নিন্দনীয় স্বভাবসমূহ-

নিন্দনীয় স্বভাবসমূহ-

হাদীস: আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় (কবীরাহ) গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেবো না?

 عن أبي بَكْرَةَ- رضي الله عنه - عن النبي -صلى الله عليه وسلم- أنه قال: «أَلا أُنَبِّئُكم بِأَكْبَرِ الْكَبَائِر؟»- ثَلاثا- قُلْنَا: بَلى يا رسول الله، قَالَ: «الإِشْرَاكُ بِالله وَعُقُوقُ الوالدين، وكان مُتَّكِئاً فَجَلس، وَقَال: ألا وَقَوْلُ الزور، وَشهَادَةُ الزُّور»، فَما زال يُكَرِّرُها حتى قُلنَا: لَيْتَه سَكَت

[صحيح.] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

আবূ বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় (কবীরাহ) গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেবো না?” তিনবার বললেন। আমরা বললাম, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, “আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিতার নাফরমানী করা, তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন, তারপর উঠে বসলেন এবং বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।” তিনি কথাটি বার বার বলতেছিলেন। এমনকি আমরা বললাম, যদি তিনি চুপ হতেন।

[সহীহ-মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন, আমি কি তোদেরকে কবীরাহ গুনাহ কী জানিয়ে দিব না? অতঃপর তিনি এই তিনটি উল্লেখ করলেন, সেগুলো হলো: আল্লাহর সাথে শরীক করা। এটি হলো মাকামে উলুহিয়্যাতের ওপর সীমা লঙ্গন করা এবং আল্লাহ তা‘আলার অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে তা এমন সব অক্ষম সৃষ্টিকে দেওয়া যারা তার উপযুক্ত নয়। মাতা-পিতার নাফরমানি করা জঘন্য অপরাধ। কারণ, তা হলো সবচেয়ে নিকটতম লোককে মন্দ আচরণ দ্বারা অনুগ্রহের প্রতিদান দেওয়া। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। এটি সব ধরনের মিথ্যা কথা ও অপবাদকে শামিল করে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রতিপক্ষের সম্পদ হনন করা বা তার ইজ্জত সম্মান ইত্যাদির ওপর আঘাত করা।

 ফায়দাসমূহ:

1: এ হাদীস থেকে শিক্ষনীয় হলো শরী‘আতের বিধানসমূহকে “আমি কি জানিয়ে দিবো না?” পদ্ধতির মাধ্যমে তুলে ধরা।

2: সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো, আল্লাহর সাথে শরীক করা। কারণ, তিনি শরীক করাকে সকল কবীরা গুনাহের উপরে রেখেছেন এবং এটিকে সবচেয়ে বড় গুনাহ হিসেবে গণ্য করেছেন। এর স্বপক্ষে দলিল হলো আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী, {إن الله لا يَغْفِرُ أن يشرَكَ به وَيَغْفِرُ مَا دونَ ذلِكَ لِمَنْ يشَاء}. “আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্য গুনাহগুলোকে তিনি যার জন্যে চান ক্ষমা করেন।”

3: মাতা-পিতার হকের গুরুত্ব। কারণ, তিনি আল্লাহর হকের সাথে তাদের হককে সংযুক্ত করেছেন।

4: মুসলিম সমাজে মিথ্যা সাক্ষী ও তার খারাপ প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক; হোক সেটি চারিত্রিক বিষয়ে বা সামাজিক জীবনের অন্য কোনো বিষয়ে।

হাদীস: সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবওয়ালা সতী-সাধ্বী মুমিনাদের অপবাদ দেওয়া।

 হাদীস:

عن أبي هريرة -رضي الله عنه- مرفوعاً: "اجتنبوا السبع المُوبِقَات، قالوا: يا رسول الله، وما هُنَّ؟ قال: الشركُ بالله، والسحرُ، وقَتْلُ النفسِ التي حَرَّمَ الله إلا بالحق، وأكلُ الرِّبا، وأكلُ مالِ اليتيم، والتَّوَلّي يومَ الزَّحْفِ، وقذفُ المحصناتِ الغَافِلات المؤمنات". 

[صحيح.] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মরফূ‘ হিসেবে বর্ণিত, “সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবওয়ালা সতী-সাধ্বী মুমিনাদের অপবাদ দেওয়া।”  [সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে সাতটি ধ্বংসকারী পাপ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সেগুলো কী? তখন তিনি তা বর্ণনা করলেন যে, সেগুলো হলো (১) যেভাবেই হোক আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করে তার সাথে শরীক করা। তিনি শির্কের দ্বারা শুরু করলেন। কেননা তা সবচেয়ে বড় গোনাহ। (২) আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা। (৩) যাদু করা (৪) সুদ গ্রহণ করা, ভক্ষণ করে হোক অথবা অন্য যে কোনো উপায়ে স্বার্থ হাসিল করে হোক। (৫) যার পিতা মারা গেছে এমন শিশুর সম্পদে সীমালঙ্গন করা (সম্পদ গ্রাস করা) (৬) কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধকালে রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবওয়ালা সতী-সাধ্বী নারীকে যিনার অপবাদ দেওয়া।

ফায়দাসমূহ:

1: শিরক হারাম হওয়া। এটি সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ এবং মহাপাপ।

2: যাদু হারাম হওয়া। এটি বিধ্বংসী কবীরাহ গুনাহের অন্যতম এবং ইসলাম ভঙ্গকারী।

3: অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা হারাম।

4: ন্যায়সঙ্গতভাবে কাউকে হত্যা করা বৈধ। যেমন, কিসাস হিসেবে হত্যা করা, মুরতাদ হওয়া ও বিবাহের পর ব্যভিচার করার কারণে হত্যা করা।

5: সুদ হারাম হওয়া এবং এর পরিণতির ভয়াবহতা।

6: ইয়াতীমের সম্পদের ওপর সীমালঙ্গন করা হারাম।

7: যুদ্ধের ময়দান থেকে ফলায়ন করা হারাম।

8: কাউকে ব্যভিচার ও সমকামীতার অপবাধ দেওয়া হারাম।

9: কাফেরকে অপবাধ দেওয়া কবীরাহ গুনাহ নয়।

হাদীস: তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো, কারণ ধারণা সবোর্চ্চ মিথ্যা কথা।

 হাদীস

عن أبي هريرة -رضي الله عنه- عن النبي -صلى الله عليه وسلم-قال: «إيَّاكم والظنَّ, فإن الظنَّ أكذبُ الحديث»

[صحيح.] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো, কারণ ধারণা সবোর্চ্চ মিথ্যা কথা।” [সহীহ -মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:

হাদীসটিতে ভিত্তিহীন ধারণা করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে, যেমন মানুষ শুধু এই ধারণার ওপর নির্ভর করে ও তার ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়। এটি অবশ্যই একটি খারাপ চরিত্র এবং সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কারণ, ধারণাকারী যদি এমন কিছুর ওপর নির্ভর করে যার ওপর নির্ভর করা যায় না এবং তাকে সে মূল বলে গণ্য করে এবং তার দ্বারা সে নিশ্চিত হয়, তা অবশ্যই মিথ্যা হবে বরং বড় ধরনের মিথ্যা।

 ফায়দাসমূহ:

1: যে ধারণা কোন দলীলের ওপর ভিত্তি করে জন্মেনি তা থেকে সতর্ক থাকা।

2: যার কাছ থেকে আলামাত পাওয়া গেছে তার প্রতি খারাপ ধারণা করা ক্ষতিকর নয়, যেমন: খারাপ লোক এবং ফাসেকরা।

3: উদ্দেশ্য হলো সে সব অপবাদ যা মনের মধ্যে গেথে গেছে এবং তার ওপর ধারাবাহিকতা থাকা। কিন্তু যে সব ধারনা অন্তরে উদ্রেক হয়; কিন্তু বেশিক্ষণ থাকে না তা ধর্তব্য নয়।

হাদীস: চোগলখোরী কক্ষনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

 হাদীস:

হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,“চোগলখোরী কক্ষনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”  

[সহীহ-মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:

চোগলখোরদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন হুমকি সম্পর্কে সংবাদ দেন। আর তা হলো, ফাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের কথা অন্যের কাছে বহন করা। অর্থাৎ সে শুরুতে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং তার গুনাহ অনুযায়ী তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাত্তাত হলো নামীমাহকারী (চোগলখোর)। এ হাদীসের কারণে তার কর্মটি কবীরাহ গুনাহ।

 ফায়দাসমূহ:

1: চোগলখোরী করা কবীরাহ গুনাহ। কারণ, তাতে খারাপ প্রভাব ও ভয়ানক পরিণতি সৃষ্টি হয়।

2: এ শরী‘আতের ভিত্তি এমন সব বিষয়ের ওপর যাতে রয়েছে মুসলিমদের মাঝে ভালোবাসা।

হাদীস: আল্লাহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে।

 হাদীস:

আয়েশা-রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে।” 

[সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:

নিশ্চয় আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা কঠিন ঝগড়াটে ও সব সময় ঝগড়াকারীকে ঘৃণা করেন, যে হক্বের জন্যে মাথা নোয়ানোকে মেনে নেয় না।

হাদীস: নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীকে অবকাশ দেন। অতঃপর যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন, তখন তাকে ছাড়েন না।

  হাদীস:

আবূ মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে মারফু হিসেবে বর্ণিত, “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীকে অবকাশ দেন। অতঃপর যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন, তখন তাকে ছাড়েন না।” তারপর তিনি এই আয়াত পড়লেন, যার অর্থ, “আর আপনার রবের পাকড়াও এরূপই হয়ে থাকে। যখন তিনি অত্যাচারী জনপদকে পাকড়াও করে থাকেন। নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও যন্ত্রণাদায়ক, কঠিন।” 

[সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সংবাদ দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা যালিমকে অবকাশ দেন এবং তাকে তার নিজের ওপর যুলুম করার সুযোগ দেন। অবশেষে যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন তখন তাকে ছাড়েন না, যতক্ষণ না তিনি তার শাস্তিকে পূর্ণ করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার এই বাণী তিলাওয়াত করলেন। “আর এরূপই হয় আপনার রবের পাকড়াও যখন তিনি পাকড়াও করেন অত্যাচারী জনপদসমূহকে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড়ই যন্ত্রণাদায়ক, কঠোর।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১০২]

 ফায়দাসমূহ:

1: জ্ঞানী যখন জুলুম করে এবং তার ফলে কোনো বিপদ তাকে স্পর্শ না করে, তখন সে আল্লাহর পাকড়াও হতে নির্ভয় হয় না, বরং সে জানে যে, এটি তাকে সুযোগ দেওয়া। ফলে সে পাওনাাদারকে তার হক পরিশোধ করতে তাড়াহুড়া করে।

2: আল্লাহ যালেমদের অবকাশ দেন যাতে তাদের অপকর্ম আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে আল্লাহ তাদের শাস্তিকে দ্বিগুণ করেন।

3: হাদীস বা কুরআনের উত্তম তাফসীর হলো আল্লাহর বাণী এবং তার রাসূলের বাণী।

হাদীস: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার কিছু অংশ নেড়া করতে ও কিছু অংশে চুল রেখে দিতে নিষেধ করেছেন।

 হাদীস:

عن ابن عمر -رضي الله عنهما-، قال: نهى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- عن القَزَع

[صحيح] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার কিছু অংশ নেড়া করতে ও কিছু অংশে চুল রেখে দিতে নিষেধ করেছেন।” 

[সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চার মাথার চুল কিছু অংশ মুণ্ডন করে কিছু অংশ ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছেন। আর এ হুকুম ছোট বড় সকলের জন্যই প্রযোজ্য।

 ফায়দাসমূহ

1: মাথার চুল কিছু অংশ মুণ্ডন করে কিছু অংশ ছেড়ে দেয়া নিষেধ।

হাদীস: আমাদেরকে ভণিতা (লৌকিকতা) থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

 হাদীস

عن عمر -رضي الله عنه- قال: نُهِيَنا عن التَّكَلُّف

[صحيح.] - [رواه البخاري.]

المزيــد ...

উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমাদেরকে ভণিতা (লৌকিকতা) থেকে নিষেধ করা হয়েছে।‘ 

[সহীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ হাদীসে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাদেরকে ভণিতা (লৌকিকতা) থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ হাদীসে নিষেধকারী হলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কেননা সাহাবী যখন বলবেন, (نهينا) “আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে”, তখন এর অর্থ হাদীসটি মারফু‘ অর্থাৎ তিনি যেন বলতে চেয়েছেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকাল্লুফ তথা ভণিতা করতে নিষেধ করেছেন। তাকাল্লুফ (কৃত্রিমতা) হলো, সেসব কথা ও কাজ, যার দ্বারা ব্যক্তি অন্যদের সামনে এমন কিছু প্রকাশ করে যা তার ভেতরে নেই। কথাবার্তায় কৃত্রিমতার উদাহরণ হলো, (হাদীসের এ পরিচ্ছেদে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতে চেয়েছেন) অতিরিক্ত প্রশ্ন করা এবং যেসব অস্পষ্ট বিষয় অনুসন্ধান করা উচিৎ নয় সেসব ব্যাপারে অনুসন্ধান করা। শরী‘আতকে বাহ্যিকভাবে গ্রহণ করা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু নিয়ে এসেছেন সেগুলো গ্রহণ করা। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে ছিলাম। তার পরনে একটি জামা ছিল যার পিঠের অংশে চারটি ছিদ্র ছিল। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, (وَفَاكِهَةً وَأَبًّا) আর ফল ও তৃণগুল্ম। [সূরা আবাসা, আয়াত: 31] অতঃপর তিনি বলেন, এখানে উল্লিখিত ফাকিহা (ফলমূল) কী তা আমরা জানি; কিন্ত (الأَب) কী? অতঃপর তিনি বলেন, আমাদেরকে কৃত্রিমতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর কৃত্রিম কাজকর্ম হলো, কারো বাড়িতে অতিথি আগমন করলে যে ধরনের আপ্যায়ন করা তার জন্য কষ্টকর ভণিতা দেখাতে সেসব আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা। বরং কখনো এ ধরণের কৃত্রিমতা তাকে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য করে। কখনো সময় মতো সে ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয় না, ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে নিজে ক্ষতিতে পতিত হয়ে যায়। অতঃএব মুসলিমের উচিৎ কোনো কাজেই ভণিতা না করা; বরং সবকাজ মধ্যপন্থা অবলম্বন করে সম্পন্ন করা, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। সুতরাং তার কাছে যা আছে সে ব্যাপরে কৃপণতা করবে না, আবার যা নেই সেটা করতে গিয়ে কৃত্রিমতা করবে না।

ফায়দাসমূহ:-

1: কৃত্রিমতা থেকে নিষেধ করা এবং প্রতিটি বিষয়ে তা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।

হাদীস: একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটো কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং বললেন, “ঐ দুই কবরবাসীর আযাব হচ্ছে। অবশ্য ওদেরকে কোন বড় ধরনের অপরাধ (বা কোন কঠিন কাজের) জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না।” ওদের একজন পেশাবের ছিটা থেকে বাচত না, আর অপর জন লোকের) চুগলী ক’রে বেড়াত।

 হাদীস

عن عبد الله بن عباس -رضي الله عنهما- قال: مر النبي -صلى الله عليه وسلم- بقبرين، فقال: «إنهما ليُعذَّبان، وما يُعذَّبان في كبير؛ أما أحدهما: فكان لا يستتر من البول، وأما الآخر: فكان يمشي بالنميمة»

[صحيح.] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটো কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং বললেন, “ঐ দুই কবরবাসীর আযাব হচ্ছে। অবশ্য ওদেরকে কোন বড় ধরনের অপরাধ (বা কোন কঠিন কাজের) জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না।” ওদের একজন পেশাবের ছিটা থেকে বাচত না, আর অপর জন লোকের) চুগলী ক’রে বেড়াত”। 

[সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ক’জন সাথীসহ দুটো কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তাদের দুই জনের অবস্থা খুলে দিলেন যে, তাদের দুইজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তারপর তিনি উম্মতকে সতর্ক করা এবং ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে তার সাথীদের বিষয়টি জানালেন। কারণ, এ দুই কবরবাসীর প্রত্যেককে সামান্য গুনাহ যার থেকে দূরে থাকে নাই তার কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে। তাদের একজন এমন ছিল, সে প্রয়োজন পুরো করার সময় পেশাব থেকে বেচে থাকতো না এবং তার থেকে আত্মরক্ষা করতো না। ফলে পেশাব তার শরীর কাপড় ইত্যাদিতে লেগে তা নাপাক করে দিত এবং পেশাবের সময় গোপনীয়তা রক্ষা করতো না। আর তাদের অপর ব্যক্তি মানুষের মাঝে চোগলী করে বেড়াত। যা মানুষের মাঝে দুশমনি ও রেশারেশির কারণ হতো। বিশেষ করে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মাঝে। সে এক বন্ধুর কাছে আসে তারপর সে তার কাছে অপর বন্ধুর কথা বলে। আবার তার কাছে গিয়ে এ বন্ধুর কথা বলে। ফলে উভয়ের মাঝে দূরত্ব এবং বিবাদ সৃষ্টি হয়। ইসলাম এসেছে মানুষের মাঝে মিল মুহাব্বত সৃষ্টি করতে এবং জগড়া বিবাদ দূর করতে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ সৃষ্টি হলো, তিনি একটি তাজা খেজুরের ডাল নিলেন এবং দুই ভাগ করলেন। তারপর প্রতিটি টুকরাকে প্রত্যেক কবরের ওপর পুঁতে দিলেন। সাহাবীগণ এ অপরিচিত কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তিনি বললেন, হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা আমার সুপারিশের কারণে তারা যে আযাবের মধ্যে রয়েছে তা কিছুটা লাগব হবে যতক্ষণ না এ ডাল দুটি না শুকায়। অর্থাৎ, এ দুটি ডাল তাজা থাকা পর্যন্ত। এ কর্মটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বৈশিষ্ট্য।

হাদীস: নিশ্চয় আমি এমন এক বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে, তাহলে তার ক্রোধ দূরীভূত হবে। যদি সে বলে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ (অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইছি), তাহলে তার উত্তেজনা ও ক্রোধ সমাপ্ত হবে।

  হাদীস

عن سليمان بن صُرَدٍ -رضي الله عنه- قال: كنت جالسًا مع النبي -صلى الله عليه وسلم- ورجلان يَسْتَبَّانِ، وأحدهما قد احْمَرَّ وجْهُه، وانْتَفَخَتْ أَوْدَاجُهُ، فقال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «إِنِّي لأعلم كلمة لو قالها لذهبَ عنه ما يجد، لو قال: أعُوذ بالله من الشَّيطان الرجيم، ذهبَ منه ما يَجد». فقالوا له: إن النبي - صلى الله عليه وسلم - قال: «تَعَوَّذْ بالله من الشيطان الرجيم»

[صحيح.] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

সুলাইমান ইবনে সুরাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় দু’জন লোক একে অপরকে গালি দিচ্ছিল। তার মধ্যে একজনের চেহারা (ক্রোধের চোটে) লালবর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তার শিরাগুলো ফুলে উঠেছিল। (এ দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “নিশ্চয় আমি এমন এক বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে, তাহলে তার ক্রোধ দূরীভূত হবে। যদি সে বলে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ (অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইছি), তাহলে তার উত্তেজনা ও ক্রোধ সমাপ্ত হবে।” লোকেরা তাকে বলল, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাও (অর্থাৎ, উপরোক্ত বাক্যটি পড়)। 

[সহীহ-মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:-

সুলাইমান ইবনে সুরাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, একদা নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দু’জন লোক একে অপরকে গালি দিচ্ছিল। তার মধ্যে একজন রেগে গেলে তার ক্ষুব্ধতা তীব্র হলো এবং তার চেহারা ফুলে গেল এবং লালবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “নিশ্চয় আমি এমন এক বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে, তাহলে তার ক্রোধ দূরীভূত হবে। যদি সে বলে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ (অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইছি), কারণ তাকে যা স্পর্শ করেছে সেটা শয়তান থেকেই। যদি মানুষ আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়, তাহলে এ বাক্যের বরকতে তার উত্তেজনা দূর হবে। লোকেরা লোকটিকে বলল, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ (অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইছি) বল। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, লোকটি কঠিন রাগের কারণে তা বলেনি। বরং সে বলল, আমার মধ্যে কি মাতলামী আছে?

হাদীস: যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকারস্বরূপ

  হাদীস

عن ابن عمر-رضي الله عنهما- مرفوعا: «الظلم ظلمات يوم القيامة». عن جابر-رضي الله عنهما- مرفوعا: «اتقوا الظلم, فإن الظلم ظلمات يوم القيامة, واتقوا الشُّحَ؛ فإنه أَهْلَكَ من كان قبلكم»

[صحيحان.] - [حديث ابن عمر -رضي الله عنهما-: متفق عليه. حديث جابر -رضي الله عنه-: رواه مسلم.]

المزيــد ...

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে মারফু হিসেবে বর্ণিত, “যুলুম কিয়ামতের দিন অনেকগুলো অন্ধকার হবে।” জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু হিসেবে বর্ণিত, “তোমরা অত্যাচার করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকারস্বরূপ। আর তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো। কেননা কৃপণতা তোমাদের পূর্বের লোকেদের ধ্বংস করেছে।”  [উভয় বর্ণনাসহ সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

হাদীস দু’টি অত্যাচার হারাম হওয়ার প্রমাণ। এটি সর্ব প্রকার যুলুমকে সামিল করে। যেমন, আল্লাহর সাথে শির্ক করা। আর হাদীস দু’টিতে তার বাণী: “অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকারস্বরূপ।” এর অর্থ হলো, কিয়ামাতের দিন তা অত্যাচারীর জন্য লাগাতার অন্ধকার হবে। ফলে সে রাস্তা খুঁজে পাবে না। আর দ্বিতীয় হাদীসে তার বাণী: “আর তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কৃপণতা পূর্ববর্তী লোকেদেরকে ধ্বংস করেছে।” এখানে কৃপণতা থেকে সর্তক করা হয়েছে যে, সমাজে যখন কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে তখন তা হবে ধ্বংসের আলামত। কারণ, কৃপণতা যুলুম, সীমালঙ্ঘন, বাড়াবাড়ি ও রক্তপাতের কারণ।

হাদীস: মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই ঝগড়া করা কুফুরী।

  হাদীস

عن عبد الله بن مسعود -رضي الله عنه- عن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: «سِبابُ المسلم فسوق, وقتاله كفر»

[صحيح.] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণিত, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই ঝগড়া করা কুফুরী।” 

[সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

ব্যাখ্যা:

মুসলিম ভাইয়ের অধিকার যে কত মহান এই হাদীসটি তার ওপর দলীল। কারণ, এতে একজন মুসলিম ভাইকে গাল দেওয়াকে ফাসেকী বলা হয়েছে। আর ফাসেকী হলো আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে হত্যা করে সে অবশ্যই কাফির হয়ে যাবে এবং মুসলিম হওয়া থেকে বের হয়ে যাবে যদি সে হত্যা করাকে বৈধ বলে বিশ্বাস করে। আর যদি কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্য বা ক্ষোভের কারণে হত্যা করে হালাল মনে করে নয়, তখন তা হবে ছোট কুফর। তাতে সে ইসলাম থেকে বের হবে না। তখন তার ওপর কুফর শব্দের ব্যবহারটি ভীতিপ্রদর্শনে সর্বচ্চো গুরুত্ব প্রদান হিসেবে হবে।

হাদীস: কিয়ামত দিবসে অভিশাপকারীরা সুপারিশকারী হবে না, সাক্ষ্যদাতাও হবে না।

  হাদীস

عن أبي الدرداء -رضي الله عنه- عن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: «إِنَّ اللَّعَّانِين لا يَكُونُونَ شُفَعَاءَ, وَلا شُهَداءَ يَوْمَ القِيَامةِ»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফূ হাদীসে বর্ণিত, নিশ্চয় কিয়ামত দিবসে অভিশাপকারীরা সুপারিশকারী হবে না, সাক্ষ্যদাতাও হবে না।  [সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

হাদীসে অধিক হারে অভিশাপ করা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। যারা কথা কথায় অভিশাপ প্রদান করে আল্লাহর নিকট তাদের কোনো মর্যাদা নেই এবং দুনিয়াতে তাদের কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না; কারণ, তারা ন্যায়পরায়ণ নন। সাক্ষ্য তো শুধু তাদের থেকেই গ্রহণ করা হয় যারা ন্যায়পরায়ণ। আর আখিরাতে তাদের ভাইদের জান্নাতে প্রবেশের বিষয়ে তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে না। তাদের সাক্ষ্যও নয়। তাছাড়া পূর্বেকার উম্মতদের নিকট তাদের রাসূলগণ তাদের কাছে রিসালাত যে পৌঁছিয়েছেন, এর ওপর তাদের সাক্ষ্য কবুল করা হবে না।

হাদীস: যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে, তার জন্য রয়েছে ধ্বংস, অতঃপর তার জন্য ধ্বংস।

  হাদীস

عن معاوية بن حيدة -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «ويل للذي يحدث فيكذب؛ ليضحك به القوم، ويل له، ثم ويل له»

[حسن.] - [رواه أبو داود والترمذي وأحمد والنسائي في الكبرى.]

المزيــد ...

মু‘আবিয়া ইবন হাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত: “যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে, তার জন্য ধ্বংস, তারপর তার জন্য ধ্বংস।” 

[হাসান - এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

হাদীসটিতে মিথ্যা থেকে মানুষকে কঠিনভাবে সাবধান করা হয়েছে এবং ঠাট্টা করে কিংবা লোক হাসানোর উদ্দেশ্যে যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের ধ্বংসের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটি সবচেয়ে খারাপ কর্মের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আর তা নিকৃষ্ট হারামে পরিণত হয়েছে। সুতরাং মুমিনের ওপর কর্তব্য হচ্ছে এই খারাপ চরিত্র থেকে বেঁচে থাকা ও দূরে থাকা। সর্বাবস্থায় জবানকে মিথ্যা থেকে পবিত্র রাখা। তবে যে সব ক্ষেত্রে শরী‘আত অনুমতি দিয়েছে তা ছাড়া। আর যেভাবে ঠাট্টার ছলে মিথ্যা কথা বলা হারাম অনুরূপভাবে শ্রেুাতাদের জন্যও তা শোনা হরাম, যখন তারা জানবে যে তা মিথ্যা, বরং তাদের ওপর কর্তব্য হবে তা অস্বীকার করা।

হাদীস: অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা, অত্যাচার কিয়ামতের দিন অনেকগুলো অন্ধকার হবে। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাক। কেননা, কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস ক’রে দিয়েছে। (এই কৃপণতাই) তাদেরকে রক্তপাত ও হারাম বস্তুকে হালাল করতে প্ররোচিত করেছিল।

  হাদীস

عن جابر بن عبدالله -رضي الله عنهما- قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «اتقوا الظلم؛ فإن الظلم ظلمات يوم القيامة، واتقوا الشُّحَّ؛ فإن الشُّحَّ أَهْلَك من كان قبلكم، حملهم على أن سفكوا دماءهم، وَاسْتَحَلُّوا محارمهم»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা, অত্যাচার কিয়ামতের দিন অনেকগুলো অন্ধকার হবে। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাক। কেননা, কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস ক’রে দিয়েছে। (এই কৃপণতাই) তাদেরকে রক্তপাত ও হারাম বস্তুকে হালাল করতে প্ররোচিত করেছিল।” 

[সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

অর্থাৎ মানুষের প্রতি অত্যাচার করা, নফসের প্রতি অত্যাচার করা এবং আল্লাহর হক বিষয়ে অত্যাচার করা থেকে বিরত থাক। কারণ, কিয়ামতের দিন তার পরিণতি খুবই করুণ। আর লোভের সাথে কৃপণতা করা থেকেও দূরে থাক। এটি জুলুমেরই একটি প্রকার। এটি অন্যান্য উম্মাতদের মধ্যে পুরাতন রোগ। এটি একে অপরকে হত্যা এবং হারামকৃত বস্তুসমূহ যেগুলোকে আল্লাহ হারাম করেছেন হালাল করার কারণ হয়েছিল।

হাদীস: আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না।

  হাদীস

عن أبي هريرة -رضي الله عنه- مرفوعاً: «ثلاثةٌ لا يُكلمهم الله يوم القيامة، ولا يُزَكِّيهم، ولا يَنظُر إليهم، ولهم عذابٌ أليم: شَيخٌ زَانٍ، ومَلِكٌ كذَّاب، وعَائِل مُسْتكبر»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু হিসেবে বর্ণিত, “আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, (১) ব্যভিচারী বৃদ্ধ, (২) মিথ্যাবাদী শাসক এবং (৩) অহংকারী গরীব।” 

[সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

তিন শ্রেণির মানুষের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না। তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে তাদের গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, আর তাদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি: এক, বৃদ্ধ মানুষ, বয়সের ভারে ন্যুব্জ, তবুও যেনা করে। দুই, যে শাসক মিথ্যা বলে এবং তিন, গরীব তবুও অহংকার করে ও অন্যদের নিকৃষ্ট মনে করে।

হাদীস: যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

  হাদীস

عن عبد الله بن مسعود -رضي الله عنه- عن النبيِّ -صلى الله عليه وسلم-، قَالَ: «لا يدخلُ الجنةَ مَن كان في قلبه مِثقال ذرةٍ من كِبر» فقال رجل: إنّ الرجلَ يحب أن يكون ثوبه حسنا، ونَعله حسنة؟ قال: «إنّ الله جميلٌ يحب الجمالَ، الكِبر: بَطَرُ الحق وغَمْطُ الناس»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (এ কথা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, (তাহলে সেটাও কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?)’ তিনি বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।” 

[সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এ হাদীসটি হুমকির হাদীসসমূহের একটি হাদীস। সুতরাং, শর‘ঈ প্রমাণাদি দ্বারা তার ব্যাখ্যা করা জরুরী। যেমন, যার অন্তরে অহংকার রয়েছে, তার অহংকার হয়তো সত্যকে প্রত্যাখ্যান ও তাকে অপছন্দ করে হবে, এমতাবস্থায় সে অবশ্যই কাফির চির জাহান্নামী, কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কারণ, আল্লাহর বাণী রয়েছে, “তা এ কারণে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে, ফলে আল্লাহ তাদের আমলসমূহ ধ্বংস করে দেন।” (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৯)। আর যদি অহংকার মাখলুকের ওপর হয় এবং নিজেকে অন্য মাখলুকের চেয়ে বড় মনে করার কারণে হয়, কিন্তু সে অহংকার করে আল্লাহর ইবাদত থেকে বিরত থাকে নি, তার সম্পর্কে এ হুমকি এসেছে যে, সে প্রথম দলের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল যখন এ হাদীসটি বললেন, তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড় সুন্দর হোক, তার জুতো সুন্দর হোক, তাহলে এটাও কি অহংকার গণ্য হবে?’ তিনি বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। তিনি স্বীয় সত্ত্বায় সুন্দর, স্বীয় কর্মে সুন্দর এবং স্বীয় সকল গুণে সুন্দর। মহান আল্লাহ থেকে যা কিছু প্রকাশ পায় তা সবই সুন্দর। অসুন্দর নয়। আর তার বাণী: “সুন্দরকে ভালোবাসেন” অর্থাৎ, আল্লাহ সৌন্দর্য গ্রহণ করাকে পছন্দ করেন এ অর্থে যে, একজন মানুষ কাপড়ে, জুতোয়, শরীরে ও তার যাবতীয় বিষয়ে সৌন্দর্য অবলম্বন করুক আল্লাহ তা পছন্দ করেন। কারণ, সৌন্দর্য গ্রহণ অন্তরসমূহকে মানুষের দিকে আকৃষ্ট করে এবং তাকে মানুষের নিকট প্রিয় করে দেয়, যা নোংরামির বিপরীত, যে নোংরামিতে মানুষের চুল অথবা কাপড় অথবা পোশাক অসুন্দর দেখায়।

হাদীস: তোমরা কি জান কে নি:স্ব-অসহায়?

  হাদীস

عن أبي هريرة -رضي الله عنه- أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال: «أتدرون من المفلس؟» قالوا: المفلس فينا من لا دِرْهَمَ له ولا متاع، فقال: «إن المفلس من أمتي من يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة، ويأتي وقد شتم هذا، وَقَذَفَ هذا، وأكل مال هذا، وسَفَكَ دم هذا، وضرب هذا، فيعطى هذا من حسناته، وهذا من حسناته، فإن فنيت حسناته قبل أن يقضى ما عليه، أخذ من خطاياهم فطُرِحَتْ عليه، ثم طرح في النار»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে?’’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কাছে কোন দিরহাম এবং কোনো আসবাব-পত্র নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাতের (নেকী) নিয়ে হাযির হবে। (কিন্তু এর সাথে সাথে সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গাল দিয়েছে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারো (অবৈধরূপে) মাল ভক্ষণ করেছে। কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে, এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকীরাশি অন্যান্যদের দাবী পূরণ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’ 

[সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের জিজ্ঞেস করছেন যে, তোমরা কি জান নি:স্ব কে? মানুষের মধ্যে যা প্রসিদ্ধ ছিল তারা তাঁকে তাই সংবাদ দিল। তারা বলল, যার নিকট টাকা ও সামগ্রী নেই সেই নি:স্ব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সংবাদ দিলেন, এই উম্মতের নি:স্ব-অসহায় হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন আসবে বড় নেকী ও অনেক সৎকর্ম নিয়ে। যেমন সালাত, সিয়াম ও যাকাত। সে আসবে ঠিকই অথচ একে গাল দিয়েছে, একে প্রহার করেছে, তার সম্পদ ভক্ষণ করেছে, তাকে অপবাদ দিয়েছে এবং তার রক্ত প্রবাহিত করেছে। আর মানুষেরা তাদের হক চাইবে। যা তারা দুনিয়ায় নিতে পারেনি সেটা তারা আখিরাতে নিবে। আল্লাহ তাদের জন্য তার থেকে বদলা নিবেন। ফলে ইনসাফের সাথে এবং যথাযথভাবে বদলা হিসাবে এ তার নেকি নিবে, অমুক তার নেকি নিবে এবং অমুক তার নেকি নিবে। এভাবে যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তাদের পাপ নিয়ে তার ওপর নিক্ষেপ করা হবে এবং তাকে জাহান্নামে ফেলা হবে।

হাদীস: যে ব্যক্তি কোনো হাদীছকে মিথ্যা মনে করেও তা আমার পক্ষ হতে বর্ণনা করে সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদীদের অন্যতম।

  হাদীস

عن سَمُرة -رضي الله عنه- مرفوعاً: «من حدَّث عني بحديث يُرَى أنه كَذِبٌ فهو أحد الكاذِبَين»

[صحيح] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মরফূ হিসেবে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি কোনো হাদীছকে মিথ্যা মনে করেও তা আমার পক্ষ হতে বর্ণনা করে সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদীদের অন্যতম।” 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

এ হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন কিছু বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে হাদীসটি সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছে তা সম্পর্কে সে জানে বা ধারণা করে সে তার ওপর মিথ্যা বলছে। কেননা সে যদি তা করে তাহলে সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপকারীর সমান হয়ে যাবে। শারহুশ শাইখ ইবনে উসাইমীন (৬/১৮৭)

হাদীস: যদি তুমি মুসলিমদের গুপ্ত দোষগুলো খুঁজে বেড়াও, তাহলে তুমি তাদেরকে নষ্ট করে দিবে অথবা তাদেরকে নষ্ট করার উপক্রম করবে।

  হাদীস

عن معاوية -رضي الله عنه- قال: سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول: «إنك إن اتَّبَعْتَ عَوْرَاتِ المسلمين أفْسَدْتَهُم، أو كِدْتَ أن تُفْسِدَهُم»

[صحيح.] - [رواه أبو داود.]

المزيــد ...

মু‘আওয়িয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “যদি তুমি মুসলিমদের গুপ্ত দোষগুলো খুঁজে বেড়াও, তাহলে তুমি তাদেরকে নষ্ট করে দিবে অথবা তাদেরকে নষ্ট করার উপক্রম করবে।” 

সহীহ - এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

যদি তুমি মুসলিম ভাইদের বিবিধ অবস্থার গোয়েন্দাগিরি করে তাদের দোষগুলো বের কর, তাদের অপরাধগুলোর অনুসন্ধান চালাও এবং তাদের দোষ-ত্রুটিগুলোর ছিদ্রান্বেষণ কর, যা তারা লুকাতো, অথচ তুমি সেগুলো প্রকাশ করে দাও, তাহলে তুমি তাদেরকে অপমানিত করলে এবং তাদের গোপনীয় বিষয়গুলো খুলে দিলে, যার ফলে তাদের লজ্জা কমে যাবে এবং এ ধরনের অপরাধ তারা প্রকাশ্যে করার সাহস করবে, অথচ পূর্বে তারা গোপনে তা করছিল, তখন তাদের এ অপরাধ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানতো না।

হাদীস: যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা ক্রীতদাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

  হাদীস

عن أبي هريرة -رضي الله عنه- مرفوعاً: «من خَبَّبَ زوجة امْرِئٍ أو مَمْلُوكَهُ فليس مِنَّا»

[صحيح.] - [رواه أبو داود.]

المزيــد ...

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফূ হিসেবে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা ক্রীতদাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” 

সহীহ - এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

যে লোক কারো স্ত্রীকে নষ্ট করার জন্য তার স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে, চাই নষ্টকারী পুরুষ হোক কিংবা মহিলা হোক, যেমন কোনো পুরুষ কারো স্ত্রীর নিকট তার স্বামীর দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা ও তার মন্দ স্বভাব-চরিত্র তোলে ধরার মাধ্যমে স্বামীকে ঘৃণার পাত্র বানায়, স্বামীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলে এবং তালাক বা খোলা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, সে আমাদের দলভুক্ত ও পন্থাভুক্ত নয়; বরং সে শয়তানের মতো কাজ করল। অনুরূপ যে লোক কারো ক্রতদাসকে নষ্ট করলো এবং তাকে এমন কিছু শিখালো, যাতে সে মনিবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং মনিবের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, সে আমাদের দলভুক্ত ও পন্থাভুক্ত নয়; বরং সে শয়তানের মতো কাজ করল।

হাদীস: যে ব্যক্তি তার কোনো (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে বছরব্যাপী বাক্যালাপ বন্ধ করবে, তা হবে তার রক্তপাত ঘটানোর মতো।

  হাদীস

عن أبي خِراش حَدْرَدِ بن أبي حَدْرَدٍ الأسْلَمِي -رضي الله عنه- مرفوعاً: «من هَجَر أخَاه سَنَة فهو كَسَفْكِ دَمِهِ»

[صحيح.] - [رواه أبو داود وأحمد.]

المزيــد ...

আবূ খিরাশ হাদরাদ ইবন আবূ হাদরাদ আসলামী থেকে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি তার কোনো (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে বছরব্যাপী বাক্যালাপ বন্ধ করবে, তা হবে তার রক্তপাত ঘটানোর মতো।” 

সহীহ - এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

কোনো শর‘ঈ উদ্দেশ্য ছাড়া যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাথে কথা বলা ছেড়ে দেয় এবং এ অবস্থায় এক বছর অতিবাহিত হয়, তার ওপর শাস্তি অবধারিত। যেমননিভাবে তার রক্ত প্রবাহিত করা শাস্তিকে অবধারিত করে। আর বিচারক তাকে ফিরানোর জন্য এবং অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে শাস্তি প্রয়োগ করা তার জন্য উপযুক্ত মনে করবে তাই তার শাস্তি। আর যদি তাকে ছেড়ে দেওয়া শর‘ঈ কোনো উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে যেমন বিদ‘আতী ও ফাসিকদের সাথে কথা না বলা। তখন উচিৎ হলো যতদিন পর্যন্ত তাদের থেকে কোনো তাওবাহ অথবা হকের দিকে ফিরে আসা না প্রকাশ পায় ততদিন পর্যন্ত তাদের সাথে কথা না বলার ওপর স্থায়ী থাকা।

হাদীস: নিশ্চয় শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে যে, আরব উপদ্বীপে সালাত আদায়কারীরা তার ইবাদত করবে, তবে তাদের মধ্যে উস্কানি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাশ হয় নি।

  হাদীস

عن جابر -رضي الله عنه- سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «إن الشَّيطان قد يَئِسَ أن يَعْبُدَه المُصَلُّون في جَزيرة العَرب، ولكن في التَّحْرِيشِ بينهم»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

জাবির রাদয়িাল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, “নিশ্চয় শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে যে, আরব উপদ্বীপে সালাত আদায়কারীরা তার ইবাদত করবে, তবে তাদের মধ্যে উস্কানি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাশ হয় নি।” 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা

জাযীরার (আরব উপদ্বীপের) অধিবাসীরা মক্কা বিজয়ের পূর্বে যেমনি-ভাবে মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিল, তাতে পুনরায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে শয়তান নিরাশ, তবে সে উস্কানি দেওয়াকে যথেষ্ট মনে করে এবং তাতে সন্তুষ্ট। আর তা হলো যুদ্ধ, বিদ্রোহ ,ফিতনা ,ঝগড়া, বিবাদ ও দুশমনি ইত্যাদি উৎপাদন করার মাধ্যমে।

হাদীস: এক পুরুষ আরেক পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না এবং এক নারীও আরেক নারীর সতরের দিকে তাকাবে না। কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে এক কাপড়ে শোবে না এবং কোনো নারীও অন্য নারীর সাথে এক কাপড়ে শোবে না।

  হাদীস

عن أبي سعيد -رضي الله عنه-: أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال: «لا يَنظر الرَّجُل إلى عَوْرَة الرجل، ولا المرأة ُإلى عَوْرَة المرأة،ِ ولا يُفْضِي الرَّجُلُ إلى الرَّجُل في ثوب واحد، ولا تُفْضِي المرأةُ إلى المرأةِ في الثوب الواحد»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এক পুরুষ আরেক পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না এবং এক নারীও আরেক নারীর সতরের দিকে তাকাবে না। এক কাপড়ে কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে শোবে না এবং কোনো নারীও অন্য নারীর সাথে এক কাপড়ে শোবে না।” 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

এক নারী আরেক নারীর সতরের দিকে তাকাবে না। এখানে দৃষ্টিপাতকারী নারীকে আরেক নারীর সতরের দিকে দৃষ্টিপাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি বিশেষ প্রয়োজনে কোনো নারী তার সতর খুলে, যেমন চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের সামনে সতর খুললে তখন তার কোনো বোন তার সাথে সেখানে উপস্থিত থাকলে সে বোনের জন্য উক্ত নারীর সতরের দিকে তাকানো জায়েয নয় অথবা বাতাস বা অন্য কোনো কারণে কোনো নারীর সতর খুলে গেলে অন্য নারী সে নারীর নাভী থেকে হাঁটুর মধ্যবর্তী সতরের দিকে তাকাবে না। পুরুষের বেলায়ও একই কথা। এক পুরুষ আরেক পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না। আর পুরুষের সতর নাভী ও হাঁটুর মধ্যবর্তী স্থান। যদি কোনো পুরুষের সতর প্রয়োজনে বা অনিচ্ছায় খুলে যায় তাহলে আরেক পুরুষের জন্য তার দিকে তাকানো জায়েয নয়। হঠাৎ যদি তার ভাইয়ের সতরের দিকে দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নিবে এবং দৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী করবে না। “এক কাপড়ে কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে শোবে না এবং কোনো নারীও অন্য নারীর সাথে এক কাপড়ে অবস্থায় শোবে না।” অর্থাৎ বস্ত্রহীন হয়ে একই কাপড়ে কোনো নারী বা পুরুষের শরীরের একের চামড়া অন্যের চামড়ার সাথে মিশতে পারবে না। কেননা একজনের গায়ের চামড়ার সাথে আরেকজনের চামড়ার স্পর্শ করা হচ্ছে তার সতর স্পর্শ করা এবং এভাবে স্পর্শ করা তার দিকে দৃষ্টিপাত করার মতোই নিষেধ; বরং আরো কঠোরভাবে হারাম। পুরুষের শরীর স্পর্শ করার যে বিধান নারী কর্তৃক অন্য নারীর শরীর স্পর্শ করারও একই বিধান। কারণ, হাদীসের ভাষ্য থেকে তাই বুঝা যাচ্ছে। দেখুন, ইকমালুল মু‘লিম শরহি মুসলিম (২/১৮৮); শরহু রিয়াদুস সালিহীন (৩/৩৬৪-৩৬৫)।

হাদীস: কিয়ামতের দিনে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে (বিশেষ) পতাকা নির্দিষ্ট হবে। বলা হবে যে, এটা অমুকের ছেলে অমুকের গাদ্দারির প্রতীক।

  হাদীস

عن عبد الله بن عمر -رضي الله عنهما- مرفوعاً: "إذا جمع الله -عز وجل- الأَوَّلِينَ والآخِرين: يرفع لكل غادر لِوَاءٌ، فيقال: هذه غَدْرَةُ فلان بن فلان". 

[صحيح.] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণিত “কিয়ামতের দিনে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে (বিশেষ) পতাকা নির্দিষ্ট হবে। বলা হবে যে, এটা অমুকের ছেলে অমুকের গাদ্দারির প্রতীক।” 

সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।

ব্যাখ্যা:

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যখন পূর্বের ও পরের সবাইকে একত্র করবেন তখন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতককে উপস্থিত করা হবে। আর তার সাথে থাকবে তার ঘাতকতার নির্দশন। আর তা হলো পতাকা যা তার সাথে মিলিত হবে, তা দ্বারা মানুষের সামনে তাকে অপধস্থ করা হবে।

হাদীস: আমার উম্মতের ভেতর মুফলিস/গরীব হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন উঠবে অনেক সালাত, সিয়াম ও যাকাত নিয়ে, সে আসবে ঠিকই, অথচ একে গালি দিয়েছে, একে অপবাদ দিয়েছে, এর মাল খেয়েছে, এর রক্ত প্রবাহিত করেছে, একে প্রহার করেছে, ফলে একে তার সাওয়াব থেকে দেওয়া হবে, এবং একে তার সাওয়াব থেকে দেওয়া হবে।

  হাদীস

عن أبي هريرة -رضي الله عنه- مرفوعاً: «أتدرون من المفلس؟» قالوا: المُفْلِس فينا من لا دِرهَمَ له ولا مَتَاع، فقال: «إن المفلس من أمتي من يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة، ويأتي وقد شَتَمَ هذا، وقذف هذا، وأكل مال هذا، وسَفَكَ دم هذا، وضرب هذا، فيعطى هذا من حسناته، وهذا من حسناته، فإن فنيت حسناته قبل أن يُقْضَى ما عليه، أخذ من خطاياهم فَطُرِحتْ عليه، ثم طُرِحَ في النار»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে?’’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কাছে কোন দিরহাম এবং কোনো আসবাব-পত্র নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাতের (নেকী) নিয়ে হাযির হবে। (কিন্তু এর সাথে সাথে সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারো (অবৈধরূপে) মাল ভক্ষণ করেছেকারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে, এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকীরাশি অন্যান্যদের দাবী পূরণ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’ 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেছেন যে, তোমরা কি জানো মুফলিস তথা অভাবী কে? তারা তাকে সেভাবেই সংবাদ দিল, যা মানুষের ভেতর প্রসিদ্ধ ছিল। তারা বলল, যার নিকট টাকা ও সামগ্রী নেই সেই অভাবী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সংবাদ দিলেন, এই উম্মতের মুফলিস হচ্ছে ওই ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন আসবে বড় সাওয়াব ও অনেক সৎকর্ম নিয়ে, যেমন সালাত, সিয়াম ও যাকাত। সে আসবে ঠিকই অথচ একে গালি দিয়েছে, একে প্রহার করেছে, তার সম্পদ ভক্ষণ করেছে, তাকে অপবাদ দিয়েছে, তার রক্ত প্রবাহিত করেছে, আর মানুষেরা তাদের হক নিতে চাইবে, যা তারা দুনিয়ায় নিতে পারেনি সেটা তারা আখিরাতে নিবে। আল্লাহ তাদের জন্য তার থেকে বদলা নিবেন, ফলে এ তার সাওয়াব নিবে, এ তার সাওয়াব নিবে এবং এ তার সাওয়াব নিবে ইনসাফের সাথে এবং বদলা নিবে যুলুম ব্যতীত। এভাবে যদি তার সাওয়াব শেষ হয়ে যায়, তাদের পাপ নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে এবং তাকে জাহান্নামে ফেলা হবে।

হাদীস: সবচেয়ে বড় মিথ্যাসমূহের অন্যতম হলো, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক এমন কাউকে পিতা বলে দাবী করা যিনি তার পিতা নয়, অথবা আপন চক্ষু দিয়ে (স্বপ্নে) এমন কিছু দেখার দাবি করা যা দেখতে পায়নি। অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এমন কথা বলার দাবি করা যা তিনি বলেন নি।

  হাদীস

عن وَاثِلَةَ بن الأَسْقَعِ ـ رضي الله عنه ـ مرفوعاً: «إن من أعظم الفِرَى أن يَدَّعِيَ الرجلُ إلى غير أبيه، أو يُرِي عَيْنَهُ ما لم تَرَ، أو يقول على رسول الله -صلى الله عليه وسلم- ما لم يَقْلْ»

[صحيح.] - [رواه البخاري.]

المزيــد ...

ওয়াছেলা ইবনুল আছকা‘ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ‘ সনদে বর্ণিত, “নিশ্চয় সবচেয়ে বড় মিথ্যাসমূহের অন্যতম হলো, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক এমন কাউকে পিতা বলে দাবী করা যিনি তার পিতা নয়। অথবা আপন চক্ষু দিয়ে (স্বপ্নে) এমন কিছু দেখার দাবি করা যা দেখতে পায়নি। অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এমন কথা বলার দাবি করা যা তিনি বলেন নি।” 

সহীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

মহান আল্লাহর ওপর সবচেয়ে কঠোর মিথ্যাচার হলো, কোনো ব্যক্তি নিজে তার আসল পিতাকে বাদ দিয়ে অপর কাউকে পিতা হওয়ার দাবি করলো বা অন্য কেউ তাকে অপরের সন্তান বললো আর সে উক্ত কথা স্বীকার করে নিল। এটি একটি বড় ধরনের মিথ্যাচার। আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট ও কঠোর মিথ্যাচারের আরেকটি হলো, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক স্বপ্নে এমন কিছু দেখার দাবি করা যা সে মোটেও দেখেনি। আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট ও কঠোর মিথ্যাচারের আরেকটি হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এমন কোনো কথা, কর্ম ও সমর্থনকে সম্পর্কযুক্ত করা যা তার থেকে পাওয়া যায়নি।

হাদীস: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তা তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!” আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না। এটি বর্ণনা করেছেন, আবূ দাউদ ও তিরমিযী। আর তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আর “যদি তার সাথে মিশে যায়” এ কথার অর্থ হলো যদি পানির সাথে ভালোভাবে তা মিশে যায়, তবে তার কঠিন দুর্গন্ধ ও কদর্যতার কারণে তার স্বাদ ও ঘ্রাণ পরিবর্তন হয়ে যাবে।

  হাদীস

عن عائشة -رضي الله عنها- قالت: قلت للنبي -صلى الله عليه وسلم-: حَسْبُك من صفية كذا وكذا. قال بعض الرُوَاة: تَعْني قَصِيرة، فقال: «لقد قُلْتِ كلِمَة لو مُزِجَت بماء البحر لَمَزَجَتْهُ!» قالت: وحَكَيْتُ له إِنْسَانًا فقال: «ما أُحِبُّ أَني حَكَيْتُ إِنْسَانًا وإن لي كذا وكذا»

[صحيح.] - [رواه أبو داود والترمذي وأحمد.]

المزيــد ...

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তা তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!” আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।” 

সহীহ - এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সাফিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহার অনুপুস্থিতিতে এমন কথা আলোচনা করেন যা তাকে মন্দ সাব্যস্ত করে এবং তাকে কষ্ট দেয়। আর তা হলো সে ছিল বেঁটে। এটি রাসূলের সামনে তাকে হেয় করা ও খাট করার শামিল। তাকে এ কথা বলার প্রতি উদ্ভুদ্ধ করছে তার প্রতি তার ঈর্ষা। সাধারণত নারীদের মধ্যে যা হয়ে থাকে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তা তার স্বাদ, রং এবং ঘ্রাণকে পরিবর্তন করে দেবে!” আর এটি এ বাক্যটি মারাত্মক হওয়া এবং এর ক্ষতি কঠিন হওয়ার কারণে। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। অর্থাৎ তাকে হেয় করার জন্য সে তার কর্মের মতোই কর্ম করল। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির অনুপুস্থিতিতে তাকে ছোট করা বা হেয় করার উদ্দেশ্যে তার সম্পর্কে কথা বলা অথবা তার কর্মের মতো কর্ম করা বা তার কথার মতো কথা বলা আমাকে কোন ক্রমেই খুশি করে না। যদিও তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ দুনিয়া প্রাপ্ত হই।

হাদীস: যদি আদম সন্তানের সোনার একটি উপত্যকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দু’টি উপত্যকা হোক। (কবরের) মাটিই একমাত্র তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে। আর যে তাওবা করে, আল্লাহ তাওবা গ্রহণ করেন।

  হাদীস

عن عبد الله بن عباس وأنس بن مالك وعبد الله بن الزبير وأبي موسى الأشعري -رضي الله عنهم- أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال: «لو أن لابنِ آدمَ واديًا من ذَهَبٍ أَحَبَّ أن يكونَ له واديانِ، ولَنْ يملأَ فَاهُ إلا الترابُ، ويَتُوبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ»

[صحيح.] - [حديث عبد الله بن عباس -رضي الله عنهما-: متفق عليه. حديث أنس بن مالك -رضي الله عنه-: متفق عليه. حديث عبد الله بن الزبير -رضي الله عنهما-: رواه البخاري. حديث أبي موسى الأشعري -رضي الله عنه-: رواه مسلم.]

المزيــد ...

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস, আনাস ইবন মালেক, আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর ও আবূ মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যদি আদম সন্তানের সোনার একটি উপত্যকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দু’টি উপত্যকা হোক। (কবরের) মাটিই একমাত্র তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে। আর যে তাওবা করে, আল্লাহ তাওবা গ্রহণ করেন।” 

সহীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যদি আদম সন্তান সোনা ভর্তি একটি উপত্যকা অর্জন করে, তবুও তার স্বভাবীয় লোভ-লালসায় সে চাইবে যে, তার কাছে আরো দু’টি উপত্যকা হোক। দুনিয়ার প্রতি তার লোভ বাকী থাকবেই যতক্ষণ না সে মারা যায়। অতঃপর তার কবরের মাটি তার পেট পূর্ণ করবে।

হাদীস: যে নিজেকে বড় মনে করে এবং চলার পথে অহংকার করে, সে আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তিনি তার ওপর ক্ষুব্ধ থাকবেন।

  হাদীস

عن عبد الله بن عمر -رضي الله عنهما- قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «مَنْ تَعَاظَمَ في نَفْسِهِ, واخْتَال في مِشْيَتِهِ, لَقيَ اللهَ وهُوَ عليهِ غَضْبَانُ»

[صحيح.] - [رواه أحمد والحاكم.]

المزيــد ...

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেমে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণিত, “যে নিজেকে বড় মনে করে এবং চলার পথে অহংকার করে, সে আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তিনি তার উপর ক্ষুব্ধ থাকবেন।” 

সহীহ - এটি হাকিম বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

হাদীসটি অহংকার ও বড়াই করার প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করছে। আর এই অহংকার ও বড়াই প্রকাশ পায়, তার চলাফেরায়, লেবাস-পোশাকে, কথা-বার্তায় এবং তার সবকিছুতে। আর যার অবস্থা এ ধরনের অহংকার করা হয়, সে মনে মনে নিজেকে অনেক বড় ও মহান মনে করে। সে মনে করে যে, অন্যান্যদের থেকে সে অধিক সম্মান পাওয়ার হকদার। সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, এমতাবস্থায় যে তিনি তার ওপর ক্ষুব্ধ থাকবেন।

হাদীস: আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, একজন মহিলা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এক সতীন আছে, সুতরাং স্বামী আমাকে যা দেয় না, তা নিয়ে যদি পরিতৃপ্তি প্রকাশ করি, তাতে আমার কোন ক্ষতি হবে কি?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যা দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে পরিতৃপ্তি প্রকাশকারী মিথ্যা দুই বস্ত্র পরিধানকারীর ন্যায়।”

  হাদীস

عن أسماء -رضي الله عنها-: أن امرأة قالت: يا رسول الله، إن لي ضَرَّةً فهل علي جُناح إن تشبَّعْتُ من زوجي غير الذي يعطيني؟ فقال النبي -صلى الله عليه وسلم-: «المُتَشَبِّعُ بما لم يُعطَ كلابس ثَوْبَي زُورٍ»

[صحيح.] - [متفق عليه.]

المزيــد ...

আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, একজন মহিলা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এক সতীন আছে, সুতরাং স্বামী আমাকে যা দেয় না, তা নিয়ে যদি পরিতৃপ্তি প্রকাশ করি, তাতে আমার কোন ক্ষতি হবে কি?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যা দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে পরিতৃপ্তি প্রকাশকারী মিথ্যা দুই বস্ত্র পরিধানকারীর ন্যায়।” 

সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।

ব্যাখ্যা:

একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, তার এক সতীন আছে। সে তাকে তার স্বামী অমুক জিনিষ দিয়েছে, অমুক জিনিষ দিয়েছে ইত্যাদি বলতে পছন্দ করে, অথচ সে মিথ্যুক। কিন্তু তার উদ্দেশ্য হলো, তার সতীনকে ক্ষুব্ধ করা। এ বিষয়ে তার ওপর কোন গুনাহ আছে কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জানান যে, যা তার কাছে নাই তা দ্বারা সাজ-সজ্জা অবলম্বন কারী, এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করল। সে অবশ্যই অন্যায়কারী ও মিথ্যাবাদী।

হাদীস: গালাগালিতে রত দু’জন ব্যক্তি যে সব কুবাক্য উচ্চারণ করে, সে সব তাদের মধ্যে সূচনাকারীর উপরে বর্তায়; যতক্ষণ না অত্যাচারিত ব্যক্তি (প্রতিশোধ গ্রহণে) সীমা অতিক্রম করে।

  হাদীস

عن أبي هريرة -رضي الله عنه-: أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال: «المُتَسَابَّانِ ما قالا فَعَلى البَادِي منهما حتى يَعْتَدِي المَظْلُوم»

[صحيح.] - [رواه مسلم. ملحوظة: لفظ مسلم: «المستبان ما قالا فعلى البادئ، ما لم يعتد المظلوم»، والمصنف ذكره بالمعنى.]

المزيــد ...

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গালাগালিতে রত দু’জন ব্যক্তি যে সব কু-বাক্য উচ্চারণ করে, সে সব তাদের মধ্যে সূচনাকারীর উপরে বর্তায়; যতক্ষণ না অত্যাচারিত ব্যক্তি (প্রতিশোধ গ্রহণে) সীমা অতিক্রম করে।” 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

গালাগালি দাতা দুই ব্যক্তি থেকে যে সব গালবাক্য প্রকাশ পায়, তার গুনাহ তাদের মধ্য থেকে সূচনাকারীর ওপর বর্তাবে। কারণ, সেই তার কর্মে সীমালঙ্ঘনকারী। আর দ্বিতীয় জনের ওপর কোনো গুনাহ হবে না। কারণ, সে তার ওপর যে যুলুম করেছে, তার প্রতিবাদ করার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত। কিন্তু যদি মাযলুম ব্যক্তি যালিম ব্যক্তির ওপর সীমালঙ্ঘন করে যেমন সে অনুমতিপ্রাপ্ত সীমানা লঙ্ঘন করল, তখন মাযলুম ব্যক্তির গুনাহ সূচনাকারীর চেয়েও অধিক হবে।

হাদীস: ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তাঁর নিকট একটি লোককে নিয়ে আসা হল এবং তার সম্পর্কে বলা হল যে, ‘এ লোকটি অমুক। তার দাড়ি মদ টপকাচ্ছে।’ তিনি বললেন, ‘আমাদেরকে জাসূসী করতে (গুপ্ত দোষ খুঁজে বেড়াতে) নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি কোন অপরাধ আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আমরা তার কারণে তাকে পাকড়াও করব।’ হাদীসটি হাসান-সহীহ। এটি আবূ দাউদ সহীহ বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবিক সনদ দ্বারা বর্ণনা করেছেন।

 হাদীস

عن ابن مسعود -رضي الله عنه-: أنه أُتِي برجُل فقيل له: هذا فُلان تَقْطُر لحيته خَمْرًا، فقال: إنا قد نُهِيْنَا عن التَّجَسُّسِ، ولكن إن يَظهر لنا شَيْءٌ، نَأخُذ به

[صحيح.] - [رواه أبو داود.]

المزيــد ...

ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তাঁর নিকট একটি লোককে নিয়ে আসা হল এবং তার সম্পর্কে বলা হল যে, ‘এ লোকটি অমুক। তার দাড়ি মদ টপকাচ্ছে।’ তিনি বললেন, ‘আমাদেরকে জাসূসী করতে (দোষ খুঁজে বেড়াতে) নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি কোন অপরাধ আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আমরা তার কারণে পাকড়াও করব। 

সহীহ - এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হলো যে মদ পান করেছে। আর তার অবস্থাই তা বুঝাচ্ছিল, যেমন তার দাঁড়ি মদ টপকাচ্ছিল। তখন তিনি তাদের উত্তর দেন যে, আমাদের অপরের বিষয়ে গোয়েন্দাগিরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, লোকটির বাহ্যিক অবস্থা দ্বারা বুঝা যায় সে তা গোপনে পান করেছিল কিন্তু এ সব লোক তার ওপর নজরদারি করে তাকে এ অবস্থায় বের করে নিয়ে এসেছে। তবে যখন আমাদের কাছে কোনো অপরাধ স্পষ্ট ও জাহির হয় এবং ন্যায়পরায়ন সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয় অথবা তার ওপর কোন প্রকার গোয়েন্দাগিরী ছাড়াই সে নিজের অপরাধ স্বীকার করে, তখন আমার তার দাবি অনুযায়ী তার ওপর হদ বা শাস্তি বাস্তবায়ন করব। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পর্দা দ্বারা আবৃত হল আমরা তাকে পাঁকড়াও করবো না।

হাদীস: ‘‘কোন মুসলিমের জন্য এ কাজ বৈধ নয় যে, তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’

  হাদীস

عن أبي هريرة -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «لا يَحِلُّ لمسلم أن يَهْجُرَ أخَاه فوق ثَلَاث، فمن هَجَر فوق ثَلَاث فمات دخل النَّار»

[صحيح.] - [رواه أبو داود وأحمد.]

المزيــد ...

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন মুসলিমের জন্য এ কাজ বৈধ নয় যে, তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ 

সহীহ - এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

হাদীসের অর্থ হলো; কোনো মুসলিমের জন্য তার অপর মুসলিম ভাইকে তিন দিনের বেশি বর্জন করা হালাল নয়। তবে যদি তা নিজ ইচ্ছা অথবা দুনিয়াবী কারণে হয়ে থাকে। আর শরীয়তের কোনো উদ্দেশ্যে হাসিল করার জন্য তা জায়েয; বরং তা কখনো ওয়াজিব হয়। যেমন তাওবা না করা পর্যন্ত বিদআতী, পাপী, ফাসিকদের সঙ্গ পরিত্যাগ করা বৈধ। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে তিন দিনের বেশি শরীয়ত সম্মত কোনো কারণ ছাড়াই বর্জন করবে, অতঃপর সে এ গুনাহ্য় অটল থাকাবস্থায় মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এটি জানা আছে যে, গুনাহ এর কারণে যে মুসলিম জাহান্নামের উপযুক্ত হয় এবং আল্লাহ যাকে ক্ষমা করেননি সে যদি জাহান্নামে ঢুকে, তবে তা থেকে অবশ্যই বের হবে। আর জাহান্নামে শুধু কাফিররাই চিরস্থায়ী হবে। তারাই সেখানকার আসল বাসিন্দা এবং তারা তা থেকে বের হওয়ার কোনো পথ পাবে না।

হাদীস: হিশাম ইবনে হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, সিরিয়ায় এমন কিছু চাষী লোকের নিকট দিয়ে তাঁর যাত্রা হচ্ছিল, যাদেরকে রোদে দাঁড় করিয়ে তাদের মাথার উপর তেল ঢেলে দেওয়া হচ্ছিল। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘ব্যাপার কী?’ বলা হল, ‘ওদেরকে জমির কর (আদায় না দেওয়ার) জন্য সাজা দেওয়া হচ্ছে।’ অন্য বর্ণনায় আছে যে, ‘রাজস্ব (আদায় না করার) কারণে ওদেরকে বন্দী করা হয়েছে।’ হিশাম বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহ তা‘আলা সে সব লোকেদেরকে কষ্ট দেবেন, যারা লোকেদেরকে দুনিয়ায় কষ্ট দেয়।” অতঃপর হিশাম আমীরের নিকট গিয়ে এ হাদীসটি শুনালেন। তিনি তাদের সম্পর্কে নির্দেশ জারি করলেন এবং তাদেরকে মুক্ত ক’রে দিলেন। হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। ‘আন্বাত’ হচ্ছে অনারবী কৃষক।

  হাদীস

عن هشام بن حكيم بن حزام -رضي الله عنهما-: أنه مَرَّ بالشَّام على أُناس من الأَنْبَاطِ، وقد أُقيموا في الشمس، وصُبَّ على رؤوسهم الزَّيْتُ! فقال: ما هذا؟ قيل: يُعَذَّبُون في الخَرَاج - وفي رواية: حُبِسُوا في الجِزْيَةِ - فقال هشام: أشْهَدُ لسَمِعْتُ رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول: «إن الله يُعَذِّب الَّذِينَ يُعَذِّبُونَ الناس في الدنيا». فدخل على الأمير، فحدثه، فأمر بهم فَخُلُّوا

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

হিশাম ইবনে হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, সিরিয়ায় এমন কিছু চাষী লোকের নিকট দিয়ে তাঁর যাত্রা হচ্ছিল, যাদেরকে রোদে দাঁড় করিয়ে তাদের মাথার উপর তেল ঢেলে দেওয়া হচ্ছিল। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘ব্যাপার কী?’ বলা হল, ‘ওদেরকে জমির কর (আদায় না দেওয়ার) জন্য সাজা দেওয়া হচ্ছে।’ অন্য বর্ণনায় আছে যে, ‘রাজস্ব (আদায় না করার) কারণে ওদেরকে বন্দী করা হয়েছে।’ হিশাম বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহ তা‘আলা সে সব লোকেদেরকে কষ্ট দেবেন, যারা লোকেদেরকে দুনিয়ায় কষ্ট দেয়।” অতঃপর হিশাম আমীরের নিকট গিয়ে এ হাদীসটি শুনালেন। তিনি তাদের সম্পর্কে নির্দেশ জারি করলেন এবং তাদেরকে মুক্ত ক’রে দিলেন। 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যা:

হিশাম ইবনে হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সিরিয়ায় এমন কিছু অনারব চাষী লোকের নিকট দিয়ে যাত্রা করছিলেন, যাদেরকে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে তাদের পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আর তাদের শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর জন্য তাদের মাথার উপর তেল ঢেলে দেওয়া হচ্ছিল। কারণ, সূর্যের গরমের সাথে তেল ঢালা তাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। হিসাম রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের শাস্তি দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জিেজ্ঞস করলে তারা তাকে উত্তর দেন যে, তারা যে জমিনে চাষাবাদ করে সে জমির কর না দেওয়ার জন্যে তাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে।’ অন্য বর্ণনায় আছে যে, ‘রাজস্ব আদায় না করার কারণে তাদেরকে শাস্তি দেওয় হচ্ছে, যা তাদের ওপর ধার্য ছিল।’ হিশাম রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন এ সব দুর্বল লোকদের এ ধরনের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে তা দেখলেন, তখন তিনি বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহ তা‘আলা সে সব লোকেদেরকে কষ্ট দেবেন, যারা লোকেদেরকে এমন কষ্ট দেয়, যে কষ্ট পাওয়ার সে হকদার নয়। আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামাতের দিন শাস্তির বিনিময় স্বরূপ অবশ্যই তাদের শাস্তি দেবেন। অতঃপর হিশাম তার কথাটি বলার পর আমীরের নিকট প্রবেশ করলেন এবং আমীরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে যা শুনেছেন তা জানিয়ে দিলেন। তারপর আমীর কোন প্রকার কাল ক্ষেপণ না করে তাদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিলেন। তবে এর অর্থ এ নয় যে, অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়া যাবে না এবং তাকে এমন কোন গাল মন্দ বলা যাবে না যা তাকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে এবং খারাপ কর্ম থেকে ফিরিযে দেয়। বরং এখানে নিষিদ্ধ বিষয় হলো তার অন্যায় থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত শাস্তি।

হাদীস: যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে নিজের গোলামকে মারধর করে অথবা তাকে চপেটাঘাত করে, তাকে মুক্ত করে দেয়াই হচ্ছে তার কাফফারা।

  হাদীস

عن ابن عمر -رضي الله عنهما- أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: «من ضرب غلاما له حدا لم يأته، أو لَطَمَه، فإن كفارته أن يعتقه»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছাড়াই নিজের গোলামকে মারধর করে অথবা তাকে চপেটাঘাত করে, তাকে মুক্ত করে দেওয়াই হচ্ছে তার কাফফারা।”  [সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে পাপ করলে শাস্তি হতে পারে এমন পাপ করা ছাড়াই নিজের গোলামকে যে ব্যক্তি মারধর করে অথবা চপেটাঘাত করে, তাকে মুক্ত করে দেওয়াই হচ্ছে তার কাফফারা।

হাদীস: যারা যুদ্ধে যায় নি, তাদের জন্য মুজাহিদদের স্ত্রীগণ এমন হারাম, যেমন তাদের জন্য তাদের মাতাগণ হারাম।

 

হাদীস

عن بريدة -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «حُرْمَةُ نساء المجاهدين على القَاعِدِين كَحُرْمَةِ أُمَّهَاتِهِم، ما من رَجُلٍ من القَاعِدِين يَخْلِف رجُلا من المجاهدين في أهله، فَيَخُونُهُ فيهم إلا وقَف له يوم القيامة، فيأخذ من حسناته ما شاء حتى يَرْضى» ثم التفت إلينا رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فقال: «ما ظنَّكم؟»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, “যারা যুদ্ধে যায় নি, তাদের জন্য মুজাহিদদের স্ত্রীগণ এমন হারাম, যেমন তাদের জন্য তাদের মাতাগণ হারাম। আর কোনো মুজাহিদের পরিবারের ব্যাপারে কোনো ব্যক্তি যদি জিম্মাদার হয় অতঃপর তার পরিবারের ক্ষেত্রে তার খিয়ানত করে, তাহলে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার গতি রোধ করে দাঁড়াবে এবং সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তার আমল হতে যা ইচ্ছা কেড়ে নিবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকালেন এবং বললেন, “তোমাদের ধারণা কী?” (অর্থাৎ তোমাদের ধারনায় সে কী পরিমাণ গ্রহণ করবে!) 

[সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:

একটি নীতি হচ্ছে, পরনারী পর পুরুষের জন্য হারাম। আর হারামের পরিমাণটা আরো বেড়ে যায় মুজাহিদদের স্ত্রীদের ব্যাপারে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছেন এবং তাদের স্ত্রীগণকে পশ্চাতে রেখে গেছেন তাদের দেখা-শুনাকারীদের দায়িত্বে। সুতরাং যারা যুদ্ধে যায় নি তাদের জন্য আবশ্যক হলো মুজাহিদদের স্ত্রীগণের মান-সম্মান রক্ষার ব্যাপারে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা, তাদের সাথে নির্জনে মিলিত না হওয়া, তাদের দিকে দৃষ্টি না দেওয়া ও তাদের সাথে অশ্লীল কথাবার্তা না বলা। কেননা তারা সেসব লোকদের জন্য এমন হারাম যেমন তাদের জন্য তাদের মাতাগণ হারাম। তাছাড়া তারা (মুজাহিদগণ) তাদেরকে যুদ্ধে না নিয়ে বাড়িতে এ জন্য রেখে গেছেন যাতে তাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করেন। তাই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা যুদ্ধে যায় নি তাদের ওপর ওয়াজিব হলো মুজাহিদের পরিবারের প্রয়োজন মেটানো এবং তাদের কোনো খিয়ানত না করা, তাদের দিকে না তাকানো অথবা হারাম কোনো কাজ করার চেষ্টা না করা, তাদের দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, উপকারী ও কল্যাণকর জিনিস পৌঁছানো এবং কষ্টকর জিনিস থেকে দূরে রাখার ব্যাপারে কোনো ধরণের ত্রুটি না করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “যে ব্যক্তি মুজাহিদের অবর্তমানে তার স্ত্রীর ব্যাপারে খিয়ানত করার দুঃসাহস দেখাবে এবং তার খিয়ানত করবে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন উক্ত মুজাহিদকে খিয়ানতকারীর আমলনামা থেকে যতো খুশী ততো নেক আমল কেড়ে নেওয়ার অনুমতি দিবেন, যাতে তার চক্ষু শীতল হয়ে যায়।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমাদের ধারণা কী?” অর্থাৎ সে পরিস্থিতিতে খিয়ানতকারীর আমলনামা থেকে মুজাহিদ কতো বেশি পরিমাণ আমল নিবে সে ব্যাপারে তোমাদের ধারণা কী? অর্থাৎ সে এতো বেশি আমল নিবে যে, খিয়ানতকারীর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। [দেখুন, মিরকাতুল মাফাতীহ (৬/২৪৬১); শরহি সুনানি আবী দাঊদ লিল আব্বাদ, ইলেকট্রনিক কপি। ]

 

হাদীস: ১৭৯০- হাম্মাম ইবনে হারেস হতে বর্ণিত, তিনি মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেছেন; এক ব্যক্তি উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সামনেই তাঁর প্রশংসা শুরু করলে মিকদাদ হাঁটুর উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তার মুখে কাঁকর ছিটাতে শুরু করলেন। তখন উসমান তাঁকে বললেন, ‘ কী ব্যাপার তোমার?’ তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা (মুখোমুখি) প্রশংসাকারীদের দেখলে তাদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দিয়ো।” হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

  হাদীস

عن المقداد -رضي الله عنه-:أن رجلا جعل يمدح عثمان -رضي الله عنه- فعَمِدَ المقداد، فجَثَا على ركبتيه، فجعل يَحْثُو في وجهه الحَصْبَاءَ. فقال له عثمان: ما شأنك؟ فقال: إن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال: «إذا رأيتم المَدَّاحِينَ، فاحْثُوا في وجوههم التراب»

[صحيح.] - [رواه مسلم.]

المزيــد ...

হাম্মাম ইবনে হারেস হতে বর্ণিত, তিনি মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেছেন; এক ব্যক্তি উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর প্রশংসা শুরু করলে মিকদাদ হাঁটুর উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তার মুখে কাঁকর ছিটাতে শুরু করলেন। তখন উসমান তাঁকে বললেন, ‘ কী ব্যাপার তোমার?’ তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা (মুখোমুখি) প্রশংসাকারীদের দেখলে তাদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দিয়ো।” 

[সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা:-

মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন; এক ব্যক্তি উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সামনেই তাঁর প্রশংসা শুরু করলে মিকদাদ তার স্বীয় হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসলেন এবং ছোট ছোট পাথর কুড়িয়ে প্রশংসাকারীর মুখে নিক্ষেপ করলেন। তখন উসমান তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ কী ব্যাপার তুমি এমন করলে কেন?’ তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুখোমুখি) প্রশংসাকারীদের দেখলে তাদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।”



(ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে📚 এখানে পাবেন🎶প্রচুর অডিও সিরিজ🎶100 এর বেশী শায়খ ভিত্তিক অডিও 90 এর উপর 🎶বিষয় ভিত্তিক অডিও🌎অডিও কুরআন এবং অনলাইনে অডিও শুনুন🎶এছাড়াও বিষয় ভিত্তিক ভিডিও,♂সহীহ-সুন্নাহ-ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল,ইসলামিক পত্রিকা 📚 and অনেক জানা-অজানা-আর্টিকল 📚 বিষয় ভিত্তিক সিরিজ আকারে http://islamicebookandpic.in/ ইসলামিক গালারি 👇বিশেষ দ্রস্টব্যঃ-👇 ওয়েবসাইট sarolpoth.blogspot.com/ ইসলামিক সমস্থ প্রগ্রাম একসাথে পেতে http://salafimp3web.blogspot.com/👉 অডিও সমাহার👈 👉 https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/ সমস্ত ইসলামিক বই👆

Post a Comment

0 Comments