রাগের চিকিৎসা:
▬▬▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: যে সব মানুষ খুব তাড়াতাড়ি রাগ করে অথবা যারা খুব রাগী তারা কিভাবে তার রাগ কমাবে? এ বিষয়ে কোন দোয়া অথবা পদ্ধতি থাকলে বলুন। আমাদের নবী বা সাহাবীদের পক্ষ থেকে কোন দোয়া অথবা পদ্ধতি বর্ণিত থাকলে দয়া করে জানান।
▬▬▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: যে সব মানুষ খুব তাড়াতাড়ি রাগ করে অথবা যারা খুব রাগী তারা কিভাবে তার রাগ কমাবে? এ বিষয়ে কোন দোয়া অথবা পদ্ধতি থাকলে বলুন। আমাদের নবী বা সাহাবীদের পক্ষ থেকে কোন দোয়া অথবা পদ্ধতি বর্ণিত থাকলে দয়া করে জানান।
উত্তর:
আমাদের জানা দরকার যে, সব রাগ খারাপ নয়। কখনো কখনো রাগ প্রশংসনীয় আর কখনো নিন্দনীয়। যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ করা হয় এবং অন্যায় ও হারাম কাজ প্রতিরোধে রাগ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা প্রসংশনীয়। বরং অন্যায় দেখে মনে রাগ সৃষ্টি হওয়া মজবুত ঈমানের আলামত। পক্ষান্তরে ব্যক্তিগত স্বার্থে বা দুনিয়াবী ছোট-খাটো বিষয়ে রাগ করা নিন্দনীয়।
নিন্মে নিন্দনীয় রাগ প্রতিরোধের চিকিৎসা প্রদান করা হল:
আমাদের জানা দরকার যে, সব রাগ খারাপ নয়। কখনো কখনো রাগ প্রশংসনীয় আর কখনো নিন্দনীয়। যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ করা হয় এবং অন্যায় ও হারাম কাজ প্রতিরোধে রাগ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা প্রসংশনীয়। বরং অন্যায় দেখে মনে রাগ সৃষ্টি হওয়া মজবুত ঈমানের আলামত। পক্ষান্তরে ব্যক্তিগত স্বার্থে বা দুনিয়াবী ছোট-খাটো বিষয়ে রাগ করা নিন্দনীয়।
নিন্মে নিন্দনীয় রাগ প্রতিরোধের চিকিৎসা প্রদান করা হল:
নিন্দনীয় ক্রোধের চিকিৎসা:--
🔘 ১. দু‘আ করা: কেননা আল্লাহই সকল বিষয়ের তাওফিক দাতা। সঠিক পথে পরিচালনাকারী, দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ তাঁর হাতেই। আত্মা বিনষ্টকারী যাবতীয় অপবিত্রতা থেকে আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য তিনিই একমাত্র উত্তম সাহায্যকারী। তিনি বলেন,
ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (সূরা গাফেরঃ ৬০)
ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (সূরা গাফেরঃ ৬০)
🔘 ২. অধিক হারে আল্লাহ্র জিকির করা:* যেমন কুরআন পাঠ, তাসবীহ, তাহলীল পাঠ, ইস্তিগফার ইত্যাদি করা। কেননা মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, একমাত্র তাঁর জিকিরই অন্তরে প্রশান্তি আনতে পারে। তিনি বলেন,
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“জেনে রাখ আল্লাহ্র জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা রা’দঃ ২৮)
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“জেনে রাখ আল্লাহ্র জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা রা’দঃ ২৮)
🔘 ৩. যে সকল আয়াত ও হাদীস ক্রোধ সংবরণ করতে উৎসাহ দেয় সেগুলো এবং যেগুলো ক্রোধের ভয়বহতা সম্পর্কে সতর্ক করে সেগুলো মনে করা এবং ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করা:* (১)
যেমন হাদীসে এসেছে, আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় ক্রোধকে সংবরণ করে, অথচ সে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম ছিল, তাকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের ময়দানে সকল মানুষের সামনে আহবান করবেন। অতঃপর জান্নাতের আনত নয়না হুর থেকে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতে স্বাধীনতা দিবেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তাদের সাথে তার বিবাহ দিয়ে দিবেন।”
🔘 ৪. শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা: অর্থাৎ আউযুবিল্লাহিমিনাশ শায়ত্বানির রাজীম (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করা।
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে সুলাইমান ইবনে সুরাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,একদা দু’জন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে পরষ্পরকে গালিগালাজ করছিল। তদের একজন ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তার ক্রোধ এত অধিক হয়েছিল যে,তার ঘাড়ের রগগুলো ফুলে উঠছিল এবং তার বর্ণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তার এই অবস্থা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
" إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا ذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ لَوْ ، قَالَ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে সুলাইমান ইবনে সুরাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,একদা দু’জন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে পরষ্পরকে গালিগালাজ করছিল। তদের একজন ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তার ক্রোধ এত অধিক হয়েছিল যে,তার ঘাড়ের রগগুলো ফুলে উঠছিল এবং তার বর্ণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তার এই অবস্থা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
" إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا ذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ لَوْ ، قَالَ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ
“আমি এমন একটি বাক্য জানি, লোকটি তা বললে তার রাগ দুর হয়ে যাবে। এক ব্যক্তি তার নিকট এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন তা তাকে জানালো। বলল, তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। সে বলল, আমার মধ্যে কি অসুবিধা দেখেছ? আমি কি পাগল নাকি? তুমি যাও এখান থেকে ।” (২)
🔘 ৫. অবস্থান পরিবর্তন করা: অর্থাৎ যদি দণ্ডায়মান থাকে তবে বসে পড়বে বা শুয়ে যাবে। আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের কেউ যদি রেগে যায় তবে সে যদি দণ্ডায়মান থাকে তাহলে বসে পড়বে। তাতেও যদি রাগ না থামে তবে শুয়ে পড়বে।” (৩)
আধুনিক যুগের মনোবিজ্ঞানীগণ ক্রোধের চিকিৎসায় এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। অথচ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত ব্যবস্থাপত্র ১৪শত বছর আগেই বলে দিয়েছেন। পাশ্চাত্য সভ্যতার ফিতনায় নিমজ্জিত ব্যক্তিদের কি হুঁশ হবে? ফিরে আসবে কি তাদের দ্বীনে যা সকল মানুষের ফিতরাটি ধর্ম? যার মধ্যেই রয়েছে তাদের ইহ-পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ?
🔘 ৬. সঠিকভাবে দেহের হক আদায় করা: যেমন প্রয়োজনীয় নিদ্রা ও বিশ্রাম গ্রহণ করা, সাধ্যের বাইরে কোন কাজ না করা, অযথা উত্তেজিত না হওয়া। ক্রুদ্ধ ব্যক্তিদের ক্রোধের কারণ খুঁজতে গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তির মধ্যেই এ কারণগুলো পাওয়া গেছে -অধিক পরিশ্রমের কাজ করা, ক্লান্তি, অনিদ্রা, ক্ষুধা ইত্যাদি।
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি শুনেছি যে, তুমি দিনের বেলা রোযা রাখ এবং রাতের বেলা নফল নামায আদায় কর-এটা কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি এরূপ করো না। বরং মাঝে মাঝে রোযা রাখবে এবং মাঝে মাঝে রোযা ছাড়বে এবং রাতের কিছু অংশে নামায পড়বে এবং কিছু অংশে বিশ্রাম নিবে। কারণ
- তোমার উপরে তোমার শরীরের হক রয়েছে,
- তোমার চোখের হক রয়েছে,
- তোমার উপরে তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে,
তোমার জন্য প্রতিমাসে তিন দিন রোযা রাখাই যথেষ্ট। এতে সারা বছর রোযা রাখার সওয়াব রয়েছে। কেননা প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব দশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমি আমার নিজের উপর কঠোরতা আরোপ করলাম এবং বললাম হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমিতো একাধারে রোযা রাখতে এবং রাতের বেলা নামায পড়তে সক্ষম। আব্দুল্লাহ বিন আমর বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়ে বললেন, হায় আফসোস! আমি যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশ মেনে নিতাম,তাহলে কতইনা ভাল হত। ( (মূল হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি শুনেছি যে, তুমি দিনের বেলা রোযা রাখ এবং রাতের বেলা নফল নামায আদায় কর-এটা কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি এরূপ করো না। বরং মাঝে মাঝে রোযা রাখবে এবং মাঝে মাঝে রোযা ছাড়বে এবং রাতের কিছু অংশে নামায পড়বে এবং কিছু অংশে বিশ্রাম নিবে। কারণ
- তোমার উপরে তোমার শরীরের হক রয়েছে,
- তোমার চোখের হক রয়েছে,
- তোমার উপরে তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে,
তোমার জন্য প্রতিমাসে তিন দিন রোযা রাখাই যথেষ্ট। এতে সারা বছর রোযা রাখার সওয়াব রয়েছে। কেননা প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব দশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমি আমার নিজের উপর কঠোরতা আরোপ করলাম এবং বললাম হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমিতো একাধারে রোযা রাখতে এবং রাতের বেলা নামায পড়তে সক্ষম। আব্দুল্লাহ বিন আমর বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়ে বললেন, হায় আফসোস! আমি যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশ মেনে নিতাম,তাহলে কতইনা ভাল হত। ( (মূল হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
🔘 ৭. ক্রোধের যাবতীয় কারণ থেকে দূরে থাকা।
🔘 ৮. রাগের সময় চুপ থাকা: ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা শিক্ষা প্রদান কর, মানুষের উপর সহজ কর, কঠোরতা আরোপ করোনা, তোমাদের কেউ রাগন্বিত হয়ে গেলে সে যেন চুপ থাকে।” (৪)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬
রেফারেন্স:
(১) (হাসান) আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিবারণকারীর ফজীলত, হাদীছ নং- ৪১৪৭। তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বিররি ওয়াস্ সিলাত, অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিবারণ করা, হাদীছ নং- ১৯৪৪। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুজ্ জুহ্দ, অনুচ্ছেদঃ ধৈর্যধারণ করা, হাদীছ নং- ৪১৭৬। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ আল-জামেউ।
রেফারেন্স:
(১) (হাসান) আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিবারণকারীর ফজীলত, হাদীছ নং- ৪১৪৭। তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বিররি ওয়াস্ সিলাত, অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিবারণ করা, হাদীছ নং- ১৯৪৪। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুজ্ জুহ্দ, অনুচ্ছেদঃ ধৈর্যধারণ করা, হাদীছ নং- ৪১৭৬। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ আল-জামেউ।
(২)- (সহীহ) বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদঃ গালিগালাজ এবং লা’নত করা নিষেধ, হাদীছ নং- ৫৫৮৮। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বিররি ওয়াস্ সিলাত, অনুচ্ছেদঃ রাগের সময় যে নিজেকে সংবরণ করতে পারে, তার ফজীলত, হাদীছ নং- ৪৭২৫।
(৩) - (সহীহ) আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদঃ রাগের সময় যা বলা হবে, হাদীছ নং- ৪১৫১। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, ১/৬৯৫, মিশকাত হাদীছ নং- ৫১১৪।
(৪)- (সহীহ) আহমাদ, মুসনাদে বানী হাশেম, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের হাদীছ, হাদীছ নং- ২০২৯। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আল-জামেউ ২/৪০২৭, সিলসিলায়ে সহীহাহ, হাদীছ নং- ১৩৭৫
➖➖➖➖➖➖
লেখক: আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ল, সৌদি আরব)
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ল, সৌদি আরব)
(৪)- (সহীহ) আহমাদ, মুসনাদে বানী হাশেম, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের হাদীছ, হাদীছ নং- ২০২৯। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আল-জামেউ ২/৪০২৭, সিলসিলায়ে সহীহাহ, হাদীছ নং- ১৩৭৫
➖➖➖➖➖➖
লেখক: আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ল, সৌদি আরব)
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ল, সৌদি আরব)
প্রচণ্ড রাগ হলে কি করবেন?
.- আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আত্মসংযম বা রাগ নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা গুন। এটা আমাদের ক্রোধ বা রাগের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে রাখে। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, একদিন রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল, আপনি আমাকে কিছু অসিয়ত করুন।” উত্তরে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তুমি রাগান্বিত হইয়ো না” সে ব্যাক্তি একথাটি কয়েকবার বলল। তিনি (প্রত্যেকবারই একই কথা) বললেন, “তুমি রাগান্বিত হইয়ো না।” [সহীহ বুখারী, ৫৬৮৬ (ইফা)]
- .
- নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেন, “সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তীতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।” [সহীহ বুখারী, ৫৬৮৪ (ইফা)]
- .
- নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই উপদেশটি দিয়েছিলেন কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কেউ রাগান্বিত হয়ে পড়লে তা তার এবং তার আশেপাশের লোকজনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটা ক্ষতিকর ও বিপদজনক। কিন্তু তিনি এটাও জানতেন যে রাগের মুহূর্তে এই উপদেশটা মেনে চলা এত সহজ নয়, তাই তিনি রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়ও শিখিয়ে দিয়েছেন আমাদেরকে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তাহলে (রাগের) চিকিৎসা কি?” উত্তরে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “কেউ যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে তার উচিত সাথে সাথে বসে পড়া, আর রাগ না কমা পর্যন্ত ওই অবস্থায় থাকা। অন্যথায় তার উচিত শুয়ে পড়া।” [আবু দাউদ, ৪৭৬৪]
- .
- নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেন এই উপদেশ দিয়েছেন আমাদের তা সঠিকভাবে বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে আমাদের শরীর ও মনের উপর রাগের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কি কি, আর বসে বা শুয়ে পড়ার সাথে রাগের সম্পর্কটাই বা কি। কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে তখন তার কিডনির উপরে অবস্থিত অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রেনালিন নামক একপ্রকার হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়। রাগ, ভয়, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া বা এজাতীয় যেকোনো শারীরিক বা মানসিক চাপের কারণে এই হরমোনের নিঃসরণ ঘটতে পারে। আর এই অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি থেকে নরঅ্যাড্রেনালিন নামক আরও একপ্রকার হরমোন নিঃসরণ ঘটে, যদিও কিনা এই হরমোনের প্রধান উৎস হল হৃদপিণ্ডে সিম্পেথেটিক স্নায়ুর প্রান্তভাগে। তবে এই দুই প্রকার হরমোনই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং আর এদের নিঃসরণও ঘটে একই সাথে।
- .
- রাগের ফলে আমাদের শরীরে এই দুইপ্রকারের হরমোনই অধিক পরিমাণে নিঃসরিত হতে থাকে। এরমধ্যে একটা হরমোন যেহেতু হৃদপিণ্ড থেকে নিঃসরিত হয়, তাই রাগান্বিত অবস্থায় আমাদের হৃদপিণ্ড অধিকতর সক্রিয় হয়ে পড়ে, ফলে হৃদকম্পন হয়ে উঠে আরও দ্রুত ও অনিয়মিত। শারীরিক বা মানসিক চাপের ফলে হৃদপিণ্ডের এই তীব্র পরিবর্তন আমরা অনেকেই প্রায় সময় অনুভব করতে পারি। তাছাড়াও আমদের রেগে যাবার ফলে হৃদপিণ্ডের অতি-সক্রিয়তার কারণে অতিরিক্ত অক্সিজেনের জোগান দেওয়ার জন্য হৃদপেশীর সংকোচনও বেড়ে যায় কয়েক গুন; ফলে ধমনীতে চাপ পড়ে। আর তাই রাগান্বিত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যঝুকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। আর যাদের ধমনীর প্রশস্ততা কম তাদের হার্ট অ্যাটাকের (Cardiac Arrest) সম্ভাবনাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ, কেননা তাদের সংকুচিত ধমনী দিয়ে হঠাৎ অধিক বেগে রক্ত সঞ্চালনের ফলে ধমনীতে সৃষ্ট অতিরিক্ত চাপের কারণে তা ছিঁড়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। শরীরে এই দুই হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যাবার ফলে আমাদের রক্তচাপও বৃদ্ধি পায় অনেক, যা ব্লাড প্রেসারের (অধিক বা কম রক্তচাপের) সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য খুবই বিপদজনক ও ক্ষতিকর। তাছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণত রাগ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া হয় কেননা রাগ বা মানসিক চাপের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা একজন ডায়াবেটিক রোগীর জন্য খুবই বিপদজনক।
- .
- এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাগ বা ক্রোধ আমদের পুরো শরীরেই নানারকম মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে। আর একারণেই হয়তো নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বারবার রাগ সংবরণের উপদেশ দিয়েছেন আমাদের। এর গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তিনি পরপর তিনবার বলে উঠেন, “রাগান্বিত হইয়ো না।”
- .
- এবার দেখা যাক রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে উপায় বলে দিয়েছেন আমাদের তা কতটা বিজ্ঞানসম্মত? চিকিৎসাশাস্ত্রের বিখ্যাত লেখক হ্যারিসন বলেন, “এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, পাঁচ মিনিট শান্তভাবে দাড়িয়ে থাকাকালীন একজন ব্যক্তির রক্তে নরঅ্যাড্রেনালিনের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে। দাড়িয়ে থাকার কারণে অ্যাড্রেনালিনও সামান্য পরিমাণে বেড়ে যায়। কিন্তু বিভিন্ন রকমের মানসিক চাপ রক্তে অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা খুব বাড়িয়ে দিতে পারে।”
- .
- সহজ কথায় বলতে হয়, শান্তভাবে পাঁচ মিনিট দাড়িয়ে থাকলেই মানুষের রক্তে নরঅ্যাড্রেনালিনের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়, সাথে সাথে অ্যাড্রেনালিনও সামান্য পরিমাণে বেড়ে যায়। এখানে মনে রাখা উচিত যে অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনটি প্রধানত রাগ বা মানসিক চাপের কারণে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই সুস্পষ্টভাবে এটা প্রতীয়মান হয় যে দাঁড়ানো অবস্থায় রেগে গেলে এই হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ আমাদের শরীরের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। এর থেকেই বুঝা যায় আজ থেকে পনেরোশ বছর আগে যখন বর্তমানের তুলনায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানুষের জ্ঞান বা অগ্রগতি ছিল যৎসামান্য তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দিয়ে যাওয়া এই উপদেশ বানীর গুরুত্ব কতটুকু। “কেউ যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে তার উচিত সাথে সাথে বসে পড়া আর রাগ না কমা পর্যন্ত ওই অবস্থায় থাকা। অন্যথায় তার উচিত শুয়ে পড়া।” — এটাই হল সর্বকালের সর্বাধুনিক ডাক্তারি পরামর্শ!
- .
- রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার এতসব দুনিয়াবি উপকারিতার পাশাপাশি যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাদেরকে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ইমারানে পরকালে ক্ষমা ও জান্নাতের অধিবাসী করবার ওয়াদা করছেন, “যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।” [সূরাহ আল ইমরান, আয়াত : ১৩৪]
- .
- তাছাড়া পূর্বেইতো বলেছি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকেই প্রকৃত বীর বলেছেন যে নিজের ক্রোধ সংবরণ করতে পারে।
0 Comments