হে সালাত আদায়কারী!---- মুক্তাদীগন সাবধান..........
-------------------------------------------------------মুক্তাদীগন সাবধান!------------------------------------------
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি মাছজিদে এমন অসংখ্য মুসাল্লির দেখা মিলে, যারা ইমামের সাথে জামা‘আতে সালাত পড়তে যেয়ে ইমামের আগে আগেই উঠা, বসা, রুকূ‘, ছাজদাহ্ করা, তাকবীর বলা বা ছালাম ফিরানোর কাজ সেরে নেন।
বছরের পর বছর তারা এভাবেই সালাত আদায় করে যাচ্ছেন, অথচ তারা হয়ত জানেনই না যে, এতে করে তাদের সালাত সঠিকভাবে আদায় হচ্ছে না এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বাত্বিল হয়ে যাচ্ছে। সুপ্রসিদ্ধ চার ইমাম সহ অধিকাংশ ফিক্ব্হবিদগণ এ বিষয়ে একমত যে, সালাতে মুক্বতাদীর জন্য ইমামের আগে তাকবীর বলা, ইহ্রাম বাধা, রুকূ‘ বা ছাজদাহ করা, ছালাম ফিরানো ইত্যাদি হারাম। তাছাড়া ফোক্বাহায়ে কিরামের প্রায় সকলেই এ বিষয়েও একমত যে, কেউ সালাতের জন্য ইমাম সাহেবের তাকবীরে তাহ্রীমাহ-র একমূহুর্ত আগেও যদি ইহ্রাম বেঁধে নেয় কিংবা ইমামের ছালাম ফিরানোর একমূহুর্ত আগে ছালাম ফিরিয়ে নেয় তাহলে তার সালাত বাত্বিল হয়ে যাবে। কেননা রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
অন্য একটি হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
আবুল ওয়ার্দ আল আনসারী 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
একদা ‘উমার এমন এক ব্যক্তিকে দেখলেন, যে ইমামের আগে আগে যাচ্ছিল (অর্থাৎ ইমামের আগেই রুকূ‘-ছাজদাহ করছিল)। তিনি তাকে বেত্রাঘাত করলেন এবং বললেন:-
সালাতে মুক্ব্তাদীর কর্তব্য হলো ইমামের অনুসরণ করা। আর কোন কাজে কারো অনুসরণ করার অর্থ তার আগে বা তার অনেক পরে কিংবা তার সাথে সাথে; সমান্তরালে সেই কাজ করা নয়। অনুসরণের অর্থ হলো- যাকে অনুসরণ করা হচ্ছে তার পিছু করা বা তার ঠিক পিছে পিছে যাওয়া।
<<ফিক্ব্হ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন যে, সালাতে ইমামের অনুসরণ করার অর্থ হলো- ইমাম কোন কাজ শুরু করার পরে মুক্ব্তাদীগণ সে কাজ শুরু করা এবং ইমাম শেষ করার আগে শুরু করা। অর্থাৎ নামাযের প্রতিটি রুক্ন-আরকান, তাকবীর ইত্যাদি ইমাম সাহেব শুরু করার পরে মুক্বতাদীকে সেটি শুরু করতে হবে এবং ইমাম সাহেব সেই কাজটি শেষ করার পূর্বেই মুক্বতাদীকে সেই কাজটি আরম্ভ করতে হবে। একেই বলে সালাতে ইমামের অনুসরণ।
বেশক’টি বিশুদ্ধ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইমামের অনুসরণ বলতে রাছূলুল্লাহ 1 উপরোক্ত অর্থটাকেই বুঝিয়েছেন এবং সাহবায়ে কিরামও (4) ইমামের অনুসরণ বলতে এই অর্থই বুঝেছেন।
<<<<জামা‘আতে সালাত আদায়কালীন মুক্ব্তাদীর করণীয় কী এবং সে কিভাবে ইমামের অনুসরণ করবে, সে সম্পর্কে রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
উপরোক্ত কাজগুলো যে মুক্ব্তাদী, ইমামের সাথে সাথে তথা তার সমান্তরালে করবে না বরং তাঁর পিছনে পিছনে করবে এ বিষয়টি রাছূলুল্লাহ 1 আরো স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। সাহীহ্ মুছলিমে আবূ মূছা আল আশ‘আরী 3 হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, তিনি বলেছেন- রাছূলুল্লাহ 1 (একদিন) আমাদেরকে খুতবাহ দিলেন। তাতে তিনি আমাদেরকে ছুন্নাতের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিলেন এবং আমাদেরকে আমাদের সালাত শিক্ষা দিলেন। তিনি বললেন:-
আবূ হুরাইরাহ 3 সূত্রে অন্য একটি হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
একই বিষয়ে আবূ হুরাইরাহ 3 এর সূত্রে বর্ণিত অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
মুক্বতাদীগণ কখন তাকবীর বলবেন এবং রুকূ‘-ছাজদাহ করবেন, মাথা উঠাবেন ইত্যাদি বিষয়ে উপরোক্ত হাদীছ সমূহে অত্যন্ত সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এসব হাদীছ দ্বারা স্পষ্টভাবে একথা প্রমাণিত যে, তাকবীর, তাহ্রীমা, রুকূ‘, ছাজদাহ, উঠা, বসা, ছালাম ফিরানো এসব কাজ ইমাম সাহেব শুরু করার পরেই কেবল মুক্বতাদীগণ করবেন, কোন অবস্থাতেই তার (ইমামের) আগে নয়।
সাহাবায়ে কিরাম 4 সালাতে কিভাবে ইমামের অনুসরণ করতেন, এর সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় বারা ইবনু‘আযিব 3 থেকে বর্ণিত হাদীছে। তিনি বলেছেন:-
এই একই বিষয়ে সাহীহ্ মুছলিমে বারা ইবনু ‘আযিব 3 থেকে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, তিনি বলেছেন:-
অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে, সাহাবোয়ে কিরাম 4 বলেছেন:- নিশ্চয়ই নাবী 1 (ছাজদাহ হতে) উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন আর আমরা তখনও ছাজদাহ্রত থাকতাম।
সালাতে ইমামের আগে তাকবীর বলতে, তাহ্রীমা বাঁধতে, উঠা, বসা বা রুকূ‘-ছাজদাহ করতে রাছূলুল্লাহ 1 অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
আনাছ 3 হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদিন রাছূলুল্লাহ 1 আমাদের নিয়ে নামায পড়লেন। নামায শেষে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন:-
আবূ হুরাইরাহ 3 হতে বর্ণিত, তিনি বলেন – রাছূলুল্লাহ 1 আমাদেরকে শিক্ষা (নামায শিক্ষা) দিতেন, তিনি বলতেন:-
যদি কেউ অজ্ঞতা কিংবা বে-খেয়াল বশতঃ সালাতে রুকূ‘ বা ছাজদাহ্র একাংশে ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে নেয়, তাহলে তখন সে কী করবে? যেমন একজন লোক ইমামের সাথে যথারীতি রুকূ‘ বা ছাজদাহ করছিলো, এমতাবস্থায় ইমামের রুকূ‘ কিংবা ছাজদাহ সম্পন্ন হওয়ার আগেই (ইমাম রুকূ‘ বা ছাজদাহ্রত থাকা অবস্থায়) সে যদি স্বীয় মাথা (রুকূ‘ বা ছাজদাহ্ থেকে) তুলে নেয়, তাহলে তার করণীয় কি?
<----হ্যাঁ, এমতাবস্থায় তার করণীয় হলো সাথে সাথে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। সে যদি ইমামের রুকূ‘-তে থাকাবস্থায় ইমামের আগে স্বীয় মাথা রুকূ‘ থেকে উঠিয়ে থাকে তাহলে সাথে সাথে তাকে রুকূ‘তে ফিরে যেতে হবে এবং রুকূ‘ থেকে মাথা উঠানো, তারপর আবার রুকূ‘তে ফিরে যেতে সে সময়টুকু ব্যয় হবে- ইমাম রুকূ‘ থেকে মাথা উঠানোর পর সেই পরিমাণ সময তাকে রুকূ‘তে থাকতে হবে। এমনিভাবে কেউ যদি ইমামের ছাজদাহ-তে থাকাবস্থায় ইমামের আগে স্বীয় মাথা ছাজদাহ থেকে উঠিয়ে থাকে তাহলে তাকে সাথে সাথে ছাজদাহ্তে চলে যেতে হবে এবং ছাজদাহ থেকে মাথা উঠানো, তারপর আবার ছাজদাহ্তে ফিরে যেতে যে সময়টুকু ব্যয় হবে- ইমাম ছাজদাহ হতে মাথা উঠানোর পর সেই পরিমাণ সময় তাকে ছাজদাহ্তে থাকতে হবে। অতঃপর রুকূ‘ কিংবা ছাজদাহ হতে উঠে আবারো যথারীতি ইমামের পিছু অনুসরণ করতে হবে।
এর প্রমাণ হলো- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছঊদ 3 হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাছ‘ঊদ 3 হতে আরো বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছঊদ 3 হতে বর্ণিত অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেছেন-
এ বিষয়ে ‘উমার 3 হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেছেন-
অন্য বর্ণনায় ‘উমার 3 হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেছেন-
যারা সালাতে ইমামের আগে উঠা-বসা বা রুকূ‘-ছাজদাহ করে, তাদের শাস্তি বা পরিণতি হচ্ছে অত্যন্ত ভয়াবহ।
আবূ হুরাইরাহ 3 হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার এক ব্যক্তিকে এরূপ (ইমামের আগে রুকূ‘-ছাজদাহ) করতে দেখে বেত্রাঘাত করেছেন এবং তাকে পুনরায় সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
অতএব, সম্মানিত মুসাল্লিগণ! খুবই সাবধান! জামা‘আতে নামায আদায়কালীন ইমামের একমূহুর্ত আগে কিংবা ইমামের সমান্তরালে তথা একেবারে একসাথে নামাযের কোন কার্য করবেন না। এরূপ করা হারাম তথা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইমামগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। কেউ যদি স্বজ্ঞানে-স্বেচ্ছায় ইমামের আগে সালাতের কোন একটি রুক্ন সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করে ফেলে, বিশেষ করে কেউ যদি ইমামের তাকবীর বলে তাহ্রীমা বাধার আগেই তাকবীর বলে তাহ্রীমা বেঁধে ফেলে কিংবা ইমামের আগেই ছালাম ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার নামায বাত্বিল হয়ে যাবে এবং তাকে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে, এ বিষয়ে প্রায় সকল ইমামগণই একমত।
জামা‘আতে ইমামের সাথে সালাত আদায়কারী যেসব মুক্ব্তাদীর এ ধরনের বদ-অভ্যাস রয়েছে, তাদের উচিত দ্রুত এই বদঅভ্যাস ও হারাম কাজটি পরিত্যাগ করা এবং অতীতে এরূপ হারাম কাজ করার জন্য আল্লাহ্র (0) নিকট কায়মনে তাওবা-ইছতিগফার করা।
আসলে এসব বিষয়ে মুসাল্লিদের সাবধান করা এবং রাছূলুল্লাহ 1 যেভাবে সালাত আদায় করেছেন কিংবা করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে সালাত আদায়ের নিয়ম-পদ্ধতি জনগণকে শিক্ষা দেয়া সম্মানিত ইমামগণের দায়িত্ব। কেননা ইমাম হলেন মুক্বতাদীগণের যিম্মাদার। ‘উলামায়ে কিরাম যদি তাদের ওয়া‘য-নাসীহাতে এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করেন, সম্মানিত ইমামগণ যদি পাঁচ ওয়াক্ব্ত জামা‘আতে সালাত শুরু করার আগে মাত্র এক মিনিট সময় ব্যয় করে সালাতের অতি প্রয়োজনীয় এসব বিষয় তথা মাছায়িল মুসাল্লিগণকে জানিয়ে দেন, তাহলে হয়ত প্রতিদিন পাঁচবার শত শত লোক এহেন মারাত্মক গুনাহে নিপতিত হবে না কিংবা তাদের চোঁখের সামনে শত শত লোকের নামায বাত্বিল হবে না। আর অজ্ঞ-মূর্খদের কারণে তারা (‘আলিম ও ইমামগণ) নিজেরাও ধ্বংস ও সর্বনাশের মুখে পতিত হবেন না।
আল্লাহ জাল্লা ওয়া ‘আলা এহেন জঘন্য পরিণতি থেকে সকল মুছলমানকে হিফাযাত করুন, — আ-মী-ন।
Ref.....
-ঃ-মুক্তাদীগন সাবধান!হে সালাত আদায়কারী! আপনি জানেন কি যে, আপনি জামা‘আতে নামায আদা করছেন অথচ আপনার নামায সঠিকভাবে সম্পাদিত হচ্ছে না?
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি মাছজিদে এমন অসংখ্য মুসাল্লির দেখা মিলে, যারা ইমামের সাথে জামা‘আতে সালাত পড়তে যেয়ে ইমামের আগে আগেই উঠা, বসা, রুকূ‘, ছাজদাহ্ করা, তাকবীর বলা বা ছালাম ফিরানোর কাজ সেরে নেন।
বছরের পর বছর তারা এভাবেই সালাত আদায় করে যাচ্ছেন, অথচ তারা হয়ত জানেনই না যে, এতে করে তাদের সালাত সঠিকভাবে আদায় হচ্ছে না এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বাত্বিল হয়ে যাচ্ছে। সুপ্রসিদ্ধ চার ইমাম সহ অধিকাংশ ফিক্ব্হবিদগণ এ বিষয়ে একমত যে, সালাতে মুক্বতাদীর জন্য ইমামের আগে তাকবীর বলা, ইহ্রাম বাধা, রুকূ‘ বা ছাজদাহ করা, ছালাম ফিরানো ইত্যাদি হারাম। তাছাড়া ফোক্বাহায়ে কিরামের প্রায় সকলেই এ বিষয়েও একমত যে, কেউ সালাতের জন্য ইমাম সাহেবের তাকবীরে তাহ্রীমাহ-র একমূহুর্ত আগেও যদি ইহ্রাম বেঁধে নেয় কিংবা ইমামের ছালাম ফিরানোর একমূহুর্ত আগে ছালাম ফিরিয়ে নেয় তাহলে তার সালাত বাত্বিল হয়ে যাবে। কেননা রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَلا تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ.
অর্থ- ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্য, অতএব তোমরা তাঁর ব্যতিক্রম করো না।অন্য একটি হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
مَنْ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ قَبْلَ الْإِمَامِ فَلَا صَلَاةَ لَهُ.
অর্থ- যে ব্যক্তি ইমামের আগে রুকূ‘ হতে মাথা উঠালো তার নামাযই হলো না।আবুল ওয়ার্দ আল আনসারী 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
صَلَّيْتُ إِلَى جَنْبِ ابْنِ عُمَرَ ، فَجَعَلْتُ أَرْفَعُ
قَبْلَ الْإِمَامِ وَأَضَعُ قَبْلَهُ ، فَلَمَّا سَلَّمَ الْإِمَامُ أَخَذَ
ابْنُ عُمَرَ بِيَدِي ، فَلَوَانِي ، وَجَذَبَنِي ، فَقُلْتُ : مَا لَكَ ؟
قَالَ مَنْ أَنْتَ ؟ قُلْتُ : فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ . قَالَ : أَنْتَ مِنْ
أَهْلِ بَيْتِ صِدْقٍ ، فَمَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ ؟ قُلْتُ : أَوْ
مَا رَأَيْتَنِي إِلَى جَنْبِكَ ؟ قَالَ : قَدْ رَأَيْتُكَ تَرْفَعُ قَبْلَ
الْإِمَامِ ، وَتَضَعُ قَبْلَهُ ، وَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ خَالَفَ
الْإِمَامَ.
(অর্থ- আমি (একদা) ইবনু ‘উমারের পাশে সালাত আদায় করতে যেয়ে ইমামের আগে
আগে মাথা (ছাজদাহ হতে কিংবা রুকূ‘হতে) উঠাতে এবং রাখতে (ছাজদাহ্র জন্য
মাটিতে রাখতে) থাকি (অর্থাৎ ইমামের আগে রুকূ‘, ছাজদাহ করতে থাকি)। ইমাম
সাহেব ছালাম ফিরানোর পর ইবনু ‘উমার আমার হাত ঝাপটে ধরলেন এবং আমাকে টেনে
ধরলেন। আমি বললাম- আপনার কি হয়েছে! (আমাকে এমন করছেন কেন?) তিনি আমাকে
বললেন- তুমি কে? উত্তরে বললাম- আমি অমুকের ছেলে অমুক। তিনি আমাকে বললেন-
তুমি তো একটি সত্যবাদী পরিবারের লোক, তাহলে কোন জিনিসটি তোমাকে সালাত পড়তে
বাঁধা দিল? আমি (আবুল ওয়ার্দ আল আনসারী) তাকে বললাম- আপনি কি আমাকে আপনার
পাশে (সালাত আদা করতে) দেখেননি? তিনি বললেন: আমি তোমাকে দেখেছি ইমামের আগে
(মাথা) উঠাতে এবং মাথা রাখতে। অথচ যে ব্যক্তি ইমামের ব্যতিক্রম করে তার
সালাতই হয় না।একদা ‘উমার এমন এক ব্যক্তিকে দেখলেন, যে ইমামের আগে আগে যাচ্ছিল (অর্থাৎ ইমামের আগেই রুকূ‘-ছাজদাহ করছিল)। তিনি তাকে বেত্রাঘাত করলেন এবং বললেন:-
“لَا وَحْدَك صَلَّيْت وَلَا بِإِمَامِك اقْتَدَيْت”
অর্থ- তুমি না একাকী নামায পড়লে, আর না তোমার ইমামের অনুসরণ করলে।সালাতে মুক্ব্তাদীর কর্তব্য হলো ইমামের অনুসরণ করা। আর কোন কাজে কারো অনুসরণ করার অর্থ তার আগে বা তার অনেক পরে কিংবা তার সাথে সাথে; সমান্তরালে সেই কাজ করা নয়। অনুসরণের অর্থ হলো- যাকে অনুসরণ করা হচ্ছে তার পিছু করা বা তার ঠিক পিছে পিছে যাওয়া।
<<ফিক্ব্হ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন যে, সালাতে ইমামের অনুসরণ করার অর্থ হলো- ইমাম কোন কাজ শুরু করার পরে মুক্ব্তাদীগণ সে কাজ শুরু করা এবং ইমাম শেষ করার আগে শুরু করা। অর্থাৎ নামাযের প্রতিটি রুক্ন-আরকান, তাকবীর ইত্যাদি ইমাম সাহেব শুরু করার পরে মুক্বতাদীকে সেটি শুরু করতে হবে এবং ইমাম সাহেব সেই কাজটি শেষ করার পূর্বেই মুক্বতাদীকে সেই কাজটি আরম্ভ করতে হবে। একেই বলে সালাতে ইমামের অনুসরণ।
বেশক’টি বিশুদ্ধ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইমামের অনুসরণ বলতে রাছূলুল্লাহ 1 উপরোক্ত অর্থটাকেই বুঝিয়েছেন এবং সাহবায়ে কিরামও (4) ইমামের অনুসরণ বলতে এই অর্থই বুঝেছেন।
<<<<জামা‘আতে সালাত আদায়কালীন মুক্ব্তাদীর করণীয় কী এবং সে কিভাবে ইমামের অনুসরণ করবে, সে সম্পর্কে রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَلاَ
تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ، فَإِذَا رَكَعَ، فَارْكَعُوا، وَإِذَا قَالَ:
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، فَقُولُوا: رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ،
وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوا—————-
অর্থ- ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্য, অতএব তোমরা তাঁর
ব্যতিক্রম করো না। তিনি যখন রুকূ‘ করবেন তখন তোমরাও রুকূ‘ করবে। তিনি
যখন “ছামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন তোমরা “রাব্বানা লাকাল হাম্দ”
বলেবে। তিনি যখন ছাজদাহ করবেন তখন তোমরাও ছাজদাহ করবে ———–।উপরোক্ত কাজগুলো যে মুক্ব্তাদী, ইমামের সাথে সাথে তথা তার সমান্তরালে করবে না বরং তাঁর পিছনে পিছনে করবে এ বিষয়টি রাছূলুল্লাহ 1 আরো স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। সাহীহ্ মুছলিমে আবূ মূছা আল আশ‘আরী 3 হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, তিনি বলেছেন- রাছূলুল্লাহ 1 (একদিন) আমাদেরকে খুতবাহ দিলেন। তাতে তিনি আমাদেরকে ছুন্নাতের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিলেন এবং আমাদেরকে আমাদের সালাত শিক্ষা দিলেন। তিনি বললেন:-
إِذَا صَلَّيْتُمْ ، فَأَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ، ثُمَّ
لَيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا ، وَإِذْ قَالَ :
غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا الضَّالِّينَ فَقُولُوا : آمِينَ ،
يُجِبْكُمُ اللَّهُ ، فَإِذَا كَبَّرَ وَرَكَعَ ، فَكَبِّرُوا وَارْكَعُوا ،
فَإِنَّ الإِمَامَ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ ، وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ ،
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فَتِلْكَ
بِتِلْكَ ، وَإِذَا قَالَ : سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ، فَقُولُوا :
اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ، يَسْمَعُ اللَّهُ لَكُمْ ، فَإِنَّ
اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ، قَالَ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ، وَإِذَا
كَبَّرَ وَسَجَدَ ، فَكَبِّرُوا ، وَاسْجُدُوا ، فَإِنَّ الإِمَامَ
يَسْجُدُ قَبْلَكُمْ ، وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ——-
অর্থ- তোমরা যখন সালাত পড়তে যাবে তখন তোমরা তোমাদের সাফগুলো
(কাতার/সারিগুলো) ঠিক করবে অতঃপর তোমাদের মধ্য হতে কেউ একজন ইমামতি করবে।
তিনি যখন (ইমাম) তাকবীর বলবেন তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। তিনি যখন “গাইরিল
মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়ালায্যা—-ল্লী—-ন” বলবেন তখন তোমরা আ—-মী—-ন বলবে,
আল্লাহ তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করবেন। অতঃপর যখন তিনি তাকবীর বলবেন এবং
রুকূ‘তে যাবেন তখন তোমরা তাকবীর বলবে এবং রুকূ‘তে যাবে (অর্থাৎ ইমাম তাকবীর
বলে রুকূ‘তে যাওয়ার পরে তোমরা তাকবীর বলে রুকূ‘তে যাবে)। কেননা ইমাম
তোমাদের আগে রুকূ‘তে যাবেন এবং তোমাদের আগে রুকূ‘ থেকে উঠবেন। এটা ওটার
মোক্বাবিলায় (অর্থাৎ ইমাম তোমাদের যতটুকু সময় আগে রুকূ‘তে যাবেন, ইমাম
রুকূ‘ হতে মাথা উঠানোর পর ঠিক ততটুকু সময় তোমরা; মুক্বতাদীগণ রুকূ‘তে বহাল
থেকে সেই সময়টুকু পূরণ করে নেবে। কিংবা এ কথার অর্থ এটাও হতে পারে যে, ইমাম
যেমন মুক্বতাদীর আগে রুকূ‘ করবেন তেমনি মুক্বতাদীর আগে রুকূ‘ হতে মাথা
উঠাবেন)। ইমাম যখন “ছামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন তোমরা
বলবে “আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হাম্দ” আল্লাহ তোমাদের কথা শুনবেন।
কেননা আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা তাঁর নাবীর ভাষায় বলেছেন “ছামি‘আল্লাহু
লিমান হামিদাহ” (অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর প্রশংসাকারীর প্রশংসা শুনেন)। ইমাম যখন
তাকবীর বলবেন এবং ছাজদাহ্তে যাবেন তখন তোমরা তাকবীর বলবে এবং ছাজদাহ্তে
যাবে (অর্থাৎ ইমাম তাকবীর বলে ছাজদাহ্তে যাওয়ার পরে তোমরা তাকবীর বলে
ছাজদাহ্তে যাবে)। কেননা ইমাম তোমাদের আগে ছাজদাহ্তে যাবেন এবং তোমাদের
আগে ছাজদাহ্ হতে উঠবেন। এটা ওটার মোক্বাবিলায় (অর্থাৎ ইমাম তোমাদের যতটুকু
সময় আগে ছাজদাহ্তে যাবেন, ইমাম ছাজদাহ হতে মাথা উঠানোর পর ঠিক ততটুকু সময়
তোমরা; মুক্বতাদীগণ ছাজদাহ্তে বহাল থেকে সেই সময়টুকু পূরণ করে নেবে।
কিংবা একথার অর্থ এটাও হতে পারে যে, ইমাম যেমন মুক্বতাদীর আগে ছাজদাহ করবেন
তেমনি মুক্বতাদীর আগে ছাজদাহ হতে মাথা উঠাবেন)। ————আবূ হুরাইরাহ 3 সূত্রে অন্য একটি হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ
فَكَبِّرُوا وَلَا تُكَبِّرُوا حَتَّى يُكَبِّرَ وَإِذَا رَكَعَ
فَارْكَعُوا وَلَا تَرْكَعُوا حَتَّى يَرْكَعَ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ
اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوا وَلَا تَسْجُدُوا حَتَّى يَسْجُدَ —–.
অর্থ- ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্য, অতএব তিনি যখন
তাকবীর বলবেন তোমরাও তখন তাকবীর বলবে, তবে তোমরা (মুক্ব্তাদীগণ) তাকবীর
বলবে না, যে পর্যন্ত না তিনি (ইমাম) তাকবীর বলেন। তিনি যখন রুকূ‘ করবেন তখন
তোমরাও রুকূ‘ করবে। তবে তোমরা (মুক্ব্তাদীগণ) রুকূ‘ করবে না, যে পর্যন্ত
না তিনি (ইমাম) রুকূ‘ করেন (অর্থাৎ রুকূ‘তে পুরোপুরি গিয়ে পৌঁছান)। তিনি
(ইমাম) যখন “ছামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন তোমরা (মুক্ব্তাদীগণ)
আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হাম্দ বলবে (কোন কোন বর্ণনায় “লাকাল
হাম্দ” এর স্থলে “ওয়া লাকাল হাম্দ” বলার কথা রয়েছে)। তিনি (ইমাম) যখন
ছাজ্দাহ করবেন তখন তোমরাও ছাজদাহ করবে, তবে তোমরা (মুক্বতাদীগণ) ছাজদাহ
করবে না, যে পর্যন্ত না তিনি (ইমাম) ছাজদাহ করেন (অর্থাৎ ছাজদাহ্তে
পুরোপুরি গিয়ে পৌঁছান)। —————- )একই বিষয়ে আবূ হুরাইরাহ 3 এর সূত্রে বর্ণিত অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ
فَكَبِّرُوا ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا ، وَإِذَا رَفَعَ فَارْفَعُوا
رُءُوسَكُمْ ، وَإِذَا قَالَ : سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
فَقُولُواجَمِيعًا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ، وَإِذَا سَجَدَ
فَاسْجُدُوا ، وَلا تَسْجُدُوا قَبْلَ أَنْ يَسْجُدَ ، وَإِذَا رَفَعَ
رَأْسَهُ فَارْفَعُوا رُءُوسَكُمْ ، وَلا تَرْفَعُوا رُءُوسَكُمْ قَبْلَ
أَنْ يَرْفَعَ.
অর্থ:- ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্য, সুতরাং তিনি যখন
তাকবীর বলবেন তোমরা তখন তাকবীর বলবে। তিনি যখন রুকূ‘ করবেন তখন তোমরা তখন
রুকূ‘ করবে। তিনি যখন (রুকূ‘ হতে) মাথা উঠাবেন তোমরা তখন মাথা উঠাবে। তিনি
যখন “ছামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলবেন তখন তোমরা সকলে “আল্লাহুম্মা
রাব্বানা লাকাল হাম্দ’’ বলেবে। তিনি যখন ছাজদাহ করবেন তখন তোমরা ছাজদাহ
করবে তবে তিনি (ইমাম) ছাজদাহ করার আগে তোমরা (মুক্বতাদীগণ) ছাজদাহ্ করবে
না। ———–। তিনি যখন তার মাথা (ছাজদাহ্ থেকে) উঠাবেন তখন তোমরা তোমাদের
মাথা উঠাবে, তবে তিনি (ইমাম) মাথা উঠানোর পূর্বে তোমরা মাথা উঠাবে না। ———মুক্বতাদীগণ কখন তাকবীর বলবেন এবং রুকূ‘-ছাজদাহ করবেন, মাথা উঠাবেন ইত্যাদি বিষয়ে উপরোক্ত হাদীছ সমূহে অত্যন্ত সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এসব হাদীছ দ্বারা স্পষ্টভাবে একথা প্রমাণিত যে, তাকবীর, তাহ্রীমা, রুকূ‘, ছাজদাহ, উঠা, বসা, ছালাম ফিরানো এসব কাজ ইমাম সাহেব শুরু করার পরেই কেবল মুক্বতাদীগণ করবেন, কোন অবস্থাতেই তার (ইমামের) আগে নয়।
সাহাবায়ে কিরাম 4 সালাতে কিভাবে ইমামের অনুসরণ করতেন, এর সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় বারা ইবনু‘আযিব 3 থেকে বর্ণিত হাদীছে। তিনি বলেছেন:-
كُنَّا نُصَلِّي خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ ، فَإِذَا قَالَ: “سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ” لَمْ يَحْنِ
أَحَدٌ مِنَّا ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ جَبْهَتَهُ عَلَى الْأَرْضِ.
অর্থ- আমরা রাছূলুল্লাহ 1
এর পিছনে নামাযে পড়তাম। তিনি যখন “ছামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলতেন,
আমাদের মধ্যে কেউই নিজের পিঠ নিচের দিকে ঝুকাতো না যতক্ষণ না রাছূলুল্লাহ 1 তাঁর কপাল মাটিতে রাখতেন। (অর্থাৎ রাছূলুল্লাহ 1
“ছামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলার পরে আমরা সবাই সোজা দাঁড়িয়ে থাকতাম,
কেউই ছাজদাহ্তে যাওয়ার জন্য পিঠ বাঁকা বা নিচু করতাম না যতক্ষণ না
রাছূলুল্লাহ 1 ছাজদাহ্তে যেয়ে তাঁর কপাল মাটিতে রাখতেন। রাছূলুল্লাহ 1 ছাজদাহ্তে যেয়ে যখন তাঁর কপাল মাটিতে রাখতেন কেবল তখনই আমরা ছাজদাহ্র জন্য নিচের দিকে ঝুঁকতাম তথা ছাজদাহ্তে যেতাম)।এই একই বিষয়ে সাহীহ্ মুছলিমে বারা ইবনু ‘আযিব 3 থেকে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, তিনি বলেছেন:-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا
قَالَ: سَمِعَ اللهِ لِمَنْ حَمِدَهُ لَمْ يَحْنِ أَحَدٌ مِنَّا ظَهْرَهُ،
حَتَّى يَقَعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا،
ثُمَّ نَقَعُ سُجُودًا بَعْدَهُ.
অর্থ- রাছূলূল্লাহ 1 যখন “ছামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলতেন, আমাদের কেউই স্বীয় পিঠ বাঁকা (নিচু) করত না যতক্ষণ পর্যন্ত রাছূলুল্লাহ 1 ছাজদাহ্তে না যেতেন। তিনি ছাজদাহ্তে লুটিয়ে পড়ার পরই আমরা ছাজদাহ্র জন্য লুটিয়ে পড়তাম।অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে, সাহাবোয়ে কিরাম 4 বলেছেন:- নিশ্চয়ই নাবী 1 (ছাজদাহ হতে) উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন আর আমরা তখনও ছাজদাহ্রত থাকতাম।
সালাতে ইমামের আগে তাকবীর বলতে, তাহ্রীমা বাঁধতে, উঠা, বসা বা রুকূ‘-ছাজদাহ করতে রাছূলুল্লাহ 1 অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
আনাছ 3 হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদিন রাছূলুল্লাহ 1 আমাদের নিয়ে নামায পড়লেন। নামায শেষে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন:-
أَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي إِمَامُكُمْ، فَلَا تَسْبِقُونِي
بِالرُّكُوعِ وَلَا بِالسُّجُودِ، وَلَا بِالْقِيَامِ وَلَا
بِالِانْصِرَافِ، فَإِنِّي أَرَاكُمْ أَمَامِي وَمِنْ خَلْفِي.
অর্থ- হে লোকজন! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ইমাম, অতএব তোমরা রুকূ‘, ছাজদাহ,
ক্বিয়াম (দাঁড়ানো) কিংবা ছালাম ফিরানো- এ কাজগুলো আমার আগে করবে না। কেননা
আমি তোমাদেরকে আমার সামন এবং পিছন থেকে দেখতে পাই।আবূ হুরাইরাহ 3 হতে বর্ণিত, তিনি বলেন – রাছূলুল্লাহ 1 আমাদেরকে শিক্ষা (নামায শিক্ষা) দিতেন, তিনি বলতেন:-
لَا تُبَادِرُوا الْإِمَامَ إِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا
وَإِذَا قَالَ: وَلَا الضَّالِّينَ فَقُولُوا: آمِينَ، وَإِذَا رَكَعَ
فَارْكَعُوا، وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، فَقُولُوا:
اللهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ.
অর্থ- ইমামের আগে যেয়ো না (ইমামকে পিছনে ফেলো না)। তিনি যখন তাকবীর
বলবেন তখন (অর্থাৎ ইমামের তাকবীর বলার পরে) তোমরা তাকবীর বলো। ইমাম
যখন “ওয়ালায্ যা-ল্লী-ন” বলবেন তখন (অর্থাৎ ইমাম “ওয়ালায্ যা-ল্লী-ন”বলার
পরে) তোমরা “আ-মী-ন” বলো। ইমাম যখন রুকূ‘তে যাবেন তখন (অর্থাৎ ইমাম
রুকূ‘তে যাওয়ার পরে) তোমরা রুকূ‘ করো অর্থাৎ রুকূ‘তে যাও। ইমাম
যখন “ছামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন (অর্থাৎ “ছামি‘আল্লাহ লিমান
হামিদাহ” বলার পরে) তোমরা বলো “আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হাম্দ”যদি কেউ অজ্ঞতা কিংবা বে-খেয়াল বশতঃ সালাতে রুকূ‘ বা ছাজদাহ্র একাংশে ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে নেয়, তাহলে তখন সে কী করবে? যেমন একজন লোক ইমামের সাথে যথারীতি রুকূ‘ বা ছাজদাহ করছিলো, এমতাবস্থায় ইমামের রুকূ‘ কিংবা ছাজদাহ সম্পন্ন হওয়ার আগেই (ইমাম রুকূ‘ বা ছাজদাহ্রত থাকা অবস্থায়) সে যদি স্বীয় মাথা (রুকূ‘ বা ছাজদাহ্ থেকে) তুলে নেয়, তাহলে তার করণীয় কি?
<----হ্যাঁ, এমতাবস্থায় তার করণীয় হলো সাথে সাথে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। সে যদি ইমামের রুকূ‘-তে থাকাবস্থায় ইমামের আগে স্বীয় মাথা রুকূ‘ থেকে উঠিয়ে থাকে তাহলে সাথে সাথে তাকে রুকূ‘তে ফিরে যেতে হবে এবং রুকূ‘ থেকে মাথা উঠানো, তারপর আবার রুকূ‘তে ফিরে যেতে সে সময়টুকু ব্যয় হবে- ইমাম রুকূ‘ থেকে মাথা উঠানোর পর সেই পরিমাণ সময তাকে রুকূ‘তে থাকতে হবে। এমনিভাবে কেউ যদি ইমামের ছাজদাহ-তে থাকাবস্থায় ইমামের আগে স্বীয় মাথা ছাজদাহ থেকে উঠিয়ে থাকে তাহলে তাকে সাথে সাথে ছাজদাহ্তে চলে যেতে হবে এবং ছাজদাহ থেকে মাথা উঠানো, তারপর আবার ছাজদাহ্তে ফিরে যেতে যে সময়টুকু ব্যয় হবে- ইমাম ছাজদাহ হতে মাথা উঠানোর পর সেই পরিমাণ সময় তাকে ছাজদাহ্তে থাকতে হবে। অতঃপর রুকূ‘ কিংবা ছাজদাহ হতে উঠে আবারো যথারীতি ইমামের পিছু অনুসরণ করতে হবে।
এর প্রমাণ হলো- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছঊদ 3 হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
إِذَا رَفَعَ قَبْلَ الإِمَامِ يَعُودُ، فَيَمْكُثُ بِقَدْرِ مَا رَفَعَ، ثُمَّ يَتْبَعُ الإِمَامَ.
অর্থ- যখন কেউ ইমামের আগে মাথা উঠাবে তাহলে সে যেন পুনরায় আগের অবস্থায়
ফিরে যায় এবং যতসময় ধরে মাথা উঠিয়েছিল ততটুকু সময় ধরে মাথা আগের অবস্থায়
রাখে, অতঃপর সে যেন ইমামের অনুসরণ করে।‘আবদুল্লাহ ইবনু মাছ‘ঊদ 3 হতে আরো বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
لَا تُبَادِرُوا أَئِمَّتَكُمْ بِالرُّكُوعِ وَلَا
بِالسُّجُودِ، فَإِنْ سَبَقَ أَحَدٌ مِنْكُمْ فَلْيَضَعْ قَدْرَ مَا
يَسْبِقُ بِهِ.
অর্থ- রুকূ‘ কিংবা ছাজদাহ্তে তোমরা তোমাদের ইমামগণের আগে যেয়ো না
(অর্থাৎ ইমামের আগে রুকূ‘-ছাজদাহ করো না)। যদি তোমাদের কেউ (রুকূ‘ অথবা
ছাজদাহ্তে) ইমামের আগে চলে যায় তাহলে সে ইমামের যতটুকু সময় আগে গিয়েছিল
পুনরায় ততটুকু সময় সে নিজেকে যেন ঐ অবস্থায় রাখে।‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছঊদ 3 হতে বর্ণিত অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেছেন-
لَا تُبَادِرُوا أَئِمَّتَكُمْ بِالرُّكُوعِ وَلَا
بِالسُّجُودِ وَإِذَا رَفَعَ أَحَدُكُمْ رَأْسَهُ وَالْإِمَامُ سَاجِدٌ
فَلْيَسْجُدْ ثُمَّ لْيَمْكُثْ قَدْرَ مَا سَبَقَ بِهِ الْإِمَامَ.
অর্থ- তোমরা রুকূ‘ ও ছাজদাহ্তে তোমাদের ইমামগণের আগে যেয়ো না (অর্থাৎ
ইমামের আগে রুকূ‘-ছাজদাহ করো না)। ইমাম ছাজদাহ্তে থাকাকালীন তোমাদের কেউ
যদি স্বীয় মাথা উঠিয়ে নেয়, তাহলে (সাথে সাথে) সে যেন পুনরায় ছাজদাহ্তে চলে
যায় অতঃপর ইমামের যতটুকু সময় পূর্বে মাথা উঠিয়েছিল ততটুকু পরিমাণ সময় সে
যেন ছাজদাহ্রত থাকে।এ বিষয়ে ‘উমার 3 হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেছেন-
أَيُّمَا رَجُلٌ رَفَعَ رَأْسَهُ قَبْلَ الْإِمَامِ فِي رُكُوعٍ أَوْ فِي سُجُودٍ، فَلْيَضَعْ رَأْسَهُ بِقَدْرِ رَفْعِهِ إِيَّاهُ.
অর্থ- যে ব্যক্তি রুকূ‘ অথবা ছাজদাহ্তে ইমামের আগে নিজের মাথা উঠাবে
তাহলে যতক্ষণ সে মাথা উঠিয়েছিল, ঠিক ততটুকু সময় সে যেন পূর্বের অবস্থায়
ফিরে গিয়ে মাথা রাখে।অন্য বর্ণনায় ‘উমার 3 হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেছেন-
إِذَا رَفَعَ أَحَدُكُمْ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ
فَلْيُعِدْ ثُمَّ لِيَمْكُثْ بَعْدَ أَنْ يَرْفَعَ الإِمَامُ رَأْسَهُ
بِقَدْرِ مَا كَانَ رَفَعَهُ.
অর্থ- যদি তোমাদের কেউ ইমামের আগে নিজের মাথা উঠায়, তাহলে সে যেন আবার
পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়, অতঃপর ইমাম মাথা উঠানোর পরেও সে যেন এই অবস্থায়
ততটুকু সময় থাকে যতটুকু সময় সে মাথা তুলে রেখেছিল।যারা সালাতে ইমামের আগে উঠা-বসা বা রুকূ‘-ছাজদাহ করে, তাদের শাস্তি বা পরিণতি হচ্ছে অত্যন্ত ভয়াবহ।
আবূ হুরাইরাহ 3 হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
أَمَا يَخْشَى أَحَدُكُمْ أَوْ لَا يَخْشَى أَحَدُكُمْ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ قَبْلَ الْإِمَامِ أَنْ يَجْعَلَ اللَّهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ أَوْ يَجْعَلَ اللَّهُ صُورَتَهُ صُورَةَ حِمَارٍ.
অর্থ- যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা উঠায় সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তার
মাথাটি গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন অথবা তার আকৃতি গাধার আকৃতি করে দিবেন।অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার এক ব্যক্তিকে এরূপ (ইমামের আগে রুকূ‘-ছাজদাহ) করতে দেখে বেত্রাঘাত করেছেন এবং তাকে পুনরায় সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
অতএব, সম্মানিত মুসাল্লিগণ! খুবই সাবধান! জামা‘আতে নামায আদায়কালীন ইমামের একমূহুর্ত আগে কিংবা ইমামের সমান্তরালে তথা একেবারে একসাথে নামাযের কোন কার্য করবেন না। এরূপ করা হারাম তথা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইমামগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। কেউ যদি স্বজ্ঞানে-স্বেচ্ছায় ইমামের আগে সালাতের কোন একটি রুক্ন সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করে ফেলে, বিশেষ করে কেউ যদি ইমামের তাকবীর বলে তাহ্রীমা বাধার আগেই তাকবীর বলে তাহ্রীমা বেঁধে ফেলে কিংবা ইমামের আগেই ছালাম ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার নামায বাত্বিল হয়ে যাবে এবং তাকে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে, এ বিষয়ে প্রায় সকল ইমামগণই একমত।
জামা‘আতে ইমামের সাথে সালাত আদায়কারী যেসব মুক্ব্তাদীর এ ধরনের বদ-অভ্যাস রয়েছে, তাদের উচিত দ্রুত এই বদঅভ্যাস ও হারাম কাজটি পরিত্যাগ করা এবং অতীতে এরূপ হারাম কাজ করার জন্য আল্লাহ্র (0) নিকট কায়মনে তাওবা-ইছতিগফার করা।
আসলে এসব বিষয়ে মুসাল্লিদের সাবধান করা এবং রাছূলুল্লাহ 1 যেভাবে সালাত আদায় করেছেন কিংবা করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে সালাত আদায়ের নিয়ম-পদ্ধতি জনগণকে শিক্ষা দেয়া সম্মানিত ইমামগণের দায়িত্ব। কেননা ইমাম হলেন মুক্বতাদীগণের যিম্মাদার। ‘উলামায়ে কিরাম যদি তাদের ওয়া‘য-নাসীহাতে এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করেন, সম্মানিত ইমামগণ যদি পাঁচ ওয়াক্ব্ত জামা‘আতে সালাত শুরু করার আগে মাত্র এক মিনিট সময় ব্যয় করে সালাতের অতি প্রয়োজনীয় এসব বিষয় তথা মাছায়িল মুসাল্লিগণকে জানিয়ে দেন, তাহলে হয়ত প্রতিদিন পাঁচবার শত শত লোক এহেন মারাত্মক গুনাহে নিপতিত হবে না কিংবা তাদের চোঁখের সামনে শত শত লোকের নামায বাত্বিল হবে না। আর অজ্ঞ-মূর্খদের কারণে তারা (‘আলিম ও ইমামগণ) নিজেরাও ধ্বংস ও সর্বনাশের মুখে পতিত হবেন না।
আল্লাহ জাল্লা ওয়া ‘আলা এহেন জঘন্য পরিণতি থেকে সকল মুছলমানকে হিফাযাত করুন, — আ-মী-ন।
Ref.....