সুন্নাত বলতে কি বুঝায় ? গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।সুন্নাত পালনে অনীহা প্রকাশ করলে মৃত্যুর পর কি তার সাজা হবে ?
১) প্রকারভেদ
ডাঃ জাকির নায়েক, সুন্নাত শব্দের অর্থ পথ,রীতি।মহানবীর(সঃ) সুন্নত বলতে বুঝায় মুহাম্মাদ(সঃ) এর রীতি। সুন্নাহ বলতে বুঝায় তার কাজ।
মহানবীর সুন্নত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ-
ক) সুন্নাতে কাউলি (মহানবীর কথা) :- মুহাম্মাদ(সঃ) বলেছেন, “নামাজ পড়ো সেভাবে, যেভাবে আমাকে পড়তে দেখ”। এটা তার নির্দেশ উনার মুখের কথা,যেটা প্রত্যেক মুসলিমকে অনুসরন করতে হবে। বুখারী -৬৩১
খ) সুন্নাতে ফেলি(কাজ) :- হাদীসে বর্ননা করা হয়েছে যে, “যখন আমি মুহাম্মাদ(সঃ)কে নামাজ পড়তে দেখতাম,তিনি কাধ পর্যন্ত দু’হাত উচু করতেন,তারপর তাকবীর বলতেন এবং আবারও এমনটি করতেন, তারপর রুকুতে যেতেন ,তারপর দাড়িয়ে বলতেন-‘সামিয়াল্লাহহুলেমান হামিদা’। আবু দাউদ– ১২৬২
গ) সুন্নতে তাকরিরি(অনুমোদন) :- “একদা
মুহাম্মাদ(সঃ) জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করলেন।নামাজ শেষ হবার পরে এক
লোককে তিনি ২ রাকাত নামাজ পড়তে দেখলেন।তিনি তাকে ডেকে বল্লেন, তুমি ফজরে নামাজের পরে ২ রাকাত নামাজ আদায় করলে কেন ? লোকটি বল্লো ফজরের পূর্বে আমি ২ রাকাত নামাজ আদায় করতে পারিনি তাই, ফজরের পরে আদায় করলাম”। একথা শুনে মুহাম্মাদ নীরব থাকলেন”। যেহেতু তিনি নীরব থাকলেন, তার অর্থ তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। আবু দাউদ-১২৬২
২) গুরুত্ত্ব
ক) কুরআনের পরেই সুন্নাহ। “হে ঈমানদারগন ,আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মানো রাসুলের(সঃ)। সুরা নিসা-৫৯
খ) “যারা আল্লাহ রাসুলকে ও তার রাসুলকে অমান্য করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে”। সুরা জিন-২৩
গ) “তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের(সঃ) আনুগত্য কর”। সুরা মুহাম্মাদ-৩৩
ঘ) “যে রাসুলের(সঃ) হুকুম মান্য করলো, সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করলো”।
সুরা নিসা-৮০
ঙ) মুহাম্মাদ(সঃ) বলেছেন, “মুমিনদের ভিতরে কিছু লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং কিছু লোক বন্চিত হবে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলো হে আল্লাহর রাসুল কে বন্চিত হবে ? তিনি বল্লেন, তাদের মধ্যে যারা আমাকে মান্য করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যারা করেনি তারা জান্নাতে প্রবেশ থেকে বন্চিত হবে”।
বুখারী-৭২৮০
৩) অনিহা প্রকাশকারীর সাজা
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, আপনাকে
কিছু বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে।মুসলমানদের কাজ দুই ভাগে বিভক্তঃ হালাল ও
হারাম। হালাল কাজগুলো ৪ ভাগে বিভক্তঃ- ক) ফরজ খ) মুস্তাহাব(উতসাহিত করা
হয়েছে) গ) মুবাহ(ঐচ্ছিক) ও ঘ) মাকরুহ(নিরুতসাহিত করা হয়েছে)।
এই হোল মোট ৫ প্রকারের কাজ। যদি কেউ ফরয কাজগুলো করে তাহলে, সে সওয়াব পাবে, না করলে শাস্তি পাবে। মুস্তাহাব কাজ করলে সওয়াব পাবে, না করলে শাস্তি পাবেনা। মুবাহ কাজ করলে, কোন সওয়াব বা সাজা নাই। এটা শর্ত-নিরপেক্ষ। মাকরুহ কাজের ক্ষেত্রে কেউ এই কাজ না করলে, সওয়াব পাবে, কিন্তু করলে গুনাহ নাই।হারাম কাজ কেউ না করলে সওয়াব পাবে, কিন্তু করলে সাজা পাবে। এই হোল ৫ শ্রেনীর সংক্ষিপ্ত বিবরন । প্রশ্নানুযায়ী সুন্নত ২ প্রকারঃ-
প্রথমতঃ সুন্নাতের শাব্দিক অর্থ কথা,কাজ এবং মৌন-সম্মতি। এই সুন্নতগুলি ৪ প্রকার কাজের যেকোন একটি হতে পারে।উদাহরনস্বরুপ বলা যায়,ফরয কাজের আ ওতায় পড়ে এমন সুনআত হোল, মুহাম্মাদ(সঃ) ফযরের নামায, যোহরের
নামায এমনকি প্রত্যহ ৫ ওয়াক্ত ফরয নামায আদায় করতেন।সুতরাং এটি তার কাজ
ছিল। তার এই কাজটি ফরযের অন্তর্ভূক্ত এবং একই মানে সুন্নাত,মুস্তাহাব
সুন্নাতের উদাহরন হোল-মুহাম্মাদ(সঃ) ফযরের নামাযের পূর্বে ২ রাকাত
সুন্নাত নামায আদায় করতেন।কিন্তু এটা মুস্তাহাব। মুবাহ সুন্নাতের উদাহরন
হোল মুহাম্মাদ(সঃ) লম্বা পরিচ্ছদ পরিধান করতেন এবং এরকম পরা ঐচ্ছিক ছিল।
সুতরাং কেউ এরকম পোশাক পরতেও পারে নাও পারে।
মাকরুহ সুন্নাতের উদাহরন হোল, মহানবী(সঃ) বলেছেন,দাড়ান অবস্থায় পান করোনা। সুতরাং দাড়ান অবস্থায় পন করা মাকরুহ। সঠিক পন্থা হচ্ছে, বসে পানি পান করা এরকম করা মুস্তাহাব। কিন্তু একটা হাদিস আছে, মহানবী(সঃ)
দাড়ায়ে পান করেছেন। হয়তো কোন অসুবিধা ছিল। সুতরাং দাড়ায়ে পান করা
মাকরুহ। তবে প্রয়োজনে মুহাম্মাদ প্রয়োজনে মাকরুহ করেছেন। তবে এধরনের
মাকরুহের জন্য কোন শাস্তি নাই। এধরনের সুন্নাতের জন্য কোন শাস্তি
নাই।এগুলোকেবলে, ‘লুগুয়ি’ সুন্নাত।
দ্বিতীয়তঃ ‘ফিকহী সুন্নাত এটা মুস্তাহাবের দ্বিতীয় পর্যায়ের।ফজরের পূর্বে ২ রাকাত নামায,দাড়ায়ে পানি পান করা ইত্যাদি মূলতঃ ‘ফিকহী’ সুন্নাহর অন্তর্ভূক্ত। যখন লোকেরা বলে যে, মুহাম্মাদ(সঃ) ফজর,যোহর আসর ইত্যাদি আমাযের আগে ২ রাকাত নামায আদায় করতেন এবং মূলতঃ তারা তাই করে, মূলত এটা মুস্তাহাবের মধ্যে পড়ে।সুতরাং ‘ফিকহী’ সুন্নাত হচ্ছে মুস্তাহাব। মুস্তাহাব ২ প্রকারঃ ক) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা খ) গাইরে মুয়াক্কাদা।
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা অধিক গুরুত্বপূর্ন। ফজরের নামাজের আগে ২ রাকাত নামায আদায় করা ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা’।কেউ যদি ‘ফিকহী সুন্নাত’ আদায় করে তবে,সে স- ওয়াব পাবে।আর যদি ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা’ পালন করে তবে আরও বেশী সওয়াব পাবে।কিন্তু কেউ ইচ্ছা-অনিচ্ছায় করে এগুলো পালন না করে, তবে এর জন্য কোন শাস্তি হবে না। তবে তার মানে এই নয় যে, এগুলো পরিত্যাগ করতে হবে।কারন মানুষ হিসাবে আমাদের অনেক ভুল হয়। তাই আমরা যদি সুন্নাত পালন করে সওয়াব বৃদ্ধি করি, তাহলে এই বাড়তি সওয়াব আমাদের করা পাপের ক্ষতিপূরন হিসাবে কাজ করতে পারে। তাই যত বেশী সম্ভব সুন্নাত পালন করা উচিত। তবে ‘হানাফী মাযহাব’ মতে ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা’পালন না করলে সে গুনাহগার হবে।
0 Comments