Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ

অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ
শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
..... বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম........ 
সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য। স্বলাত ও সালাম নিবেদন করছি আমাদের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (ﷺ) ও তার সকল সাহাবীগণের প্রতি।
বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে বা ইসলাম সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে ইসলাম ধর্মের নামে অনেক অনাচার, কুসংস্কৃতি, শিরক ও বিদআত প্রচলিত আছে ও প্রচলন ঘটছে। এর মধ্যে একটি হল, অলী আওলিয়াদের অসীলা দিয়ে দুআ-প্রার্থনা করা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তারা ভাল-মন্দ কিছু করতে পারে বলে বিশ্বাস রাখা, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে বলে বিশ্বাস করা। এ উদ্দেশ্যে তাদের কবর যিয়ারত করা, তাদের কবর তওয়াফ করা, কবরে উরস উৎসব আয়োজন করা ইত্যাদি। অনেক মুসলিম এ সকল কাজ এ ধারনার ভিত্তিতেই করে যে, এই কবরে শায়িত অলী আওলিয়ারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে। অথবা তাদেরকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করলে আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে যেয়ে তারা তার মাধ্যমে বা তার নামে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে। অনেকে সরাসরি তাদের কাছেই নিজেদের প্রয়োজন ও অভাব পুরণের জন্য প্রার্থনা করে। বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করে। তারা মনে করে এ ধরণের অসীলা গ্রহণ করতে ইসলামে নিষেধ নয়। বরং এদের অনেকে মনে করে এ ধরনের অসীলা গ্রহণ ইসলামে একটি ভাল কাজ।

কিন্তু আসলে অসীলা গ্রহণ কী? এর বৈধতা কতটুকু? (অলী আওলিয়াদের অসীলা)

বইটিতে এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।
সত্যিকার অসীলা হল, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর অনুসরণের মাধ্যমে সৎকর্ম করা আর নিষিদ্ধ ও হারাম কথা-কর্ম থেকে বেঁচে থাকা। আর নেক আ‘মাল সম্পাদন করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হল সত্যিকার অসীলা। তা ছাড়া আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও গুণাবলির মাধ্যমে অসীলা গ্রহণের কথা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন।
কিন্তু মৃত অলী আওলিয়াদের কবরের কাছে যাওয়া, কবর তওয়াফ করা, কবরে-মাজারে মানত করা, কবরে শায়িত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা, তার কাছে নিজের অভাব অভিযোগের কথা বলা ইত্যাদি কাজ-কর্মের মাধ্যমে অসীলা গ্রহণ শুধু নিষিদ্ধই নয় বরং এগুলো শিরক ও কুফরী। এগুলোতে কেহ লিপ্ত হলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। নাউজুবিল্লাহ!
এ গেল মৃত অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ সম্পর্কে। আবার অনেকে জীবিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে নাজায়েয অসীলা গ্রহণ করে থাকে। তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে থাকে। যেমন গরু, ছাগল, মুরগী জবেহ করার সময় বলে থাকে: আমাদের পীর সাবের নামে বা আমার বাবার নামে জবেহ করলাম। অথবা নিজের পীর বা পীরের পরিবারের লোকদের সম্মানের জন্য সেজদা করে থাকে। এগুলো সবই শিরক এবং শিরকে আকবর বা বড় শিরক। অনেকে নিজের জীবিত পীর ফকীরদের সম্পর্কে ধারনা করে থাকে যে, আল্লাহ তাআলার সাথে তার বিশেষ যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে, তাই তার মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়া যাবে, এটাও শিরক।
যারা একদিন লাত উজ্জা প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজা করতো, তারা কিন্তু এ বিশ্বাস করতো না যে এগুলো হল তাদের প্রভূ বা সৃষ্টিকর্তা। বরং তারা বিশ্বাস করতো এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বা তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করবে। তারা এটাও বিশ্বাস করতো না যে, এ সকল দেব-দেবী বৃষ্টি দান করে বা রিযক দান করে। তারা বলতো : مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى. (الزمر : 3)
আমরা তো তাদের ইবাদত করি এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩)
তারা এ সম্পর্কে আরো বলতো : هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ . (يونس : 18)
এরা (দেব-দেবী) আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শুপারিশ করবে। (সূরা ইউনূস, আয়াত ১৮)
দেখা গেল তারা এ অসীলা গ্রহণের কারণেই শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়লো। আর এ শিরকের বিরুদ্ধে তাওয়াহ্‌য়ীদের দাওয়াতের জন্যই আল্লাহ তাআলা রাসূলগণকে পাঠালেন যুগে যুগে, প্রতিটি জনপদে। এ সকল দেব-দেবীর কাছে যেমন প্রার্থনামূলক দুআ করা শিরক তেমনি সাহায্য প্রার্থনা করে দুআ করাও শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا. (الإسراء : 56)
বল, তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে কর। তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ইসরা, আয়াত ৫৬)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ ﴿22﴾ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ. (سبأ : 22-23)
বল, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয়। আর এ দুয়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। (সূরা সাবা, আয়াত ২২-২৩)
এ সকল আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বললেন: আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তারা অনু পরিমাণ বস্তু সৃষ্টি করতে পারে না। তারা কোন সৃষ্টি জীবের সামান্য কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না। তারা আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে কোন আশ্রয় দেয়ার সামর্থ রাখে না।
নবী করীম (ﷺ) কবরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করেছেন। কবরের কাছে স্বলাত পড়তে নিষেধ করেছেন। কবরকে সেজদা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ওফাতের সময়ও বলেছেন:
আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভিসম্পাত করুন। তারা নবীদের কবরকে ইবাদতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেছে। আর ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা কবরকে সম্মান করা হল শিরকে লিপ্ত হওয়ার একটি রাস্তা। এভাবে কবরকে পূজা করার মাধ্যমেই মানুষ মূর্তি পূজার দিকে ধাবিত হয়।
ওমর (রাঃ) দুআর সময় আব্বাস (রাঃ) কে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, এ বিষয়টি দিয়ে অনেকে মৃত ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ করার বৈধতা দেয়ার প্রয়াস পান। কিন্তু ওমর (রাঃ) আব্বাস (রাঃ) এর দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন তার ব্যক্তিত্বকে নয়। আর আব্বাস (রাঃ) তখন জীবিত ছিলেন। যে কোন জীবিত ব্যক্তির দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করা যায়। ওমর (রাঃ) তা-ই করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী কারীম (ﷺ) জীবিত থাকাকালে আমরা তার অসীলা দিয়ে দুআ করতাম। এখন তিনি নেই তাই আমরা তার চাচা আব্বাসকে দুআ করার ক্ষেত্রে অসীলা হিসাবে নিলাম। ওমর (রাঃ) এর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হল যে, তিনি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুআর সময় অসীলা হিসাবে গ্রহণ বৈধ মনে করতেন না। তিনি নবী হলেও না।
বিষয়টা এমন, যেমন আমরা কোন স -নেককার ব্যক্তিকে বলে থাকি, আমার জন্য দুআ করবেন। কোন আলেম বা বুযুর্গ ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য দুআ করিয়ে থাকি। এটাও এক ধরণের অসীলা গ্রহণ। এটা বৈধ। কিন্তু কোন বুযুর্গ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে অসীলা করে দুআ করা, দুআর সময় তার রূহের প্রতি মনোনিবেশ করা (যেমন অনেকে বলে থাকে আমি আমার দাদাপীর অমুকের দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হলাম), তার থেকে ফয়েজ-বরকত লাভের ধারনা করা, এগুলো নিষিদ্ধ ও শিরক। মৃত ব্যক্তি যত মর্যাদাবান বুযুর্গ হোক সে কারো ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। যখন সে মৃত্যুর পর নিজের জন্য ভাল মন্দ কিছু করতে পারে না, তখন অন্যের জন্য কিছু করতে পারার প্রশ্নই আসে না। সে কারো দুআ কবুলের ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। কাউকে উপকার করার বা বিপদ থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তার থাকে না।
নবী কারীম (ﷺ) স্পষ্টভাবে বলেছেন : মৃত ব্যক্তি নিজের কোন উপকার করতে পারে না। তিনি বলেছেন :
إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاث : إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له . رواه مسلم
মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আ‘মাল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে।
১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)
২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা)
৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে। বর্ণনায়: মুসলিম
হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে পারে। কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা।
যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল আ‘মাল বন্ধ হয়ে যায়। তার আ‘মাল দিয়ে সে কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তখন আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক ব্যক্তি কবরে জীবিত আছেন? তার সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন? এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না, কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন:
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ. (النمل : 80)
নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০)
যখন নবী করীম (ﷺ) কোন মৃতকে কিছু শোনাতে পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে এ অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু প্রার্থনা করি তা তারা কিছুই শুনতে পায় না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল করবে? কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা পূরণ করবে?
আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয়, তা সবই বাতিল। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿107﴾ (يونس)
আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু (সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই বাতিল। আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না।
যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে? কেন তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে?
অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়, অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি মিথ্যারোপের শামিল।
হ্যা, হতে পারে অলী আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে কিছু চাইলে তা যেন অর্জন হবে না এ কথা বলা যায় না। তবে অর্জন হলে সেটা দু কারণে হতে পারে:
এক. অলীর মাজারে যেয়ে যা চাওয়া হয়েছে তা পুরণ করা কোন সৃষ্টিজীবের পক্ষে সম্ভব হবে অথবা হবে না। যদি সম্ভব হয়, তাহলে হতে পারে শয়তান প্রার্থীত বিষয়গুলোকে অর্জন করিয়ে দিয়েছে। যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। যা চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে। কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয় সে সকল স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন সে তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের কাছে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন।
এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে। তাই অনেক সময় এ সকল গণকদের কথা ও ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হতে দেখা যায়।
এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে। পরে সে যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। ফলে বিপদে পড়া মানুষটি মনে করে মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও শিরকের প্রসার করে যাচ্ছে।
দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ বিষয়টি অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা ছিল। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির অর্জন হয়নি।
তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই কুসংস্কার। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল তাওয়াহ্‌য়ীদ। তাওয়াহ্‌য়ীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়, কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির মুক্তি নেই।
কাল্পনিক কারামত
অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন অলৌকিক বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের থেকে প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত প্রকাশের শর্ত হল নেককার ও মুত্তাকী হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী ধোকা-বাজি বা প্রতারণা।
অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা মানুষ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে কারামতের মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। কিন্তু আসল ব্যাপার হল, কারামত কোন ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে কখনো কারামত সংঘটিত করতে পারে না, সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন।
কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে। আবার যদি সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে?
এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা কোন নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে কোন নবীর ইবাদত করা, বা তাকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِي مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ ﴿79﴾ وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿80﴾. (آل عمران)
কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী(আল্লাহ ভক্ত) হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০)
মুশরিকদের অবস্থা : অতীত ও বর্তমান
যারা কবর মাযার পূজা করে তারা বলে থাকে যে, মুশরিকরা মূর্তি পূজা করত। আমরাতো মূর্তি পূজা করি না। আমরা আমাদের পীর দরবেশদের মাজার জিয়ারত করি। এগুলোর ইবাদত বা পূজা করি না। তাদের অসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ-প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ তাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাদের দুআ-প্রার্থনা কবুল করেন। এটাতো কোন ইবাদত নয়। এদের উদ্দেশ্যে আমরা বলব, মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য ও বরকত কামনা করা সত্যিকারার্থে তার কাছে দুআ করার শামিল। যেমন ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে পৌত্তলিকরা মূর্তির কাছে দুআ-প্রার্থনা করত। তাই জাহেলী যুগের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের কবর পূজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ দুটো কাজই লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন। যখন জাহেলী যুগের মুশরিকদের বলা হল তোমরা কেন মূর্তিগুলোর ইবাদত করো? তারাতো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। তখন তারা ইবাদতের বিষয়টি অস্বীকার করত এবং বলত: مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى. (الزمر : 3)
আমরা তো তাদের ইবাদত করি না, তবে এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩)
এমনিভাবে আমাদের সমাজের কবরপূজারীরাও বলে থাকে যে, আমরা তো কবরে শায়িত অলীর ইবাদত করি না। তার কাছে দুআ করি না। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু এই যে, তারা আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাদের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করা যাবে। এ সকল অলীগণকে আমরা আমাদের ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে মাধ্যম মনে করে থাকি।
কাজেই পরিণতির দিক দিয়ে জাহেলী যুগের মুশরিকদের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের মুসলিমদের কবর পূজা এক ও অভিন্ন। দুটো একই ধরনের শিরক।
মুহাব্বাত ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক
অন্তরের একাগ্র ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সৃষ্টি পেতে পারে না। এই নির্ভেজাল শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসা হল একটি ইবাদত। যারা মনে করে আমরা এই কবরের অলী ও বুযুর্গদের অত্যাধিক ভালোবাসি, তাদের শ্রদ্ধা করি, তাদের সম্মান করি তাহলে এটিও একটি শিরক। আর এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণেই তারা অলী-বুযুর্গদের কবরে মানত করে, কবর প্রদক্ষিণ করে, কবর সজ্জিত করে, কবরে ওরস অনুষ্ঠান করে। কবরবাসীর কাছে তারা সাহায্য চায়, উদ্ধার কামনা করে। যদি কবরওয়ালার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সম্মান ও ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে তারা এগুলোর কিছুই করত না। আর এ ধরনের ভালোবাসা শুধু আল্লাহর তাআলার জন্যই নিবেদন করতে হয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ. (البقرة : 165)
আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৬৫)
দৃঢ়তর, সত্যিকার ও সার্বক্ষণিক ভালোবাসা একমাত্র তাআলার প্রাপ্য। এটা অন্যকে নিবেদন করলে শিরক হয়ে যাবে। মুশরিক পৌত্তলিকরা তাদের দেব-দেবীর জন্য এ রকম ভালোবাসা পোষণ করে থাকে।
আল্লাহ মানুষের খুবই কাছে। মানুষ আল্লাহর কাছে তার প্রার্থনা পৌছে দিতে মাধ্যম বা অসীলা খোঁজে। কিন্তু কেন? আল্লাহ তাআলা কি মানুষ থেকে অনেক দূরে? আর মাজারে শায়িত সে সকল পীর অলীগণ মানুষের কাছে কি আল্লাহর চেয়েও নিকটে? কখনো নয়। একজন মানুষ যখন প্রার্থনা করে তখন সকলের আগেই তারা সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা নিজে বলেছেন:
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ. (البقرة : 186)
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)
মানুষ সরাসরি আল্লাহ তাআলার কাছে তার সকল প্রার্থনা নিবেদন করবে কোন মাধ্যম ব্যতীত। এটাই ইসলামের একটি বৈশিষ্ট ও মহান শিক্ষা। আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ-প্রার্থনায় কোন মাধ্যম গ্রহণ করার দরকার নেই মোটেই।
দুআ-প্রার্থনায় মাধ্যম বা অসীলা গ্রহণ একটি বিজাতীয় বিষয়। হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের লোকেরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে মূর্তি, পাদ্রী ও ধর্মযাজকদের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এ দিকের বিবেচনায় এটি একটি কুফরী সংস্কৃতি, যা কোন মুসলিম অনুসরণ করতে পারে না।
দুআ-প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য স কর্মসমূহকে অসীলা হিসাবে নেয়া যায়। তেমনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামসমূহ অসীলা হিসাবে নেয়ার জন্য আল-কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. (الأعراف : 180)
আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ১৮০)
সর্বশেষে বলতে চাই, যারা এ ধরনের অন্যায় অসীলা গ্রহণের মাধ্যমে শিরকে লিপ্ত হচ্ছেন তারা এর থেকে ফিরে আসুন। আমাদের দায়িত্ব কেবল সত্য বিষয়টি আপনাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এ সকল অসীলা নি:সন্দেহে শিরক। আর শিরক এমন এক মহা-পাপ যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। যে এ শিরকে লিপ্ত হবে জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ. (المائدة : 72)
নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২)
তাই আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য হল, আমাদের সকল ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-প্রার্থনা নির্ভেজালভাবে একমাত্র এক আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদন করা। তিনি যা করতে বলেছেন আমরা তাই করবো। নিজেরা কিছু উদ্ভাবন করবো না। তাঁর রাসূল (ﷺ) আমাদের যেভাবে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন আমরা সেভাবেই প্রার্থনা করবো। তিনি যেভাবে অসীলা গ্রহণ অনুমোদন করেছেন, আমরা সেভাবে অসীলা গ্রহণ করবো। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা ইসলাম থেকে দূরে চলে যাবো। কাজেই সর্বক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হবে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ করা। যদি আমরা এভাবে চলতে পারি তবে দুনিয়াতে কল্যাণ আর আখেরাতে চিরন্তন সুখ ও সফলতা লাভ করতে পারবো। অন্যথা, উভয় জগতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে শিরক থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন!

Post a Comment

0 Comments