Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার এক অনবদ্য রক্ষা কবজ সুরা কাহাফ

দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার এক অনবদ্য রক্ষা কবজ সুরা কাহাফ
(১ম দশ আয়াত, নাকি শেষ দশ আয়াত, না কি পূরো সূরা এ বিষয়ে দলীল ভিত্তিক পর্যালোচনা)
▬▬▬▬🌐🔶🌐▬▬▬▬

প্রশ্ন: আমরা হাদিস থেকে জেনেছি যে, সূরা কাহাফ এর প্রথম এবং শেষ দশ আয়াত মুখস্থ থাকলে দজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্ত থাকা যায়। তার মানে শুধু প্রথম দশ আয়াত অথবা শেষ দশ আয়াত মুখস্থ রাখাই যথেষ্ট না কি বিশ আয়াতই মুখস্থ রাখতে হবে?

উত্তর:

আমাদের জানা প্রয়োজন যে, দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য হাদিসে বিশুদ্ধ সূত্রে ছয় ভাবে সূরা কাহাফ পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো হল নিম্নরূপ:
১. পুরো সূরা কাহাফ পাঠ করা।
২. অনির্দিষ্টভাবে সূরা কাহাফের যে কোনো স্থান থেকে দশ আয়াত পাঠ করা।
৩. সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে কয়েকটি আয়াত পাঠ করা।
৪. সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে দশ আয়াত তিলাওয়াত করা।
৫. সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করা।
৬ . সূরা কাহাফের শেষ দশ আয়াত মুখস্থ করা।

এ বর্ণনাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ আলেম সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করার হাদিসকে অধিক শক্তিশালী ও অধিক প্রসিদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা এটি সহিহ মুসলিমে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং এ দশটি আয়াতের মর্মার্থও দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত থাকা প্রসঙ্গে অধিক সঙ্গতিপূর্ণ। 
আর বর্ণনার ভিন্নতা প্রসঙ্গে আলেমগণ বলেন,এর দ্বারা ক্রমান্বয়ে পুরো সূরা কাহাফ পড়া বা মুখস্থ করার দিকে ইঙ্গিত করা রয়েছে। সুতরাং কেউ যদি পুরো সূরাটা মুখস্থ করে বা নিয়মিত পড়ে তাহলে এটাই সবচেয়ে উত্তম।

💠 যাহোক নিম্নে এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো পেশ করা হল:

 ১) দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য পুরো সূরা কাহাফ পাঠ করার হাদিস:
আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
مَنْ قَرَأَ سُورَةُ الْكَهْفَ كَمَا أُنْزِلَتْ ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الدَّجَّالِ لَمْ يُسَلَّطْ عَلَيْهِ أَوْ : لَمْ يَكُنْ لَهُ عَلَيْهِ سَبِيلٌ " . (المستدرك : 4/557 حديث رقم : 8562 قال الذهبي قي التلخيص : صحيح)
“যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে তেলাওয়াত করবে অতঃপর দাজ্জালের জন্য বাহির হবে তার উপর দজ্জাল কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না অথবা তার উপর দাজ্জালের (প্রভাব ফেলার) কোন পথ থাকবে না।" (মুস্তাদরাক আলস সাহীহাইন ৪/৫৫৭, হা/৮৫৬২, ইমাম যাহাবী তালখীস গ্রন্থে বলেন: সহীহ। মুহাদ্দিসদের মতে এটি মারফু হাদিস হুকুমে)
এখানে বলা হয়েছে পুরো সূরা কাহাফ বিশুদ্ধ ও সুন্দরভাবে পাঠ করলেই দাজ্জালের প্রভাব থকে রক্ষা পাওয়া যাবে। 

 ২) সূরা কাহাফের যে কোনো স্থান থেকে দশ আয়াত পাঠ করার হাদিস:
من قرأ عشر آيات من سورة الكهف عصم من فتنة الدجال
صحيح ابن حبان : 3/65 حديث رقم : 785 قال شعيب الأرنؤوط : إسناده صحيح على شرط مسلم - سنن النسائي الكبرى : 5/15 حديث رقم : 8025 ، 6/235حديث رقم : 10785 وعند النسائي بإسناد آخر 

“যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের দশটি আয়াত পাঠ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত থাকবে।“ (সহীহ ইবনে হিব্বান ৩/৫৬, হা/৭৮৫, শুআইব আরনাউত বলেন, সহিহ মুসলিম এর শর্তানুযায়ী এর সনদ সহিহ) 
এখানে বলা হয়েছে, সূরা কাহাফের দশটি আয়াত পাঠ করলেই দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত থাকা যাবে। তা সূরার যে কোনো স্থান থেকে হোক না কেন। প্রথম বা শেষ দিক থেকে পড়া শর্ত নয়। অনুরূপভাবে মুখস্থ করাও শর্ত নয়।

 ৩. সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে কয়েকটি আয়াত পাঠ:

প্রখ্যাত সাহাবী নাওয়াস বিন সামআন রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
ففَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ 
"এরপর তোমরা যারা তার (দাজ্জালের) দেখা পাবে, সে যেন তাকে লক্ষ করে সূরা কাহাফের প্রথম দিকের আয়াতগুলি পাঠ করে।" 
(সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: ফিতনা সমুহ ও কিয়ামতের নিদর্শনা বলী, অনুচ্ছেদ: দজ্জাল এর বর্ণনা, তার পরিচয় এবং তার সাথে যা থাকবে, হা/৭২৬৩)

এ হাদিসে দাজ্জালের মুখোমুখি হলে তাকে লক্ষ করে সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে কয়েকটি আয়াত পড়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে নির্ধারিত আয়াত সংখ্যা উল্লেখ করা হয় নি। 

 ৪) সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে দশ আয়াত পাঠ করার হাদিস:

আবুদ দারদা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
من قرأ عشر آيات من آخر الكهف عصم من فتنة الدجال
مسند أحمد 6/ 446حديث رقم : 27556 قال شعيب الأرنؤوط : إسناده صحيح رجاله ثقات رجال الشيخين غير معدان بن أبي طلحة اليعمري فمن رجال مسلم واللفظ له - صحيح ابن حبان : 3/66 حديث رقم : 786 قال شعيب الأرنؤوط : إسناده صحيح -سنن النسائي الكبرى : 6/235 حديث رقم : 10784 

“যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে দশটি আয়াত পাঠ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত থাকবে।“ (মুসনাদ আহমদ ৬/৪৪৬, হাদিস নং ২৭৫৫৬, সনদ সহিহ)
- প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
وَمَنْ قَرَأَ بِعَشْرِ آيَاتٍ مِنْ آخِرِهَا ، ثُمَّ خَرَجَ الدَّجَّالُ لَمْ يَضُرَّهُ 
“যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দশটি আয়াত পাঠ করবে দজ্জাল বের হলেও তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।“ (মুসনাদে হাকিম-তিনি এটিকে সহিহ বলেছেন। বায়হাকী, আল মুজামুল আওসাত-ত্বাবারানী প্রমূখ)
এ হাদিস দ্বয়ে সূরা কাহাফের শেষের দশ আয়াত তেলাওয়াতের কথা বলা হয়েছে। মুখস্থ করার কথা বলা হয় নি।

 ৫) সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশ আয়াত মুখস্থ করার ব্যাপারে হাদিস:

আবুদ দারদা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছে:
مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْف عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ
‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দজ্জালের (ফিতনা) থেকে পরিত্রাণ পাবে।’’ (সহীহ মুসলিম ১/৫৫৫, হা/৮০৯, ২৫৭)
আবু দাউদে একই সাহাবী থেকে সহীহ সনদে হুবহু অনুরূপ হাদিস বর্ণিত।
এখানে প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করার কথা বলা হয়েছে। 
এ বর্ণনাটা অন্যান্য বর্ণনার তুলনায় অধিক শক্তিশালী ও প্রসিদ্ধ।

 ৬) সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে দশ আয়াত মুখস্থ করার হাদিস:

সহীহ মুসলিমে প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করার হাদিস বর্ণনার পরক্ষণেই বলা হয়েছে যে, অন্য বর্ণনায় রয়েছে: «مِنْ آخِرِ الْكَهْفِ» ‘কাহফ সূরার শেষ দিক থেকে।“ অর্থাৎ যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দশ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত থাকবে।“ (সহীহ মুসলিম, হা/ ৮০৯)
আবু দাউদ (রহঃ) প্রথম দশ আয়াত এর কথা বর্ণনা করার পর বলেন: হিশাম দাসতাওয়ারী রহ. কাতাদা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, 
مَنْ حَفِظَ مِنْ خَوَاتِيمِ سُورَةِ الْكَهْفِ
"যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে (দশ আয়াত) মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।"
‘শুবা (রহঃ) বলেছেন: مِنْ آخِرِ الْكَهْف "সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে (যার দশটি আয়াত মুখস্থ থাকবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।)"
[সুনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বরঃ [4272], অধ্যায়ঃ ৩২/ যুদ্ধ-বিগ্রহ (كتاب الملاحم) (ই.ফা., হাদিসটি সহীহ]
এসকল হাদিস থেকে শেষ দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করারকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে আত্মরক্ষার উপায় বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সূরা কাহাফের প্রথম তিন আয়াত পাঠ সংক্রান্ত হাদিসটিকে আল্লামা আলবানী 'শায' হিসেবে যঈফের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

সুতরাং আমরা চেষ্টা করব, সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করার এবং তিলাওয়াত করার পাশাপাশি সেগুলো মমার্থ উপলদ্ধি করত সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার। সেই সাথে যদি শেষ দশ আয়াতও মুখস্থ করা হয় তাহলে আরও উত্তম হয়। আর যদি পূরো সূরাটাই মুখস্থ করা হয় তাহলে সবচেয়ে উত্তম। 
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফিতনা-দাজ্জালের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬🌐🔶🌐▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। KSA

Post a Comment

0 Comments