Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

প্রশ্ন: হায়েজ নিফাস অবস্থায় নারীরা কুরআন তেলাওয়াত করতে এবং তেলাওয়াতের সিজদাহ দিতে পারবে?

 

প্রশ্ন: হায়েজ নিফাস অবস্থায় নারীরা কুরআন তেলাওয়াত করতে এবং তেলাওয়াতের সিজদাহ দিতে পারবে?

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬

ভূমিকা: অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তেলোয়াত করা যাবে কিনা যদিও এই মাসালায় মতানৈক্য রয়েছে, তবে অধিক বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে,অপবিত্র ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলা মূল আরবি কুরআনের মুসহাফ স্পর্শ না করে যিকির হিসাবে মুখস্থ বা মোবাইল/কম্পিউটার থেকে কুরআন তেলোয়াত করতে পারে।

পাশাপাশি কুরআনের আয়াত ও অনুবাদ সম্বলিত অন্যান্য ইসলামী গ্রন্থ,হাদীস ও তাফসীর গ্রন্থ,সাধারণ যিকির-আযকার ও দু‘আ-দরূদের বই-পুস্তকসমূহ স্পর্শ করতে ও পড়তে পারে। সাথে সাথে সকল প্রকার তাসবীহ,তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করতে পারে।

তবে সর্বদা পবিত্র ও ওযু অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করাই উত্তম। ঋতুবর্তী মহিলা কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবে না মর্মে স্পষ্ট কোন সহীহ দলীল নেই। সুতরাং হায়েজ অবস্থায় কুরআনের মুসহাফ স্পর্শ না করে যিকির হিসাবে মুখস্থ তিলাওয়াত করা যাবে।

এমনকি হায়েজ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, أَنَّ النَّبِيَّكَانَ يَتَّكِئُ فِيْ حَجْرِيْ وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ‏ 

‘নবী (ﷺ) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম।(সহীহ বুখারী, হা/২৯৭;সহীহ মুসলিম, হা/৩০১)। 

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ليس في منع الحائض من القراءة نصوص صريحة صحيحة ‘ঋতুবতী নারীদের কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না মর্মে কোন স্পষ্ট কোন সহীহ দলীল নেই।’

(ফাতাওয়াউল ইসলাম সুওয়াল ওয়া জাওয়াব, প্রশ্ন নং-২৫৬৪)। 

ঋতুবতী মহিলাগণের কুরআন তেলাওয়াত করা হারাম,'যতক্ষণ পর্যন্ত পবিত্রতা অর্জন না করবে’ মর্মে বক্তব্যটি শক্তিশালী নয়। কারণ এ মর্মে বর্ণিত দলীলগুলো যঈফ"।

(যঈফ তিরমিযী, হা/১৩১; মিশকাত, হা/৪৬১; যঈফ ইবনু মাজাহ, হা/৫৯৪; মিশকাত, হা/৪৬০)।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,مَعْلُومٌ أَنَّ النِّسَاءَ كُنَّ يَحِضْنَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ يَكُنْ يَنْهَاهُنَّ عَنْ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ . كَمَا لَمْ يَكُنْ يَنْهَاهُنَّ عَنْ الذِّكْرِ وَالدُّعَاءِ ، بَلْ أَمَرَ الْحُيَّضَ أَنْ يَخْرُجْنَ يَوْمَ الْعِيدِ فَيُكَبِّرنَ بِتَكْبِيرِ الْمُسْلِمِينَ"তাছাড়া এটি সর্বজনবিদিত যে, রাসূল (ﷺ)-এর যুগেও মহিলা সাহাবীদের হায়েয আসত কিন্তু তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে এরকম কোন প্রমাণ নেই। 

 যেমন যিকির-আযকার ও দু‘আ থেকে নিষেধ করা হয়নি, তেমনি কুরআন তিলাওয়াত থেকেও নিষেধ করা হয়নি। বরং রাসূল (ﷺ)-এর যুগে ঋতুবতী মহিলাগণ ঈদের খুত্ববাহ ও দু‘আয় শরীক হতেন"।(মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২১/৪৬০)

.বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] -কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, প্রশ্ন: আমি অপবিত্র অবস্থায় উদাহরণত মাসিক অবস্থায় কিছু কিছু তাফসিরগ্রন্থ পড়ি। এতে কি কোন অসুবিধা আছে? এতে কি আমার গুনাহ হবে?

 উত্তরে শাইখ বলেন,

لا حرج على الحائض والنفساء في قراءة كتب التفاسير ولا في قراءة القرآن من دون مس المصحف في أصح قولي العلماء ، أما الجنب فليس له قراءة القرآن مطلقا حتى يغتسل ، وله أن يقرأ في كتب التفسير والحديث وغيرهما من دون أن يقرأ ما في ضمنها من الآيات ، لما ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه كان لا يحجزه شيء عن قراءة القرآن إلا الجنابة ، وفي لفظ عنه صلى الله عليه وسلم أنه قال في ضمن حديث رواه الإمام أحمد بإسناد جيد : ( أما الجنب فلا ولا آية )

"আলেমগণের অভিমতগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সঠিক হচ্ছে- হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারী তাফসিরগ্রন্থগুলো পড়তে কোন অসুবিধা নেই এবং কুরআন-গ্রন্থটি স্পর্শ না করে কুরআনে কারীম পড়তেও কোন অসুবিধা নেই।তবে, জুনুবী ব্যক্তির জন্য গোসল করার আগ পর্যন্ত কুরআনে কারীম পড়া জায়েয নেই। জুনুবী ব্যক্তি তাফসির, হাদিস ও অন্যান্য গ্রন্থগুলো পড়তে পারেন; তবে সেসব গ্রন্থগুলোতে যে সকল আয়াত রয়েছে সেগুলো পড়বেন না।

যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে সাব্যস্ত হয়েছে যে, জুনুবী অবস্থা ছাড়া আর কোন কিছু তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত থেকে দূরে রাখত না।

ইমাম আহমাদ কর্তৃক 'জায়্যিদ সনদে' বর্ণিত অন্য এক হাদিসের ভাষ্যে রয়েছে যে, "তবে, জুনুবী ব্যক্তি পড়বে না; এমনকি একটি আয়াতও না"।

(ফাতওয়া ইসলামিয়া,খন্ড,২ পৃষ্ঠা:২৩৯,ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৫০৪৮)

দ্বিতীয়ত:পবিত্র কুরআনুল কারিমে সর্বমোট এমন ১৫ টি

আয়াত রয়েছে, যেগুলো তেলাওয়াত করলে বা কাউকে তেলাওয়াত করতে শুনলে তাকবির দিয়ে একটি সিজদাহ আদায় করা মুস্তাহাব। তবে তেলাওয়াতের সিজদাহ্ কেউ না দিলেও গুনাহ হবেনা ইনশাআল্লাহ, কারণ এটি ফরয সিজদাহ নয়।

তবে দেওয়া উচিত কারন এতে নেকী আছে। সুতরাং নামাজের ভিতরে বা বাইরে যখনই সে সিজদার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা হবে অতঃপর তাকবিরসহ একটি সিজদাহ আদায় করা উত্তম। এমনকি শ্রোতা যদি অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে এমতাস্থায় অন্য কেউ সে আয়াত তেলাওয়াত করে আর শ্রোতা সেটা শুনে তাহলে তার জন্যও সিজদাহ দেওয়া মুস্তাহাব।

ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,নবী সূরা নাজমের মধ্যে সিজদা করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সবাই সিজদা করল"।(সহীহ বুখারী, হা/১০৭১; বুলূগুল মারাম,হা/৩৪১) 

অপর এক বর্ননায় এসেছে, যায়দ বিন সাবেত (রাঃ) বলেন,

‘আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর কাছে সূরা নাজম পাঠ করলাম। তিনি সিজদাহ করলেন না।’(সহীহ বুখারী হা/১০৭৩,মিশকাত হা/১০২৬)

জেনে রাখা ভাল যে, তেলাওয়াতের সিজদাহ হবে মাত্র একটি,এই সিজদার পর কোন তাশাহহুদ নেই, সালামও নেই। 

 এমনকি সালাতের বাহিরে তেলাওয়াতে সিজদার জন্য ওযূ এবং ক্বিবলামুখি হওয়া শর্ত নয়,নারীদের জন্য পর্দা কোনটিই শর্ত নয়। বরং যে কোনো দিকে মুখ করে এই সিজদাহ দেওয়া যায়। তবে ওযূ অবস্থায় ক্বিবলামুখী হয়ে সিজদা দেয়া উত্তম।

একই আয়াত বারবার পড়লে তেলাওয়াত শেষে একবার সিজদা করলেই যথেষ্ট হবে। স্থান পরিবর্তন হলে আর সিজদা করতে হয় না বা ক্বাযাও আদায় করতে হয় না। ইবনু ওমর (রাঃ) ওযূ ছাড়াই তেলাওয়াতের সিজদা দিয়েছেন।

(সহীহ বুখারী৪/৩০৩; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪৩৫৪)। 

ইমাম শাওকানী বলেন, সিজদায়ে তেলাওয়াতের হাদীসগুলো প্রমাণ করে না যে, সিজদাকারীকে ওযূ অবস্থায় থাকা যরূরী।

রাসূল (ﷺ)-এর সাথে উপস্থিত সকলে তেলাওয়াতের সিজদা করতেন। কিন্তু কোথাও বর্ণিত হয়নি যে, তিনি কাউকে ওযূ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

(নায়লুল আওতার ৩/১২৫;ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৭/২৬২-৬৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৩১২)। 

সিজদায় সালাতে পঠিতব্য অন্যান্য সিজদার ন্যায় ‘সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা’ পড়া যাবে। রাসূল (ﷺ) থেকে একটি নির্দিষ্ট দু‘আ বর্ণিত হয়েছে, যা তিনি রাত্রির সালাতে সিজদায়ে তেলাওয়াতে পাঠ করতেন। যেমন- سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهُ وَ شَقَّ سَمْعَهُ وَ بَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَ قُوَّتِهِ فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ 

অনুবাদ : ‘সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহূ ওয়া শাক্ক্বা সাম‘আহূ ওয়া বাছারাহূ বিহাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহী; ফাতাবা-রাকাল্ল-হু আহসানুল খা-লিক্বীন’।

অর্থ : ‘আমার চেহারা সিজদা করছে সেই মহান সত্তার জন্য যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় ক্ষমতা ও শক্তি বলে এতে কর্ণ ও চক্ষু সন্নিবেশ করেছেন। অতএব মহাপবিত্র আল্লাহ যিনি সুন্দরতম সৃষ্টিকর্তা’ 

(সূরা আল-মুমিনূন: ১৪; মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, হা/৮০২;; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৭;আবু দাঊদ হা/১৪১৪;সহীহ তিরমিযী হা/৩৪২৫)

.তৃতীয়ত : ইতিপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে,কুরআন তেলাওয়াত করা কিংবা শ্রবণের পর সিজদায়ে তেলাওয়াতের জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। 

অতএব মহিলারা হায়েয-নিফাস অবস্থায় তেলাওয়াতের সিজদা দেওয়া এবং তাতে দো‘আ পাঠ করায় কোন দোষ নেই।

যদিও অনেক ফক্বীহ মনে করেন সিজদা সালাতেরই একটি অংশ।

সুতরাং সালাতে যেমন পবিত্রতা শর্ত অনুরূপ তেলাওয়াতের সেজদার জন্যও পবিত্রতা শর্ত।কিন্তু এই মতটি শক্তিশালী নয় বরং পূর্বের অভিমতটিই অগ্রগণ্য।

(উভয় মত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন: ইমাম নববী,আল-মাজমূ‘ খন্ড;২ পৃষ্ঠা; ৩৫৩;বিন বায,মাজমূ‘ ফাতাওয়া খন্ড:২৯ পৃষ্ঠা;২২৪; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব; ১০/৪৪৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ;খন্ড:৭ পৃষ্ঠ;২৬২)

.সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে হায়েজ অবস্থায়

তেলাওয়াতে সিজদাহ দেওয়া জায়েজ কিনা জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তারা বলেন:

;أولاً : في الحالات التي تباح فيها لها القراءة يشرع لها سجود التلاوة إذا مرت بسجدة تلاوة ، أو استمعت لها، والصواب : أنه يجوز لها القراءة عن ظهر قلب ، لا من المصحف ، وعليه يشرع لها السجود ، لأنه ليس صلاة وإنما هو خضوع لله وعبادة كأنواع الذكر .

“যেসব ক্ষেত্রে একজন ঋতুমতী মহিলাকে কুরআন তেলাওয়াত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে তাকে তেলাওয়াতের সিজদাহ দেওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে শর্ত হলো যখন সে তিলাওয়াতের সিজদাহ অতিক্রম করবে অথবা তা শ্রবণ করবে।

সঠিক কথা হল,তার (ঋতুমতী মহিলার) জন্য স্মৃতি থেকে মুখাস্ত কুরআন তেলোয়াত করা জায়েজ রয়েছে,কিন্তু মুসহাফ (লিখিত কুরআন) থেকে নয়,সুতরাং এই ভিত্তিতে,

তার উপর সিজদাহ করা শরীয়ত সম্মত। 

কেননা এটা সালাত নয়,প্রকৃতপক্ষে এটা আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিনয়ী হওয়া, এবং অন্যান্য সহীহ যিকিরের মতই একটি ইবাদত।

তেলাওয়াতের সিজদার জন্য কী অযূ আবশ্যক কিনা

এই প্রশ্নের উত্তরে স্থায়ী কমিটির আলেমগন বলেছেন,

: الصحيح أن سجود الشكر وسجود التلاوة لتال أو مستمع لا تشترط لهما الطهارة ؛ لأنهما ليسا في حكم الصلاة .

"শুকরিয়া এবং তিলাওয়াতের সিজদাহ্ তিলাওয়াত কারী এবং স্রবনকারী উভয়ের জন্য পবিত্রতা কিংবা অযু থাকা শর্ত নয়।কেননা এদুটো (শুকরিয়া এবং তিলাওয়াতের সিজদাহ) সালাতের বিধি বিধানের অন্তর্ভুক্ত নয়"।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা:২৬২)

.শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] -কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তেলাওয়াতের সিজদার জন্য কি পবিত্রতা শর্ত?

সিজদা দেয়া ও উঠার সময় কি তাকবীর দিবে; চাই সেটা নামাযের ভেতরে হোক কিংবা বাইরে? সিজদার মধ্যে কী বলবে? সিজদাতে পঠিতব্য যে দোয়াগুলো উদ্ধৃত হয়েছে এর মধ্যে কি কোন সহিহ দোয়া আছে? নামাযের বাইরে হলে এই সিজদা থেকে সালাম ফিরানোর কি বিধান রয়েছে?

 উত্তরে শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

الحمد لله. سجود التلاوة لا تشترط له الطهارة في أصح قولي العلماء وليس فيه تسليم ولا تكبير عند الرفع منه في أصح قولي أهل العلم .ويشرع فيه التكبير عند السجود لأنه قد ثبت من حديث ابن عمر رضي الله عنهما ما يدل على ذلك .أما إذا كان سجود التلاوة في الصلاة فإنه يجب فيه التكبير عند الخفض والرفع لأن النبي صلى الله عليه وسلم كان يفعل ذلك في الصلاة في كل خفض ورفع . وقد صح عنه صلى الله عليه وسلم أنه قال : صلوا كما رأيتموني أصلي . رواه البخاري في صحيحه ( 595 ) ، ويشرع في سجود التلاوة من الذكر والدعاء ما يشرع في سجود الصلاة لعموم الأحاديث ومن ذلك : اللهم لك سجدت وبك آمنت ولك أسلمت سجد وجهي للذي خلقه وصوره وشق سمعه وبصره بحوله وقوته تبارك الله أحسن الخالقين روى ذلك مسلم في صحيحه ( 1290 ) عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه كان يقول هذا الذكر في سجود الصلاة من حديث علي رضي الله عنه .

 وقد سبق آنفا أنه يشرع في سجود التلاوة ما يشرع في سجود الصلاة وروي عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه دعا في سجود التلاوة بقوله : " اللهم اكتب لي بها عندك أجرا وامح عني بها وزرا واجعلها لي عندك ذخرا وتقبلها مني كما تقبلتها من عبدك داود عليه السلام" رواه الترمذي ( 528 ) والواجب في ذلك قول : سبحان ربي الأعلى ، كالواجب . في سجود الصلاة ، وما زاد عن ذلك من الذكر والدعاء فهو مستحب .وسجود التلاوة في الصلاة وخارجها سنة وليس بواجب لأنه ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم من حديث زيد بن ثابت ما يدل على ذلك وثبت عن عمر رضي الله عنه ما يدل على ذلك أيضا ، والله ولي التوفيق .

 "আলেমদের দুটো অভিমতের মধ্যে সঠিক মতানুযায়ী তেলাওয়াতের সিজদার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়, এর থেকে সালাম ফিরানো নেই এবং সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর নেই।সিজদাতে যাওয়ার সময় তাকবীর দেয়ার বিধান রয়েছে।

যেহেতু ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এই মর্মে প্রমাণ সাব্যস্ত হয়েছে।তবে নামাযের মধ্যে তেলাওয়াতের সিজদা দেয়াকালে সিজদা দেয়া ও সিজদা থেকে ওঠার সময় তাকবীর দেয়া আবশ্যক।

যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের মধ্যে প্রত্যেক ওঠানামার সময় তা করতেন। এবং যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সূত্রে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: “তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবে নামায পড়।”(সহিহ বুখারী হা/৫৯৫) 

নামাযের সিজদাতে যে যে দোয়া পড়া শরিয়তসম্মত তেলাওয়াতের সিজদাতেও সে সে দোয়া পড়া শরিয়তসম্মত— এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর নির্দেশনার সার্বিকতার কারণে। এ ধরণের দোয়ার মধ্যে রয়েছে:اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِه، وَقُوَّتِهِ، تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسنُ الْخَالِقينَ 

(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই সিজদাহ করেছি,আপনার ওপরই ঈমান এনেছি, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছি। আমার মুখমণ্ডল সিজদায় অবনত সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দিয়েছেন, আর তার কান ও চোখ বিদীর্ণ করেছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ সুমহান।)

ইমাম মুসলিম তাঁর সহিহ হাদিসের সংকলনে হা/১২৯০) আলী (রাঃ) এর সূত্রে এ যিকিরটি উদ্ধৃত করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের সিজদাতে এই যিকিরটি বলতেন।

 ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নামাযের সিজদাতে যা যা বলা শরিয়তসম্মত তেলাওয়াতের সিজদাতেও তা তা বলা শরিয়তসম্মত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি তেলাওয়াতের সিজদাতে বলতেন:اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْراً، وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْراً، وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْراً، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ 

(অর্থ: হে আল্লাহ! এই সিজদার বদৌলতে আপনার নিকট আমার জন্য একটি প্রতিদান লিখুন এবং এর দ্বারা আমার একটি গুনাহ মুছে দিন, এটাকে আমার জন্য আপনার কাছে সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখুন। আর আমার পক্ষ থেকে এই সিজদাকে কবুল করে নিন; যেভাবে আপনার বান্দা দাউদ আলাইহিস সালাম-এর থেকে কবুল করেছেন) সুনানে তিরমিযি হা/৫২৮) 

এক্ষেত্রে ওয়াজিব হলো নামাযের সিজদার মত: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلى (আমার সুউচ্চ প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা করছি) বলা। 

এর বেশি যা কিছু পড়া হয় সেটি মুস্তাহাব।নামাযের ভেতরে কিংবা নামাযের বাইরে তেলাওয়াতের সিজদা দেয়া সুন্নত; ওয়াজিব নয়। যেহেতু যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হাদিসে এবং উমর (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হাদিসে এই প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহই তাওফিক দেয়ার মালিক।(বিন বায,মাজমূ‘ ফাতাওয়া খন্ড:১১ পৃষ্ঠা;৪০৬)

.পরিশেষে প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে,আলেমেদের সঠিক মতানুযায়ী হায়েয বা নিফাসগ্রস্ত নারী মুখস্থ থেকে মুসহাফ (কুরআন-গ্রন্থ) স্পর্শ না করে কুরআন পড়তে পারবে।

কেননা হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীকে কুরআনুল কারীম পড়তে বারণ করে মর্মে সহিহ ও সুস্পষ্ট কোন দলিল নেই। দলিল আছে জুনুবী (ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের কারণে যার উপর গোসল ফরয) ব্যক্তির ব্যাপারে।

জুনুবী অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে না; যেহেতু এ ব্যাপারে আলী (রাঃ) এর সূত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।সুতরাং জুনুবী ব্যক্তির সাথে তাদের পার্থক্যটা হল­­‑ জুনুবী অবস্থা সামান্য কিছু সময় বিরাজ করে। জুনুবী ব্যক্তি স্ত্রী-সহবাস করার পর তাৎক্ষণিকভাবে গোসল করে নিতে পারেন।

তাই জুনুবী অবস্থা খুব বেশি সময় দীর্ঘায়িত হয় না এবং বিষয়টি ব্যক্তির নিজের হাতে; যখন ইচ্ছা তখন গোসল করে নিতে পারেন।

পক্ষান্তরে, হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর বিষয়টি তাদের হাতে নয়; বরং তাদের বিষয়টি আল্লাহ্‌র হাতে। হায়েয ও নিফাস শেষ হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগে।

এ কারণে তাদের জন্য কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত জায়েয করা হয়েছে; যাতে করে তারা কুরআনে কারীম ভুলে না যায় এবং যাতে করে কুরআন তেলাওয়াতের ফযিলত ও কুরআন থেকে শরয়ি বিধি-বিধান শেখার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত না হয়।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

_______________________

উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি

সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:) শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হোদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা‌ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ



Post a Comment

0 Comments