অনুধাবন করুন
بسم الله الرحمن الرحيم
إِنَّ الْحَمْدَ ِللهِ نَحْمَدُهُ
وَنَسْتَعِيْنُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ
فَلاَ هَادِىَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ
شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ
আল্লাহ বলেন,
وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِىْ
‘আর তুমি ছালাত কায়েম কর আমাকে স্মরণ করার জন্য’ (ত্বোয়া-হা ২০/১৪)।
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)
অনুধাবন করুন
সম্মানিত মুছল্লী !
অনুধাবন করুন আপনার প্রভুর বাণী- ‘সফলকাম
হবে সেই সব মুমিন যারা ছালাতে রত থাকে ভীত সন্ত্রস্ত ভাবে’।[1] অতএব
গভীরভাবে চিন্তা করুন! আপনার প্রভু আল্লাহ কিজন্য আপনাকে সৃষ্টি করেছেন?
মনে রাখবেন তিনি আপনাকে বিনা প্রয়োজনে সৃষ্টি করেননি। তাঁর সৃষ্ট এ সুন্দর
সৃষ্টি জগতকে সুন্দরভাবে আবাদ করার দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়েই তিনি আপনাকে এ
পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। কে এখানে কত বেশী সুন্দর আমল করে এবং তার
সৃষ্টিকর্তার হুকুম যথাযথভাবে পালন করে, তা পরীক্ষার জন্য আল্লাহ মউত ও
হায়াতকে সৃষ্টি করেছেন।[2] আপনার হাত-পা, চক্ষু-কর্ণ, নাসিকা-জিহবা
সর্বোপরি যে মূল্যবান জ্ঞান-সম্পদ এবং ভাষা ও চিন্তাশক্তির নে‘মত দান করে
আপনাকে আপনার প্রভু এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তার যথার্থ ব্যবহার আপনি করেছেন
কি-না, তার কড়ায়-গন্ডায় হিসাব আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার নিকটে দিতে
হবে।[3]
কেউ আপনার উপকার করলে আপনি তার নিকটে চির
কৃতজ্ঞ থাকেন। সর্বপ্রদাতা আল্লাহর নিকটে আপনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কি?
একবার ভেবে দেখুন দুনিয়ার সকল সম্পদের বিনিময়ে কি আপনি আপনার ঐ সুন্দর
দু’টি চক্ষুর ঋণ শোধ করতে পারবেন? পারবেন কি আপনার দু’টি হাতের, পায়ের,
কানের বা জিহবার যথাযথ মূল্য দিতে? আপনার হৃৎপিন্ডে যে প্রাণবায়ুর অবস্থান,
সেটি কার হুকুমে সেখানে এসেছে ও কার হুকুমে সেখানে রয়েছে? আবার কার হুকুমে
সেখান থেকে বেরিয়ে যাবে? [4] সেটির আকার-আকৃতিই বা কি, তা কি কখনও আপনি
দেখতে পেয়েছেন? শুধু কি তাই? আপনার পুরো দেহযন্ত্রটাই যে এক অলৌকিক সৃষ্টির
অপরূপ সমাহার। যার কোন একটি তুচ্ছ অঙ্গের মূল্য দুনিয়ার সবকিছু দিয়েও কি
সম্ভব?
অতএব আসুন! সেই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর
প্রতি মন খুলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তাঁর প্রেরিত মহান ফেরেশতা জিব্রীলের
মাধ্যমে শিখানো ও শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) প্রদর্শিত পদ্ধতিতে ‘ছালাত’ আদায়ে
রত হই।[5] স্বীয় প্রভুর নিকটে আনুগত্যের মস্তক অবনত করি।
হে মুছল্লী!
ছালাতের নিরিবিলি আলাপের সময় আপনি আপনার
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিকটে হৃদয়ের দুয়ার খুলে দিন।[6] ছালাত শেষ করার আগেই
আপনার সকল প্রার্থনা নিবেদন করুন। সিজদায় লুটিয়ে পড়ে চোখের পানি ফেলুন।
আল্লাহ আপনার হৃদয়ের কথা জানেন। আপনার চোখের ভাষা বুঝেন। ঐ শুনুন পিতা
ইবরাহীম (আঃ)-এর আকুল প্রার্থনা- ‘প্রভু হে! নিশ্চয়ই আপনি জানেন যা কিছু
আমরা হৃদয়ে লুকিয়ে রাখি ও যা কিছু আমরা মুখে প্রকাশ করি। আল্লাহর নিকটে
যমীন ও আসমানের কোন কিছুই গোপন থাকেনা’।[7] অতএব ভীতিপূর্ণ শ্রদ্ধা ও গভীর
আস্থা নিয়ে বুকে জোড়হাত বেঁধে বিনীতভাবে আপনার মনিবের সামনে দাঁড়িয়ে যান।
দু’হাত উঁচু করে রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণ
করুন। অতঃপর তাকবীরের মাধ্যমে স্বীয় প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করুন। যাবতীয়
গর্ব ও অহংকার চূর্ণ করে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে রুকূতে মাথা ঝুঁকিয়ে
দিন। তারপর সিজদায় গিয়ে মাটিতে মাথা লুটিয়ে দিন। সর্বদা স্মরণ রাখুন তাঁর
অমোঘ বাণী- ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে আমি তোমাদেরকে অবশ্যই বেশী
করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে জেনে রেখ আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’। [8]
তিনি বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য অন্তরকে খালি করে নাও।
আমি তোমার হৃদয়কে সচ্ছলতা দ্বারা পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে
দেব। কিন্তু যদি তুমি সেটা না কর, তাহ’লে আমি তোমার দু’হাতকে (দুনিয়াবী)
ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব মিটাবো না’।[9]
অতএব আসুন! আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ও
জান্নাত লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত ও প্রার্থনার অনুষ্ঠান
‘ছালাতে’ রত হই ‘তাকবীরে তাহরীমা’-র মাধ্যমে দুনিয়ার সবকিছুকে হারাম করে
একনিষ্ঠভাবে বিনম্রচিত্তে বিগলিত হৃদয়ে!!
0 Comments