নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন sahih-akida.simplesite.com
https://rasikulindia.blogspot.com/ ইসলামিক বই
সূরা যিলযাল
(ভূমিকম্প)
সূরা নিসা-র পরে মদীনায়
অবতীর্ণ।
সূরা ৯৯, আয়াত ৮, শব্দ
৩৬, বর্ণ ১৫৬।
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
(১) যখন
পৃথিবী তার চূড়ান্ত কম্পনে প্রকম্পিত হবে,
|
إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا
|
(২) যখন ভূগর্ভ তার
বোঝাসমূহ বের করে দেবে,
|
وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا
|
(৩) এবং মানুষ বলবে,
এর কি হ’ল?
|
وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا
|
(৪) সেদিন পৃথিবী তার
সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।
|
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا
|
(৫) কেননা তোমার
পালনকর্তা তাকে প্রত্যাদেশ করবেন।
|
بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَى لَهَا
|
(৬) সেদিন মানুষ
বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সমূহ দেখানো যায়।
|
يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ
|
(৭) অতঃপর কেউ অণু
পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে।
|
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ
|
(৮) আর কেউ অণু
পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে।
|
وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
|
বিষয়বস্ত্ত :
সূরাটির মূল বিষয়বস্ত্ত
হ’ল ক্বিয়ামত অনুষ্ঠান। যা দু’টি ভাগে আলোচিত হয়েছে। প্রথমভাগে ক্বিয়ামত
অনুষ্ঠানের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে (১-৫ আয়াত)।
দ্বিতীয়ভাগে বলা হয়েছে
যে, মানুষকে ঐদিন স্ব স্ব আমলনামা দেখানো হবে। অতঃপর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচারের
মাধ্যমে তার যথাযথ প্রতিদান দেওয়া হবে (৬-৮ আয়াত)।
গুরুত্ব :
(১) সূরাটিতে ক্বিয়ামত
প্রাক্কালের চূড়ান্ত ভূকম্পনের ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে এবং মানুষকে অণু পরিমান
সৎকর্ম হ’লেও তা করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
(২) কবি ফারাযদাক্ব -এর
চাচা (বরং দাদা) ছা‘ছা‘আহ বিন মু‘আবিয়া রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে এলেন। অতঃপর তিনি
তাঁকে সূরা যিলযাল পুরাটা শুনিয়ে দিলেন। শেষে পৌঁছে গেলে তিনি বলে উঠলেন, حَسْبِى لاَ
أُبَالِى أَنْ
لاَ أَسْمَعَ
غَيْرَهَا ‘যথেষ্ট! এটা ব্যতীত
কুরআনের আর কিছু না শুনলেও চলবে’।[1]
(৩) হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এল। অতঃপর বলল, أَقْرِئْنِى يَا
رَسُولَ اللهِ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কুরআন শিক্ষা
দিন’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি ‘আলিফ লাম রা’ বিশিষ্ট সূরা সমূহের তিনটি পাঠ কর।
লোকটি বলল, আমার বয়স বেশী হয়ে গেছে, হৃদয় শক্ত হয়ে গেছে, জিহবা মোটা হয়ে গেছে।
রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘হা-মীম’ বিশিষ্ট সূরা পড়। লোকটি আগের মতই বলল। রাসূল (ছাঃ)
বললেন, তাহ’লে ‘মুসাব্বিহাত’ থেকে তিনটি পড়। লোকটি আগের মতই বলল। অতঃপর বলল, হে
আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি ব্যাপক অর্থপূর্ণ সূরা (سُوْرَةٌ
جَامِعَةٌ) শিক্ষা দিন। তখন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে সূরা যিলযাল পাঠ করে শুনালেন। ক্বিরাআত শেষ হ’লে লোকটি
বলল, وَالَّذِى
بَعَثَكَ بِالْحَقِّ
لاَ أَزِيدُ
عَلَيْهَا أَبَداً ‘যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ
করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, আমি এর উপরে মোটেই বৃদ্ধি করব না’। অতঃপর লোকটি পিঠ
ফিরে চলে যেতে থাকল। তখন রাসূল (ছাঃ) দু’বার বললেন, أَفْلَحَ
الرُّوَيْجِلُ ‘লোকটি সফলকাম হ’ল’।[2] অতঃপর
বললেন, عَلَىَّ
بِهِ ‘ওকে আমার কাছে ডেকে
আনো’। লোকটিকে ফিরিয়ে আনা হ’ল। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, أُمِرْتُ بِيَوْمِ
الأَضْحَى جَعَلَهُ
اللهُ عِيداً
لِهَذِهِ الأُمَّةِ ‘আমি ঈদুল আযহা সম্পর্কে আদিষ্ট হয়েছি।
আল্লাহ এদিনকে এ উম্মতের জন্য ঈদ হিসাবে নির্ধারিত করেছেন’। লোকটি বলল, হে রাসূল!
আমি যদি ছোট একটি মাদী বকরীছানা ব্যতীত কিছুই না পাই, তাহ’লে আমি কি সেটাকে
কুরবানী করব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, না। বরং তুমি وَلَكِنْ
تَأْخُذُ مِنْ
شَعْرِكَ وَتُقَلِّمُ
أَظْفَارَكَ وَتَقُصُّ
شَارِبَكَ وَتَحْلِقُ
عَانَتَكَ فَذَلِكَ
تَمَامُ أُضْحِيَتِكَ
عِنْدَ اللهِ
عَزَّ وَجَلَّ ‘তোমার চুল-নখ কাটো, গোফ ছাটো,
গুপ্তাঙ্গের লোম ছাফ কর, এটাই তোমার জন্য আল্লাহর নিকটে পূর্ণাঙ্গ কুরবানী হবে’।[3]
(৪) আব্দুল্লাহ ইবনু
আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, সূরা যিলযাল নাযিল হ’লে আবুবকর (রাঃ) কাঁদতে থাকেন। তখন
রাসূল (ছাঃ) বললেন, لَوْلا
أنَّكُمْ تُذْنِبُوْنَ
لَخَلَقَ اللهُ
خَلْقًا يُذْنِبُوْنَ
وَيَغْفرُ لَهُمْ ‘যদি তোমরা পাপ’ না হ’তে, তাহ’লে অবশ্যই
আল্লাহ আরেকটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করতেন, যারা পাপী হ’ত এবং তিনি তাদের ক্ষমা
করতেন’।[4]
(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
অত্র সূরার শেষ দু’টি আয়াতকে একত্রে الآيَةُ
الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ ‘অনন্য ও সারগর্ভ আয়াত’ বলে অভিহিত
করেছেন।[5]
তাফসীর :
(১) إِذَا زُلْزِلَتِ
الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا ‘ যখন পৃথিবী তার চূড়ান্ত কম্পনে
প্রকম্পিত হবে’।
زَلْزَلَ
يُزَلْزِلُ زَلْزَلَةً
زِلْزَالاً وَزَلزالاً ‘ভূমিকম্প হওয়া’। অর্থাৎ حرَّكت الأرض
من أصلها পুরা পৃথিবী জড়শুদ্ধ প্রচন্ডভাবে কেঁপে
উঠবে (কুরতুবী)। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا
النَّاسُ اتَّقُوا
رَبَّكُمْ إِنَّ
زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ
شَيْءٌ عَظِيمٌ- يَوْمَ
تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ
كُلُّ مُرْضِعَةٍ
عَمَّا أَرْضَعَتْ
وَتَضَعُ كُلُّ
ذَاتِ حَمْلٍ
حَمْلَهَا وَتَرَى
النَّاسَ سُكَارَى
وَمَا هُمْ
بِسُكَارَى وَلَكِنَّ
عَذَابَ اللهِ
شَدِيْدٌ- ‘হে মানুষ! তোমরা
তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর বিষয়’। ‘যেদিন
তোমরা তা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করবে। যেদিন প্রত্যেক স্তন্যদায়িনী
মা তার দুগ্ধপানকারী সন্তান থেকে উদাসীন হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভ খালাস
করে ফেলবে। আর মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল সদৃশ। যদিও সে মাতাল নয়। বস্ত্ততঃ আল্লাহর
শাস্তি অতীব কঠিন’ (হজ্জ ২২/১-২)। এটি ইস্রাফীলের
শিঙ্গায় ফুঁকদানের পরের ঘটনা। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ
تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ،
تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ ‘যেদিন কম্পিত করবে কম্পিতকারী’। ‘যার পিছে
পিছে আসবে আরেকটি নিনাদ’ (নাযে‘আত ৭৯/৬-৭)। প্রথম নিনাদকে نفخة صعق ‘কম্পনের নিনাদ’ এবং দ্বিতীয় নিনাদকে نفخة بعث বা ‘পুনরুত্থানের নিনাদ’ বলা হয়। প্রথম
নিনাদে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে নতুন পৃথিবী হবে। অতঃপর দ্বিতীয় নিনাদের পরেই আকাশ থেকে
বৃষ্টি বর্ষিত হবে। তাতে মৃতরা সব জীবিত হয়ে উঠে যাবে। দুই নিনাদের মাঝে সময়ের
ব্যবধান হবে চল্লিশ। সেটি দিন, মাস না বছর, সে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) বলতে অস্বীকার
করেন’।[6]পরবর্তী আয়াতের বক্তব্যের আলোকে অত্র আয়াতের অর্থ
দ্বিতীয় কম্পনের বলে অনুমিত হয়।
(২) وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ
أَثْقَالَهَا ‘যখন ভূগর্ভ তার
বোঝাসমূহ বের করে দেবে’। অর্থাৎ কবরবাসীরা সবাই জীবিত হয়ে বের হবে। যেমন আল্লাহ
বলেন, ثُمَّ
نُفِخَ فِيْهِ
أُخْرَى فَإِذَا
هُمْ قِيَامٌ
يَّنْظُرُوْنَ ‘অতঃপর পুনরায় শিঙ্গায়
ফুঁক দেওয়া হবে। তখন সবাই উঠে দাঁড়িয়ে যাবে ও দেখতে থাকবে’ (যুমার ৩৯/৬৮)।
আল্লাহ বলেন, يَوْمَ
يَقُوْمُ النَّاسُ
لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘যেদিন মানুষ বিশ্বপালকের সামনে দাঁড়িয়ে
যাবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/৬)। আল্লাহ আরও বলেন, وَإِذَا الْأَرْضُ
مُدَّتْ، وَأَلْقَتْ
مَا فِيْهَا
وَتَخَلَّتْ ‘যেদিন পৃথিবী প্রসারিত
হবে’। ‘এবং তার ভিতরকার সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও খালি হয়ে যাবে’ (ইনশিক্বাক্ব
৮৪/৩-৪)।
এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে
যে, ভূগর্ভে বহু সোনা-দানা খনি আকারে মানুষের জন্য সঞ্চিত রাখা হয়েছে যা উত্তোলন
করে জনকল্যাণে ব্যয় করা মানুষের যরূরী কর্তব্য। যেমন হাদীছেও এ বিষয়ে বক্তব্য
এসেছে যে, ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে تَقِىءُ
الأَرْضُ أَفْلاَذَ
كَبِدِهَا أَمْثَالَ
الأُسْطُوَانِ مِنَ
الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ ‘পৃথিবী উগরে দিবে ভূগর্ভে সঞ্চিত
মূল্যবান স্বর্ণ-রৌপ্যসমূহ, যা বড় বড় স্তম্ভের মত’।[7] অর্থাৎ কবর সমূহ থেকে
মানুষ এবং ভূগর্ভ থেকে অন্যান্য সবকিছু বের করে দেওয়া হবে।
(৩) وَقَالَ الْإِنْسَانُ
مَا لَهَا ‘এবং মানুষ বলবে, এর কি হ’ল’?
অর্থাৎ পৃথিবীর এই
ভয়ংকর পরিবর্তিত অবস্থা দেখে বিশেষ করে কাফেররা ভীতবিহবল হয়ে বলবে, ما الذي
حدث لها
وما شأنها ‘এর কি হ’ল? এর কি অবস্থা’? কেননা তারা
ক্বিয়ামতে বিশ্বাসী ছিল না। মুমিনরা ভীতচকিত হ’লেও বিস্মিত হবে না। কেননা আগে
থেকেই তারা ক্বিয়ামতে বিশ্বাসী ছিল।
(৪) يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ
أَخْبَارَهَا ‘সেদিন সে তার
বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে’।
কুরতুবী ও ইবনু কাছীর
বলেন, এর অর্থ হ’ল أى
تخبر الأرض
يومئذ بما
عمل عليها
من خير
أو شر- ‘পৃথিবী সেদিন তার উপরে যে সব ভাল ও মন্দ
কর্ম সংঘটিত হয়েছে, সব বলে দেবে’। يَوْمَئِذٍ ‘বদল’ হয়েছে إِذَا زُلْزِلَتِ থেকে। সেকারণ يَوْمَ -এর উপরে ‘যবর’ হয়েছে। في ذلك
الوقت تحدث
أخبارها ‘সেই সময় পৃথিবী তার সব
খবর বলে দেবে’ (ক্বাসেমী)।অথবা এটি جواب شرط হয়েছে إِذَا
زُلْزِلَتِ থেকে। অর্থাৎ যেদিন
ক্বিয়ামত হবে, সেদিন পৃথিবী সবকিছু বলে দেবে’। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘মুওয়াযযিনের আযানের ধ্বনি জিন, ইনসান, গাছ, পাথর, মাটি সহ যেই-ই শুনবে, সকল
বস্ত্তই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে’।[8] আর এটা হবে আল্লাহর
ন্যায়বিচারের প্রমাণ হিসাবে এবং পাপীদের অস্বীকারের জওয়াব হিসাবে। যেমন আল্লাহ
বলেন, وَيَوْمَ
نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا
ثُمَّ نَقُولُ
لِلَّذِينَ أَشْرَكُوا
أَيْنَ شُرَكَاؤُكُمُ
الَّذِينَ كُنْتُمْ
تَزْعُمُونَ- ثُمَّ
لَمْ تَكُنْ
فِتْنَتُهُمْ إِلاَّ
أَنْ قَالُوا
وَاللهِ رَبِّنَا
مَا كُنَّا
مُشْرِكِينَ- ‘স্মরণ কর সেদিনের কথা
যেদিন আমরা সকলকে একত্রিত করব, অতঃপর যারা আমার সাথে অন্যকে শরীক করেছিল তাদেরকে
আমরা বলব, কোথায় তোমাদের শরীকগণ যাদেরকে তোমরা উপাস্য বলে ধারণা করতে’? ‘তখন তাদের
শিরকের ফল এছাড়া আর কিছুই হবে না যে তারা বলবে, আল্লাহর কসম! হে আমাদের প্রতিপালক!
আমরা মুশরিক ছিলাম না’ (আন‘আম ৬/২২-২৩; মুমিন
৪০/৭৪)।
তবে পৃথিবী সাক্ষ্য দেওয়ার ফলে তাদের আর কিছুই বলার থাকবে না।
(৫) بِأَنَّ رَبَّكَ
أَوْحَى لَهَا ‘কেননা তোমার পালনকর্তা তাকে প্রত্যাদেশ
করবেন’।
أَوْحَى
لَهَا অর্থ أوحى إليها ‘তার প্রতি নির্দেশ দিবেন’। অর্থাৎ أَذِنَ لَهَا
فِي أَنْ
تُحَدِّثَ أَخْبَارَهَا ‘আল্লাহ তাকে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করার
অনুমতি দিবেন’। কেবল পৃথিবীকে নয়, বরং মানুষের চোখ, কান ও দেহচর্ম সবাইকে আল্লাহ
কথা বলার অনুমতি দিবেন এবং তারা যথাযথভাবে সাক্ষ্য প্রদান করবে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَيَوْمَ يُحْشَرُ
أَعْدَاءُ اللهِ
إِلَى النَّارِ
فَهُمْ يُوزَعُوْنَ،
حَتَّى إِذَا
مَا جَاءُوْهَا
شَهِدَ عَلَيْهِمْ
سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ
وَجُلُوْدُهُمْ بِمَا
كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ،
وَقَالُوْا لِجُلُوْدِهِمْ
لِمَ شَهِدْتُمْ
عَلَيْنَا قَالُوْا
أَنْطَقَنَا اللهُ
الَّذِيْ أَنْطَقَ
كُلَّ شَيْءٍ ‘যেদিন
আল্লাহর শত্রুদের জাহান্নাম অভিমুখে সমবেত করা হবে, সেদিন তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে
যাওয়া হবে বিভিন্ন দলে’। ‘অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে, তখন তাদের
কর্ণ, চক্ষু ও ত্বক তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে’। ‘জাহান্নামীরা তখন
তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ কেন? উত্তরে তারা বলবে,
আল্লাহ আমাদের বাকশক্তি দিয়েছেন, যিনি সবকিছুকে বাকশক্তি দান করেছেন’ (হা-মীম
সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/১৯-২১)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, الْيَوْمَ نَخْتِمُ
عَلَى أَفْوَاهِهِمْ
وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ
وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ
بِمَا كَانُوا
يَكْسِبُونَ ‘আজ আমরা তাদের মুখে
মোহর মেরে দেব এবং আমাদের সাথে কথা বলবে তাদের হাত ও তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে
তাদের পা’ (ইয়াসীন ৩৬/৬৫)।
(৬) يَوْمَئِذٍ يَّصْدُرُ
النَّاسُ أَشْتَاتاً
لِّيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ ‘সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে,
যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সমূহ দেখানো যায়’।
অর্থাৎ সেদিন মানুষ
তাদের কবর হ’তে হিসাবস্থলের দিকে দলে দলে সমবেত হবে। অতঃপর হিসাব শেষে সেখান থেকে
কেউ জান্নাতীদের ডান সারিতে কেউ জাহান্নামীদের বাম সারিতে প্রকাশ পাবে (ওয়াক্বি‘আহ
৫৬/৭-৯; বালাদ ৯০/১৭-১৯)। এভাবে মানুষ দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ
বলেন, يَوْمَ
نَحْشُرُ الْمُتَّقِيْنَ
إِلَى الرَّحْمَنِ
وَفْدًا- وَنَسُوقُ
الْمُجْرِمِيْنَ إِلَى
جَهَنَّمَ وِرْدًا ‘সেদিন আমরা দয়াময়ের নিকট মুত্তাকীদেরকে
সম্মানিত মেহমানরূপে সমবেত করব’। ‘এবং অপরাধীদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামের
দিকে হাঁকিয়ে নেব’ (মারিয়াম ১৯/৮৫-৮৬)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَّتَفَرَّقُوْنَ، فَأَمَّا الَّذِيْنَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَهُمْ فِيْ رَوْضَةٍ يُحْبَرُوْنَ، وَأَمَّا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِآيَاتِنَا وَلِقَاءِ الْآخِرَةِ فَأُوْلَئِكَ فِي الْعَذَابِ مُحْضَرُوْنَ-
‘যে দিন ক্বিয়ামত
সংঘঠিত হবে, সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে’। ‘অতঃপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও
সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে’। ‘পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাসী হয়েছে এবং
আমার আয়াত সমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা বলেছে, তাদেরকে আযাবের মধ্যে হাযির করা
হবে’ (রূম ৩০/১৪-১৬)।
أَشْتَاتًا অর্থ فِرَقًا
فِرَقًا ‘দলে দলে’। একবচনে شَتٌّ (কুরতুবী)। لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ অর্থ ليريهم
الله جزاء
ماعملوه فى
الدينا من
خير وشر ‘দুনিয়ায় তাদের ভাল-মন্দ কর্মের ফলাফল
আল্লাহর পক্ষ হ’তে দেখানোর জন্য’। সেদিন প্রত্যেকের হাতে আমলনামা দিয়ে বলা হবে, اقْرَأْ كِتَابَكَ
كَفَى بِنَفْسِكَ
الْيَوْمَ عَلَيْكَ
حَسِيْبًا ‘তুমি তোমার আমলনামা
পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট’ (ইসরা
১৭/১৪)।
অতএব মানুষের কর্তব্য প্রতিদিন শুতে যাবার আগে নিজের কর্মের হিসাব নিজে নেওয়া।
কেননা তার সব কর্মই লিখিত হচ্ছে।
(৭) فَمَنْ يَّعْمَلْ
مِثْقَالَ ذَرَّةٍ
خَيْراً يَّرَهُ ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে
দেখতে পাবে’।
(৮) وَمَن يَّعْمَلْ
مِثْقَالَ ذَرَّةٍ
شَرًّا يَّرَهُ ‘এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে
দেখতে পাবে’।
ذَرَّةٍ অর্থ বিন্দু, সরিষাদানা, ছোট্ট পিপীলিকা।
এর দ্বারা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছোট্ট বস্ত্তর উপমা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পাপ বা
পূণ্য যত ছোটই হৌক না কেন ক্বিয়ামতে বিচারের দিন তা দেখা হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ
لاَ يَظْلِمُ
مِثْقَالَ ذَرَّةٍ
وَإِنْ تَكُ
حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا
وَيُؤْتِ مِنْ
لَدُنْهُ أَجْرًا
عَظِيمًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এক অণু
পরিমান যুলুম করবেন না। যদি কেউ অণু পরিমান সৎকর্ম করে, তবে তিনি তাকে দ্বিগুণ
প্রতিদান দেন এবং আল্লাহ তার পক্ষ হ’তে মহা পুরস্কার দান করে থাকেন’ (নিসা
৪/৪০)।
সেদিন সব আমল ওযন করা হবে। যার ওযন ভারী হবে, সে জান্নাতী হবে। আর যার ওযন হালকা
হবে, সে জাহান্নামী হবে’ (ক্বারে‘আহ ১০১/৬-৯)। ঐ ওযন কিভাবে করা
হবে, সেটি গায়েবী বিষয়। যা কেবল আল্লাহ জানেন।
অর্থাৎ সৎ বা অসৎকর্ম,
তা যত ছোটই হৌক না কেন, সবকিছু ঐদিন হিসাবে চলে আসবে এবং তার যথাযথ প্রতিদান ও
প্রতিফল পাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ
تَجِدُ كُلُّ
نَفْسٍ مَّا
عَمِلَتْ مِنْ
خَيْرٍ مُّحْضَراً
وَمَا عَمِلَتْ
مِن سُوْءٍ، ‘সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু সে ভাল কাজ
করেছে, চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ করেছে তাও..., (আলে ইমরান
৩/৩০)। তবে যে ব্যক্তি অন্যায় কর্ম থেকে খালেছ অন্তরে তওবা করে, সে ব্যক্তির
উক্ত মন্দকর্ম হিসাব থেকে বাদ যাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا
الَّذِيْنَ آمَنُوْا
تُوبُوْا إِلَى
اللهِ تَوْبَةً
نَّصُوْحاً عَسَى
رَبُّكُمْ أَن
يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ
سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ
جَنَّاتٍ تَجْرِيْ
مِن تَحْتِهَا
الْأَنْهَار، ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা
আল্লাহর নিকটে তওবা কর খালেছ তওবা। আশা করা যায় তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের পাপ
সমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। যার তলদেশ দিয়ে নদী
সমূহ প্রবাহিত হয়’ (তাহরীম ৬৬/৮)। বিচারের দিন কিছু মুমিনের গোপন পাপ
সম্পর্কে আল্লাহ একাকী তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করবেন। তখন সে সব কথা স্বীকার করবে। যখন
আল্লাহ দেখবেন যে, এতে সে ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন তিনি তাকে বলবেন, إِنِّى قَدْ
سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ
فِى الدُّنْيَا
وَإِنِّى أَغْفِرُهَا
لَكَ الْيَوْمَ ‘আমি এগুলি তোমার উপর দুনিয়ায় গোপন
রেখেছিলাম। আর আজ আমি তোমার জন্য ঐগুলি ক্ষমা করে দিলাম’।[9]
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
কর্তৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীছের শেষ দিকে অত্র আয়াতটি (যিলযাল
৭-৮) সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلْآيَةُ الْفَاذَّةُ
الْجَامِعَةُ ‘এটি অনন্য ও সারগর্ভ
আয়াত’।[10] আব্দুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) অত্র আয়াতটিকে أحكم
آية فى
القرآن‘কুরআনের সবচেয়ে বড় বিধান দানকারী আয়াত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং সকল
বিদ্বান এ বিষয়ে একমত’ (কুরতুবী)।
জাহান্নাম থেকে বাঁচুন
:
(১) হযরত আদী বিন হাতেম
(রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, اتَّقُوا
النَّارَ وَلَوْ
بِشِقِّ تَمْرَةٍ
، فَإِنْ
لَمْ تَجِدْ
فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো একটা খেজুরের
টুকরা দিয়ে হ’লেও কিংবা একটু মিষ্ট কথা দিয়ে হ’লেও’।[11]
(২) আবু যর গিফারী
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ
تَحْقِرَنَّ مِنَ
الْمَعْرُوفِ شَيْئًا
وَلَوْ أَنْ
تَلْقَى أَخَاكَ
بِوَجْهٍ طَلْقٍ ‘সামান্য নেকীর কাজকেও তুমি ছোট মনে করো
না। এমনকি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে হ’লেও’।[12]
(৩) আবু হুরায়রা (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَا
نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ
لاَ تَحْقِرَنَّ
جَارَةٌ لِجَارَتِهَا
وَلَوْ فِرْسِنَ
شَاةٍ ‘হে মুমিন নারীগণ!
তোমরা প্রতিবেশীকে বকরীর পায়ের দুই ক্ষুরের মধ্যেকার সামান্য গোশত দিয়ে সাহায্য
করাকেও তুচ্ছ মনে করো না’।[13]
উম্মে বুজাইদ (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,رُدُّوا
السَّائِلَ وَلَوْ
بِظِلْفٍ مُحْرَقٍ ‘পোড়ানো ক্ষুর হ’লেও সায়েলকে দাও’।[14]
(৪) আদী বিন হাতেম
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنِ
اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ
أَن يَّسْتَتِرَ
مِنَ النَّارِ
وَلَوْ بِشِقِّ
تَمْرَةٍ فَلْيَفْعَلْ ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ একটা খেজুরের
টুকরা দিয়েও নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখে, তবে সে যেন তা করে’।[15]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলতেন, يَا
عَائِشَةُ إِيَّاكِ
وَمُحَقِّرَاتِ الذُّنُوبِ
فَإِنَّ لَهَا
مِنَ اللهِ
طَالِباً ‘হে আয়েশা! তুচ্ছ গোনাহ
হ’তেও বেঁচে থাকো। কেননা উক্ত বিষয়েও আল্লাহর পক্ষ হ’তে কৈফিয়ত তলব করা হবে’।[16]
(৫) হযরত জাবের ও
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, كُلُّ مَعْرُوْفٍ
صَدَقَةٌ ‘প্রত্যেক নেকীর কাজই
ছাদাক্বা’।[17]
কাফিরের সৎকর্ম :
প্রশ্ন হ’ল, ক্বিয়ামতের
দিন কাফিররা তাদের সৎকর্মের পুরস্কার পাবে কি?
এর জবাব এই যে, যারা
দুনিয়াতে আল্লাহকে বা তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে, তারা আখেরাতে কিভাবে পুরস্কার
পেতে পারে? আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لاَ يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُوْرٍ-
‘যারা কুফরী করেছে,
তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের সেখানে মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবেনা যে
তারা মরবে এবং তাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তিও হালকা করা হবেনা। এভাবেই আমরা
প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে শাস্তি দিয়ে থাকি’ (ফাত্বির ৩৫/৩৬)। অন্যত্র তিনি বলেন,
وَقَالَ الَّذِيْنَ فِي النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِنَ الْعَذَابِ- قَالُوا أَوَلَمْ تَكُ تَأْتِيكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا بَلَى قَالُوا فَادْعُوا وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِيْنَ إِلاَّ فِي ضَلاَلٍ-
‘জাহান্নামের অধিবাসীরা
তাদের প্রহরীদের বলবে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে বল, তিনি যেন একদিনের জন্য
আমাদের শাস্তি হালকা করেন’। জবাবে ‘তারা বলবে, তোমাদের নিকটে কি নিদর্শনাবলীসহ
তোমাদের রাসূলগণ আসেননি? জাহান্নামীরা বলবে, নিশ্চয়ই এসেছিল। প্রহরীরা বলবে,
তাহ’লে তোমরাই প্রার্থনা কর। আর কাফিরদের প্রার্থনা ব্যর্থই হয়ে থাকে’ (গাফের/মুমিন
৪০/৪৯-৫০)।
বস্ত্ততঃ কাফিরদের
সৎকর্মের পুরস্কার আল্লাহ দুনিয়াতেই দিবেন তাদের নাম-যশ বৃদ্ধি, সুখ-সমৃদ্ধি,
সন্তানাদি ও রূযী বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে। কিন্তু আখেরাতে তারা কিছুই পাবে না।
যেমন তিনি বলেন, مَنْ
كَانَ يُرِيْدُ
حَرْثَ الْآخِرَةِ
نَزِدْ لَهُ
فِي حَرْثِهِ
وَمَنْ كَانَ
يُرِيدُ حَرْثَ
الدُّنْيَا نُؤْتِهِ
مِنْهَا وَمَا
لَهُ فِي
الْآخِرَةِ مِنْ
نَصِيبٍ ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের
ফসল কামনা করে, তার জন্য আমরা তার ফসল বর্ধিত করে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল
কামনা করে, আমরা তাকে সেখান থেকে কিছু দেই। তবে তার জন্য আখেরাতে কিছুই থাকবে না’ (শূরা
৪২/২০)।
আল্লাহ বলেন, وَقَدِمْنَا
إِلَى مَا
عَمِلُوا مِنْ
عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ
هَبَاءً مَنْثُوْرًا ‘আর আমরা তাদের কৃতকর্মগুলোর দিকে অগ্রসর
হব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরক্বান ২৫/২৩)। কেননা কুফরী তাদের
সকল সৎকর্মকে বিনষ্ট করে দিবে এবং তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। এমনকি
ক্বিয়ামতের দিন তাদের আমল ওযন করার জন্য দাড়িপাল্লাও খাড়া করা হবেনা। যেমন আল্লাহ
বলেন, أُولَئِكَ
الَّذِينَ كَفَرُوا
بِآيَاتِ رَبِّهِمْ
وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ
أَعْمَالُهُمْ فَلاَ
نُقِيمُ لَهُمْ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ
وَزْنًا ‘(ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারী
হ’ল তারাই) যারা তাদের প্রতিপালকের আয়াত সমূহকে এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতকে অবিশ্বাস
করে, তাদের সমস্ত আমল নিস্ফল হয়ে যায়। অতএব ক্বিয়ামতের দিন আমরা তাদের জন্য
দাড়িপাল্লা খাড়া করব না’ (কাহফ ১৮/১০৫)। কেননা তা নেকী হ’তে
খালি থাকবে।
তারা চিরস্থায়ীভাবে
জাহান্নামে থাকবে। তবে তাদের পাপের তারতম্য অনুযায়ী শাস্তির তারতম্য হ’তে পারে।
যেমন আবু ত্বালিবের শাস্তি সবচেয়ে কম হবে। তাকে আগুনের জুতা ও ফিতা পরানো হবে।
তাতেই তার মাথার ঘিলু টগবগ করে ফুটবে। তবে এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ। যেমন
তিনি বলেন, ‘আমি তাকে আগুনে ডুবন্ত পেয়েছিলাম। অতঃপর (সুফারিশের মাধ্যমে) আমি তাকে
হালকা আগুনে উঠিয়ে আনি। অর্থাৎ টাখনু পর্যন্ত আগুনে পুড়বে’। তিনি বলেন, ‘যদি আমি
না হ’তাম, তাহ’লে তিনি থাকতেন জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে’।[18] শাস্তির এই তারতম্য
আখেরাতে সকল কাফিরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না, সেটি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর
এখতিয়ারে। তবে এটা নিশ্চিত যে, কাফেররা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। যেমন আল্লাহ
বলেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ- خَالِدِينَ فِيْهَا لاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلاَ هُمْ يُنْظَرُوْنَ-
‘নিশ্চয়ই যারা কুফরী
করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাদের উপর আল্লাহর লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী
ও সকল মানুষের লা‘নত’। ‘সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তাদের শাস্তি হালকা করা হবেনা
এবং তাদের কোনরূপ অবকাশ দেওয়া হবেনা’ (বাক্বারাহ ২/১৬১-৬২)।
সারকথা :
কর্ম
যত ছোটই হৌক তা ধ্বংস হয় না। অতএব সৎকর্ম যত ছোটই হৌক তা করতে হবে এবং পাপ যত ছোটই
হৌক তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
[1]. নাসাঈ কুবরা
হা/১১৬৯৪; আহমাদ হা/২০৬১২, হাদীছ ছহীহ; ফারাযদাক্ব-এর দাদা হওয়াটাই সঠিক। তাঁর বংশ
পরিচয় হ’ল : ফারাযদাক্ব আল-হাম্মাম বিন গালিব বিন ছা‘ছা‘আহ বিন নাজিয়াহ (আল-ইছাবাহ
ক্রমিক সংখ্যা ৭০২৯)।
[2]. الرُّوَيْجِلُ শব্দটি الراجل থেকে تصغير হয়েছে। অর্থ الماشى ضد
الراكب ‘পায়ে চলা ব্যক্তি, যা
আরোহীর বিপরীত’।
[3]. আহমাদ হা/৬৫৭৫,
আরনাঊত্ব, সনদ হাসান; হাকেম হা/৩৯৬৪, সনদ ছহীহ; তাফসীর ইবনু কাছীর।
[4]. ত্বাবারাণী, মাজমাউয
যাওয়ায়েদ হা/১১৫১২; হায়ছামী বলেন, এর সকল রাবী ছহীহ-এর রাবী এবং এর দুর্বলতাটুকুর
জন্য শাওয়াহেদ রয়েছে, যা তাকে শক্তিশালী করে। কুরতুবী হা/৬৪৩৬; হাদীছের শেষের
অংশটি (لَوْلاَ
أَنَّكُمْ تُذْنِبُونَ الخ) মুসলিম হা/২৭৪৮ ও তিরমিযী হা/৩৫৩৯-য়ে বর্ণিত
হয়েছে।
[5]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ,
মিশকাত হা/১৭৭৩।
[6]. বুখারী হা/৪৯৩৫,
মুসলিম হা/২৯৫৫, মিশকাত হা/৫৫২১ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়, ‘শিঙ্গায় ফুঁক দান’
অনুচ্ছেদ; ফাৎহুল বারী হা/৬৫১৭-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[7]. মুসলিম হা/১০১৩;
তিরমিযী হা/২২০৮; মিশকাত হা/৫৪৪৪ ‘ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[8]. ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ
হা/৩৮৯; বুখারী হা/৬০৯; নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/৬৫৬, ৬৬৭।
[9]. বুখারী হা/২৪৪১;
মুসলিম হা/২৭৬৮।
[10]. বুখারী হা/৪৯৬২;
মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩ ‘যাকাত’ অধ্যায়।
[11]. বুখারী হা/৮৪১৭‘
যাকাত’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৫৮৫৭ ‘নবুঅতের নিদর্শন সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[12]. মুসলিম হা/২৬২৬,
তিরমিযী হা/১৮৩৩, মিশকাত হা/১৮৯৪ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।
[13]. বুখারী হা/২৫৬৬;
মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৯২।
[14]. আহমাদ হা/১৬৬৯৯;
নাসাঈ হা/২৫৬৫; মিশকাত হা/১৯৪২ ‘শ্রেষ্ঠ ছাদাক্বা’ অনুচ্ছেদ।
[15]. মুসলিম হা/১০১৬
‘যাকাত’ অধ্যায়, ২০ অনুচ্ছেদ।
[16]. নাসাঈ, ইবনু মাজাহ
হা/৪২৪৩, মিশকাত হা/৫৩৫৬ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬; ছহীহাহ হা/২৭৩১।
[17]. বুখারী হা/৬০২১,
মুসলিম হা/১০০৫, মিশকাত হা/১৮৯৩ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৬।
[18]. বুখারী হা/৫১৭;
মুসলিম হা/৩৬১, ৩৫৮; মিশকাত হা/৫৬৬৮ ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বর্ণনা’
অনুচ্ছেদ।
0 Comments