্মু ‘আতিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এ সময় তোমরা সুরমা এবং কোন প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। হালকা রঙিন পোশাক ব্যতীত অন্য কোন চকচকে রঙিন পোশাক পরিধান করবে না। তবে ঋতুবতী মহিলারা পবিত্রতার গোসল করার পর আজফারের খোশবু মিশ্রিত বস্ত্রখণ্ড লজ্জাস্থানে রাখতে পারেন। খিযাব ও মেহেদি লাগাতে পারবে না এবং আমাদের জানাযার পেছনে যেতে নিষেধ করা হত (ছহীহ বুখারী, হা/৩১৩)।ইবনু কুদামা, ইবনু আব্দিল বার্র, আবূ ইসহাক আশ-শিরাজী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইদ্দত চলাকালীন পতিহীনা স্ত্রী সাজসজ্জা ও রূপচর্চার যাবতীয় উপকরণ ও সুশোভিতকরণ পরিহার করবে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রঙিন কাপড় যেমন, লাল, নীল, গেরুয়া, টকটকে কমলা ও হলুদ রঙের কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকবে। অলংকার, আংটি পরিধান করবে না। সর্বপ্রকার প্রসাধন ও অঙ্গরাগ যেমন, আতর বা সুগন্ধি, খিযাব, মেহেদি ও সুগন্ধিযুক্ত তেল ব্যবহার করবে না। সুরমা বা কাজল এবং প্রয়োজন ব্যতীত মাথায় চিরুনি লাগাবে না। স্বামীর গৃহে অবস্থান করবে। বিশেষ প্রয়োজনে দিনের বেলায় বাড়ী থেকে বাহির হতে পারে (যেমন, চিকিৎসা করার জন্য ইত্যাদি)। কিন্তু রাত্রিতে বাহির হওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ’ (‘উমদাতুল ফিক্বহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৭; আল-কাফী ফী ফিক্বহী আহলিল মাদীনা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬২২)।প্রশ্নকারী :সামি মাহির, রংপুর।

প্রশ্ন (১৯) : স্ত্রী ছালাত আদায় না করলে করণীয় কী?

উত্তর :ছালাত ত্যাগকারীর বিধান সম্পর্কে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বক্তব্য হল, ছালাত ত্যাগকারী নিশ্চিতরূপে কাফির ও মুশরিক। চার মাযহাবের আলিমগণ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য করলেও ছালাত ত্যাগকারীর বিধান সম্পর্কে একমত যে, তারা সর্বসম্মতিক্রমে কাফির (ফিক্বহ বিশ্বকোষ, ২৭তম খণ্ড, পৃ. ৫৩-৫৪; আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৬)। আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীগণ ছালাত ব্যতীত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফরী মনে করতেন না। (অর্থাৎ ছালাত ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন (তিরমিযী, হা/২৬২২; সনদ ছহীহ)। অন্যত্র নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘মুমিন বান্দা ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত ত্যাগ করা। অতএব যে ব্যক্তি ছালাত ত্যাগ করল, সে অবশ্যই শিরক করল’ (ইবনু মাজাহ, হা/১০৮০, ৮৯২; সনদ ছহীহ)। আরো বলেছেন, ‘আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হল ছালাত। অতএব যে ব্যক্তি ছালাত ত্যাগ করল, সে কুফরী করল (তিরমিযী, হা/২৬২১, সনদ ছহীহ)। এছাড়া জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত ত্যাগ করা (ছহীহ মুসলিম, হা/৮২)।শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে একই প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি স্ত্রীর মত স্বামীও ছালাত ত্যাগকারী হয় সেক্ষেত্রে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। যেহেতু তারা দু’জনেই কাফির। তাই অন্যান্য কাফির ও মুশরিক দম্পতির মত তারাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারবে। কিন্তু যদি তাদের একজন ছালাত আদায় করে আর অপরজন না করে এমতাবস্থায় তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা সঠিক হবে না। বরং তার স্ত্রীকে এক ত্বালাক্ব দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা অপরিহার্য। অথবা কোন ইসলামিক বিচারকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করিয়ে নিবে। কেননা ছালাত ত্যাগকারী স্ত্রী কোন মুসলিম স্বামীর জন্য বৈধ নয়। কিন্তু যদি স্ত্রী তওবাহ করে এবং ছালাত আদায় করতে আরম্ভ করে, সেক্ষেত্রে স্বামী তাকে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিতে পারে। তবে তওবাহ ছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৩২৮-৩৩১ ও ২০তম খণ্ড, পৃ. ৩৪১; ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২৮তম খণ্ড, পৃ. ১০৯)।শায়খ ছালিহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রী ছালাত ত্যাগকারী হলে বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যদি সে ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই তওবাহ করে এবং ছালাত আদায় করতে আরম্ভ করে, তাহলে স্বামী তাকে সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে পারবে। আর যদি ইদ্দতের সময়কাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর তওবাহ করে সেক্ষেত্রে কিছু উলামা বলেছেন, নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে। আবার কিছু উলামা বলেছেন, নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেয়। তবে তওবাহ অপরিহার্য’ (উছায়মীন, মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১২তম খণ্ড, পৃ. ৯৩-৯৪)।প্রশ্নকারী :মুহাম্মাদ মানিক, মহেশপুর, ঝিনাইদহ।

প্রশ্ন (২০) : অফিসে কাজ করার সময় বিনা-অনুমতিতে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকা বা সময় অপচয় করার হুকুম কী?

উত্তর :প্রত্যেক কর্মচারী কোম্পানীর সঙ্গে যে নির্ধারিত সময়ের জন্য ও সুনির্দিষ্ট চুক্তি বা শর্ত সাপেক্ষে নিযুক্ত হয়েছেন, সেই নিয়োগবিধি ও চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজ করা অপরিহার্য। শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতীত এর ব্যতিক্রম করা বৈধ নয়, বরং পরিপূর্ণরূপে দায়িত্ব পালন করা অত্যাবশ্যক। নিশ্চয় চুক্তিভঙ্গ করা মুনাফিক্বের নিদর্শন। সুতরাং অবশ্যই আপনাকে দাপ্তরিক সময়ের মধ্যেই কার্যালয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং নিয়মানুযায়ী আধিকারিকদের অনুমতি ব্যতীত অফিস থেকে বের হওয়া অবৈধ। এমনকি কার্যালয়ের নির্ধারিত সময়ে কর্মীদের ব্যক্তিগত ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অফিস থেকে বের হওয়াও নাজায়েয। কেননা এটি প্রকাশ্য খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা’ (দ্র. : ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৫তম খ-, পৃ. ১৫৩-১৫৪, ১২৫-১২৬, ১৫১ ও ২৩ তম খণ্ড, পৃ. ৪১৫)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এরূপ করা জায়েয নয়। বরং তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কার্যালয়ের নির্ধারিত কাজেই নিয়োজিত থাকবেন। তবে হ্যাঁ, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ব্যক্তিগত কোন কাজ করা যেতে পারে’ (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ১৯তম খণ্ড, পৃ. ২৭০)।আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ করবে’ (সূরা আন-নিসা : ৫৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের দায়িত্ব সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে।.... কর্মচারী তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৮৯৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২৯)।প্রশ্নকারী :সাকলাইন সজীব, বগুড়া।

প্রশ্ন (২১) : নারী-পুরুষের ছালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?

উত্তর :প্রকৃতপক্ষে নারী-পুরুষের ছালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যদিও কেউ কেউ পার্থক্য করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষ-নারী, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলের জন্যই বলেছেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِيْ أُصَلِّيْ ‘তোমরা ঠিক সেভাবেই ছালাত কর, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। এই নির্দেশ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই। যদি কেউ নারীকে পুরুষ থেকে পৃথক করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই ছহীহ সূত্র দ্বারা প্রমাণিত দলীল পেশ করতে হবে (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৭৯-৪১)।ইমাম নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছালাতের যে বিবরণী ও পদ্ধতি উল্লেখ করা হল, এতে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান। যে সকল পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, এগুলো নারীদের জন্য স্বতন্ত্র বিধান। অথচ এর পক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই। বরং নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীর মধ্যে তারাও অন্তর্ভুক্ত, ‘তোমরা সেভাবেই ছালাত আদায় কর, যেরূপ আমাকে আদায় করতে দেখছ’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। অন্যত্র আলবানী বলেন, إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَالِ ‘নারীরা তো পুরুষদেরই অংশ’ (আবূ দাঊদ, হা/২৩৬; তিরমিযী, হা/১১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬১৯৫; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৮৬৩; ছহীহুল জামে‘, হা/২৩৩৩)। এ সম্পর্কে বিখ্যাত তাবিঈ ইবরাহীম নাখঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, تفعل المرأة في الصلاة كما يفعل الرجل ‘ছালাতে নারী তা-ই করবে, যা পুরুষ করে’ (ছিফাতু ছালাতিন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), পৃ. ১৮৯)।শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মহিলারা ঠিক সেভাবেই ছালাত আদায় করবে, যেভাবে পুরুষরা করে থাকে। ক্বিয়াম, রুকূ‘, সিজদাহ, বৈঠক সবকিছুই পুরুষের মত হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَصَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِيْ أُصَلِّيْ ‘তোমরা আমাকে যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখছ, ঠিক সেভাবেই ছলাত আদায় করবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী-পুরুষ উভয়কেই সম্বোধন করেছেন’ (আশ-শারহুল মুমতি‘, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩০৩-৩০৪)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘কিছু আলিম নারী-পুরুষের ছালাত আদায়ের পদ্ধতি পৃথক বলে মন্তব্য করেছেন এবং তারা এর পক্ষে কিছু হাদীছ দ্বারা দলীল দিয়েছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছগুলো সবই যঈফ। আর যঈফ হাদীছ দ্বারা দলীল পেশ করা সঠিক নয়’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩৮১৬২)।উল্লেখ্য, ছহীহ সুন্নাহর আলোকে ও দলীলের ভিত্তিতে ছালাতের কয়েকটি বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা আমল করে করবে। যেমন, (১) ইমামের ভুল ধরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে মহিলারা পুরুষের মত ‘সুবহানাল্লাহ’ না বলে হাতে হাত মেরে আওয়াজ করবেন (ছহীহ বুখারী, হা/১২০৩-১২০৪)। (২) মহিলা মহিলাদের ইমামতি করলে পুরুষদের মত সামনে না দাঁড়িয়ে জামা‘আতের প্রথম কাতারের মাঝে সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে ইমামতি করবেন (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনান, হা/১৬২১; সুনানুল কুবরা হা/৫৫৬৩; ‘আওনুল মা‘বূদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২১২; ইরওয়াউল গালীল, হা/৪৯৩)। (৩) প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলারা বড় চাদর দ্বারা সম্পূর্ণ দেহ না ঢাকলে তাদের ছালাত হবে না (আবূ দাঊদ, হা/৬৪১, সনদ ছহীহ)। (৪) বেগানা পুরুষ আশে-পাশে থাকলে (জাহরী ছালাতে) মহিলা সশব্দে কুরআন পড়বে না (আশ-শারহুল মুমতি‘, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩০৪)। এগুলো তাদের পর্দা সক্রান্ত বিষয়, ছালাতের বিধানগত পার্থক্য নয়।প্রশ্নকারী :হারিছ সরকার, শান্তিবাগ, ঢাকা।

প্রশ্ন (২২) : চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতে ১ম রাক‘আত যদি ছুটে যায়, তাহলে ইমামের সাথে তিন রাক‘আত আদায় করার পর শেষ রাক‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়লে হবে, না-কি ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলাতে হবে?

উত্তর :প্রত্যেক মুছল্লীর করণীয় হল- যোহর-আছর ছালাতের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো এবং শেষ দু’রাক‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া (ছহীহ বুখারী, হা/৭৭৬)। তাই ইমামের সাথে ছুটে যাওয়া ছালাত তার ৪র্থ রাক‘আত হিসাবে গণ্য হবে। তাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়াটা আবশ্যক; সাথে অন্য সূরা পড়া লাগবে না।প্রশ্নকারী :রাশেদ পারভেজ, বাকলিয়া, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন (২৩) : বিতরের ছালাতে দু‘আ কুনূত ব্যতীত অন্য কোন দু‘আ পড়া যাবে কি?

উত্তর :বিতর ছালাত সুন্নাত। তাতে কুনূত পড়াও সুন্নাত। যদি কেউ কুনূতে পড়তে না পারে তাহলে সে কিছুই পড়বে না। বিতরের ছালাতে দু‘আ কুনূত ছাড়া শুধু কুরআন তেলাওয়াত করার শারঈ কোন বিধান নেই। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দু‘আ কুনূত নির্দিষ্ট না করে বরং কেউ যদি কুনূতের স্থানে কুরআন থেকেও দু‘আ পড়ে তাতেও কোন সমস্যা নেই। তবে উত্তম সেটাই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ কুনূত হিসাবে যা শিখিয়ে দিয়েছেন তাঁর দৌহিত্র হাসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে’ (আল-আযকার, পৃ. ৫০)।প্রশ্নকারী :সাজিদ শাহরিয়ার, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা।

প্রশ্ন (২৪) : জনৈক বক্তা বলেছেন, হজ্জ করার পূর্বে কোন অবস্থাতেই ওমরাহ পালন করা যাবে না? উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?

উত্তর:উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে ৪টি ওমরা করেছেন, ৪টিই হজ্জ করার পূর্বে এবং যুলকা‘দা মাসে (ছহীহ বুখারী, হা/১৭৮০)। বক্তা হয়তো জানেন না যে, তামাত্তু হজ্জের নিয়ত করলে প্রথমে ওমরা করতে হয়, অতঃপর হজ্জ সম্পাদন করতে হয়।প্রশ্নকারী :হাসীবুর রহমান, সিরাজগঞ্জ।

প্রশ্ন (২৫) : কেউ কসম করে বলল, ‘আমি তাকে বিয়ে করব না। অতঃপর সে তাকে বিয়ে করে নিল’। তার জন্য করণীয় কী?

উত্তর :শরী‘আতে এ ধরনের কসমের কোন মূল্য নেই। এই ভুল কসমের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে এবং কসমের কাফফারা হিসাবে ১০ জন মিসকীনকে খেতে দেবে অথবা তাদের কাপড় দেবে, কিংবা গোলাম আযাদ করবে অথবা পরপর তিনদিন ছওম পালন করবে (সূরা আল-মায়েদাহ : ৮৯)।প্রশ্নকারী :হিব্বান, সঊদী আরব।

প্রশ্ন (২৬) : গোসল করার সময় কখন মেসওয়াক করতে হবে? বিসমিল্লাহ বলে হাত ধোয়ার আগে, না-কি দু’হাত ও লজ্জাস্থান ধোয়ার পর?

উত্তর :গোসলের সময় বা পূর্বে মেসওয়াক করার বিষয়টি সুন্নাহ হিসাবে প্রমাণিত নয়। কেউ কেউ একে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মেসওয়াক করা মুস্তাহাব বলা যেতে পারে, তা ওয়াজিব নয়’ (ইবন বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ৩৪২)। তাই তা আগে করবে, না-কি পরে করবে তা একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়; শারঈ কোন বিষয় না। মনে রাখতে হবে সাধারণত মেসওয়াক করা সুন্নাত, তবে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সুন্নাত বলতে হলে ওযূ বা ছালাতের পূর্বে এবং ঘুমের পূর্বে ও পরে মেসওয়াক করা সুন্নাত (ছহীহ বুখারী, হা/৮৮৭, ২৪৫; আবূ দাঊদ, হা/৫৭)।প্রশ্নকারী :মিনহাজ পারভেজ, হড়গ্রাম, রাজশাহী।

প্রশ্ন (২৭) : কেউ যদি মানত করে ফেলে এবং সেই মানত যদি শিরকের গুনাহের আওতায় পড়ে যায়, সেক্ষেত্রে মানতকারীর করণীয় কী?

উত্তর :শরী‘আত বহির্ভূত মানত পূর্ণ করা হারাম। এমন প্রত্যেক মানত যা অবৈধ উদ্দেশ্যে ও ভ্রান্ত পদ্ধতিতে মানা হয়েছে তা পূরণ করা নাজায়েয (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৩তম খণ্ড, পৃ. ২৩৭, ২৫৮-২৬০)। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيْعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلَا يَعْصِهِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মানত করে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী বা অবাধ্যতার মানত করে, সে যেন তা না করে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৭০০)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘পাপ কাজে মানত করা যাবে না এবং আদম-সন্তান যে জিনিসের মালিক নয় তার মানতও করা যাবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৪১)।করণীয় হল- অবৈধ মানত পূর্ণ না করা এবং এর পরিবর্তে কসমের কাফ্ফারা আদায় করা। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘গুনাহের কাজে মানত করা যাবে না এবং এর কাফ্ফারা হল কসম ভঙ্গের কাফ্ফারার অনুরূপ’ (তিরমিযী, হা/১৫২৪-১৫২৫)। অন্যত্র বলেছেন, كَفَّارَةُ النَّذْرِ كَفَّارَةُ الْيَمِيْنِ ‘কসমের কাফ্ফারাই মানতের কাফ্ফারা’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৪৫; আবূ দাঊদ, হা/৩৩২৩; নাসাঈ, হা/৩৮৩২; তিরমিযী, হা/১৫২৮)।কসমের কাফ্ফারা হল- (১) দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য দান করা। (২) অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করা। (৩) অথবা একটি দাস মুক্ত করা। (৪) কিন্তু যার এগুলোতে সামর্থ্য নেই তার জন্য তিনদিন ছিয়াম পালন করা (সূরা আল-মায়িদাহ : ৮৯)।প্রশ্নকারী :উমর ফারুক, গাইবান্ধা।

প্রশ্ন (২৮) : জনৈক ব্যক্তি মোবাইলে গেম খেলতে গিয়ে নিজস্ব টাকা খরচ হয়ে গেছে। পরে ভুল বুঝতে পেরেছে। এখন গেমটি অন্য কারও কাছে বিক্রি করে টাকা নেয়া যাবে কি?

উত্তর :যাবে না। কারণ যা হারাম তা সকল মুসলিমের জন্যই হারাম। তাই হারাম জিনিস অন্য কোন ব্যক্তির নিকট দিয়ে হারাম চলমান রাখা যাবে না। তবে তা যদি এমন হয় আমার জন্য হারাম হলেও অন্যের জন্য হালাল, তাহলে তা অন্যের নিকট অর্থের বিনিময়ে বা হাদিয়া হিসাবে দেয়া যাবে (ছহীহ বুখারী, হা/২১০৪)।প্রশ্নকারী :শহীদুল ইসলাম, ফরিদপুর।

প্রশ্ন (২৯) : আমার মা-বাবার সাথে আমার স্ত্রীর ঝগড়া হওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে সে বাপের বাড়ি চলে যায়। আমি তখন বিদেশে ছিলাম। আমি বলেছিলাম, যদি আমাকে নিয়ে সুখী হতে না পার তবে অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হও। কিন্তু সে তা করেনি। এখন পর্যন্ত আমরা সংসার করে আসছি। আর সমস্যা হয়নি। প্রশ্ন হল, এভাবে বললে কি ত্বালাক্ব হয়ে যায়?

উত্তর :উপরের বর্ণণানুপাতে আপনাদের মাঝে ত্বালাক্ব সংঘটিত হয়নি, বরং সম্পর্ক ঠিক আছে। ত্বালাক্ব হওয়ার জন্য অবশ্যই নিয়ত এবং মুখে বলা শর্ত (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩০)।প্রশ্নকারী :আব্দুল হান্নান, সঊদী আরব।

প্রশ্ন (৩০) : সমাজে জয়ত্রি এবং জায়ফল দিয়ে বিভিন্ন খাবার রান্না করে খাওয়ার প্রচলন আছে। এটা খাওয়া যাবে কি?

উত্তর :উক্ত ফল খাবারে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ অনেক বিদ্বান এই ফলকে নেশা জাতীয় ফল বলে উল্লেখ করেছেন (ইসলাম সওয়াল ও জওয়াব ফৎওয়া নং ৩৯৪০৮)। তাছাড় হাদীছে নেশা জাতীয় দ্রবকে মাদক বলে উল্লেখ করা হয়েছে (তিরমিযী হা/১৮৬১, সনদ ছহীহ)।প্রশ্নকারী :মুহাম্মাদ রাফসান, ঢাকা।

প্রশ্ন (৩১) : এক ব্যক্তি সূদভিত্তিক ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন এবং সংসার চালান। পরবর্তীতে তিনি সূদ থেকে মুক্ত হওয়ার নিয়ত করেছেন। তবে এখনো সূদসহ কিছু ঋণ বাকি আছে। প্রশ্ন হল, ঐ টাকা শোধ হওয়া পর্যন্ত কি তার গুনাহ হতে থাকবে?

উত্তর :আল্লাহ তা‘আলা সূদকে হারাম করেছেন (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৫-২৭৯)। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূদখোর, সূদদাতা, তার সাক্ষীদাতা ও তার লেখককে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭-১৫৯৮)। সুতরাং যতদিন সূদের সাথে জড়িত থাকবে ততদিন পাপ হতেই থাকবে।তাই উক্ত ব্যক্তির উচিত দ্রুত উত্তমরূপে তওবাহ করা এবং বেশি বেশি ক্ষমাপ্রার্থনা করা, আমলে ছালেহ সম্পাদন করা ও ছাদাক্বাহ করা ইত্যাদি। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তওবার মাধ্যমে বান্দার পাপ ক্ষমা করে দেন (সূরা আল-ফুরকান : ৬৮-৭০)। আর সূদী ঋণের মূলধন পরিশোধ করা তার উপর অপরিহার্য। পক্ষান্তরে হারাম সূদ পরিশোধ করা অপরিহার্য নয়। এমনকি তার কাছ থেকে সূদ গ্রহণ করা ঋণদাতার জন্য হারাম হবে। কিন্তু যদি অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তবে তওবাহ ও ঘৃণার সাথে সূদসহই ঋণ পরিশোধ করবেন’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬০১৮৫)।উল্লেখ্য, ‘ফক্বীহগণ বলেছেন, ‘হারাম পন্থায় উপার্জিত অর্থ শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম। সন্তান হিসাবে পিতা যদি তাকে উপহার স্বরূপ ঐ মাল থেকে কিছু দেয়, তবে তা গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ হবে। আর যদি সম্ভব হয়, তাহলে পিতার ঐ উপহার বর্জন করাই উত্তম হবে’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৫০১৮)।‌প্রশ্নকারী :বায়জীদ, কুষ্টিয়া।

প্রশ্ন (৩২) : যারা সীমান্ত এলাকায় বসবাস করে তারা রক্ষী বাহিনীকে ঘুষ দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন মাল নিয়ে এসে ব্যবসা করে। এই ব্যবসা কি হালাল?

উত্তর :উক্ত ব্যবসা হারাম। কারণ ইসলামে চুরি নিষিদ্ধ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৩৮)। এছাড়া ঘুষ একটি জঘন্য অপরাধ। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়কে লা‘নত করেছেন (আবূ দাঊদ, হা/৩৫৮০, সনদ ছহীহ)।প্রশ্নকারী :জাহিদুল ইসলাম, নওগাঁ।

প্রশ্ন (৩৩) : অনেকে ব্যবসার স্বার্থে জাল-যঈফ হাদীছ ও মিথ্যা কাহিনী সম্বলিত বই-পুস্তক বিক্রি করে থাকে। এই ব্যবসা হালাল হবে কি?

উত্তর :উক্ত ব্যবসা হালাল হবে না। কারণ যঈফ, জাল হাদীছ ও মিথ্যা, উদ্ভট কাহিনী শরী‘আতের নামে প্রচার করা গর্হিত অন্যায় (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩৩)। জেনে বুঝে এ সমস্ত বই বিক্রি করা অবৈধ। এর দ্বারা যত লোক পথভ্রষ্ট হবে, তত লোকের পাপের বোঝা ঐ ব্যক্তিকে বহন করতে হবে (সূরা আন-নাহল : ২৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের কোন মন্দ রীতি চালু করল, তার উপরে উক্ত পাপের বোঝা চাপানো হবে এবং যারা তার উপরে আমল করবে, তাদের সকলের পাপের বোঝা ঐ ব্যক্তির উপর চাপানো হবে। যদিও তাদের কারো পাপ হ্রাস করা হবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; মিশকাত হা/২১০)।প্রশ্নকারী :আমীনুল ইসলাম, রাজবাড়ী।

প্রশ্ন (৩৪) : কোন অসুস্থ ব্যক্তি দু‘আ চাইলে শুক্রবারে জুমু‘আর ছালাতের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যাবে কি?

উত্তর :যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে কখনো এ এভাবে মুনাজাত করেননি। আর তাঁর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন দলীল পাওয়া যায় না (মাজাল্লাতুল বুহূছ আল-ইসলামিয়্যাহ লিল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ্, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ৫৫)। তবে এক্ষেত্রে করণীয় হল- ইমাম ছাহেব পূর্বে অবগত হলে খুৎবার মধ্যেই তার জন্য দু‘আ করবেন আর বাকীরা আমীন আমীন বলবে (ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১২৫৫; ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়েমাহ, ৮ম খণ্ড, পৃ. ২৩১-৩০ ও ৩০২; ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, পৃ. ৩৯২)। বিভিন্ন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করেছেন আর ছাহাবীরা আমীন আমীন বলেছেন (মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪২৫; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুছ ছগীর, হা/৫৩৬, সনদ ছহীহ; আবূ দাঊদ, হা/১৪৪৩; মিশকাত, হা/১২৯০)।প্রশ্নকারী :আব্দুল্লাহ, সাতক্ষীরা।

প্রশ্ন (৩৫) : কোন্ দু‘আ পড়লে সারাদিন যিকির করার নেকী পাওয়া যায়?

উত্তর :নিম্নের দু‘আ পড়লে উক্ত ফযীলত পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কেউ এই দু‘আ সকালে ৩ বার পড়লে সারাদিন যিকির করার সমপরিমাণ নেকী পাবে।سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِউচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, ‘আদাদা খলক্বিহী, ওয়া রিযা নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালেমা-তিহী (৩ বার পড়বে)।অর্থ : ‘আমি আল্লাহর মহত্ত্ব ও প্রশংসা জ্ঞাপন করছি- তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমপরিমাণ, তাঁর সত্তার সন্তুষ্টির সমতুল্য এবং তাঁর আরশের ওযন ও কালেমাসমূহের ব্যাপ্তি সমপরিমাণ’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২৬; মিশকাত, হা/২৩০১)।প্রশ্নকারী :রায়হান, দিনাজপুর।

Post a Comment

0 Comments