Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

প্যালেস্টাইনের জঙ্গী সংগঠন শিয়ানুসারী হামাসের স্বরূপ ও পরিণতি!

 প্যালেস্টাইনের জঙ্গী সংগঠন শিয়ানুসারী হামাসের স্বরূপ ও পরিণতি!

(অন্ধ হামাস ভক্তরা না পড়াই উত্তম!)

আল আকসা মসজিদে কতিপয় মুসল্লি ও পূর্ব জেরুজালেমে কিছু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছিলেন! তাতেই, হামাসের উদ্দেশ্য কিন্তু প্রায় অর্জিত হয়ে গিয়েছিল। হামাস তড়িগড়ি ইসরায়েলে লোকদেখানো রকেট ছুঁড়ে, আর বিমান হামলা করার অজুহাতে নেতানিয়াহুর হাতে তুলে দিল ছুতো মার্কা কারণ; আর ফিলিস্তিনের নিরহ মুসলিমদের লক্ষ্য করে করা বিমান হামলায় এতে এপর্যন্ত শতাধীক নিরিহ প্যালেস্টাইনি মুসলিম খুন হলেন! আর শিয়া-ইরান-ইসরায়েলের তৈরি শিয়া জঙ্গীগোষ্টী হামাস ইসরায়েলকে হামলা করার অজুহাত তুলে দেয়ার কাজেই আজন্ম নিয়োজিত ছিলো, আছে, আর যতদিন ফিলিস্তিন মুসলিম শূণ্য না হবে আর পুরো প্যালেস্টাইন ইসরায়েল না হবে, ততদিনই হামাস এমন চোরপুলিশ খেলা খেলতে থাকবে! যেমন ইরানের হাত থেকে সিরিয়াকে বের করে আনার মিশন ইউএই'র; সেই মিশন অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু, এসব চট করে হয়ে যায় না, অনেক জটিলতা থাকে। সময়ই বলে দিবে আমার এ কথার যথার্যতা!

কাতার আগে থেকে ব্রাদারহুডের সাথে, হামাসের সাথে যোগাযোগ রেখেছে, গাজায় পুনর্গঠন (রিকন্সট্রাকশন) কাজে ব্যাপক অর্থায়ন করে আসছে। সৌদী আরবের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় সৌদী আরবকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, হামাসকে জঙ্গিবাদ থেকে বের করে আনার কাজ শুরু করেছে। হামাসও এ থিসিসে ধীরে ধীরে লাইনে আসছিল। এমনকি ইসরায়েলে আর জঙ্গি হামলা করবে না বলে লিখিত চুক্তিও করেছিল এ শিয়াজঙ্গীগোষ্টী হামাস!

এসবের প্রেক্ষিতে পশ্চিম তীরের মতো গাজাতেও বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংককে সমন্বয়কারীর ভূমিকায় রেখে বিভিন্ন প্রকল্প শুরু হয়েছে। প্যালেস্টাইনের বাজেটের ৬০% আসে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে, করোনার কারণে সাহায্য কম এসেছে, কিন্তু গত এক বছরে গাজার কর্মচাঞ্চল্য এবং নিজস্ব ব্যাবসা বাণিজ্য আশাব্যাঞ্জক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। আর এটা সহ্য হয়নি ইসরায়েলের আর তাদের মিত্র শিয়া হামাসের!

সিরিয়ার প্রসঙ্গ শুরুতে তুলেছিলাম, তুলনা করতে সুবিধা হওয়ার জন্যে। সিরিয়া একটি রাষ্ট্র, আসাদ বংশ এর রাজত্বে আসীন (সেখানে নির্বাচন হয়, একথা মনে করিয়ে দিয়েন না, প্লিজ); ফলে, আসাদ যদি কনভিন্সড হয়, তার পক্ষে এক বলয় ছেড়ে অন্য বলয়ে যাওয়া সহজ (তারপরেও, অতো সহজ নয়)। কিন্তু হামাস একটি সংগঠন মাত্র। তারা যদি বলয় বদলায়, নিজেরাই আদর্শিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার রিস্ক থাকে। এবং, হামাস শিয়া জঙ্গি সংগঠন, তার টিকে থাকার ধরণ রাষ্ট্রের মতো নয়। তারা গাজায় যে সন্ত্রাসের শাসন (রুল অব টেরর) চালায়, তা খোদ ইসরায়েলের চেয়ে কোনো অংশে কম নিবর্তনমূলক নয়। সন্ত্রাস ছেড়ে দিলে, রাজনীতিকে প্রধান করে ফেললে, জবাবদিহিতার মানসিকতা আয়ত্ব করতে হবে; সেটা এরকম সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষে মোটেও সহজ নয়। 

প্যালেস্টাইনে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, এবারের নির্বাচন অনেকদিক দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু জঙ্গী শিয়াগোষ্টী হামাসের জন্যে এই নির্বাচন আত্মহত্যার মতো ব্যাপার। এই নির্বাচনের পরে, তারা সন্ত্রাসের ভাষায় কথা বলা ছাড়তে বাধ্য হবে। গাজার প্যালেস্টাইনিরা কিছুটা হলেও হামাসের নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীনতা ভোগ করবেন।

আরব এখন কাতার ও অন্যান্য নগদ উৎসের সাহায্য বণ্টনের কাজটি কার্যত হামাসের কব্জায়। গাজার অধিবাসীদের সাহায্য নির্ভরতা কমতে থাকলে, হামাসের কর্তৃত্ব কমতে থাকবে। অল্প সময়ে সেই দিকে আশাব্যাঞ্জক পরিবর্তন ঘটায় গাজাবাসী আশাবাদী, আর এসকল বিষয় মাথায় রেখে শিয়া জঙ্গীগোষ্টী হামাস আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

পশ্চিম তীরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নির্বিঘ্নে এগুচ্ছে, সেখানকার অধিবাসীরা আশার আলো দেখছেন, সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই রাজপথে উত্তাপ কমে এসেছে। পুরো রমজান জুড়েই আল আকসা মসজিদে শেখ জারাহ্‌ মহল্লার উচ্ছেদ নিয়ে এতো উত্তপ্ত বিক্ষোভের মধ্যেও, পশ্চিম তীরের নাবলুস, রামাল্লাহ্‌, জেনিন এর মতো শহরগুলো শান্ত ছিল। ভাল থাকা-খাওয়ার সম্ভাবনা কেউ সহজে রাজপথে বিলিয়ে দিয়ে আসতে চান না। এই পরিস্থিতিতে হামাসের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইয়াহ্যিয়া সিনওয়ার রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে গাজার (এবং প্যালেস্টাইন অথরিটির) কর্তৃত্বের দিকে নজর দিতে চান; উনি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিকাশ চান।

কিন্তু, হামাস যদি রাজনীতিকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে ফেলে, তাহলে তাদেরকে সন্ত্রাস ছাড়তে হবে; কিন্তু যাদের জন্ম জঙ্গীরূপে সে শিয়া জঙ্গীগোষ্টী হামাসের সন্ত্রাস ছাড়া গাজার অধিবাসীদের উপর কর্তৃত্ব ধরে রাখাও সম্ভব হবে না। এই পরিণতি হামাসের সামরিক অংশ ইজ্ আদ-দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড এর জন্যে আত্মহত্যার মতো ব্যাপার; এর প্রধান মুহাম্মাদ দেইফ এই নিয়ে রাজনৈতিক ফ্রন্টের নেতা  ইয়াহ্যিয়া সিনওয়ারর সাথে তিক্ততার মধ্যে আছেন।

ওদিকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছর পেরিয়ে গেলো, ইসরায়েল নির্বাচনের পর নির্বাচন করে যাচ্ছে, কিন্তু স্থায়ীভাবে সরকার গঠন করতে পারছে না কোনো দলই। নেতানিয়াহু সম্ভবত সর্বশেষ জায়োনিস্ট সরকার প্রধান হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে কোনো "বিশেষ সহযোগিতা" ছাড়া উনি শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই চোরে চোরে মাসতুতো ভাই এর মতো, এক সন্ত্রাসী আরেক সন্ত্রাসীর টিকে থাকার সহায়ক ভাই। একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরী না হলে, নেতানিয়াহু পরাজিত ও হামাসের সশস্ত্র অংশ বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যেতো। এখন মাসতুতো ভাইরা মিলে যা শুরু করতে পেরেছে, তাতে নেতানিয়াহুর নির্বাচনে বিজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলো। প্যালেস্টাইনের নির্বাচন পিছিয়েছিল, আরও গোলযোগের মধ্যে পড়বে, হামাসের সন্ত্রাস ছেড়ে ভাল হয়ে যাওয়া আরও একটু প্রলম্বিত হবে। কিন্তু, আমার মতে প্যালেস্টাইনে শান্তি ও সমৃদ্ধির সুবাতাস একদিন না একদিন বইবেই ইন শা আল্লাহ। আরবরা এবার ঠাণ্ডা মাথায় খেলছে, যে ব্যাপক অবকাঠামো ও শিক্ষা-চিকিৎসা-বানিজ্য উন্নয়ন প্রকল্পের মহোৎসব চলছে, তাতে, অল্প দিনের মধ্যেই প্যালেস্টাইনিদের জীবনযাত্রা আরামদায়ক হয়ে যাচ্ছে ইননশা আল্লাহ।

প্যালেস্টাইন স্টেটহুড এখন রিয়্যেলিটি, আন্তর্জাতিক অনেক ফোরামে "স্টেট অব প্যালেস্টাইন" অংশ নেয়; এমনকি ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন স্টেট একই ফোরামে দুইটি মেম্বার হিসেবে সনদ স্বাক্ষর করার নজির আছে। ফলে, আরবরা যে স্টেটহুড নিয়ে মাতামাতি না করে, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং শিক্ষা-চিকিৎসা ও বানিজ্যের আয়োজনকে ফার্স্ট প্রায়োরিটি ধরে এগুচ্ছে, তাতে আমাদের সমর্থন না থাকার কোনো কারণ দেখি না।

স্টেটহুড এখন কার্যত অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত, আপাতত এটা এভাবেই থাক। আনুষ্ঠানিকভাবে স্টেটহুড ঘোষণা করা হবে, ১৯৬৭ পূর্ব সীমানা ধরে। সৌদী বাদশাহ্‌ এই প্রশ্নে কোনো ছাড় দিবেন না, পিএ'র পক্ষেও এর বাইরে যাওয়া মানায় না। কিন্তু, এখন সেসব নিয়ে মাতামাতি করতে গেলে, সেটা আদায় করা সম্ভব হবে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না। কাজেই, যা আছে, তা সুন্দর শক্তভাবে সাজিয়ে নিয়ে, প্যালেস্টাইনের মানুষগুলোর উন্নত জীবন মানের নিশ্চয়তা তৈরী করে, '৬৭ পূর্ব সীমানার দাবিতে অটল থেকে বারগেইন চালানোর প্ল্যান খারাপ কী?

কিছু স্টুপিড অবশ্য বলবে, না হামাস রকেট ছুঁড়ে সব ছিঁড়ে ফেলবে। বাস্তবে, শতাধীক মানুষ অলরেডি খুন হয়ে গেছেন, হামাসের সন্ত্রাসীরা এখন ইন্দুরের গর্তে কেনো? নেতানিয়াহুর মাসতুতো ভাইরা পাল্টা হামলা করুক পারলে।




Post a Comment

0 Comments