মাওলানা মওদুদীর হাদিস অস্বীকার -১ম পর্ব

মাওলানা মওদুদীর হাদিস অস্বীকার! [ ১ম পর্ব ]
দ্বীন কায়েম, খিলাফত প্রতিষ্ঠা, ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের অপব্যাখ্যা দিয়ে কথিত ‘ইসলামিক আন্দোলন’ এর মতাদর্শ প্রচারকারী তথা জাম'আতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদীর লিখিত 'রাসায়েল ও মাসায়েল' নামক গ্রন্থে 'কানা দাজ্জাল' নিয়ে জৈনক ব্যক্তির সাথে একটি কথোপকথন রয়েছে !
নিম্নে হুবহু তা তুলে ধরা হল:
"কানা দাজ্জাল সম্পর্কে মাওলানা মওদুদী বলেন, তথাকথিত 'কানা দাজ্জাল' প্রভুতি তো আলৌক কাহিনী মাত্র! এসব কাহিনীর কোন শরয়ী মর্যাদা নেই! আর এসব জিনিস অনুসন্ধানে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই! সাধারণ মানুষের মাঝে যেসব কথা সুবিদিত রয়েছে যার কোন দ্বায়দ্বায়িত্ব ইসলামের নেই! আর এগুলোর মধ্যে কোন কিছু ভুল প্রমানিত হলেও ইসলামের কোন ক্ষতি নেই!
জৈনক ভদ্রলোক প্রশ্ন করেন, কানা দাজ্জাল সম্পর্কে একথা সুবিদিত রয়েছে যে,সে কোথাও বন্দি রয়েছে। তবে সেটা কোন জায়গা? মানুষ আজ তো বিশ্বের প্রতিটি কোনা খুঁজে বের করেছে, তারপরও কেন 'কানা দাজ্জাল' অবিস্কৃত হয় নি?
এর জবাবে আপনি [ মাওলানা মওদুদীকে সম্মোধন করে বলেছেন, তথাকথিত কানা দাজ্জাল তো গল্প/কাহিনী মাত্র! এর কোন শরীহ ভিত্তি নেই"! অথচ আমি যতদূর জানি ত্রিশটি হাদিসে দাজ্জালের কথা উল্লেখ্য রয়েছে! যার সত্যতা প্রমানে বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, শরহে সুন্নাহ, বায়হাকি দেখা যেতে পারে! এরপরেও আপনার যোক্তিকতা কোন সনদের উপর প্রতিষ্ঠিত?
জবাবে মাওলানা মওদুদী বলেন :
দাজ্জাল কোথাও বন্দি আছে এই ধারণাকে আমি [ পুনরায় ] গল্প কাহিনী বলেই আখ্যায়িত করছি! কানা দাজ্জাল বলতে কিছু নেই । এগুলো সব আফসানা' অর্থাৎ, গল্প - কাহিনী মাত্র ।
সোর্সঃরাসায়েল ও মাসায়েল : ঊর্দু ছাপা , পৃ :৩৫--৩৯তরজুমানুল কুরআন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যা ১৯৪৫ ।
.
নিবন্ধকের মন্তব্য:
এভাবেই মওদুদী সাহেব ' নিজের আক্বল'কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সহীহ হাদীছকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন! আর উন্মুক্ত করেছেন হাদিস অস্বীকারীদের জন্য চোরাগুপ্তা পথ!
.
আসলেই কি 'দাজ্জাল' বলতে কিছু নেই?
এসব কি আফসানা' অর্থাৎ, গল্প, কাহিনী?
তাহলে এর সাথে আরেকটি প্রশ্ন এসে যায়, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাহকে মিথ্যা গল্প, কাহিনী শুনিয়েছেন? [ নাউ'যুবিল্লাহ ]
.
পর্যালোচনা:
'দাজ্জাল কোথায় আছে এবং সে দেখতে কেমন' এ সম্পর্কে আমরা কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদিস উল্লেখ করব [ ও'য়া তাওফ্বিকি ইল্লা বিল্লাহ ] যা মনোযোগ সহকারে পড়লে, সহজেই বুঝতে পারবেন 'মাওলানা সাহেবের ' বিশুদ্ধ হাদিসকে অস্বীকার করতঃ প্রকারান্তরে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'এর প্রতি মিথ্যা আরোপের ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন !
.
আখেরী যামানায় কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সমস্ত নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। আমাদের নবী [সা.]ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন।
হাদিস: (এক)
ইবনে উমার [রা.] নবী [সা.] হতে বর্ণনা করেন,
قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ
একদা নবী [সা.] দাড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন।
হাদিস: (দুই)
নাওয়াস বিন সামআন [রা.] বলেন
,ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدَّجَّالَ ذَاتَ غَدَاةٍ فَخَفَّضَ فِيهِ وَرَفَّعَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ قَالَ فَانْصَرَفْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَيْهِ فَعَرَفَ ذَلِكَ فِينَا فَقَالَ مَا شَأْنُكُمْ قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَكَرْتَ الدَّجَّالَ الْغَدَاةَ فَخَفَّضْتَ فِيهِ وَرَفَّعْتَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ قَالَ غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُ لِي عَلَيْكُمْ إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
একদা রাসূল [সা.] সকাল বেলা আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করলেন। তিনি তার ফিতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম নিকটস্থ খেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়ত অবস্থান করছে। আমরা রাসূল [সা.]এর নিকট থেকে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা আবার তাঁর কাছে গেলাম। এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কি হলো? আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যেভাবে দাজ্জালের আলোচনা করেছেন তা শুনে আমরা ভাবলাম হতে পারে সে খেজুরের বাগানের ভিতরেই রয়েছে। নবী [সা.] বললেন, দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের উপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমণ করে তাহলে তোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার বিরুদ্ধে ঝগড়া করবো। আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি সে আগমণ করে তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাযত করবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাযতকারী হিসেবে যথেষ্ট। [তিরমিজি, অধ্যায় কিতাবুল ফিতান]
.
হাদিস: (তিন),
আয়েশা [রা.] বলেন, আমি নবী [সা.]কে নামাযের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি, তিনি নামাযের শেষ তাশাহুদে বলতেন
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব, জীবন-মরণের ফিতনা এবং মিথ্যুক দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।
[বুখারি, অধ্যায় কিতাবুল ফিতান]

হাদিস: (চার),
ফাতেমা বিনতে কায়স রাদিয়াল্লাহু আ’নহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে গমণ করে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে নামায আদায় করলাম। আমি ছিলাম মহিলাদের কাতারে। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে মিম্বারে উঠে বসলেন। প্রথমেই তিনি বললেন, “প্রত্যেকেই যেন আপন আপন জায়গায় বসে থাকে।
অতঃপর তিনি বললেন, “তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি?” তাঁরা বললেন, “আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল-ই ভাল জানেন।”
অতঃপর তিনি বললেন, “আমি তোমাদেরকে এই সংবাদ দেয়ার জন্যে একত্রিত করেছি যে, তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার কাছে আগমন করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছে, যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম।
লাখম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশ জন লোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানে একটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটা এবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হলনা।
তারা বলল, “তোমার অকল্যাণ হোক। তুমি কে?” সে বললো, “আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা।” তারা বললো, “কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?”
অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললো, “হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।”
তামীম দারী বলেন, “প্রাণীটি যখন একজন লোকের কথা বললো, তখন আমাদের ভয় হলো যে, হতে পারে সে একটি শয়তান। তথাপিও আমরা ভীত হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে ঘরটির ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে প্রবেশ করে আমরা বৃহদাকার একটি মানুষ দেখতে পেলাম। এত বড় আকৃতির মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাত দু’টিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে। আমরা বললাম, তোমার ধ্বংস হোক! কে তুমি?”
সে বললো, “তোমরা আমার কাছে আসতে সক্ষম হয়েছ। তাই আগে তোমাদের পরিচয় দাও।”
আমরা বললাম, “আমরা একদল আরব মানুষ নৌকায় আরোহন করলাম। সাগরের প্রচন্ড ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করলো। অবশেষে তোমার দ্বীপে উঠতে বাধ্য হলাম। দ্বীপে প্রবেশ করেই প্রচুর পশম বিশিষ্ট এমন একটি জন্তুর সাক্ষাৎ পেলাম, প্রচুর পশমের কারণে যার অগ্রপশ্চাৎ চেনা যাচ্ছিলনা। আমরা বললামঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা। আমরা বললামঃ কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?
অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে এই ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের নিকট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাই আমরা তার ভয়ে তোমার কাছে দ্রুত আগমণ করলাম। হতে পারো তুমি একজন শয়তান, এ ভয় থেকেও আমরা নিরাপদ নই।”
সে বললো, আমাকে তোমরা ‘বাইসান’ সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকে বললামঃ বাইসানের কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো? সে বললো, আমি তথাকার খেজুরের বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। সেখানের গাছগুলো এখনও ফল দেয়? আমরা বললামঃ হ্যা। সে বললোঃ সে দিন বেশী দূরে নয়, যে দিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবেনা।
অতঃপর সে বললোঃ আমাকে বুহাইরাতুত-তাবারীয়া সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকে বললামঃ বুহাইরাতুত-তাবারীয়ার কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো? সে বললোঃ আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? আমরা বললামঃ তথায় প্রচুর পানি আছে। সে বললোঃ অচিরেই সেখানকার পানি শেষ হয়ে যাবে।
সে পুনরায় বললো, আমাকে যুগার নামক ঝর্ণা সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকে বললাম, সেখানকার কি সম্পর্কে তুমি জানতে চাও? সে বললোঃ আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? লোকেরা কি এখনও সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে? আমরা বললামঃ সেখানে প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে।
সে আবার বললো, আমাকে উম্মী (নিরক্ষর জাতির) নবী সম্পর্কে জানাও। আমরা বললামঃ সে মক্কায় আগমণ করে বর্তমানে মদ্বীনায় হিজরত করেছে। সে বললো, আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে? বললামঃ হ্যাঁ। সে বললো, ফলাফল কি হয়েছে? আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, পার্শ্ববর্তী আরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, তাই না কি? আমরা বললাম তাই। সে বললো, তার আনুগত্য করাই তাদের জন্য ভাল।
এখন আমার কথা শুনো:
“আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদ্বীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদ্বীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই ফেরেশতাগণ কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদ্বীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।
হাদীসের বর্ণনাকারী ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করতে করতে বললেনঃ এটাই হচ্ছে মদীনা, এটাই হচ্ছে মদীনা, এটাই হচ্ছে মদীনা।” অর্থাৎ এখানে দাজ্জাল আসতে পারবেনা।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে লক্ষ্য করে বললেন, তামীম দারীর হাদীসটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদীনা সম্পর্কে।
শুনে রাখো! সে [ কানা দাজ্জাল ] আছে শাম দেশের সাগরে (ভূমধ্য সাগরে) অথবা আরব সাগরে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। এই বলে তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ “আমি এই হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে মুখস্থ করে রেখেছি।”
সূত্র:[ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী, হাদিস নম্বরঃ ৭১১৯ 

হাদিস: (পাঁচ),
সহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারইয়াম [আ.]-এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। বিস্তারিত বিবরণ এই যে, মক্কা-মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই সে প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা [আ.] আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময় বায়তুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা [আ.] ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা [আ.]-কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা [আ.] তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ “তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবেনা। ঈসা [আ.] তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন।
অতঃপর মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।
সুত্রঃ [নেহায়া, আল-ফিতান ওয়াল মালাহিম ১/১২৮-১২৯]
.
প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার আদেশ দিয়েছেন। দাজ্জাল বের হওয়া, তার ফিতনা এবং তার ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনার ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্রে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আখেরী যামানায় তার বের হওয়ার উপর আলেমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে। আলিমগন আকীদাহ সংক্রান্ত আলোচনার সাথেই দাজ্জালের আলোচনা করেছেন। যে ব্যক্তি দাজ্জালের আগমণ অস্বীকার করবে, সে মুতাওয়াতের সূত্রে বর্ণিত সহীহ হাদীছসমূহের বিরোধীতাকারী হিসেবে গণ্য হবে। সেই সঙ্গে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিরোধীতাকারী বলে গণ্য হবে। খারেজী, জাহমীয়া, কতিপয় মুতাযেলা এবং মাওলানা মওদুদীর মত সমসাময়িক কিছু লেখক ও স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবি ছাড়া অন্য কেউ দাজ্জালের আগমণ অস্বীকার করেনি। এ ব্যাপারে তাদের নিকট বিবেক-বুদ্ধি ও প্রবৃত্তির অনুসরণ ছাড়া আর কোনো দলীল নেই। এইজন্যই এসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের কথার কোনো মূল্য নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তাআ'লা ও তাঁর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, মুমিনদের উপর তা বিশ্বাস করা এবং তাকে আকীদাহ হিসেবে গ্রহণ করা আবশ্যক। তারা যেন ঐসব লোকের অন্তর্ভুক্ত না হন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
بَلْ كَذَّبُوا بِمَا لَمْ يُحِيطُوا بِعِلْمِهِ وَلَمَّا يَأْتِهِمْ تَأْوِيلُهُ
“বরং তারা এমন বিষয়কে অস্বীকার করেছে, যা তারা জ্ঞান দ্বারা আয়ত্ত করতে পারেনি। তাদের কাছে এখনো উহার পরিণাম ফল আগমণ করেনি”।
[ সূরা ইউনুসঃ ৩৯]
কেননা আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনায়নের দাবি অনুসারে তাদের থেকে যা এসেছে, তা সম্পূর্ণরূপে মেনে নেয়া এবং তার প্রতি পরিপূর্ণরূপে ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি তা করবেনা, সে আল্লাহর হেদায়াত ছাড়াই স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসারী হিসেবে গণ্য হবে।
[ চলবে ইনশা'আল্লাহ ]

Post a Comment

0 Comments