حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي الدَّرَاوَرْدِيَّ - عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ " .
কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া মুমিনের জন্য কয়েদখানা[কারাগার] এবং কাফিরের জন্য জান্নাততুল্য।[সহীহ মুসলিম: ৭৩০৭-(১/২৯৫৬)(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৪৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২০১); তিরমিযি ২৩২৪, ইবন মাজাহ ৪১১৩, আহমদ ৮০৯০, ২৭৪৯১, ৯৯১৬)]
এক. এ কথা বিশ্বাস করা, পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে কেউ-ই আপদমুক্ত নয়। ছোট-বড় বিপদাপদে সবাই আক্রান্ত হয়েছে। এ দুনিয়া বিপদের জায়গা। তাই এমন ধারণা পোষণ করা যে আমার কোনো ধরনের বিপদাপদ আসবে না, তা চরম ভুল; বরং এর মধ্যে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা কখনো কখনো পরীক্ষার জন্য বিপদ দিয়ে থাকেন, আবার গুনাহ মাফ করার জন্য বিপদ দিয়ে থাকেন, বান্দাকে আরো আল্লাহর নৈকট্য করে তোলার জন্য বিপদ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ কি মনে করেছে যে আমরা ঈমান এনেছি—এ কথা বললে তাদের পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেওয়া হবে?’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ২-৩)
দুই. বান্দা যেন বিপদে পড়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, সে জন্য আল্লাহ বান্দাকে ছোট-বড় বিপদ দিয়ে থাকেন; এই বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তাদের ওপর বিপদ এলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৬)
তিন.. বান্দার জানা নেই তার জন্য কোনটা কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণকর। তাই কখনো কখনো বিপদ তার জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা যা অপছন্দ করো হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালোবাসো, হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৬)
চার.এ কথা চিন্তা করা যে দুনিয়া কারো স্থায়ী জায়গা নয়; বরং এটি একটি স্টেশনের মতো। তাই ছোট ছোট মসিবতের ওপর যদি ধৈর্য ধারণ করি, তাহলে আল্লাহ তাআলা এর জন্য অনেক বড় বিনিময় দান করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য কয়েদখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাততুল্য।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩০৭)
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ أَبُو المُنْذِرِ الطُّفَاوِيُّ عَنْ سُلَيْمَانَ الأَعْمَشِ قَالَ حَدَّثَنِي مُجَاهِدٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بِمَنْكِبِي فَقَالَ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرْ الصَّبَاحَ وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرْ الْمَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ.
পরিচ্ছেদঃ ৮১/৩. নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণীঃ দুনিয়াতে থাক যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী।
’আবদুল্লাহ্ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমার দু’ কাঁধ ধরে বললেনঃ তুমি দুনিয়াতে থাক যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী।
আর ইবনু ’উমার (রাঃ) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের আর অপেক্ষা করো না এবং সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার আর অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার সময় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য প্রস্তুতি লও। আর তোমার জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি লও।
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)[৬৪১৬. (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৬৮, ই.ফা ৫৯৭৪)
[অর্থাৎ সুস্থ থাকা অবস্থায় তুমি মহৎ কাজে ব্যস্ত থাক। কারণ রোগ ব্যধির সময় যদি তুমি তা পালনে অক্ষম হও তখন যেন তা পালন করতে বাধ্য করা না হয়।]
হাদীসটি থেকে শিক্ষণীয় :-
(১) শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষা বা উপদেশ দেয়ার সময় মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ছাত্রের কোন অঙ্গ ধরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাউকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন করা হয় ।
(২) একজনকে সম্বোধন করা হলেও সবাইকে উদ্দেশ্য নেয়া।
(৩) উম্মতের কল্যাণ হবে এমন প্রত্যেক কাজের প্রতি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র আগ্রহ।
(৪) দুনিয়াদারী ত্যাগ করা এবং যা অপরিহার্য তার প্রতি সীমাবদ্ধ থাকার উৎসাহ প্রদান।
(ফাতহুল বারী)
0 Comments