▌আবু ত্বহা আদনানের মতে ঐক্যের খাতিরে বিদাতিদের বিরুদ্ধে বলা যাবে না বক্তা আদনান বলেছেন,>

 

▌আবু ত্বহা আদনানের মতে ঐক্যের খাতিরে বিদাতিদের বিরুদ্ধে বলা যাবে না বক্তা আদনান বলেছেন, “প্রত্যেকটা মুসলিমদের কমিউনিটির মধ্যে, যার মধ্যেই যেই ভালোটুকু আছে, ভালোটা আমি যাচাই করব কুরআন-সুন্নাহ দিয়ে, কুরআন-সুন্নাহর সাথে যেটা মিলবে আলহামদুলিল্লাহ, ওইটুকু নিতে আমার কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু যেগুলো নেগেটিভ বিষয়, সেগুলো এখন উম্মাহর ঐক্যের খাতিরে এড়িয়ে যাওয়া লাগবে না?

ওই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যদি পড়ে থাকি, আমরা কি ওদের সাথে ফাইট করতে পারব?” [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/V2aIg0YDYSQ (৬:৫৬ মিনিট থেকে ৭:৪১ মিনিট)] হয়তো এজন্যই আরেক বক্তব্যে বক্তা আদনান বলেছেন, “আমরা শতধা বিভক্ত, শত শত দলে বিভক্ত। এবং কারও সাথে কারও মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং নাই, সবাই মনে করছে, আমি সত্য, আমি হকের মানদণ্ড, বাকিরা সব বাতিল, আমি একাই হক।” [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/apyxaUbTutk (০:৩৮ মিনিট থেকে ১:১৬ মিনিট)] অথচ আদনান সাহেব নিজেই মুসলিমদের মধ্যকার বাতিল ও বিদাতি ফের্কাগুলোর সমালোচনা করেন এবং তাদেরকে বাতিলপন্থি হিসেবে প্রদর্শন করেন। যেমন তিনি বলেছেন, “এরপর মুসলিমদের মাঝে আস্তে আস্তে ফিতনা বাড়তে শুরু করেছে। একদল মানুষ বের হয়েছে, যারা বলেছে যে, আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু, তিনি নবি। নাউজুবিল্লাহ। এরা তাঁকে নিয়ে এত বেশি বাড়াবাড়ি করেছে যে, তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। আরেকদল লোক বের হয়েছে, যারা বলেছে, কবিরা গুনাহগার ব্যক্তি হলেই কাফের, একে হত্যা করা লাগবে, এরা হয়ে গেছে খারেজি। আরেকদল লোক বের হয়েছে, এরা বলে, তাকদির বলতে কিচ্ছু নাই। আরেকদল লোক বের হয়েছে, যারা বলে, মানুষের কর্মের কোনো স্বাধীনতা নাই। আরেকদল বের হয়েছে, যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত হলেই কুরআন-সুন্নাহ মানব, নাহলে মানব না। এরকম করে শিয়া, খারেজি, মুতাজেলা, মুরজিয়া, জাহমিয়া, জাবারিয়া, কাদারিয়া কত যে দল বের হয়েছে, আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে উম্মাহ বিভক্ত হতে শুরু করেছে।” [দেখুন: https://youtu.be/vkgq45QV7GU (০:৪৮ মিনিট থেকে ১:৪৩ মিনিট)] আবু ত্বহা আদনান আরেক বক্তব্যে বাতিলপন্থি মুসলিমদের সমালোচনা করে বলেছেন, “মুসলিমদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা বলে এখন, কুরআন মানি, হাদিস মানি না। মুসলিমদের মধ্যে বহু মানুষ এখন তাকদিরে বিশ্বাস করে না।” [দেখুন: https://youtu.be/njzATNqQx5Q (১৪:০৪ মিনিট থেকে ১৪:১৫ মিনিট)] প্রিয় পাঠক, এতদ্‌ব্যতীত আদনান সাহেব যে উম্মতের অধিকাংশ উলামাদেরকে হালুয়া-রুটি-বিরানি খাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করে জঘন্য সমালোচনা করেছেন, সেটা ভুলে যাবেন না দয়া করে। সে বিষয়ে আমরা ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে আলোচনা করেছি। আমার ব্যক্তিগত একটি পর্যবেক্ষণ আপনাদের সাথে শেয়ার করি। যারা বিদাতিদের খণ্ডন করার এবং বাতিলপন্থিদের সমালোচনা করার বিরোধিতা করে, আমি আজ পর্যন্ত তাদের কাউকে এমন পাইনি, যে কিনা অন্যের সমালোচনা করে না! সুতরাং যারাই বিদাতিদের বিরুদ্ধে সমালোচনার বিরোধিতা করে, তাদেরকে ভালোমতো তদন্ত করুন, আল্লাহর তৌফিকে আপনি অবশ্যই তাদের মধ্যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখতে পাবেন ইনশাআল্লাহ। যেমনটা আমরা ক্ষণকাল পূর্বেই বক্তা আবু ত্বহা আদনানের মাঝে দেখতে পেলাম। আবু ত্বহা আদনানের উক্ত ডাবল স্ট্যান্ডার্ডই তার উল্লিখিত বক্তব্যের খণ্ডন হিসেবে যথেষ্ট। তথাপি আমরা যথাক্রমে দুটো পয়েন্টে তার দাবির অসারতা প্রমাণ করব, ইনশাআল্লাহ। প্রথম পয়েন্ট : বিদাতিদের সমালোচনা কি আসলেই উম্মতের ঐক্য নষ্ট করে? দ্বিতীয় পয়েন্ট : ঐক্যের খাতিরে ইসলামি দলগুলোর ভুল এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ উলামাদের অভিমতের উল্লেখ। · প্রিয় ভাইয়েরা, অনেক সুবিধাবাদী বিদাতি যখন দেখে, সালাফিরা তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শকে আল্লাহপ্রদত্ত বিধান দিয়ে খণ্ডন করছে, তখন তারা এক অভিনব ধোঁকা ও চাতুরির আশ্রয় নেয়। এই সময় তারা ‘ঐক্যের ফেরিওয়ালা’ বনে যায়। এসব বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করে যে, সালাফিরা উম্মাহর ঐক্য নষ্ট করছে, উম্মাহর বিপর্যয়ের জন্য এরাই দায়ী! অথচ কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফদের মানহাজ থেকে নিজেরা বিচ্যুত হয়ে এবং মানুষকে বিচ্যুত করে তারাই উম্মাহর মহান ঐক্য নষ্ট করেছে। ইসলাম ঐক্যের নামে মোসাহেবি করতে শেখায়নি, ঐক্যের নামে নিজের স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে চাটুকারিতা করতে বলেনি। ইসলাম সমাধান বাতলে দিয়েছে। উম্মাহর মধ্যে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে, আল্লাহ ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ইমান এনে থাক। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর (পন্থা)।” [সুরা নিসা: ৫৯] রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত খলিফাগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।” [আবু দাউদ, হা: ৪৬০৭; সনদ: সহিহ] এ আয়াত ও হাদিসে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আদর্শ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আদর্শ বর্জন করে মোসাহেবি করতে বলা হয়নি। এজন্য বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাকিহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসুলবিদ আশ-শাইখুল আল্লামা ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) ঐক্য প্রতিষ্ঠার সঠিক পদ্ধতি বাতলে দিয়ে বলেছেন, وأما شمل الأمة، لا شك أنه واجب، كما قال عز وجل: «وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا» لكن، واجب على أي شيء؟ على هدي النبي ﷺ وأصحابه، لا على الأهواء، «اعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّه»، بدأ بِــالحَـبْـلِ قبل أن يقول «جَمِيعًا»، وحبل الله دينه وشريعته، وأما أن نتفق بالمداهنة، هذا غلط، لهذا نجد العلماء رحمهم الله يردون على المبتدعة، ويرون أن الواجب عليهم الرجوع إلى الحق. “আর উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারটি হলো, নিঃসন্দেহে এটি ওয়াজিব। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো একযোগে এবং বিভক্ত হয়ো না।” (সুরা আলে ইমরান: ১০৩) কিন্তু ঐক্য ওয়াজিব কীসের ওপর? নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদের আদর্শের ওপর, প্রবৃত্তির ওপর না। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো।’ তিনি ‘একযোগে’ বলার পূর্বে ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলে শুরু করেছেন। আর আল্লাহর রজ্জু হলো তাঁর দিন ও শরিয়ত। পক্ষান্তরে আপসের ভিত্তিতে ঐকমত্যে আসা ভুল। একারণে আমরা আলিমদের দেখতে পাই যে, তাঁরা বিদাতিদের খণ্ডন করতেন এবং তাদের জন্য হকের দিকে ফিরে আসা ওয়াজিব মনে করতেন।” [লিকাউল বাবিল মাফতুহ; লিকা নং: ১৯৪; অডিয়ো লিংক: https://tinyurl.com/y7el3r4l (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট)] সালাফি মানহাজ বিরোধী বিদাতি মানহাজগুলোই মূলত ঐক্য বিনষ্ট করে, সালাফি মানহাজ অনুযায়ী বিদাতিদের সমালোচনা ঐক্য বিনষ্ট করে না। এ ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ বিদ্বান ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া— السؤال: هل التحذير من المناهج المخالفة ودعاتها يعتبر تفريقًا للمسلمين وشقًًّا لِصفِّهم؟ الجواب: التحذير من المناهج المخالفة لمنهج السلف يعتبر جمعًا لكلمة المسلمين لا تفريقًا لصفوفهم، لأن الذي يفرّق صفوف المسلمين هو المناهج المخالفة لمنهج السلف. প্রশ্ন: “শরিয়তবিরোধী মানহাজসমূহ এবং সেগুলোর দিকে আহ্বানকারী দায়িদের থেকে সতর্কীকরণ কি মুসলিমদের বিভক্ত করে এবং মুসলিমদের ঐক্যের কাতারকে খণ্ডবিখণ্ড করে?” উত্তর: “সালাফদের মানহাজবিরোধী মানহাজগুলো থেকে সতর্ক করা মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধকারী বিষয় হিসেবে গণ্য, মুসলিমদের কাতারে ভাঙন সৃষ্টিকারী বিষয় হিসেবে গণ্য নয়। কেননা সালাফদের মানহাজবিরোধী মানহাজগুলোই মূলত মুসলিমদের কাতারে বিভক্তি সৃষ্টি করে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ, আল-আজউয়িবাতুল মুফিদা আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদিদা; পৃষ্ঠা: ১৪৭; দারুল মিনহাজ (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৪ হিজরি (৩য় প্রকাশ)] বলা বাহুল্য, একজন সুন্নাহপন্থি ব্যক্তি, যিনি বিদাতি নন, তিনিও কোনো ব্যাপারে শরিয়তবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করার দরুন শরিয়তবিরোধী বিবেচিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভূত হলে সামর্থবান ব্যক্তি তাঁকে রদ করবেন। যেমনভাবে আহলুস সুন্নাহর অসংখ্য আলিম বড়ো বড়ো সুন্নাহপন্থি আলিমকে আল্লাহর জন্য খণ্ডন করেছেন। আর এ কাজ করার কারণে ‘উলামায়ে সুন্নাহ কখনোই তাঁদেরকে ‘ঐক্য বিনষ্টকারী’ আখ্যা দেননি। আল্লাহ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট বিদাতিদের প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, ছলচাতুরি ও মিথ্যা প্রচারণা থেকে পূর্ণরূপে হেফাজত করুন। আমিন। · আর ঐক্যের খাতিরে মুসলিম দলগুলোর ভুল এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বলতে হয়, এই নীতি ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্না সাহেবের। তিনি বলতেন, ‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব।’ [হাসান আল-বান্না বি আকলামি তালামিযাতিহি ওয়া মুআসিরিহি; পৃষ্ঠা: ১৯০; গৃহীত: ইমাম সালিহ আল ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ, আল-আজউয়িবাতুল মুফিদা আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদিদা; পৃষ্ঠা: ১৫৬] যুগশ্রেষ্ঠ ফাকিহ ও মুহাদ্দিস বিদ্বান শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২০ হি.) এই মূলনীতির ব্যাপারে বলেছেন, أما عذر بعضنا لبعض فيما اختلفنا فيه فليس على إطلاقه، فما كان من مسائل الإجتهاد التي يخفى دليلها فالواجب عدم الإنكار فيها من بعضنا على بعض، أما ما خالف النص من الكتاب والسنة فالواجب الإنكار على من خالف النص بالحكمة والموعظة الحسنة “আমরা যে ব্যাপারে একমত নই, সে ব্যাপারে পরস্পরকে মার্জনা করার বিষয়টি নিঃশর্ত নয়। মতানৈক্য যদি ইজতিহাদি মাসআলায় সংঘটিত হয়, যার দলিল স্পষ্ট নয়, সেক্ষেত্রে আবশ্যক হলো পরস্পরের বিরোধিতা না করা। পক্ষান্তরে তা কিতাব ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিলের পরিপন্থি হলে, হিকমাহ ও উত্তম উপদেশ সহকারে দলিলবিরোধী ব্যক্তির বিরোধিতা করা আবশ্যক।” [ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ, মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া মাকালাতুম মুতানাওয়্যাআ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫৮; দারুল কাসিম (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২০ হিজরি (১ম প্রকাশ)] · ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৪২১ হি.) কে প্রশ্ন করা হয়েছে, فضيلة الشيخ، من المعلوم أن الشيعة والمرجئة هؤلاء كلهم يختلفون مع أهل السنة والجماعة اختلافاً عظيماً، وهناك قاعدة بعض العلماء يسمونها القاعدة الذهبية: (يعين بعضنا بعضاً فيما اتفقنا ويعذر بعضنا بعضاً فيما اختلفنا) فكيف نعذر هؤلاء الشيعة؟ “সম্মানিত শাইখ, এটা সুবিদিত যে, শিয়া ও মুরজিয়া সম্প্রদায়ের সবাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সাথে বড়ো ধরনের মতানৈক্য করেছে। আর একটি মূলনীতি আছে, যেটাকে কতিপয় বিদ্বান সোনালী মূলনীতি বলে থাকেন। মূলনীতিটি হলো—‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব।’ তাহলে আমরা কীভাবে ওই শিয়াদেরকে মার্জনা করব?” তিনি রাহিমাহুল্লাহ উত্তরে বলেছেন, هذه القاعدة الذهبية ليست قاعدة ذهبية ولا تستحق أن تكون قاعدة، بل ما اتفقنا فيه فهو من نعمة الله عز وجل، والإتفاق خير من الإختلاف، وما اختلفنا فيه فقد يعذر فيه المخالف وقد لا يعذر، فإذا كان الاختلاف في أمر يسوغ فيه الاختلاف فهذا لا بأس به، وما زال الأئمة يختلفون، فالإمام أحمد والشافعي ومالك وأبو حنيفة كلهم يختلفون، وأما إذا كان الخلاف لا يعذر فيه كالخلاف في العقائد، فإنه لا يعذر بعضنا بعضاً، بل الواجب الرجوع إلى ما دل عليه الكتاب والسنة، فعلى المرجئة وعلى الشيعة وعلى كل مبتدع أن يرجع إلى الكتاب والسنة ولا يعذر، فهذه القاعدة ليست قاعدة ذهبية، ولعلك تسميها قاعدة خشبية. عرفت الآن الذي يسوغ فيه الاجتهاد، هذا لا بأس أن نسمح للمخالف، والذي لا يسوغ فيه الاجتهاد كمسائل العقائد التي يخالف فيها الإنسان السلف لا يمكن أن يعذروا. “এই সোনালী মূলনীতি মূলত সোনালী মূলনীতি নয়। আর এটি মূলনীতি হওয়ার হকদারও নয়। বরং আমরা যে ব্যাপারে একমত হয়েছি, সেটি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। আর মতৈক্য মতদ্বৈধতার চেয়ে উত্তম। পক্ষান্তরে আমরা যে ব্যাপারে একমত নই, সে ব্যাপারে বিরোধী ব্যক্তিকে মার্জনা করা হতে পারে, আবার মার্জনা করা নাও হতে পারে। মতানৈক্য যখন এমন বিষয়ে সংঘটিত হয়, যে বিষয়ে মতানৈক্য সিদ্ধ রয়েছে, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। ইমামগণ সর্বদাই এরূপ মতানৈক্য করেছেন। ইমাম আহমাদ, শাফিয়ি, মালিক, আবু হানিফা—ইনাদের প্রত্যেকেই মতানৈক্য করেছেন। তবে মতানৈক্য যদি এমন ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়, যেক্ষেত্রে মতানৈক্য ক্ষমার্হ নয়—যেমন আকিদাগত বিষয়ে মতানৈক্য—সেক্ষেত্রে পরস্পরকে মার্জনা করা যাবে না। বরং সেক্ষেত্রে ওই বিষয়ের দিকে ফিরে যাওয়া ওয়াজিব, যা কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। সুতরাং মুরজিয়া ও শিয়া সম্প্রদায়ের এবং সকল বিদাতির কর্তব্য হলো কিতাব ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। এক্ষেত্রে মার্জনা করা হবে না। এই মূলনীতি সোনালী মূলনীতি নয়, বরং তুমি একে ‘কাষ্ঠবৎ মূলনীতি’ বলতে পার। তুমি এখন জেনেছ, যে ব্যাপারে ইজতিহাদের সিদ্ধতা রয়েছে, সে ব্যাপারে বিরোধী ব্যক্তিকে মার্জনা করায় কোনো সমস্যা নেই। আর যে ব্যাপারে ইজতিহাদের সিদ্ধতা নেই, যেমন আকিদাগত বিষয়ে কোনো মানুষ সালাফদের বিরোধিতা করছে, সেক্ষেত্রে তাকে মার্জনা করা সম্ভব নয়।” [দ্রষ্টব্য: ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ কৃত লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ; লিকা নং: ৭৫; গৃহীত: http://binothaimeen(ডট)net/content/3496] ইমাম সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছে, هناك بعض من الدعاة يضع قاعدة يقول إنها من توحيد الكلمة، (نتفق فيما اتفقنا عليه، ويعذر بعضنا بعضا فيما اختلفنا فيه). “কতিপয় দায়ি একটি মূলনীতি উদ্ভাবন করেছেন, যেটাকে তাঁরা উম্মাহর ঐক্যের অন্তর্গত বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। সেটি হলো—‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব’।” তিনি হাফিযাহুল্লাহ উত্তরে বলেছেন, إذا كان الاتفاق في العقيدة نعم، قد يحصل اختلاف في مسائل الفروع، والمجتهد يؤخذ بما أصاب فيه، ويترك ما خالف فيه، فإذا كان الاتفاق على العقيدة، والاختلاف إنما هو في مسائل الفقه والفروع، فهذا له وجه، أما إذا كان الاختلاف في العقيدة، فعلى أي شيء اتفقنا إذن؟! ما اتفقنا على شيء، وهذا هو الظاهر اللي يريدون، هذا ما يجوز. نعم. “সবার সাথে একমত হওয়ার ব্যাপারটি যদি আকিদার ক্ষেত্রে হয়, তাহলে হ্যাঁ, ঠিক আছে। শাখাগত মাসআলাগুলোতে মতানৈক্য সংঘটিত হতে পারে। মুজতাহিদ আলিম এক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করবেন, আর বিপরীত সিদ্ধান্তটি পরিত্যাগ করবেন। যখন আকিদাহর ক্ষেত্রে মতৈক্য হবে এবং ফিক্বহ ও শাখাগত বিষয়ে মতানৈক্য হবে, তখন তার একটি তাৎপর্য থাকে (এতে কোনো সমস্যা নেই)। কিন্তু যদি আকিদার ক্ষেত্রেই মতানৈক্য হয়, তাহলে আমরা কীসের ওপর ঐক্যবদ্ধ হলাম? আমরা কোনো কিছুর ওপরেই ঐক্যবদ্ধ হতে পারলাম না। বাহ্যিকভাবে এটিই তাদের আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। এটি বৈধ নয়।” [দ্রষ্টব্য: www.alfawzan(ডট)af(ডট)org(ডট)sa/ar/node/14191.] বিশিষ্ট সালাফি বিদ্বান ইমাম সালিহ বিন মুহাম্মাদ আল-লুহাইদান রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৪৪৩ হি./২০২২ খ্রি.) প্রশ্ন করা হয়েছিল, ما تقولون في هذه العبارة (نجتمع فيما اتفقنا عليه ويعذر بعضنا بعضا فيما اختلفنا فيه) وهل هي عبارة سلفية على إطلاقها؟ “এই বক্তব্যের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী যে, ‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব?’ এটি কি নিঃশর্তভাবে সালাফি মূলনীতি?” তিনি রাহিমাহুল্লাহ উত্তরে বলেছেন, بل هي عبارة بدعية لا خير فيها؛ ... فتنة؛ معنى هذا أن يسير مستبحوا بعض المحرمات ومعتقدي بعض البدع يسير مع من لا يرى ذلك فيما يتفقان عليه وإذا اختلفا فليعذر كل واحد منهما الأخر؛ يجب أن يكون الناس على بصيرة من أمرهم. “বরং এটি একটি বিদাতি কথা। এর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। এটি ফিতনা। এর অর্থ হচ্ছে কতিপয় হারাম কর্মকে হালাল গণ্যকারী এবং কতিপয় বিদাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা ওই ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশা করবে, যারা ওই মত পোষণ করে না (অর্থাৎ সালাফিদের সাথে মেলামেশা করবে – সংকলক)। তারা যে বিষয়ে একমত, সে বিষয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ থাকবে, আর তারা যে বিষয়ে একমত নয়, সে বিষয়ে তারা একে অপরকে মার্জনা করবে! এজন্য নিজেদের বিষয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া মানুষদের জন্য জরুরি।” [দ্রষ্টব্য: https://tinyurl(ডট)com/35ym98yp (আজুর্রি ডট কমের আর্টিকেল-লিংক)] ইমাম মুকবিল আল-ওয়াদিয়ি, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান, ইমাম আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, ইমাম উবাইদ আল-জাবিরি-সহ আরও অনেক আলিম এই মূলনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ ব্যাপারে আলোচনা দীর্ঘায়ত করতে চাইছি না, বিধায় সেসব বক্তব্য পেশ করা থেকে বিরত থাকলাম। আরেকটি কথা মনে রাখা দরকার, কাফেররা নবিজির যুগেও শক্তিশালী ছিল। এ সত্ত্বেও নবিজি শরিয়তবিরোধীদের সমালোচনা করেছেন এবং অনেকক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিবেচনায় নাম ধরে সমালোচনা করেছেন। কারণ আমরা যেই দিন-ধর্ম রক্ষার জন্য কিংবা যেই ধর্মকে বিজয়ী করার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করব এবং এখনও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি, সেই ধর্মই যদি বিকৃত হয়ে যায় বিদাতিদের মাধ্যমে, তাহলে কীসের জন্য আমরা লড়াই করতে পারি কাফের-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে? আল্লাহ আমাদেরকে দিন বোঝার তৌফিক দান করুন এবং আবু ত্বহা আদনানের মতো বিপথগামী বক্তাদের ফিতনা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমিন। · সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী এক গুনাহগার বান্দা— Md Abdullah Mridha. · ‘আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান : আধুনিক বিপথগামিতার নয়া-আহ্বায়ক’ বইয়ের ৭ম অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদ



 (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে📚 এখানে পাবেন🎶প্রচুর অডিও সিরিজ🎶100 এর বেশী শায়খ ভিত্তিক অডিও 90 এর উপর 🎶বিষয় ভিত্তিক অডিও🌎অডিও কুরআন এবং অনলাইনে অডিও শুনুন🎶এছাড়াও বিষয় ভিত্তিক ভিডিও,♂সহীহ-সুন্নাহ-ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল,ইসলামিক পত্রিকা 📚 and অনেক জানা-অজানা-আর্টিকল 📚 বিষয় ভিত্তিক সিরিজ আকারে http://islamicebookandpic.in/ ইসলামিক গালারি 👇বিশেষ দ্রস্টব্যঃ-👇 ওয়েবসাইট sarolpoth.blogspot.com/ ইসলামিক সমস্থ প্রগ্রাম একসাথে পেতে http://salafimp3web.blogspot.com/👉 অডিও সমাহার👈 👉 https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/ সমস্ত ইসলামিক বই👆

Post a Comment

0 Comments