(১) নিফাস কাকে বলেঃ
সন্তান জন্মের জন্য নারীদের প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার ২-১ দিন পূর্ব বা পর থেকে ধারাবাহিকভাবে যে রক্তপাত হয় তাকে নিফাস বলা হয়। নিফাসের সময় নারীদের হায়েজ বা ঋতুর মতোই সালাত-সাওম বন্ধ থাকে এবং এসময় স্বামীর সাথে সহবাস করা হারাম এবং কবীরাহ গুনাহ।
(২) নিফাসের সময়সীমাঃ
নারীদের নিফাসের সর্বোচ্চ সময় হচ্ছে ৪০ দিন, কিন্তু নিফাসের সর্বনিম্ন কোন সময় নেই। অর্থাৎ, ৪০ দিনের পূর্বে যেইদিন রক্তপাত বন্ধ হবে সেইদিন থেকেই সালাত-সাওম শুরু করতে হবে। কিন্তু সন্তান জন্মের ৪০ দিনের মধ্যে যদি রক্তপাত বন্ধ না হয় তাহলে ৪০ দিন পর স্বাভাবিক সালাত সাওম শুরু করতে হবে। ৪০ দিন পরে যেই রক্তপাত তাকে "ইস্তিহাজা" বা নারীদের ঋতু সংক্রান্ত বিশেষ রোগ ধরতে হবে।
(৩) নিফাসের সর্বোচ্চ সীমার বিশেষ ক্ষেত্রঃ
কোন নারীরর নিফাসের ৪০ দিন অতিক্রম হলে যদি তার স্বাভাবিক ঋতুর দিন উপস্থিত হয় তাহলে সেই দিনগুলোতে তার রক্তপাতকে ঋতুর রক্ত ধরে সালাত-সাওম বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ, তখন তার নিফাসের ৪০ দিন + স্বাভাবিক ঋতুর যতদিন = এই মোট সময় সালাত-সাওম বন্ধ রাখতে হবে।
উদাহরণঃ ধরুন কোন নারী এপ্রিলের ১ তারিখ সন্তান জন্ম দিল এবং সেই দিন থেকে নিফাসের রক্তপাত আরম্ভ হলো। সুতরাং, মে মাসের ১০ তারিখ ৪০ দিন পূর্ণ হবে এবং ১১ তারিখ থেকে তাকে সালাত-সাওম শুরু করার কথা, যদিনা ইতিঃপূর্বে তার রক্তপাত বন্ধ হয়ে থাকে। যদি গর্ভধারণের পূর্বে তার ঋতু মাসের ৮ তারিখে শুরু হয় এবং যদি তা সাধারণত ৭ দিন স্থায়ী হয় তাহলে মে মাসের ৮ তারিখে তার রক্তপাতকে ঋতুর রক্ত ধরে ৮+৭=১৫ তারিখ পর্যন্ত তিনি সালাত-সাওম থেকে বিরত থাকবেন। এরপরেও যদি রক্তপাত চলতে থাকে তাহলে সেটাকে ইস্তিহাজা ধরতে হবে।
(৪) গোসলের বিধানঃ
হায়েজ বা ঋতুর মতোই নিফাস শেষ হলে বা ৪০ দিন অতিবাহিত হলে ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করে সালাত-সাওম শুরু করতে হবে।
(৫) ৪০ দিনের মাঝে মেটে বা হলদে রং-এর রক্ত বের হলে তাকে নিফাসের রক্ত ধরতে হবে।
(৬) যদি কারো ৪০ দিনের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ হয়ে পবিত্র হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় তখন থেকেই সালাত-সাওম শুরু করবে। কিন্তু ৪০ দিন শেষ হওয়ার পূর্বেই যদি তার রক্তপাত আবার শুরু হয় তাহলে তিনি পুনরায় সালাত-সাওম বন্ধ রাখবেন। মাঝখানে পবিত্র থাকার দিনগুলোতে তার সালাত-সাওম শুদ্ধ হবে এবং মধ্যবর্তী সময়ে সহবাসের কারণে তার কোন গুনাহ হবেনা।
(৭) নিফাস অবস্থায় যেকোন দুয়া, দুরুদ, যিকির, ক্বুরআনের তাফসীর, হাদীসের বই পড়তে পারবে। নিফাস অবস্থায় মুখস্থ, মোবাইল, কম্পিউটার থেকে বা তাফসীরের বই থেকে ক্বুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে। তবে মুসহাফ বা যেটা শুধু আরবী ক্বুরআনের কপি, সেটা কোন কাপড়ের পর্দা ছাড়া সরাসরি স্পর্শ করা যাবেনা।
(৮) মাতৃগর্ভে ভ্রুণের মানুষের আকৃতি আসার পর কোন নারীর যদি গর্ভপাত হয় এবং এরপরে নিফাসের মতো রক্তপাত আরম্ভ হয় তাহলে তাকেও নিফাসের নিয়ম অনুযায়ী সালাত-সাওম থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু যদি মানুষের আকৃতি আসার গর্ভকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই যদি গর্ভপাত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে রক্তপাতকে নিফাস ধরা হবেনা। সেটাকে ইস্তিহাযা রোগ ধরে সালাত সাওম সবই করতে হবে।
(৯) সিজারিয়ান সেকশানের দ্বারা সন্তান জন্ম নিলে সেক্ষেত্রেও নিফাসের নিয়ম অনুযায়ী সালাত-সাওম থেকে বিরত থাকতে হবে।
সংকলনঃ আনসারুস সুন্নাহ।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ
(১) ফাতাওয়া লাজনা আদ-দাইয়ি'মা।
(২) ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম - মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উষায়মিন রহি'মাহুল্লাহ।
(৩) নারীদের পবিত্রতার বিধান - সাইফুদ্দীন বিলাল হা'ফিজাহুল্লাহ।
(৪) আব্দুল হা'মীদ ফাইজী হা'ফিজাহুল্লাহ।
(৫) IslamQA - সালিহ আল-মুনাজ্জিদ হা'ফিজাহুল্লাহ।
(৬) মতিউর রহ'মান মাদানী হা'ফিজাহুল্লাহ।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ
(১) ফাতাওয়া লাজনা আদ-দাইয়ি'মা।
(২) ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম - মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উষায়মিন রহি'মাহুল্লাহ।
(৩) নারীদের পবিত্রতার বিধান - সাইফুদ্দীন বিলাল হা'ফিজাহুল্লাহ।
(৪) আব্দুল হা'মীদ ফাইজী হা'ফিজাহুল্লাহ।
(৫) IslamQA - সালিহ আল-মুনাজ্জিদ হা'ফিজাহুল্লাহ।
(৬) মতিউর রহ'মান মাদানী হা'ফিজাহুল্লাহ।
0 Comments