রাসূলুল্লাহ (ছা:) কি মাটির তৈরী ছিলেন, না নূরের তৈরী ছিলেন?

রাসূলুল্লাহ (ছা:) মাটি দ্বারা সৃষ্ট মানুষ ছিলেন, তিনি নূরের সৃষ্ট ফেরেশতা ছিলেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মত একজন মানুষ। আমার নিকট অহি অবতীর্ণ হয়’ (কাহফ ১১০)। তাদেরকে তাদের নবীগণ বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আমিও তোমাদের মত মানুষ’ (ইবরাহীম ১১; মুমিনূন ২৪)। এই লোক তোমাদের মত মানুষ। তিনি খান যেমন তোমরা খাও এবং পান করেন, যেমন তোমরা পান কর (মুমিনূন ৩৩)। রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেন, আমি একজন মানুষ, আমি তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কোন কিছু আদেশ করলে তা গ্রহণ করবে। আর আমি ব্যক্তিগত রায় থেকে কিছু বললে, আমি একজন মানুষ মাত্র। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে আমার ভুলও হ’তে পারে (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৭)।
রাসুল (ছা:) নামাজে একসময় ভূল করলে তিনি বলেন, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে(সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮/ সলাত৪০১)(৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯; মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭২, ৪১৭৪ আহমাদ) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯২)। অনেকে নবী নুরের তৈরি প্রমান করতে গিয়ে সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝায়। অথচ এ আয়াতে বলা হয়েছে, সূরা মায়েদার ১৫নং আয়াতের শেষাংশের অনুবাদ হচ্ছে ‘তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ’। এ আয়াতে نُوْرٌ (নূর)-এর ব্যাখ্যা স্বরূপ এসেছে وَكِتَابٌ مُبِيْنٌ (একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ)। এখানে وَكِتَابٌ مُبِيْنٌ বাক্যাংশ نُوْرٌ -এর উপরে ‘আত্ফ’ হয়েছে। যাকে ‘আত্ফে খাছ আলাল আম’ বলে। অতএব এখানে ‘নূর’ বলে ‘কিতাব’ বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট নূর এসেছে, অর্থ হ’ল সমুজ্জ্বল স্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ৫৭৮২)। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল!) ‘আপনি বলুন, আমার প্রতিপালক মহা পবিত্র। আমি একজন মানুষ ও একজন রাসূল বৈ আর কী? (বানী ইসরাঈল ৯৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজেও বলেন, ‘আমি তো একজন মানুষ। আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। সুতরাং আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৬ ‘সিজদায়ে সহো’ অনুচ্ছেদ)।
নূর দ্বারা ফেরেশতাদেরকে, অগ্নিশিখা দ্বারা জিনদেরকে এবং মাটি দ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭০১)। নবী-রাসূলগণ এবং শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) মাটির সৃষ্টি (ফুছছিলাত ৬; কাহফ ১১০)। উল্লেখ্য যে, অনেকে বলেন আল্লাহ সর্বপ্রথম তাঁর নূর হ’তে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নূর সৃষ্টি করেন। আর সেই নূর থেকেই আরশ সহ সমস্ত জগৎ সৃষ্টি করেন (কাশফুল খাফা হা/৮২৭) বলে যে কথা চালু আছে, তা মিথ্যা ও বানোয়াট (আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী, আল-আছারুল মারফূ‘আহ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৪৩)।
অনেকে যুক্তি দিতে গিয়ে আল্লাহকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে ফেলে(নাউযুবিল্লাহ), তারা বলে সূরা কাহফ ১১০ নং আয়াতে যা বলেছে সেগুলো বলেছে কাফেরদেরকে। আবার প্রশ্ন ক‌রে যে, আপনিও কি কাফের যে এই কথা ধরবেন? তাহলে এ-কথাতে যু‌ক্তিদাতা কি বোঝালো? বোঝালো যে আল্লাহ কাফেরদেরকে মিথ্যা কথা বলেছেন, তার মানে আল্লাহ মিথ্যাবাদী(নাউযুবিল্লাহ)। এগুলো চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা উত্তম। কারন ইসলামে কুরআন এবং হাদীসের নিকট যুক্তি চলেনা। অনেকে আর একটি হাদীস দেয় যে, “তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান”। আর একথা বলেছিলেন এই জন্য যে, তিনি সাহাবীদের সওমে বিসাল না করার জন্য, কিন্তু তবুও সাহাবীরা সওমে বিসাল করেছেন। সম্পুর্ণ হাদীস টি নিম্নরুপ দেওয়া হলো:
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরতিহীন সওম (সওমে বিসাল) পালন করতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যে বিরতিহীন (সওমে বিসাল) সওম পালন করেন? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সওমে বিসাল করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন (লাগাতার) সওমে বিসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন : যদি চাঁদ উঠতে আরো দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরো বেশী দিন সওমে বিসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৩০/ সাওম/রোযা১৯৬৫ )(১৯৬৬, ৬৮৫১, ৭২৪২, ৭২৯৯, মুসলিম ১৩/১১, হাঃ ১১০৩, আহমাদ ১৩৫৮৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮২৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৮৩৮) ।
এখন এ হাদীসটির এবং সুরা মায়েদার ভূল ব্যাখ্যা মাথায় নিয়ে যদি কেউ কুরআন এবং হাদীস  (কাহফ ১১০; ইবরাহীম ১১;  মুমিনূন ২৪; মুমিনূন ৩৩; সূরা মায়েদা ১৫; বানী ইসরাঈল ৯৩; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৭); সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮/ সলাত৪০১)(৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯;  মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭২, ৪১৭৪ আহমাদ; আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯২; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৬;‘সিজদায়ে সহো’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭০১)- কে অস্বীকার করে তাহলেতো আর কিছু করার নাই। পরকালীন হিসাব তো নিজের আমলের উপর নির্ভশীল। যার যে হিসাব সে নিজে দিবে।
আল্লাহর কথা এবং নবীর কথা উপেক্ষা করে তার সম্পর্কে বাড়িয়ে অতিরন্জিত করে বলা যাবেনা । কারন রাসুল (ছা:) তার সম্পর্কে বাড়িয়ে কথা বলা বা অতি রন্জিত করা অপছন্দ করতেন। রাসুলুল্লাহ (ছা:) বলেছেন, “‌যে ব্য‌ক্তি আমা‌র উপর মিথ্যা‌রোপ কর‌বে সে যেন তার স্থান জাহান্না‌মে ক‌রে নিল”(বুখারী, মিশকাত হা/১৯৮; বাংলা মিশকাত ২য় খন্ড, হা/১৮৮ ‘ইলম অধ্যায়)। ‘নবী আমা‌দের মত মানুষ’ এ‌টি কুরআন এবং ছহীহ হাদীস দ্বারা প্রমা‌ণিত এবং অ‌ধিক গ্রহন যোগ্য। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন, আমিন!

Post a Comment

0 Comments