🔴কোন খাতগুলোতে যাকাত বণ্টন করতে হবে?এবং খাতগুলি।
إِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ
وَالْمَسٰكِينِ وَالْعٰمِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِى
الرِّقَابِ وَالْغٰرِمِينَ وَفِى سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً
مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০] এ আয়াতে সদাক্বাহ তথা যাকাতের সম্পদ ব্যয় করার খাত উল্লেখ করা হয়েছে।
যাকাতের
সম্পদ আট শ্রেণির সকলের মাঝে বণ্টন করতে হবে, না কোন একশ্রেণিকে দিলেই হবে? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত
পাওয়া গেলেও সঠিক কথা হল যখন যেথায় বেশি প্রয়োজন হবে তখন সে খাতেই ব্যয় করা উত্তম।
⭕আটটি খাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
✅১.ফকীর: ইবনু উমার(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: সদাক্বাহ ধনী ও সুস্থ সবল
লোকের জন্য হালাল নয়। (আবূ দাঊদ হা: ১৬৩৪, তিরমিযী হা: ৬৫২, সনদ সহীহ)
✅২. মিসকীন:
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
বলেন: মিসকীন সেই ব্যক্তি নয় যে এক লোকমা বা দু’ লোকমা, একটি খেজুর, দুটি খেজুরের জন্য
মানুষের দ্বারে দ্বারে চেয়ে বেড়ায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসল (সাঃ)! তাহলে মিসকীন
কে? রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বললেন: যার কাছে এমন
কিছু নেই যার দ্বারা সে অমুখাপেক্ষী হতে পারে, যার এমন অবস্থা প্রকাশ পায় না যা দেখে
তাকে সদাক্বাহ দেয়া হবে এবং মানুষের কাছেও চায় না।
(সহীহ বুখারী হা: ১৪৭৯)
হাদীস
দ্বারা বুঝ গেল যারা ফকীর থেকে একটু স্বচ্ছল তারাই মিসকীন।
✅৩.তহসীলদার বা যাকাত সংগ্রহকারী:
এ থেকে
উদ্দেশ্য সরকারের সে সব কর্মচারী যারা যাকাত ও সদাক্বাহ আদায় ও বণ্টন এবং
হিসাব-নিকাশের কাজে নিয়োজিত থাকে। (পারিশ্রমিক ও বেতন স্বরূপ এদেরকে যাকাতের মাল
থেকে দেয়া যাবে।)
✅৪. যাদের মনকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা আবশ্যক:
প্রথমতঃ সে কাফির যে ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়। এমন
ব্যক্তিকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে ইসলাম কবূল করবে।
দ্বিতীয়তঃ সে সকল নওমুসলিম যাকে
ইসলামে দৃঢ় থাকার জন্য সাহায্য করা হয়।
তৃতীয়তঃ সে লোকও এতে শামিল যাকে
সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে নিজের এলাকার লোকেদেরকে মুসলিমদের ওপর হামলা করা
থেকে বিরত রাখবে এবং অনুরূপভাবে সে নিজের নিকটতম মুসলিমদেরকে রক্ষা করবে।
আবূ
সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: নাবী (সাঃ)-এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ করা হল।
এরপর তিনি সেগুলো চারজনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আর বললেন: তাদেরকে (এর দ্বারা)
ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করছি। ...........হাদীসের শেষ পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৬৭)
✅৫. দাসমুক্তি:
নাবী(সাঃ)
বলেন: তিন প্রকার লোকেদের সাহায্য করা আল্লাহ তা‘আলার ওপর আবশ্যক।
১. ঐ যোদ্ধা যে আল্লাহ
তা‘আলার পথে জিহাদ করে। ২. ঐ চুক্তিবদ্ধ দাস, যে তার চুক্তির টাকা আদায়ের ইচ্ছা
করে। এরূপ চুক্তিবদ্ধ দাস যাকাতের সম্পদের হকদার। ৩. ঐ ব্যক্তি যে বিবাহ করতে চায়
পবিত্র থাকার জন্য। (তিরমিযী
হা: ১৬৫৫, নাসাঈ হা: ৩১২০, সনদ সহীহ)
✅৬. ঋণগ্রস্ত লোক:
প্রথমত: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য যে
ব্যক্তি নিজ পরিবারের খরচাদি এবং জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে লোকেদের
কাছে ঋণ গ্রহণ করেছে। আর তার কাছে এমন কোন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নেই যা
বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: এমন
যামিনদার ব্যক্তি যে কারো যামিন হয়েছে, অতঃপর যামানতের টাকা তার আসল
যিম্মাদার আদায় করতে না পারায় তার ঘাড়ে এসে পড়েছে।
তৃতীয়ত: যার ফসলাদি দুর্যোগ এসে ধ্বংস করে
দিয়েছে বা বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিঃস্ব হয়েছে ফলে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে
গেছে।
অর্থাৎ
যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করে তাদের সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র ও প্রয়োজনীয়
জিনিসপত্র ক্রয় বাবদ এবং মুজাহিদদের ব্যয় বাবদ। অন্য একটি হাদীসে হাজ্জ ও উমরাকে
ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে।
✅৮.মুসাফির:
যদি
কোন মুসাফির বৈধ সফরে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে- অথচ সে তার এলাকায় প্রচুর
সম্পদের অধিকারী সে ব্যক্তি প্রয়োজন মিটানোর জন্য যাকাতের হকদার।
যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদের স্ত্রী
যায়নাব(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে
এসে বললেন: আমি আমার স্বামীকে যাকাত দিতে চাই এটা কি সঠিক হবে? রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বললেন:
হ্যাঁ। এতে তোমার দু’টি প্রতিদান রয়েছে, এক. যাকাত প্রদানের জন্য, দুই. আত্মীয়তা সম্পর্ক
বজায় রাখার জন্য। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৬৬, সহীহ মুসলিম হা: ১০০০)
✅১.স্বর্ণ, রোপ্য ও নগদ টাকার যাকাত: কারো মালিকানায় বিশ দিনার অর্থাৎ
সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়াান্ন ভরি রোপ্য বা তার সমপরিমাণ নগদ টাকা থাকলে
এবং এক বছর পূর্ণ হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে যাকাত
দিতে হবে।
✅২. ব্যবসার মালের যাকাত: ব্যবসার মালপত্রের দাম নিসাব পরিমাণ
হলে এবং পূর্ণ এক বছর থাকলে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।
✅৩. গৃহপালিত পশুর যাকাত: গৃহপালিত পশুর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য
শর্ত হল এমন পশু হওয়া যা সারা বছর এমনি মাঠে চড়ে বেড়ায় তা দেখা শুনা করতে তেমন কোন
খরচ হয় না।
ক. উট: সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৫
হতে ৯টি, এতে যাকাত দিতে হবে একটি ছাগল।
খ. গরু বা মহিষ:
সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৩০ হতে ৩৯টি, এতে যাকাত দিতে হবে এক বছরের একটি বাচ্চা গরু।
গ. ছাগল বা ভেড়া: সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৪০ হতে ১২০টি, এতে যাকাত দিতে হবে একটি ছাগল।
সর্বক্ষেত্রে শর্ত হল এক বছর পূর্ণ হতে হবে।
আমরা বলব: উপযুক্ত হলো: যেই খাতের প্রয়োজন অতি তীব্র। কারণ এরা প্রত্যেকে যাকাত খাওয়ার বৈশিষ্টধারী।
সুতরাং যার প্রয়োজন তীব্র সেই সর্বাধিক উপযুক্ত। সাধারণতঃ এদের মধ্যে
গরীব-মিসকীনরাই অধিক প্রয়োজনগ্রস্ত। এ কারণে আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে প্রথমে উল্লেখ
করেছেন। তিনি বলেন: “যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মী ও যাদের
চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের জন্য এবং ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে যারা আছে তারা
ও মুসাফিরদের খাতে। এটি আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।" [সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০]
আল্লাহই
সর্বজ্ঞ। মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১৮/৩৩১-৩৩৯)
⭕আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
✅১. যাকাত ব্যয়ের খাত জানতে পারলাম।
✅২. যাকাতের প্রকৃত হকদার কারা তাও অবগত হলাম।
✅৩. যাকাতের নিসাব জানতে পারলাম।
✅১. স্বর্ণ= সর্বনিম্ন ৮৫ গ্রাম
✅২. রৌপ্য= সর্বনিম্ন ৫৯৫ গ্রাম
✅৩. নগদ অর্থ। ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য অথবা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের
যে দাম হয় সে পরিমান নগদ ক্যাশ থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে-চাই তা নিজের কাছে জমা
থাকুক অথবা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকুক।
সুতরাং
এ পরিমান টাকা কারো কাছে এক বছর জমা থাকলে তাতে যাকাত দেয়া ফরজ।
✅৪. ব্যবাসায়িক পণ্য
✅৫. জমিন থেকে উৎপাদিত রবিশষ্য (যেগুলো শুকিয়ে
সংরক্ষণযোগ্য) যেমন, ধান, গম, শরিসা, ভু্ট্টা ইত্যাদি অথবা ফলফলাদি (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য), যেমন খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি।
✅৬. গবাদী পশু (নির্দিষ্ট পরিমান সাপেক্ষে)
যে সকল জিনিসে
যাকাত নেই:
বসবাসের
জন্য বসত ভিটা, ঘর-বাড়ি, ফসলের জায়গা-জমি, বাড়ির ব্যবহারিক আসবাবপত্র, ব্যবহারের জন্য গাড়ি, ভাড়ার জন্য বাস, ট্রাক, লঞ্চ ইত্যাদি পরিবহন, ভাড়ার জন্য তৈরিকৃত
আবাসিক বিল্ডিং বা দোকান, নিজস্ব দোকান, দোকানের জায়গা ও ফার্নিচার (তবে দোকানের পণ্যের যাকাত দিতে হবে) ইত্যাদি।
এগুলোতে যাকাত নেই।
আল্লাহু আলম > আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
0 Comments