জিজ্ঞাসা-৪০:কিয়াম করা জায়েজ আছে কি না। না থাকলে দলীল কি?-ইমদাদুল হক
(কিয়াম একটি আরবি শব্দ যার অর্থ দন্ডায়মান হওয়া/দাঁড়ানো )
জবাব: আখেরি
নবী ও শ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ সা. এর প্রতি ভালবাসা ও গভীর মহব্বত
রাখা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। তবে উক্ত ইবাদত
অবশ্যই সে পদ্ধতিতে করতে হবে, যে পদ্ধতি স্বয়ং নবীজী সা., সাহাবায়ে
কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন। তারপর সাহাবায়ে কেরাম রা. তাবেঈনদের শিক্ষা
দিয়েছেন এবং তাবেঈনগণ পরবর্তীদের শিখিয়ে গেছেন। মনগড়া বা ভিত্তিহীন কোনো
তরীকায় করলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না। এ জন্যই রাসূল সা. এর জীবনাদর্শ
আহকামে দীন ও শরীয়ী বিধি-বিধান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রত্যেক
মুসলমানের জন্য ফরজ।সুতরাং রাসূল সা.-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা সওয়াব ও বরকতের বিষয় এবং মহান দীনী কাজ হলেও দেশের শরীয়তের নিয়ম-নীতি সম্পর্কে কোনো কোনো শ্রেণীর লোকেরা ‘মীলাদ শরিফ’ নামে সম্মিলিত সুরে গদভাধা কিছু পাঠের অনুষ্ঠান এবং কিয়ামের যে রীতি চালু করেছে, তার কোনো ভিত্তি কুরআন-হাদীসে, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের সোনালী যুগে পাওয়া যায় না। অথচ সর্বস্বীকৃত সত্য হলো, তারাই ছিলেন প্রকৃত নবীপ্রেমী খাঁটি আশেকে রাসূল এবং নবীজী সা. এর আদর্শের পরিপূর্ণ অনুসারি ও বাস্তব নমুনা।
প্রচলিত এই মিলাদ ও কিয়ামের উদ্ভব ঘটে ৬০৪ হিজরি সনে। ইরাকের মাসূল শহরের বাদশা আবু সাঈদ মুজাফ্ফর কাকরী এবং তার দরবারি আলেম আবু খাত্তাব উমর ইবনে দিহইয়া এদু’জন মিলে এর প্রচলন ঘটায়। এরা উভয়ে দীনের ব্যাপারে খুবই উদাসীন এবং ফাসিক প্রকৃতির লোক ছিল। পরবর্তীতে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও জাহালতের অন্ধকারে নিমজ্জিত শ্রেণীর লোকদের মাধ্যমে আরো অনেক কুসংস্কার, শরীয়ত বিরোধী বিশ্বাস ও কার্যাবলী এতে সংযোজিত হতে থাকে। যার সবকিছুই কুরআন-হাদিস, ইজমা-কিয়াস তথা শরীয়তের মূল প্রমাণ পরিপন্থী। তা ছাড়া মিলাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সা.কে হাজির-নাজির মনে করে কিয়াম করা তো রীতিমতো শিরক। হাজির-নাজির মনে না করলেও শরীয়তে এর ভিত্তি নেই।
এ সকল কারণে প্রচলিত মিলাদ, কিয়াম না জায়েজ ও বিদআতের অন্তর্ভুক্ত বলেই সকল হক্কানী ওলামায়ে কেরাম একবাক্যে ফতওয়া দিয়ে থাকেন। আর ইয়া নাবী সালাম আলাইকা বলে দরূদ শরীফ রাসূলে পাক সা. কে হাজির-নাজির মানে করে পাঠ করলে তো শিরক হবে।
আনাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সাহাবাদের(রাঃ) নিকট রাসূল(সাঃ) অপেক্ষা প্রিয় কেউ ছিল না। তদুপরি হৃদয়ে এত মহব্বত পোষণ করা সত্বেও যখন তাঁরা প্রিয় রাসূল(সাঃ) কে দেখতেন তখন সাহাবায়ে কেরাম(রাঃ) দন্ডায়মান হতেন না। কেননা, তাঁরা একথা ভালভাবেই জানতেন যে, রাসূল(সাঃ) কে দেখে আমরা ‘দন্ডায়মান’ হই এটি তিনি পছন্দ করতেন না.(তিরমিযী শরীফ ২/১০০ : মিশকাত শরীফ ২/৪০৩ : মুসনাদে আহমদ ৩/১৫১)
আবু উমামা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলাল্লাহ(সাঃ) লাঠিতে ভর করে ঘর থেকে বাইরে তাশরীফ নিয়ে আসেন, আমরা উপস্থিত সকলে তাঁর সম্মানে দন্ডায়মান হই। তখন তিনি এরশাদ করেন, তোমরা আজমী(অনারব) লোকদের ন্যায় কখনো দাঁড়াবে না। আজমীগণ এমনি দাঁড়িয়ে এসে অন্যকে সম্মান প্রদর্শন করে থাকে।(মিশকাত শরীফ : ৮৮,৮৯,৯০)
মু’আবিয়া(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এতে আনন্দ বোধ করে যে, লোকজন তার সম্মানে মূর্তির ন্যয় দাঁড়িয়ে থাকুক, তার জন্য উচিৎ যে, সে জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়।(আবু দাউদ, তিরমিযী)
@বিশ্ববরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ কোরআন ও হাদিসের অন্যতগ গবেষক সৌদি আরবের ‘গবেষনা-ইফতা-দাওয়াত ও ইরশাদ বিভাগ’ এর প্রধান শায়খ আবদুল আজীজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায তাঁর গ্রন্থে লেখেন, আমার জেনে খুবই দুঃখ হয় যে এরুপ বিদ’আতী(মিলাদ) অনুষ্ঠান এমন সব মুসলিম দ্বারা সংঘঠিত হচ্ছে যারা তাদের রাসূল(সাঃ) এর মহব্বতের ব্যাপারে খুবই দৃঢ়তা রাখেন। মিলাদের প্রবক্তাকে বলছি যদি আপনি সুন্নি হন ও মুহাম্মাদ(সাঃ) এর অনুসারী হওয়ার দাবি রাখেন তাহলে বলুন তিনি নিজে বা তাঁর কোন সাহাবী(রাঃ) বা তাঁদের সঠিক অনুসারী কোন তাবেঈ কি এ কাজটি করেছেন, না এটা ইয়াহুদি ও খৃষ্টান বা তাদের মত অন্যান্য আল্লাহর শত্রুদের অন্ধ অনুকরণ ? এ ধরণের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর প্রতি ভালবাসা প্রতিফলিত হয় না। যা করলে তাঁর ভালবাসা প্রতিফলিত হয় তা হল তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, যা কিছু তিনি বলেছেন তা বিশ্বাস করা এবং যা কিছু তিনি নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা। আল্লাহ যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন কেবল সেভাবেই তাঁর উপাসনা করা।
[আরো দেখুন,ফাতাওয়া শামী ১/৫২৪,এমদাদুল ফাতাওয়া ৬/৩২৭ আহসানুল ফাতাওয়া ১/৩৪৭,আল জুন্নাহ লিআহলিস সুন্নাহ,
১৭৮,দপ্তরে আউয়াল, মাকতুবাত, ২৭৩,ফাতাওয়ায়ে আযীযী১৯৯,আশ শারআতুল ইলাহিয়্যা, ১৭৭;
মাদখান ২/১০]
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী
About সহীহ-আকিদা(RIGP)
0 Comments