Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

১০০ কবিরা গুনাহ-১ম পর্ব



মূল: ড. সালেহ বিন আব্দুল্লাহ সাইয়্যাহ
অনুবাদে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইড্ন্স সেন্টার, সৌদি আরব, 
শায়খ কিছু প্রমান দিয়েছে সবগুলি রেফারেন্স দেই নি। 

editor rasikulindia,(islam) তাই আমি এখানে আরো বেশ কিছু প্রমান ও হাদিস এবং ব্যাখ্যা যোগ করেছি। 

এতে আছে:
ক. কবিরা গুনাহের পরিচয়।
. কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা।
. কুফরি পর্যায়ের কবিরা গুনাহ সম...
. সব চেয়ে বড় গুনাহ।
ঙ. সাতটি ধ্বংসাত্মক গুনাহ।
চ. যে সমস্ত পাপরাশী জান্নাতের পথে অন্তরায় সৃষ্টি ক...
ছ. এ ছাড়া অন্যান্য পাপরাশী।

 কবিরা গুনাহ(বড় পাপ) কী?
الكبائر هي كل ذنب أطلق عليه في الكتاب أو السنة أو الإجماع أنه: كبيرة ، أو عظيم ، أو أخبر فيه بشدة العقاب ، أو علق عليه الحد ، أو لعن فاعله ، أو حرم من الجنة
কবিরা গুনাহ হল সেই সব পাপ, যেগুলোকে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়(সর্বসম্মতভাবে) বড় বা মহাপাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে অথবা যে পাপের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে অথবা যে অপরাধের ব্যাপারে ফৌজদারি দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে অথবা যে পাপ করলে পাপীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে অথবা জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

 

কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা:
১. মহান আল্লাহ বলেন,
إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا

"যে সব বিষয়ে সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার তবে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করার।" [সূরা নিসা: ৩১]

তিনি আরও বলেন,
الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ
"যারা বড় বড় গুনাহ ও অশ্লীল কার্যাবলী থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাটো অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত।" 

[সূরা নাজম: ৩২]
২. রসুলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ
"কবিরা গুনাহ(বড় পাপ) থেকে বিরত থাকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যে সংঘটিত সমস্ত পাপ রাশী মোচন হয়ে যায়।" 

[মুসলিম, হাদিস : ২৩৩,৪৪০,৪৪৩,৪৪৯' ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৭৩৩;আহমাদঃ ৯১৯৭, সহীহাহ্ঃ ৩৩২২,মিশকাতুল মাসাবীহঃ ৫৬৪]

ব্যাখ্যা: পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কবীরা গুনাহ ব্যতীত তার মধ্যবর্তী যাবতীয় সগীরা গুনাহ মোচন করে দেয়, তবে কবীরা গুনাহ মোচন করে না। এমনি এক জুমুআ থেকে পরবর্তী জুমুআ এবং এক রামাযান থেকে পরবর্তী রামাযান মধ্যবর্তী গুনাহের জন্য কাফফারাস্বরূপ।

ফায়দাসমূহ :

১) এ সব আমল ভালোভাবে আদায় করা দ্বারা তার মাঝখানে যে সব ছোট গুনাহ সংঘটিত হয়েছে তা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও রহমাতে ক্ষমা পাওয়ার কারণ হবে। 

২) গুণাহসমূহকে ছোট ও বড় দুই ভাগে ভাগ করা।

কুফরি পর্যায়ের বড় পাপ সমূহ সবচেয়ে বড় পাপ ধ্বংসাত্মক পাপ সমূহ

 

১. আল্লাহর সাথে শিরক(অংশী স্থাপন) করা:

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أَلا أُنَبِّئُكُمْ بأَكْبَرِ الكَبائِرِ قُلْنا: بَلَى يا رَسولَ اللَّهِ، قالَ: الإشْراكُ باللَّهِ
সব চেয়ে বড় পাপ কোনটি তা কি তোমাদেরকে জানাবো না? তা হল, আল্লাহর সাথে শিরক (অংশী স্থাপন) করা।[বুখারীঃ ৭,৩১,]মুসলিম]
২. নামাজ পরিত্যাগ করা:

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ليسَ بينَ الكفرِ والإيمانِ إلَّا تركُ الصَّلاة
মুসলিম এবং কাফের-মুশরিকের মাঝে নামাজ পরিত্যাগ ব্যতিরেকে অন্য কোন পার্থক্য নেই।” [মুসলিম: ৮২, আবূ দাঊদ: ৪৬৭৮, নাসায়ী:463,৪৬৪, তিরমিযী: ২৬২০,2621,ইবনু মাজাহ্: ১০৭৮]
৩-৫. মানুষ হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া:

 

রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলেন, সব চেয়ে বড় পাপ কোনটি তা কি তোমাদেরকে বলব না? তা হল:
الإشْرَاكُ باللَّهِ، وعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وقَتْلُ النَّفْسِ، وشَهَادَةُ الزُّورِ
আল্লাহর সাথে শিরক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।

[বুখারী হা/২৬৫৩,৫৯৭৬,৬৮৬১, ৬৬৭৫; মুসলিম হা/৮৬,৮৮,৮৭; নাসায়ীঃ ৪০১৩, আবূ দাঊদঃ ২৩১০, তিরমিযীঃ ৩১৮২, ইরওয়াঃ ২৩৩৭, সহীহ আত্ তারগীবঃ ২৪০৩]

আবূ বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড়(কবীরাহ) গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেবো না?” তিনবার বললেন। আমরা বললাম, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, “আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিতার নাফরমানী করা, তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন, তারপর উঠে বসলেন এবং বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।” তিনি কথাটি বার বার বলতেছিলেন। এমনকি আমরা বললাম যদি তিনি চুপ হতেন। [ সহীহ- মুত্তাফাকুনআলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যারাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন, আমি কি তোদেরকে কবীরাহ গুনাহ কী জানিয়ে দিব না? অতঃপর তিনি এই তিনটি উল্লেখ করলেনসেগুলো হলো: আল্লাহর সাথে শরীক করা। এটি হলো মাকামে উলুহিয়্যাতের ওপর সীমা লঙ্গন করা এবং আল্লাহ তাআলার অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে তা এমন সব অক্ষম সৃষ্টিকে দেওয়া যারা তার উপযুক্ত নয়। মাতা-পিতার নাফরমানি করা জঘন্য অপরাধ। কারণ, তা হলো সবচেয়ে নিকটতম লোককে মন্দ আচরণ দ্বারা অনুগ্রহের প্রতিদান দেওয়া। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। এটি সব ধরনের মিথ্যা কথা ও অপবাদকে শামিল করে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রতিপক্ষের সম্পদ হনন করা বা তার ইজ্জত সম্মান ইত্যাদির ওপর আঘাত করা।

ফায়দাসমূহ

১)এ হাদীস থেকে শিক্ষনীয় হলো শরীআতের বিধানসমূহকেআমি কি জানিয়ে দিবো না?” পদ্ধতির মাধ্যমে তুলে ধরা। 

২)সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো, আল্লাহর সাথে শরীক করা। কারণ, তিনি শরীক করাকে সকল কবীরা গুনাহের উপরে রেখেছেন এবং এটিকে সবচেয়ে বড় গুনাহ হিসেবে গণ্য করেছেন। এর স্বপক্ষে দলিল হলো আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী, {إن الله لا يَغْفِرُ أن يشرَكَ به وَيَغْفِرُ مَا دونَ ذلِكَ لِمَنْ يشَاء}. “আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্য গুনাহগুলোকে তিনি যার জন্যে চান ক্ষমা করেন।” 

৩)মাতা-পিতার হকের গুরুত্ব। কারণ, তিনি আল্লাহর হকের সাথে তাদের হককে সংযুক্ত করেছেন। 

৪) মুসলিম সমাজে মিথ্যা সাক্ষী ও তার খারাপ প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক; হোক সেটি চারিত্রিক বিষয়ে বা সামাজিক জীবনের অন্য কোনো বিষয়ে।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনআস রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাবীরাহ গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা, মাতা-পিতার অবাধ্যাচরণ করা,কোনো প্রাণ হত্যা করা ও মিথ্যা কসম খাওয়া।”  

হীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা এ হাদীসটিতে কয়েকটি গুনাহ উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলোকে কবীরাহ বলে বিশেষিত করা হয়েছে। এই নামকরণ করার কারণ হলো, তার ক্ষতি গুনাহকারী ব্যক্তি ও সকল মানুষের উপর দুনিয়া ও আখিরাতে অনেক বড় হয়। প্রথমটি হলো আল্লাহর সাথে শরীক করা, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে কুফরি করা, যেমন তার সাথে অন্য কাউকে ইবাদত করা ও স্বীয় রবের ইবাদতকে অস্বীকার করা। দ্বিতীয়টি হলো “মাতা-পিতার নাফরমানী করাঅর্থাৎ, মাতা-পিতা বা তাদের যে কোনো একজনের সাথে এমন কোনো কর্ম করা যা তাকে কষ্ট দেয়। যেমন, তাদের সম্মান না করা, তাদের গাল দেওয়া, তাদের অধিকার আদায় না করা এবং সন্তানদের প্রতি যখন মুখাপেক্ষী হয় তখন তাদের যত্ন না নেয়া। তৃতীয়টি হলো “নফসকে হত্যা করা” অন্যায়ভাবে ও সীমালঙ্ঘন করে। তবে কোনো ব্যক্তি যদি কাসাস ও অন্য কোনো কারণে হত্যার উপযুক্ত হয় সে এ হাদীসের অর্থের অন্তর্ভুক্ত হবে না। তারপর মিথ্যা শপথ থেকে ভয় দেখানোর মাধ্যমে হাদীসটি শেষ করা হয়। আর গুমূস (ডুবে যাওয়া) দ্বারা নামকরণ করার কারণ মিথ্যা কসমকারী পাপে অথবা জাহান্নামের আগুনে ডুবে যাবে, কারণ সে জানা স্বত্বেও মিথ্যা শপথ করেছে।

 ফায়দাসমূহ:

১) এসব গুনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্ক থাকা। কারণ, এগুলো কবীরা গুনাহ। 

২) কয়েক প্রকার শপথের বর্ণনা: এক. ইয়ামীনে গুমুস, এটি শপথকারীকে জাহান্নামে ডুবিয়ে দেয়। দুই. ইয়ামীনে মুনআকিদাহ, এটিতে শপথকারী কোনো কাজ করা বা ছাড়ার ওপর কসম করে। যখন সে তা ভঙ্গ করবে তাকে অবশ্যই কাফফারা দিতে হবে। তিন. অনর্থক শপথ। ব্যক্তি এ শপথ করার ইচ্ছে করে না, তবে তার মুখ থেকে এমনিতে বের হয়। যেমন কাল্লা (কখনোই না), ওয়াল্লাহি (আল্লাহর শপথ), বালা (হ্যাঁ), ওয়াল্লাহি (আল্লাহর শপথ)। 

৩) গুনাহের দিক বিবেচনায় এগুলো অধিক মারাত্মক হওয়ার কারণে হাদীসে এ চারটি উল্লেখ করা হয়েছে অন্যথায় শুধু এ চারটিতে কবিরা গুনাহ সীমাবদ্ধ রাখা উদ্দেশ্য নয়।

৬. পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা:

 

রসুলুল্লাহ(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম) বলেন,

إنَّ مِن أكبَرِ الكَبائِرِ أنْ يَلعَنَ الرجُلُ والِدَيه قالوا يا رسولَ اللهِ وكيفَ يَلعَنُ الرجُلُ أبَوَيه ؟ قال: يَسُبُّ الرجُلُ الرجُلَ فيَسُبُّ أباه ويَسُبُّ الرجُلُ أُمَّه فيَسُبُّ أُمَّه

অন্যতম বড় পাপ হল, পিতা মাতাকে অভিসম্পাত করা। জিজ্ঞেস করা হল, মানুষ আবার কিভাবে পিতা মাতাকে অভিসম্পাত করে? তিনি বললেন, “একজন মানুষ যখন অন্যের পিতা মাতাকে গালি দেয় তখন সেও প্রতিউত্তরে তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়।[বুখারী ৫৯৭৩, মুসলিম ২৭৩]

৭-১১.সাতটি ধ্বংসাত্মক অপরাধ:

 

আবূ হুরায়রাহ্(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اجْتَنِبُوا السَّبْعَ المُوبِقَاتِ قالوا: يا رَسُولَ اللَّهِ، وَما هُنَّ؟ قالَ: الشِّرْكُ باللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَومَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلَاتِ
তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক অপরাধ থেকে দূরে থাক। (১) আল্লাহর সাথে শিরক, (২) জাদু-টোনা, (৩)শারী’আতের অনুমতি ব্যতীত কাউকে(অন্যায়ভাবে) হত্যা করা। (৪) সুদ খাওয়া (৫) অন্যায়ভাবে) ইয়াতীমের মাল খাওয়া বা এতিমের সম্পদ ভক্ষণ (৬) যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন এবং (৭)
নির্দোষ ও সরল স্বভাবওয়ালা সতী-সাধ্বী মুমিন নারীর প্রতি (জিনার) অপবাদ।” 

[সহীহ : বুখারী ২৭৬৭, মুসলিম ৮৯, নাসায়ী ৩৬৭১, আবূ দাঊদ ২৮৭৪, শু‘আবুল ঈমান ৪০০০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৬১, ইরওয়া ১২০২, সহীহ আল জামি‘ ১৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৩৮]

ব্যাখ্যাঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে সাতটি ধ্বংসকারী পাপ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সেগুলো কী? তখন তিনি তা বর্ণনা করলেন যে, সেগুলো হলো,

(১) যেভাবেই হোক আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করে তার সাথে শরীক করা। তিনি শির্কের দ্বারা শুরু করলেন। কেননা তা সবচেয়ে বড় গোনাহ। (২) আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীআতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা। (৩) যাদু করা (৪) সুদ গ্রহণ করা, ভক্ষণ করে হোক অথবা অন্য যে কোনো উপায়ে স্বার্থ হাসিল করে হোক। (৫) যার পিতা মারা গেছে এমন শিশুর সম্পদে সীমালঙ্গন করা (সম্পদ গ্রাস করা) (৬) কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধকালে রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবওয়ালা সতী-সাধ্বী নারীকে যিনার অপবাদ দেওয়া।

 ফায়দাসমূহ

1.   শিরক হারাম হওয়া। এটি সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ এবং মহাপাপ। 

2.  যাদু হারাম হওয়া। এটি বিধ্বংসী কবীরাহ গুনাহের অন্যতম এবং ইসলাম ভঙ্গকারী। 

3.  অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা হারাম। 

4. ন্যায়সঙ্গতভাবে কাউকে হত্যা করা বৈধ। যেমন, কিসাস হিসেবে হত্যা করা, মুরতাদ হওয়া ও বিবাহের পর ব্যভিচার করার কারণে হত্যা করা। 

5.   সুদ হারাম হওয়া এবং এর পরিণতির ভয়াবহতা। 

6.   ইয়াতীমের সম্পদের ওপর সীমালঙ্গন করা হারাম। 

7.  যুদ্ধের ময়দান থেকে ফলায়ন করা হারাম। 

8.  কাউকে ব্যভিচার ও সমকামীতার অপবাধ দেওয়া হারাম। 

9.  কাফেরকে অপবাধ দেওয়া কবীরাহ গুনাহ নয়। 

যে সব গুনাহ জান্নাতে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে:


১২. ঈমান না আনা:

 

রসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘ঈমানদার ব্যাতিত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।‘ [ বুখারীঃ, মুসলিম]

তিনি আরও বলেছেন,

তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না।” [সহিহ মুসলিম, হা/৫৪]

 

১৩. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া:

রসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” 

[ সহীহ মুসলিমঃ ৪৬,  ১৮১ নং; (বুখারী: ৬০১৬, মুসলিম:)]

আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।” [ হাদিস সম্ভারঃ ১৭৬৬]

____________________________________________________________ 

১৪. অহংকার করা:

রসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [মুসলিম, হা/৯১]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু_আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”(এ কথা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক,(তাহলে সেটাও কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?)’তিনি বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে প্রত্যাখান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।

সহীহ-এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। [ ১৬৭, ১৬৮,(ই.ফা. ১৬৮; ই.সে. ১৭৪); (ই.ফা. ১৬৯; ই.সে. ১৭৫)]

ব্যাখ্যা আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এ হাদীসটি হুমকির হাদীসসমূহের একটি হাদীস। সুতরাং, শরঈ প্রমাণাদি দ্বারা তার ব্যাখ্যা করা জরুরী। যেমন, যার অন্তরে অহংকার রয়েছে, তার অহংকার হয়তো সত্যকে প্রত্যাখ্যান ও তাকে অপছন্দ করে হবে, এমতাবস্থায় সে অবশ্যই কাফির চির জাহান্নামী, কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কারণ, আল্লাহর বাণী রয়েছে, “তা এ কারণে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে, ফলে আল্লাহ তাদের আমলসমূহ ধ্বংস করে দেন।(সূরা মুহাম্মদআয়াত: ৯)।

আর যদি অহংকার মাখলুকের ওপর হয় এবং নিজেকে অন্য মাখলুকের চেয়ে বড় মনে করার কারণে হয়, কিন্তু সে অহংকার করে আল্লাহর ইবাদত থেকে বিরত থাকে নি, তার সম্পর্কে এ হুমকি এসেছে যে, সে প্রথম দলের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল যখন এ হাদীসটি বললেন, তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড় সুন্দর হোক, তার জুতো সুন্দর হোক, তাহলে এটাও কি অহংকার গণ্য হবে?’ তিনি বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। তিনি স্বীয় সত্ত্বায় সুন্দরস্বীয় কর্মে সুন্দর এবং স্বীয় সকল গুণে সুন্দর। মহান আল্লাহ থেকে যা কিছু প্রকাশ পায় তা সবই সুন্দর। অসুন্দর নয়। আর তার বাণী: “সুন্দরকে ভালোবাসেন” অর্থাৎ, আল্লাহ সৌন্দর্য গ্রহণ করাকে পছন্দ করেন এ অর্থে যে, একজন মানুষ কাপড়ে, জুতোয়, শরীরে ও তার যাবতীয় বিষয়ে সৌন্দর্য অবলম্বন করুক আল্লাহ তা পছন্দ করেন। কারণ, সৌন্দর্য গ্রহণ অন্তরসমূহকে মানুষের দিকে আকৃষ্ট করে এবং তাকে মানুষের নিকট প্রিয় করে দেয়, যা নোংরামির বিপরীত, যে নোংরামিতে মানুষের চুল অথবা কাপড় অথবা পোশাক অসুন্দর দেখায়।

১৫. চোগলখোরি ও পরনিন্দা করা:

 

‘‘তুমি অনুসরণ করো না এমন প্রত্যেক ব্যক্তির যে কথায় কথায় কসম খায়, লাঞ্ছিত, পরনিন্দুক, চুগলখোর, কল্যাণকর কাজে বাধা প্রদানকারী, সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, রূঢ় স্বভাবের অধিকারী এবং সর্বোপরি সে কুখ্যাত। এ জন্য অনুসরণ করো না যে, সে ব্যক্তি ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী’’। (ক্বালাম : ১০-১৪)

রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

চুগলখোর বা পর নিন্দা কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [সহিহ মুসলিম, হা/১০৫]
تَجِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللَّهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ
কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে, যে ছিল দু মুখো- যে এক জনের কাছে এক চেহারা এবং আরেক জনের কাছে আরেক চেহারা নিয়ে হাজির হতো।‘ [ সহিহ মুসলিমঃ ২৫২৬]

ব্যাখ্যা:চোগলখোরদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন হুমকি সম্পর্কে সংবাদ দেন। আর তা হলো, ফাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের কথা অন্যের কাছে বহন করা। অর্থাৎ সে শুরুতে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং তার গুনাহ অনুযায়ী তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাত্তাত হলো নামীমাহকারী (চোগলখোর)এ হাদীসের কারণে তার কর্মটি কবীরাহ গুনাহ। [বুখারী ৬০৫৬; মুসলিম ১০৫]

ফায়দাসমূহ:

১)চোগলখোরী করা কবীরাহ গুনাহ। কারণ, তাতে খারাপ প্রভাব ও ভয়ানক পরিণতি সৃষ্টি হয়। 

২)এ শরী‘আতের ভিত্তি এমন সব বিষয়ের ওপর যাতে রয়েছে মুসলিমদের মাঝে ভালোবাসা। 

কেউ কারোর নিকট অন্যের ব্যাপারে চুগলি করলে তার করণীয় হবে ছয়টি কাজ।

যা নিম্নরূপ:

ক. তার কথা একেবারেই বিশ্বাস করবে না। কারণ, সে ফাসিক। আর ফাসিকের সংবাদ শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।

খ. তাকে এ মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে এবং তাকে সদুপদেশ দিবে।

গ. তাকে আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য ঘৃণা করবে। কারণ, সে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটও সত্যিই ঘৃণিত।

ঘ. যার সম্পর্কে সে চুগলি করেছে তার সম্পর্কে আপনি খারাপ ভাববেন না।

ঙ. এরই কথার কারণে আপনি ওর পেছনে পড়বেন না।

চ. উক্ত চুগলি সে অন্যের নিকট বর্ণনা করতে যাবে না।

 

১৬. আত্মহত্যা করা:
রসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَهْوَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ، يَتَرَدَّى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ تَحَسَّى سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَسَمُّهُ فِى يَدِهِ ، يَتَحَسَّاهُ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ، فَحَدِيدَتُهُ فِى يَدِهِ ، يَجَأُ بِهَا فِى بَطْنِهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا

যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে এবং সেখানে সর্বদা উপর থেকে নিচে নিক্ষিপ্ত হতেই থাকবে অনন্তকাল। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামের আগুনে বিষ হাতে নিয়ে সদা-সর্বদা তা ঢকঢক করে পান করতেই থাকবে ধরে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে সে জাহান্নামের আগুনে ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে নিজের পেট ওফাড়-ওফাড় করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে।[ সহীহ বুখারীঃ ৫৪৪২, সহীহ মুসলিমঃ ১০৯]

১৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা:

 

রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [সহিহ মুসলিম, হা/২৫৫৬]

আবু মূসা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও যাদুতে বিশ্বাসী”। 

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর নেক আমল আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেন না।আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে(আল্লাহ তা‘আলার নিকট) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না”। 

[ আহমদ, হাদীস নং ১৯৫৮৭; হাকিম, হাদীস নং ৭২৩৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৫৩৪৬] [ আহমদ, হাদীস নং- ১০২৭৭]

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনসে ব্যক্তি সম্পর্ক রক্ষাকারী নয় যে কেবল পরিপূর্ণভাবে শোধ করে। বরং সেই তো প্রকৃত সম্পর্ক রক্ষাকারী যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হলে তা জোড়া লাগায়।” সহীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরবাণী: পরিশোধকারীকে সম্পর্ক স্থাপনকারী বলা যাবে না” এর অর্থ: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও আত্মীয়দের প্রতি দয়া করার ক্ষেত্রে সে লোক পরিপূর্ণ নয় যে ইহসানের বিনিময়ে ইহসান করে। বরং প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সে ব্যক্তি যার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলে সে সম্পর্ক জোড়া দেয়, এমনকি যদি তারা তাকে কষ্ট দেয়, সে কষ্টের মোকাবেলা করে ইহসান দ্বারা। এ লোকই প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী। সুতরাং একজন মানুষের ওপর দায়িত্ব হলো, নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশি ও সাথীদের কষ্টের ওপর ধৈর্য ধারণ করা। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিপক্ষে তার জন্য একজন সাহায্যকারী সব সময় থাকবে। তিনি লাভবান হবেন আর তারা হবে ক্ষতিগ্রস্ত। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা হয় সম্পদ দিয়েও প্রয়োজনের সময় সহযোগিতা করে, অনিষ্ট দূর করে, মুখের হাসি দিয়ে এবং তাদের জন্য দো‘আ করে। মোটকথা, সাধ্য অনুযায়ী উপকার করা এবং ক্ষতিকে প্রতিহত করা। ইসলাম আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তবে যে আত্মরক্ষামূলক বা অনুশাসনের জন্যে সম্পর্ক রাখা ছাড়বে তার এ কাজ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার অন্তর্ভুক্ত বলা যাবে না। যেমন, কেউ যদি মনে করে যে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলে তার আত্মীয় সঠিক পথে ফিরে আসবে, দীনের বিরোধীতা করা ছেড়ে দিবে অথবা সে তার নিজের ও পরিবারের ব্যাপারে আশঙ্কা করে যে, যদি দীনের বিরোধীতার ওপর তাদের সাথে সম্পর্ক রাখে, তাহলে সংক্রমণ ব্যাধি তার ও তার অধীনদের মাঝেও সংক্রমিত হবে।

 ফায়দাসমূহ:-

১) আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি উৎসাহ। 

২) যাবতীয় আমল কেবল আল্লাহর জন্য করা ফরয। যদি তাতে দুনিয়াতে নগদ কল্যাণ বয়ে না আনে; তবে তা আখিরাতে অবশ্যই স্থায়ী কল্যাণ হবে। 

৩)মুসলিমের প্রতি খারাপ আচরণ মুসলিমকে খারাপ আচরণকারীর প্রতি উপকার করা থেকে বিরত রাখে না। 

৪)শর‘ঈভাবে গ্রহণযোগ্য সু-সম্পর্ক হলো, যে তোমার সাথে সম্পর্ক চিহ্ন করলো তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। যে তোমার ওপর যুলম করবে তুমি তাকে ক্ষমা করবে। যে তোমাকে বঞ্চিত করবে তুমি তাকে প্রদান করবে। বস্তুত বিনিময় দেওয়া ও শোধ করার নাম সুসম্পর্ক বজায় রাখা নয়। 

৫)হাদীসে বলা হয়েছে যে, অপর পক্ষ থেকে বিনিময় প্রদান করাকে পরিপূর্ণ সু-সম্পর্ক বলা যায় না। কারণ, এটি হলো কেবলই কল্যাণ বিনিময় করা। এতে আত্মীয় ও দূরের লোক একই সমান। 

৬)আত্মীয়দের সাথে মুয়ামালার ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হলো, তাদের দুর্ব্যবহারের বদলা ইহসান দ্বারা দেবে।

১৮. হারাম খাওয়া:

 

রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍহারাম অর্থের মাধ্যমে (যে শরীরে) মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (অর্থাৎ যে ব্যক্তি হারাম অর্থ ও অবৈধ উপার্জন দ্বারা দেহ গঠন করেছে জাহান্নামের আগুনই তার প্রাপ্য।)” 

[আহমদ, ইবনে হিব্বান। তাখরীজ। সহিহ-মিশকাতুল মাসাবিহ, আলবানি, হা/২৭০৩,২৭৮৭]

 

১৯-২৩. উপকার করে খোটা দানকারী, মাদকাসক্ত (নেশাগ্রস্থ), জাদুর বৈধতায়

বিশ্বাসকারী, গণক ও তকদির (ভাগ্যের লিখন) অস্বীকারকারী:

 

রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,


لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ خَمْسٌ ، مُدْمِنُ خَمْرٍ ، وَلا مُؤْمِنٌ بِسِحْرٍ ، وَلا قَاطِعُ رَحِمٍ ، وَلا مَنَّانٌ ، وَلا كَاهِنٌ
পাঁচ শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না: মাদকাসক্ত, জাদুর বৈধতায় বিশ্বাসী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, উপকার করে খোটা দানকারী এবং গণক।” 

[আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮, ইবনে মাজাহ ৩৩৭৬হাসান-আলবানি], (তারগীব হা/২৩৬৩]
অন্য বর্ণনায় আছে,

لا يدخل الجنة : المنان ولا مدمن خمر ولا مؤمن بسحر و لا مكذب بقدر ولا كاهن
তকদির (ভাগ্যের লিখন) অস্বীকারকারী।[মুসনাদে আহমদ, 
আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ তাকদীর সম্পর্কে। হাদীছ নং- ৪৭০২]

 


২৪.ঋণ পরিশোধ না করা:

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট কোন ঋণগ্রস্ত মৃতের লাশ(জানাজার জন্য) নিয়ে আসা হলে জিজ্ঞেস করতেন, “সে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে কি না?”

যদি বলা হত করেছে, তবে জানাজা পড়তেন। অন্যথায় (সাহাবিদেরকে) বলতেন,



তোমরা তোমাদের সাথীর জানাজা পড়ে নাও।” (কিন্তু তিনি নিজে তাতে অংশ গ্রহণ করতেন না)।

[ সহীহ মুসলিমঃ ১৬১৯]

অন্য হাদিসে রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
শহিদের ঋণ ছাড়া সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।[সহিহ মুসলিম, হা/১৮৮৬]

 

২৫-২৬. পুরুষ বেশধারী নারী ও দাইয়ুস(অসতী স্ত্রীর স্বামী):

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ثَلاثٌ لا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ : الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ ، وَالدَّيُّوثُ ، وَرَجُلَةُ النِّسَاءِ

তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হল, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস (অসতী স্ত্রীর স্বামী)এবং পুরুষ বেশধারী নারী।[সাহীউল জামে: ৩০৪৭-আলবানি, হা/৩৬৩]

দাইয়ুস কাকে বলে?

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ

ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয়, যে তার পরিবারের কুকর্ম(জিনা-ব্যভিচার, অশ্লীলতা)কে স্বীকৃতি দেয়।[মুসনাদ আহমদ, নাসাঈ:২/৬৯, ৫৮৩৯]

 

২৭-২৯. বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক, অহংকারী দরিদ্র:

রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

ثَلاثَةٌ لا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ : شَيْخٌ زَانٍ ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ

আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে পীড়া দায়ক শাস্তি। তারা হল-বৃদ্ধ,ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী দরিদ্র। [মুসলিম, হা/১০৭,২৯৪,২৯৬],সূরাহ্ আল ইমরান আয়াত-৩]

ব্যাখ্যাতিন শ্রেণির মানুষের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না। তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে তাদের গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন নাআর তাদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি: এক, বৃদ্ধ মানুষ, বয়সের ভারে ন্যুব্জ, তবুও যেনা করে। দুই, যে শাসক মিথ্যা বলে এবং তিন, গরীব তবুও অহংকার করে ও অন্যদের নিকৃষ্ট মনে করে।

[মুসনাদ আহমদহাদিস: ৬১১সুনানে নাসায়িহাদিস: ২৫৬৩তিরমিজিহাদিস: ২৬৫বুলুগুল মারামহাদিস : ১৪৫১বুখারিহাদিস : ৫৮৫৬তিরিমিজিহাদিস নম্বর : ১১৭৬ ]

 

৩০. কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক এবং যে ব্যক্তি মানুষের কাছে এমন বিষয় নিয়ে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার নিকট নেই:

রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ ، وَلَا الْجَعْظَرِيُّ

কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” 

[আবু দাউদ, হা/৪৮০১,৪১৬৮ সহিহ- আলবানি]

 

৩১.মুয়াহিদ তথা মুসলিম সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে বসবাসকারী অমুসলিমকে হত্যা করা:

রসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرِحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ ، وَإِنَّ رِيحَهَا تُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا

যে ব্যক্তি কোন মুয়াহিদ তথা মুসলিম সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে বসবাসকারী কোন অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।” [সহিহ বুখারি হা/৩১৬৬]

 

৩২. বিশ্বাসঘাতক শাসক:

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللَّهُ رَعِيَّةً ، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ

যাকে আল্লাহ তায়ালা জনসাধারণের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, কিন্তু সে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং বিশ্বাসঘাতক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।” [সহিহ মুসলিম, হা/১৪২, বুখারি: ৬৬১৮]

 

৩৩-৩৪. মানুষকে প্রহার করা ও মহিলাদের পর্দাহীনতা:

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ ، لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا ، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا

দু'ই প্রকার শ্রেনীর মানুষ জাহান্নামে যাবে যাদের আমি এখনো দেখি নি। (অর্থাৎ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে তাদের আত্মপ্রকাশ হয় নি)(অর্থাৎ আমার পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে)

ক) এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মত লাঠি। এরা তা দিয়ে জনগণকে প্রহার করবে।

খ) এমন এক শ্রেণীর মহিলা, যারা(এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে,(বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে(পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও(পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মতো। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে। 

[সহিহ মুসলিম, হা/২১২৮]

ব্যাখ্যা:

হাদীসটির অর্থদুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করি নি। অর্থাৎ তার যুগ পবিত্র হওয়ার কারণে তিনি তাদের সে যুগে দেখেননি। বরং এরা তার যুগের পরে দেখা দিয়েছে। এটি তার মুজিযা যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার নবীকে সহায়তা করেছেন। উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে- ১-এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। আলেমগণ বলেন, এরা হলো পুলিশ যারা অন্যায়ভাবে মানুষকে প্রহার করে। তাদের কাছে থাকবে গরুর লেজের মতো চাবুক। অর্থাৎ, লম্বা লাঠি যার দ্বারা অন্যায়ভাবে মানুষকে আঘাত করবে। ২-এমন এক শ্রেণির মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে(বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে(পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। এর ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন: তারা তাদের বাস্তবিক কাপড় পরিধান করবে কিন্তু তাকওয়া থেকে উলঙ্গ হবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন(আর তাকওয়ার লিবাস, তাই উত্তম) এ কথার ভিত্তিতে হাদীসটি প্রত্যেক অন্যায়কারী ও অশ্লীল নারীদের শামিল করে যদিও তাদের পরনে মোটা কাপড় থাকে। কারণ, কাপড় দ্বারা উদ্দেশ্য বাহ্যিক কাপড় ও তাকওয়াহীন স্বাভাবিক পরিধেয়। কারণ, তাকওয়া থেকে উলঙ্গ ব্যক্তিই প্রকৃত উলঙ্গ। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন( ولباس التقوى ذلك خير) “আর তাকওয়ার লিবাসই উত্তম লিবাস।” আবার কেউ কেউ বলেছেনপোশাক পরেও উলঙ্গ থাকবে।” অর্থাৎ ‘তাদের পরনে বাহ্যিক কাপড় থাকবে কিন্তু তাদের শরীর ঢাকবে না।’ কাপড় অস্বাভাবিক চিপা বা পাতলা বা খাটো হওয়ার কারণে শরীর ঢাকবে না তাই তারা উলঙ্গ থাকবে। যে সব মহিলারা এ ধরনের কাপড় পরিধান করবে তাদের সবাইকে কাপড় পরহিতা বলা হবে ঠিকই তবে উলঙ্গ। ঝুলিয়ে রাখা/আকর্ষণ করা।” অর্থাৎ বেণী ঝুলে থাকবে, কেউ কেউ এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, সেটা হচ্ছে ঝুলানো সিঁতা/বেণী, যার কারণে চিরুনী এক পাশেই নিয়ে রাখবে(সেটা বারবার আঁচড়ানোর জন্যে)এটাও এক প্রকার ঝুলানো। কারণ, সে তার চুলের সীতা দ্বারা অন্যদের অন্তর তার প্রতি ঝুলিয়ে রাখে। এ ধরনের আকর্ষণ আমাদের নিকট পৌঁছেছে অমুসলিম নারীদের থেকে। নাঊযুবিল্লাহ। কতক মহিলা তাদের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ল। ফলে তারা তাদের চুলকে আঁচড়িয়ে একপাশ দিয়ে ছেড়ে দেওয়াতে তা এক ধরনের আকর্ষণীয় চিরুনি করণ হয়। আবার কেউ কেউ এর অর্থে বলেন, ফিতনায় নিপতিত কারিণী। কারণ, তাদের নির্লজ্জ হয়ে এবং অস্বাভাবিক সাজ-সজ্জা ইত্যাদি গ্রহণ করে বের হওয়া অন্যদেরকে ফিতনায় ফেলে। "مُمِيَلات" শব্দটি দুটি অর্থই শামিল করে। কারণ, নিয়ম হলো যখন কোনো শব্দে দুটি অর্থের সম্ভাবনা থাকে এবং কোনটি প্রাধান্য দেওয়ার কোনো আলামত না থাকে তখন দুটি অর্থের ওপরই তার প্রয়োগ করা যাবে। এখানে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো আলামত নেই এবং উভয় অর্থের ওপর প্রয়োগ করাতে কোনো বাধা নেই। তাই উভয় অর্থকেই শামিল করবে। আর তার বাণী: " مَائِلات " অর্থাৎ হক থেকে বিচ্যুত এবং তাদের ওপর যে লজ্জা শরম থাকা উচিৎ ছিল সেটা থেকেও বিচ্যুত। তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে বাজারে ও রাস্তা-ঘাটে তারা পুরুষের মতে দৌড়ে ও বেধড়ক হাঁটতে থাকে। এমনকি অনেক সময় দেখতে পাবে, অনেক পুরুষও তাদের মতো এ ধরনের হাঁটা হাঁটতে পারবে না। কঠিনভাবে হাঁটা, যমীনে কঠিন আঘাত করা এবং কাউকে পরোয়া না করার কারণে তাকে মনে হবে একজন সৈনিক। অনুরূপভাবে তার সাথী সঙ্গীদের সাথে এমন বড় আওয়াজে হাঁসি ঠাট্টা ও কথা-বার্তা বলে যা কেবল ফিতনাকেই উসকিয়ে দেয়। এ ছাড়াও তারা দোকানে গিয়ে দোকানদারদের সাথে দ্বিধাহীন কেনা-বেচা করা, তাদের সাথে হাসাহাসি করা এবং নানা ধরনের অন্যায়-অনাচারে জড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের মহিলারা নিঃসন্দেহে সত্য বিমুখ। আমরা আল্লাহর কাছে সুরক্ষা চাচ্ছি। তার বাণী: " رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلةতাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুজের মতো।” আল-বুখত: এক ধরনের উট যার রয়েছে লম্বা কুঁজো, ডান দিকে একবার হেলে আবার বাম দিকে একবার হেলে। এ সব মহিলারাও তাদের মাথার চুলগুলোকে উঁচা করে বাঁধে যা উটের কুঁজোর মতো একবার ডানে আরেকবার বামে হেলে। কোনো কোনো আলেম বলেন, এ সব মহিলারা তাদের মাথার উপর পুরুষদের মতো পাগড়ী লাগায় যাতে ওড়না উঁচা হয়ে থাকে এবং তা উটের কুঁজোর মতো হয়। মোট কথা, এ ধরনের মহিলারা এমন সাজ-সজ্জা গ্রহণ করে যা অন্যদেরও ফিতনায় নিপতিত করে। এ সব মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। নাঊযু বিল্লাহ। অর্থাৎ, জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের কাছেও যেতে পারবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর তথা সত্তর বছরের দূরত্বের পথ বা তার থেকেও অধিক দূর থেকে পাওয়া যাবে। তা সত্বেও এ ধরনের মহিলা জান্নাতের কাছেও যেতে পারবে না। নাঊযুবিল্লাহ। কারণ, তারা সঠিক পথ থেকে খারিজ হয়ে গেছে। তারা এমন এক শ্রেণির মহিলায় পরিণত হয়েছেযারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকবে,(পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে।” তার মাথার উপর এমন সাজ সজ্জা রয়েছে যা মানুষকে ফিতনা জড়িত হওয়া এবং সৌন্দর্য প্রদর্শনের দিকে আহ্বান করে। 

[ মিরাকাতুল মাফাতীহ (২৩০২/৬) ইবনে উসাইমীনের রিয়াদুস সালেহীনের ব্যাখ্যা। (৩৭২/৬)]

 

অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহ:

৩৫. পেশাব থেকে পবিত্র না থাকা:

مَرَّ النبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ علَى قَبْرَيْنِ فَقالَ: إنَّهُما لَيُعَذَّبَانِ وما يُعَذَّبَانِ مِن كَبِيرٍ ثُمَّ قالَ: بَلَى أمَّا أحَدُهُما فَكانَ يَسْعَى بالنَّمِيمَةِ، وأَمَّا أحَدُهُما فَكانَ لا يَسْتَتِرُ مِن بَوْلِهِ.

রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা দুটি কবরের নিকট দিয়ে অতিক্রম কালে বললেন, এ দুই করব বাসীর শাস্তি হচ্ছে। কিন্তু বড় ধরণের কোন পাপের কারণে এই শাস্তি হচ্ছে না। অতঃপর বললেন, হ্যাঁ এদের একজন পেশাব থেকে বাঁচত না আর অন্যজন লোকসমাজে চুগলখোরি করে বেড়াত।” [বুখারি ও মুসলিম]

আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফূ হিসেবে বর্ণিত: তোমরা পেশার থেকে সতর্ক থাকো। কারণ, কবরের অধিকাংশ শাস্তি তা হতে”  
সহীহ - এটি দারাকুতনী বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যাএ হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর আযাবের বিভিন্ন কারণসমূহ হতে এমন একটি কারণ বর্ণনা করেন, যেটি সর্বাধিক ব্যাপক। আর তা হলো পেশাব থেকে সতর্ক না হওয়া ও পবিত্রতা অর্জন না করা।

 ফায়দাসমূহ

1.পেশাব থেকে দূরে থাকা এবং তা থেকে বেচে থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যাতে দেহে ও কাপড়ে কোন পেশাব না লাগে। 

2. উত্তম হলো পেশাব লাগার পর খুব তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলা এবং তা থেকে পবিত্র হওয়া। যাতে নাপাকী তার সঙ্গে না থাকে। আর তা দূর করা ওয়াজিব হলো সালাতের সময়। 

3.পেশাব অবশ্যই নাপাক। যখন তা শরীর কিংবা কাপড় বা কোনো স্থানে লাগে তখন সেগুলোকে নাপাক করে দেয়। সেগুলোতে সালাত সহীহ হবে না। কারণ, নাপাকী থেকে পাক হওয়া সালাতের একটি অন্যতম শর্ত। 

4. পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন না করা কবীরাহ গুনাহ। 

5. কবরের আযাব প্রমাণিত। এটি আল্লাহর কিতাব, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। 

6.আখিরাতে প্রতিদান লাভ প্রমাণিত। আর আখিরাতের প্রথম ঘাটি হলো কবর।কবর হয় জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত।

 

৩৬. মিথ্যা কসম খাওয়া:

الكَبائِرُ: الإشْراكُ باللَّهِ، واليَمِينُ الغَمُوسُ

কবিরা গুনাহ হলো, আল্লাহর সাথে শিরক(অংশী স্থাপন) করা ও মিথ্যা কসম খাওয়া।” 

[ বুখারী: ২৩৫৬, ২৩৫৭, ২৪১৬, ২৪১৭, ২৫১৬৬৭৫৬৮৭০৬৯২০)

 

৩৭. মিথ্যা কথা বলা:

রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

آيَةُ المُنافِقِ ثَلاثٌ: إذا حَدَّثَ كَذَبَ

মুনাফিকের আলামত তিনটি। কথা বললে মিথ্যা বলে।

অন্য হাদিসে এসেছে, জাহান্নামে যাবে পাঁচ শ্রেণির লোক(তার মধ্যে একজন হল) মিথ্যাবাদী। [সহিহ মুসলিম]

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর(রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হবে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। .আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে; ২.কথা বললে মিথ্যা বলে; ৩.অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং . বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়। [ (বুখারী পর্ব ২ : /২৪ হাঃ ৩৪, মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৮)]

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু’আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,,’’মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি (১)কথা বললে মিথ্যা বলে। (২)ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে। এবং (৩)আমানত রাখা হলে তাতে খিয়ানত করে।’’ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে,’’যদিও সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে ও ধারণা করে যে,সে মুসলিম।’’

[সহীহুল বুখারী ৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৩১৭৮, মুসলিম ৫৮, তিরমিযী ২৬৩২, নাসায়ী ৫০২০, আবূ দাউদ ৪৬৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫, ৬৮৪০]

 

৩৮. জিনা-ব্যভিচার করা:

মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

তোমরা জেনার ধারে কাছেও যেও না। কারণ, এ এক অশ্লীল কর্ম যার পরিণাম খুব মন্দ।[ইসরা: ৩২]

 

৩৯. সমকামিতা:

মহান আল্লাহ লুত(আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্প্রদায়ের বিকৃত রুচি সম্পন্ন লোকদের লক্ষ্য করে বলেন,

أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِينَ

তোমরা(সমকামিতার মত এ ধরনের) নির্লজ্জ কর্মে লিপ্ত হচ্ছে?! ইতোপূর্বে সমগ্র বিশ্বে তোমাদের মত এ কাজ আর কেউ করেনি। [আরাফ: ৮০]

 

৪০. সুদ খাওয়া:

রাসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

لَعَنَ رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقالَ: هُمْ سَوَاءٌ

নবি(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুদ গ্রহীতা, দাতা, লেখক এবং সাক্ষীকে অভিশাপ করে বলেন, এরা সবাই সমান(গুনাহগার)।[সহিহ মুসলিম]

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,‘যারা সুদ খায় তারা জিনে ধরা পাগল ব্যক্তির মতো হাশরের মাঠে দাঁড়াবে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে,তারা বলেছে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।

[সুরাহ বাকারাঃ ২৭৫,২৭৯]

সুদের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আরও কয়েক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন,‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেও না আল্লাহকে ভয় করো। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে।[সূরা আল ইমরান: ১৩০]

মানুষের সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক আল্লাহর দৃষ্টিতে তা সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাক তা বৃদ্ধি করে। প্রকৃতপক্ষে জাকাত প্রদানকারীরাই সমৃদ্ধি আনে। 

[সূরা রূম: ৩৯]

আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা।

[ সুনান ইবনু মাজাহ:২/২২৭৪, ৩/২২৭৫]

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদখোর, সূদদাতা, সূদের সাক্ষীদ্বয় এবং সূদের হিসাব রক্ষক বা দলীল লেখককে অভিসম্পাত করেছেন।

[ মুসলিম: ৪১৭৭, ১৫৯৭, তিরমিযী: ১২০৬, আবূ দাউদ: ৩৩৩৩, আহমাদ: ৩৭২৯]

ইবনে মাসউদ(রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই। সুনান ইবনু মাজাহ: ৭/২২৭৯, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।]

সামুরাহ-ইবনু-জুনদুব(রাঃ),হতে বর্ণিত।

তিনি-বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজ রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানে লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? সে বলল, যাকে আপনি(রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হল সুদখোর।

[সহীহ_বুখারী(তাওহীদ_পাবলিকেশন),২০৮৫;(৪৪৫),(আধুনিক_প্রকাশনীঃ-১৯৪০,ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫৫)]

_______________________________________________________

৪০/1: হাদীস: যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে আসলো তারপর তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করল এবং তাকে বিশ্বাস করল। তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না।

হাফসা বিনত উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,”যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে আসলো তারপর তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করল এবং তাকে বিশ্বাস করল তার চল্লিশ দিনের স্বলাত কবুল করা হবে না।’’

[সহীহ মুসলিম এটি বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সংবাদ দেন, যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে যায় অর্থাৎ যে গাইবী ইলমের দাবি করে তার নিকট গিয়ে গাইবী কোন বিষয় জিজ্ঞাসা করে এবং তার কথা বিশ্বাস করে আল্লাহ তাকে চল্লিশ দিনের সালাতের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত করবে। এটি সে যে গুনাহ করেছে এবং কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হয়েছে তার শাস্তি। আর যে বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি কুফরী করল। যেমনটি অপর একটি হাদীসে এসেছে। যে তার কাছে আসল তার শাস্তি যদি এ হয় তাহলে গণকের শাস্তি কি হতে পারে! এ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই এবং ক্ষমা চাই।

ফায়দাসমূহঃ

  1. গণকের কাছে যাওয়া, তাদের কাছে গাইবী কোন বিষয়ে জানতে চাওয়া এবং তাতে তাদের বিশ্বাস করা নিষিদ্ধ এবং এটি কুফর। 
  2. গণনা করা হারাম এবং এটি কবীরাহ গুনাহ। 
  3. গুনাহ করার শাস্তি হিসেবে কখনো মানুষ নেক আমলের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়।

Post a Comment

0 Comments