ইছলামী ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে কেন?
ইছলামী ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে জানা ওয়াজিব
‘আক্বীদাহ যদি সঠিক ও বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ না হয় তাহলে কোন ‘আমাল বা ‘ইবাদাতই আল্লাহ্র (0) নিকট গ্রহণযোগ্য হবেনা, সবই হবে প্রত্যাখ্যাত। তাই সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ তাওহীদী ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস সম্পর্কে এবং যে যে বিষয়ে ঈমান পোষণ করতে হবে সেসব বিষয়ে ঈমানের সঠিক রূপরেখা কি, সে সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য।
ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র অর্থ বুঝার জন্য, এই ‘আক্বীদাহ কিসের উপর নির্ভরশীল, এর রুকন সমূহ কি কি, এর বিপরীত বিষয়াদী কি, এবং ইছলামী আক্বীদাহ-বিশ্বাস তথা তাওহীদী ‘আক্বীদাহ্কে বাতিল ও বিনষ্টকারী; শিরকে আকবার ও শিরকে আসগার কি, এসব বিষয় জানার জন্য ইছলামী ‘আক্বীদাহর জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুছলমানের উপর ওয়াজিব। আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ.১অর্থাৎ- জেনে রাখুন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতীত আর কোন (সত্য) মা‘বূদ নেই এবং আপনার গুনাহ্র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।২
ইমাম বুখারী o “কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান” শিরোনামে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এবং এর প্রমাণ-স্বরূপ ক্বোরআনে কারীমের উপরোল্লেখিত আয়াতটি পেশ করেছেন।
ইমাম বুখারীর (o) এই শিরোনামের ব্যাপারে ‘আল্লামা ইবনুল মুনীর o এর উদ্ধৃতি দিয়ে ‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার o বলেছেন:- এর দ্বারা ইমাম বুখারী o একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, কথা ও কাজ সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হলো জ্ঞান। ‘ইলমের অবস্থান কথা ও কাজের পূর্বে। তাই কথা ও কাজের পূর্বে ‘ইলম বা জ্ঞান অর্জন অত্যাবশ্যক। কেননা ‘ইলম হলো নিয়্যাতকে বিশুদ্ধ ও সংশোধনকারী, আর নিয়্যাত হলো ‘আমালকে বিশুদ্ধ ও সংশোধনকারী।
তাই দেখা যায়, যুগে যুগে ‘উলামায়ে কিরাম ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র হুক্ম-আহকাম শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়ার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশ করেছেন এবং ইছলামী ‘আক্বীদাহ বিষয়ক জ্ঞানকে অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রাধান্য দিয়ে এ বিষয়ে স্বতন্ত্র পুস্তক-পুস্তিকা রচনা ও সংকলন করেছেন। এসব পুস্তক-পুস্তিকাতে তারা ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র বিধানাবলী, এর ওয়াজিব সমূহ তথা অবশ্যকরণীয় বিষয়াদী এবং শির্ক, কুফ্র, বিদ‘আত, কুসংস্কার ইত্যাদি যেসব বিষয় ইছলামী (তাওহীদী) ‘আক্বিদাহ্কে ভঙ্গ ও বিনষ্ট করে দেয়, সেসব বিষয় বিস্তারিত ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। কেননা “لا إله إلا الله” এর অর্থ ও তাৎপর্যের মধ্যে এসব বিষয়ের জ্ঞান অপরিহার্যভাবে অন্তর্ভুক্ত।
“لا إله إلا الله” এ বাক্যটি শুধু মুখে উচ্চারিত একটি কালিমাহ বা বাক্য নয়, বরং এই সুমহান বাক্যটির বিশেষ অর্থ, দিক-নির্দেশনা এবং এর বিশেষ কিছু চাহিদা ও দাবি রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে জানা এবং মনে-প্রাণে, ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসে, কথা ও কাজে সর্বতোভাবে তা পালন করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য। এই কালিমাহ্কে ভঙ্গ ও বিনষ্টকারী এবং এর মধ্যে ক্রটি সৃষ্টিকারী অনেক বিষয় রয়েছে। জ্ঞান অর্জন ব্যতীত এসব বিষয় সুষ্পষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। তাই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠ্যসূচির বিভিন্ন স্থরে ‘ইলমুল ‘আক্বীদাহ্কে (‘আক্বিদাহ বিষয়ক জ্ঞানকে) অন্যান্য বিষয়াদির উপর প্রাধান্য দেয়া এবং প্রাত্যহিক রুটিনে এ বিষয়টি পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া, তজ্জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ শিক্ষক মনোনীত করা এবং এসব বিষয়ে কৃতকার্য ও অকৃতকার্যতার বিষয়টিকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করা অবশ্য কর্তব্য।
কিন্ত দেখা যায় যে, বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমের অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘ইলমুল ‘আক্বীদাহ্কে পাঠ্যক্রমে তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। এতে করে আশংকা হচ্ছে যে, পরবর্তীতে এমন এক প্রজন্ম আসবে যারা সঠিক ও বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে। তারা সমাজের লোকজনকে শির্ক, কুফ্র, বিদ‘আত ও কুসংস্কারমূলক কাজ-কর্ম করতে দেখবে, কিন্তু এসব যে বাতিল ও ইছলাম বিরোধী কাজ তা তারা জানতে বা বুঝতে পারবে না। যদ্দরুণ পরবর্তী (নতুন) প্রজন্মের মধ্যে শিরক, বিদ‘আত ও কুসংস্কারের ব্যাপক প্রচলন ও ছড়াছড়ি হবে এবং তারা এগুলোকেই সঠিক ইছলামী আক্বীদাহ এবং সঠিক ইছলামী কাজ ও অনুশীলন বলে মনে করবে। তাই তো আমীরুল মু‘মিনীন ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব e বলেছেন:-
يُوشِكُ أَنْ تُنْقَضُ عُرَى الْإِسْلَامِ عُرْوَةً عُرْوَةً إذَا نَشَأَ فِي الْإِسْلَامِ مَنْ لَمْ يَعْرِفْ الْجَاهِلِيَّةَ.৩
অর্থ- অচিরেই ইছলামের রজ্জু একটু একটু করে ভেঙ্গে (ছিড়ে) যাবে, যখন ইছলামের মধ্যে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যে জাহিলিয়্যাত সম্পর্কে অজ্ঞ হবে।৪
তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ অনুযায়ী ছালাফে সালীহিন তথা আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মতাদর্শ অনুযায়ী রচিত ও সংকলিত সঠিক এবং বিশুদ্ধ পুস্তক-পুস্তিকা পঠন-পাঠনের জন্য চয়ন ও নির্ধারণ করা অত্যাবশ্যক। সাথে সাথে আশ্‘আরিয়্যাহ, মু‘তাযিলাহ, জাহমিয়াহ প্রভৃতি বাত্বিল ও পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের কিতাবাদি যেগুলো মানহাজুছ্ ছালাফের বিরোধী, সেগুলোকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়া একান্ত আবশ্যক।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি মাছজিদ সমূহেও সঠিক ইছলামী ‘আক্বীদাহ শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে ছালাফী (ছালাফে সালিহীনের অনুসৃত) ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস সংক্রান্ত মৌলিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের বিষয়গুলো শিক্ষা দিতে হবে।
মাছজিদ ভিত্তিক এসব শিক্ষাচক্রে (হালাক্বায়ে দারছে) ক্বোরআন ও ছুন্নাহ ভিত্তিক আহলুছ্ ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের উপর লিখিত বিশুদ্ধ কিতাবাদীর মূল অংশ (টেক্সট) এবং তার ব্যাখ্যা (শার্হ্) পাঠদান করতে হবে, যাতে করে এর দ্বারা ছাত্রবৃন্দ এবং উপস্থিত অন্যান্য জনসাধারণ সকলেই উপকৃত হতে পারে। এমনিভাবে সেখানে সাধারণ জনগণের সামনে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করতে হবে। এতে করে জনগণের মধ্যে সঠিক ইছলামী ‘আক্বীদাহ প্রচার ও প্রসার লাভ করবে। এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি ইছলামী বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সঠিক ও বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সংক্রান্ত বিষয়াদী অব্যাহতভাবে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র বিষয়টিকে সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। প্রতিটি মুছলমানকে ইছলামী ‘আক্বীদাহ বিষয়ক বিশুদ্ধ গ্রন্থাদী অধ্যয়ন করতে হবে। এসব গ্রন্থাদীতে ছালাফে সালিহীনের নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে যা কিছু লিখা রয়েছে সে সম্পর্কেও জানতে হবে। যাতে করে প্রত্যেক মুছলমান তার যাবতীয় দ্বীনী বিষয়াদী (‘আক্বিদাহ, শারী‘আহ, আখলাক্ব, মানহাজ ইত্যাদি) সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে এবং আহলুছ ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে বাত্বিল পন্থিদের আরোপিত ও উত্থাপিত বিভিন্ন সন্দেহ-সংশয় ও অভিযোগ যথাযথভাবে প্রতিহত ও খন্ডন করতে পারে।
ক্বোরআনে ক্বারীম অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, তাতে ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র গুরুত্ব বিষয়ক অসংখ্য আয়াত বিদ্যমান। শুধু তাই নয় বরং মাক্কায় অবতীর্ণ ছূরাগুলোর প্রায় সবকটি ইছলামী ‘আক্বীদাহ বিষয়ক এবং ‘আক্বীদায়ে ইছলামিয়্যাহ্র উপর আরোপিত বিভিন্ন অভিযোগ ও সংশয় নিরসন বিষয়ক।
যেমন- ছূরাতুল ফাতিহা। এই ছূরাটি সম্পর্কে ‘আল্লামা ইবনুল ক্বায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ oবলেছেন- “জেনে রেখো! এই ছূরায় (ছূরাতুল ফাতিহায়) দ্বীনের মৌলিক মহান চাহিদাগুলো পরিপূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাতে এমন তিনটি সুমহান নামের মাধ্যমে আল্লাহ্র পরিচয় দেয়া হয়েছে, যেগুলো হলো আল্লাহ্র (7) অন্যান্য সর্বসুন্দর নাম ও সুমহান গুণাবলীর উৎস ও ভিত্তি । সে তিনটি নাম হলো “আল্লাহ” “আর্ রাব্ব” ও “আর্ রাহ্মান”।
আল্লাহ্র (7) উলুহিয়্যাহ, রুবুবিয়্যাহ এবং আল্লাহ্র (0) সিফাত তথা সুমহান গুণাবলী- এ তিনটি বিষয় হলো এ ছূরার বুনইয়াদ বা ভিত্তি।
ছূরাতুল ফাতিহার “إياك نعبد” (একমাত্র তোমারই ‘ইবাদাত করি) এই অংশটুকুর ভিত্তি হলো- তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্ বা ‘ইবাদাতে আল্লাহ্র (7) এককত্ব প্রতিষ্ঠা ও অক্ষুন্ন রাখা।“إياك نستعين” (একমাত্র তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি) এর ভিত্তি হলো- তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ বা পালনকর্তৃত্বে আল্লাহ্র এককত্ব প্রতিষ্টা ও অক্ষুন্ন রাখা।
“إهدنا الصراط المستقيم” (আমাদেরকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করো) এই অংশটুকুর ভিত্তি হলো- তাওহীদুল আছমা ওয়াস্ সিফাত অর্থাৎ সুমহান নাম ও গুণাবলীতে আল্লাহ্র এককত্ব প্রতিষ্ঠা ও অক্ষুন্ন রাখা। কেননা সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করা আল্লাহ্র দয়া বা রাহ্মাতের গুণাবলীর সাথে সম্পৃক্ত।তাই ছূরাতুল ফাতিহার শুরুতেই আল্লাহ্র (0) যে প্রশংসার কথা বলা হয়েছে, তা উল্লেখিত তিনটি বিষয়কেই অন্তর্ভুক্ত রেখেছে। অর্থাৎ আল্লাহ b তাঁর উলুহিয়্যাহ্তে তথা মা‘বূদ হিসেবে যেমন প্রশংসিত তেমনি রুবুবিয়্যাহ্তে তথা প্রতিপালকত্বে বা পালনকর্তা হিসেবে তিনি প্রশংসিত। এমনিভাবে তিনি তাঁর রাহ্মাত তথা দয়াগুণেও প্রশংসিত।
(মানব জীবনে ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র (তাওহীদী বিশ্বাস) এবং তা শিক্ষা করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা যে কতো অপরিসীম, “উম্মুল ক্বোরআন” এই ছূরাতুল ফাতিহাই হলো এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ।) সূত্র: আল ইরশাদ ইলা সাহীহিল ই‘তিক্বাদ- লিশ্শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c।
ইছলামী ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে জানা ওয়াজিব
‘আক্বীদাহ যদি সঠিক ও বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ না হয় তাহলে কোন ‘আমাল বা ‘ইবাদাতই আল্লাহ্র (0) নিকট গ্রহণযোগ্য হবেনা, সবই হবে প্রত্যাখ্যাত। তাই সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ তাওহীদী ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস সম্পর্কে এবং যে যে বিষয়ে ঈমান পোষণ করতে হবে সেসব বিষয়ে ঈমানের সঠিক রূপরেখা কি, সে সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য।
ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র অর্থ বুঝার জন্য, এই ‘আক্বীদাহ কিসের উপর নির্ভরশীল, এর রুকন সমূহ কি কি, এর বিপরীত বিষয়াদী কি, এবং ইছলামী আক্বীদাহ-বিশ্বাস তথা তাওহীদী ‘আক্বীদাহ্কে বাতিল ও বিনষ্টকারী; শিরকে আকবার ও শিরকে আসগার কি, এসব বিষয় জানার জন্য ইছলামী ‘আক্বীদাহর জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুছলমানের উপর ওয়াজিব। আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ.১অর্থাৎ- জেনে রাখুন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতীত আর কোন (সত্য) মা‘বূদ নেই এবং আপনার গুনাহ্র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।২
ইমাম বুখারী o “কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান” শিরোনামে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এবং এর প্রমাণ-স্বরূপ ক্বোরআনে কারীমের উপরোল্লেখিত আয়াতটি পেশ করেছেন।
ইমাম বুখারীর (o) এই শিরোনামের ব্যাপারে ‘আল্লামা ইবনুল মুনীর o এর উদ্ধৃতি দিয়ে ‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার o বলেছেন:- এর দ্বারা ইমাম বুখারী o একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, কথা ও কাজ সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হলো জ্ঞান। ‘ইলমের অবস্থান কথা ও কাজের পূর্বে। তাই কথা ও কাজের পূর্বে ‘ইলম বা জ্ঞান অর্জন অত্যাবশ্যক। কেননা ‘ইলম হলো নিয়্যাতকে বিশুদ্ধ ও সংশোধনকারী, আর নিয়্যাত হলো ‘আমালকে বিশুদ্ধ ও সংশোধনকারী।
তাই দেখা যায়, যুগে যুগে ‘উলামায়ে কিরাম ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র হুক্ম-আহকাম শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়ার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশ করেছেন এবং ইছলামী ‘আক্বীদাহ বিষয়ক জ্ঞানকে অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রাধান্য দিয়ে এ বিষয়ে স্বতন্ত্র পুস্তক-পুস্তিকা রচনা ও সংকলন করেছেন। এসব পুস্তক-পুস্তিকাতে তারা ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র বিধানাবলী, এর ওয়াজিব সমূহ তথা অবশ্যকরণীয় বিষয়াদী এবং শির্ক, কুফ্র, বিদ‘আত, কুসংস্কার ইত্যাদি যেসব বিষয় ইছলামী (তাওহীদী) ‘আক্বিদাহ্কে ভঙ্গ ও বিনষ্ট করে দেয়, সেসব বিষয় বিস্তারিত ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। কেননা “لا إله إلا الله” এর অর্থ ও তাৎপর্যের মধ্যে এসব বিষয়ের জ্ঞান অপরিহার্যভাবে অন্তর্ভুক্ত।
“لا إله إلا الله” এ বাক্যটি শুধু মুখে উচ্চারিত একটি কালিমাহ বা বাক্য নয়, বরং এই সুমহান বাক্যটির বিশেষ অর্থ, দিক-নির্দেশনা এবং এর বিশেষ কিছু চাহিদা ও দাবি রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে জানা এবং মনে-প্রাণে, ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসে, কথা ও কাজে সর্বতোভাবে তা পালন করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য। এই কালিমাহ্কে ভঙ্গ ও বিনষ্টকারী এবং এর মধ্যে ক্রটি সৃষ্টিকারী অনেক বিষয় রয়েছে। জ্ঞান অর্জন ব্যতীত এসব বিষয় সুষ্পষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। তাই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠ্যসূচির বিভিন্ন স্থরে ‘ইলমুল ‘আক্বীদাহ্কে (‘আক্বিদাহ বিষয়ক জ্ঞানকে) অন্যান্য বিষয়াদির উপর প্রাধান্য দেয়া এবং প্রাত্যহিক রুটিনে এ বিষয়টি পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া, তজ্জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ শিক্ষক মনোনীত করা এবং এসব বিষয়ে কৃতকার্য ও অকৃতকার্যতার বিষয়টিকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করা অবশ্য কর্তব্য।
কিন্ত দেখা যায় যে, বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমের অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘ইলমুল ‘আক্বীদাহ্কে পাঠ্যক্রমে তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। এতে করে আশংকা হচ্ছে যে, পরবর্তীতে এমন এক প্রজন্ম আসবে যারা সঠিক ও বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে। তারা সমাজের লোকজনকে শির্ক, কুফ্র, বিদ‘আত ও কুসংস্কারমূলক কাজ-কর্ম করতে দেখবে, কিন্তু এসব যে বাতিল ও ইছলাম বিরোধী কাজ তা তারা জানতে বা বুঝতে পারবে না। যদ্দরুণ পরবর্তী (নতুন) প্রজন্মের মধ্যে শিরক, বিদ‘আত ও কুসংস্কারের ব্যাপক প্রচলন ও ছড়াছড়ি হবে এবং তারা এগুলোকেই সঠিক ইছলামী আক্বীদাহ এবং সঠিক ইছলামী কাজ ও অনুশীলন বলে মনে করবে। তাই তো আমীরুল মু‘মিনীন ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব e বলেছেন:-
يُوشِكُ أَنْ تُنْقَضُ عُرَى الْإِسْلَامِ عُرْوَةً عُرْوَةً إذَا نَشَأَ فِي الْإِسْلَامِ مَنْ لَمْ يَعْرِفْ الْجَاهِلِيَّةَ.৩
অর্থ- অচিরেই ইছলামের রজ্জু একটু একটু করে ভেঙ্গে (ছিড়ে) যাবে, যখন ইছলামের মধ্যে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যে জাহিলিয়্যাত সম্পর্কে অজ্ঞ হবে।৪
তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ অনুযায়ী ছালাফে সালীহিন তথা আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মতাদর্শ অনুযায়ী রচিত ও সংকলিত সঠিক এবং বিশুদ্ধ পুস্তক-পুস্তিকা পঠন-পাঠনের জন্য চয়ন ও নির্ধারণ করা অত্যাবশ্যক। সাথে সাথে আশ্‘আরিয়্যাহ, মু‘তাযিলাহ, জাহমিয়াহ প্রভৃতি বাত্বিল ও পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের কিতাবাদি যেগুলো মানহাজুছ্ ছালাফের বিরোধী, সেগুলোকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়া একান্ত আবশ্যক।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি মাছজিদ সমূহেও সঠিক ইছলামী ‘আক্বীদাহ শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে ছালাফী (ছালাফে সালিহীনের অনুসৃত) ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস সংক্রান্ত মৌলিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের বিষয়গুলো শিক্ষা দিতে হবে।
মাছজিদ ভিত্তিক এসব শিক্ষাচক্রে (হালাক্বায়ে দারছে) ক্বোরআন ও ছুন্নাহ ভিত্তিক আহলুছ্ ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের উপর লিখিত বিশুদ্ধ কিতাবাদীর মূল অংশ (টেক্সট) এবং তার ব্যাখ্যা (শার্হ্) পাঠদান করতে হবে, যাতে করে এর দ্বারা ছাত্রবৃন্দ এবং উপস্থিত অন্যান্য জনসাধারণ সকলেই উপকৃত হতে পারে। এমনিভাবে সেখানে সাধারণ জনগণের সামনে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করতে হবে। এতে করে জনগণের মধ্যে সঠিক ইছলামী ‘আক্বীদাহ প্রচার ও প্রসার লাভ করবে। এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি ইছলামী বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সঠিক ও বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সংক্রান্ত বিষয়াদী অব্যাহতভাবে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র বিষয়টিকে সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। প্রতিটি মুছলমানকে ইছলামী ‘আক্বীদাহ বিষয়ক বিশুদ্ধ গ্রন্থাদী অধ্যয়ন করতে হবে। এসব গ্রন্থাদীতে ছালাফে সালিহীনের নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে যা কিছু লিখা রয়েছে সে সম্পর্কেও জানতে হবে। যাতে করে প্রত্যেক মুছলমান তার যাবতীয় দ্বীনী বিষয়াদী (‘আক্বিদাহ, শারী‘আহ, আখলাক্ব, মানহাজ ইত্যাদি) সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে এবং আহলুছ ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে বাত্বিল পন্থিদের আরোপিত ও উত্থাপিত বিভিন্ন সন্দেহ-সংশয় ও অভিযোগ যথাযথভাবে প্রতিহত ও খন্ডন করতে পারে।
ক্বোরআনে ক্বারীম অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, তাতে ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র গুরুত্ব বিষয়ক অসংখ্য আয়াত বিদ্যমান। শুধু তাই নয় বরং মাক্কায় অবতীর্ণ ছূরাগুলোর প্রায় সবকটি ইছলামী ‘আক্বীদাহ বিষয়ক এবং ‘আক্বীদায়ে ইছলামিয়্যাহ্র উপর আরোপিত বিভিন্ন অভিযোগ ও সংশয় নিরসন বিষয়ক।
যেমন- ছূরাতুল ফাতিহা। এই ছূরাটি সম্পর্কে ‘আল্লামা ইবনুল ক্বায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ oবলেছেন- “জেনে রেখো! এই ছূরায় (ছূরাতুল ফাতিহায়) দ্বীনের মৌলিক মহান চাহিদাগুলো পরিপূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাতে এমন তিনটি সুমহান নামের মাধ্যমে আল্লাহ্র পরিচয় দেয়া হয়েছে, যেগুলো হলো আল্লাহ্র (7) অন্যান্য সর্বসুন্দর নাম ও সুমহান গুণাবলীর উৎস ও ভিত্তি । সে তিনটি নাম হলো “আল্লাহ” “আর্ রাব্ব” ও “আর্ রাহ্মান”।
আল্লাহ্র (7) উলুহিয়্যাহ, রুবুবিয়্যাহ এবং আল্লাহ্র (0) সিফাত তথা সুমহান গুণাবলী- এ তিনটি বিষয় হলো এ ছূরার বুনইয়াদ বা ভিত্তি।
ছূরাতুল ফাতিহার “إياك نعبد” (একমাত্র তোমারই ‘ইবাদাত করি) এই অংশটুকুর ভিত্তি হলো- তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্ বা ‘ইবাদাতে আল্লাহ্র (7) এককত্ব প্রতিষ্ঠা ও অক্ষুন্ন রাখা।“إياك نستعين” (একমাত্র তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি) এর ভিত্তি হলো- তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ বা পালনকর্তৃত্বে আল্লাহ্র এককত্ব প্রতিষ্টা ও অক্ষুন্ন রাখা।
“إهدنا الصراط المستقيم” (আমাদেরকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করো) এই অংশটুকুর ভিত্তি হলো- তাওহীদুল আছমা ওয়াস্ সিফাত অর্থাৎ সুমহান নাম ও গুণাবলীতে আল্লাহ্র এককত্ব প্রতিষ্ঠা ও অক্ষুন্ন রাখা। কেননা সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করা আল্লাহ্র দয়া বা রাহ্মাতের গুণাবলীর সাথে সম্পৃক্ত।তাই ছূরাতুল ফাতিহার শুরুতেই আল্লাহ্র (0) যে প্রশংসার কথা বলা হয়েছে, তা উল্লেখিত তিনটি বিষয়কেই অন্তর্ভুক্ত রেখেছে। অর্থাৎ আল্লাহ b তাঁর উলুহিয়্যাহ্তে তথা মা‘বূদ হিসেবে যেমন প্রশংসিত তেমনি রুবুবিয়্যাহ্তে তথা প্রতিপালকত্বে বা পালনকর্তা হিসেবে তিনি প্রশংসিত। এমনিভাবে তিনি তাঁর রাহ্মাত তথা দয়াগুণেও প্রশংসিত।
(মানব জীবনে ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র (তাওহীদী বিশ্বাস) এবং তা শিক্ষা করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা যে কতো অপরিসীম, “উম্মুল ক্বোরআন” এই ছূরাতুল ফাতিহাই হলো এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ।) সূত্র: আল ইরশাদ ইলা সাহীহিল ই‘তিক্বাদ- লিশ্শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c।
১. سورة محمد- ١٩
২. ছূরা মুহাম্মাদ- ১৯
৩. مسند إمام أحمد
৪. মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ
২. ছূরা মুহাম্মাদ- ১৯
৩. مسند إمام أحمد
৪. মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ