প্রশ্ন ইন্ডিয়াতে আমরা রোযার নিয়ত করি এভাবে: "আল্লাহুম্মা আসুমু জাদ্দান লাকা ফাগফির লি মা কাদ্দামতু ওয়ামা আখ্খারতু" আমি জানি না এর অর্থ কী? কিন্তু, এভাবে নিয়ত করা কি সহিহ? যদি সহিহ হয়, তাহলে আশা করি আপনারা আমাকে এর অর্থ জানাবেন কিংবা কুরআন বা সুন্নাহ থেকে সহিহ নিয়তটি জানাবেন।
- উত্তর
- আলহামদু লিল্লাহ।রমযানের রোযা কিংবা অন্য কোন ইবাদত নিয়ত ছাড়া শুদ্ধ হয় না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হচ্ছে: "আমলসমূহ নিয়ত দ্বারা হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই তার প্রাপ্য..."[সহিহ বুখারী (১) ও সহিহ মুসলিম (১৯০৭)]নিয়তের ক্ষেত্রে শর্ত হল: রাত থাকতে ও ফজরের আগেই নিয়ত করা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোযার নিয়ত পাকাপোক্ক করেনি তার রোযা নেই"।[সুনানে তিরমিযি (৭৩০)] আর সুনানে নাসাঈ (২৩৩৪)-এর ভাষ্য হচ্ছে- "যে ব্যক্তি রাতের বেলায় রোযার নিয়ত করেনি তার রোযা নেই।"[আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে (৫৮৩) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]নিয়ত হচ্ছে অন্তরের আমল। মুসলিম ব্যক্তি অন্তরে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিবে যে, আগামীকাল সে রোযা রাখবে। তার জন্যে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে "নাওয়াইতু সিয়াম" বা "আসুমু জাদ্দান লাকা" ...ইত্যাদি কিছু মানুষের প্রবর্তিত বিদআতী শব্দাবলী উচ্চারণ করা শরিয়তসম্মত নয়।সঠিক নিয়ত হচ্ছে ব্যক্তি অন্তরে আগামীকাল রোযা রাখার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া।তাই শাইখুল ইসলাম (রহঃ) 'আল-ইখতিয়ারাত' গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-১৯১) বলেন: "যে ব্যক্তির অন্তরে উদিত হয়েছে যে, সে আগামীকাল রোযাদার সেই নিয়ত করেছে।"[সমাপ্ত]আল্-লাজনাহ আদ্-দায়িমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল:রমযানের রোযা রাখার নিয়ত করার পদ্ধতি কিভাবে?জবাবে তারা বলেন: রোযা রাখার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে নিয়ত হয়ে যাবে। প্রতি রাতে রাত থাকতেই রোযার নিয়ত করতে হবে।[ফাতাওয়াল লাজ্নাদ্ দায়িমা (১০/২৪৬)]আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
- সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
প্রশ্ন: সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি এবং আমরা কিভাবে নিয়ত করব?
উত্তর: সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। কেননা, হাদিসে নিয়ত করার কথা এসেছে কিন্তু মুখে উচ্চারণ করার কথা আসে নি। সালাত, সওম, যাকাত, হজ্জ, ওযু, গোসল ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই নয়।
সুতরাং নিয়তের নামে গদ বাধা কতগুলো আরবী বা বাংলা বাক্য উচ্চারণ করা দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন ছাড়া অন্য কিছু নয়। যার কারণে এ সকল গদ বাধা বাক্য মুখে উচ্চারণ করা জঘণ্য বিদআত হিসেবে অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেননা প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রতিটি ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম। (আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আমীন।)
আমাদেরকে জানতে হবে যে, সেহরি খাওয়া একটি ইবাদত। আর যে কোনো ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত থাকা অপরিহার্য শর্ত। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
« إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ »
“সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহীহ বুখারীর প্রথম হাদিস)
তাই রোযা রাখার জন্য নিয়ত থাকা অপরিহার্য। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ لَمْ يُبَيِّتْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ
“যে রাতে (ফজরের আগে) রোযা রাখার নিয়ত করে নি তার রোযা হবে না।” (সুনান নাসাঈ, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।) কিন্তু জানা দরকার, নিয়ত কি বা কিভাবে নিয়ত করতে হয়?🌀 নিয়ত কি বা কিভাবে নিয়ত করতে হয়?
ইমাম নববী রাহ. বলেন: “মনের মধ্যে কোন কাজের ইচ্ছা করা বা সিদ্ধান্ত নেয়াকেই নিয়ত বলা হয়।” সুতরাং রোযা রাখার কথা মনে মধ্যে সক্রিয় থাকাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। কেননা, ইসলামী শরীয়তে কোন ইবাদতের নিয়ত মুখে উচ্চারণের কথা আদৌ প্রমাণিত নয়।
অথচ আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ওযুর নিয়ত, নামাযের নিয়ত, সেহরি খাওয়ার নিয়ত ইত্যাদি চর্চা করা হয়। নামায শিক্ষা, রোযার মাসায়েল শিক্ষা ইত্যাদি বইয়ে এ সব নিয়ত আরবিতে অথবা বাংলা অনুবাদ করে পড়ার জন্য জনগণকে শিক্ষা দেয়া হয়! কিন্তু আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, দ্বীনের মধ্যে এভাবে নতুন নতুন সংযোজনের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন:
« مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ »
“যে আমাদের এই দ্বীনে এমন নতুন কিছু তৈরি করল যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা পরিত্যাজ্য।” (বুখারী ও মুসলিম)
তাই মুসলমানদের কর্তব্য হল, দলীল-প্রমাণ ছাড়া গদ বাধা নিয়ত (নাওয়াই আন…..) সহ সব ধরণের বিদআতি কার্যক্রম পরিত্যাগ করা এবং সুন্নতকে শক্তভাবে ধারণ করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার এবং বিদআত বর্জন করার তওফিক দান করুন। আমীন।
◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
0 Comments