Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

উলামাদের জিবনী সিরিজ ঃ-



শাইখ ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী

জন্ম ও পরিচয়:

তিনি হলেন আল-মুহাদ্দিসুল জালীল আল-ফাক্বীহুল উসূলী আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী।

তিনি ১৩২৭ হিজরীর মুহাররাম মাসে অখণ্ড ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলার অন্তর্গত মুবারকপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

·
‘ইলম অর্জন:

শাইখ ‘উবাইদুল্লাহর পড়ালেখার হাতেখড়ি তাঁর পিতার কাছে। তাঁর পিতা অনেক বড়ো বিদ্বান ছিলেন। তিনি তাঁর কাছে নাহুশাস্ত্র, সরফশাস্ত্র, আদব বা সাহিত্য, এবং ফিক্বহ, ফারাইদ্ব ও মানত্বিক্বশাস্ত্রের বইপুস্তক পড়েন। যেমন: কাফিয়াহ, শারহে মোল্লা জামী, শারহে বেকায়াহ, মিশকাতুল মাসাবীহ, সীরাজী, শারহুত তাহযীব, শারহুশ শামসিয়্যাহ, দীওয়ানে মুতানাব্বী প্রভৃতি। তখন তাঁর পিতা উত্তর প্রদেশের গোণ্ডা জেলার সিরাজুল ‘উলূম মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।

পরবর্তীতে তিনি তাঁর পিতার সাথে দিলিস্থ দারুল হাদীস আর-রাহমানিয়্যাহ’য় স্থানান্তরিত হন। শাইখ ‘উবাইদুল্লাহ এখানেই তাঁর পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। তিনি এখানে অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর কাছে বিভিন্ন শাস্ত্রের ওপর পড়াশোনা করে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম নাযীর হুসাইন দেহলভীর ছাত্র ‘আল্লামাহ আহমাদুল্লাহ দেহলভীর কাছে সাহীহ বুখারী, সাহীহ মুসলিম ও মুওয়াত্বত্বা পড়েন। ‘আল্লামাহ আহমাদুল্লাহ তাঁকে হাদীস বর্ণনার ইজাযাহ (অনুমতি/সনদ) প্রদান করেন।

তিনি ফিক্বহ, উসূলে ফিক্বহ, মানত্বিক্ব ও দর্শনশাস্ত্রের বইপুস্তক পড়েন ‘আল্লামাহ গোলাম ইয়াহইয়া কানপুরীর কাছে। এছাড়াও তিনি হাদিয়্যাহ সা‘দিয়্যাহ ও সুনানে আবূ দাঊদ পড়েছেন শাইখ আবূ ত্বাহির বিহারীর কাছে। সুনানে তিরমিযী, তাফসীরে জালালাইন, মাক্বামাতে হারীরী পড়েছেন হাফিয ‘আব্দুর রাহমান আন-নাগারনাহুসীর কাছে। মুক্বাদ্দামাহ ইবনে খালদূন পড়েছেন ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল গাফূর জিরাজপুরীর কাছে। ফাওযুল কাবীর পড়েছেন শাইখ মুহাম্মাদ ইসহাক্ব আরুউয়ীর কাছে। তাফসীরে বাইদ্বাউয়ীর কিছু অংশ পড়েছেন ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ গোজরানওয়ালী পাঞ্জাবীর কাছে।

তিনি মাদরাসার ছুটিতে সুনানে তিরমিযীর প্রথমাংশ, শারহে নুখবাতুল ফিকারের একটি নির্ধারিত অংশ, মুক্বাদ্দামাহ ইবনে সিলাহ, সীরাজী প্রভৃতি পড়েছেন সুনানে তিরমিযীর বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’র সম্মানিত লেখক আশ-শাইখুল মুহাদ্দিস ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ)’র কাছে। ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী শাইখ ‘উবাইদুল্লাহকে হাদীসের কিতাবসমূহ রিওয়াইয়াত (বর্ণনা) করার ইজাযাহ প্রদান করেন। এভাবে ‘ইলম অর্জন করতে করতে একপর্যায়ে তিনি ১৩৪৫ হিজরী সনে মাদরাসাহ রাহমানিয়াহ থেকে পাস করে বের হন।

·
কর্মজীবন:

তাঁর প্রজ্ঞা এবং সর্বদা মাদরাসাহ’র পরীক্ষায় তাঁর ভালো ফলাফল দেখে মাদরাসাহ রাহমানিয়াহ’র মালিক ও তত্ত্বাবধায়ক শাইখ ‘আত্বাউর রহমান শাইখ ‘উবাইদুল্লাহকে তাঁর মাদরসাহ থেকে পাস করে বের হওয়ার বছরই তাঁকে মাদরাসাহ’র শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।

ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ‘তুহফাতুল আহওযায়ী’ লেখে শেষ করার আগেই তাঁর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর একজন ‘আলিমের প্রয়োজন অনুভূত হয়, যিনি ‘উলূমুল হাদীস এবং তৎসংক্রান্ত শাস্ত্রগুলোর ব্যাপারে অভিজ্ঞ। যিনি তাঁকে তাঁর কাজে সহযোগিতা করতে পারবেন। ইমাম ‘আব্দুর রহমান এই কাজের জন্য শাইখ ‘উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরীকে চয়ন করেন। ফলে শাইখ ‘আত্বাউর রহমান শাইখ ‘উবাইদুল্লাহকে তাঁর কাছে প্রেরণ করেন।

শাইখ ‘উবাইদুল্লাহ তাঁর কাছে দুবছর অবস্থান করেন এবং তুহফাতুল আহওয়াযীর শেষ দুটি খণ্ড সম্পূর্ণ করতে তাঁকে সাহায্য করেন। এই কাজে শাইখ ‘উবাইদুল্লাহর সাথে ছিলেন তাঁর সহপাঠী শাইখ ‘আব্দুস সামাদ মুবারকপুরী এবং শাইখ মুহাম্মাদ লাহোরী পাঞ্জাবী। এই সময় তিনি ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর নিকট থেকে তাঁর অমূল্য ‘ইলম ও প্রজ্ঞা আহরণ করেন।

এরপর শাইখ ‘আত্বাউর রহমান তাঁকে মাদরাসাহ রাহমানিয়াহ’য় শিক্ষকতা করার জন্য ডেকে পাঠান এবং তাঁকে হাদীসের গ্রন্থাবলি পড়ানোর দায়িত্ব দেন। বিশেষ করে সাহীহ বুখারী, সুনানে আবূ দাঊদ, সুনানে তিরমিযী, মুওয়াত্বত্বা প্রভৃতি গ্রন্থ। সেই সাথে তাঁর উপর ফাতাওয়া প্রদানের দায়িত্বও অর্পিত হয়েছিল।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর শাইখ ‘আত্বাউর রহমান এবং মাদরাসাহ’র আরেকজন তত্ত্বাবধায়ক শাইখ ‘আব্দুল ওয়াহহাব করাচি (পাকিস্তান) চলে গেলে মাদরাসাহটি বন্ধ হয়ে যায়।

শাইখ ‘উবাইদুল্লাহ দ্বীনী বিষয় এবং শার‘ঈ মাসআলাহগুলোর ক্ষেত্রে মুসলিমদের একটি উৎসে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি দলিল-প্রমাণ সহকারে ফাতাওয়া দিতেন এবং এ ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দা পরোয়া করতেন না। তাঁর অনেকগুলো ফাতওয়া ‘মুহাদ্দিস’ ও ‘মিসবাহ’ পত্রিকা দুটোতে প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি শাইখ মুহাম্মাদ যাকারিয়্যা লালপুরী এবং স্বীয় পিতা ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুস সালামের নির্দেশে ১৩৬৭ হিজরী মোতাবেক ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ “মির‘আতুল মাফাতীহ” লেখা শুরু করেন। তিনি সম্পূর্ণ ভাষ্য লেখে যেতে পারেননি। তিনি মির‘আতের ৯ম খণ্ড পর্যন্ত লেখেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অনেক ‘ইলমী বইপুস্তক রয়েছে। যেমন: তারীখুল মিনওয়াল, হুকমুত তা’মীনি ফিল ইসলাম, ফাদ্বাইলুস সিয়াম, বায়ানুশ শির‘আহ ফী বায়ানি মাহাল্লি আযানি খুত্ববাতিল জুমু‘আহ প্রভৃতি।

·
তাঁর ব্যাপারে শাইখ রাবী‘র মন্তব্য:

বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস জারাহ ও তা‘দীলের ঝাণ্ডাবাহী মুজাহিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) শাইখ ‘উবাইদুল্লাহ রহমানীর জীবনচরিত লেখতে গিয়ে বলেছেন—
“আমি শাইখ ‘উবাইদুল্লাহকে খুব ভালো করে চিনি। তিনি (মাদীনাহ) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁর অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের কাজে নিয়োজিত শাইখ সালিহ বিন হুসাইন আল-‘ইরাক্বী এবং রাবী‘র সাথে সাক্ষাৎ করা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আমাদের বাসায় এসে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা তাঁর উত্তম চরিত্র এবং অতুলনীয় বিনয়ের মাধ্যমে তাঁকে ভালোভাবে চিনেছি। আমাদের ও তাঁর মাঝে বিভিন্ন ‘ইলমী মাসআলাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যেসব মাসআলাহ পর্যালোচনার জন্য পেশ করা হতো। পর্যালোচনার জন্য উপস্থাপিত মাসআলাহগুলোর ক্ষেত্রে আমরা তাঁকে এরূপ পেয়েছি যে, এসব ব্যাপারে তাঁর সুপ্রশস্ত জ্ঞান এবং শক্তিশালী স্মরণশক্তি আছে। ফলে আমাদের মাঝে কেবল ভালোবাসা আর সম্মানই বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু তিনি আমাদের সাথে ওই সকল গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় মতবিনিময় করেছেন। আমি তাঁর শহর মুবারকপুরে গিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। আমি তাঁর নিকট থেকে সাদর অভ্যর্থনা এবং প্রশান্তি পেয়েছি। আর তিনি সুন্নাহ’র উৎসসমূহ থেকে যা কিছু পড়েছেন ও শুনেছেন তার সবকিছুর ব্যাপারে আমাকে সার্বজনিক ইজাযাহ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তাঁর উপর সুপ্রশস্ত রহমত বর্ষণ করুন।” [তাযকীরুন নাবিহীন; পৃষ্ঠা: ২৯১]
·
মৃত্যু:

ভারতবর্ষের এই মহান মুহাদ্দিস ১৪১৪ হিজরী মোতাবেক ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। আল্লাহ তাঁর অমূল্য খেদমত কবুল করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁর আবাস নির্ধারণ করুন। আমীন।
·
তথ্যসূত্র:

(১) ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), মির‘আতুল মাফাতীহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৯-১০; মাকতাবাতুর রহমানিস সালাফিয়্যাহ, সারগোদা (পাকিস্তান) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.। জীবনচরিত লেখেছেন শাইখের ছেলে ‘আব্দুর রহমান বিন ‘উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী।

(২) ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ), তাযকীরুন নাবিহীন বি সাইরি আসলাফিহিম হুফফাযিল হাদীসিস সাবিক্বীনা ওয়াল লাহিক্বীন; পৃষ্ঠা: ২৮৯-২৯১; শাইখের ওয়েবসাইট (rabee.net) থেকে সংগৃহীত সফট কপি।
·
বি.দ্র.: আমাদের নিবন্ধটি তথ্যসূত্রে উল্লিখিত গ্রন্থদ্বয়ের স্বতন্ত্র দুটি পরিচ্ছেদ থেকে সংগৃহীত, সংক্ষেপিত এবং ঈষৎ পরিমার্জিত।
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
fb.com/SunniSalafiAthari

 লাইকুম ওয়ারহতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ? এখানে পাবেন বিভিন্ন রকমের ইসলামিক বই যেমন- হাদিস,কুরান,তাফসীর,বিশয় ভিত্তিক বই,শাইখ ভিত্তিক বই,ইত্যাদি। আর অন্যান্য জিনিস পেতে-sarolpoth.blogspot.com জানা অজানা ইসলামিক আরটিকল এবং শাইখদের-অডিও শাইখদের বই,,বিশয়ভিত্তিক অডিও, কুরান গজল ইত্যাদি নানা রকম বইয়ের সমাহার সার্চ করুন আপনার পছন্দ মত এছাড়াও পেতে পারেন জানা অজানা প্রস্ন উত্তর চোখ রাখুন এই সাইটে- সহী আকিদা ওয়েবসাইটে = http://sahih-akida.simplesite.com অথবা https://godhanpara.blogspot.com/ ইসলামিক বই। লিঙ্ক- আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪] -:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন sahih-akida.simplesite.com jannaterpoth.wildapricot.org