Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

কোরবানির মাসায়েল সংক্রান্ত কিছু তথ্য...


بسم الله الرحمن الرحيم

করুণাময় কৃপানিধান আল্লাহর নামে (শুরু করছি)’

نحمده و نصلى على رسوله الكريم أما بعد:

কুরবানীর সংজ্ঞা

আরবী ‘কুরবান’ (قربان) শব্দটি ফারসী বা ঊর্দূতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। পারিভাষিক অর্থে  القُرْبَانُ مَا يُتَقَرَّبُ بِهِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى   কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হয়’[1] প্রচলিত অর্থে, ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শারঈ তরীকায় যে পশু যবহ করা হয়, তাকে ‘কুরবানী’ বলা হয়’। সকালে রক্তিম সূর্য উপরে ওঠার সময়ে ‘কুরবানী’ করা হয় বলে এই দিনটিকে ‘ইয়াওমুল আযহা’ বলা হয়ে থাকে[2] যদিও কুরবানী সারাদিন ও পরের দু’দিন করা যায়

(২) গুরুত্ব

আল্লাহ বলেন,

(ক) وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ  (الحج ৩৬)-

আর কুরবানীর পশু সমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে’ (হজ্জ ২২/৩৬)

(খ) আল্লাহ আরও বলেন, وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ، وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ (الصافات ১০৭-১০৮)-আর আমরা তার (অর্থাৎ ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী’। ‘এবং আমরা এটিকে (অর্থাৎ কুরবানীর এ প্রথাটিকে) পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’ (ছাফফাত ৩৭/১০৭-১০৮)

(গ) আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (الكوثر )-  তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’ (সূরা কাওছার ১০৮/২) কাফির-মুশরিকরা তাদের দেব-দেবী ও বিভিন্ন কবর ও বেদীতে পূজা দেয় ও মূর্তির উদ্দেশ্যে কুরবানী করে থাকে। তার প্রতিবাদ স্বরূপ মুসলমানকে আল্লাহর জন্য ‘ছালাত আদায়ের ও তাঁর উদ্দেশ্যে কুরবানী করার’ হুকুম দেওয়া হয়েছে। ঈদুল আযহার দিন প্রথমে আল্লাহর জন্য ঈদের ছালাত আদায় করতে হয়, অতঃপর তাঁর নামে কুরবানী করতে হয়। অনেক মুফাসসির এভাবেই আয়াতটির তাফসীর করেছেন[3]

(ঘ) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةً وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرِبَنَّ مُصَلاَّنَا رواه ابن ماجه بإسناد حسن-

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী  না হয়’[4]

(ঙ) এটি ইসলামের একটি ‘মহান নিদর্শন’ (شعار عظيم ), যা ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে মদীনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে কুরবানী করেছেন। অতঃপর অবিরত ধারায় মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের মধ্যে এটি চালু আছে। এটি কিতাব ও সুন্নাহ এবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সুপ্রমাণিত[5]

(৩) উদ্দেশ্য

কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহভীতি অর্জন করা। যাতে মানুষ এটা উপলব্ধি করে যে, আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কারণেই শক্তিশালী পশুগুলি তাদের মত দুর্বলদের অনুগত হয়েছে এবং তাদের গোশত, হাড়-হাড্ডি-মজ্জা ইত্যাদির মধ্যে তাদের জন্য রূযী নির্ধারিত হয়েছে। জাহেলী যুগের আরবরা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের অসীলা হিসাবে তাদের মূর্তির নামে কুরবানী করত। অতঃপর তার গোশতের কিছু অংশ মূর্তিগুলির মাথায় রাখত ও তার উপরে কিছু রক্ত ছিটিয়ে দিত। কেউবা উক্ত রক্ত কা‘বা গৃহের দেওয়ালে লেপন করত। মুসলমানদের কেউ কেউ অনুরূপ করার চিন্তা করলে নিম্নের আয়াতটি নাযিল হয়[6]  আল্লাহ বলেন,

لَنْ يَّنَالَ اللَّهَ لُحُوْمُهَا وَلاَ دِمَاؤُهَا وَ لَكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ (الحج ৩৭)-

অর্থঃ ‘কুরবানীর পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর নিকটে পৌঁছে না। বরং তাঁর নিকটে পৌঁছে কেবলমাত্র তোমাদের ‘তাক্বওয়া’ বা আল্লাহভীতি’ (হজ্জ ২২/৩৭)

(৪) হুকুম : কুরবানী সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে প্রত্যেককে কুরবানী করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) ও ওমর ফারূক্ব (রাঃ) অনেক সময় কুরবানী করতেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস, বেলাল, আবু মাসঊদ আনছারী প্রমুখ ছাহাবী থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে[7]

(৫) তাৎপর্য : (১) আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গ করার জাযবা সৃষ্টি করা (২) ইবরাহীমের পুত্র কুরবানীর ন্যায় ত্যাগ-পূত আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করা (৩) উত্তম খানা-পিনার মাধ্যমে ঈমানদারগণের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেওয়া এবং (৪) আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করা ও তাঁর বড়ত্ব প্রকাশ করা

(৬) ফাযায়েল

(ক) মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ، وَ إِنَّهُ لَيُؤْتَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِهَا وَ أَشْعَارِهَا وَ أَظْلاَفِهَا، وَ إِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَّقَعَ بِالْأَرْضِ، فَطِيْبُوْا بِهَا نَفْسًا رواه الترمذى وابن ماجه-

কুরবানীর দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় আমল আল্লাহর নিকটে আর কিছু নেই। ঐ ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন কুরবানীর পশুর শিং, লোম ও ক্ষুর সমূহ নিয়ে হাযির হবে। আর কুরবানীর রক্ত যমীনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর নিকটে বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা কুরবানী দ্বারা নিজেদের নফ্সকে পবিত্র কর’[8]

(খ) যিলহাজ্জ মাসের ১ম দশকের ফযীলত

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ  أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هذِهِ الْاَيَّامِ الْعَشَرَةِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَ لاَ الْجِهَادُ فِى سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ وَلاَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَ مَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْئٍ رواه البخارىُّ-

যিলহাজ্জ মাসের ১ম দশকের নেক আমলের চেয়ে প্রিয়তর কোন আমল আল্লাহর কাছে নেই। ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তি, যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বেরিয়েছে, আর ফিরে আসেনি (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)’[9]

(গ) আরাফার দিনের ছিয়াম

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِىْ بَعْدَهُ رواه مسلم-

আরাফার দিনের নফল ছিয়াম (যারা আরাফাতের বাইরে থাকেন তাদের জন্য) আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তা বিগত এক বছরের ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে’[10]

(৭) কুরবানীর ইতিহাস

আল্লাহ বলেন,

وَلِكُلِّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ مبَهِيْمَةِ الْأَنْعَامِ طـــــــَهُكُمْ إِلـهُ وَّاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوْا ط وَ بَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ- (الحج ৩৪)-

প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমরা কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা যবহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এজন্য যে, তিনি চতুষ্পদ গবাদি পশু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। অনন্তর তোমাদের উপাস্য মাত্র একজন। অতএব তাঁর নিকটে তোমরা আত্মসমর্পণ কর এবং আপনি বিনয়ীদের সুসংবাদ প্রদান করুন’ (হজ্জ ২২/৩৪)

আদম (আঃ) -এর দুই পুত্র ক্বাবীল ও হাবীল -এর দেওয়া কুরবানী থেকেই কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল। তবে সেই সব কুরবানীর নিয়ম-কানূন আমাদেরকে জানানো হয়নি। মুসলিম উম্মাহর উপরে যে কুরবানীর নিয়ম নির্ধারিত হয়েছে, তা মূলতঃ ইবরাহীম (আঃ) কর্তৃক পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-কে আল্লাহর রাহে কুরবানী দেওয়ার অনুসরণে ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ হিসাবে চালু হয়েছে[11] যা মুক্বীম ও মুসাফির সর্বাবস্থায় পালনীয়[12] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাদানী জীবনে দশ বছর নিয়মিত কুরবানী করেছেন[13]

ইবরাহীমী কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন,

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْىَ قَالَ يَابُنَىَّ اِنِّىْ اَرَى فِى الْمَنَامِ اَنِّىْ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَىط قَالَ ياَأَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِىْ إِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ- فَلَمَّا أَسْلَمَا وَ تَلَّهُ لِلْجَبِيْنِ- وَ نَادَيْنَاهُ أَنْ يَّا إِبْرَاهِيْمُ- قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا ج إِنَّا كَذَالِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ- إِنَّ هذَا لَهُوَ الْبَلاَءُ الْمُبِيْنُ- وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ- وَ تَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْآخِرِيْنَ- سَلاَمٌ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ- (الصافات ১০২-১০৯)-

যখন সে (ইসমাঈল) তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হ’ল, তখন তিনি (ইবরাহীম) তাকে বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবহ করছি। অতএব বল, তোমার মতামত কি? ছেলে বলল, হে আববা! আপনাকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রতিপালন করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন’ (ছাফফাত ৩৭/১০২)। অতঃপর যখন পিতা ও পুত্র আত্মসমর্পণ করল এবং পিতা পুত্রকে উপুড় করে ফেলল’ (১০৩), ‘তখন আমরা তাকে ডাক দিলাম, হে ইবরাহীম (১০৪)! ‘নিশ্চয়ই তুমি তোমার স্বপ্ন সত্যে পরিণত করেছ। আমরা এমনিভাবে সৎকর্মশীল বান্দাদের পুরষ্কৃত করে থাকি’ (১০৫)। ‘নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা’ (১০৬)। ‘আর আমরা তার (অর্থাৎ ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী’ (১০৭)। ‘এবং আমরা এটিকে (অর্থাৎ কুরবানীর এ প্রথাটিকে) পরবর্তীদেরকে মধ্যে রেখে দিলাম’ (১০৮)। ‘ইবরাহীমের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক’ (১০৯)!

হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ৮৬ বৎসর বয়সে ইসমাঈল বিবি হাজেরার গর্ভে এবং ৯৯ বছর বয়সে ইসহাক্ব বিবি সারাহর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। ইবরাহীম (আঃ) সর্বমোট ২০০ বছর বেঁচে ছিলেন[14]

ঘটনা: ফার্রা বলেন, যবহের সময় ইসমাঈলের বয়স ছিল ১৩ বছর। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ঐ সময় তিনি কেবল সাবালকত্বে উপনীত হয়েছিলেন[15] এমন সময় পিতা ইবরাহীম স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান নয়নের পুত্তলি ইসমাঈলকে কুরবানী করছেন। নবীদের স্বপ্ন ‘অহি’ হয়ে থাকে। তাদের চক্ষু মুদিত থাকলেও অন্তরচক্ষু খোলা থাকে। ইবরাহীম (আঃ) একই স্বপ্ন পরপর তিনরাত্রি দেখেন। প্রথম রাতে তিনি স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠে ভাবতে থাকেন, কি করবেন। এজন্য প্রথম রাতকে (৮ই যিলহাজ্জ) ‘ইয়াউমুত তারবিয়াহ’ (يوم الةروية)  বা ‘স্বপ্ন দেখানোর দিন’ বলা হয়। দ্বিতীয় রাতে পুনরায় একই স্বপ্ন দেখার পর তিনি নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেন যে, এটা আল্লাহর পক্ষ হ’তে নির্দেশ হয়েছে। এজন্য এ দিনটি (৯ই যিলহাজ্জ) ‘ইয়াউমু আরাফা’ (يوم عرفة)  বা ‘নিশ্চিত হওয়ার দিন’ বলা হয়। তৃতীয় দিনে পুনরায় একই স্বপ্ন দেখায় তিনি ছেলেকে কুরবানী করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য এ দিনটিকে (১০ই যিলহাজ্জ) ‘ইয়াউমুন নাহর’ (يوم النحر) বা ‘কুরবানীর দিন’ বলা হয় [16]

এই সময় ইবরাহীম (আঃ) শয়তানকে তিন স্থানে তিনবার সাতটি করে পাথরের কংকর ছুঁড়ে মারেন[17] উক্ত সুন্নাত অনুসরণে উম্মতে মুহাম্মাদীও হজ্জের সময় তিন জামরায় তিনবার শয়তানের বিরুদ্ধে কংকর নিক্ষেপ করে থাকে এবং প্রতিবারে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে থাকে[18]

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে ছহীহ সনদে মুসনাদে আহমাদে[19] বর্ণিত হয়েছে যে, ইবরাহীম (আঃ) ছেলেকে কুরবানীর প্রস্ত্ততি নিলেন এবং তাকে মাটিতে উপুড় করে ফেললেন। এমন সময় পিছন থেকে আওয়ায এলো  (يَا اِبْرَاهِيْمُ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا)   হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্ন সার্থক করেছ’ (ছাফফাত ১০৫)। ইবরাহীম পিছন ফিরে দেখেন যে, একটি সুন্দর শিংওয়ালা ও চোখওয়ালা সাদা দুম্বা   (كَبْشٌ أَبْيَضُ أَقْرَنُ أَعْيَنُ)   দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি সেটি মিনা প্রান্তরে (‘ছাবীর’ টীলার পাদদেশে) কুরবানী করেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এজন্য আমরা কুরবানীর সময় অনুরূপ ছাগল-দুম্বা খুঁজে থাকি[20] তিনি বলেন, ঐ দুম্বাটি ছিল হাবীলের কুরবানী, যা জান্নাতে ছিল, যাকে আল্লাহ ইসমাঈলের ফিদ্ইয়া হিসাবে পাঠিয়েছিলেন[21] ইবরাহীম উক্ত দুম্বাটি ছেলের ফিদ্ইয়া হিসাবে কুরবানী করলেন ও ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন  (يَا بُنَىَّ اَلْيَوْمَ وُهِبْتَ لِىْ)   হে পুত্র! আজই তোমাকে আমার জন্য দান করা হ’ল[22]

নিঃসন্দেহে এখানে মূল উদ্দেশ্য যবহ ছিলনা, বরং উদ্দেশ্য ছিল পিতা-পুত্রের আনুগত্য ও তাক্বওয়ার পরীক্ষা নেওয়া। সে পরীক্ষায় উভয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন পিতার পূর্ণ প্রস্ত্ততি এবং পুত্রের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ও আনুগত্যের মাধ্যমে

ইমাম কুরতুবী উপরোক্ত ১০৭ নং আয়াত  وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ   উল্লেখ করে বলেন, এ আয়াতটি দলীল হ’ল এ বিষয়ে যে, উট ও গরুর চেয়ে ছাগল কুরবানী করা উত্তম’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজেও শিংওয়ালা দু’টো করে ‘খাসি’ কুরবানী দিতেন। অনেক বিদ্বান বলেছেন, যদি এর চাইতে উত্তম কিছু থাকত, তবে আল্লাহ তাই দিয়ে ইসমাঈলের ফিদ্ইয়া দিতেন’[23] তবে উট, গরু, ভেড়া বা ছাগল দ্বারা কুরবানীর ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীছ রয়েছে এবং আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হজ্জের সময় গরু ও উট কুরবানী করেছেন

[1]. মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৬/১৯৮৬) পৃঃ ১৫৮

[2]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার (কায়রো ছাপাঃ ১৩৯৮/১৯৭৮) ৬/২২৮ পৃঃ

[3]. মির‘আতুল মাফাতীহ শরহ মিশকাতুল মাছাবীহ  (লাক্ষ্ণৌ ছাপাঃ ১৯৫৮) ২/৩৪৯;  ,  (বেনারস ছাপাঃ ১৯৯৫) ৫/৭১ পৃঃ

[4]. ইবনু মাজাহ, আলবানী-ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৫৩২; আহমাদ, বায়হাক্বী, হাকেম, দারাকুৎনী, মির‘আত (বেনারস) ৫/৭২; নায়লুল আওত্বার  ৬/২২৭ পৃঃ

·          [5]. মির‘আত ৫/৭১, ৭৩ পৃঃ

6.. তাফসীরে ইবনে কাছীর (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৮/১৯৮৮) ৩/২৩৪; তাফসীরে কুরতুবী  (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৫/১৯৮৫) ১২/৬৫ পৃঃ

[7]. বায়হাক্বী (হায়দারাবাদ, ভারতঃ ১৩৫৬ হিঃ; , বৈরুতঃ দারুল মা‘রিফাহ, তারিখ বিহীন) ৯/২৬৪-২৬৬; মির‘আত ৫/৭২-৭৩; তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩/২৩৪; তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৮-১০৯ পৃঃ

[8]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত-আলবানী (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৫/১৯৮৫),  হা/১৪৭০; , মির‘আত সহ হা/১৪৮৭, সনদ ‘হাসান’। ইবনুল ‘আরাবী বলেন যে, কুরবানীর ফযীলত বর্ণনায় কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না’। ছাহেবে মির‘আত বলেন, বিভিন্ন ‘শাওয়াহেদ’ -এর কারণে সম্ভবতঃ ইমাম তিরমিযী হাদীছটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। দ্রঃ  মির‘আত  ২/৩৬২-৬৩ পৃঃ; , ৫/১০৪; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী (কায়রো ছাপাঃ ১৯৮৭) ৫/৭৫ পৃঃ

[9]. বুখারী, মিশকাত হা/১৪৬০ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘কুরবানী’ অনুচ্ছেদ

[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪৪ ‘ছওম’ অধ্যায়, ‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ

[11]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার  ৬/২২৮ পৃঃ

[12]. তাফসীরে কুরতুবী (বৈরুত: ১৪০৫/১৯৮৫)  ১৫/১০৯ পৃঃ; নায়ল ৬/২৫৫পৃঃ

[13]. তিরমিযী, মিশকাত  হা/১৪৭৫ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘কুরবানী’ অনুচ্ছেদ

[14]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ৪/১৬; মুওয়াত্ত্বা, তাফসীরে কুরতুবী ২/৯৮-৯৯ পৃঃ

[15]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/৯৯ পৃঃ

[16]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০২ পৃঃ

[17]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৬ পৃঃ

[18]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুওয়াত্ত্বা মালেক, মিশকাত হা/২৬২১, ২৬২৬ ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘কংকর নিক্ষেপ’ অনুচ্ছেদ

[19]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৭০৭, তাহক্বীক্ব: আহমাদ শাকির ১/২৯৭পৃঃ; সনদ ছহীহ, তাহক্বীক্ব তাফসীরে  ইবনে কাছীর (কায়রো ছাপাঃ দারুল হাদীছ ২০০২) ৭/২৮ পৃঃ

[20]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ৪/১৭ পৃঃ; , তাহক্বীক্ব, সনদ ছহীহ ৭/২৮ পৃঃ

[21]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৭ পৃঃ

[22]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৭ পৃঃ

[23]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৭ পৃঃ

                                           কুরবানীর মাসায়েল

(১) চুল-নখ না কাটা: উম্মে সালামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَ أَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُّضَحِّىَ فَلاَ يَمُسَّ مِنْ شَعْرِهِ وَ أَظْفَارِهِ شَيْئًا رواه مسلم و زاد النسائىُّحَتَّى يُضَحِّىَ-

তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেওয়ার এরাদা রাখেতারা যেন যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর হ’তে কুরবানী সম্পন্ন করা পর্যন্ত স্ব স্ব চুল ও নখ কর্তন করা হ’তে বিরত থাকে’।[1]

(খ) কুরবানী দিতে অক্ষম ব্যক্তিগণ কুরবানীর খালেছ নিয়তে এটা করলে ‘আল্লাহ্র নিকটে তা পূর্ণাঙ্গ কুরবানী’ হিসাবে (فذلك تمامُ أُضحِيَتِكَ عِنْدَ الله)  গৃহীত হবে।[2]

(গ) ইমাম নববী বলেন, ‘উহার তাৎপর্য হ’ল যাতে অকর্তিত নখ চুল সহ পূর্ণাঙ্গ দেহ নিয়ে মুমিন বান্দা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায়’।[3] তাছাড়া এর তাৎপর্য এটাও হ’তে পারে যে, ইসমাঈল (আঃ) হাসিমুখে তাঁর জীবন দিয়ে আল্লাহ্র হুকুম পালন করেছিলেন। তার অনুসরণে আমরা আমাদের দেহের একটা অংশ নখ-চুল ইত্যাদি কুরবানী দিয়ে মনের মধ্যে এই সংকল্প করতে পারি যে, আল্লাহ্র দ্বীনের খাতিরে প্রয়োজনে আমরাও ইসমাঈলের ন্যায় জীবন কুরবানী দিতে প্রস্ত্তত। এর ফলে আমরা নবীর সুন্নাত অনুসরণের নেকী তো পাবই, উপরন্তু ‘দ্বীনের জন্য মুজাহিদ বেশে মৃত্যুবরণের আকাংখা পোষণের কারণে ‘মুনাফেকী হালতে মৃত্যুবরণ’ থেকে বেঁচে যাব ইনশাআল্লাহ।[4]

দুর্ভাগ্য, এই সুন্নাতটি বর্তমানে মুসলিম সমাজ প্রায় ভুলতে বসেছে

(২) কুরবানীর পশু:

(ক) উহা তিন প্রকারঃ উট, গরু ও ছাগল। দুম্বা ও ভেড়া ছাগলের মধ্যে গণ্য। প্রত্যেকটির নর ও মাদি। এগুলির বাইরে অন্য পশু দিয়ে কুরবানী করার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে পাওয়া যায় না।[5] ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘উপরে বর্ণিত পশুগুলি ব্যতীত অন্য কোন পশু দ্বারা কুরবানী সিদ্ধ হবে না’।[6]

(খ) ছাগল কুরবানী করাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় থাকাকালীন সময়ে উট, গরু পাওয়া সত্ত্বেও সর্বদা ‘খাসি’ কুরবানী দিতেন।[7] ইসমাঈলের বিনিময়ে জান্নাতী পশুর যে কুরবানী দেওয়া হয়, সেটাও ছিল দুম্বা। তবে রক্ত প্রবাহিত করার বিবেচনায় জমহূর বিদ্বানগণের নিকটে উত্তম হ’ল উট অতঃপর গরু অতঃপর দুম্বা ও ছাগল-ভেড়া।[8]

(গ) ‘খাসি’ কুরবানী নিঃসন্দেহে জায়েয বরং উত্তম। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে মদীনায় মুক্বীম এমনকি মুসাফির অবস্থায়ও সর্বদা দু’টি করে ‘খাসি’ (مَوْجُوْئَيْنِ) কুরবানী দিতেন[9]ছহীহ বুখারীর সর্বশেষ ভাষ্যকার আহমাদ ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘খাসি’ করার কারণে কেউ কেউ এটাকে খুঁৎওয়ালা পশু বলে অপসন্দ করেছেন। কিন্তু মূলতঃ এটি কোন খুঁৎ নয়। বরং এর ফলে গোশত রুচিকর হয়, দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় ও সুস্বাদু হয়।[10]ইবনু কুদামা বলেন, খাসিই কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’টি খাসি দিয়েই কুরবানী করতেন[11] সূরায়ে নিসা ১১৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় সাধারণভাবে পশুকে দাগানো ও খাসি না করা বিষয়ে কয়েকজন ছাহাবী ও তাবেঈর মতামত[12] কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত আমলই অগ্রগণ্য ও অনুসরণীয়

(ঘ) কুরবানীর পশু সুঠাম, সুন্দর ও নিখুঁত হওয়া চাই। চার ধরনের পশু কুরবানী করা নাজায়েয। যথাঃ স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণশীর্ণ এবং অর্ধেক কান কাটা বা ছিদ্র করা ও অর্ধেক শিং ভাঙ্গা।[13] এসবের চাইতে নিম্নস্তরের কোন দোষ যেমন অর্ধেক লেজ কাটা ইত্যাদি থাকলে তার দ্বারাও কুরবানী হবে না। তবে নিখুঁত পশু ক্রয়ের পর যদি নতুন করে খুঁৎ হয় বা পুরানো কোন দোষ বেরিয়ে আসে, তাহ’লে ঐ পশু দ্বারাই কুরবানী বৈধ হবে।[14]

(৩) ‘মুসিন্নাহ’ দ্বারা কুরবানী:

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

لاَ تَذْبَحُوْ ا إِلاَّ مُسِنَّةً إِلاَّ أَنْ يَّعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوْا جُذْعَةً مِّنَ الضَّأْنِ رواه مسلم -

অর্থঃ ‘তোমরা দুধে দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা (মুসিন্নাহ) পশু ব্যতীত যবহ করো না। তবে কষ্টকর হ’লে এক বছর পূর্ণকারী ভেড়া (দুম্বা বা ছাগল) কুরবানী করতে পার’[15]জমহূর বিদ্বানগণ অন্যান্য হাদীছের আলোকে এই হাদীছে নির্দেশিত ‘মুসিন্নাহ’ পশুকে কুরবানীর জন্য ‘উত্তম’ হিসাবে গণ্য করেছেন[16]

মুসিন্নাহ’ পশু ষষ্ঠ বছরে পদার্পণকারী উট এবং তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু বা ছাগল-ভেড়া-দুম্বাকে বলা হয়।[17] কেননা এই বয়সে সাধারণতঃ এই সব পশুর দুধে দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত উঠে থাকে। তবে অনেক পশুর বয়স বেশী ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ে দাঁত ওঠে না। এসব পশু দ্বারা কুরবানী করা ইনশাআল্লাহ কোন দোষের হবে না

(৪) নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি পশুই যথেষ্ট:

(ক) মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন.... অতঃপর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়লেন,

بِسْمِ اللهِ أَللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُّحَمَّدٍ وَّ آلِ مُحَمَّدٍ وَّ مِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ رواه مسلم-

আল্লাহ্র নামে (কুরবানী করছি)হে আল্লাহ! তুমি এটি কবুল কর মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তেতার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তার উম্মতের পক্ষ হ’তে’। এরপর উক্ত দুম্বা দ্বারা কুরবানী করলেন’।[18]

(খ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

يَآ أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِىْ كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَةً  وَ عَتِيْرَةً... رواه الترمذي وابوداؤد-

হে জনগণ! নিশ্চয়ই প্রত্যেক পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী ও আতীরাহ’। আবুদাঊদ বলেন, ‘আতীরাহ’ প্রদানের হুকুম পরে রহিত করা হয়।[19]

(গ) ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে পরিবার পিছু একটি করে বকরী কুরবানীর রেওয়াজ ছিল। যেমন ছাহাবী আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) বলেন,

كَانَ الرَّجُلُ يُضَحِّىْ بِالشَّاةِ عَنْهُ وَ عَنْ أَهْلِ بَيْتِهِ فَيَأْكُلُوْنَ وَ يُطْعِمُوْنَ حَتَّى تُبَاهِىَ النَّاسُ فَصَارَتْ كَمَا تَرَى رواه الترمذى وابن ماجه-

অর্থঃ ‘একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হ’তে কুরবানী দিতেন। অতঃপর তা খেতেন ও অন্যকে খাওয়াতেন এবং এভাবে লোকেরা বড়াই করত। এই নিয়ম রাসূলের যুগ হ’তে চলে আসছে যেমন তুমি দেখছ’[20]

(ঘ) একই মর্মে ধনাঢ্য ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) প্রমুখাৎ ছহীহ সনদে বর্ণিত ইবনু মাজাহ্র একটি হাদীছ[21] উদ্ধৃত করে ইমাম শাওকানী বলেন, والحق أنها ةجزئ عن أهل البية و إن كانوا مائة نفس أو أكثر كما قضة بذلك السنة সঠিক কথা এই যে, একটি বকরী একটি পরিবারের পক্ষ হ’তে যথেষ্ট, যদিও সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা শতাধিক হয় এবং এভাবেই নিয়ম চলে আসছে’।[22]

(ঙ) মিশকাতের ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, যারা একটি ছাগল একজনের জন্য নির্দিষ্ট বলেন এবং উক্ত হাদীছগুলিকে একক ব্যক্তির কুরবানীতে পরিবারের সকলের ছওয়াবে অংশীদার হওয়ার ‘তাবীল’ করেন বা খাছ হুকুম মনে করেন কিংবা হাদীছগুলিকে ‘মানসূখ’ বলতে চান, তাঁদের এইসব দাবী প্রকাশ্য ছহীহ হাদীছের বিরোধী এবং তা প্রত্যাখ্যাত ও নিছক দাবী মাত্র’।[23]

(চ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় মুক্বীম অবস্থায় নিজ পরিবার ও উম্মতের পক্ষ হ’তে দু’টি করে ‘খাসি’ এবং হজ্জের সফরে মিনায় গরু ও উট কুরবানী করেছেন।[24]

(৫) কুরবানীতে শরীক হওয়া:

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,

كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ فِىْ سَفَرٍ فَحَضَرَ الْأَضْحَى فَاشْتَرَكْنَا فِى الْبَقَرَةِ سَبْعَةٌ وَ فِى الْبَعِيْرِ عَشَرَةٌ رواه الترمذى والنسائى وابن ماجه بإسناد صحيح كما قاله الألبانى-

(ক) অর্থঃ ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হ’ল। তখন আমরা সাতজনে একটি গরু ও দশজনে একটি উটে শরীক হ’লাম’।[25]

(খ) হযরত জাবির (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহ্র রাসূলের সাথে হজ্জ ও ওমরাহ্র সফরে সাথী ছিলাম।... তখন আমরা একটি গরু ও উটে সাতজন করে শরীক হয়েছিলাম’।[26]সফরে সাত বা দশজন মিলে একটি পরিবারের ন্যায়। যাতে গরু বা উটের ন্যায় বড় পশু যবহ ও কুটাবাছা এবং গোশত বন্টন সহজ হয়। জমহূর বিদ্বানগণের মতে হজ্জের হাদ্ঈর ন্যায় কুরবানীতেও শরীক হওয়া চলবে[27]

(গ) হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হজ্জের সফরে মিনায় নিজ হাতে ৭টি উট (অন্য বর্ণনায় এর অধিক) দাঁড়ানো অবস্থায় ‘নহর’ করেছেন এবং মদীনায় (মুক্বীম অবস্থায়) দু’টি সুন্দর শিংওয়ালা ‘খাসি’ কুরবানী করেছেন’। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর সফরসঙ্গী স্ত্রী ও পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি গরু কুরবানী করেন’।[28] অবশ্য মক্কায় (মিনায়) নহরকৃত উটগুলি ছাহাবীগণের পক্ষ থেকেও হ’তে পারে

আলোচনা: ইবনু আববাস (রাঃ)-এর  হাদীছটি নাসাঈ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহতে, জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি মুসলিম ও আবুদাঊদে এবং আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি বুখারীতে সংকলিত হয়েছে। মুসলিম ও বুখারীতে যথাক্রমে ‘হজ্জ’ ও ‘মানাসিক’ অধ্যায়ে এবং সুনানে ‘কুরবানী’ অধ্যায়ে হাদীছগুলি এসেছে। যেমন (১) তিরমিযী ‘কুরবানীতে শরীক হওয়া’  অধ্যায়ে ইবনু আববাস, জাবির ও আলী (রাঃ) থেকে মোট তিনটি হাদীছ এনেছেন। যার মধ্যে প্রথম দু’টি সফরের কুরবানী ও শেষেরটিতে কোন ব্যাখ্যা নেই।[29](২) ইবনু মাজাহ উক্ত মর্মের শিরোনামে ইবনু আববাস, জাবের, আবু হুরায়রা ও আয়েশা (রাঃ) হ’তে যে পাঁচটি হাদীছ (৩১৩১-৩৪ নং) এনেছেন, তার সবগুলিই সফরে কুরবানী সংক্রান্ত। (৩) নাসাঈ কেবলমাত্র ইবনু আববাস ও জাবির (রাঃ) থেকে পূর্বের দু’টি হাদীছ (২৩৯৭-৯৮ নং) এনেছেন (৪) আবুদাঊদ শুধুমাত্র জাবির (রাঃ)-এর পূর্ব বর্ণিত সফরে কুরবানীর হাদীছটি এনেছেন তিনটি ছহীহ সনদে (২৮০৭-৯ নং), যার মধ্যে ২৮০৮ নং হাদীছটিতে اَلْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْجَزُوْرُ عَنْ سَبْعَةٍ) )  কোন ব্যাখ্যা নেই

বিভ্রাটের কারণ: মিশকাত শরীফে ইবনু আববাস (রাঃ)-এর সফরের হাদীছটি (নং ১৪৬৯) এবং জাবির (রাঃ) বর্ণিত ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছটি (নং ১৪৫৮) সংকলিত হয়েছে সম্ভবতঃ জাবির (রাঃ) বর্ণিত ‘মুত্বলাক্ব’ বা ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছটিকে ভিত্তি করেই এদেশে মুক্বীম অবস্থায় গরুতে সাতভাগা কুরবানীর প্রথা চালু হয়েছে অথচ ভাগের বিষয়টি সফরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা ইবনু আববাস ও জাবির (রাঃ) বর্ণিত বিস্তারিত হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে।[30] আর একই রাবীর বর্ণিত সংক্ষিপ্ত হাদীছের স্থলে বিস্তারিত ও ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীছ দলীলের ক্ষেত্রে গ্রহণ করাই মুহাদ্দিছগণের সর্ববাদী সম্মত রীতি

তাছাড়া মুক্বীম অবস্থায় মদীনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম কখনো ভাগে কুরবানী করেছেন বলেও জানা যায় না। ইমাম মালেক (রহঃ) কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টিকে মকরূহ মনে করতেন[31] দুঃখের বিষয়, বর্তমানে এদেশে কেবল সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নয়, বরং মুক্বীম অবস্থায় সাত পরিবারের সাত -এর অধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ভাগা নিয়ে অনাকাংখিত বিবাদ ও মনকষাকষি

পরিশেষে যদি কেউ বলেন, মুক্বীম অবস্থায় ভাগা কুরবানীর ব্যাপারে তো কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। উত্তরে বলা চলে যে, এ ব্যাপারে তো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কোন নির্দেশ বা আমলও নেই। অথচ কুরবানী হ’ল একটি ইবাদত। যা রাসূলের তরীকা অনুযায়ী সম্পন্ন করা অপরিহার্য। যেটা তিনি বলেছেন বা করেছেন, সেটাই শরী‘আত। যা তিনি বলেননি বা করেননি, সেটা শরী‘আত নয়। যেটা তিনি করেননি সেটা করার মাধ্যমে কিভাবে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি হাছিল করা যাবে?

বিগত বিদ্বানগণের যুগে সম্ভবতঃ মুক্বীম অবস্থায় ভাগা কুরবানীর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। যেমন আজকাল পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানীর সাথে একটি গরুর ভাগা নেওয়া হচ্ছে মূলতঃ গোশত বেশী পাবার স্বার্থে। ‘নিয়ত’ যখন গোশত খাওয়া, তখন কুরবানীর উদ্দেশ্য কিভাবে হাছিল হবে? অনেকে হাযার হাযার টাকা দিয়ে বড় গরুর ভাগী হন। কিন্তু তার অর্ধেক টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনতে রাযী নন। এর দ্বারা কি বুঝা যায়? ‘কুরবানী’ হ’ল পিতা ইবরাহীমের সুন্নাত। যা তিনি পুত্র ইসমাঈলের জীবনের বিনিময়ে করেছিলেন। আর তা ছিল আল্লাহ্র পক্ষ হ’তে পাঠানো একটি পশুর জীবন অর্থাৎ দুম্বা। এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহ’লে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারব, কিন্তু তার জীবন ভাগ করতে পারব কি? গোশত সাত জনের ভাগে গেল, কিন্তু পশুর জীবনটা কার ভাগে গেল? অতএব ইবরাহীমী ও মুহাম্মাদী সুন্নাতের অনুসরণে নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে আল্লাহ্র রাহে একটি জীবন তথা একটি পূর্ণাঙ্গ পশু কুরবানী দেওয়া উচিত, পশুর দেহের কোন খন্ডিত অংশ নয়

(ঘ) ‘কুরবানী ও আক্বীক্বা দু’টিরই উদ্দেশ্য আল্লাহ্র নৈকট্য হাছিল করা’ এই (ইসতিহসানের) যুক্তি দেখিয়ে কোন কোন হানাফী বিদ্বান কুরবানীর গরু বা উটে এক বা একাধিক সন্তানের আক্বীক্বা সিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন (যা এদেশে অনেকের মধ্যে চালু আছে)।[32] হানাফী মাযহাবের স্তম্ভ বলে খ্যাত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) এই মতের বিরোধিতা করেন। ইমাম শাওকানী (রহঃ) এর ঘোর প্রতিবাদ করে বলেন, এটি শরী‘আত। এখানে সুনির্দিষ্ট দলীল ব্যতীত কিছুই প্রমাণ করা সম্ভব নয়।[33] বলা আবশ্যক যে, কুরবানীর পশুতে আক্বীক্বার ভাগ নেওয়ার কোন প্রমাণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের কথা ও কর্মে পাওয়া যায় না। এটা স্রেফ ধারণা ভিত্তিক আমল, যা হানাফী মাযহাবের দোহাই দিয়ে এদেশে চালু হয়েছে। যদিও ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) থেকে এ বিষয়ে কোন নির্দেশ নেই। বরং তিনি বলেছেন, إِذَا صَحَّ الْحَدِيْثُ فَهُوَ مَذْهَبِيْ যখন হাদীছ ছহীহ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাযহাব’।[34]

(৬) কুরবানী করার পদ্ধতি:

(ক) উট দাঁড়ানো অবস্থায় এর ‘হলক্বূম’ বা কণ্ঠনালীর গোড়ায় কুরবানীর নিয়তে বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লাহু আকবার’ বলে অস্ত্রাঘাতের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করে ‘নহর’ করতে হয় এবং গরু বা ছাগলের মাথা দক্ষিণ দিকে রেখে বাম কাতে ফেলে ‘যবহ’ করতে হয়[35] কুরবানী দাতা ধারালো ছুরি নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ পড়ে নিজ হাতে খুব জলদি যবহের কাজ সমাধা করবেন, যেন পশুর কষ্ট কম হয়। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের ডান পা দিয়ে পশুর ঘাড় চেপে ধরতেন। যবহকারী বাম হাত দ্বারা পশুর চোয়াল চেপে ধরতে পারেন। ছুরি ধার করা ছাড়াও যবহের কাজ এমনকি ঋতুবতী মেয়েদের দ্বারাও করানো জায়েয।[36]

(খ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাতে কুরবানী যবহ করেছেন। অন্যের দ্বারা যবহ করানো জায়েয আছে। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি নিজ হাতে করা অথবা যবহের সময় স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা উত্তম। হাকেম ও বায়হাক্বীর একটি যঈফ সূত্র অনুযায়ী আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) এ মর্মে কন্যা ফাতেমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।[37]

(গ) ১০, ১১, ১২ যিলহাজ্জ তিনদিনের রাত-দিন যে কোন সময় কুরবানী করা যাবে।[38]তবে অনেক ছাহাবী, ইমাম শাফেঈ ও বহু বিদ্বানের মতে ঈদুল আযহার পরের তিনদিন কুরবানী করা যাবে। ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী এটাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন[39] অনেকে সন্ধ্যার পরে কুরবানী করা নাজায়েয মনে করেন। এটা ঠিক নয়

(ঘ) যদি যবহকারী ক্বিবলামুখী হ’তে ভুলে যান, তাহ’লেও ইনশাআল্লাহ কোন দোষ বর্তাবে না।[40]

(৭) যবহকালীন দো‘আ:

(১) বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার (অর্থঃ আল্লাহ্র নামে, আল্লাহ মহান) (২) বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী ওয়া মিন আহলে বায়তী  (আল্লাহ্র নামে, হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ হ’তে)

এখানে কুরবানী অন্যের হ’লে তার নাম মুখে বলবেন অথবা মনে মনে নিয়ত করে বলবেন বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন ফুলান ওয়া মিন আহলে বায়তিহী’(আল্লাহ্র নামে, হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর অমুকের ও তার পরিবারের পক্ষ হ’তে)। এই সময় নবীর উপরে দরূদ পাঠ করা মাকরূহ’।[41] (৩) বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী কামা তাক্বাববালতা মিন ইবরাহীমা খালীলিকা’ (...হে আল্লাহ! তুমি আমার পক্ষ হ’তে কবুল কর যেমন কবুল করেছ তোমার দোস্ত ইবরাহীমের পক্ষ থেকে)।[42] (৪) যদি দো‘আ ভুলে যান বা ভুল হবার ভয় থাকে, তবে শুধু বিসমিল্লাহ’ বলে মনে মনে কুরবানীর নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে[43] (৫) উপরোক্ত দো‘আগুলির সাথে অন্য দো‘আও রয়েছে। যেমন ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরযা ‘আলা মিল্লাতি ইবরাহীমা হানীফাঁও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রবিবল ‘আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা; (মিন্নী ওয়া মিন আহলে বায়তী) বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার’[44]

(৮) ঈদের ছালাত ও খুৎবা শেষ হওয়ার পূর্বে কুরবানী করা নিষেধ। করলে তাকে তদস্থলে আরেকটি কুরবানী দিতে হবে[45]

(৯) গোশত বন্টন: জাহেলী আরবরা কা‘বার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত পশুর গোশত নিজেরা খেত না। বরং সবটুকু ছাদক্বা করে দিত[46] ইসলাম আসার পরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যবহকৃত কুরবানীর পশুর গোশত নিজেরা খাওয়ার ও অন্যকে খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়ে বলা হয় فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ অতঃপর তোমরা তা থেকে নিজেরা খাও এবং অন্যদের খাওয়াও যারা চায় না ও যারা চায়’ (হজ্জ ২২/৩৬) অন্য আয়াতে এসেছে, فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ আর তোমরা খাও এবং খাওয়াও দুস্থ-অভাবীদেরকে’ (হজ্জ ২২/২৮) ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কুরবানীর গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারকে খাওয়াতেন ও একভাগ অভাবী প্রতিবেশীদের দিতেন ও একভাগ সায়েলদের মধ্যে ছাদাক্বা করতেন’।[47] অতএব কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজ পরিবারের খাওয়ার জন্য, এক ভাগ অভাবী প্রতিবেশী যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের জন্য হাদিয়া স্বরূপ ও একভাগ সায়েল ফক্বীর-মিসকীনদের মধ্যে ছাদাক্বা স্বরূপ বিতরণ করবে (নায়ল ৬/২৫৪) প্রয়োজনে উক্ত বন্টনে কমবেশী করায় কিংবা সবটুকু বিতরণ করায় কোন দোষ নেই[48]

বন্টন বিষয়ে উত্তম হ’ল, মহল্লার স্ব স্ব কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ এক স্থানে জমা করে মহল্লায় যারা কুরবানী করতে পারেনি, তাদের তালিকা করে তাদের মধ্যে সুশৃংখলভাবে বিতরণ করা এবং প্রয়োজনে তাদের বাড়ীতে কুরবানীর গোশত পৌঁছে দেওয়া। বাকী এক তৃতীয়াংশ সায়েল  ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করা

আল্লাহ্র নামে উৎসর্গীত কুরবানীর পবিত্র গোশত মুসলিমদের মধ্যেই বিতরণ করা উত্তম।  তবে অমুসলিম প্রতিবেশী দুস্থ-অভাবীদের কিছু দেওয়ায় দোষ নেই। কেননা এটি যাকাত বহির্ভূত নফল ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত[49] আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) তাঁর ইহুদী প্রতিবেশীকে দিয়েই গোশত বন্টন শুরু করেছিলেন[50] তোমরা মুসলমানদের কুরবানী থেকে মুশরিকদের আহার করাইয়ো না’ মর্মে যে হাদীছ এসেছে সেটি ‘যঈফ’।[51]

(১০) গোশত সংরক্ষণ : কুরবানীর গোশত যতদিন খুশী রেখে খাওয়া যায়। এমনকি ‘এক যুলহিজ্জাহ থেকে আরেক যুলহিজ্জাহ পর্যন্ত’ এক বছর[52] তবে মহল্লায় অভাবীর সংখ্যা বেশী থাকলে বা দেশে ব্যাপক অভাব দেখা দিলে তিনদিনের পর গোশত সবটুকু বিতরণ করা যরূরী[53]

(১১) মৃত ব্যক্তির নামে পৃথকভাবে কুরবানী দেওয়ার কোন ছহীহ দলীল নেই। হযরত আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অছিয়ত হিসাবে তাঁর জন্য পৃথক একটি দুম্বা কুরবানী দিয়েছেন বলে তিরমিযী শরীফের যে হাদীছটি মিশকাতে (হা/১৪৬২) এসেছে, তা নিতান্তই যঈফ। অন্য কোন ছাহাবী রাসূলের জন্য বা কোন মৃত ব্যক্তির জন্য এভাবে কুরবানী দিয়েছেন বলে জানা যায় না। মৃত ব্যক্তিগণ পরিবারের সদস্য থাকেন না এবং তাদের উপরে শরী‘আত প্রযোজ্য নয়। অথচ কুরবানী হয় জীবিত ব্যক্তি ও পরিবারের পক্ষ হ’তে। এক্ষণে যদি কেউ মৃতের নামে কুরবানী করেন, তবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১১৮-১৮১ হিঃ) বলেন, তাকে সবটুকুই ছাদাক্বা করে দিতে হবে।[54]

(১২) কুরবানীর গোশত বিক্রি করা নিষেধ। তবে তার চামড়া বিক্রি করে[55] শরী‘আত নির্দেশিত ছাদাক্বার খাত সমূহে ব্যয় করবে (তওবা ৬০) এগুলি মহল্লায় বায়তুল মাল ফান্ডে জমা করে আল্লাহ ভীরু বিশ্বস্ত মুতাওয়াল্লীর মাধ্যমে সুশৃংখল ভাবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার সাথে ব্যয় করা উত্তম। আজকাল বড় বড় শহরে পেশাদার ভিক্ষুক ও তাদের সহযোগীদের দেখা যায় অনেক পরিমাণ কুরবানীর গোশত সংগ্রহ করে তা পরে কম দামে অন্যের কাছে বিক্রি করে। এ ধরনের দুষ্কর্ম থেকে এখুনি তওবা করা উচিত। মনে রাখা ভাল যে, আল্লাহ্র ন্যায় বিচারে ধনী-গরীব কেউ ছাড় পাবে না

(১৩) কুরবানীর পশু যবহ করা কিংবা কুটা-বাছা বাবদ কুরবানীর গোশত বা চামড়ার পয়সা হ’তে কোনরূপ মজুরী দেওয়া যাবে না। ছাহাবীগণ নিজ নিজ পকেট থেকে এই মজুরী দিতেন। অবশ্য ঐ ব্যক্তি দরিদ্র হ’লে হাদিয়া স্বরূপ তাকে কিছু দেওয়ায় দোষ নেই[56]

(১৪) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎরের দিন কয়েকটি বেজোড় খেজুর খেয়ে ঈদগাহে বের হ’তেন এবং ঈদুল আযহার দিন ছালাত আদায় না করা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না[57]তিনি কুরবানীর পশুর কলিজা দ্বারা ইফতার করতেন[58]

দুর্ভাগ্য, বর্তমানে ঈদুল আযহাতে সকাল থেকে সেমাই-জর্দার ধুম পড়ে যায়। অথচ এটা সুন্নাত বিরোধী কাজ। মা-বোনদের এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া উচিত

(১৫) কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করা নাজায়েয। আল্লাহ্র রাহে রক্ত প্রবাহিত করাই এখানে মূল ইবাদত। যদি কেউ কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করতে চান, তবে তিনি মুহাম্মাদী শরী‘আতের প্রকাশ্য বিরোধিতা করবেন।[59] ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, কুরবানী ছাদাক্বার চাইতে উত্তম, যেমন ঈদের ছালাত অন্য সকল নফল ছালাতের চাইতে উত্তম।[60]

(১৬) কুরবানীর অন্যান্য মাসায়েল:

(ক) পোষা বা খরিদ করা কোন পশুকে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করলে ও সেই মর্মে ঘোষণা দিলে তা আর বদল করা যাবে না। অবশ্য যদি নির্দিষ্ট না করে থাকেন, তবে তার বদলে উত্তম পশু কুরবানী দেওয়া যাবে। (খ) কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট গাভিন গরু বা বকরী যদি কুরবানীর পূর্বেই জীবিত বাচ্চা প্রসব করে, তবে ঐ বাচ্চা ঈদের দিনগুলির মধ্যেই কুরবানী করবে। কুরবানীর পূর্ব পর্যন্ত বাচ্চার প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুধ মালিক পান করতে পারবে বা তার বিক্রয়লব্ধ পয়সা নিজে ব্যবহার করতে পারবে। তবে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর মতে দুধ বা দুধ বিক্রির পয়সা ছাদাক্বা করে দেওয়া ভাল। অবশ্য কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট না করলে ও সেই মর্মে ঘোষণা না দিলে, সেটাকে যবহ করাও যেতে পারে, রেখে দেওয়াও যেতে পারে। (গ) যদি কুরবানীর পশু হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়, তবে তার পরিবর্তে অন্য কুরবানী যরূরী নয়। যদি ঐ পশু ঈদুল আযহার দিন বা পরে পাওয়া যায়, তবে তা তখনই আল্লাহ্র রাহে যবহ করে দিতে হবে। (ঘ) যদি কুরবানীর পূর্বে কুরবানী দাতা মৃত্যুবরণ করেন এবং তার অবস্থা এমন হয় যে, ঐ পশু বিক্রয়লব্ধ পয়সা ভিন্ন তার ঋণ পরিশোধের আর কোন উপায় নেই, তখন কেবল ঋণ পরিশোধের স্বার্থেই কুরবানীর পশু বিক্রয় করা যাবে।[61]

[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৯; নাসাঈ, মির‘আত হা/১৪৭৪-এর ব্যাখ্যা, ৫/৮৬ পৃঃ

[2]. আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৭৯; মির‘আত হা/১৪৯৩, ৫/১১৭ পৃঃ; ‘আতীরাহ’ অনুচ্ছেদ; হাকেম (বৈরুতঃ তাবি), ৪/২২৩ পৃঃ  হাকেম একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। তবে শায়খ আলবানী বলেন, অত্র হাদীছের সনদে ঈসা ইবনে হেলাল আছ-ছাদাফী রয়েছেন। ‘যার ব্যাপারে আমার নিকটে অপরিচিতি রয়েছে (فيه عندى جهالة)  ইবনু আবী হাতেম এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে ইবনু হিববান তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। যদিও কাউকে বিশ্বস্ত বলার ব্যাপারে তাঁর উদারতা সুপরিচিত’। দ্রঃ ঐ, মিশকাত ১/৪৬৬ পৃঃ টীকা-২

[3]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, ৬/২৩৩ পৃঃ

[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৮১৩ ‘জিহাদ’ অধ্যায়

[5].  আন‘আম ৬/১৪৩-৪৪; মির‘আত ৫/৮১ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/২৯ পৃঃ

[6].  কিতাবুল উম্ম (বৈরুত ছাপাঃ তারিখ বিহীন) ২/২২৩ পৃঃ

[7]. শাওকানী, আস-সায়লুল জাররার (বৈরুত ছাপাঃ তারিখ বিহীন), ৪/৮৮ পৃঃ; ছান‘আনী, সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম (কায়রো ছাপাঃ ১৪০৭/১৯৮৭) ৪/১৮৫ পৃঃ; তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৭ পৃঃ

[8].  নায়লুল আওত্বার ৬/২৩৫ পৃঃ; মির‘আত ৫/৮০ পৃঃ

[9]. বায়হাক্বী  ৯/২৬৮; মিশকাত হা/১৪৬১; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৫/১৯৮৫), ৪/৩৫১ সনদ ‘হাসান’

[10]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহুল বুখারী (কায়রো ছাপাঃ ১৪০৭ হিঃ) ১০/১২ পৃঃ

[11].  মির‘আত (বেনারস ছাপা) ৫/৯১ পৃঃ

[12].  তাফসীরে ইবনে কাছীর, সূরা নিসা ১১৯; ১/৫৬৯ পৃঃ

[13]. মুওয়াত্ত্বা, তিরমিযী প্রভৃতি মিশকাত হা/১৪৬৫, ১৪৬৩, ১৪৬৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো ছাপাঃ ১৪১২/১৯৯২) ২/৩০ পৃঃ

[14].  মির‘আত ২/৩৬৩; , ৫/৯৯ পৃঃ

[15]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৫; নাসাঈ তা‘লীক্বাত সহ  (লাহোর ছাপাঃ তারিখ বিহীন), ২/১৯৬ পৃঃ

[16].  মির‘আত (লাক্ষ্ণৌ) ২/৩৫৩ পৃঃ; , (বেনারস) ৫/৮০ পৃঃ

[17].  মির‘আত, ২/৩৫২ পৃঃ; , ৫/৭৮-৭৯ পৃঃ

[18].  মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৪

[19]. তিরমিযী, আবু দাঊদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/১৪৭৮; মির‘আত হা/১৪৯২, ৫/১১৪-১৫ পৃঃ। হাদীছটির সনদ শক্তিশালী’ (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১০/৬ পৃঃ); সনদ ‘হাসান’  আলবানী, ছহীহ নাসাঈ (বৈরুতঃ ১৯৮৮) হা/৩৯৪০; ছহীহ আবুদাউদ (বৈরুতঃ ১৯৮৯), হা/২৪২১; ছহীহ তিরমিযী  (বৈরুতঃ  ১৯৮৮) হা/১২২৫; ছহীহ ইবনু মাজাহ (বৈরুতঃ ১৯৮৯) হা/২৫৩৩। ইমাম তিরমিযী ও বাগাভী বলেন, চারটি সম্মানিত মাসের প্রথম ও পৃথক মাস হিসাবে রজব মাসের সম্মানে লোকেরা যে কুরবানী করত, তাকে ‘আতীরাহ’ বা ‘রাজীবাহ’ বলা হ’ত (শারহুস সুন্নাহ, বৈরুত: ১৪০৩/১৯৮৩) হা/১২২৮-এর ব্যাখ্যা, ৪/৩৫০ পৃঃ; মির‘আত ৫/১১১ পৃঃ)। শাওকানী বলেন, প্রতি বছর রজব মাসের প্রথম দশকে যে কুরবানী করা হ’ত, তাকেই ‘রাজীবাহ’ বা ‘আতীরাহ’ বলা হয়। ইমাম নবভী বলেন, আতীরাহ্র এই ব্যাখ্যায় সকল বিদ্বান একমত হয়েছেন’ (নায়ল ৬/২৭০ পৃঃ)

[20]. ছহীহ তিরমিযী, হা/১২১৬; ছহীহ ইবনু মাজাহ, হা/২৫৪৬; মির‘আত ২/৩৬৭ পৃঃ; , ৫/১১৪ পৃঃ

[21]. ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৫৪৭

[22]. নায়লুল আওত্বার ৬/২৪৪ পৃঃ

[23]. মির‘আত ২/৩৫১; , ৫/৭৬ পৃঃ

[24]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৫৩; বুখারী (মীরাট ছাপাঃ ১৩২৮ হিঃ) ১/২৩১ পৃঃ; ছহীহ আবূদাঊদ হা/১৫৩৯

[25].  তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হা/১৪৬৯ সনদ ছহীহ

[26].  মুসলিম (বৈরুতঃ ১৯৮৩) হা/১৩১৮

[27].  মির‘আত ২/৩৫৫ পৃঃ; , ৫/৮৪ পৃঃ

[28]. বুখারী (মীরাট ছাপাঃ ১৩২৮ হিঃ) ১/২৩১ পৃঃ; আলবানী-ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৫৩৯

[29].  তিরমিযী তুহফা সহ, হা/১৫৩৭-৪০, ৫/৮৭-৮৮ পৃঃ

[30]. মিশকাত হা/১৪৬৯; মুসলিম হা/১৩১৮; বুখারী  ১/২৩১ পৃঃ

[31]. মুওয়াত্ত্বা মালেক (মুলতান ছাপাঃ তারিখ বিহীন) পৃঃ ২৯৯

[32]. আশরাফ আলী থানভী, বেহেশতী জেওর (ঢাকাঃ এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ১০ম মুদ্রণ ১৯৯০) ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়, মাসআলা-২, ১/৩০০ পৃঃ; বুরহানুদ্দীন মারগীনানী, হেদায়া (দিল্লীঃ ১৩৫৮ হিঃ) ‘কুরবানী’ অধ্যায় ৪/৪৩৩ পৃঃ; ঐ (দেউবন্দ ছাপা ১৪০০হিঃ) ৪/৪৪৯ পৃঃ

[33].  নায়লুল আওত্বার, ‘আক্বীক্বা’  অধ্যায় ৬/২৬৮ পৃঃ

[34]. শা‘রানী, মীযানুল কুবরা (দিল্লী ছাপা: ১২৮৬ হিঃ) ১/৬৩ পৃঃ; শামী (বৈরুত ছাপা) ১/৬৭ পৃঃ

[35].  সুবুলুস সালাম, ৪/১৭৭ পৃঃ; মির‘আত ২/৩৫১; , ৫/৭৫ পৃঃ

[36]. নায়লুল আওত্বার ৬/২৪৫-৪৬ পৃঃ

[37]. মির‘আত ২/৩৫০ পৃঃ; , ৫/৭৪ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩১ পৃঃ

[38]. মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৪৭৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩০ পৃঃ; নায়লুল আওত্বার ৬/২৫৩

[39]. ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শরহ মিশকাতুল মাদাবীহ ৫/১০৬-০৯ পৃঃ

[40]. শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ২/২২৩ পৃঃ

[41].  মির‘আত ২/৩৫০ পৃঃ; , ৫/৭৪ পৃঃ

[42]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ (কায়রো ছাপাঃ ১৪০৪ হিঃ) ২৬/৩০৮ পৃঃ

[43].  ইবনু কুদামা, আল-মুগনী (বৈরুত ছাপাঃ তারিখ বিহীন) ১১/১১৭ পৃঃ

[44]. বায়হাক্বী ৯/২৮৭; আবু ইয়া‘লা, মির‘আত ৫/৯২; সনদ হাসান, ইরওয়া ৪/৩৫১

[45].  মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৭২; মুসলিম, নায়ল ৬/২৪৮-২৪৯ পৃঃ

[46]. তাফসীরে কুরতুবী, ‘হজ্জ’ ২২/২৮, ৩৬ আয়াত

[47]. মির‘আত ৫/১২০ পৃঃ

[48]. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১১/১০৮-০৯; মির‘আত ২/৩৬৯; , ৫/১২০ পৃঃ

[49]. আল-মুগনী ৩/৫৮৩ পৃঃ

[50]. বুখারী, আদাবুল মুফরাদ হা/১২৮, সনদ ছহীহ- আলবানী, ‘ইহুদী প্রতিবেশী’ অনুচ্ছেদ

[51]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৯১১৩ ‘প্রতিবেশীকে সম্মান করা’ অনুচ্ছেদ

[52]. আহমাদ হা/২৬৪৫৮ ‘সনদ হাসান’ তাফসীরে কুরতুবী হা/৪৪১৩

[53]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, নায়ল ৬/২৫২ পৃঃ; তাফসীরে কুরতুবী হা/৪৪০৯, ৪৪১২ প্রভৃতি

[54].  তিরমিযী তুহফা সহ, হা/১৫২৮, ৫/৭৯ পৃঃ; মির‘আত ৫/৯৪ পৃঃ

[55]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আহমাদ, নায়ল ৬/২৫৫-৫৬; মির‘আত ৫/১২১; আল-মুগনী  ১১/১১১ পৃঃ

[56]. আল-মুগনী, ১১/১১০ পৃঃ

[57]. বুখারী, মিশকাত হা/১৪৩৩;  তিরমিযী, মিশকাত, হা/১৪৪০ সনদ ছহীহ

[58]. বায়হাক্বী, মির‘আত ২/৩৩৮ পৃঃ; , ৫/৪৫ পৃঃ

[59]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ, ২৬/৩০৪; মুগনী, ১১/৯৪-৯৫ পৃঃ

[60]. তাফসীরে কুরতুবী (সূরা ছাফফাত ৩৭/১০২), ১৫/১০৮ পৃঃ

[61]. মির‘আত, ২/৩৬৮-৬৯; , ৫/১১৭-১২০; কিতাবুল উম্ম ২/২২৫-২৬

 

Post a Comment

0 Comments