🔴মুহাম্মাদ মুরসি মিশরে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন নাই।

🔴মুহাম্মাদ মুরসি মিশরে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন নাই। বছর পেরুনোর আগেই প্রশাসনে, এবং রাজপথে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল।

.জুনে গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে, নভেম্বরে এক ডিক্রি জারী করে উনি নিজেই নিজেকে মিশরের সকল আদালতের উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করেন। গনতন্ত্রে এইরকম ডিক্রি এমন আজব যে, সেই সময় এই কথা বলাবলি হয়েছে যে, মুরসি নিজেকে ফেরাউনের সমান ক্ষমতাধর বানাতে চাচ্ছেন। সেই সমালোচনা মুছে দিতে পরে ব্রাদারহুডের ক্যাডাররা সিসিকে মিশরের ফেরাউন বলতে শুরু করে।

.শুধু ঐ ডিক্রি নয়, বাতিল পার্লামেন্ট পুনর্বহাল, রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বড় বড় জায়গায় চমকে দেয়ার মতো একে বরখাস্ত ওকে পদায়ন, সংবিধান বাতিল, সংবিধান প্রণয়ন - বিরাট হুলস্থুল শুরু করে দেন। এবং, তা করতে থাকেন খুব তাড়াহুড়োর সাথে। 

.

হয়ত, গণতন্ত্রে ব্রাদারহুডের ঈমান এমন পোক্ত যে, নির্বাচিত হতে পারাটাই শেষ কথা বলে তারা ভেবেছে।
.

তবে, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে, এবং, সেনাবাহিনী যখন তাকে অপসারণ করে, তা বিপুল সংখ্যক প্রতিবাদী জনগন, প্রধান বিরোধী নেতা মোহাম্মাদ এল বারাদেই, আল আজহারের গ্রান্ড মুফতি, ক্রিপটিক অর্থোডক্স কৃশ্চান পোপ থিওডর দ্বিতীয় এদের প্রকাশ্য সমর্থন ও অনুমোদনেই হয়েছে।
.

অনেকে বলতে চাইবেন, এরা সবাই ওমুক-তমুকের দালাল, ভাড়া করা কুত্তা, এবং মিশরে ব্রাদারহুড, এবং শুধুমাত্র ব্রাদারহুড হলো ঠিক, এবং ব্রাদারহুডের সব বিরোধীতা হলো অগ্রহণযোগ্য। এইসব ফ্যানাটিক কথাবার্তা পাত্তা দেয়ার কিছু নাই, এসব না গনতান্ত্রিক, না ইসলামিক কথাবার্তা। 
.

বরং, এই ব্যাপারগুলোই গণতন্ত্র! ক্ষমতাদখলের জন্যে শিয়াল-কুকুরে কামড়াকামড়ি - সেটাই গনতন্ত্রে নেইম অব দ্যা গেইম।
.

বিরোধীদল সরকারি দলকে ক্ষমতা থেকে নামাতে চাইলে বিরাট কোনো ক্ববিরা গোনাহ্‌ হয়ে যায় না। গোনাহ্‌ হতে পারতো খলিফা কিংবা আমিরুল মোমিনীন এর বিরুদ্ধাচারণ করলে; কিন্তু ব্রাদারহুড ও সমমনারাতো সেটা চায় না। বা, অন্তত, মুরসি তা ছিলেন না।
.

ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক ব্যার্থতা আমার আলোচনার উদ্দেশ্য নয়, ওরা ব্যার্থ হবে এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই, কাজেই এই নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট আমি করারও কথা নয়। যারা এর সমর্থক, তারা তা করতে পারেন; অথবা আমাদের কোনো ভুল নাই, ভুল হতেই পারে না - এইরকম ভেবে বসে থাকতে পারেন।
.

আবার স্মরণ রাখবো, এই মিশরেই, এই ব্রাদারহুড ১৯৪৮ সালে মিশরের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করেছে, তারা প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরকে হত্যা করতে চেয়েছে। গামাল আবদেল নাসেরের মতো নেতার বিরোধীতা করে গেছে তারা ধর্মীয় নিষ্ঠার সাথে। সেদিন তাদের ও সৌদী আরবের লক্ষ্য অভিন্ন ছিল।
.

আজ মোহাম্মাদ মুরসি যেভাবে মারা গেলেন, নিজের অবস্থান ও বিশ্বাসের সাথে আপোষ না করে বীরের মতো মৃত্যুর মুখোমুখি হলেন; এইরকম মৃত্যু গৌরবের। তবে যথেষ্ট আফসোসের, ভীষণ দুঃখ দেয়, অনেককিছু ভাবায়। 
.

মিশরে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের সাথে যথেষ্ট মিল পাওয়া যেতে পারে, আগের দিনের তুরষ্কের। আমার বিবেচনায় তুরষ্কের অবস্থা বরং বেশী খারাপ ছিল। কারণ, সেখানে রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সেনা কর্তৃত্ব বরং জনগনের মধ্যে শ্রদ্ধার ব্যাপার ছিল। তুরষ্কের জনগণ সেনাবাহিনীকে ত্রাতা হিসেবে দেখতো, মুরুব্বী হিসেবে চাইতো। সেই তুলনায় বরং মিশরে সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যাড বয় হিসেবেই দেখা হয়েছে; অন্তত, গত কয়েক দশক।
.

সেনা কর্তৃত্বের সেই জগদ্দল পাথর তুরষ্কে কীভাবে সরলো, সেটা থেকে কোনো লেসন নেয়া যায় কি না, দেখা যেতে পারে।
.আমি ব্যাক্তিগতভাবে দোররা মারার চেয়ে দাওয়াত দেয়ার পক্ষপাতি। তুরষ্কে সেই কাজটিই করা হয়েছে।

.

অন্যদের অবদান অতোটা জানি না, তবে ফেতহুল্লাহ গুলেন ধর্ম আনুরাগীদের মধ্যে যে তপস্যা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, মুসলিমরা শিক্ষা-দীক্ষায় বড় হয়ে দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-প্রসাশনিক-সামরিক প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদেরকে যোগ্য প্রার্থী করে তুলতে অধ্যাবসায় করে গেছে, এর ফল তুরষ্ক পেয়েছে। আয়রনি হলো, তার এক সময়ের শিষ্য আজ প্রেসিডেন্ট, কিন্তু সেই গুলেন আজ তুরষ্ক থেকে নির্বাসিত। সে আরেক আয়রনি, রাজনীতির বাঁকে বাঁকে নানা রকম চরিত্র পথ হারায়, অনেক বড় সম্ভাবনাও ক্ষণিকের ভুলে একেবারে তলিয়ে যায়। 
.

তারপরেও, নির্বাচিত হওয়ার প্রথম বছরেই ইসলাম ভাবাপন্নরা সংবিধান বদলিয়ে, নিজেদেরকে সুলতানের পর্যায়ে তোলার কোনো ডিক্রি জারি করে হুলস্থুল বাঁধিয়ে দেন নাই। এখনও তুরষ্ক আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের বন্ধুরাষ্ট্র, এখনও তুরষ্ক মেডিটারেনিয়ান সানশাইন কাজে লাগিয়ে সুস্বাদু ওয়াইনের বড় প্রস্তুত ও রফতানিকারক। তারা ধাপে ধাপে খুবই ধীর পদক্ষেপে এগিয়েছে। যদিও, এখনও তুরষ্ক যতোটুকু মুসলিম, তার চেয়ে বেশি ইউরোপীয়।
.তবে একথা এখনও সত্য, স্লো বাট স্টেডি উইনস দ্যা রেস। আরো সত্য হলো, গনতন্ত্র আর ইসলাম এই তেলে-জলে মেশে না। একারণেই, যারা গণতন্ত্র পূজারি, তারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে না, ইসলামিস্ট বলে! সে এক মজার কাঁঠালের আমসত্ব।

লেখকঃ-মুনতাকিম চৌধুরী।

প্রচারেঃ-সৌদি আরব-The Land Of Tawheed🇸🇦❤

শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।