নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন sahih-akida.simplesite.com
https://rasikulindia.blogspot.com/ ইসলামিক বই
সূরা নাযে‘আত
(উৎপাটনকারীগণ)
সূরা নাবা-র পরে মক্কায় অবতীর্ণ।
সূরা ৭৯, আয়াত ৪৬, শব্দ ১৭৯, বর্ণ ৭৬২।
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু
করছি)।
(১) শপথ সেই ফেরেশতাগণের,
যারা ডুব দিয়ে (কাফেরের) আত্মা টেনে বের করে আনে।
|
وَالنَّازِعَاتِ غَرْقًا
|
(২) শপথ সেই ফেরেশতাগণের,
যারা মৃদুভাবে (মুমিনের) আত্মার বাঁধন খুলে দেয়।
|
وَالنَّاشِطَاتِ نَشْطًا
|
(৩) শপথ সেই ফেরেশতাগণের,
যারা দ্রুতগতিতে সন্তরণ করে ।
|
وَالسَّابِحَاتِ سَبْحًا
|
(৪) শপথ সেই ফেরেশতাগণের,
যারা প্রতিযোগিতায় একে অপরকে ছাড়িয়ে যায়।
|
فَالسَّابِقَاتِ سَبْقًا
|
(৫) শপথ সেই ফেরেশতাগণের,
যারা সকল কার্য নির্বাহ করে।
|
فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا
|
(৬) (ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে।)
যেদিন প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী।
|
يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ
|
(৭) যার পিছে পিছে আসবে আরেকটি
নিনাদ।
|
تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ
|
(৮) যেদিন হৃদয়সমূহ হবে
ভীত-বিহবল।
|
قُلُوبٌ يَوْمَئِذٍ وَاجِفَةٌ
|
(৯) তাদের দৃষ্টিসমূহ হবে
অবনমিত।
|
أَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ
|
(১০) (অবিশ্বাসীরা) বলে আমরা কি
(মৃত্যুর পরে আবার) পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবই?
|
يَقُولُونَ أَإِنَّا لَمَرْدُودُونَ فِي الْحَافِرَةِ
|
(১১) আমরা গলিত অস্থি হয়ে
যাওয়ার পরেও?
|
أَإِذَا كُنَّا عِظَامًا نَخِرَةً
|
(১২) তারা বলে, সেটা হ’লে তা হবে ধ্বংসকর প্রত্যাবর্তন।
|
قَالُوا تِلْكَ إِذًا كَرَّةٌ خَاسِرَةٌ
|
(১৩) সেটি তো একটি মহা নিনাদ
মাত্র।
|
فَإِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَاحِدَةٌ
|
(১৪) অতঃপর সবাই ময়দানে
আবির্ভূত হবে।
|
فَإِذَا هُمْ بِالسَّاهِرَةِ
|
(১৫) তোমার নিকটে মূসার বৃত্তান্ত
পৌঁছেছে কি?
|
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ مُوسَى
|
(১৬) যখন তার পালনকর্তা তাকে
পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় আহবান করেছিলেন।
|
إِذْ نَادَاهُ رَبُّهُ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
|
(১৭) (এবং বলেছিলেন) ফেরাঊনের
কাছে যাও। কেননা সে সীমালংঘন করেছে।
|
اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى
|
(১৮) অতঃপর তাকে বল, তোমার পবিত্র হওয়ার আগ্রহ আছে কি?
|
فَقُلْ هَلْ لَكَ إِلَى أَنْ تَزَكَّى
|
(১৯) আমি তোমাকে তোমার
পালনকর্তার দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাঁকে ভয় কর।
|
وَأَهْدِيَكَ إِلَى رَبِّكَ فَتَخْشَى
|
(২০) অতঃপর সে (মূসা) তাকে
মহানিদর্শন দেখাল।
|
فَأَرَاهُ الْآيَةَ الْكُبْرَى
|
(২১) কিন্তু সে (ফেরাঊন)
মিথ্যারোপ করল এবং অবাধ্য হ’ল।
|
فَكَذَّبَ وَعَصَى
|
(২২) অতঃপর সে পিছন ফিরে গেল
দ্রুতপায়ে।
|
ثُمَّ أَدْبَرَ يَسْعَى
|
(২৩) অতঃপর সে লোক জমা করল এবং
উঁচু স্বরে আহবান করল।
|
فَحَشَرَ فَنَادَى
|
(২৪) অতঃপর বলল, আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক।
|
فَقَالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى
|
(২৫) ফলে আল্লাহ তাকে পাকড়াও
করলেন পরকালের ও ইহকালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্বারা।
|
فَأَخَذَهُ اللَّهُ نَكَالَ الْآخِرَةِ وَالْأُولَى
|
(২৬) নিশ্চয়ই এর মধ্যে শিক্ষা
রয়েছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে (আল্লাহর শাস্তির) ভয় করে।
|
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِمَنْ يَخْشَى
|
(২৭) তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন,
না আকাশের সৃষ্টি? যা তিনি নির্মাণ করেছেন।
|
أَأَنْتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاءُ بَنَاهَا
|
(২৮) তিনি তার ছাদকে সুউচ্চ
করেছেন। অতঃপর তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন।
|
رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا
|
(২৯) তিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন
করেছেন এর রাত্রিকে এবং প্রকাশিত করেছেন এর সকালকে।
|
وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا
|
(৩০) পৃথিবীকে এর পরে তিনি
বিস্তৃত করেছেন।
|
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
|
(৩১) সেখান থেকে তিনি নির্গত
করেছেন পানি ও উদ্ভিদরাজি
|
أَخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا وَمَرْعَاهَا
|
(৩২) আর পাহাড়সমূহকে তিনি
স্থাপন করেছেন দৃঢ়ভাবে;
|
وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا
|
(৩৩) তোমাদের ও তোমাদের
গবাদিপশু সমূহের ভোগ্যবস্ত্ত হিসাবে।
|
مَتَاعًا لَكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ
|
(৩৪) অতঃপর যখন মহাসংকট এসে
যাবে,
|
فَإِذَا جَاءَتِ الطَّامَّةُ الْكُبْرَى
|
(৩৫) সেদিন মানুষ তার
কৃতকর্মসমূহ স্মরণ করবে
|
يَوْمَ يَتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ مَا سَعَى
|
(৩৬) এবং দর্শকের জন্য
জাহান্নামকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
|
وَبُرِّزَتِ الْجَحِيمُ لِمَنْ يَرَى
|
(৩৭) তখন যে ব্যক্তি সীমালংঘন
করেছে
|
فَأَمَّا مَنْ طَغَى
|
(৩৮) এবং পার্থিব জীবনকে
অগ্রাধিকার দিয়েছে
|
وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
|
(৩৯) জাহান্নাম তার ঠিকানা হবে।
|
فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى
|
(৪০) পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার
প্রভুর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করেছে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির গোলামী হ’তে
বিরত রেখেছে,
|
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى
|
(৪১) জান্নাত তার ঠিকানা হবে।
|
فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى
|
(৪২) তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে,
ক্বিয়ামত কখন হবে?
|
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا
|
(৪৩) এ বিষয়ে বলার জন্য তুমি কে?
|
فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا
|
(৪৪) এর চূড়ান্ত জ্ঞান তো তোমার
প্রভুর নিকটে।
|
إِلَى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا
|
(৪৫) তুমি তো কেবল সতর্ককারী ঐ
ব্যক্তির জন্য যে ক্বিয়ামতকে ভয় করে।
|
إِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرُ مَنْ يَخْشَاهَا
|
(৪৬) যেদিন তারা তা দেখবে,
সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে ছিল একটি সন্ধ্যা বা একটি
সকাল।
|
كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا
|
বিষয়বস্ত্ত :
পূর্ববর্তী সূরার ন্যায় অত্র সূরাটিরও প্রধান বিষয়বস্ত্ত হ’ল
ক্বিয়ামত বা পুনরুত্থান। সূরাটির বিষয়বস্ত্ত সমূহকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে
পারি। যেমন-
(১) মৃত্যুর ফেরেশতাগণের শপথ ও তাদের কার্য সমূহ
বর্ণনা (১-৫ আয়াত)। (২) ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের বর্ণনা (৬-৭)। (৩) অবিশ্বাসীদের অবস্থা বর্ণনা (৮-১২)। (৪) অবিশ্বাসীদের কথার জবাব (১৩-১৪)। (৫) মূসা ও ফেরাঊনের বর্ণনা দ্বারা রাসূল
(ছাঃ)-কে সান্ত্বনা প্রদান (১৫-২৬)। (৬) নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনা (২৭-৩৩)। (৭) বিচার দিবসে জাহান্নামী ও জান্নাতীদের
কৃতকর্ম স্মরণ ও দুনিয়াতে তাদের প্রধান দু’টি করে বৈশিষ্ট্য বর্ণনা (৩৪-৪১)। (৮) ক্বিয়ামত কবে হবে তার জওয়াব এবং সে সময়
লোকদের মানসিক অবস্থা বর্ণনা (৪২-৪৬)।
তাফসীর :
(১) وَالنَّازِعَاتِ
غَرْقاً ‘শপথ সেই ফেরেশতাগণের, যারা ডুব দিয়ে (কাফেরের) আত্মা
টেনে বের করে আনে’।
‘ডুব দিয়ে আত্মা টেনে বের করা’ অর্থ ‘সকল শক্তি
প্রয়োগ করে টেনে-হিঁচড়ে নির্মমভাবে আত্মা বের করে আনা’। সেটা কাফির-মুনাফিকদের
বেলায় করা হয়ে থাকে।
আল্লাহ এখানে ফেরেশতাগণের শপথ করে বলেছেন যে, ক্বিয়ামত সত্য এবং তা যথা সময়ে
সংঘটিত হবেই। উল্লেখ্য যে, মানুষ কেবল আল্লাহর নামে শপথ করতে
পারে, অন্য কারু নামে নয়। যেমন বজ্রশপথ, অগ্নিশপথ, মাটির শপথ, সূর্য-চন্দ্র
বা নবী-রাসূলের শপথ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির নামে শপথ করতে পারেন।
যেমন এখানে ফেরেশতাগণের নামে শপথ করা হয়েছে। সূরা ‘মুরসালাতে’ প্রবহমান বায়ুর শপথ
করা হয়েছে। সূরা ‘নাজমে’ নক্ষত্রের শপথ এবং সূরা ‘তূরে’ তূর পাহাড়ের শপথ করা হয়েছে
ইত্যাদি। ঈমানদার ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কথাই যথেষ্ট। তাঁর জন্য শপথ করার কোন
প্রয়োজন নেই। কিন্তু আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে শপথ করে কথা বলেছেন মূলতঃ
অবিশ্বাসীদের অন্তরে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য। এতে বান্দার প্রতি তাঁর দয়াগুণের
প্রকাশ পেয়েছে।
হযরত আলী (রাঃ) বলেন,
নাযে‘আত হ’ল ঐ সকল ফেরেশতা, যারা অবিশ্বাসী
কাফেরের আত্মাকে নির্মমভাবে টেনে তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে’। কারণ কাফেররা
পরকালে বিশ্বাস করে না। তারা দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে চিরকাল মত্ত থাকতে চায় এবং দুনিয়া
ছাড়তে চায় না। আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতেরও তারা আকাংখী নয় (ইউনুস ১০/৭)। তাই মৃত্যু তাদের জন্য সবচেয়ে কষ্টদায়ক বিষয়।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মালাকুল মউত যখন কাফেরের আত্মা টেনে বের করে, তখন তা
যেন তার প্রতিটি চুলের ও নখের গোড়া দিয়ে বেরিয়ে আসে লোহার করাতের ন্যায়’ (কুরতুবী)। এটা কেবল মৃত ব্যক্তিই বুঝতে পারে, বাইরের লোকেরা নয়।
نَزَعَ
يَنْزِعُ نَزْعًا ‘উপড়ে ফেলা’। نزع
بشدة ‘কঠিনভাবে টানা’। সেখান থেকে اسم
فاعل مؤنثবহুবচন َوَالنَّازِعَاتِ অর্থ الملائكة
التى تنزع
أرواح الكفار ‘ঐ সকল ফেরেশতা যারা কাফেরদের রূহ
টেনে-হিঁচড়ে বের করে’।
غَرْقًا অর্থ ডুব দিয়ে। অর্থাৎ চূড়ান্ত কষ্ট দিয়ে। যেমন
বলা হয় أغرق النازغ
فى القوس
حتى ينتهى
الى النصل ‘তীর নিক্ষেপকারী ধনুকের মধ্যে
ডুব দিল। এমনকি তীরের শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেল’। উল্লেখ্য যে, বাক্যের
শুরুতে ‘ওয়াও’ (و ) হ’ল শপথসূচক অব্যয়, যা বাক্যের মাঝখানে সাধারণতঃ ‘এবং’ অর্থে আসে।
(২) وَالنَّاشِطَاتِ
نَشْطاً ‘শপথ সেই ফেরেশতাগণের যারা মৃদুভাবে (মুমিনের) আত্মার বাঁধন খুলে দেয়’।
نَشَطَ
يَنْشِطُ نَشْطًا অর্থ عقدة
يسهل انحلالها ফাঁস গিরা, যা সহজে খোলা যায় (কুরতুবী)। এখানে অর্থ হ’ল দেহ থেকে আত্মার বাঁধন সহজে খুলে
যাওয়া। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, اي
الملائكة تنشط
نفس المؤمن এর দ্বারা ঐসব ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে, যারা মুমিনের রূহ কবয করে
মৃদুভাবে। যেমন উটের লাগাম (عِقال) খসে পড়ে অতি সহজে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কলসী কাত করলে পানি যেভাবে সহজে
বেরিয়ে যায়, সৎকর্মশীল মুমিনের রূহ মৃত্যুর সময় সেভাবে সহজে
বের হয়ে যায়’।[1]
মুমিনদের এই রূহগুলিই ক্বিয়ামতের ময়দানে ফেরেশতাদের সাথে সারিবদ্ধভাবে
দাঁড়াবে, যা
পূর্ববর্তী সূরায় বলা হয়েছে। যারা আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর সাথে কথা বলবে (নাবা ৭৮/৩৮)।
(৩) وَالسَّابِحَاتِ
سَبْحاً ‘শপথ ঐ ফেরেশতাগণের, যারা দ্রুতগতিতে সন্তরণ করে’।
سَبَحَ
يَسْبَحُ سَبْحًا
سِبَاحَةً অর্থ
‘সাঁতার কাটা’। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, كُلٌّ فِيْ
فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ‘আকাশে সবকিছুই সন্তরণশীল’ (আম্বিয়া ২১/৩৩; ইয়াসীন ৩৬/৪০)। অত্র আয়াতের অর্থ সম্পর্কে হযরত আলী (রাঃ) বলেন, ঐ সকল ফেরেশতা, যারা মুমিনের রূহ নিয়ে সাঁতার দেয়’ (কুরতুবী)। অর্থাৎ দ্রুতগতিতে আল্লাহর নিকটে চলে যায়। এটা
আকাশে সাঁতার দেওয়ার ন্যায়,
যেমন নদীর বুকে নৌকা সাঁতরে যায়।
(৪) فَالسَّابِقَاتِ
سَبْقاً ‘শপথ সেই ফেরেশতাগণের, যারা গ্রতিযোগিতায় একে অপরকে
ছাড়িয়ে যায়’।
سَبَقَ
يَسْبِقُ سَبْقًا
وَمُسَابَقَةً অর্থ আগে বেড়ে যাওয়া, প্রতিযোগিতা করা। মুক্বাতিল
বলেন, এরা হ’লেন ঐ সকল ফেরেশতা যারা মুমিনের রূহ নিয়ে অতি
দ্রুত জান্নাতে চলে যায়’। আর একাজে প্রতিযোগিতায় তারা একে অপরকে ডিঙ্গিয়ে যায়।
(৫) فَالْمُدَبِّرَاتِ
أَمْراً ‘শপথ সেই ফেরেশতাগণের, যারা সকল কার্য নির্বাহ করে’।
دَبَّرَ
يُدَبِّرُ تَدْبِيْرًا অর্থ গবেষণা করা, পরিণাম চিন্তা করা, ব্যবস্থাপনা
ইত্যাদি। এখানে مُدَبِّرَاتِঅর্থ ‘কার্যনির্বাহী ফেরেশতাগণ’।
হযরত আলী,
মুজাহিদ, হাসান বছরী প্রমুখ বলেন, এরা হ’ল ঐসকল ফেরেশতা যারা আল্লাহর হুকুমে আসমান ও যমীনের বিভিন্ন বিষয়াদি
পরিচালনা করে’। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, ফেরেশতাদের
কার্যক্রম দু’ধরনের হয়ে থাকে। একদল আকাশজগতে সৌরলোক ও গ্রহ-নক্ষত্রাদির উদয়-অস্ত
ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত থাকে। অন্যদল বিশ্বলোক ও পৃথিবীর জীবজগতের ব্যবস্থাপনায়
নিয়োজিত থাকে এবং আল্লাহর হুকুমে বিভিন্ন সময় অবস্থাদির পরিবর্তন ঘটায়। যেমন
আল্লাহর নিকট থেকে অহী নিয়ে নবীগণের নিকটে পৌঁছে দেওয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করেন
ফেরেশতাগণের নেতা জিব্রীল (আঃ) (বাক্বারাহ ২/৯৭; শো‘আরা ২৬/১৯৩)। মীকাঈল (আঃ) বৃষ্টি বর্ষণ ও শস্য উৎপাদনের
দায়িত্বে নিয়োজিত। মালাকুল মউত জান কবয করার দায়িত্বে নিয়োজিত। ইসরাফীল ক্বিয়ামতের
দিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার জন্য আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় সদা প্রস্ত্তত রয়েছেন (কুরতুবী)। এমনিভাবে হাযার হাযার ফেরেশতা আল্লাহর হুকুমে
মানুষের ও জীবজগতের সেবায় ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত রয়েছে। আল্লাহ বলেন, وَمَا
يَعْلَمُ جُنُوْدَ
رَبِّكَ إِلاَّ
هُوَ‘তোমার প্রভুর সেনাবাহিনীর খবর তিনি ব্যতীত আর কেউ রাখে না’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩১)।
মানুষের মৃত্যু ও আত্মা বের করার সাথে সম্পৃক্ত ফেরেশতামন্ডলীর শপথ
করে আল্লাহ এবারে ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিচ্ছেন (৬-৭ আয়াত)।-
(৬-৭) يَوْمَ
تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ،
تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ ‘(ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে।) যেদিন
প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী’। ‘যার পিছে পিছে আসবে আরেকটি নিনাদ’।
পূর্ববর্তী পাঁচটি আয়াতে পঞ্চবিধ কাজে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের শপথ
করেছেন আল্লাহ জোরালোভাবে এ বক্তব্য পেশ করার জন্য যে, ক্বিয়ামত আসবেই। তোমরা অবশ্যই
পুনরুত্থিত হবে এবং অবশ্যই হিসাবের সম্মুখীন হবে (কুরতুবী)। আর এটাই হ’ল পূর্ববর্তী শপথগুলির জওয়াব। যা উহ্য
রয়েছে।
এখানে يَوْمَ যবরযুক্ত হয়েছে। কারণ এর পূর্বে أُذْكُرْ ক্রিয়াপদ উহ্য রয়েছে এবং يَوْمَ তার কর্ম (ظرف
زمان) হয়েছে। এক্ষণে বাক্য দাঁড়াবে أذكر
يوم ترجف
الراجفة ‘তুমি স্মরণ কর ঐ দিবসের, যেদিন প্রকম্পিত করবে
কম্পিতকারী’। الرجفة অর্থ الحركة বা কম্পন। কিন্তু এখানে অর্থ হবে ‘শব্দসহ কম্পন’
বা নিনাদ (কুরতুবী)। الرَّادِفَةُ অর্থ ‘সওয়ারীর পিছনে বসা ব্যক্তি’। এখানে অর্থ
হবেالصيحة الةابعة ‘পশ্চাদগামী নিনাদ’।
ইবনু আববাস,
মুজাহিদ, হাসান বছরী, ক্বাতাদাহ
প্রমুখ বলেন যে, এর অর্থ পরপর দু’টি নিনাদ (الصيحتان)। প্রথম নিনাদে সব মারা যাবে আল্লাহর হুকুমে এবং
দ্বিতীয় নিনাদে সবাই জীবিত হবে আল্লাহর হুকুমে। উভয় ফুৎকারের মাঝে ব্যবধান চল্লিশ।
এটি চল্লিশ দিন, মাস না
বছর সে বিষয় কিছু বলতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) অস্বীকার করেন।[2] যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন,وَنُفِخَ
فِي الصُّوْرِ
فَصَعِقَ مَنْ
فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَنْ فِي
الْأَرْضِ إِلاَّ
مَنْ شَآءَ
اللهُ ثُمَّ
نُفِخَ فِيْهِ
أُخْرَى فَإِذَا
هُمْ قِيَامٌ
يَنْظُرُوْنَ ‘আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আসমান ও যমীনে যত প্রাণী আছে সবাই অজ্ঞান
হয়ে মরে পড়ে থাকবে, কেবল তারা ব্যতীত যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা
করেন। অতঃপর পুনরায় শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। তখন তারা সবাই জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে
ও পরস্পরে তাকাতে থাকবে’ (যুমার ৩৯/৬৮)।
ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের বর্ণনা শেষে এবারে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন
অবিশ্বাসীদের অবস্থা কেমন হবে তার বর্ণনা দিচ্ছেন (৮-১২ আয়াত)।-
(৮-৯ ( قُلُوْبٌ
يَّوْمَئِذٍ وَّاجِفَةٌ،
أَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ ‘যেদিন হৃদয়সমূহ হবে ভীত-বিহবল’।
‘তাদের দৃষ্টিসমূহ হবে অবনমিত’।
এখানেقُلُوْبٌ অনির্দিষ্টবাচক (نكرة) আনাতে বুঝা যায় যে, সেদিন এদের বিপরীত আরেকটি দল
থাকবে (وقلوب
على عكس
ذلك) যারা হবে মুমিন।
প্রথম বাক্যটি ‘মুবতাদা’ এবং দ্বিতীয় বাক্যটি ‘খবর’। কেননা অন্তর
ভীত হ’লে চক্ষু আপনা থেকেই অবনমিত হয়ে যায়। ক্বিয়ামতের ভয়ংকর অবস্থা দেখে
অবিশ্বাসীদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে ও ভীত-বিহবল হয়ে চক্ষু নীচু করে দাঁড়িয়ে
থাকবে। أَبْصَارُهَا ‘হৃদয়সমূহের চোখ’ অর্থ أبصار
أصحابها ‘হৃদয়ের মালিক অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের চোখ’। একথাটাই অন্যত্র এসেছে এভাবে, خَاشِعَةً
أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ
ذِلَّةٌ ‘তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনত, তারা হবে হীনতাগ্রস্ত’ (ক্বলম ৬৮/৪৩; মা‘আরেজ ৭০/৪৪)।
(১০-১২) يَقُوْلُوْنَ
أَئِنَّا لَمَرْدُوْدُوْنَ
فِي الْحَافِرَة،
أَئِذَا كُنَّا
عِظَاماً نَّخِرَةً،
قَالُوْا تِلْكَ
إِذاً كَرَّةٌ
خَاسِرَةٌ (১০) ‘(অবিশ্বাসীরা) বলে, আমরা কি (মৃত্যুর পরে আবার)
পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবই? (১১) আমরা গলিত-অস্থি হয়ে যাওয়ার
পরেও? (১২) তারা বলে, সেটা হ’লে তা হবে
ধ্বংসকর প্রত্যাবর্তন’।
উপরের বক্তব্যগুলি ক্বিয়ামতে অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের। তারা বিস্ময়ভরে
দুনিয়াতে এসব কথা বলত। কেননা তাদের স্থূলবুদ্ধিতে পরকালের কথা আসে না। তাদের এসব
কথাগুলি কুরআনের বিভিন্ন সূরায় বিভিন্নভাবে এসেছে। যেমন (বনী ইসরাঈল ১৭/৪৯, ৯৮; ক্বাফ ৫০/৩; ওয়াক্বি‘আহ
৫৬/৪৭-৪৮ প্রভৃতি)।
أَئِنَّا
لَمَرْدُوْدُوْنَ فِيْ
الْحَافِرَةِ ‘আমরা কি পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবই’? حَافِرَةٌ অর্থ ‘পশুর পায়ের ক্ষুর’। فِي
الْحَافِرَة অর্থرجع
فلان فى
حافرته، أوعلى
حافرته অর্থাৎ رجع
من حيث
جاء ‘যেখান থেকে এসেছে, সেখানে ফিরে যাওয়া’। এখানে অর্থ
মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবনে ফিরে যাওয়া।
عِظَاماً
نَّخِرَةً ‘পচা-গলা হাড়’। অন্য আয়াতে এসেছে, وَقَالُوا
أَإِذَا كُنَّا
عِظَامًا وَرُفَاتًا
أَإِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ
خَلْقًا جَدِيْدًا ‘তারা বলে, যখন
আমরা অস্থিতে পরিণত হব ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাব। তখনও কি আমরা নতুন সৃষ্টিরূপে
পুনরুত্থিত হব?’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৪৯,৯৮)।
كَرَّةٌ
خَاسِرَةٌ অর্থ رجعة
خائبة ‘নৈরাশ্যকর প্রত্যাবর্তন’। কেননা অবিশ্বাসী হওয়ার কারণে তাদের পরিণাম
জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই হবে না। সেকারণে তারা পুনর্জীবিত হ’তে চায় না। অথচ
আল্লাহর হুকুমে তারা পুনর্জীবিত হবেই এবং তারা তাদের অবিশ্বাসের ফল ভোগ করবেই।
অতএব সেটা তাদের জন্য ধ্বংস ও ক্ষতিকর প্রত্যাবর্তন ব্যতীত কিছুই নয়। অবিশ্বাসীদের
অবস্থা বর্ণনা শেষে এবারে আল্লাহ তাদের কথার জবাব দিচ্ছেন (১৩-১৪ আয়াত)।-
(১৩) فَإِنَّمَا
هِيَ زَجْرَةٌ
وَّاحِدَةٌ ‘সেটি তো একটি মহা নিনাদ মাত্র’।
زَجْرَةٌ
وَّاحِدَةٌ ‘একটি মাত্র নিনাদ’। তাদের যুক্তির বহর ও অহংকারের আগুন দপ করে নিভে যাবে
একটি মাত্র বজ্র নিনাদে। যারা উপদেশ মানেনা, হক কথা শুনতে
চায় না, তাদের জন্য এটাই একমাত্র প্রতিফল। আল্লাহর নিকটে
ক্বিয়ামত যে কত সহজ ব্যাপার, সেটা বুঝানোর জন্যই এখানে এমন
বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ ক্বিয়ামত সংঘটন স্রেফ একটা মহা শব্দের ব্যাপার।
আর তাতেই সবকিছু নিমিষে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অতঃপর নতুন এক জগতের জন্ম হবে। এর জন্য
প্রয়োজন আল্লাহর একটি নির্দেশ মাত্র, ‘কুন’ হও। তখুনি হয়ে
যাবে (মারিয়াম ১৯/৩৫; ইয়াসীন ৩৬/৮২)। আল্লাহ বলেন, وَمَا أَمْرُ
السَّاعَةِ إِلاَّ
كَلَمْحِ الْبَصَرِ
أَوْ هُوَ
أَقْرَبُ ‘ক্বিয়ামতের বিষয়টি তো চোখের এক পলকের ব্যাপার ভিন্ন নয়, বরং তার চাইতে কম’ (নাহ্ল ১৬/৭৭; ক্বামার ৫৪/৫০)। তিনি বলেন, إِنْ
كَانَتْ إِلاَّ
صَيْحَةً وَاحِدَةً
فَإِذَا هُمْ
جَمِيْعٌ لَدَيْنَا
مُحْضَرُوْنَ ‘ওটা হবে শুধুমাত্র একটি বিকট শব্দ। আর তখনই তাদের সকলকে আমাদের সম্মুখে
হাযির করা হবে’ (ইয়াসীন ৩৬/৫৩)।
(১৪) فَإِذَا
هُمْ بِالسَّاهِرَةِ ‘অতঃপর সবাই ময়দানে আবির্ভূত
হবে’। السَّاهِرَةُ অর্থ ময়দান বা ভূপৃষ্ঠ। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এই ময়দান হবে সারা বিশ্বব্যাপী
সমতল। কারণ ঐ সময় কোন উঁচু-নীচু, সাগর-পাহাড় কিছুই থাকবে না।
ভূপৃষ্ঠ সমতল হবে। সেই ভূপৃষ্ঠের চেহারা হবে বর্তমান ভূপৃষ্ঠের বদলে সম্পূর্ণ নতুন
এক পৃথিবী। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ
تُبَدَّلُ الْأَرْضُ
غَيْرَ الْأَرْضِ
وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا
لِلَّهِ الْوَاحِدِ
الْقَهَّارِ ‘যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং পরিবর্তিত হবে
আকাশমন্ডলী। আর সকলে উপস্থিত হবে আল্লাহর সম্মুখে, যিনি এক ও
পরাক্রান্ত’ (ইবরাহীম ১৪/৪৮)। এতে বুঝা যায় যে,
আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তাঁকে বাধ্য করার শক্তি কারোর
নেই। যেমন তিনি বলেন,وَمَا كَانَ
اللهُ لِيُعْجِزَهُ
مِنْ شَيْءٍ
فِي السَّمَاوَاتِ
وَلاَ فِي
الْأَرْضِ إِنَّهُ
كَانَ عَلِيْمًا
قَدِيْرًا ‘আল্লাহ এমন নন যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের কোন কিছুই
তাঁকে অক্ষম করতে পারে। তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান’ (ফাত্বির ৩৫/৪৪)।
ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের ভয়ংকর অবস্থা বর্ণনার মাধ্যমে অবিশ্বাসীদের
কথার জবাব দান শেষে এবারে আল্লাহ মূসা ও ফেরাঊনের ঘটনা বর্ণনার মধ্যমে স্বীয়
রাসূলকে এবং ঈমানদারগণকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন (১৫-২৬ আয়াত)।-
(১৫) هَلْ
أتَاكَ حَدِيْثُ
مُوْسَى ‘তোমার নিকটে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি?’
১৫-২৬ আয়াত পর্যন্ত ১২টি আয়াতে আল্লাহপাক স্বীয় রাসূলকে বিগত নবী
মূসা (আঃ) ও অবিশ্বাসী সম্রাট ফেরাঊনের মধ্যকার ঘটনাবলী সংক্ষেপে বিবৃত করে
সান্ত্বনা দিয়েছেন যে, মূসার মধ্যে মিসরীয় জাতিকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার দরদভরা মন ও সর্বাত্মক
প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও ফেরাঊন ও তার কওমের নেতৃবৃন্দ মূসাকে অমান্য করেছিল এবং
তাঁকে ও তার কওম বনু ইস্রাঈলকে বর্বরতম নির্যাতনের সম্মুখীন করেছিল। এতদসত্ত্বেও
মূসা (আঃ) অসীম ধৈর্যের সাথে দাওয়াত দিয়ে গেছেন। অবশেষে অহংকারী ফেরাঊন ও তার
সহযোগীদের উপরে আল্লাহর এমন গযব নেমে এসেছিল, যার তুলনা নেই।
অতএব মুহাম্মাদ (ছাঃ) যেন মক্কার মুশরিক নেতাদের অবিশ্বাস, অবাধ্যতা
ও চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রে অধৈর্য না হয়ে পড়েন। সবকিছু আল্লাহর চোখের সামনে ঘটছে। তিনিই
সময়মত ব্যবস্থা নেবেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নবীকে সান্ত্বনা স্বরূপ মূসা ও ফেরাঊনের
বিগত ঘটনাবলী শুনিয়ে বলছেন, هَلْ
أتَاكَ حَدِيْثُ
مُوسَى ‘তোমার নিকটে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি’?
هَلْ প্রশ্নবোধক অব্যয়। গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ের দিকে
শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ও সেদিকে তার উৎসাহ সৃষ্টির জন্য আরবী বাক্যের
এটি একটি সুন্দর আলংকরিক ব্যবহার।
حَدِيْثٌ অর্থ বাণী, বর্ণনা, খবর, বৃত্তান্ত ইত্যাদি। এখানে খবর বা বৃত্তান্ত অর্থে এসেছে। অর্থাৎ হে
মুহাম্মাদ! কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তুমি ধৈর্য হারাবে না। তুমি কি বিগত নবী
মূসার অবস্থা জানো? তার শত্রুরা তোমার শত্রুদের চাইতে শতগুণ
শক্তিশালী ও নিষ্ঠুর ছিল। কিন্তু হঠকারিতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলে আমি তাদের
পাকড়াও করেছিলাম। তোমার শত্রুদের অবস্থাও তাই হবে। অতএব ধৈর্য ধারণ কর এবং অপেক্ষা
কর।
অনেকে هل অর্থ ما
نافية বলেছেন।
অর্থাৎ ما أتاك
حديث موسى
ولكن أُخبرتَ
به ‘তোমার কাছে মূসার খবর পৌঁছেনি। কিন্তু তা তোমাকে জানানো হচ্ছে’। এখানে
বক্তব্য মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি হ’লেও উদ্দেশ্য সকল মানুষ। সূরাটি মক্কায় নাযিল
হয়েছে। যেখানে মূসা (আঃ)-এর অনুসারী কোন ইহুদী ছিলনা। তাহ’লে তাঁর খবর শুনানোর
কারণ কি? এর মধ্যে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ)-কে আগামীতে মদীনায় হিজরত করতে হবে ও সেখানে তাদের কপটতা ও
ষড়যন্ত্রের মুকাবিলা করতে হবে। যেমন ষড়যন্ত্র তারা তাদের নবী মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে
করেছিল। দ্বিতীয়তঃ একারণে যে, কুরআনে সর্বাধিক আলোচিত নবী
হ’লেন মূসা (আঃ)। আর তিনিই ছিলেন স্বীয় উম্মত কর্তৃক সর্বাধিক অবাধ্যতার শিকার।
তাই হিজরতের আগেই রাসূল (ছাঃ)-কে তাদের ব্যাপারে মানসিকভাবে প্রস্ত্তত করে নেওয়া
প্রয়োজন ছিল।
(১৬) إِذْ
نَادَاهُ رَبُّهُ
بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ
طُوًى ‘যখন তার পালনকর্তা তাকে পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় আহবান করেছিলেন’।
এই আহবান ছিল সরাসরি,
কোন ফেরেশতার মাধ্যমে নয়। যেমন আল্লাহ বলেন, وَنَادَيْنَاهُ
مِنْ جَانِبِ
الطُّوْرِ الْأَيْمَنِ
وَقَرَّبْنَاهُ نَجِيًّا ‘আর আমরা তাকে (মূসাকে) আহবান
করেছিলাম তার ডাইনে তূর পাহাড়ের দিক থেকে এবং আমরা তাকে গোপনালাপের জন্য নিকটবর্তী
করেছিলাম’ (মারিয়াম ১৯/৫২)।
نَادَاهُ ‘তাকে ডাকলেন’ অর্থ كلَّمهُ
نداءً ‘ডেকে কথা বললেন’। طُوَى একটি উপত্যকার নাম, যা ফিলিস্তীনে তূর পাহাড়ের
পাদদেশে অবস্থিত। শ্বশুরবাড়ী মাদইয়ান থেকে স্ত্রী-পরিবার নিয়ে জন্মভূমি মিসর যাবার পথে
এখানে মূসা (আঃ)-এর সাথে আল্লাহ সরাসরি কথা বলেন এবং তাঁকে নবুঅত প্রদান করেন। এই
স্থানটিকে আল্লাহ الْمُقَدَّسِ অর্থাৎ ‘পবিত্র’ বলে ঘোষণা করেছেন। কারণ এই
মাটিতেই আল্লাহ প্রথম ও শেষ কোন মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। طُوًى তিনভাবে পঠিত হয়েছে طُوًى , طُوَى ও طِوَى প্রথমোক্ত ক্বিরাআত কূফীদের, দ্বিতীয় ক্বিরাআত বাকী সকলের
এবং তৃতীয় কিরাআত হাসান বছরী ও ইকরিমার (কুরতুবী)।
(১৭) إذْهَبْ
إِلَى فِرْعَوْنَ
إِنَّهُ طَغَى ‘(এবং বলেছিলেন) ফেরাঊনের কাছে
যাও। কেননা সে সীমালংঘন করেছে’।
অর্থাৎ আল্লাহ মূসাকে ডাকলেন ও বললেন, তুমি ফেরাঊনের কাছে যাও। কেননা
সে সীমালংঘনের চূড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করেছে।
ফেরাঊনের সীমালংঘন প্রক্রিয়াটি কেমন ছিল? আল্লাহ বলেন, إِنَّ
فِرْعَوْنَ عَلاَ
فِي الْأَرْضِ
وَجَعَلَ أَهْلَهَا
شِيَعًا يَسْتَضْعِفُ
طَائِفَةً مِنْهُمْ
يُذَبِّحُ أَبْنَاءَهُمْ
وَيَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ
إِنَّهُ كَانَ
مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ ‘নিশ্চয়ই ফেরাঊন দেশে পরাক্রমশালী
হয়েছিল এবং সেখানকার জনগণকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে সে হীনবল
করেছিল। তাদের পুত্র সন্তানদের সে হত্যা করত এবং কন্যা সন্তানদের
বাঁচিয়ে রাখত। নিশ্চয় সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (ক্বাছাছ ২৮/৪)। এযুগের দলীয় গণতন্ত্র ফেলে আসা ফেরাঊনী
যুলুমতন্ত্রের নব্য সংস্করণ নয় কি?
(১৮) فَقُلْ
هَل لَّكَ
إِلَى أَنْ
تَزَكَّى ‘অতঃপর তাকে বল, তোমার পবিত্র হওয়ার আগ্রহ আছে কি?’
অর্থাৎ তুমি কি আল্লাহর অবাধ্যতার পথ ছেড়ে আনুগত্যের পথে ফিরে আসতে
চাও, যা
তোমাকে পবিত্র করবে? এখানে تَزَكَّى ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। যা মূলতঃ ‘তাযকিয়ায়ে
নফস’ বা হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন করার উদ্দেশ্যে বর্ণিত হয়। একজন বাদশাহ হিসাবে ফেরাঊন
দৈহিকভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ছিলেন বলে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু তার হৃদয়জগত ছিল
অবিশ্বাস ও কুফরীর কালিমায় আচ্ছন্ন। যার জন্য সে হয়ে উঠেছিল হঠকারী ও অহংকারী।
অতএব তার হৃদয় জগতকে কুফরীর কলুষ ও অন্ধকার থেকে পরিচ্ছন্ন করে তাওহীদের
আলোকোজ্জ্বল পথে আহবান জানানোর কথা মূসাকে বলা হ’ল। যেমন অন্যত্র মূসা ও হারূণকে
আল্লাহ বলেন, فَقُولاَ
لَهُ قَوْلاً
لَيِّنًا لَعَلَّهُ
يَتَذَكَّرُ أَوْ
يَخْشَى ‘তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বল। হয়তবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (ত্বোয়াহা ২০/৪৪)।
(১৯) وَأَهْدِيَكَ
إِلَى رَبِّكَ
فَتَخْشَى ‘আমি তোমাকে তোমার পালনকর্তার দিকে পথ দেখাব, যাতে
তুমি তাঁকে ভয় কর’।
অর্থাৎ আমি তোমাকে আল্লাহর ইবাদতের পথ দেখাব, যাতে তোমার অন্তর ভীত হয় ও
অনুগত হয়, যা এখন রয়েছে অত্যন্ত কঠোর, অবাধ্য
ও যাবতীয় কল্যাণ হ’তে মুক্ত।
এখানে আল্লাহর গুণ হিসাবে خالق বা সৃষ্টিকর্তা না বলে رب বা পালনকর্তা বলার কারণ এই যে, ফেরাঊন ভালভাবেই জানত যে,
সে সৃষ্টিকর্তা নয়। সে যুগের ও এ যুগের তাবৎ নাস্তিক ও ফেরাঊন
গোষ্ঠী এটা বিশ্বাস করে এবং একথা একবাক্যে স্বীকার করে যে, আসমান-যমীন
ও এর মধ্যকার সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ‘আল্লাহ’ (লোকমান ৩১/২৫)। কিন্তু যখন মানুষ নিজেকে পরমুখাপেক্ষীহীন মনে
করে এবং জনবলে ও শক্তিবলে বেপরোয়া হয়ে যায়, তখন সে সীমালংঘন করে (‘আলাক্ব ৯৬/৬-৭) এবং পালনকর্তা হিসাবে আল্লাহকে অস্বীকার করে।
এমনকি যে পিতা-মাতার লালন-পালন ক্রিয়া সে স্বচক্ষে দেখেছে এবং যাদের স্নেহপরশ না
পেলে সে দুনিয়ায় এক পা হাঁটতে পারত না, অহংকার বশে তাদেরকেও সে অমান্য করে। পিতা-মাতার
লালন-পালন ক্রিয়া যে কেউ দেখতে ও বুঝতে পারে। কিন্তু আল্লাহর লালন-পালন ক্রিয়া
জ্ঞানীরা ব্যতীত বোকারা বুঝতে পারে না। আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে,
পানি দিয়ে যে আল্লাহ বিরতিহীনভাবে মানুষ ও তামাম জীবজগতকে প্রতিপালন
করে চলেছেন, অহংকারী মানুষেরা তাকে এক পর্যায়ে অস্বীকার করে
বসে। ফেরাঊন সেই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। সে আল্লাহকে ‘রব’ বা পালনকর্তা হিসাবে
অস্বীকার করেছিল। কেননা সরকার রেশন দিয়ে ও অন্যান্যভাবে খাদ্য ব্যবস্থাপনার
মাধ্যমে প্রজাপালন করে থাকে। সে হিসাবে ফেরাঊন স্থূল অর্থে নিজেকে ‘রব’ দাবী করতেই
পারে। আর সেটাই সে করেছিল। যা ছিল তার বোকামী ও হঠকারিতা মাত্র। তাই ফেরাঊনের
হেদায়াতের জন্য আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে নবুঅত দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন।
প্রশ্ন হ’তে পারে যে,
আল্লাহ তো ভালোভাবেই জানতেন যে, ফেরাঊন
হেদায়াত পাবে না। তাহ’লে কেন তার কাছে মূসাকে পাঠালেন? এর
জওয়াব এই যে, হেদায়াতের পথ বাৎলে না দিয়ে আল্লাহ কাউকে
শাস্তি দেন না (বনী ইসরাঈল ১৭/১৫; ক্বাছাছ ২৮/৫৯)। এছাড়াও তার নিকটের যারা, তারাও যাতে হেদায়াতের রাস্তা
খুঁজে পায়। যেমন তার জাদুকররা হেদায়াত পেয়েছিল।
দ্বিতীয়তঃ কাউকে শাস্তি দেওয়ার পূর্বে আল্লাহ চান তার জন্য প্রমাণ
উপস্থিত করতে। তাই মূসাকে পাঠিয়ে এলাহী হেদায়াত পেশ করার পরও যখন সে ফিরে আসেনি, তখন সেটাই তার চূড়ান্ত শাস্তির
কারণ ও প্রমাণ হিসাবে গণ্য হয়।
তৃতীয়তঃ এর দ্বারা আল্লাহপাক আমাদেরকে একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, কারু হেদায়াত পাওয়া না পাওয়ার
বিষয়টি আল্লাহর হাতে। এটা মানুষের জানার কথা নয়। অতএব যত অবাধ্য হৌক সকলের নিকটে
তাওহীদের দাওয়াত পৌঁছানো হ’ল বান্দার দায়িত্ব। মূসাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে বলা
হয়েছে মাত্র।
(২০) فَأَرَاهُ
الْآيَةَ الْكُبْرَى ‘অতঃপর সে (মূসা) তাকে মহা
নিদর্শন দেখাল’।
সেই মহা নিদর্শন হ’ল লাঠি ও জ্যোতি বিকীরণকারী হস্ততালু, যা নবুঅত প্রদানকালে তূর
পাহাড়ের পাদদেশে আল্লাহ মূসাকে দিয়েছিলেন। এ দু’টি ছিল মু‘জেযা, যাকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা কারুরই ছিল না। সে যুগে মিসর ছিল জাদুবিদ্যার
কেন্দ্রভূমি। সেকারণ আল্লাহ মূসাকে এরূপ মু‘জেযা দান করেছিলেন। যা দেশের সেরা
জাদুকরদের হতবাক করে দিয়েছিল এবং পরাস্ত হয়ে তারা সবাই মুসলমান হয়ে গিয়েছিল (শো‘আরা ২৬/৪৭-৪৮)। যদিও ফেরাঊন তাদের সবাইকে হত্যা করেছিল (শো‘আরা ২৬/৪৯-৫১)। তবে ফেরাঊন এমন ভীত হয়েছিল যে, কখনোই মূসা ও হারূণের ক্ষতি
করার সাহস করেনি। বস্ত্ততঃ এই দু’টি মু‘জেযাই ছিল ফেরাঊনের হাত থেকে বাঁচার জন্য
আল্লাহ প্রদত্ত সেফগার্ড বা রক্ষাকবচ স্বরূপ। এ দু’টি প্রধান মু‘জেযা ছাড়াও
অন্যান্য সকল নিদর্শন, জ্ঞানপূর্ণ উপদেশ ও যুক্তিতর্ক সবই
মূসা ও হারূণ পেশ করেন।
(২১) فَكَذَّبَ
وَعَصَى ‘কিন্তু সে (ফেরাঊন) মিথ্যারোপ করল ও অবাধ্য হ’ল’।
অর্থাৎ অন্তরে সে মূসাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করল এবং বাহ্যিক কর্মে
তার অবাধ্যতা করল। এভাবে ফেরাঊন ভিতরে-বাইরে মূসার দাওয়াতকে অমান্য করল। সে
মুনাফিক ছিল না। বরং বিশ্বাসে ও কর্মে সর্বাত্মকভাবে সে কুফরীতে লিপ্ত হয়েছিল। كَذَّبَক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরাঊনের হৃদয়ের অবিশ্বাসী
অবস্থা এবং عَصَى ক্রিয়ার মাধ্যমে তার বাইরের অবাধ্যতাপূর্ণ
কর্মের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
(২২) ثُمَّ
أَدْبَرَ يَسْعَى ‘অতঃপর সে পিছন ফিরে গেল
দ্রুতপায়ে’।
অর্থাৎ মূসাকে মুকাবিলা করার জন্য কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য
তার সভাসদগণের নিকটে দ্রুত ফিরে গেল।
(২৩) فَحَشَرَ
فَنَادَى ‘অতঃপর সে লোক জমা করল এবং উঁচু স্বরে আহবান করল’।
অর্থাৎ ফেরাঊন তার সভাসদবৃন্দ এবং সেনাবাহিনী ও সমাজনেতাদের জমা
করে জোরালো এক ভাষণ দিল। সে বলল, مَا
هَذَا إِلاَّ
سِحْرٌ مُفْتَرًى
وَمَا سَمِعْنَا
بِهَذَا فِي
آبَائِنَا الْأَوَّلِيْنَ ‘এসব অলীক জাদু মাত্র। আমরা
আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এসব কথা শুনিনি’ (ক্বাছাছ ২৮/৩৬)। সে তার জনগণকে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার জন্য বলল, ذَرُوْنِي
أَقْتُلْ مُوسَى
وَلْيَدْعُ رَبَّهُ
إِنِّي أَخَافُ
أَنْ يُبَدِّلَ
دِيْنَكُمْ أَوْ
أَنْ يُظْهِرَ
فِي الْأَرْضِ
الْفَسَادَ ‘তোমরা আমাকে ছাড় আমি মূসাকে হত্যা করব। কেননা আমার ভয় হয় সে তোমাদের
দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলবে অথবা সে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে’ (মুমিন/গাফির ৪০/২৬)। অতঃপর সে বলল, إِنَّ رَسُوْلَكُمُ
الَّذِي أُرْسِلَ
إِلَيْكُمْ لَمَجْنُوْنٌ ‘আসলে তোমাদের প্রতি প্রেরিত এ
রাসূলটি একটা আস্ত পাগল মাত্র’ (শো‘আরা ২৬/২৭)। সেযুগের ফেরাঊনের ন্যায় এযুগের ফেরাঊনরাও ধর্মকে
তাদের কপট উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে। অথচ আল্লাহ প্রেরিত প্রকৃত দ্বীনকে তারা
মানতে চায় না।
(২৪) فَقَالَ
أَنَا رَبُّكُمُ
الْأَعْلَى ‘অতঃপর বলল, আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক’।
عَلاَ
يَعْلُو عُلُوًّا অর্থ উঁচু হওয়া। সেখান থেকে اسم
تفضيل হয়েছে।
অর্থ ‘সর্বোচ্চ’। অর্থাৎ لاَ
رَبَّ فَوْقِىْ ‘আমার উপরে কোন রব বা পালনকর্তা
নেই’। একথার পূর্বে সে বলেছিল مَا
عَلِمْتُ لَكُمْ
مِّنْ إِلَهٍ
غَيْرِيْ ‘তোমাদের জন্য আমি ব্যতীত কোন উপাস্য আছে বলে আমি জানি না’ (ক্বাছাছ ২৮/৩৮)।
রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে দেশের জনগণের ভালমন্দ দেখাশুনার দায়িত্ব পালন
করার কারণেই সে স্থূল অর্থে নিজেকে ‘সবচেয়ে বড় পালনকর্তা’ বলেছিল। যেমন আল্লাহ
বলেন,وَنَادَى
فِرْعَوْنُ فِي
قَوْمِهِ قَالَ
يَا قَوْمِ
أَلَيْسَ لِي
مُلْكُ مِصْرَ
وَهَذِهِ الْأَنْهَارُ
تَجْرِي مِنْ
تَحْتِي أَفَلاَ
تُبْصِرُونَ- ‘ফেরাঊন তার জনগণকে ডেকে একথা
বলেছিল যে, মিসরের বাদশাহী কি আমার নয়? এই নদীগুলি আমার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত। তোমরা কি দেখো না’? (যুখরুফ ৪৩/৫১)। আর সেকারণেই জনগণের উপাস্য হবার দাবী করেছিল।
অন্ধ-কালা-বোবা মূর্তিগুলো যদি মানুষের উপাস্য হ’তে পারে, তবে দেশের রাজা হিসাবে ফেরাঊন
কেন জনগণের উপাস্য হ’তে পারবে না? যদিও এরূপ দাবী কেউ কখনো
করেনি। নিঃসন্দেহে এটি ছিল তার অত্যন্ত গর্হিত ও হঠকারী দাবী।[3] এটুকু বলেই সে ক্ষান্ত হয়নি। সে মূসা (আঃ)-এর
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কটুক্তি ও তাঁর দরিদ্রতাকেও তাচ্ছিল্য করেছিল। কেননা মূসার
যবানে কিছুটা তোতলামি ছিল। যেমন ফেরাঊন বলেছিল, أَمْ أَنَا
خَيْرٌ مِنْ
هَذَا الَّذِيْ
هُوَ مَهِيْنٌ
وَلاَ يَكَادُ
يُبِيْنُ- فَلَوْلاَ
أُلْقِيَ عَلَيْهِ
أَسْوِرَةٌ مِنْ
ذَهَبٍ أَوْ
جَاءَ مَعَهُ
الْمَلاَئِكَةُ مُقْتَرِنِيْنَ-
فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهُ
فَأَطَاعُوهُ إِنَّهُمْ
كَانُوْا قَوْمًا
فَاسِقِيْنَ- ‘আমি তো শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যক্তি হ’তে
যে নিকৃষ্ট। এমনকি যে স্পষ্টভাবে কথা বলতেও অক্ষম’। ‘(যদি সে নবী হ’ত) তাহ’লে কেন
তাকে দেয়া হলো না সোনার বালা সমূহ এবং কেন তার সাথে আসলো না দলবদ্ধভাবে ফেরেশতারা’?
‘এভাবে সে তার কওমকে হতবুদ্ধি করে ফেলল। ফলে তারা তার কথা মেনে নিল।
বস্ত্ততঃ তারা তো ছিল সব অবাধ্য সম্প্রদায়’ (যুখরুফ ৪৩/৫২-৫৪)।
(২৫) فَأَخَذَهُ
اللهُ نَكَالَ
الْآخِرَةِ وَالْأُوْلَى ‘ফলে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করলেন
পরকাল ও ইহকালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্বারা’।
ফেরাঊনের সীমালংঘন চূড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করে যাবার পর আল্লাহ
তাকে পাকড়াও করেন। দুনিয়াতে তার পাকড়াও ছিল সসৈন্যে সলিল সমাধি (বাক্বারাহ ২/৫০; ইউনুস ১০/৯০-৯২)। আর পরকালের পাকড়াও হ’ল জাহান্নামের সর্বোচ্চ ও মর্মান্তিক শাস্তি।
এটা ছিল তার সীমালংঘনের প্রতিফল।
نَكَالَঅর্থ تنكيل যেমন سلام অর্থ تسليم। فَأخَذَهُ
اللهُ অর্থ نكَّله
الله تنكيل
الدارين بالعذابين
بالإغراق والإحراق‘আল্লাহ তাকে ইহকালে ও পরকালে
দু’ধরনের শাস্তি দিয়ে বদলা নেন, ডুবানো ও পোড়ানোর মাধ্যমে’ (তানতাভী)। النكل অর্থ القيد পাকড়াও করা, কয়েদ করা (কুরতুবী)।
(২৬) إِنَّ
فِيْ ذَلِكَ
لَعِبْرَةً لِّمَنْ
يَّخْشَى ‘নিশ্চয়ই এর মধ্যে শিক্ষা রয়েছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে (আল্লাহর শাস্তির) ভয়
করে’।
ফেরাঊনের উক্ত পরিণতির কথা বর্ণনার পর আল্লাহপাক ইঙ্গিত দিলেন যে, আল্লাহভীরু লোকদের জন্য এর
মধ্যে যেমন উপদেশ রয়েছে, আল্লাহদ্রোহী লোকদের জন্য তেমনি
হুঁশিয়ারি রয়েছে। যেন ফেরাঊনী আচরণ করে কেউ নিজেকে শাস্তির ঊর্ধ্বে মনে না করে।
যারা শয়তানের পূজা করে এবং মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, তাদের পরিণতিও যুগে যুগে ফেরাঊনের মতই হবে। ইহকাল ও পরকালে তাদের কোন
সাহায্যকারী থাকবে না (ক্বাছাছ ২৮/৪১)। এর মাধ্যমে মক্কার কাফের নেতাদের ভবিষ্যৎ
পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং রাসূল (ছাঃ)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন তাদের অত্যাচারে ধৈর্য
ধারণ করেন, যেমন মূসা (আঃ) ফেরাঊনের অত্যাচারে ধৈর্য ধারণ
করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ফেরাঊনের পরিণতির মধ্যে উপদেশ রয়েছে
সকল যুগের আল্লাহভীরুদের জন্য।
১৫-২৬ পর্যন্ত ১২টি আয়াতে মূসা ও ফেরাঊনের বর্ণনা দ্বারা স্বীয়
রাসূলকে সান্তবনা দেওয়ার পর এক্ষণে আল্লাহপাক আকাশমন্ডল ও বিশ্বলোকের সৃষ্টিতত্ত্ব
বর্ণনা করছেন, যাতে
মানুষ ঐসব বড় বড় সৃষ্টির তুলনায় নিজেদের তুচ্ছতা বুঝতে পারে এবং মৃত্যুর পরে
পুনরুত্থানে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে (২৭-৩৩ আয়াত)।-
(২৭) أَأَنْتُمْ
أَشَدُّ خَلْقاً
أَمِ السَّمَاءُ؟
بَنَاهَا ‘তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন, না আকাশের সৃষ্টি?
যা তিনি নির্মাণ করেছেন’।
ক্বিয়ামতে অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ যুক্তি প্রদর্শন করে বলেন, তোমাদের সৃষ্টির চাইতে কি আসমান
ও যমীনের সৃষ্টি অধিক বড় নয়? অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, لَخَلْقُ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
أَكْبَرُ مِنْ
خَلْقِ النَّاسِ- ‘আসমান ও যমীন সৃষ্টি অবশ্যই মানব
সৃষ্টির চাইতে অনেক বড় বিষয়’ (মুমিন ৪০/৫৭)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,أَوَلَيْسَ
الَّذِيْ خَلَقَ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
بِقَادِرٍ عَلَى
أَنْ يَّخْلُقَ
مِثْلَهُمْ- ‘আসমান ও যমীন যিনি সৃষ্টি করেছেন,
তিনি কি তাদের অনুরূপ (অর্থাৎ মানুষ) সৃষ্টি করতে সক্ষম নন’? (ইয়াসীন ৩৬/৮১)। একইভাবে আসমানকেও গুটিয়ে নিয়ে পুনরায় নতুনভাবে
সৃষ্টি করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,
يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهُ وَعْداً عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَ -
‘সেদিন আমরা আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটিয়ে নেওয়া হয় লিখিত দফতর। যেভাবে আমরা প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম
সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমাদের ওয়াদা সুনিশ্চিত। আমরা অবশ্যই তা করব’ (আম্বিয়া ২১/১০৪)। অতএব মানুষকে মৃত্যুদানের পর তার পুনরুত্থান
ঘটানো আল্লাহর জন্য খুবই সহজ ব্যাপার এবং একটি মাত্র নির্দেশ ‘কুন’ (হও) বললেই হয়ে
যাবে (ইয়াসীন ৩৬/৮২)।
بَنَاهَا ‘তিনি তাকে নির্মাণ করেছেন’
অর্থাৎ رفعها فوقكم
كالبناء ‘আকাশকে তোমাদের মাথার উপর উচ্চ করেছেন নির্মাণ কাঠামোর ন্যায়’। এখান থেকে
নতুন বাক্য শুরু হয়েছে।
(২৮) رَفَعَ
سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا ‘তিনি তার ছাদকে সুউচ্চ করেছেন।
অতঃপর তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন’। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে উপরে হওয়া। আল্লাহ বলেন, اللهُ
الَّذِي رَفَعَ
السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ
عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ‘আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী
স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত। যা তোমরা দেখে থাক’ (রা‘দ ১৩/২; লোকমান ৩১/১০)।
رَفَعَ
سَمْكَهَاঅর্থ أعلى سقفها
فى الهواء ‘মহাশূন্যে তার ছাদকে উচ্চ
করেছেন’। এখানে তিনটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে। ১- ছাদ ২- উচ্চ করা ৩- সুবিন্যস্ত করা।
(১) আকাশ হ’ল পৃথিবীর জন্য ছাদের মত। গৃহের উপরকার
নিরাপত্তা কাঠামোকে ছাদ বলা হয়। আকাশ তেমনি পৃথিবী ও এখানকার জীব জগতের জন্য
নিরাপত্তা কাঠামো হিসাবে কাজ করে। মহাশূন্য হ’তে নিপতিত উল্কাপিন্ড, সূর্য হ’তে বিকীরিত অতি বেগুনী রশ্মি ইত্যাদি যা জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর,
তা থেকে আকাশের বায়ু মন্ডল আমাদের রক্ষা করে। এছাড়াও অজানা বহু
ক্ষতি থেকে আকাশ আমাদের নিরাপদ রাখে। সে হিসাবে আকাশ পৃথিবীর জন্য ছাদ হিসাবে কাজ
করে।
(২) ‘ছাদকে সুউচ্চ করেছেন’। সাধারণতঃ ছাদ উঁচুই হয়ে
থাকে। কিন্তু এখানে ‘উঁচু করা হয়েছে’ বলার অর্থ আকাশরূপী ছাদকে বিশেষভাবে উঁচু করা
হয়েছে বান্দার বিশেষ কল্যাণের জন্য। আকাশ কত উঁচু, তার একটা
ধারণা পাওয়া যাবে নিম্নোক্ত হিসাব থেকে।
রাতের আকাশে আমরা যে অসংখ্য তারকারাজি দেখি, তার মধ্যে যেটাকে আমরা যত ছোট
দেখি, সেটা তত বড় এবং তত দূরে অবস্থিত। আরও বহু তারকা রয়েছে,
যা আজও মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়নি এবং যা দূরবীক্ষণ বা অণুবীক্ষণ
যন্ত্রেও ধরা পড়েনি। এই সকল নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং আমাদের সবচেয়ে
নিকটবর্তী নক্ষত্রটি হ’ল সূর্য। যা পৃথিবী হ’তে আয়তনে ১০৯ গুণ এবং ওযনে ৩ লক্ষ ৩৩
হাযার গুণ বড়। অন্যান্য নক্ষত্রগুলির কোন কোনটি সূর্যের চেয়ে দশ হাযার গুণ বড়। অথচ
দেখা যায় ছোট বিন্দুর মত। এতেই বুঝা যায় পৃথিবী থেকে আকাশ কত উচ্চে অবস্থিত।
(৩) ‘তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন’। অর্থাৎ সপ্ত আকাশকে
স্তরে স্তরে সজ্জিত করেছেন সুপরিকল্পিতভাবে। তাতে কোন ফাটল বা ছিদ্র নেই (মুল্ক ৬৭/৩-৪)। এক্ষণে বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী কোটি কোটি বছর
পূর্বে মহাশূন্যে সংঘটিত বিগব্যঙ বা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে যদি আকাশ ও বিশ্বলোকের
সৃষ্টি হয়ে থাকে, তথাপি
একথা কিভাবে বিশ্বাস করা যায় যে, বিস্ফোরণের ফলে বিচ্ছিন্ন
টুকরাগুলো সব সুনির্দিষ্ট দূরত্বে পতিত হবে এবং সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে সুনির্দিষ্ট
গতিবেগে লক্ষ কোটি বছর ধরে একই নিয়মে সন্তরণশীল থাকবে। অকল্পনীয় গতিবেগে আবর্তনশীল
হওয়া সত্ত্বেও কোন নক্ষত্রের সাথে কোন গ্রহ বা নক্ষত্রের কখনোই কোন এক্সিডেন্ট বা
সংঘর্ষ হয় না। এটা কিভাবে সম্ভব হ’ল? এরপরেও অন্য
গ্রহ-নক্ষত্র বাদ দিয়ে কেবলমাত্র পৃথিবী কিভাবে জীবজগতের বসবাসের যোগ্য হয়ে গড়ে
উঠলো? পৃথিবী সূর্য থেকে কিভাবে সুনির্দিষ্ট দূরে ২৩.৫
ডিগ্রী কোণে অবস্থিত হ’ল? পৃথিবীর আকাশ প্রায় ১১৫০ কিলোমিটার
বায়ুমন্ডল দিয়ে কিভাবে নিরাপদ করা হ’ল? নির্দিষ্ট দূরত্বে
অসংখ্য নক্ষত্ররাজি দিয়ে আকাশমন্ডলকে কিভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হ’ল? তার মধ্যে আবার নিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দিয়ে কিভাবে সুসজ্জিত করা হ’ল? (মুল্ক ৬৭/৫)। এগুলি কি লক্ষ-কোটি বছর পূর্বেকার হঠাৎ
বিস্ফোরিত বিগব্যঙ-এর অপরিকল্পিত ফসল?
তাই যদি হবে, তাহ’লে আর কেন বিগব্যঙ হয় না?
নাকি এগুলি কোন মহা পরিকল্পকের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার সুবিন্যস্ত
রূপ? বস্ত্ততঃ এসব কোন প্রকৃতির লীলাখেলা নয় বা
অন্ধ-কালা-বোবা কোন ন্যাচারের হুঁশ-বুদ্ধিহীন কর্মকান্ড নয়। বরং সবকিছু মহান
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত সুন্দরতম পরিকল্পনার ফসল। তিনিই আকাশমন্ডলকে
পৃথিবীর জীবকুলের কল্যাণে সুসজ্জিত করেছেন। নিঃসন্দেহে আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই
সুশৃংখল ও সুবিন্যস্ত। আল্লাহর এই সৃষ্টির এবং এই নিয়মের কোন ব্যতিক্রম হয় না (রূম ৩০/৩০; ফাত্বির ৩৫/৪৩)। সুবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহী।
এক মিসরীয় কৃষকের গল্প :
শায়খ তানতাভী জাওহারী (১৮৫৯-১৯৪০ খৃঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, একদিন এক কৃষক এসে আমাকে বলল যে,
শয়তান একদা আমাকে প্ররোচিত করল যাতে আমি নালার পানি ছেড়ে দেই এবং
আমার শত্রুর কৃষিজমি ডুবিয়ে দিয়ে তার ফসল নষ্ট করি। আমি পানি ছেড়ে দেয়ার জন্য
নালায় নামতেই দেখি যে, সেখানে আকাশের তারাগুলো সুন্দরভাবে
খেলছে। এতে আমার মধ্যে ভাবান্তর সৃষ্টি হ’ল। আমি মনে মনে বললাম, এমন সুন্দর সৃষ্টি যার, যিনি আমাকে পানির মধ্যে তার
অপরূপ সৌন্দর্য প্রদর্শন করছেন, আমি কিভাবে তার অবাধ্যতা করব?
না না এটা কখনোই সম্ভব নয়- বলেই আমি নালা থেকে উঠে এলাম’।
নালার পানিতে খেলতে থাকা তারকারাজির চেহারা দেখে আল্লাহর ভয়ে ভীত
হয়ে মিসরীয় কৃষক যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা হ’তে দূরে যেতে পারে, তাহ’লে বাংলাদেশের মাছচাষীর বহু
কষ্টের পুকুরে বা ঘেরের পানিতে বিষ ঢেলে দেবার সময় কি এদেশের মানুষ আল্লাহর ভয়ে
ভীত হবে না? বহু কোটি মাইল উঁচুতে থাকা তারকার ছবি যদি তোমার
পুকুরে দেখা যায়, তাহ’লে সাত আসমানের উপরে আরশে অবস্থানকারী
আল্লাহর সামনে কি তোমার অপকর্মের ছবি ভেসে ওঠে না? অতএব হে
মানুষ! আল্লাহকে ভয় কর।
হে বিজ্ঞ পাঠক! আপনি দেখছেন যে, ঐ তারাগুলি কত লক্ষ-কোটি মাইল উপরে মহাকাশে বিচরণ
করছে আল্লাহর হুকুমে। অত দূরে থেকে আকাশ আপনাকে আলো দিয়ে, বায়ু
দিয়ে, বৃষ্টি দিয়ে লালন করে চলেছে ঘরের ছাদের মত। আর এটাই
হ’ল رَفَعَ سَمْكَهَا‘তার ছাদকে উচ্চ করেছেন’-এর
প্রকৃত মর্ম।
(২৯) َوأَغْطَشَ
لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ
ضُحَاهاَ ‘তিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এর রাত্রিকে এবং প্রকাশিত করেছেন এর সকালকে’।
অর্থাৎ اظلم ليلها
وأنار نهارها ‘আকাশের রাত্রিকে অন্ধকারময় এবং
দিবসকে আলোকময় করেছেন’। ها সর্বনাম দ্বারা السماء অর্থাৎ আকাশকে বুঝানো হয়েছে।
রাত্রি ও দিনের আবর্তন-বিবর্তন ঘটে পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে।
পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপরে সেকেন্ডে ১৮ মাইল গতিবেগে ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘুরে আসে। এটাই
হ’ল তার ‘আহ্নিক গতি’। যেমন ঘূর্ণায়মান লাটিম নিজ দন্ডের উপর ঘুরে থাকে। এই
আবর্তনের সময় পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের দিকে পড়ে সেই অংশে দিন হয় ও অপরাংশে রাত হয়।
যেমন বাংলাদেশে যখন রাত হয়,
আমেরিকায় তখন দিন হয়। অনুরূপভাবে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে
আসতে লাগে কাছাকাছি ৩৬৫ দিন। একে তার ‘বার্ষিক গতি’ বলে। এই গতিবেগের কোন কম-বেশী
হয় না। পৃথিবীর এই আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির মধ্যে রয়েছে জীবজগতের লালন-পালনের এক
নিখুঁত পরিকল্পনা। যার মধ্যে আল্লাহর রুবূবিয়াতের ও রহমানিয়াতের অর্থাৎ পালনগুণ ও
দয়াগুণ প্রকাশিত হয়েছে। অতএব যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বচরাচরের প্রতিপালকের জন্য,
যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু।
(৩০) وَالْأَرْضَ
بَعْدَ ذَلِكَ
دَحَاهَا ‘পৃথিবীকে এর পরে তিনি বিস্তৃত করেছেন’।
دَحَاهَا অর্থ পৃথিবীতে বিভিন্ন বস্ত্ত উদ্গত হওয়ার জন্য
প্রস্ত্তত করা ও বিস্তৃত করা। যেমন পানি, ঘাস-পাতা, নদী-নালা, পাহাড়-জঙ্গল ইত্যাদি। এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আকাশ
সৃষ্টির পূর্বে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। যা হা-মীম সাজদাহ ৯-১২ আয়াতে ইতিপূর্বে
বর্ণিত হয়েছে। তবে পৃথিবীকে বিস্তৃত এবং গাছ-পালা, সাগর-নদী,
পাহাড়-জঙ্গল ইত্যাদি সৃষ্টির মাধ্যমে মনুষ্য বাসোপযোগী করা হয়েছে
আকাশ সৃষ্টির পরে। ইবনু আববাস (রাঃ) ছাড়াও একাধিক বিদ্বান একথা বলেছেন এবং ইবনু
জারীর এটাকেই গ্রহণ করেছেন (ইবনু কাছীর)। বাক্যের শুরুতে والأرضَ যবরযুক্ত হওয়ার কারণ হ’ল এর পূর্বে دحا ক্রিয়া উহ্য রয়েছে অর্থাৎ دَحَا
الْأَرْضَ (কুরতুবী)।
‘পৃথিবীকে এরপরে বিস্তৃত করা হয়েছে’- এ বাক্যের
মধ্যে পৃথিবী সৃষ্টির গুঢ় রহস্য সমূহ নিহিত রয়েছে, যা
বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিরাট গবেষণার দুয়ার খুলে দেয়। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে,
পৃথিবী বর্তমান অবস্থায় আসতে লক্ষ-কোটি বছর অতিবাহিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে গোলাকার এই পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ কমলার খোসার ন্যায়, যার পুরুত্ব কমবেশী সাগরের নীচে গড়ে ৬ কি.মি এবং স্থলভাগে ৩০-৫০ কি.মি. (উইকিপিডিয়া)। তবে সঠিক কথা আল্লাহ জানেন। বস্ত্ততঃ ভূপৃষ্ঠের
উপরেই সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-জঙ্গল, বৃক্ষ-লতা, পশু-পক্ষী
সবকিছু নিয়ে আমরা বসবাস করি। মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের ফলেই এই মহাসৃষ্টি সম্ভব
হয়েছে। অতএব তাঁর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।
(৩১-৩৩) أَخْرَجَ
مِنْهَا مَاءَهَا
وَمَرْعَاهَا، وَالْجِبَالَ
أَرْسَاهَا، مَتَاعاً
لَّكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ
(৩১) ‘সেখান থেকে তিনি নির্গত করেছেন পানি ও
উদ্ভিদরাজি (৩২) আর পাহাড়সমূহকে তিনি স্থাপন করেছেন দৃঢ়ভাবে (৩৩) তোমাদের ও
তোমাদের গবাদিপশু সমূহের ভোগ্যবস্ত্ত হিসাবে।’
أَرْسَاهَا অর্থ قررها
وأثبتها وأكَّدها
فى أماكنها ‘পাহাড়কে স্থির করা, সুস্থাপিত করা এবং যথাস্থানে সুদৃঢ় করা’।
অর্থাৎ পাহাড়কে ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে, যাতে তা সুদৃঢ় থাকে এবং ঝড়-বন্যায় নড়াচড়া না করে। যেমন অন্য আয়াতে
আল্লাহ বলেন, وَأَلْقَى
فِي الْأَرْضِ
رَوَاسِيَ أَنْ
تَمِيدَ بِكُمْ ‘আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত
স্থাপন করেছেন। যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়’... (নাহল ১৬/১৫; আম্বিয়া ২১/৩১; লোকমান ৩১/১০)।
বর্ণিত আয়াত তিনটি পূর্ববর্তী ৩০ আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ। অর্থাৎ
তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং সেখান থেকে নদী-নালা, গাছ-পালা উদ্গত করেছেন ও
পাহাড়কে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর কল্যাণার্থে। এর দ্বারা
বুঝা যায় যে, পৃথিবীকে এবং আকাশমন্ডলকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন
কেবলমাত্র মানুষের সেবা ও মঙ্গলের জন্য।
مَتَاعاً
لَّكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ ‘তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশু
সমূহের কল্যাণের জন্য’। এখানে গবাদিপশুকে একই বাক্যে বর্ণনার মাধ্যমে ইঙ্গিত রয়েছে
যে, গবাদিপশুকে আল্লাহ মানুষের সেবার জন্য ও তা থেকে উপকার
লাভের জন্য বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন। যেমন অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,وَإِنَّ
لَكُمْ فِي
الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً
نُّسقِيْكُمْ مِّمَّا
فِيْ بُطُوْنِهَا
وَلَكُمْ فِيْهَا
مَنَافِعُ كَثِيْرَةٌ
وَّمِنْهَا تَأْكُلُوْنَ،
وَعَلَيْهَا وَعَلَى
الْفُلْكِ تُحْمَلُوْنَ- ‘তোমাদের জন্য গবাদিপশু সমূহের
মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমরা তোমাদেরকে পান করিয়ে থাকি তাদের উদরস্থিত বস্ত্ত
(দুধ) থেকে। এদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা এবং তোমরা এদের কতককে
ভক্ষণ কর’। ‘তোমরা এদের পিঠে ও নৌযানে আরোহণ করে থাক’ (মুমিনূন ২৩/২১-২২)। শুধু তাই নয়, শক্তিশালী এইসব পশুকে আল্লাহ মানুষের জন্য অনুগত ও
তাদের জন্য খাদ্যের উপযোগী করে দিয়েছেন (হজ্জ ২২/৩৬; ইয়াসীন ৩৬/৭২) যাতে মানুষ এদের থেকে সহজে উপকার লাভ করতে পারে।
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
পশু-পক্ষী মানুষের জন্য ভোগ্যবস্ত্ত। কোন পূজার বস্ত্ত নয়। বরং
এগুলি মানুষের কল্যাণ লাভের ও প্রাণীজ খাদ্যের উৎস মাত্র। অথচ হতভাগা মানুষ গাভী,
সাপ ইত্যাদির পূজা করে থাকে। অতএব ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ ‘সর্বজীবে
দয়া’ ইত্যাদি নীতিবাক্য স্রেফ অসার ও মনগড়া মাত্র।
আকাশমন্ডল ও বিশ্বলোকের সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনা শেষে এক্ষণে আল্লাহ
বিচার দিবসে জাহান্নামী ও জান্নাতীদের কৃতকর্ম স্মরণ ও দুনিয়াতে তাদের প্রধান
দু’টি করে বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করছেন (৩৪-৪১ আয়াত)।-
(৩৪) فَإِذَا
جَاءَتِ الطَّامَّةُ
الْكُبْرَى ‘অতঃপর যখন মহাসংকট এসে যাবে’।
الطَّامَّةُ
الْكُبْرَى অর্থ الداهية
العظمى ‘সবচেয়ে ভয়ংকর বিপর্যয়’। الطَّامَّةُ অর্থمَا
تَطِمُّ عَلَى
كُلِّ شَيْئٍ ‘যা সবকিছুর উপর ছেয়ে যায়’। এর
দ্বারা ইস্রাফীলের দ্বিতীয় ফুৎকার (النفخة
الثانية) বুঝানো হয়েছে, যার ফলে ক্বিয়ামত হবে। একে نَفْخَةُ
الْبَعْثِ বা
‘পুনরুত্থানের ফুৎকার’ বলা হয়। আর প্রথম ফুৎকারকে نَفْخَةُ
الصَّعْقِ বা
‘কম্পনের ফুৎকার’ বলা হয় (যুমার ৩৯/৬৮)। যার ফলে সকল প্রাণী মারা পড়বে। ইবনু আববাস (রাঃ)
বলেন, ক্বিয়ামতকে الطامَّةُ
الكبرى এজন্য
বলা হয়েছে যে, لأنها
تَطُمُّ على
كل أمرٍهائل
مفظع ‘এটি সকল ভয়ংকর ও ভীতিপ্রদ বস্তর উপরে জয়লাভ করে (ইবনু কাছীর)। কেননা এর চেয়ে ভয়ংকর আর কিছুই নেই। যেমন আল্লাহ
অন্যত্র বলেন, وَالسَّاعَةُ
أَدْهَى وَأَمَرُّ ‘ক্বিয়ামত অত্যন্ত ভয়াবহ এবং
তিক্ততর’ (ক্বামার ৫৪/৪৬)।
(৩৫-৩৬) يَوْمَ
يَتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ
مَا سَعَى،
وَبُرِّزَتِ الْجَحِيْمُ
لِمَنْ يَّرَى ‘যেদিন মানুষ তার কৃতকর্মসমূহ
স্মরণ করবে’। ‘এবং দর্শকের জন্য জাহান্নামকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে’।
অর্থাৎ যেদিন প্রত্যেকে নিজের আমলনামা দেখবে এবং নিজের কৃতকর্মের
রেকর্ড তার সামনে ভেসে উঠবে,
তখন অবিশ্বাসী ও দুষ্কর্মপরায়ণ লোকেরা অনুতাপে ও অনুশোচনায় পুড়তে
থাকবে। আল্লাহ বলবেন, اقْرَأْ
كِتَابَكَ كَفَى
بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ
عَلَيْكَ حَسِيْبًا ‘তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ
তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট’ (ইসরা ১৭/১৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, يَوْمَئِذٍ
يَّتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ
وَأَنَّى لَهُ
الذِّكْرَى- ‘সেদিন মানুষ (তার কৃতকর্ম) স্মরণ
করবে। কিন্তু এই স্মরণ তার কি কাজে আসবে?’ (ফজর ৮৯/২৩)।
বাক্যের শুরুতে يَوْمَ ‘বদল’ হয়েছে পূর্ববর্তী আয়াতের إذَا থেকে। অর্থাৎ যখন বা যেদিন। مَا
سَعَى ‘যা সে করেছিল (দুনিয়াতে)’। অর্থাৎ ভাল ও মন্দ কর্মের উপরেই বান্দার
জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ভর করছে। এর মধ্যে অদৃষ্টবাদী জাবরিয়া দর্শনের প্রতিবাদ
রয়েছে। এর মধ্যে আরেকটি বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে যে, দুনিয়াতে
মানুষ অনেক কিছু ভুলে গেলেও আখেরাতে সবকিছু তার স্মরণে আসবে। কেননা ঐ সময় প্রত্যেক
মানুষ যেমন বয়সে যুবক হবে, তার স্মৃতিপট তেমনি তাযা হবে
আল্লাহর হুকুমে।
وَبُرِّزَتِ
الْجَحِيْمُ لِمَن
يَّرَى ‘জাহান্নাম উন্মুক্ত হবে দর্শকের জন্য’। بُرِّزَتِ অর্থ ظهرت বা كشفت‘গোপন অবস্থা থেকে যা
স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় এবং যা চক্ষুষ্মান সকলে দেখতে পায়’। এখানে দর্শক মুমিন ও
কাফের দুই-ই হ’তে পারে। মুমিন হ’লে তার অর্থ হবে জাহান্নামের আযাব দেখে তা থেকে
উপদেশ হাছিল করা এবং জান্নাতের অতুলনীয় নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা। আর কাফের হ’লে
তার অর্থ হবে জাহান্নামে প্রবেশ করা ও সেখানকার নানাবিধ শাস্তি ভোগ করা।
এটি فَإِذَا جَاءَتِ
الطَّامَّةُ الْكُبْرَى ‘অতঃপর যখন মহাসংকট এসে যাবে’-
বাক্যের জওয়াব হ’তে পারে। অর্থাৎفَإِذَا
جَاءَتِ الطَّامَّةُ
الْكُبْرَى دَخَلَ
أَهْلُ النَّارِ
النَّارَ وَأَهْلُ
الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ ‘যখন মহাবিপর্যয় এসে যাবে,
তখন জাহান্নামবাসীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং জান্নাতবাসীগণ
জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (কুরতুবী)।
(৩৭-৩৯) فَأَمَّا
مَنْ طَغَى، وَآثَرَ
الْحَيَاةَ الدُّنْيَا،
فَإِنَّ الْجَحِيْمَ
هِيَ الْمَأْوَى ‘তখন যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছে’
‘এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে’; ‘জাহান্নাম তার
ঠিকানা হবে’।
মক্কার ধনকুবের কাফের নেতাদের সম্পর্কে আয়াতটি নাযিল হ’লেও এর
উদ্দেশ্য সকল যুগের কাফের ও অবিশ্বাসী সমাজ।
অত্র আয়াতে ও পরবর্তী আয়াতে জাহান্নামী ও জান্নাতী প্রত্যেকের
দু’টি করে প্রধান বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। জাহান্নামী যারা হবে দুনিয়াতে তাদের
প্রধান দু’টি বৈশিষ্ট্য হবে ‘সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা’। সীমাহীন প্রবৃত্তিপরায়ণতার
কারণে তারা আখেরাতকে ভুলে যাবে এবং নিজেদের কাজে-কর্মে দুনিয়াকে আখেরাতের উপর
অগ্রাধিকার দিবে।
এখানে আলিফ ও লামসহ الْمَأْوَى বলার অর্থ হ’ল ‘একমাত্র ঠিকানা’। জাহান্নাম
ব্যতীত অন্যত্র তাদের কোন ঠিকানা নেই (তানতাভী)। অবশ্য যদি মৃত্যুকালে তার তাওহীদ বিশ্বাস ঠিক
থাকে এবং শিরক না করে থাকে,
তাহ’লে ‘ফাসেক মুমিন’ হিসাবে সে ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত
পাবে এবং পরবর্তীতে আল্লাহর বিশেষ ক্ষমা পেয়ে জান্নাতে যাবে।[4] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোক আমার
শাফা‘আতের কারণে জাহান্নাম থেকে মুক্ত হবে। অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।
তাদেরকে বলা হবে ‘জাহান্নামী’।[5] তবে কাফেরের জন্য জাহান্নাম হবে একমাত্র এবং
চিরস্থায়ী ঠিকানা। তারা কখনোই সেখান থেকে বের হবে না।
এখানে وَآثَرَ الْحَيَاةَ
الدُّنْيَا ‘এবং দুনিয়াবী জীবনকে অগ্রাধিকার দিবে’ অর্থাৎ إنهمك
فى أمور
الدنيا‘দুনিয়াবী কাজে ডুবে থাকবে’। আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা এবং আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে
চিন্তা-গবেষণার জন্য সে তার সময় ও শ্রম ব্যয় করবে না। দুনিয়াতে সে যেমন মূর্খতায় ও
ভোগসর্বস্বতায় ডুবে থাকবে, আখেরাতেও তেমনি জাহান্নামের আগুনে
ডুবে থাকবে।
(৪০-৪১) وَأَمَّا
مَنْ خَافَ
مَقَامَ رَبِّهِ
وَنَهَى النَّفْسَ
عَنِ الْهَوَى،
فَإِنَّ الْجَنَّةَ
هِيَ الْمَأْوَى ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার
প্রভুর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করেছে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির গোলামী হ’তে বিরত
রেখেছে’; ‘জান্নাত তার ঠিকানা হবে’।
অত্র আয়াতে জান্নাতী বান্দাদের দু’টি প্রধান বৈশিষ্ট্যের কথা বলা
হয়েছে। এক- সর্বাবস্থায় আল্লাহভীতি বজায় রাখা এবং দুই-
নিজেকে নফ্সের পূজা হ’তে বিরত রাখা। দুনিয়াতে যারা উক্ত দু’টি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী
হবে এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের সম্মুখে নিজেকে সমর্পণ করে দিবে, আখেরাতে সে ব্যক্তি জান্নাতী
হবে। অর্থাৎ শুরু থেকেই সে জান্নাতী হবে এবং জান্নাতই তার একমাত্র ঠিকানা হবে।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
أَنْتُمْ فِي زَمَانٍ يَقُودُ الْحَقُّ الْهَوَى، وَسَيَأْتِي زَمَانٌ يَقُودُ الْهَوَى الْحَقَّ فَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ ذَلِكَ الزَّمَانِ-
‘তোমরা এমন একটি যামানায় আছ, যখন
হক নফসকে পরিচালনা করছে। সত্বর এমন একটি যামানা আসবে, যখন
নফস হককে পরিচালনা করবে। সেই যামানা থেকে আমরা আল্লাহর নিকটে পানাহ চাই’ (কুরতুবী)।
বস্ত্ততঃ নিজের নফসকে শয়তানের আনুগত্য থেকে আল্লাহর আনুগত্যে
ফিরিয়ে নেয়া এবং সেখানে সর্বদা দৃঢ়ভাবে বেঁধে রাখা সবচাইতে কঠিন কাজ। একাজে যিনি
সফল হন, তিনি
দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হন এবং জান্নাত তার একমাত্র ঠিকানা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য যে,
‘নফস’ তিন প্রকার : ১- নফসে আম্মারাহ (প্রবৃত্তি পরায়ণ নফস; ইউসুফ ১২/৫৩)। ২-
নফসে লাউয়ামাহ (তিরষ্কারকারী নফস; ক্বিয়ামাহ ৭৫/১-২)। ৩- নফসে মুত্বমাইন্নাহ (প্রশান্ত হৃদয়; ফজর ৮৯/২৭-৩০)। মানুষ
তার ব্যবহারিক জীবনে সর্বদা এ তিনটি নফসের উপস্থিতি বুঝতে পারে। সর্বদা নফসে
আম্মারাহকে দমিত রাখাই তার কর্তব্য।
জাহান্নামী ও জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা শেষে অতঃপর ক্বিয়ামত
কবে হবে তার জওয়াব এবং সে সময় লোকদের মানসিক অবস্থা কেমন হবে, সে বিষয়টি আল্লাহ বর্ণনা করেছেন (৪২-৪৬ আয়াত)।
(৪২-৪৪) َيسْأَلُوْنَكَ
عَنِ السَّاعَةِ
أَيَّانَ مُرْسَاهَا،
فِيْمَ أَنْتَ
مِنْ ذِكْرَاهَا،
إِلَى رَبِّكَ
مُنْتَهَاهَا- ‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, ক্বিয়ামত কখন হবে?’। ‘এ বিষয়ে বলার জন্য তুমি কে’?
‘এর চূড়ান্ত জ্ঞান তো তোমার প্রভুর নিকটে’।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, মক্কার মুশরিকরা রাসূল (ছাঃ)-কে ঠাট্টাচ্ছলে এ
প্রশ্ন করেছিল। তার জবাবে এ আয়াত নাযিল হয়। مُرْسَاهَا অর্থ قيامها ‘সংঘটিত হওয়া’।
فِيْمَ
أَنْتَ مِنْ
ذِكْرَاهَا অর্থ فيم
أنت من
ذلك حتى
يسألونك بيانَه
ولست ممن
يعلمه ‘এ ব্যাপারে তুমি কে যে তারা এ বিষয়ে বলার জন্য তোমাকে প্রশ্ন করে? অথচ এ বিষয়ে তোমার জানার কথা নয়’। ذِكْرَى অর্থ ذكر অর্থাৎ বলা। মুশরিকদের বারবার প্রশ্নের বিরুদ্ধে
এটি আল্লাহর তাচ্ছিল্যভরা জওয়াব। আল্লাহ বলেন, إِلَى رَبِّكَ
مُنْتَهَاهَا অর্থمنتهى
علمها عند
ربك فلا
يوجد عند
غيره‘উক্ত বিষয়ের চূড়ান্ত জ্ঞান তোমার পালনকর্তার নিকটে রয়েছে। অতএব তা অন্যের
কাছে পাওয়া যাবে না’। যেমন অন্যত্র আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, ُقلْ
إِنَّمَا عِلْمُهَا
عِنْدَ رَبِّيْ
لاَ يُجَلِّيْهَا
لِوَقْتِهَا إِلاَّ
هُوَ- ‘তুমি বল, এর
জ্ঞান কেবলমাত্র আমার পালনকর্তার নিকটে রয়েছে। যা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়কালটি কেবল
তিনিই প্রকাশ করবেন’ (আ‘রাফ ৭/১৮৭)। পাঁচটি বিষয়ের ইলম কেবলমাত্র আল্লাহর কাছেই
রয়েছে। তার প্রথমটি হ’ল ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের সময়কাল (লোকমান ৩১/৩৪)। অতএব এ বিষয়ে রাসূলকে প্রশ্ন করা বৃথা।
রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের এক মজলিসে জিব্রীল (আঃ) মানুষের বেশে
উপস্থিত হয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, مَا
الْمَسْئُوْلُ عَنْهَا
بِأَعْلَمَ مِنَ
السَّائِلِ‘এবিষয়ে যাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে, তিনি প্রশ্নকারীর
চাইতে অধিক অবগত নন’।[6]
ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের পর লোকদের মানসিক অবস্থা কেমন হবে, সে বিষয়ে অতঃপর আল্লাহ বলেন-
(৪৫-৪৬) إِنَّمَا
أَنْتَ مُنْذِرُ
مَنْ يَّخْشَاهَا،
كَأَنَّهُمْ يَوْمَ
يَرَوْنَهَا لَمْ
يَلْبَثُوْا إِلاَّ
عَشِيَّةً أَوْ
ضُحَاهَ- ‘তুমি তো কেবল সতর্ককারী ঐ
ব্যক্তির জন্য, যে ক্বিয়ামতকে ভয় করে’। ‘যেদিন তারা তা দেখবে,
সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে ছিল একটি সন্ধ্যা অথবা একটি
সকাল’।
عَشِيَّةً অর্থ অপরাহ্নে সূর্য ঢলে পড়া থেকে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত’। ضُحَى অর্থ সূর্যোদয় থেকে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়া
পর্যন্ত’। এখানে সংক্ষিপ্ত সময়কাল বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, কাফেরদের অহেতুক প্রশ্নে বিব্রত
হবে না। কেননা তুমি প্রেরিত হয়েছ মানুষকে ক্বিয়ামত হ’তে এবং আল্লাহর আযাব ও গযব
হ’তে ভয় প্রদর্শনের জন্য। অতএব যারা ক্বিয়ামতকে ভয় করে, তুমি
কেবল তাদেরই ভয় দেখাবে। যাতে তারা উপকৃত হয় এবং দুনিয়া ও আখেরাতে লাভবান হয়। আর
যারা এসবের পরোয়া করে না, তাদের জন্য তোমার কোন মাথাব্যথা
নেই। কেননা إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ
بِالْحَقِّ بَشِيْراً
وَّنَذِيْراً وَّلاَ
تُسْأَلُ عَنْ
أَصْحَابِ الْجَحِيْمِ- ‘আমরা তোমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছি
জান্নাতের সুসংবাদদাতা ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শনকারী রূপে। আর জাহান্নামের
অধিবাসীদের সম্পর্কে তুমি জিজ্ঞাসিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/১১৯)। যদিও শেষনবী হিসাবে তিনি সকল মানুষের জন্য
প্রেরিত হয়েছেন (সাবা ৩৪/২৮)। আল্লাহর উপরোক্ত কথার মধ্যে অবিশ্বাসীদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও
শ্লেষ মিশ্রিত রয়েছে।
....كَاَنَّهُمْ يَوْمَ
يَرَوْنَهاَ অর্থাৎ
মানুষ যখন স্ব স্ব কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে সমবেত হবে, তখন ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তির
ন্যায় তারা তাদের পূর্ববর্তী জীবনকে খুবই সংক্ষিপ্ত মনে করবে এবং ভাববে যে,
সেটা ছিল একটি সন্ধ্যা বা একটি সকাল মাত্র। অন্য আয়াতে এসেছে,إلاَّ
سَاعَةً مِنَ
النَّهَارِ ‘দিনের একটি মুহূর্তকাল’ (ইউনুস ১০/৪৫)। ক্বিয়ামতের ভয়ংকর অবস্থা দেখে মানুষ প্রচন্ড ভীত
হয়ে এরূপ মনে করবে।
‘সুখের দিন সংক্ষিপ্ত হয় এবং দুঃখের দিন লম্বা হয়’।
সে হিসাবে যারা জান্নাতী হবে, হাদীছের ভাষায় কবরে তারা বাসর
ঘরে নতুন বরের মত শান্তির ঘুমে বিভোর হয়ে যাবে।[7] তাদের জন্য অবশ্য দুনিয়ার জীবন ও কবরের জীবন
উভয়টাই সংক্ষিপ্ত মনে হবে। কিন্তু যারা জাহান্নামী হবে, তাদের নিকট দুনিয়াবী জীবন
সংক্ষিপ্ত মনে হ’লেও প্রচন্ড আযাবের কারণে কবরের জীবন সংক্ষিপ্ত মনে হবার কথা নয়।
কিন্তু ক্বিয়ামতের ভয়ংকর দিনে তাদের নিকট কবরের আযাব নিঃসন্দেহে কম মনে হবে।
সার-সংক্ষেপ :
(১) মূসা (আঃ) ফেরাঊনকে বলেছিলেন, وَأَهْدِيَكَ
إِلَى رَبِّكَ
فَتَخْشَى ‘আমি তোমাকে তোমার প্রভুর পথ দেখাব। যাতে তুমি তাকে ভয় কর’। সূরার শেষে
আল্লাহ তার শেষনবীকে বলছেন, إِنَّمَا
أَنْتَ مُنْذِرُ
مَن يَّخْشَاهَا ‘তুমি কেবল ভয় দেখাবে সেই
ব্যক্তিকে যে ক্বিয়ামতকে ভয় করে’। দুই মহান নবীর দুই কথার মধ্যে সামঞ্জস্য এই যে,
ভয় কেবল তাকেই দেখানো যায়, যে ভয় করে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হঠকারী ও অহংকারী, আখেরাতের ভয়
প্রদর্শন তার কোন কাজে আসবে না। তার পরিণাম ফেরাঊনের মত হবে এবং সে দুনিয়া ও
আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(২) এখানে ফেরাঊনের উদাহরণ দেয়ার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে
সকল যুগের যালেম শাসক ও শোষকদের প্রতি। আল্লাহর বান্দা হিসাবে সকল মানুষ সমান এবং
তাঁর দেওয়া নে‘মত সমূহ ভোগের অধিকার সবার সমান। অথচ যালেমরা মযলূমের রক্ত শোষণ করে
গর্ববোধ করে। এদের অবস্থা ফেরাঊনের মতই হবে। তবে সবাইকে আল্লাহর ভয় দেখানো ও তার
প্রতি আহবান করা সকল মুমিনের কর্তব্য।
(৩) সূরার মধ্যে সর্বাধিক শিক্ষণীয় ইঙ্গিত রয়েছে
মানুষকে তার নিজের সৃষ্টিতত্ত্ব এবং আকাশ-পৃথিবী, উদ্ভিদ-পাহাড়
ও গবাদিপশু প্রভৃতির সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে জানা ও তা থেকে কল্যাণ লাভে উদ্বুদ্ধ
করার প্রতি। যাতে মানুষ এ সবের সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পায় এবং তাঁর প্রতি দৃঢ়
বিশ্বাসী ও অনুগত হয়। সাথে সাথে ক্বিয়ামত ও আখেরাতে জবাবদিহিতার ব্যাপারে সতর্ক
হয়।
সারকথা :
হঠকারী ব্যক্তিরা যতই বলুক ক্বিয়ামত হবেই এবং সকলকে আল্লাহর নিকট
জবাবদিহি করতে হবেই। সূরার শুরু ও শেষে ক্বিয়ামতের বর্ণনার মাধ্যমে মানুষকে সেবিষয়ে
নিশ্চিত করে বলা হয়েছে।
وفقنا
الله لما
يحب ويرضاه
وأعاذنا الله
من غضبه
وقهره
[1]. আহমাদ হা/১৮৫৫৭, ইবনু মাজাহ;
মিশকাত হা/১৬৩০, ১৬২৭ সনদ ছহীহ।
[2]. বুখারী হা/৩৯৩৫, মুসলিম
হা/২৯৫৫; মিশকাত হা/৫৫২১।
[3]. দ্রষ্টব্য : নবীদের কাহিনী, মূসা
ও হারূণ (আঃ) ২/৩৬-৩৮।
[4]. তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫৫৯৮-৫৬০০, সনদ ছহীহ।
[5]. বুখারী হা/৬৫৬৬, মিশকাত
হা/৫৫৮৫ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা ও সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়-২৮ ‘হাউয ও শাফা‘আত’
অনুচ্ছেদ-৪।
[6]. মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২।
[7]. তিরমিযী হা/১০৭১; মিশকাত
হা/১৭০, সনদ হাসান।
0 Comments