▌নব্য মু'তাজিলা ডা.মতিয়ার রাহমানের বিভ্রান্তিকর আক্বীদার অপনোদন।
.
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। যিনি বলেছেন, “হক এসেছে, আর বাতিল অপসৃত হয়েছে; বাতিল তো অপসৃত হওয়ারই ছিল।” --- [সূরাহ বানী ইসরাঈল: ৮১]
শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ ﷺ-এর প্রতি। যিনি বলেছেন, “তুমি হক (সত্য) বল, যদিও তা তিক্ত হয়।” [সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৩৩; সনদ: সাহীহ লি গাইরিহী] অন্যত্র বলেছেন, “তুমি হক বল, যদিও তা তোমার নিজের বিরুদ্ধে যায়।” --- [সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/১৯১১; সাহীহুল জামি‘, হা/৩৭৬৯; সনদ: সাহীহ]
.
▪প্রারাম্ভিকা,
চারদিকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাদের উৎপাতে যুবসমাজ দিকভ্রান্ত! শত কষ্টে এক গর্ত থেকে দ্বীনের পথে উঠে আসা সেই দূঢ় প্রত্যয়ী যুবকই আবার আরেক গর্তে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। কারো তুখোড় লেখনী, সুমধুর ওয়াজ কিংবা নজরকাড়া বক্তব্য দেখেই তার পিছনে ছুটে চলার কারণে পথভ্রষ্ট হচ্ছেন অনেকেই।
.
শরয়ী ইলম নেয়ার মুলনীতি হচ্ছে, মাজহুল বা অপরিচিত কারো নিকট হতে ইলম নেয়া বৈধ নয়।
এ প্রসঙ্গে একজন সালাফ বলেছিলেন "দ্বীনের ব্যপারে “প্রকৃত আলেম” ছাড়া অপরিচিত, অজ্ঞ লোকদেরকে আলেম মনে করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেনা। যদি করো, তাহলে যেন তুমি তোমার দ্বীনকেই ধ্বংস করলে"!
.
কোনো দাঈ থেকে ইলম নেয়ার পূর্বে অবশ্যই তাঁর পরিচয় , পড়াশোনা, তাঁর উস্তাযগণের ব্যাপারে জেনে রাখা আবশ্যক। তাকে সম-সাময়িক কোন আলিম চিনেন কিনা, বা তিনি আলিমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেছেন কিনা বা উলামাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেন কিনা অথবা উলামাদের সহবতে ছিলেন কিনা, এসব বিষয়াদি জানা অত্যান্ত জরুরী।
এ প্রসঙ্গে ইমাম শু’বাহ [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেন,
“ইলম তার কাছ থেকেই নাও, যে ব্যক্তি পরিচিত।”
--- [আল-জারহ ওয়াত-তা’দীল : ২/২৮]
অর্থাৎ যাকে সমসাময়িক উলামাগন চিনেন/জানেন, যার আমানতদারী, বিশ্বস্ততার ব্যাপারে তারা সন্দেহমুক্ত এবং যিনি আলিমদের সহবতে থেকে ইলম অর্জন করেছেন বলেই আওয়ামের কাছে প্রতীয়মান হয়।
.
পর সমাচার এই যে, বেশ কিছুদিন ধরে বঙ্গদেশের বাত্বিল আক্বীদাহর ধারক ও বাহক এবং প্রচারকারী ডাক্তার মতিয়ার রহমান [ হাদাহুল্লাহ ] নামক একজন ভদ্রলোক দাওয়াতি ফিল্ডে কাজ করছেন। তিনি বেশকিছু বই ও লেকচারের মাধ্যমে " মুতা'জিলা" আক্বীদাহর প্রচার-প্রসার ঘটাচ্ছেন। ক্বুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন [ কিউ.আর.এফ ] নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। আমরা লক্ষ্য করছি বঙ্গদেশের কথিপয় দাঈ তার ফাঁদে পা দিয়ে এই বিষাক্ত মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন।
বিভ্রান্তদের হুঁশ ফিরাতেই আজকের এই নিবন্ধের অবতারণা। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা ডাক্তার সাহেবের পরিচয় ও বিভ্রান্ত আক্বীদাহ এবং তাঁর কিতাবাদীর পর্যলোচনা করব - [ ওয়া বিল্লাহীত তাওফীক্ব ]।
.
▪ ডা.মতিয়ার রাহমানের পরিচয় ও পড়াশোনা :
ডা.মতিয়ার রহমান খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আরজি-ডুমুরিয়া গ্রামের জন্মগ্রহন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন চিকিৎসক ও সমাজসেবক হিসেবেই পরিচিত। তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, এছাড়া ইনসাফ বারাকাহ কিডনী এন্ড জেনারেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
১৯৭৯ সালের দিকে তিনি ইরাকে চলে যান এবং ইরাকের জেনারেল হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে চার বছর চাকরি করেন। মুলত সেখানে গিয়ে ইরাকিদের ভাষা (আঞ্চলিক আরবি) শুনে তিনি অবাক হন এবং তার কাছে তখনই ক্বুরআনের ভাষাটা শিখার আগ্রহ জাগে। ক্বুরআন পড়া শেষ করার পরপরই তিনি হাদীস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন! কোনো স্বনামধন্য স্কলারের সহবত ছাড়াই তিনি দ্বীনের জ্ঞান অর্জন অত:পর তা বিলিকরণে দেশে প্রতিষ্ঠা করেন "ক্বুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন" (কিউ.আর. এফ) যার চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেই দায়িত্ব পালন করছেন।
--- [ তার বইয়ে লিখক পরিচিতি দ্রষ্টব্য ]
.
▪পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা :
প্রিয় পাঠকবৃন্দ , আমরা বলতে চাচ্ছি, উপরিউক্ত যোগ্যতাগুলো কারো “আলিম” বা দাঈ হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ কিনা অথবা এমন ব্যক্তি থেকে শরয়ী ইলম নেওয়া বৈধ কিনা? ইসলাম কি আমাদের অধো এই শিক্ষা দেয় যে, এই গুণগুলো কারো মাঝে থাকলেই তিনি আলিম হয়ে যাবেন অথবা তার কাছ থেকে দ্বীনের জ্ঞান নেওয়া বৈধ হয়ে যাবে? আমাদের পূর্ব যুগের মুসলমানেরা কি এইভাবে মানুষকে দাঈ ,আলিম হিসেবে গ্রহণ করতো অথবা দ্বীনের জ্ঞান নেওয়া বৈধ মনে করতো?
জ্ঞাতব্য যে, ডাক্তার মতিয়ার রহমান [ হাদাহুল্লাহ ] হলেন এমন ব্যক্তি যাকে সম-সাময়িক কোনো আলিম চিনেন না, তিনি আলিমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেননি, তাঁদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখেন নি , তাদের সহবতে থাকেন নি। এবার আপনিই উল্লিখিত মুলনীতি অনুসারে তার কাছ থেকে শরয়ী ইলম নেয়া বৈধ কিনা তার উত্তর খুঁজে বের করুন।
.
এই পর্যায়ে আমরা আপনার কাছে একটি প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি, একাধিক আলিমের সতর্কীকরণ স্বত্ত্বেও শুধুমাত্র উমুকের লেকচার আমার ভালো লাগে, উমুকের বই পড়ে বা ওয়াজ শুনে আমার কাছে বড় আলিম/জ্ঞানী ব্যক্তি মনে হয়, উমুক ব্যক্তি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েও এই এই খেদমত করছেন ইত্যাদির অযুহাতে শরয়ী ইলমী নেওয়া কি কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ নয়?
.
▪মু'তাজিলা ফিতনার প্রচার :
শীয়া ও কাদিয়ানী ফিতনার পর এই উম্মাহর সবচেয়ে বড় ফিতনা হল বর্তমান খারেজী, মু'তাজিলা ফিতনা। মু'তাজিলাদের ফিতনা এতটাই মারাত্মক যে এই ফিতনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দ্বীনের পথে আসা কলেজ-ভার্সিটির নতুন ছাত্র ছাত্রীরা। আপনি যদি ভিবিন্ন দল, মতবাদ, ফ্বিরকা সম্পর্কে যথোপযুক্ত জ্ঞান না রাখেন তাহলে যেকোনো সময়ে এই ফিতনায় পড়ে যেতে পারেন। কারণ এরা উপরে আয়নাবাজী করে দেখায় যে, এরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত কিন্তু অন্তরে নিকৃষ্ট মু'তাজিলা, মুরজি'আ,আশারিয়াহ, কাদরিয়া সংমিশ্রণের সংকরজাত আক্বীদাহ লালন করে। তবে এদের প্রধান আক্বীদাহ হল "মু'তাজিলা"।
বঙ্গদেশে মু'তাজিলা আক্বীদার লালনকারী ও প্রচার প্রসারে ডাক্তার মতিয়ার রাহমান ও তার প্রতিষ্ঠান কিউ. আর. এফ বেশ জোড়ালো ভুমিকা পালন করছে। একই সাথে তিনি নিজের বিষাক্ত মতাদর্শকে আওয়ামের [ জনসাধারণের ] মাঝে ছড়িয়ে দিতে বেশ কিছু সেবাও চালু রেখেছেন। যেমন ধরূন, ফ্রি চিকিৎসা, পানির দরে নিজের লিখিত বই বিক্রয় করা ইত্যাদি। এছাড়াও স্বনামধন্য দাঈ ও বক্তাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে ফটোসেশনের নামে আইওয়াশ তো থাকছেই।
.
▪ডাক্তার মতিয়ার রহমান সাহেব বি'রচিত বইয়ের উপর এক নজর [ পর্যালোচনা ] :
ডাক্তার মতিয়ার রহমান [ হাদাহুল্লাহ ] ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির উপর প্রায় ৪০ এর কাছাকাছি গ্রন্থ রচনা করেছেন। একজন মুসলিমকে পথভ্রষ্ট করতে এগুলোই যথেষ্ট। তন্মধ্যে কিছু বই হল :
⦁ Common sense -এর গুরুত্ব কতটুকু এবং কেন!
⦁ সবচেয়ে বড় গুনাহ শিরিক করা নাকি কোরআনের জ্ঞান না থাকা"?
⦁ শাফায়াত দ্বারা কবিরা গুনাহ বা দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কি?
⦁ মৃত্যুর সময় ও কারণ প্রচলিত তথ্যটির প্রকৃত ব্যাখ্যা!
.
▪পর্যালোচনা :
⦁ এক,
ক্বুরআন-হাদীসের পর পরই শরীয়তের তৃতীয় দলীল হিসেবে তিনি নিজের আক্বল বা বিবেককে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কমনসেন্সের গুরুত্ব নিয়ে তার লিখিত বইতে বিস্তারিত পাবেন। তার অন্যতম স্লোগান হল “কুরআন, হাদীস, আক্বল” অর্থাৎ ক্বুরআন হাদীসের পাশাপাশি নিজের আক্বল দিয়েও বিচার,বিবেচনা করতে হবে! তারমানে আওয়ামকে ( জনসাধারণ)
এই মেসেজ দিচ্ছেন যে, তারা যেন আক্বল দিয়ে হাদীস নির্ণয় করে। সুতরাং যেই হাদিস আক্বলের (বিবেক) সাথে গড়মিল খাবে সেটা অগ্রহণযোগ্য বলেই জনসাধারণের কাছে পরিগনিত হবে [ আঊজুবিল্লাহ ]। এইজন্যই দেখা যায় যে, আক্বলকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মু'তাজিলারা সহিহুল বুখারী, মুসলিমের হাদিসকেও ইনকার ( অস্বীকার) করতে দ্বিধাবোধ করেন না!
.
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সকল ইমামের মতে ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ, মানুষের বিবেক-বুদ্ধি নয়। মানুষের বিবেক ও বুদ্ধি যদি ক্বুরআন ও হাদীসের অনুকুলে হয় এবং কোন তথ্য ও রহস্য বুঝতে সক্ষম হয় তাহলে সেটা গ্রহণীয়। আর কোন বিষয়ের বা হুকুমের রহস্য বিবেক দ্বারা বুঝতে না পারলেও তার উপর বিশ্বাস রাখা জরুরী। এমন কি ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কোন মাস'আলা আপাতদৃস্টিতে মানুষের বিবেকের বিরোধী মনে হলেও বিবেকপ্রসুত কথা বাদ দিয়ে ক্বুরআন ও হাদীসের কথাই মেনে নিতে হবে। কারণ ক্বুরআন ও হাদীসের বাণী ভুলের উর্ধে, আর মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি ভুলের উর্ধে নয়। মুলত বিবেককে ক্বুরআন ও হাদীছের দলীলের উপর প্রাধান্য দেওয়ার কারণেই মু'তাযিলা সম্প্রদায় দ্বীনের অনেক বিষয় অস্বীকার করেছেন যা কুফুরী পর্যায়ের!
-
⦁ দুই,
ডাক্তার মতিয়ারের মতে কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি শাফা"আত পাবেনা! এমনকি সাধারণ কবীরা গুনাহগার মুমিনকেও তিনি চিরস্থায়ী জাহান্নামী মনে করেন! তার লিখিত "শাফা'আত দ্বারা কবীরা গুনাহ বা দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কি" বইতে তিনি এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। অবশ্য তার এই বইয়ের দালিলিক জবাব দিয়েছেন মুহতারাম কামাল আহমাদ হাফিয্বাহুল্লাহ তার "কবীরা গুনাগার মুমিনের নাজাত ও শাফা'আত"নামক বইতে। সচেতন পাঠকগন বই দুইটি পড়ে নিতে পারেন।
-
⦁ তিন,
ডা.মতিয়ারের কাছে শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ নয় বরং সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো কুরআনের জ্ঞান না থাকা। তিনি এই নব্য আক্বীদাহ পেশ করেছেন তার লিখিত "সবচেয়ে বড় গুনাহ শিরিক করা নাকি ক্বুরআনের জ্ঞান না থাকা" নামক বইতে।
আমাদের জিজ্ঞাসা হল, বিগত ১৪ শ বছরের মধ্যে কোনো আহলুল ইলম কি এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, শিরিকের চাইতেও বড় গুনাহ, এমনকি সবচেয়ে বড় গুনাহ হল ক্বুরআন না বুঝা ? অথচ তারাই ছিলেন এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান, দ্বীনের সমঝ ও জ্ঞানের দিক থেকে আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ক্বুরআনুল কারীমে বলেছেন, শিরিক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম এবং আল্লাহ চাইলে শিরিক ছাড়া সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। পক্ষান্তরে, ডাক্তার মতিয়ার সাহেবের থিউরি অনুযায়ী প্রতিটি মুসলমানের [ হোক আলিম অথবা সাধারণ পাব্লিক] ক্বুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান থাকা ফরজ এবং এই ফরজ তরককারী মুশরিকের চাইতেও বড় গুনাহগার। [ নাঊযুবিল্লাহ ]
প্রিয় পাঠক, সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করুন তো, একজন সাধারণ মুসলিম কি ক্বুরআনের সম্যক্ষ জ্ঞান হাসিল করতে সক্ষম অথবা প্রতিটি মুসলমানকে কি মুফাসসির হওয়া জরুরী?
আমরা বলবো, আল্লাহর কিতাব তথা আল ক্বুরআনের জ্ঞান সকলেরই থাকা ফরজ তবে তা সমগ্র দ্বীনের কিছু অংশ সম্বলিত আর বাকি জ্ঞানগুলো সকলের থাকা আবশ্যক নয়, তাছাড়া সকলের দ্বারা তা সম্ববও নয় তাই উলামাদের সেই জ্ঞান থাকলেই আম-জনতার শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু ডাক্তার সাহেব প্রত্যেক মুসলিমকেই মুফাসসির বানিয়ে দিচ্ছেন, আর যদি আপনি মুফাসসির হতে না পারেন তাহলে শিরিকের চাইতেও বড় গুনাহ'তে লিপ্ত রয়েছেন। যা একেবারেই নতুন মতবাদ বৈ কিছুই নয়।
.
▪ সর্তকতা :
এই উম্মাহ বর্তমানে ডাক্তার, মুকতারদের ফিতনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। নিবন্ধে আলোচিত ডাক্তার সাহেবের ইলমের এই দৈন্যদশা দেখে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আলেমেদ্বীন ও ফক্বীহ আশ শাইখুল আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ছলেহ আল উছাইমীন [ রাহিমাহুল্লাহ-র]' একটি কথা মনে পড়ে গেল। তিনি [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলতেন,
"অনেক মানুষকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, কিন্তু অর্জিত সেই জ্ঞান অনুধাবন করার মতো ক্ষমতা তাদেরকে দেওয়া হয়নি। না বুঝে শুধু কুর'আন মাজীদ ও হাদীস মুখস্থ করাই যথেষ্ট নয়। বরং অবশ্য-ই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ- এর হাদীসের মর্মার্থ আপনাকে বুঝতে হবে।
ঐ লোকদের দ্বারা কতইনা ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হয়েছে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ- এর হাদীসের মর্মবাণী না বুঝেই সেটাকে দলীল হিসেবে পেশ করছে, যার ফলে তাদের অনুসারীদের মাঝে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়েছে।” আল্লাহু মুস্তা'আন।
--- [ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান অধ্যায়]
.
তাইতো বহুদিন পূর্বে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেছিলেন,
“দুনিয়াকে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে আধা বক্তা, আধা ফক্বীহ, আধা ডাক্তার এবং আধা ভাষাবিদ। এদের একজন (আধা বক্তা) দ্বীনকে ধ্বংস করে, অপরজন (আধা ফকীহ) দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে। আধা ডাক্তার মানুষের শরীরকে নিঃশেষ করে। আর আধা ভাষাবিদ ভাষাকে বিনষ্ট করে।”
----- [ মা'জমুউ ফাতওয়া : ৫ / ১১৮ ]
.
▪কিছু পরামর্শ :
নিবন্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাঠকগন হয়ত ভাবতে পারেন, আমরা ডাক্তার মতিয়ার সাহেবকে পুরোপুরি বয়কটের আহবান জানাচ্ছি ! আমরা সেসকল পাঠকদের উদ্দেশ্যে শুধু এতটুকুই বলবো যে ,
যদি আপনার শারিরিক সমস্যা দেখা দেয় এবং ভাল সার্জেন্ট খুঁজে না পান অথবা পিত্ত থলিতে অপারেশন করানো জরুরী মনে করেন, সেক্ষেত্রে আপনি তার পরামর্শ, সেবা, দিকনির্দেশনা ফলো করতে পারেন কেননা তিনি একজন বড় মাপের ডাক্তার আর এই বিষয়টা দুনিয়ার সাথে রিলেটেড। কিন্তু ভুলেও তার লেকচার, বই বা লিখনী থেকে দ্বীনের জ্ঞান হাসিল করতে যাবেন না, কেননা তা দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত।
এক্ষেত্রে আপনার জন্য ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সিরিন [রাহিমাহুল্লাহ-র] একটি সর্তকবানী উল্লেখ করছি, যেখানে তিনি [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেছেন,
إنَّ هذا العلم دين ؛ فانظروا عمَّن تأخذون دينكم
নিশ্চয়ই এই ইলম দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং লক্ষ্য রেখো কার নিকট থেকে তুমি তোমার দ্বীন গ্রহণ করছো।
.
পরিশেষে আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বাতিলপন্থিদের বিরুদ্ধে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে যেন কবুল করে নেন, আমাদেরকে আমৃত্যু সালাফিয়্যাহ’র ওপর অটল রাখেন এবং সত্যান্বেষী ভাইদেরকে আল্লাহর কিতাব তথা "আল ক্বুর'আন" ও "রাসুলের হাদীস'কে সালফে সালেহীনদের মতো করে বুঝে, এবং সে-অনুযায়ী বেশী-বেশী নেক আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
.
⦁ কৃতজ্ঞতা স্বীকার : উক্ত নিবন্ধ রচনায় এক বড় ভাইয়ের পুরানো একটি আর্টিকেল থেকে সার-নির্যাস নেয়া হয়েছে।
.
❒ সংকলক :
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী,
Akhtar Bin Amir
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
.
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। যিনি বলেছেন, “হক এসেছে, আর বাতিল অপসৃত হয়েছে; বাতিল তো অপসৃত হওয়ারই ছিল।” --- [সূরাহ বানী ইসরাঈল: ৮১]
শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ ﷺ-এর প্রতি। যিনি বলেছেন, “তুমি হক (সত্য) বল, যদিও তা তিক্ত হয়।” [সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৩৩; সনদ: সাহীহ লি গাইরিহী] অন্যত্র বলেছেন, “তুমি হক বল, যদিও তা তোমার নিজের বিরুদ্ধে যায়।” --- [সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/১৯১১; সাহীহুল জামি‘, হা/৩৭৬৯; সনদ: সাহীহ]
.
▪প্রারাম্ভিকা,
চারদিকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাদের উৎপাতে যুবসমাজ দিকভ্রান্ত! শত কষ্টে এক গর্ত থেকে দ্বীনের পথে উঠে আসা সেই দূঢ় প্রত্যয়ী যুবকই আবার আরেক গর্তে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। কারো তুখোড় লেখনী, সুমধুর ওয়াজ কিংবা নজরকাড়া বক্তব্য দেখেই তার পিছনে ছুটে চলার কারণে পথভ্রষ্ট হচ্ছেন অনেকেই।
.
শরয়ী ইলম নেয়ার মুলনীতি হচ্ছে, মাজহুল বা অপরিচিত কারো নিকট হতে ইলম নেয়া বৈধ নয়।
এ প্রসঙ্গে একজন সালাফ বলেছিলেন "দ্বীনের ব্যপারে “প্রকৃত আলেম” ছাড়া অপরিচিত, অজ্ঞ লোকদেরকে আলেম মনে করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেনা। যদি করো, তাহলে যেন তুমি তোমার দ্বীনকেই ধ্বংস করলে"!
.
কোনো দাঈ থেকে ইলম নেয়ার পূর্বে অবশ্যই তাঁর পরিচয় , পড়াশোনা, তাঁর উস্তাযগণের ব্যাপারে জেনে রাখা আবশ্যক। তাকে সম-সাময়িক কোন আলিম চিনেন কিনা, বা তিনি আলিমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেছেন কিনা বা উলামাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেন কিনা অথবা উলামাদের সহবতে ছিলেন কিনা, এসব বিষয়াদি জানা অত্যান্ত জরুরী।
এ প্রসঙ্গে ইমাম শু’বাহ [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেন,
“ইলম তার কাছ থেকেই নাও, যে ব্যক্তি পরিচিত।”
--- [আল-জারহ ওয়াত-তা’দীল : ২/২৮]
অর্থাৎ যাকে সমসাময়িক উলামাগন চিনেন/জানেন, যার আমানতদারী, বিশ্বস্ততার ব্যাপারে তারা সন্দেহমুক্ত এবং যিনি আলিমদের সহবতে থেকে ইলম অর্জন করেছেন বলেই আওয়ামের কাছে প্রতীয়মান হয়।
.
পর সমাচার এই যে, বেশ কিছুদিন ধরে বঙ্গদেশের বাত্বিল আক্বীদাহর ধারক ও বাহক এবং প্রচারকারী ডাক্তার মতিয়ার রহমান [ হাদাহুল্লাহ ] নামক একজন ভদ্রলোক দাওয়াতি ফিল্ডে কাজ করছেন। তিনি বেশকিছু বই ও লেকচারের মাধ্যমে " মুতা'জিলা" আক্বীদাহর প্রচার-প্রসার ঘটাচ্ছেন। ক্বুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন [ কিউ.আর.এফ ] নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। আমরা লক্ষ্য করছি বঙ্গদেশের কথিপয় দাঈ তার ফাঁদে পা দিয়ে এই বিষাক্ত মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন।
বিভ্রান্তদের হুঁশ ফিরাতেই আজকের এই নিবন্ধের অবতারণা। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা ডাক্তার সাহেবের পরিচয় ও বিভ্রান্ত আক্বীদাহ এবং তাঁর কিতাবাদীর পর্যলোচনা করব - [ ওয়া বিল্লাহীত তাওফীক্ব ]।
.
▪ ডা.মতিয়ার রাহমানের পরিচয় ও পড়াশোনা :
ডা.মতিয়ার রহমান খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আরজি-ডুমুরিয়া গ্রামের জন্মগ্রহন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন চিকিৎসক ও সমাজসেবক হিসেবেই পরিচিত। তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, এছাড়া ইনসাফ বারাকাহ কিডনী এন্ড জেনারেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
১৯৭৯ সালের দিকে তিনি ইরাকে চলে যান এবং ইরাকের জেনারেল হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে চার বছর চাকরি করেন। মুলত সেখানে গিয়ে ইরাকিদের ভাষা (আঞ্চলিক আরবি) শুনে তিনি অবাক হন এবং তার কাছে তখনই ক্বুরআনের ভাষাটা শিখার আগ্রহ জাগে। ক্বুরআন পড়া শেষ করার পরপরই তিনি হাদীস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন! কোনো স্বনামধন্য স্কলারের সহবত ছাড়াই তিনি দ্বীনের জ্ঞান অর্জন অত:পর তা বিলিকরণে দেশে প্রতিষ্ঠা করেন "ক্বুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন" (কিউ.আর. এফ) যার চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেই দায়িত্ব পালন করছেন।
--- [ তার বইয়ে লিখক পরিচিতি দ্রষ্টব্য ]
.
▪পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা :
প্রিয় পাঠকবৃন্দ , আমরা বলতে চাচ্ছি, উপরিউক্ত যোগ্যতাগুলো কারো “আলিম” বা দাঈ হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ কিনা অথবা এমন ব্যক্তি থেকে শরয়ী ইলম নেওয়া বৈধ কিনা? ইসলাম কি আমাদের অধো এই শিক্ষা দেয় যে, এই গুণগুলো কারো মাঝে থাকলেই তিনি আলিম হয়ে যাবেন অথবা তার কাছ থেকে দ্বীনের জ্ঞান নেওয়া বৈধ হয়ে যাবে? আমাদের পূর্ব যুগের মুসলমানেরা কি এইভাবে মানুষকে দাঈ ,আলিম হিসেবে গ্রহণ করতো অথবা দ্বীনের জ্ঞান নেওয়া বৈধ মনে করতো?
জ্ঞাতব্য যে, ডাক্তার মতিয়ার রহমান [ হাদাহুল্লাহ ] হলেন এমন ব্যক্তি যাকে সম-সাময়িক কোনো আলিম চিনেন না, তিনি আলিমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেননি, তাঁদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখেন নি , তাদের সহবতে থাকেন নি। এবার আপনিই উল্লিখিত মুলনীতি অনুসারে তার কাছ থেকে শরয়ী ইলম নেয়া বৈধ কিনা তার উত্তর খুঁজে বের করুন।
.
এই পর্যায়ে আমরা আপনার কাছে একটি প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি, একাধিক আলিমের সতর্কীকরণ স্বত্ত্বেও শুধুমাত্র উমুকের লেকচার আমার ভালো লাগে, উমুকের বই পড়ে বা ওয়াজ শুনে আমার কাছে বড় আলিম/জ্ঞানী ব্যক্তি মনে হয়, উমুক ব্যক্তি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েও এই এই খেদমত করছেন ইত্যাদির অযুহাতে শরয়ী ইলমী নেওয়া কি কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ নয়?
.
▪মু'তাজিলা ফিতনার প্রচার :
শীয়া ও কাদিয়ানী ফিতনার পর এই উম্মাহর সবচেয়ে বড় ফিতনা হল বর্তমান খারেজী, মু'তাজিলা ফিতনা। মু'তাজিলাদের ফিতনা এতটাই মারাত্মক যে এই ফিতনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দ্বীনের পথে আসা কলেজ-ভার্সিটির নতুন ছাত্র ছাত্রীরা। আপনি যদি ভিবিন্ন দল, মতবাদ, ফ্বিরকা সম্পর্কে যথোপযুক্ত জ্ঞান না রাখেন তাহলে যেকোনো সময়ে এই ফিতনায় পড়ে যেতে পারেন। কারণ এরা উপরে আয়নাবাজী করে দেখায় যে, এরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত কিন্তু অন্তরে নিকৃষ্ট মু'তাজিলা, মুরজি'আ,আশারিয়াহ, কাদরিয়া সংমিশ্রণের সংকরজাত আক্বীদাহ লালন করে। তবে এদের প্রধান আক্বীদাহ হল "মু'তাজিলা"।
বঙ্গদেশে মু'তাজিলা আক্বীদার লালনকারী ও প্রচার প্রসারে ডাক্তার মতিয়ার রাহমান ও তার প্রতিষ্ঠান কিউ. আর. এফ বেশ জোড়ালো ভুমিকা পালন করছে। একই সাথে তিনি নিজের বিষাক্ত মতাদর্শকে আওয়ামের [ জনসাধারণের ] মাঝে ছড়িয়ে দিতে বেশ কিছু সেবাও চালু রেখেছেন। যেমন ধরূন, ফ্রি চিকিৎসা, পানির দরে নিজের লিখিত বই বিক্রয় করা ইত্যাদি। এছাড়াও স্বনামধন্য দাঈ ও বক্তাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে ফটোসেশনের নামে আইওয়াশ তো থাকছেই।
.
▪ডাক্তার মতিয়ার রহমান সাহেব বি'রচিত বইয়ের উপর এক নজর [ পর্যালোচনা ] :
ডাক্তার মতিয়ার রহমান [ হাদাহুল্লাহ ] ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির উপর প্রায় ৪০ এর কাছাকাছি গ্রন্থ রচনা করেছেন। একজন মুসলিমকে পথভ্রষ্ট করতে এগুলোই যথেষ্ট। তন্মধ্যে কিছু বই হল :
⦁ Common sense -এর গুরুত্ব কতটুকু এবং কেন!
⦁ সবচেয়ে বড় গুনাহ শিরিক করা নাকি কোরআনের জ্ঞান না থাকা"?
⦁ শাফায়াত দ্বারা কবিরা গুনাহ বা দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কি?
⦁ মৃত্যুর সময় ও কারণ প্রচলিত তথ্যটির প্রকৃত ব্যাখ্যা!
.
▪পর্যালোচনা :
⦁ এক,
ক্বুরআন-হাদীসের পর পরই শরীয়তের তৃতীয় দলীল হিসেবে তিনি নিজের আক্বল বা বিবেককে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কমনসেন্সের গুরুত্ব নিয়ে তার লিখিত বইতে বিস্তারিত পাবেন। তার অন্যতম স্লোগান হল “কুরআন, হাদীস, আক্বল” অর্থাৎ ক্বুরআন হাদীসের পাশাপাশি নিজের আক্বল দিয়েও বিচার,বিবেচনা করতে হবে! তারমানে আওয়ামকে ( জনসাধারণ)
এই মেসেজ দিচ্ছেন যে, তারা যেন আক্বল দিয়ে হাদীস নির্ণয় করে। সুতরাং যেই হাদিস আক্বলের (বিবেক) সাথে গড়মিল খাবে সেটা অগ্রহণযোগ্য বলেই জনসাধারণের কাছে পরিগনিত হবে [ আঊজুবিল্লাহ ]। এইজন্যই দেখা যায় যে, আক্বলকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মু'তাজিলারা সহিহুল বুখারী, মুসলিমের হাদিসকেও ইনকার ( অস্বীকার) করতে দ্বিধাবোধ করেন না!
.
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সকল ইমামের মতে ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ, মানুষের বিবেক-বুদ্ধি নয়। মানুষের বিবেক ও বুদ্ধি যদি ক্বুরআন ও হাদীসের অনুকুলে হয় এবং কোন তথ্য ও রহস্য বুঝতে সক্ষম হয় তাহলে সেটা গ্রহণীয়। আর কোন বিষয়ের বা হুকুমের রহস্য বিবেক দ্বারা বুঝতে না পারলেও তার উপর বিশ্বাস রাখা জরুরী। এমন কি ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কোন মাস'আলা আপাতদৃস্টিতে মানুষের বিবেকের বিরোধী মনে হলেও বিবেকপ্রসুত কথা বাদ দিয়ে ক্বুরআন ও হাদীসের কথাই মেনে নিতে হবে। কারণ ক্বুরআন ও হাদীসের বাণী ভুলের উর্ধে, আর মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি ভুলের উর্ধে নয়। মুলত বিবেককে ক্বুরআন ও হাদীছের দলীলের উপর প্রাধান্য দেওয়ার কারণেই মু'তাযিলা সম্প্রদায় দ্বীনের অনেক বিষয় অস্বীকার করেছেন যা কুফুরী পর্যায়ের!
-
⦁ দুই,
ডাক্তার মতিয়ারের মতে কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি শাফা"আত পাবেনা! এমনকি সাধারণ কবীরা গুনাহগার মুমিনকেও তিনি চিরস্থায়ী জাহান্নামী মনে করেন! তার লিখিত "শাফা'আত দ্বারা কবীরা গুনাহ বা দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কি" বইতে তিনি এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। অবশ্য তার এই বইয়ের দালিলিক জবাব দিয়েছেন মুহতারাম কামাল আহমাদ হাফিয্বাহুল্লাহ তার "কবীরা গুনাগার মুমিনের নাজাত ও শাফা'আত"নামক বইতে। সচেতন পাঠকগন বই দুইটি পড়ে নিতে পারেন।
-
⦁ তিন,
ডা.মতিয়ারের কাছে শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ নয় বরং সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো কুরআনের জ্ঞান না থাকা। তিনি এই নব্য আক্বীদাহ পেশ করেছেন তার লিখিত "সবচেয়ে বড় গুনাহ শিরিক করা নাকি ক্বুরআনের জ্ঞান না থাকা" নামক বইতে।
আমাদের জিজ্ঞাসা হল, বিগত ১৪ শ বছরের মধ্যে কোনো আহলুল ইলম কি এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, শিরিকের চাইতেও বড় গুনাহ, এমনকি সবচেয়ে বড় গুনাহ হল ক্বুরআন না বুঝা ? অথচ তারাই ছিলেন এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান, দ্বীনের সমঝ ও জ্ঞানের দিক থেকে আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ক্বুরআনুল কারীমে বলেছেন, শিরিক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম এবং আল্লাহ চাইলে শিরিক ছাড়া সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। পক্ষান্তরে, ডাক্তার মতিয়ার সাহেবের থিউরি অনুযায়ী প্রতিটি মুসলমানের [ হোক আলিম অথবা সাধারণ পাব্লিক] ক্বুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান থাকা ফরজ এবং এই ফরজ তরককারী মুশরিকের চাইতেও বড় গুনাহগার। [ নাঊযুবিল্লাহ ]
প্রিয় পাঠক, সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করুন তো, একজন সাধারণ মুসলিম কি ক্বুরআনের সম্যক্ষ জ্ঞান হাসিল করতে সক্ষম অথবা প্রতিটি মুসলমানকে কি মুফাসসির হওয়া জরুরী?
আমরা বলবো, আল্লাহর কিতাব তথা আল ক্বুরআনের জ্ঞান সকলেরই থাকা ফরজ তবে তা সমগ্র দ্বীনের কিছু অংশ সম্বলিত আর বাকি জ্ঞানগুলো সকলের থাকা আবশ্যক নয়, তাছাড়া সকলের দ্বারা তা সম্ববও নয় তাই উলামাদের সেই জ্ঞান থাকলেই আম-জনতার শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু ডাক্তার সাহেব প্রত্যেক মুসলিমকেই মুফাসসির বানিয়ে দিচ্ছেন, আর যদি আপনি মুফাসসির হতে না পারেন তাহলে শিরিকের চাইতেও বড় গুনাহ'তে লিপ্ত রয়েছেন। যা একেবারেই নতুন মতবাদ বৈ কিছুই নয়।
.
▪ সর্তকতা :
এই উম্মাহ বর্তমানে ডাক্তার, মুকতারদের ফিতনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। নিবন্ধে আলোচিত ডাক্তার সাহেবের ইলমের এই দৈন্যদশা দেখে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আলেমেদ্বীন ও ফক্বীহ আশ শাইখুল আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ছলেহ আল উছাইমীন [ রাহিমাহুল্লাহ-র]' একটি কথা মনে পড়ে গেল। তিনি [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলতেন,
"অনেক মানুষকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, কিন্তু অর্জিত সেই জ্ঞান অনুধাবন করার মতো ক্ষমতা তাদেরকে দেওয়া হয়নি। না বুঝে শুধু কুর'আন মাজীদ ও হাদীস মুখস্থ করাই যথেষ্ট নয়। বরং অবশ্য-ই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ- এর হাদীসের মর্মার্থ আপনাকে বুঝতে হবে।
ঐ লোকদের দ্বারা কতইনা ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হয়েছে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ- এর হাদীসের মর্মবাণী না বুঝেই সেটাকে দলীল হিসেবে পেশ করছে, যার ফলে তাদের অনুসারীদের মাঝে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়েছে।” আল্লাহু মুস্তা'আন।
--- [ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান অধ্যায়]
.
তাইতো বহুদিন পূর্বে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেছিলেন,
“দুনিয়াকে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে আধা বক্তা, আধা ফক্বীহ, আধা ডাক্তার এবং আধা ভাষাবিদ। এদের একজন (আধা বক্তা) দ্বীনকে ধ্বংস করে, অপরজন (আধা ফকীহ) দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে। আধা ডাক্তার মানুষের শরীরকে নিঃশেষ করে। আর আধা ভাষাবিদ ভাষাকে বিনষ্ট করে।”
----- [ মা'জমুউ ফাতওয়া : ৫ / ১১৮ ]
.
▪কিছু পরামর্শ :
নিবন্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাঠকগন হয়ত ভাবতে পারেন, আমরা ডাক্তার মতিয়ার সাহেবকে পুরোপুরি বয়কটের আহবান জানাচ্ছি ! আমরা সেসকল পাঠকদের উদ্দেশ্যে শুধু এতটুকুই বলবো যে ,
যদি আপনার শারিরিক সমস্যা দেখা দেয় এবং ভাল সার্জেন্ট খুঁজে না পান অথবা পিত্ত থলিতে অপারেশন করানো জরুরী মনে করেন, সেক্ষেত্রে আপনি তার পরামর্শ, সেবা, দিকনির্দেশনা ফলো করতে পারেন কেননা তিনি একজন বড় মাপের ডাক্তার আর এই বিষয়টা দুনিয়ার সাথে রিলেটেড। কিন্তু ভুলেও তার লেকচার, বই বা লিখনী থেকে দ্বীনের জ্ঞান হাসিল করতে যাবেন না, কেননা তা দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত।
এক্ষেত্রে আপনার জন্য ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সিরিন [রাহিমাহুল্লাহ-র] একটি সর্তকবানী উল্লেখ করছি, যেখানে তিনি [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেছেন,
إنَّ هذا العلم دين ؛ فانظروا عمَّن تأخذون دينكم
নিশ্চয়ই এই ইলম দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং লক্ষ্য রেখো কার নিকট থেকে তুমি তোমার দ্বীন গ্রহণ করছো।
.
পরিশেষে আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বাতিলপন্থিদের বিরুদ্ধে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে যেন কবুল করে নেন, আমাদেরকে আমৃত্যু সালাফিয়্যাহ’র ওপর অটল রাখেন এবং সত্যান্বেষী ভাইদেরকে আল্লাহর কিতাব তথা "আল ক্বুর'আন" ও "রাসুলের হাদীস'কে সালফে সালেহীনদের মতো করে বুঝে, এবং সে-অনুযায়ী বেশী-বেশী নেক আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
.
⦁ কৃতজ্ঞতা স্বীকার : উক্ত নিবন্ধ রচনায় এক বড় ভাইয়ের পুরানো একটি আর্টিকেল থেকে সার-নির্যাস নেয়া হয়েছে।
.
❒ সংকলক :
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী,
Akhtar Bin Amir
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
0 Comments