মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ কাদের মানহাজের দিকে ডাকছেন ?

মুহাম্মাদ বিন স্বলিহ্ আল মুনাজ্জিদ কাদের মানহাজের দিকে ডাকছেন ?

অনেকদিন থেকেই দেখে আসছি, কিছু ভাই না জেনে আর কেউ কেউ জানা সত্ত্বেও হঠকারিতা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন যে, মুহাম্মাদ বিন স্বলিহ্ আল মুনাজ্জিদ অনেক উঁচুমাপের সালাফী ‘আলিম ও দা‘ঈ। অথচ এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা অপপ্রচার। যারা এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা হয় অজ্ঞ, আর না হয় কাযযাবদের শিরোমণি।

মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) কে বিদ‘আতী বলেছেন সমসাময়িক শীর্ষস্থানীয় ‘উলামায়ে কিরাম। তাঁদের মধ্যে আবার কয়েকজন আহলুস সুন্নাহর শ্রেষ্ঠ ইমামদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা হলেন— ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আশ শাইখুল ‘আল্লামাহ্ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল ওয়াদি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ্), দক্ষিণ সৌদি আরবের গ্রেট মুফতী প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ফাক্বীহ্ আশ শাইখুল ‘আল্লামাহ্ ইমাম আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আন নাজমী (রহিমাহুল্লাহ্), বর্তমান যুগে জারাহ্ ও তা‘দীলের ঝাণ্ডাবাহী অকুতোভয় মুজাহিদ আশ শাইখুল ‘আল্লামাহ্ আল মুহাদ্দিছ ইমাম রবী‘ বিন হাদী বিন ‘উমাইর আল মাদখালী (হাফিয্বাহুল্লাহ্), বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির মুহাদ্দিছ ও ফাক্বীহ্ আশ শাইখুল ‘আল্লামাহ্ ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ্ আল জাবিরী (হাফিয্বাহুল্লাহ্)।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) কে কেনো বিদ‘আতী বলা হলো ? মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) বিদ‘আতীদের শীর্ষনেতাদের বই রেকমেন্ড করেছেন এবং শীর্ষস্থানীয় বিদ‘আতীদেরকে “সঠিক মানহাজের ধারক ও বাহক” বলে অভিহিত করেছেন। আসুন এক নজরে দেখে নিই, মুনাজ্জিদ কোন কোন বিদ‘আতীর বই রেকমেন্ড করেছেন এবং তাদেরকে বিশুদ্ধ মানহাজের দা‘ঈ বলে অভিহিত করেছেন। মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) ’র রেকমেন্ডেড বই ও লেকচার ক্লিপ—

(১) আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ বিদ‘আতী সাইয়্যিদ ক্বুত্বুবের লেখা তাফসীর “ফী যিলালিল ক্বুরআন”।

(২) আল মুস্তাক্ববিল লি হাযাদ দ্বীন, হাযাদ দ্বীন, মা‘আলিমু ফিত ত্বরীক্ব, খস্বাইস্বুত তাস্বাওউরিল ইসলামী ওয়া মুক্বাওয়িমাতুহু; তিনটি গ্রন্থই নিজে ভ্রষ্ট ও অপরকে ভ্রষ্টকারী বিদ‘আতী সাইয়্যিদ ক্বুত্বুবের লেখা।

(৩) মানহাজুত তারবিয়াতিল ইসলামিয়্যাহ্, ওয়াক্বি‘উনাল মু‘আস্বির, রু’ইয়াতুন ইসলামিয়্যাহ্ ফী আহওয়ালিল ‘আলামিল মু‘আস্বির, ক্ববসাতুম মিনার রসূল, মা‘রিকাতুত তাক্বালীদ, হাল নাহনু মুসলিমূন, জাহিলিয়্যাতুল ক্বরনিল ‘ইশরীন, মাযাহিবু ফিকরিয়্যাতুম মু‘আস্বিরাহ্; আটটি গ্রন্থই পথভ্রষ্ট ইখওয়ানী বিদ‘আতী অধ্যাপক মুহাম্মাদ ক্বুত্বুবের লেখা।

(৪) জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী অধ্যাপক আবুল আ‘লা মওদূদী প্রণীত তাফসীরু সূরাতিন নূর, আল হিজাব এবং আল জিহাদ।

(৫) ভারতবর্ষে বিদ‘আতীদের শীর্ষনেতা পথভ্রষ্ট তাবলীগী নাক্বশাবন্দী আবুল হাসান ‘আলী আন নাদউয়ী (নাদভী) প্রণীত মাযা খসিরাল ‘আলামু বি ইনহিত্বাত্বিল মুসলিমীন, আস স্বিরা‘উ বাইনাল ফিকরাতিল ইসলামিয়্যাহ্ এবং আল ফিকরাতুল গারবিয়্যাহ্।

(৬) পথভ্রষ্ট খারিজী দা‘ঈ সালমান আল ‘আওদাহ্ প্রণীত গ্রন্থাবলি। মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) আমভাবে বিদ‘আতী সালমান আল ‘আওদাহ্ প্রণীত গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করার জন্য সাজেস্ট করেছেন।

(৭) পথভ্রষ্ট খারিজী দা‘ঈ সাফার আল হাওয়ালী এবং বিদ‘আতী সালমান আল ‘আওদাহ প্রণীত অডিও লেকচার ক্লিপ। মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) আমভাবে বিদ‘আতী সালমান আল ‘আওদাহ্ এবং বিদ‘আতী সাফার আল হাওয়ালী প্রণীত অডিও লেকচার ক্লিপ শোনার জন্য সাজেস্ট করেছেন।

(৮) পথভ্রষ্ট ইখওয়ানী দা‘ঈ ফিতনাহয় উস্কানিদাতা বিদ‘আতী ‘আইদ্ব আল ক্বারনী প্রণীত অডিও লেকচার ক্লিপ। মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) আমভাবে বিদ‘আতী ‘আইদ্ব আল ক্বারনী প্রণীত অডিও লেকচার ক্লিপ শোনার জন্য সাজেস্ট করেছেন।

এই দীর্ঘ রেকমেন্ডেশনের পর মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) বলেছেন— “লেকচার ক্লিপের জগতে অনেক নাম প্রকাশ পায়, আবার অনেক নাম পায় না। কিছুকাল পরে হয়ত নতুন লেকচারারদের নাম আসবে, আর পুরাতন লেকচার ক্লিপগুলো সুপ্ত হয়ে যাবে, আর কিছু ক্লিপ তো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সর্বাবস্থায় (নিজেদের মধ্যে) সঠিক মানহাজের ধারক ও বাহকদের লেকচার ক্লিপ শোনার এবং “নতুনত্বের উপরে উপকারীর গুরুত্ব” এই বিষয়টি সমুন্নত করার আগ্রহ ধরে রাখা।”
[দ্র.: মুহাম্মাদ বিন স্বলিহ্ আল মুনাজ্জিদ প্রণীত গ্রন্থ “আরবা’ঊনা নাস্বীহাতাল লি ইস্বলাহিল বুয়ূত” তথা “গৃহের উন্নতিসাধনে চল্লিশটি নাস্বীহাহ্ (সদুপদেশ)”; ৯ম ও ১০ম নাস্বীহাহ্ দ্রষ্টব্য; দারুল ওয়াত্বান কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১১ হিজরী; শাইখ আবূ ইবরাহীম ইবনু সুলত্বান আল ‘আদনানী (হাফিয্বাহুল্লাহ্) প্রণীত গ্রন্থ “আল ক্বুত্বুবিয়্যাহ্ হিয়াল ফিতনাহ্ ফা‘তারিফূহা”; পৃষ্ঠা: ৮৮]

.প্রিয় পাঠক, আপনি তাঁর কথাটির দিকে গভীরভাবে লক্ষ্য করুন, “সঠিক মানহাজের ধারক ও বাহক”। তারা তাঁর নিকটে সঠিক মানহাজের ধারক ও বাহক! সুতরাং এরপরেও তাঁর ব্যাপারে কিভাবে বলা যায় যে, তিনি সালাফী!? যে ব্যক্তির কাছে উপরিউক্ত পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী দা‘ঈদের মানহাজ সঠিক, সে ব্যক্তি কোন মানহাজের লোক তা বুঝার জন্য কমনসেন্সই যথেষ্ট।

মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) কে এ বিষয়ে জানানো হলে তিনি ‘আলিমদের থেকে প্রাপ্ত নিজের তাঝকিয়্যাহ্ (রেকমেন্ডেশন) উপস্থাপন করেন। অথচ ঐ বিদ‘আতীদের থেকে নিজেকে পৃথক করেননি এবং তাদের থেকে লোকদেরকে সতর্ক করেননি। এক্ষেত্রে আমাদেরকে তাই করতে হবে, যা করতে বলেছেন অষ্টম হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ্)।

শাইখুল ইসলাম বলেন, “যে ব্যক্তি তাদের (বিদ‘আতীদের) প্রতি সুধারণা রাখে এবং এই দাবি করে যে, সে তাদের অবস্থা জানেনা, তাহলে তাকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে। এরপরেও সে যদি নিজেকে তাদের থেকে পৃথক না করে এবং প্রকাশ্যে তাদের প্রত্যাখ্যান না করে, তাহলে তাকে তাদেরই মতাবলম্বী মনে করতে হবে এবং তাকে তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য করা হবে।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বলে যে তাদের (বিদ‘আতীদের) কথার একটা শরী‘আহ্সম্মত ব্যাখ্যা রয়েছে (অর্থাৎ এমন বলে যে, ঐ বিদ‘আতী ব্যক্তির বিদ‘আতী কথার এমন ব্যখ্যা রয়েছে যা শরী‘আহ্ অনুযায়ী সঠিক), তাহলে সে তাদের শীর্ষনেতা ও প্রধানদের একজন। আর সে যদি বুদ্ধিমান লোক হয়, তাহলে সে জানবে যে, তার কথা মিথ্যা।’’
[ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ্), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৩২-১৩৩; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ্ ছাপা; ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.; এই উক্তির অনুবাদক- শ্রদ্ধেয় রিফাত রহমান সিয়াম ভাইয়া]

মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) যেহেতু ঐ বিদ‘আতীদের থেকে নিজেকে পৃথক করেননি এবং তাদেরকে প্রোমোট করার পরে উম্মতকে তাদের থেকে সতর্ক করেনি, সেহেতু আমরা তাঁকে ঐ বিদ‘আতীদেরই মতাবলম্বী মনে করছি এবং তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য করছি।

.কতিপয় কট্টর মুনাজ্জিদ ভক্ত বলে যে, আমরা নাকি পান থেকে চুন খসলেই একজনকে বিদ‘আতী ফতোয়া দিই, আর সেকারণেই আমরা মুনাজ্জিদকে বিদ‘আতী বলে প্রচার করছি। তাদের মতে আমরা হলাম সুপার সালাফী, যে কারণে আমরা মুনাজ্জিদকে বিদ‘আতী বলি। তাদের মতে আমাদের থেকে সতর্ক থাকা জরুরি, কারণ আমরা চরমপন্থি সুপার সালাফী। ঐ ভক্তবর্গের জিদ ও হঠকারিতার কারণে তাদের চক্ষুদ্বয় পর্দাচ্ছাদিত হয়ে গেছে। ফলে তারা তাদের মহামান্য গুরুর ভুলগুলো দেখতে পাচ্ছে না এবং তা অনুধাবন করতেও সক্ষম হচ্ছে না। এটা ফিক্বহী মাসআলাহর ভুল নয়, এটা মানহাজগত ভুল। যে ভুলের কারণে আম জনসাধারণ ভয়ঙ্কর বিদ‘আতে পতিত হওয়ার সমূহ সম্ভবনা রাখে। আর তা এমন ভুল, যা থেকে ভুলকারী জানার পরেও প্রত্যাবর্তন করেনি।

ঐ ভক্তবর্গের ব্যাপারে আমরা এটাও বলছি যে, তারা তাদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে আহলুস সুন্নাহর শ্রেষ্ঠ ইমামদের প্রতি ত্ব‘আন করেছে। কারণ মুনাজ্জিদকে বিদ‘আতী বলেছেন আহলুস সুন্নাহর শ্রেষ্ঠ চারজন ইমাম। তাহলে তাদের কথা অনুযায়ী তাঁরা হলেন সুপার সালাফী, এক্সট্রিমিস্ট সালাফী, নিও সালাফী, ট্রু সালাফী বা মাদখালী! তাদের কথা অনুযায়ী তাঁরা বিদ‘আতী ফতোয়া দিতে তাড়াহুড়া করেন এবং পান থেকে চুন খসলেই বিদ‘আতী ফতোয়া দেন! তাদের কথা অনুযায়ী তাঁরা এমন বিপথগামী চরমপন্থি, যাদের থেকে সতর্ক থাকা জরুরি! না‘ঊযু বিল্লাহি মিন যালিক।

আমরা আবারও বলছি, যে ব্যক্তির কাছে সাইয়্যিদ ক্বুত্বুব, মুহাম্মাদ ক্বুত্বুব, মওদূদী, নাদউয়ী, সাফার আল হাওয়ালী, সালমান আল ‘আওদাহ্, ‘আইদ্ব আল ক্বারনী প্রমুখের ন্যায় শীর্ষস্থানীয় বিদ‘আতীরা সঠিক মানহাজের ধারক ও বাহক, তার নিজের মানহাজ কেমন এটা বুঝতে সাধারণ বোধশক্তিই যথেষ্ট। অথচ আমরা অবাক হই যে, আমাদেরকে মুক্বাল্লিদ আখ্যা দেয়া এবং নিজেদের সুবিজ্ঞ মুজতাহিদ হওয়ার ভাব নেয়া লোকেরা এই সাধারণ জিনিসটা বুঝতে পারেনা! আল্লাহুল মুস্তা‘আন।

আমরা কয়েক মাস আগে মুনাজ্জিদ (হাদাহুল্লাহ) ’র বিস্তারিত রিফিউটেশন আর্টিকেল আকারে লিখেছিলাম। আর্টিকেলটিতে মুনাজ্জিদের ব্যাপারে ‘আলিমদের মন্তব্য রেফারেন্সসহ উল্লেখ করা হয়েছে। আপনারা চাইলে পড়ে নিতে পারেন।

আর্টিকেলের পিডিএফ লিংক: https://drive.google.com/file/d/1W-zuc2fv4-3-299FR8Mi31D1hq6tiUel/view?usp=sharing

.সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—

সহযোগিতায়: Rifat Rahman Sium

.রচনাকাল
রাত ৮টা ৫৭ মিনিট।
বৃহস্পতিবার।
২১ শাওয়াল, ১৪৩৯ হিজরী।
২১ আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ।
৫ জুলাই, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।

www.rasikulindia.blogspot.com ইসলামিক বই

sarolpoth.blogspot.com জানা & অজানা ইসলামিক জ্ঞান https://sathikpatherdishari.weebly.com/ ইসলামিক গ্যালারী

Post a Comment

0 Comments