৭. খানাপিনার আদব ও দো‘আ
প্রথমে সতর্ক হতে হবে যে, খাদ্যটি হালাল ও পবিত্র (ত্বাইয়িব) কি-না (বাক্বারাহ ২/১৬৮)।
নইলে তা খাবে না। অতঃপর খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালভাবে ডান হাত ধুয়ে নিবে।
ধোয়া হাত দিয়ে অন্য কিছু ধরলে খাওয়ার শুরুতে পুনরায় হাত ধুবে। যেন অলক্ষ্যে
সেখানে কিছু লেগে না থাকে। ঘুম থেকে উঠে এলে অবশ্যই আগে মিসওয়াক করে নিবে।
অতঃপর খাওয়ার শেষে দাঁতে খিলাল করবে ও খাদ্য কণা বের করে ফেলে দিবে। কেননা
এগুলি থাকলে পচে পোকা হয় এবং তা পেটে গিয়ে পেট নষ্ট করে। অবশেষে পেট ও
দাঁত দু’টিই বিনষ্ট হয়। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে।
(ক) খানাপিনার শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তুমি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’
বল। ডান হাত দিয়ে খাও ও নিকট থেকে খাও, মাঝখান থেকে নয়।[76] বাম হাতে খাবে
না বা পান করবে না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে। [77]
(খ) খাদ্য পড়ে গেলে সেটা
ছাফ করে খাও। শয়তানের জন্য রেখে দিয়ো না। খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার পূর্বে
ভালভাবে প্লেট ও আঙ্গুল চেটে খাও। কেননা কোন খাদ্যে বরকত আছে, তোমরা তা
জানো না’।[78] অনেকে প্লেট ধুয়ে খান। কেউ আঙ্গুল দিয়ে প্লেট না চেটে সরাসরি
জিভ দিয়ে প্লেট চাটেন। এগুলি স্রেফ বাড়াবাড়ি। খাওয়ার শেষে ভালভাবে (সাবান
ইত্যাদি দিয়ে) হাত ধুয়ে ফেলবে। যেন সেখানে কিছুই লেগে না থাকে। [79]
(গ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
ভান্ডের মুখে মুখ লাগিয়ে এবং দাঁড়িয়ে খেতে ও পানি পান করতে নিষেধ
করেছেন।[80] তবে তিনি যমযমের পানি এবং ওযূ শেষে পাত্রে অবশিষ্ট পানি
দাঁড়িয়ে পান করেছেন।[81] পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ফেলবে না বরং তিনবার
বাইরে শ্বাস ফেলবে (ও ধীরে ধীরে পানি পান করবে)।[82]
(ঘ) খাদ্য পরিবেশনের সময় ডান দিক থেকে শুরু করবে।[83]
(ঙ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, আদম সন্তানের জন্য কয়েক লোকমা খাদ্য যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার কোমর
সোজা রাখতে পারে (ও আল্লাহর ইবাদত করতে পারে)। এরপরেও যদি খেতে হয়, তবে
পেটের তিনভাগের এক ভাগ খাদ্য ও একভাগ পানি দিয়ে ভরবে এবং একভাগ খালি রাখবে
শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য’। [84] তিনি বলেন, এক মুমিনের খানা দুই মুমিনে খায়।
দুই মুমিনের খানা চার মুমিনে খায় এবং চার মুমিনের খানা আট মুমিনে খায়
(অর্থাৎ সর্বদা সে পরিমাণে কম খায়)।[85] কেননা মুমিন এক পেটে খায় ও কাফের
সাত পেটে খায় (অর্থাৎ সে সর্বদা বেশী খায়)।[86]
(চ) কাত হয়ে বা ঠেস দিয়ে খেতে নেই।[87]
(ছ) খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না বললে শয়তান তার সাথে খায়।[88]
(জ) খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে (শেষ হওয়ার আগেই) বলবে, بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهُ وَآخِرَهُ ‘বিসমিল্লা-হি আউওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ’ (আল্লাহর নামে এর শুরু ও শেষ)।[89]
(ঝ) খাওয়া ও পানি পান শেষে বলবে, (১) الْحَمْدُ ِللهِ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। [90] অথবা বলবে, (2) الْحَمْدُ ِللهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّيْ وَلاَ قُوَّةٍ-
(২) আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানী হা-যা ওয়া রাঝাক্বানীহি মিন গায়রে হাওলিম মিন্নী ওয়ালা ক্বুউওয়াতিন’
(সেই আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, যিনি আমাকে আমার ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই এই
খাবার খাইয়েছেন এবং এই রূযী দান করেছেন)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে
ব্যক্তি খাওয়ার পরে এটি পাঠ করবে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হবে।[91]
অথবা বলবে, (3) اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ-
(৩) আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া আত্ব‘ইমনা খায়রাম মিনহু’ (‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য এই খাদ্যে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চাইতে উত্তম খাওয়াও’)।[92]
(৪) দুধ পান শেষে বলবে, اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ-
আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া ঝিদনা মিনহু’
(হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দান কর এবং এর চাইতে আরো বৃদ্ধি
করে দাও)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এটা এ কারণে যে, দুগ্ধ ব্যতীত খাদ্য ও
পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়, এমন কোন খাদ্য নেই।[93]
এছাড়াও খানাপিনার অন্যান্য দো‘আ রয়েছে।
(ঞ) খাওয়া শেষে প্লেট বা দস্তারখান উঠানোর সময় বলবে, اَلْحَمْدُ ِللهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِِ আলহামদুলিল্লা-হি হামদান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’... (আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা, যা অগণিত, পবিত্র ও বরকত মন্ডিত...)। [94]
(ট) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিষ্টি ও মধু পসন্দ করতেন।[95]
0 Comments