নামাযে দোয়া করার স্থানগুলো কি কি?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।
নামাযে দোয়া করার স্থানসমূহ দুই প্রকার:প্রথম প্রকার: যে স্থানগুলোতে দোয়া করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে দলিল-প্রমাণ এসেছে ও দোয়া করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। নামাযীর জন্য এ স্থানগুলোতে তার সাধ্যানুযায়ী দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করা মুস্তাহাব। দোয়ার মধ্যে তিনি আল্লাহ্র কাছে নিজের সাধারণ প্রয়োজন পেশ করবেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে যে সব কল্যাণ পেতে পছন্দ করেন সেগুলোও প্রার্থনা করবেন।
প্রথম স্থান: সেজদাতে। এর দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "বান্দা তার প্রভুর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় সেজদারত অবস্থায়। অতএব, তোমরা বেশি বেশি দোয়া কর।"[সহিহ মুসলিম (৪৮২)]
দ্বিতীয় স্থান: শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদের পর, সালাম ফেরানোর আগে। দলিল হচ্ছে—ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে তাশাহ্হুদ শিক্ষা দিতেন। এরপর তিনি হাদিসের শেষের দিকে বলেন: "এরপর যা ইচ্ছা প্রার্থনা করবে।"[সহিহ বুখারী (৫৮৭৬) ও সহিহ মুসলিম (৪০২)]
তৃতীয় স্থান: বিতিরের নামাযের দোয়ায়ে কুনুতে। এর দলিল আবু দাউদ (১৪২৫) কর্তৃক হাসান বিন আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: রাসূলুল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কিছু বাণী শিখিয়ে দিয়েছেন সেগুলো আমি বিতিরের নামায দোয়ায়ে কুনুত হিসেবে পড়ি:
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ ، إِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
(অনুবাদ: হে আল্লাহ আপনি যাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন, আমাকে তাদের সাথে হেদায়েত করুন। আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছেন, আমাকেও তাদের সাথে নিরাপত্তা দান করুন। আপনি যাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সাথে আমার দায়িত্বও গ্রহণ করুন। আপনি আমাকে যা কিছু দান করেছেন, তাতে বরকত দান করুন। আপনি যে (তাক্বদীর) নির্ধারণ করেছেন, তার অকল্যাণ থেকে আমাকে বাঁচান। কেননা আপনিই নির্ধারণ করেন, আপনার নির্ধারণের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি নেই। নিশ্চয় আপনি যাকে নৈকট্য দান করেন, কেউ তাকে অপমানিত করতে পারে না। আপনি যার সাথে শত্রুতা করেন, সে সম্মানিত হতে পারে না। আপনার কল্যাণ অবারিত হোক এবং আপনার মর্যাদা সমুন্নত হোক।)
দ্বিতীয় প্রকার: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের বর্ণনায় যে স্থানগুলোতে তিনি দোয়া করেছেন মর্মে উদ্ধৃত হয়েছে। কিন্তু দোয়াকে দীর্ঘ করেননি, খাস করেননি এবং সাধারণ কোন প্রয়োজন পেশ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেননি। কেবল তিনি কিছু সংখ্যক বাক্য দিয়ে দোয়া করেছেন। এ স্থানগুলোর দোয়া সাধারণ দোয়ার বদলে নির্দিষ্ট কিছু যিকির আযকার পড়ার সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ।
প্রথম স্থান: তাকবীরে তাহরীমার পরে সূরা ফাতিহা শুরু করার আগে দুয়ায়ে ইস্তিফ্তাহ।
দ্বিতীয় স্থান: রুকুতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে রুকুতে গিয়ে বলতেন:
سبحانك اللهمّ ربنا وبحمدك اللهمّ اغفر لي
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! হে আমাদের রব্ব! আমি আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন।)[সহিহ বুখারী (৭৬১) ও সহিহ মুসলিমে (৪৮৪) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত]
ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর সহিহ গ্রন্থে এ হাদিসের শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে: "রুকুর দোয়া শীর্ষক পরিচ্ছেদ"।
তৃতীয় স্থান: রুকু থেকে উঠার পর। দলিল হচ্ছে—আব্দুল্লাহ বিন আবি আওফা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলতেন:
اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاءِ ، وَمِلْءُ الْأَرْضِ ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ ، اللهُمَّ طَهِّرْنِي بِالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَالْمَاءِ الْبَارِدِ ، اللهُمَّ طَهِّرْنِي مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْوَسَخِ
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আপনার প্রশংসা আসমান পূর্ণ করে, জমিন পূর্ণ করে, আর এর পরে যা পূর্ণ করা আপনার ইচ্ছা তা পূর্ণ করে। হে আল্লাহ্! আমাকে পবিত্র করুন বরফ দিয়ে, শিলা দিয়ে এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে। হে আল্লাহ্! আমাকে গুনাহ ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে পবিত্র করুন যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে নির্মল করা হয়)[সহিহ মুসলিম (৪৭৬)]
চতুর্থ স্থান: দুই সেজদার মাঝখানে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে বলতেন:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ، وَارْحَمْنِي ، وَاجْبُرْنِي ، وَاهْدِنِي ، وَارْزُقْنِي
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে হেদায়েতের উপর রাখুন, আমাকে রিযিক দিন।)[সুনানে তিরিমযি (২৮৪) আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
ইমাম নববী বলেন:
তাতিম্মা গ্রন্থাকার বলেছেন: বলেছেন, এ দোয়া-ই করতে হবে এমনটি নয়। বরং যে কোন দোয়া করলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। তবে হাদিসে যে দোয়াটি এসেছে সেটা পড়াই উত্তম।[আল-মাজমু (৩/৪৩৭) থেকে সমাপ্ত]
দাঁড়ানো অবস্থায় ক্বিরাত পড়াকালেও দোয়া করা উদ্ধৃত হয়েছে। নফল নামাযে এভাবে দোয়া করার ব্যাপারে সরাসরি দলিল এসেছে। আর ফরয নামাযে এভাবে দোয়া করাকে কোন কোন আলেম নফল নামাযের উপর কিয়াস করেছেন। দলিলটি হচ্ছে হুযাইফা (রাঃ) এর হাদিস: তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে নামায পড়েছেন। তিনি বলেন: যখনই তিনি রহমতের আয়াত পড়তেন থামতেন। থেমে দোয়া করতেন। আবার যখন আযাবের আয়াত পড়তেন থামতেন। থেমে আশ্রয় চাইতেন।[সুনানে আবু দাউদ (৮৭১), আলবানী 'সহিহু আবু দাউদ' গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
কুনুতে নাযেলা (কঠিন বিপদমুক্তির দোয়া) এর মধ্যেও দোয়া করার কথা উদ্ধৃত আছে। তবে, এক্ষেত্রে মূল দোয়াটা হতে হবে বিপদ থেকে মুক্তির উপযুক্ত দোয়া। এর সাথে যদি অন্য কোন দোয়াও করে তাতে আশা করি কোন অসুবিধা হবে না।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
নামাযের ভেতরে যে স্থানগুলোতে দোয়া করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে সেগুলো মোট ছয়টি। এ ছয়টি উল্লেখ করার পর আরও দুইটি যোগ করেছেন:
১। তাকবীরে তাহরীমার পর। এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
اللهم باعد بيني وبين خطاياي ... الحديث
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমার মাঝে ও আমার গুনাহর মাঝে এমন দূরত্ব তৈরী করে দিন…শীর্ষক হাদিস।
২। রুকু থেকে সোজা হলে। এ ব্যাপারে ইবনে আবু আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে তিনি من شيء بعد বলার পর বলতেন:
اللهم طهرني بالثلج والبرد والماء البارد
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমাকে বরফ দিয়ে, শিলা দিয়ে ও ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পবিত্র করুন)।
৩। রুকুতে। এ ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে: তিনি তাঁর রুকুতে ও সেজদাতে বেশি বেশি বলতেন:
سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفر لي
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! হে আমাদের রব্ব! আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন।)[সহহি বুখারী ও সহিহ মুসলিম]
৪। সেজদাতে। এটি সবচেয়ে বেশি দোয়া করার স্থান এবং এখানে দোয়া করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
৫। দুই সেজদার মাঝখানে। ( اللهم اغفر لي ) (অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন)।
৬। তাশাহ্হুদে।
এছাড়াও তিনি কুনুতে দোয়া করতেন। ক্বিরাত পড়ার সময়ও দোয়া করতেন। যখনই কোন রহমতের আয়াত পড়তেন দোয়া করতেন। যখনই কোন আযাবের আয়াত পড়তেন আশ্রয় চাইতেন।[ফাতহুল বারী (১১/১৩২) থেকে সমাপ্ত]
দোয়া করার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দুইটি: সেজদাতে ও শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদের পর।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
নামাযে দোয়া করার স্থান হচ্ছে- সেজদা কিংবা তাশাহ্হুদ।[ফাতহুর বারী (১১/১৮৬) থেকে সমাপ্ত; আরও দেখুন প্রাগুক্ত গ্রন্থের (২/৩১৮)]
শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:
নামাযে দোয়া করার স্থান: সেজদা ও আত্তাহিয়্যাতু শেষে সালাম ফেরানোর পূর্বে।[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (৮/৩১০)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।
নামাযে দোয়া করার স্থানসমূহ দুই প্রকার:প্রথম প্রকার: যে স্থানগুলোতে দোয়া করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে দলিল-প্রমাণ এসেছে ও দোয়া করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। নামাযীর জন্য এ স্থানগুলোতে তার সাধ্যানুযায়ী দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করা মুস্তাহাব। দোয়ার মধ্যে তিনি আল্লাহ্র কাছে নিজের সাধারণ প্রয়োজন পেশ করবেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে যে সব কল্যাণ পেতে পছন্দ করেন সেগুলোও প্রার্থনা করবেন।
প্রথম স্থান: সেজদাতে। এর দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "বান্দা তার প্রভুর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় সেজদারত অবস্থায়। অতএব, তোমরা বেশি বেশি দোয়া কর।"[সহিহ মুসলিম (৪৮২)]
দ্বিতীয় স্থান: শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদের পর, সালাম ফেরানোর আগে। দলিল হচ্ছে—ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে তাশাহ্হুদ শিক্ষা দিতেন। এরপর তিনি হাদিসের শেষের দিকে বলেন: "এরপর যা ইচ্ছা প্রার্থনা করবে।"[সহিহ বুখারী (৫৮৭৬) ও সহিহ মুসলিম (৪০২)]
তৃতীয় স্থান: বিতিরের নামাযের দোয়ায়ে কুনুতে। এর দলিল আবু দাউদ (১৪২৫) কর্তৃক হাসান বিন আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: রাসূলুল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কিছু বাণী শিখিয়ে দিয়েছেন সেগুলো আমি বিতিরের নামায দোয়ায়ে কুনুত হিসেবে পড়ি:
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ ، إِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
(অনুবাদ: হে আল্লাহ আপনি যাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন, আমাকে তাদের সাথে হেদায়েত করুন। আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছেন, আমাকেও তাদের সাথে নিরাপত্তা দান করুন। আপনি যাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সাথে আমার দায়িত্বও গ্রহণ করুন। আপনি আমাকে যা কিছু দান করেছেন, তাতে বরকত দান করুন। আপনি যে (তাক্বদীর) নির্ধারণ করেছেন, তার অকল্যাণ থেকে আমাকে বাঁচান। কেননা আপনিই নির্ধারণ করেন, আপনার নির্ধারণের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি নেই। নিশ্চয় আপনি যাকে নৈকট্য দান করেন, কেউ তাকে অপমানিত করতে পারে না। আপনি যার সাথে শত্রুতা করেন, সে সম্মানিত হতে পারে না। আপনার কল্যাণ অবারিত হোক এবং আপনার মর্যাদা সমুন্নত হোক।)
দ্বিতীয় প্রকার: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের বর্ণনায় যে স্থানগুলোতে তিনি দোয়া করেছেন মর্মে উদ্ধৃত হয়েছে। কিন্তু দোয়াকে দীর্ঘ করেননি, খাস করেননি এবং সাধারণ কোন প্রয়োজন পেশ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেননি। কেবল তিনি কিছু সংখ্যক বাক্য দিয়ে দোয়া করেছেন। এ স্থানগুলোর দোয়া সাধারণ দোয়ার বদলে নির্দিষ্ট কিছু যিকির আযকার পড়ার সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ।
প্রথম স্থান: তাকবীরে তাহরীমার পরে সূরা ফাতিহা শুরু করার আগে দুয়ায়ে ইস্তিফ্তাহ।
দ্বিতীয় স্থান: রুকুতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে রুকুতে গিয়ে বলতেন:
سبحانك اللهمّ ربنا وبحمدك اللهمّ اغفر لي
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! হে আমাদের রব্ব! আমি আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন।)[সহিহ বুখারী (৭৬১) ও সহিহ মুসলিমে (৪৮৪) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত]
ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর সহিহ গ্রন্থে এ হাদিসের শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে: "রুকুর দোয়া শীর্ষক পরিচ্ছেদ"।
তৃতীয় স্থান: রুকু থেকে উঠার পর। দলিল হচ্ছে—আব্দুল্লাহ বিন আবি আওফা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলতেন:
اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاءِ ، وَمِلْءُ الْأَرْضِ ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ ، اللهُمَّ طَهِّرْنِي بِالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَالْمَاءِ الْبَارِدِ ، اللهُمَّ طَهِّرْنِي مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْوَسَخِ
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আপনার প্রশংসা আসমান পূর্ণ করে, জমিন পূর্ণ করে, আর এর পরে যা পূর্ণ করা আপনার ইচ্ছা তা পূর্ণ করে। হে আল্লাহ্! আমাকে পবিত্র করুন বরফ দিয়ে, শিলা দিয়ে এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে। হে আল্লাহ্! আমাকে গুনাহ ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে পবিত্র করুন যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে নির্মল করা হয়)[সহিহ মুসলিম (৪৭৬)]
চতুর্থ স্থান: দুই সেজদার মাঝখানে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে বলতেন:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ، وَارْحَمْنِي ، وَاجْبُرْنِي ، وَاهْدِنِي ، وَارْزُقْنِي
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে হেদায়েতের উপর রাখুন, আমাকে রিযিক দিন।)[সুনানে তিরিমযি (২৮৪) আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
ইমাম নববী বলেন:
তাতিম্মা গ্রন্থাকার বলেছেন: বলেছেন, এ দোয়া-ই করতে হবে এমনটি নয়। বরং যে কোন দোয়া করলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। তবে হাদিসে যে দোয়াটি এসেছে সেটা পড়াই উত্তম।[আল-মাজমু (৩/৪৩৭) থেকে সমাপ্ত]
দাঁড়ানো অবস্থায় ক্বিরাত পড়াকালেও দোয়া করা উদ্ধৃত হয়েছে। নফল নামাযে এভাবে দোয়া করার ব্যাপারে সরাসরি দলিল এসেছে। আর ফরয নামাযে এভাবে দোয়া করাকে কোন কোন আলেম নফল নামাযের উপর কিয়াস করেছেন। দলিলটি হচ্ছে হুযাইফা (রাঃ) এর হাদিস: তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে নামায পড়েছেন। তিনি বলেন: যখনই তিনি রহমতের আয়াত পড়তেন থামতেন। থেমে দোয়া করতেন। আবার যখন আযাবের আয়াত পড়তেন থামতেন। থেমে আশ্রয় চাইতেন।[সুনানে আবু দাউদ (৮৭১), আলবানী 'সহিহু আবু দাউদ' গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
কুনুতে নাযেলা (কঠিন বিপদমুক্তির দোয়া) এর মধ্যেও দোয়া করার কথা উদ্ধৃত আছে। তবে, এক্ষেত্রে মূল দোয়াটা হতে হবে বিপদ থেকে মুক্তির উপযুক্ত দোয়া। এর সাথে যদি অন্য কোন দোয়াও করে তাতে আশা করি কোন অসুবিধা হবে না।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
নামাযের ভেতরে যে স্থানগুলোতে দোয়া করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে সেগুলো মোট ছয়টি। এ ছয়টি উল্লেখ করার পর আরও দুইটি যোগ করেছেন:
১। তাকবীরে তাহরীমার পর। এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
اللهم باعد بيني وبين خطاياي ... الحديث
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমার মাঝে ও আমার গুনাহর মাঝে এমন দূরত্ব তৈরী করে দিন…শীর্ষক হাদিস।
২। রুকু থেকে সোজা হলে। এ ব্যাপারে ইবনে আবু আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে তিনি من شيء بعد বলার পর বলতেন:
اللهم طهرني بالثلج والبرد والماء البارد
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমাকে বরফ দিয়ে, শিলা দিয়ে ও ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পবিত্র করুন)।
৩। রুকুতে। এ ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে: তিনি তাঁর রুকুতে ও সেজদাতে বেশি বেশি বলতেন:
سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفر لي
(অনুবাদ: হে আল্লাহ্! হে আমাদের রব্ব! আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন।)[সহহি বুখারী ও সহিহ মুসলিম]
৪। সেজদাতে। এটি সবচেয়ে বেশি দোয়া করার স্থান এবং এখানে দোয়া করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
৫। দুই সেজদার মাঝখানে। ( اللهم اغفر لي ) (অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন)।
৬। তাশাহ্হুদে।
এছাড়াও তিনি কুনুতে দোয়া করতেন। ক্বিরাত পড়ার সময়ও দোয়া করতেন। যখনই কোন রহমতের আয়াত পড়তেন দোয়া করতেন। যখনই কোন আযাবের আয়াত পড়তেন আশ্রয় চাইতেন।[ফাতহুল বারী (১১/১৩২) থেকে সমাপ্ত]
দোয়া করার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দুইটি: সেজদাতে ও শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদের পর।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
নামাযে দোয়া করার স্থান হচ্ছে- সেজদা কিংবা তাশাহ্হুদ।[ফাতহুর বারী (১১/১৮৬) থেকে সমাপ্ত; আরও দেখুন প্রাগুক্ত গ্রন্থের (২/৩১৮)]
শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:
নামাযে দোয়া করার স্থান: সেজদা ও আত্তাহিয়্যাতু শেষে সালাম ফেরানোর পূর্বে।[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (৮/৩১০)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
0 Comments