শুরু করছি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ’র নামে। শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ, তার পরিবারবর্গ ও সঙ্গীসাথীদের ওপর।
সালাফ আস-সালিহীনদের মানহাজের অন্যতম একটি দিক হলো বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের সমালোচনা ও খণ্ডন করা এবং তাদের থেকে ‘ইলম নেয়া, তাদের সাথে বসার ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করা। তবে বর্তমানকালে কিছু দা‘ঈ দেখা যায়, যারা বিদ‘আতীদের ক্ষেত্রে সালাফদের সুপরিচিত মানহাজ অনুসরণ করেন না তথাকথিত ঐক্যের জন্য, অথবা তথাকথিত মধ্যমপন্থা অনুসরণ করতে গিয়ে, অথবা নিজের জনপ্রয়িতা রক্ষা করার জন্য। এই দা‘ঈরা কিছু বাতিল মূলনীতি অনুসরণ করে থাকেন যেগুলো তারা অনেকসময় প্রকাশ্যে বিবৃত করেন,
আবার অনেকসময় করে না। এসব মূলনীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে, “সমালোচনা নয়, সংশোধন করতে হবে”, “ব্যক্তির নয়, কর্মের সমালোচনা করতে হবে”, “খারাপ দিকগুলো উল্লেখ করার সময় ভালোগুলোও উল্লেখ করতে হবে” ইত্যাদি। ফোনালাপের মাধ্যমে এমনই কিছু মূলনীতি উপস্থাপন করা হয় বর্তমান যুগের শীর্ষস্থানীয় সালাফী ‘আলিম, ফাদ্বীলাতুশ-শাইখ, আল-ইমাম, আল-‘আল্লামাহ ড. সালিহ বিন ফাওযান বিন ‘আব্দিল্লাহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)-এর কাছে, এবং শাইখ সালাফদের মানহাজ অনুযায়ী এসব মূলনীতির ব্যাপারে যথার্থ রায় প্রদান করেন। ফোনালাপটির বাংলা অনুবাদ আমরা নিম্নে উপস্থাপন করছি —
প্রশ্নকারী: আমরা আপনার নিকট কিছু মূলনীতি উপস্থাপন করতে চাই, এবং (আপনার) উত্তরগুলোর মাধ্যমে আমাদের কিছু বিষয়ে স্পষ্টকরণ প্রয়োজন, এবং (আমরা জানতে চাই যে এই মূলনীতিগুলো) আহলুস সুন্নাহ’র দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত মূলনীতিগুলো অনুযায়ী কিনা।
প্রথম মূলনীতিটি হলো, “আমরা সংশোধন করি কিন্তু সমালোচনা করি না।” আপনি এই ব্যাপারে কি বলেন?
শাইখ: এটি ভিত্তিহীন। এই মূলনীতি ভিত্তিহীন। আহলুল বাতিলদের সমালোচনা করতে হবে।
প্রশ্নকারী: দ্বিতীয় মূলনীতিটি হলো, “আপনি যখন রায় প্রদান করবেন(বলবেন অমুক বিদ‘আতি, তমুক হিযবী), তখন আপনার ব্যাপারেও রায় দেয়া হবে, এবং আপনি যখন দা'ওয়াহ দিবেন, আপনি পুরস্কৃত হবেন।” এই মূলনীতিটি সম্পর্কে আপনি কি বলেন? বারাকাল্লাহু ফীকুম।
শাইখ: এটি একটি নব আবিষ্কৃত বিষয়, এর কোন ভিত্তি নেই। আহলুল বিদ‘আহর ব্যপারে রায় দিতে হবে।
প্রশ্নকারী: তৃতীয় মূলনীতিটি হলো, “(কারো ব্যাপারে) ভালো এবং খারাপ উভয়ই উল্লেখ করাটা ন্যায্যতা ও সমতার অন্তর্ভুক্ত, এবং মানহাজ আল-মুওয়াযানাহ(সমতাবিধানের মানহাজ) সম্পর্কে সে দলীল হিসেবে একটি সুপরিচিত হাদিস উল্লেখ করেছে,
“সে সত্য বলেছে, কিন্তু সে একজন মহা মিথ্যুক।” এই ব্যাপারে আপনি কি বলেন?
শাইখ: এটিও বাতিল। এই কথাটিও বাতিল, কেননা কুরআন মুশরিকদের মন্দ দিকগুলো উল্লেখ করেছে কিন্তু ভালো দিকগুলো উল্লেখ করেনি।
প্রশ্নকারী: এটি কি আহলুল বিদ‘আহর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?
শাইখ: আহলুল বিদ‘আহর ব্যাপারটি কি?
প্রশ্নকারী: সে বলে যে ন্যায্যতার অন্তর্ভুক্ত হলো তাদের খারাপ দিকগুলো এবং ভালো দিকগুলোও উল্লেখ করা...
শাইখ: এটি একই রকম। তাদের খারাপ দিকগুলো উল্লেখ করা হবে কিন্তু তাদের ভালো দিকগুলো উল্লেখ করা হবেনা। আল্লাহ শত্রুদের খারাপ দিকগুলো উল্লেখ করেছেন কিন্তু ভালো দিকগুলো উল্লেখ করেননি। এগুলো কি ‘আর‘ঊরের মূলনীতি?
প্রশ্নকারী: জি, এগুলো তার মূলনীতি।
শাইখ: এগুলো হলো এমন মূলনীতি যেগুলো সমালোচিত ও বাতিল, এবং যেগুলো তার (‘আর‘ঊর) ওপর প্রত্যাখ্যান করা হবে, এবং তার বিরুদ্ধে কিতাবাদি লেখা হয়েছে।
প্রশ্নকারী: চতুর্থ মূলনীতিটি হলো, “এটি ঘোষণা করা বৈধ যে কেউ ভুলের ওপর আছে, কিন্তু ভর্ৎসনা করা বৈধ নয়।”
শাইখ: এই (মূলনীতিটি) এমনই, “আমরা সংশোধন করি, কিন্তু আমরা (ব্যক্তির) সমালোচনা করি না”, এটি একই মূলনীতি।
প্রশ্নকারী: (‘আদনান ‘আর‘ঊর) বলেছে, “কেন সালাত ত্যাগকারীকে তাকফীর করার কারণে ইমাম আহমাদকে সমালোচনা করা হয় না কিন্তু সাইয়্যিদ ক্বুতুবকে সমালোচনা করা হয় শুধু এজন্য যে (মুসলিমদের তাকফীর করে) সে এমন কিছু কথা বলেছেন? সুতরাং আমরা বলি: ইনি (সাইয়্যিদ ক্বুতুব) মুসলিম সমাজগুলোর ওপর তাকফীর করেছেন, এবং এই সমাজগুলোর ওপর কুফরের ফাতওয়া দেয়া সত্ত্বেও ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে সমালোচনা করা হয় না।” সুতরাং এব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
শাইখ: ইমাম আহমাদ একজন ‘আলিম ও পণ্ডিত ব্যক্তি যিনি দলীল জানেন এবং তা
ব্যবহার করার পদ্ধতি জানেন, এবং সাইয়্যিদ ক্বুতুব হলো একজন জাহিল যার কোন ‘ইলম নেই বা বিচক্ষণতা নেই, আর না আছে সেগুলোর পক্ষে কোন দলীল যেগুলো সে বলে। সুতরাং ইমাম আহমাদ এবং সাইয়্যিদ ক্বুতুবকে সমান করা যুল্ম।
প্রশ্নকারী: সে আরো বলে, “আমি বর্তমানে এমন কাউকে চিনিনা যে মানহাজের ব্যাপারে এমনভাবে বলেছেন যেমনভাবে সাইয়্যিদ কুতুব বলেছেন। এবং সে যা লিখেছে তার বেশীরভাগের ক্ষেত্রেই সে সঠিক।” তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো এবং সে জবাবে বলেছে, “মিনহাজ শব্দটি দ্বারা আমি সংস্কারসাধন, নির্বাচন ও গুপ্তহত্যার ব্যাপারটি বুঝিয়েছি। এবং ‘বর্তমানে’ বলতে পঞ্চাশের দশককে বুঝিয়েছি।”
শাইখ: সে (‘আর‘ঊর) জানে না। আমি বলছি সে জানে না, কারণ সে জাহিল। আর আমাদের ব্যাপারটি হলো, আমরা জানি, আলহামদুলিল্লাহ সাইয়্যিদ ক্বুতুবের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ‘উলামা তার বিরোধিতা করেছেন।
[সাইয়্যিদ ক্বুতুবের ব্যাপারে দুই-একজন ‘আলিমের বিচ্ছিন্ন প্রশংসা দেখিয়ে অনেকসময় প্রমাণ করতে চাওয়া হয় যে, শুধু শাইখ রাবী (হাফিযাহুল্লাহ)-ই সাইয়্যিদ কুতুবের বিরোধিতা করেছেন, অন্যান্য সালাফী 'আলিমরা আসলে সাইয়্যিদ কুতুবের পক্ষে, শাইখ ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)-এর কথাটি এসব মিথ্যুকদের দ্বারা প্রতারিত না হতে সহায়ক। - অনুবাদক]
প্রশ্নকারী: ‘আদনান (‘আর‘ঊর) বলে, “আহলুস সুন্নাহ’র মানহাজের দিকে দা‘ওয়াহ দেয়ার নামে একটি ফাঁদ রয়েছে, এবং (এটি হলো) বান্দাদের সমালোচনা করা এবং ভর্ৎসনা করা একটি কথা বা একটি অস্পষ্ট অভিব্যক্তির কারণে, এবং তাকফীরের নামেও একটি ফাঁদ রয়েছে, এই ফাঁদটিকে বলা হয়, ‘শাসকদের তাকফীর’।”
শাইখ: এগুলো অর্থহীন কথাবার্তা, যার উদ্দেশ্য হলো বাতিলকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা এবং আহলুল বিদ‘আহ-কে রক্ষা করা।
প্রশ্নকারী: (এবং সে বলে) “যে কেউ বিভক্ত হওয়ার কারণগুলো অনুসন্ধান করবে, দেখবে যে এটি হলো আচার-আচরণের কারণে, এবং ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের কারণে নয়।”
শাইখ: বরং ‘আক্বীদাহ ও আচার-আচরণের কারণে। কিন্তু সে তাদের (বিদ‘আতীদের) ঢেকে রাখতে এবং রক্ষা করতে চায়।
প্রশ্নকারী: তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
শাইখ: সে মোটেই একজন ‘আলিম না। সে সৌদি আরবে একজন কর্মী হিসেবে এসেছিলো। তারপর সে তার সাথে যা আছে তা উন্মোচিত করে।
প্রশ্নকারী: আমাদের কি তার দারসে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত? সে ইউরোপে আসছে। আপনি কি সালাফী তরুণদের তার দারসে উপস্থিত হতে নাসীহাত করেন?
শাইখ: আমরা সালাফী তরুণদের নাসীহাত করছি, তার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে এবং তার দারসে উপস্থিত না হতে।