Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

আহ্লু ঈল্মগনের দৃষ্টিতে মানহাজ...।।

 পোস্টের বিষয়বস্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা হলো ‘আক্বীদাহ এবং মানহাজ।
  • •‘আক্বীদাহ মানে বিশ্বাস বা Creed বা Belief System আর মানহাজ মানে Methodology বা পন্থা বা পদ্ধতি বা কর্মপদ্ধতি বা চলার পথ। শারী‘আহ’র পরিভাষায় দ্বীনের ক্ষেত্রে সালাফুস-সালিহীনদের পথে চলার নামই মানহাজ বা দ্বীনের ব্যাপারে সর্বক্ষেত্রে সালাফুস সালিহীনদের নীতি অনুসরণ করাকেই বলে মানহাজ যাকে বলা হয় সালাফী মানহাজ তথা সালাফুস-সালিহীনদের মানহাজ। ‘আক্বীদাহ ও মানহাজ একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত এবং একটি ছাড়া অন্যটি চলতে পারে না। উপরন্তু আহলুল ‘ইলমদের অনেকেই বলেছেন ‘আক্বীদাহ ও মানহাজে কোনোই পার্থক্য নেই। তারপরও অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে যায় যে, ‘আক্বীদাহ এবং মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য যদি নাই থাকে তাহলে এই দুটি শব্দ আলাদাভাবে ব্যবহৃত হয় কেন। উপরন্তু অনেক গোমরাহ দল এই দুটির মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে সালাফুস-সালিহীনদের মানহাজ থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের মনমতো মানহাজ তৈরি করে নেয় যার বহু নজির আমরা দেখতে পাই, যেমন: ইখওয়ানি, জামাতি, তাবলীগীসহ আরো যতো গোমরাহ দল আছে তাদের মাঝে। তাহলে আরো প্রশ্ন এসে যায় কেউ ‘আক্বীদাহয় সালাফী আর মানহাজে ভিন্ন হলে সেক্ষেত্রে তার বিধান কী এবং যারা সালাফুস-সালিহীনদের মানহাজের বিরোধিতা করে তাদের বিধান কী। আসুন এই সকল বিষয়ে আমরা বিভিন্ন আহলুল ‘ইলমদের উক্তি থেকে জেনে নিই। এই প্রত্যেকটি ব্যাপারেই নিম্নে বিভিন্ন আহলুল ‘ইলমদের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।


    সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফাতওয়া বোর্ডে ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপারে ফাতওয়া জিজ্ঞেস করা হয়। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো,

    প্রশ্ন: “আজকাল ‘আক্বীদাহ এবং মানহাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে মর্মে অনেক কথা শোনা যায়। মানুষ এখন এও বলা শুরু করেছে যে, “অমুক ও অমুকের ‘আক্বীদাহ আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহর ‘আক্বীদাহ” অথবা সালাফিয়্যাহ’র ‘আক্বীদাহ, তবে তার মানহাজ আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহর মানহাজ নয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ, তারা জামা‘আতুত তাবলীগের বা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের, অথবা অন্যকোনো গ্রুপের কিছু কিছু কথা বলে থাকে। কাজেই, এর কী কোনো মূলনীতি আছে যার দ্বারা আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহর বা সালাফিয়্যাহ’র মানহাজ সম্পর্কে জানা যেতে পারে? এবং ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কী?

    উত্তর: “একজন মুসলিমের ‘আক্বীদাহ এবং মানহাজ একই জিনিস এবং তা হলো— একজন মানুষ তার অন্তরে যা কিছুই বিশ্বাস করে, জিহ্বা দিয়ে উচ্চারণ করে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দ্বারা তার উপর আমল করে এবং মহামহিমান্বিত আল্লাহর একাত্মতায়, রুবূবিয়্যাহতে (সমগ্র বিশ্বের কতৃত্ব), উলূহিয়্যাহতে (এককভাবে শুধুমাত্র তিনিই ‘ইবাদাতের হকদার), এবং আসমা’ ওয়াস-সিফাতে (তাঁর নাম ও গুণাবলী), এবং এককভাবে শুধুমাত্র তাঁর ‘ইবাদাত করা, এবং কিতাবুল্লাহ (ক্বুর’আন) ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহতে যা কিছুই এসেছে সেগুলোকে মুখে স্বীকার করা, আমল করা এবং অন্তরে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে তাঁর (আল্লাহর) শরীয়তকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরা এবং এই উম্মতের সালাফগণ এবং ইমামগণ যেই পথের উপর ছিলেন সেই পথের উপর থাকা। এবং এসবের দ্বারা এটাই বোঝায় যে, ‘আক্বীদাহ ও মানহাজে কোনো পার্থক্য নেই, বরং এ দুটি একই জিনিস এবং একজন মুসলিমের জন্য এর উপর অটল ও অবিচল থাকা ওয়াজিব।”

    [ফাতওয়া আল-লাজনাহ আদ-দা’ইমাহ - ২/৪০-৪১]
    [http://www.manhaj.com/ থেকে অনূদিত]


    বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, আহলুস-সুন্নাহ’র ইমাম এবং মুজাদ্দিদ আল-ইমাম, আল-‘আল্লামাহ, আশ-শাইখ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রহিমাহুল্লাহ)-কে ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়, যার তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে উত্তর প্রদান করেন।

    প্রশ্ন: “কিছু তরুণ সালাফদের ‘আক্বীদাহ এবং সালাফদের মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করে, যে কারণে আপনি দেখে থাকবেন যে তাদের কেউ কেউ সালাফদের ‘আক্বীদাহর উপর আছে কিন্তু তারা আজ প্রচলিত কিছু ভিন্ন Methodologies বা মানহাজসমূহের সাথে কাজ করার জন্য নিজেদেরকে নির্দেশ দিয়ে থাকে, যদিও চর্চার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে সালাফদের মানহাজের বিরোধিতা হতে পারে। কাজেই, সালাফী মানহাজের কার্যকর বাস্তবায়নের মধ্যে সালাফদের ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মাঝে বাধ্যবাধকতাপূর্ণ কোনো সংযোগ আছে কী?”

    শাইখ: “আমি যেটা বিশ্বাস করি এবং আল্লাহর ‘ইবাদাত করি যে, সালাফী মানহাজ এবং ‘আক্বীদাহর মাঝে ‘আম (অনির্দিষ্ট [সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে]) এবং খাস (নির্দিষ্ট [দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে]) উভয়ই রয়েছে। মানহাজ থেকে ‘আক্বীদাহ হলো বেশি খাস বা নির্দিষ্ট যেটা তোমরা সবাই জেনে থাকো। ‘আক্বীদাহর লিঙ্ক হলো তার সঙ্গে যাকে বলা হয়—“তাওহীদের জ্ঞান”, এবং এটা ইসলামের প্রধান ও মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি। তবে ‘আক্বীদাহ বা তাওহীদের চাইতে মানহাজ আরো ব্যাপক। আর যারা পার্থক্যের দাবি করে যা উক্ত প্রশ্নে এসেছে (‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে), তারা তাদের ইসলামের দা‘ওয়াহর মধ্যে এমন উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বন করা নিজদের জন্য জায়েয সাব্যস্ত করার কুবাসনা করে যার উপর সালাফুস-সালিহীনগণ ছিলেন না। এটা অন্যভাবে বলা যায়, তারা চিন্তা করে, যে কোনো উপায় ও পদ্ধতি যা তাদেরকে ইসলাম পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে বলে তারা মনে করে থাকে তা অবলম্বন করার স্বাধীনতা তাদের রয়েছে, এবং এধরনের বা এধরনের পদ্ধতিসমূহের দৃষ্টান্তের ব্যাপারে তোমরা অবগত। যেমন উদাহরণস্বরূপ, সমাজ কী অভিযোগ করে এবং এই একই ব্যাপারগুলোর প্রতি জোরপূর্বক সরকার বা শাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মিছিল বের করা। কাজেই আমরা বলি যে, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং পথ ও পন্থা সম্পর্কে কিতাবে (ক্বুর’আন) ও সুন্নাহতে (প্রমাণিত হাদীস) যা এসেছে এবং সালাফুস-সলিহীনগণ যার উপর ছিলেন সেগুলোই উম্মাহর জন্য যথেষ্ট। তবে কিছু মানুষেরএমন (ভিন্ন) পথ ও পন্থা অবলম্বন করার জন্য নিজদেরকে নির্দেশ দিতে প্ররোচিত করার কারণ হলো, প্রকৃতপক্ষে আমার জন্য এটা বলাই যথার্থ যে তারা নিজদেরকে অন্ধভাবে কাফেরদের অনুসরণ করতে নির্দেশ প্রদান করে থাকে, তারা (কাফেররা) যাকে বলে গণতন্ত্র বা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং এরকম অন্যান্য শব্দগুলো যাদের (কাফেরদের) প্রতি এগুলোর কোনো বাস্তবতা নেই সেগুলো কার্যকর করার জন্য যে পথ তারা (কাফেররা) অবলম্বন করে। কাজেই তারা অর্থাৎ সেসব মুসলিমরা কাফেরদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করার জন্য এসব পথ ও পন্থার প্রতি নিজদেরকে নির্দেশ প্রদান করে থাকে।
    আমরা বলি, পরাক্রমশালী ও মহিমান্বিত আমাদের পালনকর্তা শরী‘আহর মাধ্যমে কোনো বিচ্ছিন্নতার প্রয়োজন থেকে, যেটি বলা হয়েছে (অর্থাৎ ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে) এবং কাফেরদের প্রয়োজন থেকে এবং তাদের (কাফেরদের) পথ ও পন্থা গ্রহণ করা থেকে আমাদের পরিত্রাণ দিয়েছেন, যেটি তাদের জন্য ভালো হতে পারে (অর্থাৎ কাফেরদের জন্য তাদের নিজদের পথ ও পন্থা), এর একমাত্র কারণ তাদের এমন কোনো শরী’আহ নেই যার মাধ্যমে তারা নিজদেরকে পথ নির্দেশ দিতে পারে। একারণেই আমরা বলি যে ‘আক্বীদাহ এবং তাওহীদের চাইতে মানহাজ হলো আরো ব্যাপক, সুতরাং উভয় ক্ষেত্রেই (‘আক্বীদাহ-মানহাজ) সালাফুস-সালিহীনগণ যার উপর ছিলেন তার উপর টিকে থাকা অপরিহার্য। যেটি প্রথম ও সর্বাগ্রে সেটি ব্যাপক (মানহাজ) আর যেটি সংকীর্ণ বা ছোট (মানহাজের চাইতে), অর্থাৎ ‘আক্বীদাহ।”

    [http://www.manhaj.com/ থেকে অনূদিত]


    আরেক স্থানে শাইখ আল-আলবানী (রহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়। দেখুন,

    প্রশ্ন: “এই স্টেইটমেন্ট বা উক্তির বিধান কী যেমন উদাহরণস্বরূপ— অমুক এবং অমুক ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে সালাফী কিন্তু মানহাজের ক্ষেত্রে ইখওয়ানি (ইখওয়ানুল মুসলিমীন)? তাহলে ‘আক্বীদাহ কি মানহাজের অন্তর্ভুক্ত নয়? এবং এরকম শ্রেণীবিন্যাস কি সালাফরাও করতেন যে একজন ব্যক্তি সালাফী কিন্তু তার মানহাজ ভিন্ন?”

    উত্তর: “আখী, এগুলো (‘আক্বীদাহ ও মানহাজ) আলাদা নয়। এটা সম্ভব নয় যে, কেউ হবে ইখওয়ানী-সালাফী। তবে সে কিছু ব্যাপারে সালাফী হয়ে থাকতে পারে আর কিছু ব্যাপারে ইখওয়ানী হয়ে থাকতে পারে। অথবা সে কিছু ব্যাপারে ইখওয়ানি হয়ে থাকতে পারে আর কিছু ব্যাপারে সালাফী হয়ে থাকতে পারে।
    (তবে) রাসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীরা যার উপর ছিলেন সেভাবে সালাফী হতে গেলে এই দুইয়ের মাঝে একত্রিত করার মতো বিষয়টি অসম্ভব (অর্থাৎ ভিন্ন ‘আক্বীদাহ এবং ভিন্ন মানহাজের মধ্যে)।
    ইখওয়ানুল মুসলিমীন দা‘ঈরা কোন দিকে ডাকে? তারা কি সালাফুস-সালিহীনদের দা‘ওয়াহর দিকে ডাকে? যদি আমরা ধরে নিই যে সে ইখওয়ানী-সালাফী তাহলে সে কি সালাফিয়্যাহ’র দা‘ওয়াহর দিকে ডাকে?
    এর উত্তর হলো–“না”। কাজেই, এটা সালাফিয়্যাহ নয়।
    তবে কিছু ব্যাপারে সে সালাফিয়্যাহ’র দর্শন অনুসরণ করে থাকতে পারে আর কিছু ব্যাপারে ইখওয়ানীদের দর্শন অনুসরণ করে থাকতে পারে।” (যা মূলত সালাফিয়্যাহ নয় যেটা শাইখ উপরেই বললেন)

    [অডিও থেকে অনূদিত]

    আরেক স্থানে শাইখ আল-আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) মানহাজের ব্যাপারে উল্লেখ করেন: “মুসলিমকে অবশ্যই এই দু’টি জিনিসের মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে হবে:- মহামহিমান্বিত আল্লাহর জন্য নিয়তের ব্যাপারে বিশুদ্ধ হতে হবে এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে, তিনি যার উপর ছিলেন। একইভাবে শুধু এটাই যথেষ্ট নয় যে একজন মুসলিম কিতাব (ক্বুর’আন) ও সুন্নাহ (প্রমাণিত হাদীস)-এর উপর আমল করার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে নির্ভেজাল ও উৎসাহী হবে এবং এর দিকে দা‘ওয়াহ দেবে (ক্বুর’আন-সুন্নাহর প্রতি)। বরং এটাও যোগ করা আবশ্যক যে তার মানহাজ (Methodology) সঠিক ও ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।”

    [Mawsūʿat al-Albānī fī-al-ʿAqīdah, pg. 286]

    [http://troid.ca/ থেকে অনূদিত]


    বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আহলুস সুন্নাহর ইমাম, ‘আল্লামাহ, শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল সালাফরা ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করতেন কিনা সেই বিষয়ে। তিনি সুন্দরভাবে এর জবাব দেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ তোমার উপর রহম করুন। ‘আক্বীদাহর উপরেই মানহাজ গঠিত। কাজেই, যার ‘আক্বীদাহ ঠিক, নিঃসন্দেহে তার মানহাজও ঠিক, কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উম্মতের মধ্যে ৭৩ ফিরক্বাহয় বিভক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন যারা সবাই জাহান্নামে যাবে শুধু একটি ছাড়া, তখন সাহাবীরা জিজ্ঞেস করেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল, সেই একটি কোনটি?’

    তিনি জবাব দেন: “যারাই আমার ও আমার সাহাবীদের পথের উপর থাকবে।” কাজেই তাঁর উক্তি— “যারাই আমার ও আমার সাহাবীদের পথের উপর থাকবে”— অর্থাৎ ‘আক্বীদাহয় ও মানহাজে এবং কর্মে এবং সবকিছুতেই। এবং এটা (‘আক্বীদাহ) থেকে এটা (মানহাজ) আলাদা করা সম্ভব না। যেমন উদাহরণস্বরূপ, ইখওয়ানীরা (ইখওয়ানুল মুসলিমীন) ও তাবলীগীরা (চেল্লা দেয়া তাবলীগ) এবং ইসলাহীরা এবং এছাড়া অন্যান্যরা.....যদি তাদের মানহাজ শারী‘আহর বিরোধীতা না করে তাহলে এর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই, আর যদি তা শারী‘আহর বিরোধীতা করে তাহলে এটা নেহাত ‘আক্বীদাহ থেকেই উত্থিত হয় কারণ প্রতিটি কাজেরই উদ্দেশ্য রয়েছে এবং যখন একজন মানুষ এমন মানহাজ গ্রহণ করে যা রাসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এবং তাঁর হেদায়াতপ্রাপ্ত খালীফাগণের মানহাজের বিরোধীতা করে, তখন এর মানে হলো তার ‘আক্বীদাহ ঠিক নয়। নতুবা যখন ‘আক্বীদাহ ঠিক হয়, তখন মানহাজও ঠিক হবে।”

    [http://www.manhaj.com/ থেকে অনূদিত]



    আরেক স্থানে শাইখ ইবনু উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ) সালাফদের মানহাজ বিরোধীদের থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে অত্যন্ত তথ্যবহুল কথা বলেন। তিনি বলেন (নিম্নে দেয়া হলো), “বিদ‘আতিদের এবং যারা ত্রুটিপূর্ণ ধারণা বা মানহাজ বহন করে যা ন্যায়নিষ্ঠ নয় তাদের সম্পর্কে কথা বলা হলো নাসীহাহ বা উপদেশ। বরং তা আল্লাহর প্রতি, তাঁর কিতাবের প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি আন্তরিকতা (সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজে নিষেধ করার মাধ্যমে) এবং তা (কাজের আন্তরিকতা) মুসলিমদের (তাদেরকে উপদেশ দেয়ার মাধ্যমে)। কাজেই যদি আমরা একজন বিদ‘আতিকে বিদ‘আত ছড়াতে দেখি তাহলে এটা আমাদের স্পষ্ট করা ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক যে সে বিদ‘আতি যাতে করে মানুষরা তার ক্ষতিকর কাজ থেকে বাঁচতে পারে। (একইভাবে) যদি আমরা কাউকে দেখি যার এমন কোনো চিন্তাধারা/ধারণা আছে যা সালাফরা যেই মানহাজের উপর ছিলেন তার বিরুদ্ধাচরণ করে তাহলে আমাদের জন্য তা স্পষ্ট করা ওয়াজিব বা জরুরী যাতে মানুষরা তার দ্বারা প্রতারিত হতে না পারে। (একইভাবে) যদি আমরা একজন মানুষকে দেখি যার নির্দিষ্ট একটা Methodology বা মানহাজ রয়েছে (সালাফদের মানহাজ থেকে ভিন্ন) যার ফলাফল অনিষ্টকর তাহলে আমাদের জন্য তা স্পষ্ট করা ওয়াজিব বা জরুরী যাতে মানুষরা তার ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে এবং এটা আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং তাঁর কিতাবের প্রতি আন্তরিকতা, এবং তা শাসকদের ও তাদের প্রজাদের আন্তরিকতা (সদুপদেশ দেয়ার মাধ্যমে যাতে করে তারা অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারে)। ত্বালিবুল ‘ইলমদের মাঝে হোক অথবা অন্য কোনো মাজলিসে হোক, বিদ‘আতিদের নিয়ে কথা বলা গীবত নয়। এবং যতক্ষণ আমরা বিদ‘আতসমূহ অথবা এর কনসেপ্ট অথবা এর Methodology বা মানহাজ ছড়ানোর আশংকা করি যা সালাফদের মানহাজের বিরোধী; তাহলে এটা আমাদের স্পষ্ট করা ওয়াজিব বা জরুরী যাতে মানুষরা এর মাধ্যমে প্রতারিত হতে না পারে।”

    [অডিও থেকে অনূদিত]



    বিগত শতাব্দীর অন্যতম ‘আলিমে দ্বীন ও ইমাম এবং বাতিলদের বিরুদ্ধে বীর মুজাহিদ, আল-‘আল্লামাহ, আশ-শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী (রহিমাহুল্লাহ)’র কাছে ‘আক্বীদাহ-মানহাজের পার্থক্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি সাবলীলভাবে এর জবাব দেন।

    প্রশ্ন: “‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?”

    শাইখ: “‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে এই পৃথকীকরণ হলো হিজবিদের বিদ‘আতের একটি রূপ। বলা হয়ে থাকে আহলুস সুন্নাহর ‘আক্বীদাহ অথবা ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ। ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ কী? তাদের মানহাজ হলো তারা তাদের ‘আক্বীদাহ কিতাব (ক্বুর’আন) ও সুন্নাহ (প্রমাণিত হাদীস) থেকে গ্রহণ করে। যা কিছুই আল্লাহ তাঁর নিজ সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন এবং তাঁর রাসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন তারা তা বিকৃতি অথবা অস্বীকৃতি এবং কোনো সাদৃশ্যতা ছাড়াই অথবা “কীভাবে” বলা ছাড়াই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নেয়। এটাই হলো তাদের ‘আক্বীদাহ।
    যদি একজন মানুষ দাবি করে যে, সে সালাফদের মানহাজের উপর আছে অথবা তার ‘আক্বীদাহ হলো সালাফিয়্যাহ আর তার মানহাজ হলো ইখওয়ানী (ইখওয়ানুল মুসলিমীন) অথবা যেভাবেই তারা বলুক, এই কথা Incomprehensible বা ধারণাতীত, এটি যুক্তিযুক্ত নয়। এ কথাটাই হলো স্ববিরোধী। এটি যুক্তিযুক্ত নয় (গ্রহণযোগ্য নয়)।”

    [অডিও থেকে অনূদিত]



    বর্তমান সময়ে জীবিত কিবারুল ‘উলামাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান এবং ফাতওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যতম, যিনি সর্বোচ্চ ফাতওয়া বোর্ডের সদস্য— আল-ইমাম, আল-‘আল্লামাহ, আশ-শাইখ সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)’র কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘আক্বীদাহ-মানহাজের পার্থক্যের ব্যাপারে। তিনি অতি সংক্ষেপে এর উত্তর দেন।

    প্রশ্ন: “‘আক্বীদাহ এবং মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য রয়েছে কি?”

    শাইখ: “মানহাজ ‘আক্বীদাহর চাইতে ব্যাপক; ‘আক্বীদাহর (বিশ্বাস) মাঝে, আচার-ব্যবহারের মাঝে, আখলাক্বের মাঝে, লেনদেনের মাঝে, একজন মুসলিমের সমগ্র জীবনের মাঝে এবং যার উপর সে ‘আমাল করেছে তার সবকিছুর মাঝেই রয়েছে মানহাজের উপস্থিতি, একেই বলা হয় মানহাজ। পক্ষান্তরে ‘আক্বীদাহ বলতে বুঝায় ঈমানের ভিত্তিকে, শাহাদাতাইনের অর্থকে এবং যা এর অন্তর্ভুক্ত তাকে, এটাই ‘আক্বীদাহর অর্থ।”



    শাইখ ফাওযানকে আরো জিজ্ঞেস করা হয়: “জান্নাত ও জাহান্নাম কি কারো মানহাজ শুদ্ধতার উপর নির্ভরশীল?”

    তিনি জবাব দেন: “হ্যাঁ, যখন কারো মানহাজ সঠিক হবে তখন সে জান্নাতে যাবে। কাজেই সে যদি রাসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মানহাজের উপর এবং সালাফুস সালিহীনদের মানহাজের উপর থাকে তাহলে সে আল্লাহর অনুমতিক্রমে জান্নাতবাসীদের একজন হবে। আর যখন সে পথভ্রষ্টদের মানহাজের উপর চলে যায় তখন সে জাহান্নামের হুমকির শিকার হয়।”

    [আল-আজউইবাতুল মুফীদাহ]
    [www.salafitalk.net থেকে অনূদিত]



    বর্তমান সময়ে জীবিত কিবারুল ‘উলামাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি জারাহ ওয়াত-তা‘দীলের ঝান্ডাবাহী ও বাতিলের আতঙ্ক, যিনি মাদীনাহ ইউনিভার্সিটির হাদীস ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন প্রধান— আল-ইমাম, আল-‘আল্লামাহ আশ-শাইখ রাবী‘ বিন হাদী ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)’র কাছে ‘আক্বীদাহ-মানহাজের পার্থক্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তিনি সংক্ষেপে তা তুলে ধরেন।

    প্রশ্ন: “‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য কী?”

    শাইখ: “‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করার ইস্যুটা এসেছে এই যুগে (মডার্ন যুগে)। (এর আগে) মানুষ কখনোই ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করেনি; অবশ্য এই ফিতনাহ এসেছে এবং আহলুস-সুন্নাহর মধ্য থেকে কেউ ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করতে বাধ্য করেছে। শাইখ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) কখনোই ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করেননি। তিনি বলেছেন (শাইখ বিন বায)— “‘আক্বীদাহ ও মানহাজ একই।”
    (অধিকন্তু) আমি বলতে বাধ্য যে, ‘আক্বীদাহর চাইতে মানহাজ হলো প্রশস্ত (ব্যাপক) এবং মানহাজের মধ্যেই ‘আক্বীদাহ প্রবেশ করে (অর্থাৎ ‘আক্বীদাহ মানহাজের অন্তর্ভুক্ত)। (উদাহরণস্বরূপ) আল্লাহর নাম ও সিফাতের উপর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হলো এই এই...যা কিতাব (ক্বুর’আন) ও সুন্নাহতে (প্রমাণিত হাদীসে) এসেছে, দলীল ও প্রমাণ প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আহলুস-সুন্নাহর মানহাজ হলো এই এই...বর্ণনার ক্ষেত্রে আহলুস-সুন্নাহর মানহাজ হলো এই এই...।
    এটাই তাদের মানহাজ। যেভাবে তাঁরা (সালাফুস সালিহীনগণ) দলীল ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন এবং প্রয়োগ করেছেন সেটাই হলো মানহাজ। যেভাবে তারা বর্ণনা গ্রহণ করেছেন এবং বর্ণনাটি বিবেচনা করেছেন সেটাই মানহাজ।”
    [অনূদিত]



    বর্তমান সময়ে কিবারুল ‘উলামাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি বাতিলদের আতংক এবং মদীনার বিশিষ্ট ‘আলিমে দ্বীন— আল-‘আল্লামাহ আশ-শাইখ ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো যে, “‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি? তিনি খুব সুন্দর ও নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে এর জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,

    শাইখ: “‘আক্বীদাহ একজন মানুষের জন্য জরুরী বিষয় যা হলো সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর এবং যা কিছুই তাঁর কাছ থেকে এসেছে তাঁর উপর এবং তাঁর রাসূলগণের উপর এবং যা কিছুই তাঁরা নিয়ে এসেছেন, সেসবের উপর ঈমান আনা। এবং পুরো ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের উপর ঈমান আনা, যেগুলো হলো– আল্লাহর প্রতি, তাঁর মালা’ইকা বা ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা এবং আল-ক্বাদরের উপরও ঈমান আনা এবং এর ভালো ও মন্দের প্রতি (তাক্বদীর)। অতঃপর তারপরে যা কিছুই আছে যার প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব এবং যা সত্য এবং সঠিক। যেমন গাইব বা অদৃশ্যের বিষয় যেমন: পুনরুত্থানের ফিতনা (কঠিন দুর্দশা) যা নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাধ্যমে জানানো হয়েছে এবং নাবী-রাসূলগণের (পূর্ববর্তী) বিষয়ে যা জানানো হয়েছে, তা কিতাব (ক্বুর’আন) বা সুন্নাহ (প্রমাণিত হাদীস) যেখানেই থাকুক। এবং বারযাখের অবস্থা (কবরের জীবন) এবং কবরের ‘আযাব ও সুখ-শান্তি, এবং শেষ বিচারের দিন যা ঘটবে, যেমন হাওদ্ব (হাওজে কাওসার), পুলসিরাত, মীযান স্থাপন (দাঁড়িপাল্লা) এবং তার পাশাপাশি যা কিছুই আছে।

    আর যখন মানহাজের বিষয় আসে, তখন সেটা হলো দ্বীন এবং এর ফুরূ‘ (ভিত্তি এবং শাখা-প্রশাখা)’র উসূলের সমর্থন, সংস্থাপন। মানহাজ হলো রাস্তা যার মাধ্যমে একজন মানুষ দ্বীনের ভিত্তি ও শাখা-প্রশাখা সমর্থন করে। কাজেই এই রাস্তা যদি কিতাব (ক্বুর’আন) ও সুন্নাহ (প্রমাণিত হাদীস) এবং সালাফুস-সালিহীনদের পদ্ধতির সাথে মিল থাকে, তাহলেই এটি সত্যিকারের মানহাজ। আর যদি তা এর বিপরীত হয় তাহলে তা বিকৃত মানহাজ।

    আর এই দুটি জিনিসের সাথে একত্রিত হয়েই ইসলাম এসেছে— (১) সঠিক ও বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ, এবং (২) সঠিক ও নিরাপদ মানহাজ। যে কারণে একটিকে আরেকটি থেকে আলাদা করা যায় না।

    যেই মানুষের মানহাজ বিকৃত, বিশ্বাস রেখো যে এই বিকৃতি তার ‘আক্বীদাহকেও অনুসরণ করে। যখন ‘আক্বীদাহ সঠিক হয়, একইভাবে তখন মানহাজও সঠিক হয়। ‘আক্বীদাহ বিকৃত হওয়ার কারণে খারিজীদের মানহাজও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তারা এই বিশ্বাস পোষণ করেছিলো যে, কবিরা গোনাহগারের রক্ত হালাল এবং এজন্য তারা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে এবং তাদের হত্যা করাকে জায়েয করেছিলো এবং গোনাহগার অবাধ্য শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তারা রক্ত ও সম্পদ নেয়াকে বৈধ করেছিল। এসব কারণেই বলা হয়েছে যে, “তারা কাফির” (অর্থাৎ খারিজীদেরকে কাফির বলা হয়েছে) এবং যারা এটি বলেছেন তারা আহলুল ‘ইলমদের মধ্য থেকেই (কারণ তারা অর্থাৎ খারিজীরা এমন জিনিস হালাল করে নিয়েছিলো, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, যা হলো উপযুক্ত কারণ ছাড়া (যেমন হত্যার বদলে বদলা) মুসলিমের রক্ত।”

    [http://www.manhaj.com/ থেকে অনূদিত]



    আরেক স্থানে শাইখ ‘উবাইদ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়। দেখুন,

    প্রশ্ন: “এই প্রশ্নটা হলো একটা উক্তি সম্পর্কে; আল্লাহ আপনার সঙ্গে উত্তম আচরণ করুন; এটা বলা হয়ে থাকে যে, “আমি সালাফী তবে আমি মানহাজের ব্যাপারে গোঁড়া না”— এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?”

    শাইখ: “হয় এই লোকটা (যে এই কথা বলে) জাহিল, আর না হয় সে ফাজলামো করছে; এই দুইয়ের একটি। সালাফী মানহাজ কী এই ব্যাপারে সে জাহিল অথবা সে ফাজলামো করছে। এর কোনোটাতেই তার কাছ থেকে ‘ইলম নেয়ার ব্যপারে সে উপযুক্ত না। এর কারণ সালাফীর কোনো আত-তা‘আসসুব (গোঁড়ামি) নেই তবে আত-তামাসসুক (অটলতা/অবিচলতা) রয়েছে; মানহাজের প্রতি অটলতা/অবিচলতা রয়েছে যেটা সাহাবীরা রাসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে পেয়েছিলেন এবং তাবে‘ঈরা সাহাবীদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন এবং গোটা মুসলিমরা এভাবে তা পেতে থাকবে (মানহাজে অটলটা/অবিচলতা), যারা গত হয়েছে তাদের কাছ থেকে তারা পাবে যারা পরবর্তীতে আসবে। এর মানে হলো সে তা (মানহাজ) পরিপূর্ণভাবে মেনে চলবে। এই ফ্রেইজ বা উক্তিটা (প্রশ্নের উক্তিটা) হলো অব্যাহতি দেয়ার এবং সহযোগিতা করার একটা মূলনীতি (অজুহাতমূলক মূলনীতি) যে, “আমরা যে বিষয়ের উপর একমত হই সে বিষয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করব আর যে বিষয়ে একমত নই সে বিষয়ে ক্ষমা করে চলবো”— আমরা এই মূলনীতি সম্পর্কে বহু জায়গায় এবং বহু সমাবেশে অলরেডি আলোচনা করেছি।”

    [অডিও থেকে অনূদিত]


    বর্তমান সময়ে বিশিষ্ট ‘আলিমে দ্বীন, যিনি সৌদি আরবের— “মাজলিস হাইয়াত কিবারুল ‘উলামা” (সিনিয়র স্কলার্স কাউন্সিল)-এর সদস্য এবং যিনি সৌদির রিয়াদ্বের সুপ্রিম কোর্টসহ অন্যান্য আদালতের বিচারকার্যও করে থাকেন— আল-‘আল্লামাহ, আশ-শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘উবাইকান (হাফিযাহুল্লাহ) ‘আক্বীদাহ-মানহাজের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ ও ইখতিলাফের (মতানৈক্য) ব্যাপারে চমৎকার কথা বলেছেন। নিম্নে দেয়া হলো,

    “বস্তুত, যেই ইজতিহাদ ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের সাথে সম্পৃক্ত তাতে ইখতিলাফ (মতানৈক্য) করা জায়েয নেই। এটি আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের মধ্যে তখনকার সময়ে ঘটেনি অথবা আবু বকর ও ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-দের সময়ে ঘটেনি। বস্তুত, সাহাবীরা একই ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের উপর ছিলেন।”

    “‘আক্বীদাহ ও মানহাজের ব্যাপারে ইজতিহাদের জন্য তার জন্য কোনো সৌভাগ্য বা পুরষ্কার নেই, যে এই ব্যাপারে ইজতিহাদ প্রয়োগ করে। বরং শুধুমাত্র টেক্সটে বা দলীলে যা উল্লেখ করা হয়েছে তাতেই থেমে থাকা ওয়াজিব বা জরুরী (অর্থাৎ ‘আক্বীদাহ-মানহাজের ব্যাপারে)।”

    “…‘আক্বীদাহ ও মানহাজের ব্যাপারে ইজতিহাদ করার কোনো স্থান নেই। বরং সালাফুস-সালিহীনদের মানহাজকে রক্ষা করা এবং সেসব বিবেচিত স্কলার্স বা ‘উলামাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকা ওয়াজিব, যারা এই মানহাজের বিষয়ে জ্ঞানী এবং বিশুদ্ধ ও দুর্বলের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম।”

    [www.salafitalk.net থেকে অনূদিত]


    বিশিষ্ট ‘আলিমে দ্বীন, আশ-শাইখ তারাহীব আদ-দারসী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়: “তাদের প্রতি আমাদের কিরূপ জবাব হওয়া উচিত যারা বলে, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের (মুসলিমদের) ‘আক্বীদাহ একই ততক্ষণ পর্যন্ত একই মানহাজে না থেকেও আমাদের উচিত ঐক্য করা এবং একসঙ্গে কাজ করা”?”

    শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)-এর উত্তরে বলেন যে, “এটি ত্রুটিপূর্ণ বিষয়। ‘আক্বীদাহ এবং মানহাজ একই জিনিস। যার মানহাজ বিশুদ্ধ তার ‘আক্বীদাহও বিশুদ্ধ।”

    তিনি আরও বলেন: “যেমন উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ কিভাবে দৃঢ় থাকবে সেটির একটি অবস্থান রয়েছে (অর্থাৎ আল্লাহর নাম ও সিফাত সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহদের অবস্থান)। আরেকটি ইস্যু হলো যে তারা (আহলুস সুন্নাহ) কাউকে তাদের গুনাহের জন্য (যেমন কবিরা গুনাহ) কাফির বলে ঘোষণা করে না। কাজেই এই ইস্যুগুলো উভয়ই ‘আক্বীদাহ এবং মানহাজ। তাদের উভয়েরই কানেকশন রয়েছে। কাজেই একটিকে বিবেচনা করে (মানহাজ বাদ দিয়ে) বলা যায় না যে তার ‘আক্বীদাহ শুদ্ধ এবং তা ক্বুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী। যেমন উদাহরণস্বরূপ, সে বলে তার মানহাজে সে একজন সূফী এবং সে তা দিয়ে আল্লাহর ‘ইবাদাত করে যা আল্লাহ বিধিবদ্ধ করে দেননি। যদি সে সুন্নী হয়ে থাকে তাহলে সে সূফী নয়। আর যদি সে সূফী হয়ে থাকে তাহলে সে সুন্নী নয়।”

    [www.salafitalk.net থেকে অনূদিত]

    •আহলুল ‘ইলমদের তথ্যবহুল বক্তব্য থেকে এক্ষণে নিশ্চয়ই হয়ত অনুধাবন করতে পেরেছেন যে মানহাজ কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং একে অবহেলার সাথে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, ‘‘আক্বীদাহ ঠিক থাকলেই হলো আর মানহাজের দরকার নেই, মানুষ ‘আক্বীদাহ বা তাওহীদ আগে শিখুক, ‘আক্বীদাহ বা তাওহীদের খবর নেই আর আসছে মানহাজ নিয়া…’ এইধরনের কথাবার্তা কতই না মূর্খতাপূর্ণ। বরং ‘আক্বীদাহ-তাওহীদ বুঝতে গেলে তথা দ্বীনের ব্যাপারে যে কোনোকিছুই বুঝতে গেলে, শিখতে গেলে, গ্রহণ করতে গেলে, প্রয়োগ করতে গেলে, দা‘ওয়াহর কাজ করতে গেলে...অর্থাৎ দ্বীনের ব্যাপারে যাবতীয় সবকিছুই মানহাজের মাধ্যমেই শিখতে হবে, বুঝতে হবে, গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োগ করতে হবে, দা‘ওয়াহর কাজ করতে হবে। আর সেই মানহাজটি হতে হবে সালাফুস-সালিহীনদের মানহাজ অনুযায়ী তথা মানহাজ আস-সালাফিয়্যাহ তথা সালাফী মানহাজ। নতুবা ভিন্ন মানহাজ অনুযায়ী হতে গেলেই তা ভ্রষ্টতা ও গোমরাহিতে পর্যবসিত হবে। আর প্রতিটি গোমরাহীর স্থান জাহান্নাম। কাজেই, দ্বীনের ব্যাপারে আমরা সবাই যাতে সালাফুস-সালিহীনদের মানহাজের উপর অটল ও অবিচল থাকি।

    আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দিন।

    •অনুবাদক: আবু ত্বহা
    facebook.com/SunniSalafiAthari