চার ইমামের দৃষ্টান্ত-


প্রসিদ্ধ চার ইমামের পন্ডিত্ব্যের উজ্জল দৃষ্টান্ত
ইসলামের প্রসিদ্ধ চার ইমাম অর্থাৎ ইমাম আবু হানীফা (রহঃ), ইমাম মালেক (রহঃ), ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) তাঁরা প্রত্যেকেই বিরাট পন্ডিত, পরহেযগার এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আনুগত্যশীল ছিলেন। দুনিয়ার বুকে পিওর ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁরা প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন মানুষের সার্বিক জীবনকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী গড়ে তোলার। কোন মাসআলার ফায়ছালা কুরআন ও ছহীহ হাদীছে না পেলে তাঁরা ইজতিহাদ বা গবেষণা করে ফায়ছালা প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে হাদীছে এসেছে,
আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন,
কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছলে তার জন্য আছে দু’টি পুরস্কার। আর বিচারক ইজতিহাদে ভুল করলে তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার’।
(বুখারী, হা/৭৩৫২ ‘কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়, ‘বিচারক ইজতিহাদে ঠিক করুক বা ভুল করুক তার প্রতিদান পাবে’ অনুচ্ছেদ।)
অত্র হাদীছের উপর ভিত্তি করেই ইমামগণ ইজতিহাদ বা শরী’আত গবেষণা করে মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই হাদীছ না থাকলে হয়তবা তাঁরা ইজতিহাদ করতেন না। এজন্য তাঁরা পরিস্কার ভাবে মুসলিম জাহানের জন্য তাদের নসিহত রেখে গেছেন। যেমন-
১- ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর নসিহত :
(ক) ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাযহাব’।(হাশিয়াহ ইবনে আবেদীন ১/৬৩।)
(খ) ‘আমরা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি, তা না জেনে আমাদের কথা গ্রহণ করা কারো জন্য বৈধ নয়’।(ঐ ৬/২৯৩।)
(গ) ‘যে ব্যক্তি আমার দলীল জানে না, আমার কথা দ্বারা ফৎওয়া প্রদান করা তার জন্য হারাম’।(ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আব্বাস, আত-তাক্বলীদ ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, পৃঃ ২০।)
(ঘ) ‘নিশ্চয়ই আমরা মানুষ। আমরা আজকে যা বলি, আগামীকাল তা থেকে ফিরে আসি’।(ঐ।)
(ঙ) ‘তোমার জন্য আফসোস হে ইয়াকুব (আবু ইউসুফ)! তুমি আমার থেকে যা শোন তাই লিখে নিও না। কারণ আমি আজ যে মত প্রদান করি, কাল তা প্রত্যাখ্যান করি এবং কাল যে মত প্রদান করি, পরশু তা প্রত্যাখ্যান করি’।(ঐ।)
(চ) ‘আমি যদি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও রাসূলুললাহ (ছাঃ)-এর কথার (হাদীছ) বিরোধী কোন কথা বলে থাকি, তাহ’লে আমার কথাকে ছুঁড়ে ফেলে দিও’।(ছালেহ ফুল্লানী, ইক্বাযু হিমাম, পৃঃ ৫০।)
২- ইমাম মালেক (রহঃ)-এর নসিহত :
(ক) ‘আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি ভুল করি, আবার ঠিকও করি। অতএব আমার সিদ্ধান্তগুলো তোমরা যাচাই কর। যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে হবে সেগুলো গ্রহণ কর। আর যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহর প্রতিকূলে হবে তা প্রত্যাখ্যান কর’।(ইমাম ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ৬/১৪৯।)
(খ) ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথাই গ্রহণীয় বা বর্জনীয়, একমাত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত’।(ঐ ৬/১৪৫।)
৩- ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর নসিহত :
(ক) ‘যদি তোমরা আমার বইয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ বিরোধী কিছু পাও, তাহ’লে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী বল এবং আমার কথাকে প্রত্যাখ্যান কর’। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা রাসূল (ছাঃ)-এর কথারই অনুসরণ কর এবং অন্য কারো কথার দিকে দৃকপাত কর না’।(ইমাম নববী, আল-মাজমূ, ১/৬৩।)

(খ) ‘আমি যেসব কথা বলেছি, তা যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছের বিপরীত হয়, তবে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছই অগ্রগণ্য। অতএব তোমরা আমার তাক্বলীদ কর না’।(ইবনু আবী হাতেম, পৃঃ ৯৩, সনদ ছহীহ।)
(গ) ‘রাসূলুললাহ (ছাঃ)-এর প্রত্যেকটি হাদীছই আমার কথা, যদিও আমার নিকট থেকে তোমরা তা না শুনে থাক’।(ঐ।)
৪- ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর নসিহত :
(ক) ‘তুমি আমার তাক্বলীদ কর না এবং তাক্বলীদ কর না মালেক, শাফেঈ, আওযাঈ ও ছাওরীর। বরং তাঁরা যে উৎস হ’তে গ্রহণ করেছেন, সেখান থেকে তোমরাও গ্রহণ কর’।(ইলামুল মুওয়াক্কি’ঈন, ২/৩০২।)
(খ) ‘যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করল, সে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেল’।(মুকাদ্দামাতু ছিফাতি ছালাতিন নাবী (ছাঃ), পৃঃ ৪৬-৫৩।)
এছাড়াও….
· ৫ আল্লামা ইবনে আবেদীন বলেন, ‘কোনো মাস’আলা সহীহ হাদীসের সাথে গড়মিল হলে ঐ হাদীসটিই আমল করবে। আর ঐ হাদীসই হবে তার মাযহাব। এরুপ আমল তাকে মাযহাব থেকে বের করে দেবে না। হানাফী হলে সে হানাফীই থেকে যাবে’। (রাদ্দুল মুখতার; ১/১৫৪)
· ৬ সুনানে আবি দাউদ গ্রন্থের সংকলক মুহাদ্দিস আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘এমন কোনো লোক নেই, যার সব কথাই গ্রহণযোগ্য; কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া’। (মাসাইলে ইমাম আহমদ; ২৭৬)
সর্বশেষ আল্লাহ তায়ালার বাণীটি স্মরণ করি। তিনি বলেছেন, ‘যারা (সব) কথা শুনে, অতঃপর উত্তমগুলো আমল করে, তারাই হলো হেদায়াতপ্রাপ্ত, আর তারাই হলো বুদ্ধিমান’। (সূরা আয যুমারঃ১৮)
*************************
রাসু্লুল্লাহ সাঃ এর অনুসরনের দৃষ্টান্ত:
১. ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
লজ্জাশীলতা কল্যাণ বৈ কিছুই আনয়ন করে না’। তখন বুশায়র ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন, হিকমতের পুস্তকে লিখা আছে যে, কোন কোন লজ্জাশীলতা ধৈর্যশীলতা বয়ে আনে। আর কোন কোন লজ্জাশীলতা এনে দেয় শান্তি ও সুখ। তখন ইমরান (রাঃ) বললেন, আমি তোমার কাছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে (হাদীছ) বর্ণনা করছি। আর তুমি কিনা (তদস্থলে) আমাকে তোমার পুস্তিকা থেকে বর্ণনা করছ?
(বুখারী, হা/৬১১৭ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়,‘লজ্জাশীলতা’ অনুচ্ছেদ।)
২.
আব্দুললাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করছে। তখন তিনি তাকে বললেন, পাথর নিক্ষেপ কর না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাথর ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, পাথর ছোঁড়াকে তিনি অপসন্দ করতেন। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, এর দ্বারা কোন প্রাণী শিকার করা যায় না এবং কোন শত্রুকেও ঘায়েল করা যায় না। তবে এটা কারো দাঁত ভেঙ্গে ফেলতে পারে এবং চোখ উপরিয়ে দিতে পারে। অতঃপর তিনি আবার তাকে পাথর ছুঁড়তে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ বর্ণনা করছিলাম যে, তিনি পাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন অথবা তিনি তা অপসন্দ করেছেন। অথচ (একথা শুনেও) তুমি পাথর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কথাই বলব না এতকাল এতকাল পর্যন্ত।
(বুখারী, হা/৫৪৭৯ ‘যবেহ ও শিকার’ অধ্যায়, ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করা ও বন্দুক মারা’ অনুচ্ছেদ।)
৩.
ইবনু শিহাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাকে (ইবনে শিহাব) বলেছেন, তিনি [সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ)] শামের একজন লোকের নিকট থেকে শুনেছেন, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)-কে হজ্জে তামাত্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, তা হালাল। তখন সিরীয় লোকটি বললেন, তোমার পিতা (ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব) তা নিষেধ করেছেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, যে কাজ আমার পিতা নিষেধ করেছেন সে কাজ যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পালন করেন, তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ অনুসরণযোগ্য, না আমার বাবার নির্দেশ অনুসরণযোগ্য? লোকটি বললেন, বরং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ অনুসরণযোগ্য। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হজ্জে তামাত্তু আদায় করেছেন।
(তিরমিযী, হা/৮২৪, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘হজ্জে তামাত্তু সম্পর্কে যা এসেছে’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ।)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে জানা ও মানার তাওফীক দান করুন। আমীন।
   https://rasikulindia.blogspot.com আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)<> -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite-  https://rasikulindia.blogspot.comesoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments