❒ মুরজিয়া আক্বিদা।----------------------------
শাব্দিকভাবে মুরজিয়া শব্দটি ইরজা’ থেকে এসেছে যার অর্থ – বিলম্বিত করা।
❒ নিম্নে তাদের কিছু আকিদা তুলে ধরা হল -
১। তাদের এক গ্রুপ দাবী করে যে, ঈমান হচ্ছে শুধু আল্লাহ আছেন এই জ্ঞান থাকা (মা’রিফাত) যদিও এর সাথে এর মৌখিক কিংবা আন্তরিক সত্যায়ন (তাসদিক) না থাকে। জাহামিয়া গোষ্ঠী এ রকম দাবী করে থাকে।
.
এদের এই দাবী অনুযায়ী ফেরাউন, আবু-জেহেল, শয়তান – এরা সবাই ঈমানের অধিকারী হয়ে যায়!! কারণ এরা সবাই জানতো যে, আল্লাহ আছেন। এটা বাতিল একটি দাবী।
.
২। তাদের আরেক গ্রুপ দাবী করে ঈমান হচ্ছে শুধুমাত্র অন্তরের সত্যায়ণ। এর জন্য মৌখিক স্বীকৃতি কিংবা আ’মল জরুরী নয়। এটাও একটা বাতিল দাবী।
কারণ কাফিররাও নিজেদের অন্তরে এটা জানে যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সত্য। আল্লাহ বলেনঃ
يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ
‘তারা তাকে চেনে, যেমন করে চেনে নিজেদের পুত্রদেরকে’। (২:১৪৬)
.
৩। আরেক গ্রুপের দাবী, ঈমান হচ্ছে শুধু মৌখিক সত্যায়ণ। এর জন্য আ’মল কিংবা অন্তরের বিশ্বাস জরুরী নয়। কারামিয়া গোষ্ঠী এই দাবী করে থাকে।
এটাও বাতিল দাবী। কারণ এই দাবী মেনে নিল মুনাফিকরাও ঈমানদার হয়ে যায়!!
.
৪। এদের আরেক দল দাবী করে ঈমান হলোঃ মৌখিক স্বীকৃতি ও অন্তরের বিশ্বাস। আ’মল জরুরী নয়। এদেরকে মুরজিয়াতুল ফুকা’হা বলা হতো। এটাও ভ্রান্ত একটা দাবি।
.
✍ ইমাম ইসহাক ইবনে রাহাবীয়া (রঃ) বলেন,
قال الامام إسحاق بن راهويه: (غلت المرجئة حتى صار من قولهم ان قوما يقولون: من ترك الصلوات المكتوبات وصوم رمضان والزكاة والحج وعامة الفرائض من غير جحود بها لا نكفره يرجى أمره الى الله بعد اذ هو مقر فهؤلاء الذين لا شك فيهم يعني في أنهم مرجئة) [فتح الباري لابن رجب 1/23].
“সবচেয়ে পথভ্রষ্ট মুরজিয়াদের কথার ব্যাপারে, এমনকি এটা তাদের সবার কথা হয়ে গেছে, কোন কোন লোক বলেঃ যে ফরজ নামাজ, রমজানের রোযা, যাকাত, হজ্জ্ব এবং সকল ফরজ কাজ অস্বীকার না করে শুধু ছেড়ে দেয়, আমরা তাকে তাকফীর করি না। তার ব্যাপার আমরা আল্লাহর বিচাররের জন্য রেখে দেই যখন সে এইগুলো স্বীকার করে। এই লোকগুলো যে মুরজিয়াদের অন্তর্ভূক্ত এতে কোন সন্দেহ নেই। (ফাতহুল বারী লি ইবনে রজব, ১/২৩)
.
আহলে সুন্নাহ এই দুই এর মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে। তাই কেউ যদি কোন কুফরী কাজ সম্পাদন করে, এবং তার ব্যাপারে তাকফীরের শর্তগুলো পূরণ হয়, এবং প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হয়ে যায় (সকল কুফরী কাজ এর জন্য এটা শর্ত নয়) তাহলে তার ব্যাপারে হুকুম পরিষ্কার। সে ঈমানের মূল শাখা বিনষ্টকারী কাজ করেছে। আর ঠিক যেভাবে ঈমান হচ্ছে কথা, কাজ ও অন্তরের বিশ্বাস ঠিক তেমনি কুফর কথা হতে পারে, কাজ হতে পারে কিংবা বিশ্বাস হতে পারে যা ঈমানের মূলকে নষ্ট করে দেয়। আর কুফর ও ঈমান একত্রে অবস্থান করতে পারে না।
.
নব্য মুরজিয়া গোষ্টীঃ এরা আগের মুরজিয়াদের কথা জানে।। তাই তারা চাতুর্য্যের আশ্রয় নেয়। তারা মুখে দাবী করে যে, তারা ঈমানের ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ এর অনুসরণ করে। কিন্তু বাস্তবে তারাঃ
.
- আল্লাহ্র সাথে শিরক
- মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করা
- আল্লাহ্র দেয়া শরীয়াতকে প্রতিস্থাপন (ইস্তেবদাল)
- আল্লাহ্র দ্বীনকে পরিবর্তন
- সর্বসম্মত হারাম বিষয়কে হালাল করা।
- আল্লাহ্র দ্বীন নিয়ে হাসি-তামাশা করা
- আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ)-কে গালি দেয়া
.
এ সকল ছরীহ (সুস্পষ্ট) কুফরী কাজকে তারা জুহুদ ( অন্তরে অস্বীকার), ইস্তিহলাল (হালাল মনে করা) অথবা ইনক্বিয়াদ এসব শর্তের মাধ্যমে সীমিত করে দেয়। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) আস্ সারিমুল মাসলুলে এ ধরনের লোকদেরকে নব্য জ্বাহামিয়া বলে উল্লেখ করেছেন।
وهم الجهمية الإناث الذين ذهبوا مذهب الجهمية الأولى في أن الإيمان هو مجرد التصديق الذي في القلب و إن لم يقترن به قول اللسان و لم يقتض عملا في القلب ولا في الجوارح ـ
.
✍ এই রকম মুরজিয়াদের ভ্রান্ত সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ
وَهُوَ أَنَّ الْإِيمَانَ مُجَرَّدُ تَصْدِيقِ الْقَلْبِ وَلَوْ كَذَّبَ بِلِسَانِهِ وَسَبَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ بِلِسَانِهِ وَإِنَّ سَبَّ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إنَّمَا هُوَ كُفْرٌ فِي الظَّاهِرِ وَأَنَّ كُلَّمَا كَانَ كُفْرًا فِي نَفْسِ الْأَمْرِ فَإِنَّهُ يَمْتَنِعُ أَنْ يَكُونَ مَعَهُ شَيْءٌ مِنْ تَصْدِيقِ الْقَلْبِ وَهَذَا أَصْلٌ فَاسِدٌ فِي الشَّرْعِ وَالْعَقْلِ
‘(তাদের দাবী) এই যে, ঈমান হচ্ছে শুধুমাত্র অন্তরের সত্যায়ণ (তাসদীক) যদিও তারা মুখে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে গালি দেয়। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-কে গালি দেয়া নিশ্চিতরুপে প্রকাশ্য (যাহের) কুফরী। আর যখনই কোন বিষয় নিজেই একটা কুফরী হয়, তখন এর সাথে (এই কুফরীর ব্যাপারে) অন্তরের সত্যায়ণ এর কোন ব্যাপার নেই। এই ব্যাপারটি (প্রকাশ্য কুফরী কাজ করার পরেও অন্তরে ঈমান-তাসদীক থাকার ধারনা) শরীয়াগত ও যৌক্তিক দিক থেকে ভুল’।
✍ ইবনে আসাকির এর বর্ণনা আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে এসেছে যেখানে নজর বিন সামিল (রঃ) খলিফা আল মামুনের কাছে হাজির হবার পর, খলিফা জিজ্ঞাসা করলেন,
ما الارجاء ؟ فقلت دين يوافق الملوك يصيبون به من دنياهم وينقصون به من دينهم.
.
‘ইরজা কি? আমি বললামঃ এটা এমন দ্বীন যা শাসকদের জন্য উপযোগী, তারা এর মাধ্যমে দুনিয়া অর্জন করে কিন্তু তাদের দ্বীন হারিয়ে ফেলে তিনি তখন বললেন, ‘তুমি সত্য বলেছো’। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/৩০৩)
❒ প্রচারেঃ
আখতার বিন আমীর
About সহীহ-আকিদা(RIGP)