ইমাম মুসলিম ইবনুল-হাজ্জাজ (র) : জীবন ও অবদান
ইমাম মুসলিম (র)
ছিলেন এক মুসলিম পণ্ডিতগণের মধ্যে এক উজ্জ্বলতম নত্র, ণজন্মা মহাপুরুষ, হাদীস
শাস্ত্রের এক অনন্য দিকপাল, হাদীস-সমালোচনা ও
রিজাল-শাস্ত্রের অভিজ্ঞ এবং হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর এক মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন
একাধারে ইমাম, হাদীসের হাফিয, হুজ্জাহ্
এবং বিশ্বস্ত হাদীস বর্ণনাকারী। তিনি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে
হাদীস শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ পণ্ডিতগণের নিকট হাদীস ও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন
করেন। তাই তাঁর শায়খগণের সংখ্যা অনেক। তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য ওস্তাদের মধ্যে ইমাম
বুখারী, আবূ যুর‘আহ র্আ-রাযী, মুহাম্মাদ
ইব্ন ইয়াহহইয়া অন্যতম। শিাগ্রহণের পর তিনি হাদীস শাস্ত্রে জ্ঞান দানে ব্রতী হন।
তাঁর থেকে যার শিাগ্রহণ করেন তার পরবর্তীতে নির্ভরযোগ্য রাবী ও হাদীসের ইমাম
হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ইমাম মুসলিম (র)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান ‘সহীহ মুসলিম’
গ্রন্থটি। এটি সংকলন করে তিনি বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর এ গ্রন্থটিসমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র
নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ গ্রন্থটি সম্পর্কে ইমাম
মুসলিম (র) নিজেই বলেন, ‘হাদীসবিদগণ যদি
দু’শত বছর ধরেও হাদীস লিপিবদ্ধ করতে থাকেন, তবুও তাঁদের
এই মুসনাদ গ্রন্থটির ওপরই নির্ভর করতে হবে’। হাকিম আবূ ‘আলী আন্-নায়শাপূরীর মতে
হাদীস শাস্ত্রে আকাশের নিচে মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজের কিতাব অপো অধিক বিশুদ্ধ কোন
গ্রন্থ নেই’। ইমাম মুসলিম (র) রচিত গ্রন্থাবলীর অধিকাংশই হাদীস সম্পর্কিত। এছাড়া
অন্যান্য বিষয়ে কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। আলোচ্য প্রবন্ধে ইমাম মুসলিম (র)-এর জীবনী
ও তাঁর অবদান সম্পর্কে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আলোচনা করা হয়েছে। ]
নাম ও বংশ
তাঁর নাম মুসলিম , উপনাম আবূল হুসাইন, উপাধি ‘আসাকিরুদ্দীন। পিতার নাম আল-হাজ্জাজ। তাঁর বংশ তালিকা এই, মুসলিম
ইব্নুল-হাজ্জাজ ইব্ন মুসলিম ইব্ন ওয়ারদ ইব্ন কুশায আল-কুশাইরী আন-নায়সাপুরী ।
জন্ম ইমাম মুসলিম ২০২ হিজরী মুতাবেক ৮১৭ খ্রীষ্টাব্দে খুরাসানের প্রসিদ্ধ শহর নায়সাপূর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ইব্ন কাসীর (র) (৭০০-৭৭৪ হিজরী/১৩০২-১৩৭২ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, ‘ইমাম শাফি‘ঈ (র)-এর ইন্তিকালের বছর ইমাম মুসলিম (র) ২০৪ হিজরী সালে জন্মগ্রহণ করেন। এ সম্পর্কে হাফিয শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী (মৃত ৭৪৮ হিজরী/১৩৪৭ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, وُلِدَ سَنَةَ أرْبَعٍ وَّمِائَتَيْنِ. -‘তিনি ২০৪ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন’।
অধিকাংশ রিজাল শাস্ত্রবিদ তাঁর মৃতকাল ২৬১ হিজরী এবং বয়স ৫৫ বৎসর উল্লেখ করেছেন। এই হিসেবে তাঁর জন্মকাল ২০৬ হিজরী হওয়াই সঠিক ও অধিক যুক্তিযুক্ত। ইব্নুল-আসীর (৫৫৫-৬০৬ হিজরী/১১৬০-১২৩২ খ্রীষ্টাব্দ)-এর মতে وُلِدَ سَنَةَ سِتٍّ وَمِائَتَيْن -‘তিনি ২০৬ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন’। ইব্ন খাল্লিকান (৬০৮হিজরী/১২১১ খ্রীষ্টাব্দ-৬৮১ হিজরী/১২৭৪ খ্রীষ্টাব্দ) ইমাম মুসলিম (র)-এর জন্ম ২০৬ হিজরী সাল বলে উল্লেখ করেছেন। এ দিক থেকে ২০৬ হিজরী সাল মতটিই অধিক বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য। এ সম্পর্কে ঞযব ঊহপুপষড়ঢ়ধবফরধ ঙভ ওংষধস গ্রন্থে বলা হয়েছে, গঁংষরস ই. অষ-ঐধফলধল অনঁষ ঐঁংংধরহ অষ-কঁংযধরৎর অষ-ঘরংধনঁৎর ডধং ইড়ৎহ অঃ ঘরংধনঁৎ ওহ ২০২ (৮১৭) ঙৎ ওহ ২০৬ (৮২১). -‘মুসলিম ইব্নুল হাজ্জাজ আবুল হুসাইন আল-কুশায়রী আন্-নায়সাপূরী ২০২ হিজরী/৮১৭ খ্রীষ্টাব্দে অথবা ২০৬ হিজরী/৮২১ খ্রীষ্টাব্দে নায়সাপূরে জন্মগ্রহণ করেন’।
জন্মস্থান ইমাম মুসলিম (র) নায়সাপূর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এটি খুরাসানের একটি প্রসিদ্ধ শহর। এখানে শত শত ‘আলিম ও জ্ঞানীব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন। ইয়া‘কূত আল-হামাভী (৫৭৪-৬২৬ হিজরী/১১৭৮-১২২৯ খ্রীষ্টাব্দ) নায়সাপূর সম্পর্কে বলেন,
وَهِىَ مَدِيْنَةٌ عَظِيْمَةٌ ذَاتُ فَضَائِلٍ جَسِيْمَةٍ، مَعْدنُ الْفُضَلاَءِ، وَمَنْبَعُ الْعُلَمَاءِ، لَمْ أَرَ فِيْمَا طَوَّفْتُ مِنَ الْبِلاَدِ مَدِيْنَةً كَانَتْ مِثْلُهَا.
-‘এটি একটি বিরাট এবং মহা মর্যাদা সম্পন্ন শহর। এটি সম্মানিত ব্যক্তিগণের খনিস্বরূপ। জ্ঞানী ও ‘আলিম ব্যক্তিগণের ঝর্ণাধারা স্বরূপ। আমি যত শহর ভ্রমণ করেছি, এর অনুরূপ কোন শহর প্রত্য করিনি’।
এ শহরের অপর নাম ‘আরব শহর। এর প্রশংসায় জনৈক কবি বলেন,
لَيْسَ فِىْ الأرْضِ مِثْلَ نَيْسَابُوْر & بَلَدٌ طِيِّبٌ وَرَبٌّ غَفُوْرٌ
-‘নায়সাপূরের মত ভূমণ্ডলের কোন উত্তম শহর নেই। আর মহান আল্লাহ প্রতিপালক এবং মাশীল’।
বাল্যকাল ইমাম মুসলিমের বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তবে বাল্যকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও বিদ্যানুরাগী ছিলেন। তিনি ছোট বেলাতেই পবিত্র কুর’আন হিফ্য করেছেন। ইমাম মুসলিম তাঁর পিতা-হাজ্জাজ এবং নায়সাপূরের অন্যান্য ‘আলিমগণের নিকট থেকে শিা অর্জন করেছেন। সে সময়ে নায়সাপূর ছিল জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর ঘরের ও বাইরের পরিবেশ ছিল জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান বিতরণের অনন্য পরিবেশ। তাঁর পিতা ছিলেন একজন হাদীস বিশারদ।
ইব্ন ‘আসাকির (মৃত ৫৭১ হিজরী/ ১১৭৬ খ্রীষ্টাব্দ) ইমাম মুসলিম (র)-এর শিষ্য-মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদিল-ওয়াহ্যাব আল-ফাররা থেকে বর্ণনা করেন, وَكَانَ أبُوْهُ اَلْحَجَّاجُ بنُ مُسْلِمٍ مِنْ مَشِيْخَةِ أبِىْ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا. -‘ইমাম মুসলিমের পিতা হাজ্জাজ ইব্ন মুসলিম আমার পিতার অন্যতম শায়খ ছিলেন।’
শিক্ষা জীবন ইমাম মুসলিম শৈশবে পিতা-মাতার øেহ-মমতায় প্রতিপালিত হন। তাঁদের নিকটেই তার প্রাথমিক শিা আরম্ভ হয়। শৈশবেই তিনি অসাধারণ মেধাবী, চরিত্রবান ও বিনম্র স্বভাবের বালক হিসাবে সহপাঠী ও বাল্যসাথীদের মাঝে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি কিশোর বয়সেই হাদীস শিা শুরু করেন। তিনি মাতৃভূমি নায়সাপূরে প্রথম হাদীস শ্রবণ ও সংগ্রহের সূচনা করেন। সাথে সাথে তাফসীর, ইতিহাস ও অন্যান্য ইসলামী বিষয়ও অধ্যয়ন করতে থাকেন। এই বিদ্যাপীঠেই তিনি সর্বপ্রথম ২১৮ হিজরী/ ৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে হাদীসের দারসে উপস্থিত হয়ে হাদীস শ্রবণ করতে আরম্ভ করেন। তখন এ শিা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন তৎকালীন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইমাম আয্-যুহ্লী। তাঁর নিকট থেকে ইমাম মুসলিম মনোযোগ সহকারে হাদীস শিা লাভ করতে থাকেন। শিকমণ্ডলীর নিকট থেকে হাদীস শ্রবণের পরে সাথে সাথেই তিনি শ্র“ত সমস্ত হাদীস লিখে রাখতেন। লেখা শেষ হলে তিনি সহপাঠীদের বৈঠকে হাদীস সমূহ পুনরালোচনা করতেন। ফলে অতি অল্প সময়ে হাদীস শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য লাভে সম হন।
ইমাম যুহ্লীর মজলিস ত্যাগ ইমাম বুখারী (র) যখন নায়সাপূরে উপস্থিত হন, তখন ইমাম মুসলিম (র) তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ‘ইলমে হাদীসে তাঁর অফুরন্ত জ্ঞানভাণ্ডার হতে তিনি (মুসলিম) জ্ঞান আহরণ করতে লাগলেন। এদিকে ইমাম বুখারী নায়সাপূরে এসে হাদীসের দারস দিতে শুরু করলে অন্যান্য মুহাদ্দিসগণের দারস শিার্থী শূন্য হয়ে পড়ে। কারণ শিার্থীরা ইমাম বুখারীর দারসে বসতে শুরু করেন। এমনকি বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম যুহ্লীও (মৃত ২৫৮ হিজরী) নিয়মিত ইমাম বুখারীর দারসে উপস্থিত হয়ে হাদীস শ্রবণ করেন। অন্যান্য মুহাদ্দিসের দারস শিার্থী শূন্য হওয়ায় হিংসুকরা ইমাম বুখারীর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করে। ইতোমধ্যে خَلْقُ الْقُرْآنِ (কুর’আন সৃষ্ট কি-না) সম্পর্কিত মাস’আলায় ইমাম বুখারী ও ইমাম যুহ্লীর মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। ইমাম মুসলিম ইমাম বুখারীর পাবলম্বন করেন। যুহ্লী ইমাম বুখারীর বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করে এবং লোকজনকে বুখারীর নিকটে যেতে নিষেধ করে। যাতে ইমাম বুখারী নাইসাপূর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। মুসলিম (র) ব্যতীত অধিকাংশ লোক তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিন্তু ইমাম মুসলিম নিয়মিত ইমাম বুখারীর সাথে সাাৎ করতে থাকেন। ইমাম যুহ্লীর নিকটে এই খবর পৌঁছল যে, মুসলিম (র) তাঁর পূর্বের মতের উপরেই অটল আছেন। যদিও এ কারণে তিনি হিজায ও ‘ইরাকে তিরষ্কৃত হয়েছেন কিন্তু তিনি স্বীয় মত পরিবর্তন করেননি।
একদিন ইমাম মুসলিম (র) যুহ্লীর দারসে অন্যান্য শিার্থীদের সাথে উপস্থিত হয়ে হাদীস শুনছিলেন। ইমাম যুহ্লী তাঁর দারসের শেষ পর্যায়ে সহসা ঘোষণা করেন, اِلاَّ مَنْ قَالَ بِاللَّفْظِ فَلاَ يَحِلُّ لَهُ اَنْ يَحْضُرَ مَجْلِسَنَا -‘যে ব্যক্তি কুর’আনের শব্দ সৃষ্ট বলে, আমাদের মজলিসে উপস্থিত হওয়া তার জন্য সমীচীন নয়।’ এ কথা শ্রবণের সাথে সাথে ইমাম মুসলিম স্বীয় চাদরটি তাঁর পাগড়ির উপর উঠিয়ে দিয়ে (মুখ ঢেকে) মজলিস ত্যাগ করেন। বাড়ী ফিরে এসে যুহ্লীর নিকট থেকে শ্র“ত ও গৃহীত হাদীসের সমস্ত পাণ্ডুলিপি উটের পিঠে করে ফেরৎ পাঠান।
হাদীস শিাkkha এবং হাদীস অন্বেষণে ভ্রমণ
ইমাম মুসলিম (র) কিশোর বয়সেই হাদীস শিা শুরু করেন। তিনি মাতৃভূমী নায়সাপূরে প্রথম হাদীস শ্রবণ ও সংগ্রহের সূচনা করেন। তাঁর শিকবৃন্দ ছোট বেলা থেকেই তাঁর মধ্যে তীè স্মরণ শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা এবং অনুপম চরিত্র-মাধুর্য দেখতে পান। এ সম্পর্কে তাঁর কিছু কিছু শিকের মন্তব্য উল্লেখযোগ্য।
হাফিয ইসহাক ইব্ন ইবরাহীম ইব্ন রাহ্ওয়ায়হ্ (মৃত ২৩৮ হিজরী) বলেন, اَىُّ رَجُلٍ كَانَ هَذا؟ -‘ভবিষ্যতে এ কেমন ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে?’ ইসহাক ইব্ন মানসূর ইব্ন বিহারাম আল-কাওসাজ (মৃত ২৫১ হিজরী) তাঁর সম্পর্কে বলেন, لَنْ نُعْدَمَ الْخَيْرَ مَا اُبْقَاكَ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ -‘আল্লাহ্ তা‘আলা যতদিন তোমাকে মুসলমাগণের জন্য জীবিত রাখবেন, ততদিন আমাদের থেকে কল্যাণ রহিত হবে না।’
মুসলিম (র) ছিলেন হাদীস শাস্ত্রের একজন বিজ্ঞ ও প্রসিদ্ধ ইমাম এবং হাদীসের হাফিয ও দ সংরক। হাদীস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ভ্রমণ করেছেন। বিশেষ করে ইসলামী বিশ্বের যেসব শহর ‘ইলমুল হাদীস শিার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল, সেসব শহর ছিল তাঁর দীর্ঘ সফরের আওতায়। তিনি খুরাসান, ‘ইরাক , হিজায, শাম ও মিসর ভ্রমণ করেন।
এছাড়া ‘আরবের মক্কা , মদীনা , ও রায় সহ প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেন এবং এসব স্থানের বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেছেন।
ঐতিহাসিক এবং জীবনী গ্রন্থ রচয়িতাগণের বর্ণনানুসারে ইমাম মুসলিম (র) সর্বপ্রথম ২১৮ হিজরী সালে হাদীস শ্রবণ করা শুরু করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ১২ বছর। তিনি প্রথম হাদীস শ্রবণ করেন হাফিয ইমাম ইয়াহ্ইয়া ইব্ন ইয়াহ্ইয়া আত্-তামীমী থেকে।
চৌদ্দ বছর বয়সে ২২০ হিজরী সালে ইমাম মুসলিম (র) প্রথম সফরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি বায়তুল্লাহ্র হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে এ সময় খুরাসান থেকে রওয়ানা হন। এ সফরে তিনি হিজাযের মুহাদ্দিসগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। তিনি প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ ইমাম ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মাসলামাহ আল-কা‘নবী (মৃত ২২১ হিজরী/৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দ) (র)-এর সাথে মক্কায় সাাৎ করে তাঁর থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। তিনি এ যাত্রায় কূফার হাফিয আহ্মদ ইব্ন ‘আবদিল্লাহ ইব্ন ইউনুস (মৃত ২২৭ হিজরী/৮৪১ খ্রীষ্টাব্দ) এবং অপর একদল মুহাদ্দিস থেকেও হাদীস শ্রবণ করেন। অতঃপর তিনি তাঁর জন্মভূমি খুরাসানের নায়সাপূরে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি তথাকার হাদীস শাস্ত্রবিদগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ এবং লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। এ ছাড়া নায়সাপূরে যে সকল মুহাদ্দিস এবং হাফিযে হাদীস বাহির থেকে আগমন করেন, তিনি তাঁদের নিকট থেকেও হাদীস সংগ্রহ করতে থাকেন। তিনি এ যাত্রায় খুরাসানের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণ করেন এবং ইয়াহ্ইয়া ইব্ন ইয়াহ্ইয়া নায়সাপূরী (মৃত ২২৬ হিজরী/৮৪০ খ্রীষ্টাব্দ), কুতায়বাহ ইব্ন সা‘ঈদ (মৃত ২৪০ হিজরী/৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দ, ইসহাক ইব্ন রাহওয়াহ (মৃত ২৩৮ হিজরী/৮৫১ খ্রীষ্টাব্দ) এবং বিশর ইব্নুল-হিকাম (মৃত ২২০ হিজরী) থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।
ইমাম বুখারী (র) (মৃত ২৫৬ হিজরী/৮৬৯ খ্রীষ্টাব্দ) নায়সাপূর আগমন করলে ইমাম মুসলিম (র) তাঁকে ওসতাদ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তাঁর নিকট হাদীস বিষয়ক বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার হতে জ্ঞানারোহণ করেন।
ইমাম মুসলিম (র) ২৩০ হিজরী সালের প্রাক্কালে হাদীস অন্বেষণের উদ্দেশ্যে ইসলামী জগতের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্বিতীয়বার ভ্রমণ শুরু করেন।
তিনি রায়-এ মুহাম্মাদ ইব্ন মিহরান আল-জামাল আর-রাযী (মৃত ২৩৯ হিজরী/৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দ), ইব্রাহীম ইব্ন মূসা আল-ফররা (মৃত ২২০ হিজরী), আবূ গাস্সান মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আমর আয্-যুনায়জী আর-রাযী-এর নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। .
তিনি ‘ইরাকের বাগদাদ , কূফা ও বসরা সফর করেন। এসব শহরে তিনি যে সকল মুহাদ্দিস থেকে হাদীস শ্রবণ করেন, তারা হলেন, আহমাদ ইব্ন হাম্বল (মৃত ২৪১ হিজরী/৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দ), ‘ওবায়দুল্লাহ ইব্ন ‘আমর আল-কওয়ারীরী (মৃত ২৩৫ হিজরী/৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দ), খাল্ফ ইব্ন হিশাম আল-বয়যার (মৃত ২২৯ হিজরী), ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ‘আওন আল্-খাররায, সুরায়জ ইব্ন ইউনুস, সা‘ঈদ ইব্ন মুহাম্মাদ আল-হারামী, ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মাসলামাহ আল্-কা‘নবী (মৃত ২২০-১ হিজরী/৮৩৫-৬ খ্রীষ্টাব্দ), আবূর-রাবী‘ আয্-যাহ্রানী, ‘আমর ইব্ন হাফ্স ইব্ন গায়্য়াস, আবূ গাস্সান মালিক ইব্ন ইসমা‘ঈল (মৃত ২১৯ হিজরী/৮৩৪ খ্রীষ্টাব্দ) এবং আহমাদ ইব্ন ‘আবদিল্লাহ ইব্ন ইউনুস। তিনি কয়েকবার ‘ইরাক সফর করেন। সর্বশেষ তিনি ২৫৯ হিজরী/৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে বাগদাদ গমন করেন। ইবনুল-আসীরের মতে সর্বশেষে তিনি ২৫৯ হিজরী সালে বাগদাদ গমন করেন।
তিনি সিরিয়ার যে সকল মুহাদ্দিস থেকে হাদীস শ্রবণ করেন তাঁরা হলেন, মুহাম্মাদ ইব্ন খালিদ আস্-সাকসাকী এবং ওয়ালিদ ইব্ন মুসলিম।
ইমাম মুসলিম (র) হিজাযের ইসমা‘ঈল ইব্ন আবী ’উওয়াইস (মৃত ২২৭ হিজরী) আবূ মুস‘আব আহমাদ ইব্ন আবী বকর আয্-যুহ্রানী (মৃত ২৪২ হিজরী), সা‘ঈদ ইব্ন মানসূর (মৃত ২২৭ হিজরী/৮৪১ খ্রীষ্টাব্দ), মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া ইব্ন আবী ‘ওমার এবং ‘আবদুল-জাব্বার ইবনিল-‘আলা’ থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।
তিনি মিসর সফর করে তথাকার মুহাদ্দিস এবং ফকীহগণের নিকট থেকেও হাদীস সংগ্রহ করেন। তিনি এখানে যে সকল ব্যক্তি থেকে হাদীস শ্রবণ করেন তাঁরা হলেন মুহাম্মাদ ইব্ন রুমহ আত্-তুজীবী (মৃত ২৪২ হিজরী), ‘ঈসা ইব্ন হাম্মাদ, ‘আমর ইব্ন সাওওয়াদ। হারমালা ইব্ন ইয়াহ্ইয়া (মৃত ২৪৪ হিজরী/৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দ), হারূন ইব্ন সা‘ঈদ আল-আয়লী (মৃত ২৫৩ হিজরী), মুহাম্মাদ ইব্ন সালামাহ্ আল-মুরাদী এবং অন্যান্যদের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।
এ সকল সফরে ইমাম মুসলিম (র) যুগশ্রেষ্ঠ হাদীস-বিশারদগণের সাাৎ পেয়েছেন। তাঁদের থেকে হাদীস শ্রবণ করেছেন। তাঁদের সংগৃহীত গ্রন্থ থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি হাদীস বিষয়ক বিভিন্ন জ্ঞান স¤পর্কে ওয়াকিফহাল হয়েছেন। এতে তিনি দুর্বল হাদীস থেকে সরল হাদীস পার্থক্য করার প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। আর এরই ফলশ্র“তিতে ইমাম মুসলিম (র) হাদীসের মজলিস অনুষ্ঠান, হাদীস লিপিবদ্ধ করান, শিষ্যদের হাদীসের তা‘লীম প্রদান এবং গ্রন্থ প্রণয়নের যথাযথ সামর্থ লাভ করেন।
হাদীস অন্বেষণ এবং মুহাদ্দিসগণের শিষ্যত্ব অর্জনের ¯পৃহা ইমাম মুসলিম (র)-এর আজীবন ছিল। তিনি মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া আয্-যুহ্লী (মৃত ২৫৮ হিজরী)-এর মজলিসে উপস্থিত হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২৫০ হিজরী সালের পর আর ইমাম আয্-যুহ্লী (র)-এর মজলিসে গমন করতেন না। ইমাম বুখারী এসময় নায়সাপূরে অবস্থান করছিলেন। ইমাম মুসলিম (র) তখন তাঁর মজলিসে যাতায়াত করতেন। এতে ইমাম আয্-যুহ্লী মনুন্ন হন। এ কারণে তাঁদের মাঝে বৈরিতা সৃষ্টি হয়।
হাদীস অন্বেষণে ইমাম মুসলিম (র)-এর এ সকল ভ্রমণের মধ্যে কোনটি আগে এবং কোনটি পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার ধারাবাহিক বর্ণনা পাওয়া যায় না। তিনি কোন কোন শহরে একাধিকবার সফর করেছেন। যেমন বাগদাদ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সেখানে একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন এবং তথায় হাদীস বর্ণনা করেছেন। বাগদাদে তাঁর সর্বশেষ সফর ছিল ২৫৯ হিজরী সালে।
মুহাদ্দিসগণের জ্ঞানের গভীরতা, ‘ইলমের ব্যাপকতা এবং হাদীস অন্বেষণ ও সংগ্রহের ¯পৃহা তাঁদের শায়খদের আধিক্য, হাদীস বর্ণনায় তাঁদের বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা, বিভিন্ন দেশের অধিবাসী হওয়া এবং ‘ইলমের বিভিন্ন স্তরের দ হওয়ার ওপর নির্ভর করে। ইমাম মুসলিম (র)-এর েেত্র এ সব বৈশিষ্ট্য পূর্ণরূপে পাওয়া যায়। তাঁর শায়খগণ ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আপন আপন শহরের বড় বড় ‘আলিম। তাঁদের কেউ ছিলেন ফিক্হ শাস্ত্রে অভিজ্ঞ আবার কেউ কেউ হাফিয। ইমাম মুসলিম (র) সফরের কষ্ট সহ্য করে বিভিন্ন দেশের ঐ সকল মুহাদ্দিসের নিকট থেকে হাদীস সংগ্রহ করেছেন।
হাফিয আবূল-হাজ্জাজ ইউসুফ ইব্ন ‘আবদির রহমান আল-মিয্যি (মৃত ৭৪২ হিজরী/১২৪১ খ্রীষ্টাব্দ) (র) তাঁর “তাহযীবুল-কামাল ফী আস্মাইর-রিজাল” গ্রন্থে ইমাম মুসলিম (র)-এর শায়খগণের সংখ্যা ২১২ জন বলে উল্লেখ করেছেন। হাফিয শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী (র) তাঁর “সিয়ারু আ‘লামিন্-নুবালা” গ্রন্থে ইমাম মুসলিমের “আস্-সহীহ” গ্রন্থের শায়খগণের সংখ্যা ২১৩ জন বলে উল্লেখ করেছেন। হাফিয যাহাবী (র) ইমাম মুসলিমের শায়খগণের নাম উল্লেখ করার পর তাঁদের সংখ্যা ২২০ জন বলে উল্লেখ করেছেন। যাহাবী (র) ইমাম মুসলিম (র)-এর শায়খগণের এমন তিন জনের নাম নমুনাস্বরূপ উল্লেখ করেছেন, যাঁদের থেকে তিনি তাঁর “আস্-সহীহ” গ্রন্থে হাদীস উল্লেখ করেননি। হাফিয মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদির রহমান সাখাভী (৮৩১-৯০৭ হিজরী/১৪২৮-১৪৯৭ খ্রীষ্টাব্দ) ইমাম মুসলিমের এমন শায়খগণের সংখ্যা যাঁদের থেকে তিনি “সহীহ” গ্রন্থে রিওয়ায়েত করেছেন ২১৭ জন বলে উল্লেখ করেছেন।
শিষ্যবৃন্দ
অতি অল্প কালের মধ্যেই ইমাম মুসলিম ‘ইলমে হাদীসে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে সম হয়েছিলেন। ইমাম মুসলিম (র)-এর সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার কারণে অসংখ্য হাদীস অন্বেষণকারী ব্যক্তি তাঁর সান্নিধ্যে আগমন করেন। সমসাময়িক বরেণ্য বিদ্বানগণও তাঁর শিষ্যত্ব লাভ করতে আসেন। ইমাম মুসলিমের কতিপয় উল্লেখযোগ্য ছাত্রের নাম এখানে উল্লেখ করা হ’লঃ
মুহাম্মাদ ইব্ন ‘ঈসা আত-তিরমিযী (১টি হাদীস শ্রবণ করেছেন) , ইবরাহীম ইব্ন ইসহাক আস্-সায়রাফী, ইবরাহীম ইব্ন আবী তালিব, ইবরাহীম ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন হামযাহ, ইবরাহীম ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন সুফিয়ান আল-ফকীহ, আবূ হামীদ আহমদ ইব্ন হামদুন ইব্ন রুস্তম আল-‘আমাশী, আবূল ফযল আহমদ ইব্ন সালামাহ আল-হাফিয, আবূ হামীদ আহমদ ইব্ন ‘আলী ইবনিল-হাসান ইব্ন হাসনুবিয়্যাহ আল-মকরিউ, আবূ ‘আমর আহমদ ইব্ন নাছর আল-খাফ্ফাফ আল-হাফিয, আবূ ‘আমর আহমদ ইব্নুল-মুবারক আল-মুসতামলি, আবূ হামিদ আহমদ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন আল-হাসান ইব্ন আশ-শারকী, আবূ সা‘ঈদ হাতিম ইব্ন আহমদ ইব্ন মাহমুদ আল-কিন্দী আল-বুখারী, আল-হুসাইন ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন যিয়াদ আল-কাব্বানী, আবূ ইয়াহ্ইয়া যাকারিয়া ইব্ন দাঊদ আল-খাফ্ফাফ, সা‘ঈদ ‘আমর আল-বারযাহ আল-হাফিয, সালিহ ইব্ন মুহাম্মাদ আল-বাগদাদী আল-হাফিয, আবূ মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ ইব্ন আহমদ ইব্ন ‘আবদিস্-সালাম আল-খাফফাফ আন-নাইসাপূরী, আবূ মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন আল-হাসান ইব্ন আশ-শারকী, আবূ ‘আলী ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আলী আল-বালখী আল-হাফিয, ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া আস-সারখামী আল-কাযী, ‘আবদুর রহমান ইব্ন আবি হাতিম আর-রাযী, ‘আলী ইব্ন ইসমা‘ঈল আস্-সাফ্ফার, ‘আলী ইব্নুল হাসান ইব্ন আবি ‘ঈসা আল-হিলালী (তিনি ইমাম মুসলিমের চেয়ে বড়), ‘আলী ইব্নুল-হুসাইন ইবনিল-জুনাইদ আর-রাযী, আল ফযল ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আলী আল-বালখী, আবূ বকর মুহাম্মাদ ইব্ন ইসহাক ইব্ন খুযাইমাহ, মুহাম্মাদ ইব্নু ইসহাক আস্-সাকাফী আস-সিরাজ, আবূ আহমদ মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আব্দিল ওয়াহ্হাব আল-‘আবদী আল-ফাররা (তিনি তাঁর চেয়ে বড়), মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদ ইব্ন হুমাইদ, মুহাম্মাদ ইব্ন মুখাল্লাদ আদ-দুওয়ারী আল-আত্ত্বার, আবূ বকর মুহাম্মাদ ইব্ন নাযর ইব্ন সালামাহ ইবনিল-জারুদ আল-জারুদী, আবূ হাতিম মাক্কী ইব্ন আবদান আত-তাহমীমী, আবূ মুহাম্মাদ নাসর ইব্ন আহমাদ ইব্ন নাসর আল-হাফিয, ইয়াহ্ইয়া ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন সায়িদ, আবূ আওয়ানাহ আল-ইসফিরাইনী।
মাযহাব
ইমাম মুসলিম কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, তা নির্দিষ্ট করে বলা অত্যন্ত কঠিন। আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (১২৯২-১৩৫২ হিজরী/১৮৭৫-১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, ইমাম মুসলিম এর মাযহাব অজ্ঞাত। তিনি বলেন, وَأَمَّا مُسْلِمٌ فَلاَ أَعْلَمُ مَذْهَبَهَا -‘ইমাম মুসলিম-এর মাযহাব সম্পর্কে আমার সঠিক জানা নেই।’ নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান (মৃত ১১৩০ হিজরী/১৭১৭ খ্রীষ্টাব্দ) তাঁকে শাফি‘ঈ বলে গণ্য করেছেন। হাজী খলীফাহ্ (১০১৭-১০৬৭ হিজরী/১৬০৯-১৬৫৭ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, اَلْجَامِعُ الصَّحِيْحُ لإِمَام مُسْلِم الشَّافِعيُّ। মাওলানা ‘আবদুর রশীদ তাঁকে মালেকী মাযহাবের অনুসারী বলেছেন। কিন্তু طبقات مالكية তে তার উল্লেখ নেই। اليافع الحبنى গ্রন্থকার বলেন, উসূলের েেত্র তিনি শাফি‘ঈ ছিলেন। কেননা এ ব্যাপারে ইমাম শাফি‘ঈ (র)-এর সাথে মতদ্বৈততা অনেক কম হয়েছে। শায়খ ‘আবদুল লতীফ সিন্ধী বলেন, ‘ইমাম তিরমিযী (র) ও ইমাম মুসলিম (র)-কে বাহ্যত শাফি‘ঈ (র)-এর মুকাল্লিদ বলে মনে হয়। বস্তুতঃ তারা উভয়েই মুজতাহিদ ছিলেন’। শায়খ তাহের জাযায়েরীর অভিমত হচ্ছে, ‘তিনি কোন নির্দিষ্ট ইমামের মুকাল্লিদ ছিলেন না। তবে ইমাম শাফি‘ঈ ও অন্যান্য হিজাযের অধিবাসী ইমামগণের মাযহাবের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন’।
ইমাম মুসলিম (র) স¤পর্কে হাদীস বিশারদ এবং মনীষীগণের অভিমত
হাদীস শাস্ত্রের বিভিন্ন ইমাম এবং মনীষীগণ ইমাম মুসলিম (র) এবং তাঁর গ্রন্থাবলী স¤পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নিুে এর কিছু কিছু উল্লেখ করা হ’লঃ
১. বসরার মুহাদ্দিস ও সিকাহ রাবী মুহাম্মাদ ইব্ন বাশ্শার আল-‘আবদী (মৃত ২৫২ হিজরী) (র) বলেন,
حُفَّاظُ الدُّنْيَا أَرْبَعَةُ: أَبُوْ زُرْعَةَ بِالرَّي، وَمُسْلِمْ بِنَيْسَابُوْر، وَعَبْدُ الله الدَّارِمِيّ بِسَمَرْقَنْد، وَمُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيْل بِبُخَارِيّ.
-‘পৃথিবীতে হাফিযের সংখ্যা হচ্ছে চারজনঃ রায়-এ আবূ যুর‘আহ, নায়সাপূরে ইমাম মুসলিম, সামারকান্দ-এ ‘আবদুল্লাহ দারেমী এবং বুখারাতে ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন ইসমা‘ঈল।’
২. ইমাম ‘আবদুর-রহমান ইব্ন আবী হাতিম র্আ-রাযী (মৃত ৩২৭ হিজরী) বলেন, مُسْلِم ثِقَةٌ مِنَ الْحُفَّاظ، لهُ مَعْرِفَةٌ بِالْحَدِيْثِ -‘মুসলিম (র) একজন সিকাহ (বিশ্বস্ত) রাবী। তিনি হাদীসের হাফিযগণের মধ্যে অন্যতম। হাদীস স¤পর্কে তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা ও পরিচিতি রয়েছে।’
৩. ইব্ন নাদীম (মৃত ৩৮৫ হিজরী) বলেন, مُسْلِمُ بْنُ الْحَجَّاجِ أَبُوْ الْحُسَيْن اَلْقُشَيْرِيْ اَلنَّيْسَابُوْرِي، مِنَ الْمُحَدِّثِيْن وَالْعُلَمَاءِ بِالْحَدِيْثِ وَالْفِقْهِ. -‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ আবুল হুসায়ন আল-কুশায়রী আন্-নায়সাপূরী ছিলেন মুহাদ্দিস, হাদীস ও ফিক্হ শাস্ত্রে পণ্ডিতগণের মধ্যে অন্যতম’।
৪. হাফিয মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়া‘কূব আশ্-শায়বানী আন্-নায়সাপূরী ইব্নুল-আখরাম (মৃত ৩৪৪ হিজরী) এবং হাফিয মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদিল্লাহ আল-হাকিম (মৃত ৪০৫ হিজরী) বলেন,
إِنَّمَا أَخْرِجَتْ نَيْسَابُوْر ثَلاَثَةَ رِجَالِ: مُحَمَّدُ بنُ يَحْيَى، وَمُسْلِم بن الْحَجَّاج، وَإِبْرَاهِيْم بن أَبِيْ طَالِبْ.
-‘(نيسابور) নায়সাপূর শহর তিনজন বিশেষ ব্যক্তিত্বের জন্ম দিয়েছেঃ মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া, মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ এবং ইবরাহীম ইব্ন আবী তালিব।’
৫. ইমাম বায়হাকী (র) (৩৮৪-৪৫৮ হিজরী/৯৯৪-১০৮০ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন,
قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُوْ عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ عَنْ أَبِىْ الْفَضَلِ مُحَمَّدُ بْنِ إِبْرَاهِيْمُ قَالَ: سَمِعْتُ أحْمَدَ بْنَ مَسْلِمَةَ يَقُوْلٌ: رَأيتُ أبَا زُرْعَةَ، وَأبَا حَاتِمٍ، يُقَدِّمَانِ مُسْلِمَ بْنَ الْحَجَّاجَ فِىْ مَعْرِفَةِ الصَّحِيْحِ عَلى مشَايِخِ عَصْرِهِمَا.
-‘আমাকে আবূ ‘আবদিল্লাহ হাফিয বলেছেন, তিনি আবূল ফযল মুহাম্মাদ ইব্ন ইবরাহীমের নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আহমদ ইব্ন মাসলামাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আবূ যুর‘আহ এবং আবূ হাতিমকে দেখেছি যে, হাদীসের অভিজ্ঞতার েেত্র তাঁরা তাঁদের যুগের শায়খগণের উপর মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।’
৬. হাফিয আহ্মদ ইব্ন ‘আলী আল-খাতীব বাগদাদী (মৃত ৪৬৩ হিজরী) (র) বলেন, مُسْلِمُ أَحَدُ الأَئِمَّة مِنْ حُفَّاظ الْحَدِيْث -‘মুসলিম (র) ইমামগণের অন্যতম এবং হাদীসের হাফিযগণের অন্তর্ভুক্ত।’
৭. মহীউদ্দীন ইব্ন শারফ আন্-নববী (র) (৬৩১- ৬৭৭ হিজরী/১২৩৩-১২৭৮ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন,
أَنَّ مُسْلِمًا رَحِمَهُ اللهُ أَحَدُ أَعْلاَمِ أَئِمَّةِ هذَا الشَّأْنِ وَكِبَارِ الْمُبْرَزِيْنَ فِيْهِ وَأَهْلِ الْحِفْظِ وَالإِتْقَانِ وَالرِّحَّالَيْنَ فِيْ طَلْبِهِ إِلَي أَئِمَّةِ الاقطَارِ وَالْبِلْدَانِ وَالْمُعْتَرَفُ لَهُ بِالتَّقدم فِيْهِ بِلاَ خِلاَفٍ عِنْدَ أَهْلِ الْحَذْقِ وَالْعِرْفَانِ وَالْمَرْجُوْعُ إِلَي كِتَأبِهِ وَالْمُعْتَمِدُ عَلَيْهِ فِيْ كُلِّ إِلاَّ زَمَانٍ.
‘হাদীসের ইমামগণের মধ্যে মুসলিম (র) অন্যতম। তিনি এ বিষয়ের মহান ব্যক্তিগণের মধ্যে একজন মহান ব্যক্তি, হাদীসের হাফিয ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণের অন্তর্ভুক্ত এবং হাদীস অন্বেষণে বিভিন্ন অঞ্চল ও শহরের ইমামগণের নিকট ভ্রমণকারীগণের মধ্যে একজন। হাদীস জগতের অগ্রগামী ব্যক্তি। প্রতিটি যুগে ও কালেই তাঁর কিতাবটি নির্ভরশীল গ্রন্থ’।
৮. আল-ইয়াফি‘ঈ (৭০০-৭৬৮ হিজরী/১৩০১-১৩৬৭ খ্রীষ্টাব্দ) (র) তাঁর স¤পর্কে বলেন,
أحَدُ أركَانِ الْحَدِيْثِ، صَاحِبُ الصَّحِيْحِ، وَغَيْرِه، وَمَنَاقِبُهُ مَشْهُورَةٌ، وَسِيْرَتُهُ مَشْكُوْرَةٌ
-‘ইমাম মুসলিম (র) ছিলেন হাদীসের অন্যতম স্তম্ভস্বরূপ, ‘আস্-সহীহ’ ও অন্যান্য গ্রন্থের প্রণেতা। তাঁর গুণাবলী সুপ্রসিদ্ধ এবং তাঁর জীবন-চরিত কল্যাণকর।’
৯. ইব্ন খাল্লিকান (র) (৬০৮-৬৮১ হিজরী/১২১১-১২৮২ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, أَحَدُ الأئِمَّةِ الْحُفَّاظِ وَأعْلاَمِ الْمُحَدِّثِيْنَ-‘ইমাম মুসলিম (র) হাফিয ইমামগণের অন্যতম এবং বিশিষ্ট মুহাদ্দিসগণের অন্তর্ভুক্ত।’
১০. ইব্ন খালদূন (৭৩২-৮০৮ হিজরী/১৩৩২-১৪০৬ খ্রীষ্টাব্দ) তাঁর স¤পর্কে বলেন,
مُسْلِمُ بْنُ الحَجَّاجِ أَبُوْ الْحُسَيْنِ الْقُشَيْرِىُّ اَلنَّيْسَابُوْرِىُّ الْحَافِظُ أَحَدُ أَرْكَانِ الْحَدِيْثِ وَصَاحِبُ الصَّحِيْحِ
-‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ আবূল-হুসায়ন আল-কুশায়রী আন্-নায়সাপূরী (র) ছিলেন একজন হাফিয, হাদীসের অন্যতম স্তম্ভস্বরূপ এবং ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থের সংকলক।’
১১. ইব্ন তাগরী বারদী (৮১৩-৮৭৪ হিজরী/১৪১১-১৪৭০ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন,
مُسْلِمُ بْنُ الْحَجَّاجِ بْنِ مُسْلِمٍ اَلإمَامُ الْحَافِظُ الْحُجَّةُ أَبُوْ الْحُسَيْنِ النَّيْسَابُوْرىُّ صَاحِبُ الصَّحِيْحِ
-‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ ইব্ন মুসলিম হাদীসের ইমাম, হাফিয এবং হুজ্জাহ্ ছিলেন। তাঁর উপনাম আবূল-হুসায়ন। তিনি ছিলেন নায়সাপূরের অধিবাসী এবং ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থের প্রণেতা।’
ইমাম মুসলিম (র)-এর ইন্তিকাল
ইমাম মুসলিম (র)-এর অল্পদিনই বেঁচে ছিলেন। তাঁর জীবনের বেশিরভাগ ছিল হাদীস চর্চায় ব্যাপৃত। তিনি বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ শেষে নায়সাপূরে প্রত্যাবর্তন করতেন। সেখানে তাঁর স¤পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। তিনি আমৃত ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন।
জীবনী গ্রন্থ রচয়িতাগণের মতে, ইমাম মুসলিম (র) ২৬১ হিজরী সালের রজব মাসের ২৪ তারিখ রবিবার সন্ধ্যায় নায়সাপূরে ইন্তিকাল করেন। এটা ছিল ৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসের ৬ তারিখ। হাফিয আবূ ‘আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইব্ন ই‘য়াকূব (র) বলেন, تُوَفِّىْ مُسْلِمٌ بْنُ الْحَجَّاجِ عَشِيَّةَ يَوْمِ الأحَدِ، وَدُفِنَ الإِثْنَيْنِ لِخَمْسٍ بَقِيْنَ مِنَ رَجَبَ سَنَةَ إحْدىا وَسِتِّيْنَ وَمِئَتَيْنِ. -‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ (র) রবিবার সন্ধ্যায় ইন্তিকাল করেন এবং ২৬১ হিজরী সালের ২৫শে রজব তাঁকে দাফন করা হয়।’
মৃতকালে তাঁর বয়স কত ছিল এ স¤পর্কে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। ইব্নুল-‘ইমাদ হাম্বলী (র) (১০৩২-১০৮৯ হিজরী/১৬২৩-১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দ)-এর মতে, তিনি ৬০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। ইমাম মহীউদ্দীন শাফর আন্-নববী ও ইব্ন খাল্লিকানের মতে, ইমাম মুসলিম (র) ৫৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। আর এ হিসেবে তিনি ২০৬ হিজরী সালে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিকগণের মতে, এ অভিমতটিই অধিক বিশুদ্ধ। ইব্ন কাসীর (র)-এর মতানুসারে তিনি ৫৭ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তাঁকে নায়সাপূর শহরের অভ্যন্তরে নাসীরবাদে দাফন করা হয়। হাফিয শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী (র) বলেন, তঁাঁর কবর যিয়ারত করা হয়ে থাকে।
তাঁর মৃত্যু স¤পর্কে খতীব আল-বাগদাদী (র) নিুের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন
মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদিল্লাহ নায়সাপূরী বলেন, ‘আমি আবূ ‘আবিদল্লাহ মুহাম্মাদ ইব্ন ই‘য়াকূবকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আহ্মাদ ইব্ন সালিমাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আবূল-হুসায়ন মুসলিম (র) ইব্নুল-হাজ্জাজের জন্যে হাদীসের একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁর নিকট এমন একটি হাদীস আলোচিত হয়, যা তিনি তাৎণিকভাবে চিনতে বা উপলব্ধি করতে পারেননি। তখন তিনি গৃহে প্রত্যাবর্তন করে উক্ত হাদীস অন্বেষণে লিপ্ত হন। ইত্যবসরে এক ডালি খেজুর খাওয়ার জন্য ইমাম মুসলিমের সম্মুখে পেশ করা হয়। তিনি এক দিকে হাদীস খুঁজতে থাকেন এবং অন্য দিকে এক এক করে খেজুর খেতে থাকেন। এমতাবস্থায় সকাল হয়ে যায়, ডালির খেজুর সমাপ্ত হয়ে পড়ে এবং তিনি ঐ হাদীসটিও পেয়ে যান। হাদীস অন্বেষণে তিনি এত অধিক বিভোর ছিলেন যে তিনি বুঝতে পারেননি যে, তিনি এত অধিক খেয়ে ফেলেছেন। ফলে বদহজম জনিত পেটের অসুখে তিনি ইন্তিকাল করেন। খতীব আল-বাগদাদী (র)-এ ঘটনাটি বর্ণনা করার পর বলেন, হাকিম মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, زَادَنِىْ الثِّقَةُ مِنْ أصْحَابِنَا أنَّهُ مِنْهَا مَاتَ -‘আমাদের বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীগণ এ েেত্র আরও অধিক বর্ণনা করে বলেন, তিনি এ ঘটনায়ই মারা যান।’
চরিত্র ও তাকওয়া
ইমাম মুসলিম (র) ছিলেন উন্নত, আকর্ষণীয় ও মহান চরিত্রের অধিকারী। আল-ইয়াফি‘ঈ ইমাম মুসলিম (র)-এর চরিত্র ও মহত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তিনি ছিলেন হাদীসের একটি অন্যতম স্তম্ভ এবং ‘আস্-সহীহ’ ও অন্যান্য গ্রন্থ প্রণেতা। তাঁর ব্যক্তিত্ব সুপ্রসিদ্ধ এবং তাঁর জীবন চরিত সর্বজন শ্রদ্ধেয়’।
মুসলিম (র)-এর পিতা-মাতা ছিলেন ধর্মভীরু এবং ইমাম মুসলিম এক ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। এতে তার মনে এক অমোচনীয় ছাপ পড়ে। যার ফলে তার সারাজীবন অতিবাহিত হয়েছে একজন আল্লাহভীরু ব্যক্তি হিসাবে এবং আজীবন তিনি সঠিক পথের উপরেই অবিচল ছিলেন। তিনি কাউকে কোন দিন প্রহার করেননি এবং কাউকে কোন দিন অশোভন খারাপ কথাও বলেননি। তিনি কখনও কারও গীবত বা দোষ চর্চায় লিপ্ত হননি এমনকি কখনও কাউকে গালিও দেননি। তিনি ছিলেন অতি সত্যভাষী, মহান ‘আলিম এবং জ্ঞানের আধার।
মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়া‘কূব তাঁর স¤পর্কে বলেন,
كَانَ مُسْلِمُ بْنُ الْحَجَّاجِ مِنْ عُلَمَاءِ النَّاسِ وَأَوْعِيَةِ الْعِلْمِ، مَا عَلِمْتُهُ إِلاَّ خَيْراً، وَكَانَ بَرّاً رَحِمَنَا اللهُ وَإِيَّاهُ.
-‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ ছিলেন অন্যতম ‘আলিম এবং জ্ঞানের আধার। আমি তাঁকে উত্তম বলেই জানি। তিনি ছিলেন পূণ্যবান ব্যক্তি। আল্লাহ আমাদের এবং তাঁর প্রতি করুণা বর্ষণ করুন।’
উৎ. গঁযধসসধফ তঁনধুৎ ঝরফফয়র বলেন, গঁংষরস হবাবৎ ংঢ়ড়শব রষষ ড়ভ ধহু ড়হব; হড়ৎ ফরফ যব ধনঁংব ধহু ড়হব ফঁৎরহম যরং যিড়ষব ষরভব. গঁংষরস’ং পযধৎধপঃবৎ রং ংধরফ ঃড় যধাব নববহ ধফসরৎধনষব.
তাঁর আকৃতি ও জ্ঞান
ইমাম মুসলিম (র) ছিলেন আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর দৈহিক আকৃতি ছিল অতীব সুন্দর। তিনি শুভ্র চুল, দাঁড়ি বিশিষ্ট, দীর্ঘকায় ও সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলেন। তিনি সুন্দর পোষাক পরিধান করতেন। বার্ধক্যের চিহ্ন অল্প বয়সেই তাঁর মধ্যে ফুটে উঠেছিল। তিনি দু’কাঁধের মাঝ বরাবর পাগড়ী ঝুলিয়ে পরতেন। জনৈক ব্যক্তি তাঁকে স্বপ্নে দেখতে পান মাথা ও দাঁড়ি শুভ্র, সুন্দর মুখমণ্ডল বিশিষ্ট, উত্তম বশন পরিধেয় দেহে সুন্দর চাদর দ্বারা আবৃত, মাথায় শোভা পাচেছ পাগড়ী যার কোনা কাঁধের ওপর ঝুলন্ত।
ইমাম মুসলিম (র)-এর জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে ইমাম নববী (র) বলেন,
وَاَجْمَعُوْا على جَلاَلَتِه وَإمَامَتِه وَعُلُوِّ مَرْتَبَتِه وَحِذْقِه فِيْ هَذِه الصَّنْعَهِ وَتَقَدُّمِه فِيْهَا وَتَضُلُّعِه مِنْهَا
-‘আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন তাঁর মহত্বতা, ইমামত, উচ্চ মর্যাদা, হাদীসের েেত্র তাঁর গভীরতা, অগ্রগামীতা এবং হাদীসের বিশেষ জ্ঞান লাভের বিষয়ে।’
তিনি এ সম্পর্কে আরও বলেন, ইমাম মুসলিম (র)-এর উপোরক্ত বৈশিষ্ট্যাবলীর বড় প্রমাণ হচ্ছে, তাঁর রচিত ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থ। এ গ্রন্থের পূর্বে ও পরে এত সুন্দর তারতীর সম্পন্ন এবং বাড়াবাড়ী ব্যতীত হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনার সংপ্তিকরণ এবং অতিরিক্ত কোন ফায়দা ছাড়া সনদ বারবার উল্লেখ করার কাজ পরিহার করার ব্যাপারে এ গ্রন্থের কোন জুড়ি নেই।
ইমাম নববী (র) ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থের অনন্য গুণাবলীর বিস্তারিত বিবরণ প্রদানের পর আরও বলেন,
اِنَّهُ إمَامٌ لاَيَلْحَقُهُ مَنْ بَعْدَ عَصْرِهِ وَقَلَّ مَنْ يُسَاوِيْهِ بَلْ يُدانِيْه مِنْ أهْلِ دَهْرِه
-‘তিনি এমন ইমাম যে, তাঁর পরবর্তী যুগের কোন হাদীস বেত্তাই তাঁর সমক হতে পারেননি। তাঁর যুগের কেউই তাঁর সমপরিমাণের বরং তাঁর কাছাকাছি মর্যাদায়ও উপনীত হতে পারেননি।’
পেশা
তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। ইব্নুল-‘ইমাদ হাম্বলী বলেন, নায়সাপূরের হিমস নামক স্থানে তাঁর হোটেল বা সরাইখানার ব্যবসা ছিল। মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদুল ওয়াহ্হাব ফাররা বলেন, তিনি বস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন।
ইমাম মুসলিম (র)-এর অবদান
ইমাম মুসলিম (র) হাদীস শাস্ত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করেছেন। এছাড়া জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গ্রন্থ রচনা ও সংকলন করেও অবদান রেখে গেছেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর অধিকাংশই হাদীস শাস্ত্র স¤পর্কিত। তাঁর রচিত কিছু কিছু গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি আকারেই রয়ে গিয়েছে। আর কিছু কিছু গ্রন্থ মুদ্রিত হয়েছে। এ সম্পর্কে ‘আবদুল হামীদ সিদ্দীকী বলেন, ওসধস গঁংষরস যধং ঃড় যরং পৎবফরঃ সধহু ড়ঃযবৎ াধষঁধনষব পড়হঃৎরনঁঃরড়হং ঃড় ফরভভবৎবহঃ নৎধহপযবং ড়ভ ঐধফরঃয ষরঃবৎধঃঁৎব, ধহফ সড়ংঃ ড়ভ ঃযবস ৎবঃধরহ ঃযবরৎ বসরহবহপব বাবহ ঃড় ঃযব ঢ়ৎবংবহঃ ফধু. অসড়হমংঃ ঃযবংব করঃধন-ধষ-গঁংহধফ ধষ-কধনরৎ অষধ-ধষ জরলধষ ঔধসর, কধনরৎ, করঃধন-ধষ-অংসধ ডধষ কঁহধ, করঃধন-ধষ-ওষধষ, করঃধন-ধষ-ডরলফধহ ধৎব াবৎু রসঢ়ড়ৎঃধহঃ.
নিুে তাঁর অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হ’ল,
১. আল-কিতাব আস্-সহীহ (اَلْكِتَابُ الصَّحِيْحُ)
এ গ্রন্থটি সংকলন করে ইমাম মুসলিম (র)-এর বিশ্ববিখ্যাত ‘মুহাদ্দীস’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এর প্রসিদ্ধ নাম (صَحِيْحُ مُسْلِمِ) সহীহ্ মুসলিম। ইমাম মুসলিম (র)-এর সংকলিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে ‘আস্-সহীহ’ সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। এটি হাদীস শাস্ত্রের অনবদ্য ও অনন্যসাধারণ একটি গ্রন্থ। ইমাম মুসলিম (র) গ্রন্থটি ২৫০ হিজরী সালে সংকলন করেন। সমগ্র উম্মত এ গ্রন্থটি সাদরে গ্রহণ করেছে। হাদীস শাস্ত্রবিদ এবং সাধারণ হাদীস-পাঠক নির্বিশেষে সকলের নিকট গ্রন্থটি অতি সমাদৃত। গ্রন্থকারের যুগ থেকে অদ্যাবধি সকলেই এ গ্রন্থটি অতিমূল্যবান, বিশুদ্ধ ও উপকারী হাদীস গ্রন্থ হিসেবে এর পঠন-পাঠনে নিয়োজিত রয়েছে। মুহাদ্দিসগণের নিকট এটি ‘আস্-সহীহ’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায়-এর নামকরণ করা হয়েছে, ‘সহীহ মুসলিম’ (صَحِيْحُ مُسْلِمِ)। গ্রন্থটি যদিও ‘সহীহ’ নামে প্রসিদ্ধ কিন্তু তার যুগে এটি আল-মুসনাদ (المسند) নামে অভিহিত হত। স্বয়ং ইমাম মুসলিম (রা) বলেন, مَاوَضَعْتُ شيأً فِىْ كِتَابِىْ هَذا الْمُسْنَدِ اِلاَّ بِحُجَّةٍ، وَمَا أسْفَلْتُ مِنْهُ شَيْأً اِلاَّ بِحَجَّةٍ
-‘আমি আমার এ মুসনাদ গ্রন্থে যা উপস্থাপন করেছি তা দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে করেছি। আর এ গ্রন্থে যা সন্নিবেশিত করিনি তাও প্রমাণের ভিত্তিতেই করেছি’।
ইমাম মুসলিম (র)-এর পূর্বে হাদীসের যে সকল গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে, সেগুলোর সকল হাদীস সহীহ নয়। সংকলক যে সকল হাদীস লাভ করেছেন সেগুলোর বর্ণনাকারীগণের যাচাই এবং র্জাহ-তা‘দীল ছাড়াই তাঁরা আপন আপন গ্রন্থে হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন। ফলে তাঁদের গ্রন্থে সন্নিবেশিত সহীহ হাদীস সমূহ য‘ঈফ হাদীসের সাথে সংমিশ্রিত হয়ে পড়ে। সর্বপ্রথম ইমাম বুখারী (র) এবং ইমাম মুসলিম (র) সহীহ হাদীস সম্বলিত দু’টি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তাঁরা নির্দিষ্ট শর্ত এবং নিয়ম-নীতির আলোকে তাঁদের গ্রন্থে হাদীস উপস্থাপন করেন। এেেত্র ইমাম বুখারী (র) ইমাম মুসলিম (র)- এর অগ্রগামী ছিলেন। তাঁদের এ গ্রন্থদ্বয় কুর’আন মাজীদের পর সর্বাধিক সহীহ গ্রন্থ। স্বয়ং ইমাম মুসলিম (র) নিজই তাঁর ‘সহীহ মুসলিম’ সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, لَوْ اَنَّ أهْلَ الْحَدِيْثِ يَكْتُبُوْنَ الْحَدِيْثَ مِّئَتَىْ سَنَةٍ، فَمَدَارُهُمْ عَلى هذا "الْمُسْنَدٍ" -‘হাদীসবিদগণ যদি দু’শত বছর ধরেও হাদীস লিপিবদ্ধ করতে থাকেন, তবুও তাঁদের এই ‘মুসনাদ’ গ্রন্থটির ওপরই নির্ভর করতে হবে’।
‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থ প্রণয়নের েেত্র ইমাম মুসলিম (র)-এর অনুসৃত শর্ত
ইমাম মুসলিম (র) ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থ প্রণয়নের েেত্র বিশেষ কিছু শর্তারোপ করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায় তিনি তার গ্রন্থে সহীহ হাদীসই সন্নিবেশিত করেছিলেন। তিনি তাঁর মুকাদ্দামায় বলেন,
সহীহ বর্ণনা এবং রুগ্ন বর্ণনা সমূহের মধ্যে পার্থক্য করা ওয়াজিব।
বিশ্বস্তরাবী এবং তিরস্কৃত রাবীকে চিহিৃত করা ওয়াজিব।
যে হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ এবং বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত ও নিরাপদ সে হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস বর্ণনা করা যাবে না।
ভৎসিত এবং বিদ‘আতী রাবীর বর্ণনা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
তিনি তার এ বক্তব্যের পে কুর’আন ও হাদীস থেকে দলীল উল্লেখ করেছেন।
সহীহ অল্প হাদীসের ওপর নির্ভরশীল হওয়া অধিক রুগ্ন হাদীস গ্রহণ করা থেকে উত্তম।
হাকিম আন্-নায়শাপূরী (র) বলেন, সহীহ গ্রন্থ প্রণয়নে ইমাম মুসলিম (র)-এর শর্ত হচ্ছে, ‘তিনি তার গ্রন্থে শুধু এমন হাদীসই গ্রহণ করবেন যা দু’জন তাবি‘ঈ, দু’জন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন এবং প্রত্যেক স্তরেই রাবীর নূন্যতম সংখ্যা দু’জন হবেন’। হাফিয যাহাবী (র) বলেন, ‘হাকিমের এ দাবী সম্পর্কে আবূ ‘আলী আল-জায়্যানী বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, ঐ সাহাবী অথবা তাবি‘ঈ এমন হবে যার থেকে দু’জন রাবী রিওয়ায়াত করে থাকেন। আর এরই মাধ্যমে তিনি অপ্রশিদ্ধকার বলয় থেকে বের হয়ে আসেন’। অর্থাৎ তিনি এমন রাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করবেন যিনি একজন প্রসিদ্ধ রাবী, অপ্রসিদ্ধ নন।
আস্-সহীহ-এর হাদীসের বিশুদ্ধতা
সমগ্র উম্মত ‘সহীহ মুসলিম’ কে বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, সহীহ গ্রন্থদ্বয়ের হাদীস নবী করীম (সা)-এর হাদীস। আবূ ইসহাক ইবরাহীম ইব্ন মুহাম্মাদ ইস্পারায়ীন (মৃত ৪১৮ হিজরী) বলেন, ‘হাদীস অভিজ্ঞ মনীষীগণ একমত যে, সহীহ গ্রন্থদ্বয়ের সন্নিবেশিত হাদীস সমূহ অকাট্যভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাদীস হিসেবেই প্রমাণিত। কোন কোন হাদীস সম্পর্কে মতপার্থক্য থাকলেও বর্ণনা পরম্পরায় এবং রাবীগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটা হাদীসের মতনের েেত্র কোন প্রভাব সৃষ্টি করেনি। ইব্ন কাসীর (র) বলেন, صَاحِبُ الصَّحِيْحِ الَّذِيْ هُوَ تِلْوُ صَحِيْحِ الْبُخَارِيِّ عِنْدَ أكْثَرِ الْعُلَمَاءِ -‘ইমাম মুসলিম (র) ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থের প্রণেতা, যেটি অধিকাংশ ‘আলিমের মতে ইমাম বুখারী (র)-এর সহীহ গ্রন্থের পরবর্তী স্থানে অভিষিক্ত’। আবূ ‘আলী আন্-নায়শাপূরী (র) বলেন, مَا تَحْتَ أدِيْمِ السَّمَاءِ كِتَابٌ أصَحُّ مِنْ كِتَابِ مُسْلِم بْنِ الْحَجَّاج فِيْ عِلْمِ الْحَدِيْثِ -‘হাদীস শাস্ত্রে আকাশের নিচে মুসলিম ইবনুল-হাজ্জাজের কিতাব অপো অধিক বিশুদ্ধ কোন গ্রন্থ নেই’। উৎ. গঁযধসসধফ তঁনধুৎ ঝরফফয়র বলেন, ঞযব সড়ংঃ রসঢ়ড়ৎঃধহঃ ড়ভ ঃযরং ড়িৎশং রং যরং ঝধযরয যিরপয যধং নববহ ৎবমধৎফবফ রহ পবৎঃধরহ ৎবংঢ়বপঃং ধং ঃযব নবংঃ ড়িৎশ ড়হ ঃযব ংঁনলবপঃ.
সহীহ মুসলিম গ্রন্থটি ১২৬৫ হিজরী সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মিসর, বৈরূত, ভারত, ইসতাম্বুল, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বহু দেশে মুদ্রিত হয়েছে।
বিভিন্ন যুগের ও কালের বিশিষ্ট বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও হাদীস বিশ্লেষণকারীগণের দৃষ্টি সহীহ মুসলিম-এর প্রতি নিবদ্ধ হয়। তাঁরা এ গ্রন্থের ব্যাখ্যা, টীকা-টিপ্পনী, সংপ্তি করণ, কঠিন কঠিন শব্দের বিশ্লেষণ, রিজাল বা রাবীগণের জীবনী ও পর্যালোচনা মূলক গ্রন্থ প্রণয়নে ব্রতী হন। সহীহ মুসলিম-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থের সংখ্যা ৬০-এর ঊর্ধে। এর অধিকাংশই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মহী উদ্দীন ইব্ন শারফ আন্-নববী (র) (৬৩১- ৬৭৭ হিজরী/১২৩৩-১২৭৮ খ্রীষ্টাব্দ)-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থটি। এ শারহটি লèৌ, দিল্লী, মিসর, বৈরুত সহ প্রভৃতি দেশ থেকে বহুবার মুদ্রিত হয়েছে। ভারত থেকে মুদ্রিত ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থটির পাদটীকায় এ শহরটি দু’ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি মিসরের মাকতাবাতুল ঈমান আল-মানসূরাহ্ থেকে ৯ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।
২. কিতাবুল-কুনা ওয়াল-আস্মা (كِتَابُ الْكُني وَالأَسْمَاءِ)
ইবনুল-জাওযী ও শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী কিতাবটির নাম كِتَابُ الأَسَامِيْ وَالْكُنيا বলে উল্লেখ করেছেন। ইব্ন নাদীম (মৃত ৩৮৫ হিজরী/৯৯৫ খ্রীষ্টাব্দ) শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী ও জালালুদ্দীন আস্-সুয়ূতী (৮৪৯-৯১১ হিজরী/১৪৪৫-১৫০৫ খ্রীষ্টাব্দ) এ গ্রন্থটির নাম الأَسْمَاءُ وَالْكُنيا বলে উল্লেখ করেছেন। এ গ্রন্থে ইমাম মুসলিম (র) এমন সব রাবীর নাম বর্ণনা করেছেন যাঁরা ‘কুনয়াত’ বা উপনামে প্রসিদ্ধ রয়েছেন। আবার যে সকল রাবী নামে প্রসিদ্ধ আছেন, তিনি এতে তাঁদের ‘কুনয়াত’ বর্ণনা করেছেন। কেননা রাবী কখনও নামে, কখনও ‘কুনয়াত’ কখনও ‘লকব’- উপাধিতে উল্লিখিত হয়ে থাকেন। তিনি একই ব্যক্তি, ভুল বশতঃ দুই জন বলে প্রতীয়মান হয়ে থাকে। এ গ্রন্থের একটি হস্ত লিখিত কপি দিমাশকের ‘মাকতাবাতু’য্-যাহিরিয়্যাহ’-এ সংরতি আছে। এটি হিজরী পঞ্চম শতাব্দীতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য রাসাইলসহ এটি এক খণ্ডে সমাপ্ত। এর ক্রমিক সংখ্যা (কল নং) مجموع-১ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা-৪৩-১০৪। এর অপর একটি হস্তলিপি ভারতের ‘পাটনা’ লাইব্রেরীতে এবং তৃতীয় কপি তুরষ্কের ‘মাকতাবাহ শহীদ’-এ সংরতি আছে।
৩. আল-মুনফারাদাত-ওয়াল-ওয়াহ্দান (اَلْمُنْفَرَدَاتُ وَالْوَحْدَانُ (فِيْ رُوَاةِ الْحَدِيْثِ)
যে সকল রাবী থেকে শুধু একটি হাদীস বর্ণিত আছে, ইমাম মুসলিম (র) তাঁর এ গ্রন্থে সে সব রাবীর বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। সাহাবী এবং সাহাবীগণের পরবর্তী স্তরের রাবীগণের বর্ণনাও এতে স্থান লাভ করেছে। যেমন মুসায়্যাব (রা) থেকে শুধু একটি হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি তাঁর থেকে তাঁর পুত্র সা‘ঈদ (রা) বর্ণনা করেছেন। এ গ্রন্থটি ভারতের হায়দারাবাদ থেকে ১৩২৩ হিজরী সালে মুদ্রিত হয়েছে। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৪। এর সাথে ইমাম বুখারীর اَلضُّعَفَاء الصَّغِيْر এবং ইমাম নাসাঈ‘ (র)-এর اَلضُّعَفَاءُ وَالْمَتْرُوْكِيْن গ্রন্থটিও মুদ্রিত হয়।
৪. কিতাবুত্-তাময়ীয (كِتَابُ التَّمِيْيرُ)
এ গ্রন্থের একটি হস্তলিপি কপি ‘আয্-যাহিরিয়্যাহ্’ গ্রন্থাগারে সংরতি আছে। এর ক্রমিক নম্বর (কল নং)- ১১ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ১-১৫। এটি হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তবে শেষ অংশটি অস¤পূর্ণ। এর বহির্গিলাপে লিপিবদ্ধ আছে, اَلْجُزْءُ الأَوَّلُ مِنْ كِتَابِ التَّمِيْيْزِ لِمُسْلِمٍ তবে اَلتَّمِيْيْزُ শব্দের ((زا)) অরটি ব্যতীত ‘অন্য অরগুলো ¯পষ্ট নয়। সমকালীন জনৈক কপিকারী শব্দটি উপলদ্ধি করতে না পেরে ভুল বশতঃ এর শিরোনাম লেখে রাখেন, ((رِسَالَةُ فِيْ الْمُصْطَلَحِ))
ইমাম মুসলিম (র)-এ গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে-এর ভূমিকায় বলেন, তোমার প্রতি আল্লাহ্র করুণা বর্ষিত হোক। তুমি উল্লেখ করেছ যে, এমন একদল লোক রয়েছে, যারা হাদীস বিশেষজ্ঞগণের মন্তব্য اهذَا حَدِيْثٌ خَطَأٌ اهذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ এটি ভুল হাদীস, এটি সহীহ হাদীস)-কে অস্বীকার করে থাকে। তুমি আরও উল্লেখ করেছ যে, তারা এ ধরণের মন্তব্যকে ভীষণ আকারে দেখে এবং এটাকে পূর্বসূরী পূণ্যবান ব্যক্তিগণের ‘গীবত’ বলে আখ্যায়িত করে। এমনকি তারা বলে, যে ব্যক্তি সঠিক বর্ণনা থেকে ভুল বর্ণনা পার্থক্য করার দাবী উত্থাপন করে তারা তাকে এমন বস্তুর জ্ঞান লাভের প্রতি লালায়িত মনে করে যে বস্তুর জ্ঞান তার নেই। আর তারা তাকে গায়বের জ্ঞানের দাবীদার মনে করে, যে গায়ব পর্যন্ত তার পৌঁছার মতা নেই।
অতঃপর, মানুষ যা মুখস্ত করে থাকে এ মুখস্ত বস্তু সংরণের েেত্র তারা পর¯পর ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাদের কেউ কেউ নির্ভরশীল হাফিয, আর কেউ কেউ হাদীস মুখস্ত রাখার বিষয়ে অলস, সংরণের েেত্র সন্দেহভাজন অথবা অপরের নিকট থেকে শুনে তার হিফয সংমিশ্রিত হয়ে পড়ে এবং অন্যের নিকট বর্ণনার সময় পার্থক্য করতে সম হয় না।
৫. রিজালু ‘উরওয়াতিব্নি’য্-যুবায়র (رِجَالُ عُرْوَةِ بْنِ الزُّبَيْر)
‘আয্-যাহিরিয়্যাহ’-কুতুব খানায় এ গ্রন্থের একটি কপি সংরতি আছে। এর ক্রমিক নম্বর (কল নং) مجموع ৫৫/১১ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩৯-১৪৭। এটি ৪৬৩ হিজরী সালে খতীব বাগদাদীর হস্তে লিখিত।
৬. কিতাবু’ত্-তাবাকাত (كِتَابُ الطَّبَقَاتِ)
এ গ্রন্থে ইমাম মুসলিম (র) রাসূলুল্লাহ (স)-এর এমন সাহাবীগণের বর্ণনা করেছেন, যাঁরা রাসূলুল্লাহ (স)-কে দেখেছেন এবং তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ গ্রন্থের একটি কপি তুরষ্কের ‘আহ্মদ আস্-সালিস্’ গ্রন্থগারে সংরতি আছে। এর ক্রমিক সংখ্যা ৬২৪/২৬ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা (কল নং)-২৭৯-২৯৭। এটি ৬২৮ হিজরী সালে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
ইমাম মুসলিম (র)-এর রচিত ও সংকলিত আরও যে সকল গ্রন্থের নাম জানা যায় তার একটি তালিকা নিুে প্রদান করা হ’লঃ
১. আল-মুসনাদুল কাবীর ‘আলা আসমাইর-রিজাল (اَلْمُسْنَدُ الْكَبِيْرُ عَلى اَسْمَاءِ الرِّجَالِ) ।
২. আল-জামি‘উল-কাবীর ‘আলাল-আবওয়াব (ألْجَامِعُ الْكَبِيْرُ عَلَى الأَبْوَابِ) ।
৩. আল-‘ইলাল (اَلْعِلَلْ) ।
৪. আল-ওহ্দান (كتاب اَلْوُحْدَانِ) ।
৫. হাদীসে ‘আমর ইব্ন শু‘আইব (حَدِيْثُ عَمَرِو بْنِ شُعَيْبٍ) ।
৬. মাশাইখু মালিক (مَشَايِخُ مَالِكِ) ।
৭. মাশাইখুস্-সাওরী (مَشَايِخُ الثَّوْرِى) ।
১০. লাইসা লাহু ইল্লা রাবীন ওয়াহেদ (لَيْسَ لَهُ إِلاَّ رَاوٍ وَاحِدْ) ।
১১. যিকর আওহামিল-মুহাদ্দিসীন (ذِكْرُ اَوْهَامِ الْمُحَدِّثَيِنَ) ।
১২. তাবাকাতুত্-তাবি‘ঈন (طَبَقَاتُ التَّابِعِيْن) ।
১৩. আল-মুখাদরামীন (اَلْمُخَضْرَمِيْن) ।
১৪. আল-আফরাদ (الأفْراَدُ) ।
১৫. আল-আকরান (الأقْرانُ) ।
১৬. মাশাইখ শু‘বাহ مَشَايِخُ شُعْبَةَ)) ।
১৭. আওলাদুস্-সাহাবাহ (أوْلاَدُ الصَّحَابَةِ) ।
১৮. আফরাদুশ্-শামীইন (اَفْرَادُ الشَّامِيِيِّنْ) ।
১৯. আল-ইনতিফা‘ বি ওহুŸিস্-সিবা‘ (الإنْتِفَاعُ بِأُهُبِ السِّبَاعِ) ।
২০. জানাইযু ইস্তিতরাদান (اَلْجَنَائِزُ اِسْتِطَرَادَا) ।
২১. মুসনাদু হাদীসি মালিক (مُسَنَدُ حَدِيْثِ مَالِكْ)।
২৩. সুওয়ালাতু আহমাদ ইব্ন হাম্বল (سُؤَا لاَتُ اَحْمَدُ بْن حَنْبَلْ) ।
২৪. তাফযীলুস্-সুনান (تَفْضِيْلُ السُّنَنْ)
২৫. কিতাবুল-মা‘রিফাহ (كِتَابُ الْمَعْرِفَةِ) ।
২৬. রুওয়াতুল-ই‘তিবার (رُوَاةُ الإِعْتِبَارِ)।
২৭. কিতাবু-তাফদীলিস্-সুনান (كِتَابُ تَفْضِيْلِ السُّنَنْ) ।
২৮. কিতাবুল-ওখওয়াত (كِتَابُ الأُخْوَةِ) ।
২৯. কিতাবুল-ইনতিফা‘ বিজুলূদিস্-সিবা‘ (كِتَابُ الإِنْتِفَاعْ بِجُلُوْدِ السِّبَاع) ।
৩০. কিতাবুল-মুফরাদ (كِتَابُ الْمُفْرَدْ) ।
৩১. কিতাবুত্-তারীখ (كِتَابُ التَّارِيْخْ) ।
উপসংহার
পরিশেষে একথা বলা যায় যে, ইমাম মুসলিম (র) হাদীস জগতের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। জ্ঞানের এক আলোক-দীপ্ত পরিবেশে তিনি লালিত পালিত হন। অল্প বয়সেই হাদীস অন্বেষণ শুরু করেন। এমনকি পরিণত বয়সেও হাদীস সংগ্রহ থেকে বিরত থাকেননি। তিনি ছিলেন সত্যানুরাগী এবং ন্যায়ের েেত্র বজ্রকঠোর। ল ল হাদীস যাছাই-বাছাই করে তিনি সংকলন করেছেন এক অনবদ্য ও বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ ‘আস্-সহীহ মুসলিম’। যদিও এটিই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান, কিন্তু এর পাশাপাশি তাঁর রয়েছে আরও অনেক গ্রন্থ। কিন্ত গ্রন্থগুলো পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর। তাঁর জীবন ইতিহাস আমাদের প্রেরণার উৎস এবং তাঁর কালজয়ী গ্রন্থাবলী মুসলিম উম্মার দিকদিশারী।
নাম ও বংশ
তাঁর নাম মুসলিম , উপনাম আবূল হুসাইন, উপাধি ‘আসাকিরুদ্দীন। পিতার নাম আল-হাজ্জাজ। তাঁর বংশ তালিকা এই, মুসলিম
ইব্নুল-হাজ্জাজ ইব্ন মুসলিম ইব্ন ওয়ারদ ইব্ন কুশায আল-কুশাইরী আন-নায়সাপুরী ।
জন্ম ইমাম মুসলিম ২০২ হিজরী মুতাবেক ৮১৭ খ্রীষ্টাব্দে খুরাসানের প্রসিদ্ধ শহর নায়সাপূর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ইব্ন কাসীর (র) (৭০০-৭৭৪ হিজরী/১৩০২-১৩৭২ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, ‘ইমাম শাফি‘ঈ (র)-এর ইন্তিকালের বছর ইমাম মুসলিম (র) ২০৪ হিজরী সালে জন্মগ্রহণ করেন। এ সম্পর্কে হাফিয শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী (মৃত ৭৪৮ হিজরী/১৩৪৭ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, وُلِدَ سَنَةَ أرْبَعٍ وَّمِائَتَيْنِ. -‘তিনি ২০৪ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন’।
অধিকাংশ রিজাল শাস্ত্রবিদ তাঁর মৃতকাল ২৬১ হিজরী এবং বয়স ৫৫ বৎসর উল্লেখ করেছেন। এই হিসেবে তাঁর জন্মকাল ২০৬ হিজরী হওয়াই সঠিক ও অধিক যুক্তিযুক্ত। ইব্নুল-আসীর (৫৫৫-৬০৬ হিজরী/১১৬০-১২৩২ খ্রীষ্টাব্দ)-এর মতে وُلِدَ سَنَةَ سِتٍّ وَمِائَتَيْن -‘তিনি ২০৬ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন’। ইব্ন খাল্লিকান (৬০৮হিজরী/১২১১ খ্রীষ্টাব্দ-৬৮১ হিজরী/১২৭৪ খ্রীষ্টাব্দ) ইমাম মুসলিম (র)-এর জন্ম ২০৬ হিজরী সাল বলে উল্লেখ করেছেন। এ দিক থেকে ২০৬ হিজরী সাল মতটিই অধিক বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য। এ সম্পর্কে ঞযব ঊহপুপষড়ঢ়ধবফরধ ঙভ ওংষধস গ্রন্থে বলা হয়েছে, গঁংষরস ই. অষ-ঐধফলধল অনঁষ ঐঁংংধরহ অষ-কঁংযধরৎর অষ-ঘরংধনঁৎর ডধং ইড়ৎহ অঃ ঘরংধনঁৎ ওহ ২০২ (৮১৭) ঙৎ ওহ ২০৬ (৮২১). -‘মুসলিম ইব্নুল হাজ্জাজ আবুল হুসাইন আল-কুশায়রী আন্-নায়সাপূরী ২০২ হিজরী/৮১৭ খ্রীষ্টাব্দে অথবা ২০৬ হিজরী/৮২১ খ্রীষ্টাব্দে নায়সাপূরে জন্মগ্রহণ করেন’।
জন্মস্থান ইমাম মুসলিম (র) নায়সাপূর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এটি খুরাসানের একটি প্রসিদ্ধ শহর। এখানে শত শত ‘আলিম ও জ্ঞানীব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন। ইয়া‘কূত আল-হামাভী (৫৭৪-৬২৬ হিজরী/১১৭৮-১২২৯ খ্রীষ্টাব্দ) নায়সাপূর সম্পর্কে বলেন,
وَهِىَ مَدِيْنَةٌ عَظِيْمَةٌ ذَاتُ فَضَائِلٍ جَسِيْمَةٍ، مَعْدنُ الْفُضَلاَءِ، وَمَنْبَعُ الْعُلَمَاءِ، لَمْ أَرَ فِيْمَا طَوَّفْتُ مِنَ الْبِلاَدِ مَدِيْنَةً كَانَتْ مِثْلُهَا.
-‘এটি একটি বিরাট এবং মহা মর্যাদা সম্পন্ন শহর। এটি সম্মানিত ব্যক্তিগণের খনিস্বরূপ। জ্ঞানী ও ‘আলিম ব্যক্তিগণের ঝর্ণাধারা স্বরূপ। আমি যত শহর ভ্রমণ করেছি, এর অনুরূপ কোন শহর প্রত্য করিনি’।
এ শহরের অপর নাম ‘আরব শহর। এর প্রশংসায় জনৈক কবি বলেন,
لَيْسَ فِىْ الأرْضِ مِثْلَ نَيْسَابُوْر & بَلَدٌ طِيِّبٌ وَرَبٌّ غَفُوْرٌ
-‘নায়সাপূরের মত ভূমণ্ডলের কোন উত্তম শহর নেই। আর মহান আল্লাহ প্রতিপালক এবং মাশীল’।
বাল্যকাল ইমাম মুসলিমের বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তবে বাল্যকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও বিদ্যানুরাগী ছিলেন। তিনি ছোট বেলাতেই পবিত্র কুর’আন হিফ্য করেছেন। ইমাম মুসলিম তাঁর পিতা-হাজ্জাজ এবং নায়সাপূরের অন্যান্য ‘আলিমগণের নিকট থেকে শিা অর্জন করেছেন। সে সময়ে নায়সাপূর ছিল জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর ঘরের ও বাইরের পরিবেশ ছিল জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান বিতরণের অনন্য পরিবেশ। তাঁর পিতা ছিলেন একজন হাদীস বিশারদ।
ইব্ন ‘আসাকির (মৃত ৫৭১ হিজরী/ ১১৭৬ খ্রীষ্টাব্দ) ইমাম মুসলিম (র)-এর শিষ্য-মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদিল-ওয়াহ্যাব আল-ফাররা থেকে বর্ণনা করেন, وَكَانَ أبُوْهُ اَلْحَجَّاجُ بنُ مُسْلِمٍ مِنْ مَشِيْخَةِ أبِىْ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا. -‘ইমাম মুসলিমের পিতা হাজ্জাজ ইব্ন মুসলিম আমার পিতার অন্যতম শায়খ ছিলেন।’
শিক্ষা জীবন ইমাম মুসলিম শৈশবে পিতা-মাতার øেহ-মমতায় প্রতিপালিত হন। তাঁদের নিকটেই তার প্রাথমিক শিা আরম্ভ হয়। শৈশবেই তিনি অসাধারণ মেধাবী, চরিত্রবান ও বিনম্র স্বভাবের বালক হিসাবে সহপাঠী ও বাল্যসাথীদের মাঝে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি কিশোর বয়সেই হাদীস শিা শুরু করেন। তিনি মাতৃভূমি নায়সাপূরে প্রথম হাদীস শ্রবণ ও সংগ্রহের সূচনা করেন। সাথে সাথে তাফসীর, ইতিহাস ও অন্যান্য ইসলামী বিষয়ও অধ্যয়ন করতে থাকেন। এই বিদ্যাপীঠেই তিনি সর্বপ্রথম ২১৮ হিজরী/ ৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে হাদীসের দারসে উপস্থিত হয়ে হাদীস শ্রবণ করতে আরম্ভ করেন। তখন এ শিা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন তৎকালীন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইমাম আয্-যুহ্লী। তাঁর নিকট থেকে ইমাম মুসলিম মনোযোগ সহকারে হাদীস শিা লাভ করতে থাকেন। শিকমণ্ডলীর নিকট থেকে হাদীস শ্রবণের পরে সাথে সাথেই তিনি শ্র“ত সমস্ত হাদীস লিখে রাখতেন। লেখা শেষ হলে তিনি সহপাঠীদের বৈঠকে হাদীস সমূহ পুনরালোচনা করতেন। ফলে অতি অল্প সময়ে হাদীস শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য লাভে সম হন।
ইমাম যুহ্লীর মজলিস ত্যাগ ইমাম বুখারী (র) যখন নায়সাপূরে উপস্থিত হন, তখন ইমাম মুসলিম (র) তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ‘ইলমে হাদীসে তাঁর অফুরন্ত জ্ঞানভাণ্ডার হতে তিনি (মুসলিম) জ্ঞান আহরণ করতে লাগলেন। এদিকে ইমাম বুখারী নায়সাপূরে এসে হাদীসের দারস দিতে শুরু করলে অন্যান্য মুহাদ্দিসগণের দারস শিার্থী শূন্য হয়ে পড়ে। কারণ শিার্থীরা ইমাম বুখারীর দারসে বসতে শুরু করেন। এমনকি বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম যুহ্লীও (মৃত ২৫৮ হিজরী) নিয়মিত ইমাম বুখারীর দারসে উপস্থিত হয়ে হাদীস শ্রবণ করেন। অন্যান্য মুহাদ্দিসের দারস শিার্থী শূন্য হওয়ায় হিংসুকরা ইমাম বুখারীর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করে। ইতোমধ্যে خَلْقُ الْقُرْآنِ (কুর’আন সৃষ্ট কি-না) সম্পর্কিত মাস’আলায় ইমাম বুখারী ও ইমাম যুহ্লীর মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। ইমাম মুসলিম ইমাম বুখারীর পাবলম্বন করেন। যুহ্লী ইমাম বুখারীর বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করে এবং লোকজনকে বুখারীর নিকটে যেতে নিষেধ করে। যাতে ইমাম বুখারী নাইসাপূর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। মুসলিম (র) ব্যতীত অধিকাংশ লোক তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিন্তু ইমাম মুসলিম নিয়মিত ইমাম বুখারীর সাথে সাাৎ করতে থাকেন। ইমাম যুহ্লীর নিকটে এই খবর পৌঁছল যে, মুসলিম (র) তাঁর পূর্বের মতের উপরেই অটল আছেন। যদিও এ কারণে তিনি হিজায ও ‘ইরাকে তিরষ্কৃত হয়েছেন কিন্তু তিনি স্বীয় মত পরিবর্তন করেননি।
একদিন ইমাম মুসলিম (র) যুহ্লীর দারসে অন্যান্য শিার্থীদের সাথে উপস্থিত হয়ে হাদীস শুনছিলেন। ইমাম যুহ্লী তাঁর দারসের শেষ পর্যায়ে সহসা ঘোষণা করেন, اِلاَّ مَنْ قَالَ بِاللَّفْظِ فَلاَ يَحِلُّ لَهُ اَنْ يَحْضُرَ مَجْلِسَنَا -‘যে ব্যক্তি কুর’আনের শব্দ সৃষ্ট বলে, আমাদের মজলিসে উপস্থিত হওয়া তার জন্য সমীচীন নয়।’ এ কথা শ্রবণের সাথে সাথে ইমাম মুসলিম স্বীয় চাদরটি তাঁর পাগড়ির উপর উঠিয়ে দিয়ে (মুখ ঢেকে) মজলিস ত্যাগ করেন। বাড়ী ফিরে এসে যুহ্লীর নিকট থেকে শ্র“ত ও গৃহীত হাদীসের সমস্ত পাণ্ডুলিপি উটের পিঠে করে ফেরৎ পাঠান।
হাদীস শিাkkha এবং হাদীস অন্বেষণে ভ্রমণ
ইমাম মুসলিম (র) কিশোর বয়সেই হাদীস শিা শুরু করেন। তিনি মাতৃভূমী নায়সাপূরে প্রথম হাদীস শ্রবণ ও সংগ্রহের সূচনা করেন। তাঁর শিকবৃন্দ ছোট বেলা থেকেই তাঁর মধ্যে তীè স্মরণ শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা এবং অনুপম চরিত্র-মাধুর্য দেখতে পান। এ সম্পর্কে তাঁর কিছু কিছু শিকের মন্তব্য উল্লেখযোগ্য।
হাফিয ইসহাক ইব্ন ইবরাহীম ইব্ন রাহ্ওয়ায়হ্ (মৃত ২৩৮ হিজরী) বলেন, اَىُّ رَجُلٍ كَانَ هَذا؟ -‘ভবিষ্যতে এ কেমন ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে?’ ইসহাক ইব্ন মানসূর ইব্ন বিহারাম আল-কাওসাজ (মৃত ২৫১ হিজরী) তাঁর সম্পর্কে বলেন, لَنْ نُعْدَمَ الْخَيْرَ مَا اُبْقَاكَ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ -‘আল্লাহ্ তা‘আলা যতদিন তোমাকে মুসলমাগণের জন্য জীবিত রাখবেন, ততদিন আমাদের থেকে কল্যাণ রহিত হবে না।’
মুসলিম (র) ছিলেন হাদীস শাস্ত্রের একজন বিজ্ঞ ও প্রসিদ্ধ ইমাম এবং হাদীসের হাফিয ও দ সংরক। হাদীস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ভ্রমণ করেছেন। বিশেষ করে ইসলামী বিশ্বের যেসব শহর ‘ইলমুল হাদীস শিার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল, সেসব শহর ছিল তাঁর দীর্ঘ সফরের আওতায়। তিনি খুরাসান, ‘ইরাক , হিজায, শাম ও মিসর ভ্রমণ করেন।
এছাড়া ‘আরবের মক্কা , মদীনা , ও রায় সহ প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেন এবং এসব স্থানের বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেছেন।
ঐতিহাসিক এবং জীবনী গ্রন্থ রচয়িতাগণের বর্ণনানুসারে ইমাম মুসলিম (র) সর্বপ্রথম ২১৮ হিজরী সালে হাদীস শ্রবণ করা শুরু করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ১২ বছর। তিনি প্রথম হাদীস শ্রবণ করেন হাফিয ইমাম ইয়াহ্ইয়া ইব্ন ইয়াহ্ইয়া আত্-তামীমী থেকে।
চৌদ্দ বছর বয়সে ২২০ হিজরী সালে ইমাম মুসলিম (র) প্রথম সফরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি বায়তুল্লাহ্র হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে এ সময় খুরাসান থেকে রওয়ানা হন। এ সফরে তিনি হিজাযের মুহাদ্দিসগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। তিনি প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ ইমাম ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মাসলামাহ আল-কা‘নবী (মৃত ২২১ হিজরী/৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দ) (র)-এর সাথে মক্কায় সাাৎ করে তাঁর থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। তিনি এ যাত্রায় কূফার হাফিয আহ্মদ ইব্ন ‘আবদিল্লাহ ইব্ন ইউনুস (মৃত ২২৭ হিজরী/৮৪১ খ্রীষ্টাব্দ) এবং অপর একদল মুহাদ্দিস থেকেও হাদীস শ্রবণ করেন। অতঃপর তিনি তাঁর জন্মভূমি খুরাসানের নায়সাপূরে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি তথাকার হাদীস শাস্ত্রবিদগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ এবং লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। এ ছাড়া নায়সাপূরে যে সকল মুহাদ্দিস এবং হাফিযে হাদীস বাহির থেকে আগমন করেন, তিনি তাঁদের নিকট থেকেও হাদীস সংগ্রহ করতে থাকেন। তিনি এ যাত্রায় খুরাসানের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণ করেন এবং ইয়াহ্ইয়া ইব্ন ইয়াহ্ইয়া নায়সাপূরী (মৃত ২২৬ হিজরী/৮৪০ খ্রীষ্টাব্দ), কুতায়বাহ ইব্ন সা‘ঈদ (মৃত ২৪০ হিজরী/৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দ, ইসহাক ইব্ন রাহওয়াহ (মৃত ২৩৮ হিজরী/৮৫১ খ্রীষ্টাব্দ) এবং বিশর ইব্নুল-হিকাম (মৃত ২২০ হিজরী) থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।
ইমাম বুখারী (র) (মৃত ২৫৬ হিজরী/৮৬৯ খ্রীষ্টাব্দ) নায়সাপূর আগমন করলে ইমাম মুসলিম (র) তাঁকে ওসতাদ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তাঁর নিকট হাদীস বিষয়ক বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার হতে জ্ঞানারোহণ করেন।
ইমাম মুসলিম (র) ২৩০ হিজরী সালের প্রাক্কালে হাদীস অন্বেষণের উদ্দেশ্যে ইসলামী জগতের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্বিতীয়বার ভ্রমণ শুরু করেন।
তিনি রায়-এ মুহাম্মাদ ইব্ন মিহরান আল-জামাল আর-রাযী (মৃত ২৩৯ হিজরী/৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দ), ইব্রাহীম ইব্ন মূসা আল-ফররা (মৃত ২২০ হিজরী), আবূ গাস্সান মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আমর আয্-যুনায়জী আর-রাযী-এর নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। .
তিনি ‘ইরাকের বাগদাদ , কূফা ও বসরা সফর করেন। এসব শহরে তিনি যে সকল মুহাদ্দিস থেকে হাদীস শ্রবণ করেন, তারা হলেন, আহমাদ ইব্ন হাম্বল (মৃত ২৪১ হিজরী/৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দ), ‘ওবায়দুল্লাহ ইব্ন ‘আমর আল-কওয়ারীরী (মৃত ২৩৫ হিজরী/৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দ), খাল্ফ ইব্ন হিশাম আল-বয়যার (মৃত ২২৯ হিজরী), ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ‘আওন আল্-খাররায, সুরায়জ ইব্ন ইউনুস, সা‘ঈদ ইব্ন মুহাম্মাদ আল-হারামী, ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মাসলামাহ আল্-কা‘নবী (মৃত ২২০-১ হিজরী/৮৩৫-৬ খ্রীষ্টাব্দ), আবূর-রাবী‘ আয্-যাহ্রানী, ‘আমর ইব্ন হাফ্স ইব্ন গায়্য়াস, আবূ গাস্সান মালিক ইব্ন ইসমা‘ঈল (মৃত ২১৯ হিজরী/৮৩৪ খ্রীষ্টাব্দ) এবং আহমাদ ইব্ন ‘আবদিল্লাহ ইব্ন ইউনুস। তিনি কয়েকবার ‘ইরাক সফর করেন। সর্বশেষ তিনি ২৫৯ হিজরী/৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে বাগদাদ গমন করেন। ইবনুল-আসীরের মতে সর্বশেষে তিনি ২৫৯ হিজরী সালে বাগদাদ গমন করেন।
তিনি সিরিয়ার যে সকল মুহাদ্দিস থেকে হাদীস শ্রবণ করেন তাঁরা হলেন, মুহাম্মাদ ইব্ন খালিদ আস্-সাকসাকী এবং ওয়ালিদ ইব্ন মুসলিম।
ইমাম মুসলিম (র) হিজাযের ইসমা‘ঈল ইব্ন আবী ’উওয়াইস (মৃত ২২৭ হিজরী) আবূ মুস‘আব আহমাদ ইব্ন আবী বকর আয্-যুহ্রানী (মৃত ২৪২ হিজরী), সা‘ঈদ ইব্ন মানসূর (মৃত ২২৭ হিজরী/৮৪১ খ্রীষ্টাব্দ), মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া ইব্ন আবী ‘ওমার এবং ‘আবদুল-জাব্বার ইবনিল-‘আলা’ থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।
তিনি মিসর সফর করে তথাকার মুহাদ্দিস এবং ফকীহগণের নিকট থেকেও হাদীস সংগ্রহ করেন। তিনি এখানে যে সকল ব্যক্তি থেকে হাদীস শ্রবণ করেন তাঁরা হলেন মুহাম্মাদ ইব্ন রুমহ আত্-তুজীবী (মৃত ২৪২ হিজরী), ‘ঈসা ইব্ন হাম্মাদ, ‘আমর ইব্ন সাওওয়াদ। হারমালা ইব্ন ইয়াহ্ইয়া (মৃত ২৪৪ হিজরী/৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দ), হারূন ইব্ন সা‘ঈদ আল-আয়লী (মৃত ২৫৩ হিজরী), মুহাম্মাদ ইব্ন সালামাহ্ আল-মুরাদী এবং অন্যান্যদের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।
এ সকল সফরে ইমাম মুসলিম (র) যুগশ্রেষ্ঠ হাদীস-বিশারদগণের সাাৎ পেয়েছেন। তাঁদের থেকে হাদীস শ্রবণ করেছেন। তাঁদের সংগৃহীত গ্রন্থ থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি হাদীস বিষয়ক বিভিন্ন জ্ঞান স¤পর্কে ওয়াকিফহাল হয়েছেন। এতে তিনি দুর্বল হাদীস থেকে সরল হাদীস পার্থক্য করার প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। আর এরই ফলশ্র“তিতে ইমাম মুসলিম (র) হাদীসের মজলিস অনুষ্ঠান, হাদীস লিপিবদ্ধ করান, শিষ্যদের হাদীসের তা‘লীম প্রদান এবং গ্রন্থ প্রণয়নের যথাযথ সামর্থ লাভ করেন।
হাদীস অন্বেষণ এবং মুহাদ্দিসগণের শিষ্যত্ব অর্জনের ¯পৃহা ইমাম মুসলিম (র)-এর আজীবন ছিল। তিনি মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া আয্-যুহ্লী (মৃত ২৫৮ হিজরী)-এর মজলিসে উপস্থিত হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২৫০ হিজরী সালের পর আর ইমাম আয্-যুহ্লী (র)-এর মজলিসে গমন করতেন না। ইমাম বুখারী এসময় নায়সাপূরে অবস্থান করছিলেন। ইমাম মুসলিম (র) তখন তাঁর মজলিসে যাতায়াত করতেন। এতে ইমাম আয্-যুহ্লী মনুন্ন হন। এ কারণে তাঁদের মাঝে বৈরিতা সৃষ্টি হয়।
হাদীস অন্বেষণে ইমাম মুসলিম (র)-এর এ সকল ভ্রমণের মধ্যে কোনটি আগে এবং কোনটি পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার ধারাবাহিক বর্ণনা পাওয়া যায় না। তিনি কোন কোন শহরে একাধিকবার সফর করেছেন। যেমন বাগদাদ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সেখানে একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন এবং তথায় হাদীস বর্ণনা করেছেন। বাগদাদে তাঁর সর্বশেষ সফর ছিল ২৫৯ হিজরী সালে।
মুহাদ্দিসগণের জ্ঞানের গভীরতা, ‘ইলমের ব্যাপকতা এবং হাদীস অন্বেষণ ও সংগ্রহের ¯পৃহা তাঁদের শায়খদের আধিক্য, হাদীস বর্ণনায় তাঁদের বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা, বিভিন্ন দেশের অধিবাসী হওয়া এবং ‘ইলমের বিভিন্ন স্তরের দ হওয়ার ওপর নির্ভর করে। ইমাম মুসলিম (র)-এর েেত্র এ সব বৈশিষ্ট্য পূর্ণরূপে পাওয়া যায়। তাঁর শায়খগণ ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আপন আপন শহরের বড় বড় ‘আলিম। তাঁদের কেউ ছিলেন ফিক্হ শাস্ত্রে অভিজ্ঞ আবার কেউ কেউ হাফিয। ইমাম মুসলিম (র) সফরের কষ্ট সহ্য করে বিভিন্ন দেশের ঐ সকল মুহাদ্দিসের নিকট থেকে হাদীস সংগ্রহ করেছেন।
হাফিয আবূল-হাজ্জাজ ইউসুফ ইব্ন ‘আবদির রহমান আল-মিয্যি (মৃত ৭৪২ হিজরী/১২৪১ খ্রীষ্টাব্দ) (র) তাঁর “তাহযীবুল-কামাল ফী আস্মাইর-রিজাল” গ্রন্থে ইমাম মুসলিম (র)-এর শায়খগণের সংখ্যা ২১২ জন বলে উল্লেখ করেছেন। হাফিয শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী (র) তাঁর “সিয়ারু আ‘লামিন্-নুবালা” গ্রন্থে ইমাম মুসলিমের “আস্-সহীহ” গ্রন্থের শায়খগণের সংখ্যা ২১৩ জন বলে উল্লেখ করেছেন। হাফিয যাহাবী (র) ইমাম মুসলিমের শায়খগণের নাম উল্লেখ করার পর তাঁদের সংখ্যা ২২০ জন বলে উল্লেখ করেছেন। যাহাবী (র) ইমাম মুসলিম (র)-এর শায়খগণের এমন তিন জনের নাম নমুনাস্বরূপ উল্লেখ করেছেন, যাঁদের থেকে তিনি তাঁর “আস্-সহীহ” গ্রন্থে হাদীস উল্লেখ করেননি। হাফিয মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদির রহমান সাখাভী (৮৩১-৯০৭ হিজরী/১৪২৮-১৪৯৭ খ্রীষ্টাব্দ) ইমাম মুসলিমের এমন শায়খগণের সংখ্যা যাঁদের থেকে তিনি “সহীহ” গ্রন্থে রিওয়ায়েত করেছেন ২১৭ জন বলে উল্লেখ করেছেন।
শিষ্যবৃন্দ
অতি অল্প কালের মধ্যেই ইমাম মুসলিম ‘ইলমে হাদীসে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে সম হয়েছিলেন। ইমাম মুসলিম (র)-এর সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার কারণে অসংখ্য হাদীস অন্বেষণকারী ব্যক্তি তাঁর সান্নিধ্যে আগমন করেন। সমসাময়িক বরেণ্য বিদ্বানগণও তাঁর শিষ্যত্ব লাভ করতে আসেন। ইমাম মুসলিমের কতিপয় উল্লেখযোগ্য ছাত্রের নাম এখানে উল্লেখ করা হ’লঃ
মুহাম্মাদ ইব্ন ‘ঈসা আত-তিরমিযী (১টি হাদীস শ্রবণ করেছেন) , ইবরাহীম ইব্ন ইসহাক আস্-সায়রাফী, ইবরাহীম ইব্ন আবী তালিব, ইবরাহীম ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন হামযাহ, ইবরাহীম ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন সুফিয়ান আল-ফকীহ, আবূ হামীদ আহমদ ইব্ন হামদুন ইব্ন রুস্তম আল-‘আমাশী, আবূল ফযল আহমদ ইব্ন সালামাহ আল-হাফিয, আবূ হামীদ আহমদ ইব্ন ‘আলী ইবনিল-হাসান ইব্ন হাসনুবিয়্যাহ আল-মকরিউ, আবূ ‘আমর আহমদ ইব্ন নাছর আল-খাফ্ফাফ আল-হাফিয, আবূ ‘আমর আহমদ ইব্নুল-মুবারক আল-মুসতামলি, আবূ হামিদ আহমদ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন আল-হাসান ইব্ন আশ-শারকী, আবূ সা‘ঈদ হাতিম ইব্ন আহমদ ইব্ন মাহমুদ আল-কিন্দী আল-বুখারী, আল-হুসাইন ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন যিয়াদ আল-কাব্বানী, আবূ ইয়াহ্ইয়া যাকারিয়া ইব্ন দাঊদ আল-খাফ্ফাফ, সা‘ঈদ ‘আমর আল-বারযাহ আল-হাফিয, সালিহ ইব্ন মুহাম্মাদ আল-বাগদাদী আল-হাফিয, আবূ মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ ইব্ন আহমদ ইব্ন ‘আবদিস্-সালাম আল-খাফফাফ আন-নাইসাপূরী, আবূ মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন আল-হাসান ইব্ন আশ-শারকী, আবূ ‘আলী ‘আবদুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আলী আল-বালখী আল-হাফিয, ‘আবদুল্লাহ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া আস-সারখামী আল-কাযী, ‘আবদুর রহমান ইব্ন আবি হাতিম আর-রাযী, ‘আলী ইব্ন ইসমা‘ঈল আস্-সাফ্ফার, ‘আলী ইব্নুল হাসান ইব্ন আবি ‘ঈসা আল-হিলালী (তিনি ইমাম মুসলিমের চেয়ে বড়), ‘আলী ইব্নুল-হুসাইন ইবনিল-জুনাইদ আর-রাযী, আল ফযল ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আলী আল-বালখী, আবূ বকর মুহাম্মাদ ইব্ন ইসহাক ইব্ন খুযাইমাহ, মুহাম্মাদ ইব্নু ইসহাক আস্-সাকাফী আস-সিরাজ, আবূ আহমদ মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আব্দিল ওয়াহ্হাব আল-‘আবদী আল-ফাররা (তিনি তাঁর চেয়ে বড়), মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদ ইব্ন হুমাইদ, মুহাম্মাদ ইব্ন মুখাল্লাদ আদ-দুওয়ারী আল-আত্ত্বার, আবূ বকর মুহাম্মাদ ইব্ন নাযর ইব্ন সালামাহ ইবনিল-জারুদ আল-জারুদী, আবূ হাতিম মাক্কী ইব্ন আবদান আত-তাহমীমী, আবূ মুহাম্মাদ নাসর ইব্ন আহমাদ ইব্ন নাসর আল-হাফিয, ইয়াহ্ইয়া ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন সায়িদ, আবূ আওয়ানাহ আল-ইসফিরাইনী।
মাযহাব
ইমাম মুসলিম কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, তা নির্দিষ্ট করে বলা অত্যন্ত কঠিন। আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (১২৯২-১৩৫২ হিজরী/১৮৭৫-১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, ইমাম মুসলিম এর মাযহাব অজ্ঞাত। তিনি বলেন, وَأَمَّا مُسْلِمٌ فَلاَ أَعْلَمُ مَذْهَبَهَا -‘ইমাম মুসলিম-এর মাযহাব সম্পর্কে আমার সঠিক জানা নেই।’ নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান (মৃত ১১৩০ হিজরী/১৭১৭ খ্রীষ্টাব্দ) তাঁকে শাফি‘ঈ বলে গণ্য করেছেন। হাজী খলীফাহ্ (১০১৭-১০৬৭ হিজরী/১৬০৯-১৬৫৭ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, اَلْجَامِعُ الصَّحِيْحُ لإِمَام مُسْلِم الشَّافِعيُّ। মাওলানা ‘আবদুর রশীদ তাঁকে মালেকী মাযহাবের অনুসারী বলেছেন। কিন্তু طبقات مالكية তে তার উল্লেখ নেই। اليافع الحبنى গ্রন্থকার বলেন, উসূলের েেত্র তিনি শাফি‘ঈ ছিলেন। কেননা এ ব্যাপারে ইমাম শাফি‘ঈ (র)-এর সাথে মতদ্বৈততা অনেক কম হয়েছে। শায়খ ‘আবদুল লতীফ সিন্ধী বলেন, ‘ইমাম তিরমিযী (র) ও ইমাম মুসলিম (র)-কে বাহ্যত শাফি‘ঈ (র)-এর মুকাল্লিদ বলে মনে হয়। বস্তুতঃ তারা উভয়েই মুজতাহিদ ছিলেন’। শায়খ তাহের জাযায়েরীর অভিমত হচ্ছে, ‘তিনি কোন নির্দিষ্ট ইমামের মুকাল্লিদ ছিলেন না। তবে ইমাম শাফি‘ঈ ও অন্যান্য হিজাযের অধিবাসী ইমামগণের মাযহাবের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন’।
ইমাম মুসলিম (র) স¤পর্কে হাদীস বিশারদ এবং মনীষীগণের অভিমত
হাদীস শাস্ত্রের বিভিন্ন ইমাম এবং মনীষীগণ ইমাম মুসলিম (র) এবং তাঁর গ্রন্থাবলী স¤পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নিুে এর কিছু কিছু উল্লেখ করা হ’লঃ
১. বসরার মুহাদ্দিস ও সিকাহ রাবী মুহাম্মাদ ইব্ন বাশ্শার আল-‘আবদী (মৃত ২৫২ হিজরী) (র) বলেন,
حُفَّاظُ الدُّنْيَا أَرْبَعَةُ: أَبُوْ زُرْعَةَ بِالرَّي، وَمُسْلِمْ بِنَيْسَابُوْر، وَعَبْدُ الله الدَّارِمِيّ بِسَمَرْقَنْد، وَمُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيْل بِبُخَارِيّ.
-‘পৃথিবীতে হাফিযের সংখ্যা হচ্ছে চারজনঃ রায়-এ আবূ যুর‘আহ, নায়সাপূরে ইমাম মুসলিম, সামারকান্দ-এ ‘আবদুল্লাহ দারেমী এবং বুখারাতে ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন ইসমা‘ঈল।’
২. ইমাম ‘আবদুর-রহমান ইব্ন আবী হাতিম র্আ-রাযী (মৃত ৩২৭ হিজরী) বলেন, مُسْلِم ثِقَةٌ مِنَ الْحُفَّاظ، لهُ مَعْرِفَةٌ بِالْحَدِيْثِ -‘মুসলিম (র) একজন সিকাহ (বিশ্বস্ত) রাবী। তিনি হাদীসের হাফিযগণের মধ্যে অন্যতম। হাদীস স¤পর্কে তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা ও পরিচিতি রয়েছে।’
৩. ইব্ন নাদীম (মৃত ৩৮৫ হিজরী) বলেন, مُسْلِمُ بْنُ الْحَجَّاجِ أَبُوْ الْحُسَيْن اَلْقُشَيْرِيْ اَلنَّيْسَابُوْرِي، مِنَ الْمُحَدِّثِيْن وَالْعُلَمَاءِ بِالْحَدِيْثِ وَالْفِقْهِ. -‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ আবুল হুসায়ন আল-কুশায়রী আন্-নায়সাপূরী ছিলেন মুহাদ্দিস, হাদীস ও ফিক্হ শাস্ত্রে পণ্ডিতগণের মধ্যে অন্যতম’।
৪. হাফিয মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়া‘কূব আশ্-শায়বানী আন্-নায়সাপূরী ইব্নুল-আখরাম (মৃত ৩৪৪ হিজরী) এবং হাফিয মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদিল্লাহ আল-হাকিম (মৃত ৪০৫ হিজরী) বলেন,
إِنَّمَا أَخْرِجَتْ نَيْسَابُوْر ثَلاَثَةَ رِجَالِ: مُحَمَّدُ بنُ يَحْيَى، وَمُسْلِم بن الْحَجَّاج، وَإِبْرَاهِيْم بن أَبِيْ طَالِبْ.
-‘(نيسابور) নায়সাপূর শহর তিনজন বিশেষ ব্যক্তিত্বের জন্ম দিয়েছেঃ মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া, মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ এবং ইবরাহীম ইব্ন আবী তালিব।’
৫. ইমাম বায়হাকী (র) (৩৮৪-৪৫৮ হিজরী/৯৯৪-১০৮০ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন,
قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُوْ عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ عَنْ أَبِىْ الْفَضَلِ مُحَمَّدُ بْنِ إِبْرَاهِيْمُ قَالَ: سَمِعْتُ أحْمَدَ بْنَ مَسْلِمَةَ يَقُوْلٌ: رَأيتُ أبَا زُرْعَةَ، وَأبَا حَاتِمٍ، يُقَدِّمَانِ مُسْلِمَ بْنَ الْحَجَّاجَ فِىْ مَعْرِفَةِ الصَّحِيْحِ عَلى مشَايِخِ عَصْرِهِمَا.
-‘আমাকে আবূ ‘আবদিল্লাহ হাফিয বলেছেন, তিনি আবূল ফযল মুহাম্মাদ ইব্ন ইবরাহীমের নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আহমদ ইব্ন মাসলামাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আবূ যুর‘আহ এবং আবূ হাতিমকে দেখেছি যে, হাদীসের অভিজ্ঞতার েেত্র তাঁরা তাঁদের যুগের শায়খগণের উপর মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।’
৬. হাফিয আহ্মদ ইব্ন ‘আলী আল-খাতীব বাগদাদী (মৃত ৪৬৩ হিজরী) (র) বলেন, مُسْلِمُ أَحَدُ الأَئِمَّة مِنْ حُفَّاظ الْحَدِيْث -‘মুসলিম (র) ইমামগণের অন্যতম এবং হাদীসের হাফিযগণের অন্তর্ভুক্ত।’
৭. মহীউদ্দীন ইব্ন শারফ আন্-নববী (র) (৬৩১- ৬৭৭ হিজরী/১২৩৩-১২৭৮ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন,
أَنَّ مُسْلِمًا رَحِمَهُ اللهُ أَحَدُ أَعْلاَمِ أَئِمَّةِ هذَا الشَّأْنِ وَكِبَارِ الْمُبْرَزِيْنَ فِيْهِ وَأَهْلِ الْحِفْظِ وَالإِتْقَانِ وَالرِّحَّالَيْنَ فِيْ طَلْبِهِ إِلَي أَئِمَّةِ الاقطَارِ وَالْبِلْدَانِ وَالْمُعْتَرَفُ لَهُ بِالتَّقدم فِيْهِ بِلاَ خِلاَفٍ عِنْدَ أَهْلِ الْحَذْقِ وَالْعِرْفَانِ وَالْمَرْجُوْعُ إِلَي كِتَأبِهِ وَالْمُعْتَمِدُ عَلَيْهِ فِيْ كُلِّ إِلاَّ زَمَانٍ.
‘হাদীসের ইমামগণের মধ্যে মুসলিম (র) অন্যতম। তিনি এ বিষয়ের মহান ব্যক্তিগণের মধ্যে একজন মহান ব্যক্তি, হাদীসের হাফিয ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণের অন্তর্ভুক্ত এবং হাদীস অন্বেষণে বিভিন্ন অঞ্চল ও শহরের ইমামগণের নিকট ভ্রমণকারীগণের মধ্যে একজন। হাদীস জগতের অগ্রগামী ব্যক্তি। প্রতিটি যুগে ও কালেই তাঁর কিতাবটি নির্ভরশীল গ্রন্থ’।
৮. আল-ইয়াফি‘ঈ (৭০০-৭৬৮ হিজরী/১৩০১-১৩৬৭ খ্রীষ্টাব্দ) (র) তাঁর স¤পর্কে বলেন,
أحَدُ أركَانِ الْحَدِيْثِ، صَاحِبُ الصَّحِيْحِ، وَغَيْرِه، وَمَنَاقِبُهُ مَشْهُورَةٌ، وَسِيْرَتُهُ مَشْكُوْرَةٌ
-‘ইমাম মুসলিম (র) ছিলেন হাদীসের অন্যতম স্তম্ভস্বরূপ, ‘আস্-সহীহ’ ও অন্যান্য গ্রন্থের প্রণেতা। তাঁর গুণাবলী সুপ্রসিদ্ধ এবং তাঁর জীবন-চরিত কল্যাণকর।’
৯. ইব্ন খাল্লিকান (র) (৬০৮-৬৮১ হিজরী/১২১১-১২৮২ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, أَحَدُ الأئِمَّةِ الْحُفَّاظِ وَأعْلاَمِ الْمُحَدِّثِيْنَ-‘ইমাম মুসলিম (র) হাফিয ইমামগণের অন্যতম এবং বিশিষ্ট মুহাদ্দিসগণের অন্তর্ভুক্ত।’
১০. ইব্ন খালদূন (৭৩২-৮০৮ হিজরী/১৩৩২-১৪০৬ খ্রীষ্টাব্দ) তাঁর স¤পর্কে বলেন,
مُسْلِمُ بْنُ الحَجَّاجِ أَبُوْ الْحُسَيْنِ الْقُشَيْرِىُّ اَلنَّيْسَابُوْرِىُّ الْحَافِظُ أَحَدُ أَرْكَانِ الْحَدِيْثِ وَصَاحِبُ الصَّحِيْحِ
-‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ আবূল-হুসায়ন আল-কুশায়রী আন্-নায়সাপূরী (র) ছিলেন একজন হাফিয, হাদীসের অন্যতম স্তম্ভস্বরূপ এবং ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থের সংকলক।’
১১. ইব্ন তাগরী বারদী (৮১৩-৮৭৪ হিজরী/১৪১১-১৪৭০ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন,
مُسْلِمُ بْنُ الْحَجَّاجِ بْنِ مُسْلِمٍ اَلإمَامُ الْحَافِظُ الْحُجَّةُ أَبُوْ الْحُسَيْنِ النَّيْسَابُوْرىُّ صَاحِبُ الصَّحِيْحِ
-‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ ইব্ন মুসলিম হাদীসের ইমাম, হাফিয এবং হুজ্জাহ্ ছিলেন। তাঁর উপনাম আবূল-হুসায়ন। তিনি ছিলেন নায়সাপূরের অধিবাসী এবং ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থের প্রণেতা।’
ইমাম মুসলিম (র)-এর ইন্তিকাল
ইমাম মুসলিম (র)-এর অল্পদিনই বেঁচে ছিলেন। তাঁর জীবনের বেশিরভাগ ছিল হাদীস চর্চায় ব্যাপৃত। তিনি বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ শেষে নায়সাপূরে প্রত্যাবর্তন করতেন। সেখানে তাঁর স¤পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। তিনি আমৃত ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন।
জীবনী গ্রন্থ রচয়িতাগণের মতে, ইমাম মুসলিম (র) ২৬১ হিজরী সালের রজব মাসের ২৪ তারিখ রবিবার সন্ধ্যায় নায়সাপূরে ইন্তিকাল করেন। এটা ছিল ৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসের ৬ তারিখ। হাফিয আবূ ‘আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইব্ন ই‘য়াকূব (র) বলেন, تُوَفِّىْ مُسْلِمٌ بْنُ الْحَجَّاجِ عَشِيَّةَ يَوْمِ الأحَدِ، وَدُفِنَ الإِثْنَيْنِ لِخَمْسٍ بَقِيْنَ مِنَ رَجَبَ سَنَةَ إحْدىا وَسِتِّيْنَ وَمِئَتَيْنِ. -‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ (র) রবিবার সন্ধ্যায় ইন্তিকাল করেন এবং ২৬১ হিজরী সালের ২৫শে রজব তাঁকে দাফন করা হয়।’
মৃতকালে তাঁর বয়স কত ছিল এ স¤পর্কে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। ইব্নুল-‘ইমাদ হাম্বলী (র) (১০৩২-১০৮৯ হিজরী/১৬২৩-১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দ)-এর মতে, তিনি ৬০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। ইমাম মহীউদ্দীন শাফর আন্-নববী ও ইব্ন খাল্লিকানের মতে, ইমাম মুসলিম (র) ৫৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। আর এ হিসেবে তিনি ২০৬ হিজরী সালে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিকগণের মতে, এ অভিমতটিই অধিক বিশুদ্ধ। ইব্ন কাসীর (র)-এর মতানুসারে তিনি ৫৭ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তাঁকে নায়সাপূর শহরের অভ্যন্তরে নাসীরবাদে দাফন করা হয়। হাফিয শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী (র) বলেন, তঁাঁর কবর যিয়ারত করা হয়ে থাকে।
তাঁর মৃত্যু স¤পর্কে খতীব আল-বাগদাদী (র) নিুের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন
মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদিল্লাহ নায়সাপূরী বলেন, ‘আমি আবূ ‘আবিদল্লাহ মুহাম্মাদ ইব্ন ই‘য়াকূবকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আহ্মাদ ইব্ন সালিমাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আবূল-হুসায়ন মুসলিম (র) ইব্নুল-হাজ্জাজের জন্যে হাদীসের একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁর নিকট এমন একটি হাদীস আলোচিত হয়, যা তিনি তাৎণিকভাবে চিনতে বা উপলব্ধি করতে পারেননি। তখন তিনি গৃহে প্রত্যাবর্তন করে উক্ত হাদীস অন্বেষণে লিপ্ত হন। ইত্যবসরে এক ডালি খেজুর খাওয়ার জন্য ইমাম মুসলিমের সম্মুখে পেশ করা হয়। তিনি এক দিকে হাদীস খুঁজতে থাকেন এবং অন্য দিকে এক এক করে খেজুর খেতে থাকেন। এমতাবস্থায় সকাল হয়ে যায়, ডালির খেজুর সমাপ্ত হয়ে পড়ে এবং তিনি ঐ হাদীসটিও পেয়ে যান। হাদীস অন্বেষণে তিনি এত অধিক বিভোর ছিলেন যে তিনি বুঝতে পারেননি যে, তিনি এত অধিক খেয়ে ফেলেছেন। ফলে বদহজম জনিত পেটের অসুখে তিনি ইন্তিকাল করেন। খতীব আল-বাগদাদী (র)-এ ঘটনাটি বর্ণনা করার পর বলেন, হাকিম মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, زَادَنِىْ الثِّقَةُ مِنْ أصْحَابِنَا أنَّهُ مِنْهَا مَاتَ -‘আমাদের বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীগণ এ েেত্র আরও অধিক বর্ণনা করে বলেন, তিনি এ ঘটনায়ই মারা যান।’
চরিত্র ও তাকওয়া
ইমাম মুসলিম (র) ছিলেন উন্নত, আকর্ষণীয় ও মহান চরিত্রের অধিকারী। আল-ইয়াফি‘ঈ ইমাম মুসলিম (র)-এর চরিত্র ও মহত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তিনি ছিলেন হাদীসের একটি অন্যতম স্তম্ভ এবং ‘আস্-সহীহ’ ও অন্যান্য গ্রন্থ প্রণেতা। তাঁর ব্যক্তিত্ব সুপ্রসিদ্ধ এবং তাঁর জীবন চরিত সর্বজন শ্রদ্ধেয়’।
মুসলিম (র)-এর পিতা-মাতা ছিলেন ধর্মভীরু এবং ইমাম মুসলিম এক ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। এতে তার মনে এক অমোচনীয় ছাপ পড়ে। যার ফলে তার সারাজীবন অতিবাহিত হয়েছে একজন আল্লাহভীরু ব্যক্তি হিসাবে এবং আজীবন তিনি সঠিক পথের উপরেই অবিচল ছিলেন। তিনি কাউকে কোন দিন প্রহার করেননি এবং কাউকে কোন দিন অশোভন খারাপ কথাও বলেননি। তিনি কখনও কারও গীবত বা দোষ চর্চায় লিপ্ত হননি এমনকি কখনও কাউকে গালিও দেননি। তিনি ছিলেন অতি সত্যভাষী, মহান ‘আলিম এবং জ্ঞানের আধার।
মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়া‘কূব তাঁর স¤পর্কে বলেন,
كَانَ مُسْلِمُ بْنُ الْحَجَّاجِ مِنْ عُلَمَاءِ النَّاسِ وَأَوْعِيَةِ الْعِلْمِ، مَا عَلِمْتُهُ إِلاَّ خَيْراً، وَكَانَ بَرّاً رَحِمَنَا اللهُ وَإِيَّاهُ.
-‘মুসলিম ইব্নুল-হাজ্জাজ ছিলেন অন্যতম ‘আলিম এবং জ্ঞানের আধার। আমি তাঁকে উত্তম বলেই জানি। তিনি ছিলেন পূণ্যবান ব্যক্তি। আল্লাহ আমাদের এবং তাঁর প্রতি করুণা বর্ষণ করুন।’
উৎ. গঁযধসসধফ তঁনধুৎ ঝরফফয়র বলেন, গঁংষরস হবাবৎ ংঢ়ড়শব রষষ ড়ভ ধহু ড়হব; হড়ৎ ফরফ যব ধনঁংব ধহু ড়হব ফঁৎরহম যরং যিড়ষব ষরভব. গঁংষরস’ং পযধৎধপঃবৎ রং ংধরফ ঃড় যধাব নববহ ধফসরৎধনষব.
তাঁর আকৃতি ও জ্ঞান
ইমাম মুসলিম (র) ছিলেন আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর দৈহিক আকৃতি ছিল অতীব সুন্দর। তিনি শুভ্র চুল, দাঁড়ি বিশিষ্ট, দীর্ঘকায় ও সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলেন। তিনি সুন্দর পোষাক পরিধান করতেন। বার্ধক্যের চিহ্ন অল্প বয়সেই তাঁর মধ্যে ফুটে উঠেছিল। তিনি দু’কাঁধের মাঝ বরাবর পাগড়ী ঝুলিয়ে পরতেন। জনৈক ব্যক্তি তাঁকে স্বপ্নে দেখতে পান মাথা ও দাঁড়ি শুভ্র, সুন্দর মুখমণ্ডল বিশিষ্ট, উত্তম বশন পরিধেয় দেহে সুন্দর চাদর দ্বারা আবৃত, মাথায় শোভা পাচেছ পাগড়ী যার কোনা কাঁধের ওপর ঝুলন্ত।
ইমাম মুসলিম (র)-এর জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে ইমাম নববী (র) বলেন,
وَاَجْمَعُوْا على جَلاَلَتِه وَإمَامَتِه وَعُلُوِّ مَرْتَبَتِه وَحِذْقِه فِيْ هَذِه الصَّنْعَهِ وَتَقَدُّمِه فِيْهَا وَتَضُلُّعِه مِنْهَا
-‘আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন তাঁর মহত্বতা, ইমামত, উচ্চ মর্যাদা, হাদীসের েেত্র তাঁর গভীরতা, অগ্রগামীতা এবং হাদীসের বিশেষ জ্ঞান লাভের বিষয়ে।’
তিনি এ সম্পর্কে আরও বলেন, ইমাম মুসলিম (র)-এর উপোরক্ত বৈশিষ্ট্যাবলীর বড় প্রমাণ হচ্ছে, তাঁর রচিত ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থ। এ গ্রন্থের পূর্বে ও পরে এত সুন্দর তারতীর সম্পন্ন এবং বাড়াবাড়ী ব্যতীত হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনার সংপ্তিকরণ এবং অতিরিক্ত কোন ফায়দা ছাড়া সনদ বারবার উল্লেখ করার কাজ পরিহার করার ব্যাপারে এ গ্রন্থের কোন জুড়ি নেই।
ইমাম নববী (র) ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থের অনন্য গুণাবলীর বিস্তারিত বিবরণ প্রদানের পর আরও বলেন,
اِنَّهُ إمَامٌ لاَيَلْحَقُهُ مَنْ بَعْدَ عَصْرِهِ وَقَلَّ مَنْ يُسَاوِيْهِ بَلْ يُدانِيْه مِنْ أهْلِ دَهْرِه
-‘তিনি এমন ইমাম যে, তাঁর পরবর্তী যুগের কোন হাদীস বেত্তাই তাঁর সমক হতে পারেননি। তাঁর যুগের কেউই তাঁর সমপরিমাণের বরং তাঁর কাছাকাছি মর্যাদায়ও উপনীত হতে পারেননি।’
পেশা
তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। ইব্নুল-‘ইমাদ হাম্বলী বলেন, নায়সাপূরের হিমস নামক স্থানে তাঁর হোটেল বা সরাইখানার ব্যবসা ছিল। মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদুল ওয়াহ্হাব ফাররা বলেন, তিনি বস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন।
ইমাম মুসলিম (র)-এর অবদান
ইমাম মুসলিম (র) হাদীস শাস্ত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করেছেন। এছাড়া জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গ্রন্থ রচনা ও সংকলন করেও অবদান রেখে গেছেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর অধিকাংশই হাদীস শাস্ত্র স¤পর্কিত। তাঁর রচিত কিছু কিছু গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি আকারেই রয়ে গিয়েছে। আর কিছু কিছু গ্রন্থ মুদ্রিত হয়েছে। এ সম্পর্কে ‘আবদুল হামীদ সিদ্দীকী বলেন, ওসধস গঁংষরস যধং ঃড় যরং পৎবফরঃ সধহু ড়ঃযবৎ াধষঁধনষব পড়হঃৎরনঁঃরড়হং ঃড় ফরভভবৎবহঃ নৎধহপযবং ড়ভ ঐধফরঃয ষরঃবৎধঃঁৎব, ধহফ সড়ংঃ ড়ভ ঃযবস ৎবঃধরহ ঃযবরৎ বসরহবহপব বাবহ ঃড় ঃযব ঢ়ৎবংবহঃ ফধু. অসড়হমংঃ ঃযবংব করঃধন-ধষ-গঁংহধফ ধষ-কধনরৎ অষধ-ধষ জরলধষ ঔধসর, কধনরৎ, করঃধন-ধষ-অংসধ ডধষ কঁহধ, করঃধন-ধষ-ওষধষ, করঃধন-ধষ-ডরলফধহ ধৎব াবৎু রসঢ়ড়ৎঃধহঃ.
নিুে তাঁর অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হ’ল,
১. আল-কিতাব আস্-সহীহ (اَلْكِتَابُ الصَّحِيْحُ)
এ গ্রন্থটি সংকলন করে ইমাম মুসলিম (র)-এর বিশ্ববিখ্যাত ‘মুহাদ্দীস’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এর প্রসিদ্ধ নাম (صَحِيْحُ مُسْلِمِ) সহীহ্ মুসলিম। ইমাম মুসলিম (র)-এর সংকলিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে ‘আস্-সহীহ’ সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। এটি হাদীস শাস্ত্রের অনবদ্য ও অনন্যসাধারণ একটি গ্রন্থ। ইমাম মুসলিম (র) গ্রন্থটি ২৫০ হিজরী সালে সংকলন করেন। সমগ্র উম্মত এ গ্রন্থটি সাদরে গ্রহণ করেছে। হাদীস শাস্ত্রবিদ এবং সাধারণ হাদীস-পাঠক নির্বিশেষে সকলের নিকট গ্রন্থটি অতি সমাদৃত। গ্রন্থকারের যুগ থেকে অদ্যাবধি সকলেই এ গ্রন্থটি অতিমূল্যবান, বিশুদ্ধ ও উপকারী হাদীস গ্রন্থ হিসেবে এর পঠন-পাঠনে নিয়োজিত রয়েছে। মুহাদ্দিসগণের নিকট এটি ‘আস্-সহীহ’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায়-এর নামকরণ করা হয়েছে, ‘সহীহ মুসলিম’ (صَحِيْحُ مُسْلِمِ)। গ্রন্থটি যদিও ‘সহীহ’ নামে প্রসিদ্ধ কিন্তু তার যুগে এটি আল-মুসনাদ (المسند) নামে অভিহিত হত। স্বয়ং ইমাম মুসলিম (রা) বলেন, مَاوَضَعْتُ شيأً فِىْ كِتَابِىْ هَذا الْمُسْنَدِ اِلاَّ بِحُجَّةٍ، وَمَا أسْفَلْتُ مِنْهُ شَيْأً اِلاَّ بِحَجَّةٍ
-‘আমি আমার এ মুসনাদ গ্রন্থে যা উপস্থাপন করেছি তা দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে করেছি। আর এ গ্রন্থে যা সন্নিবেশিত করিনি তাও প্রমাণের ভিত্তিতেই করেছি’।
ইমাম মুসলিম (র)-এর পূর্বে হাদীসের যে সকল গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে, সেগুলোর সকল হাদীস সহীহ নয়। সংকলক যে সকল হাদীস লাভ করেছেন সেগুলোর বর্ণনাকারীগণের যাচাই এবং র্জাহ-তা‘দীল ছাড়াই তাঁরা আপন আপন গ্রন্থে হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন। ফলে তাঁদের গ্রন্থে সন্নিবেশিত সহীহ হাদীস সমূহ য‘ঈফ হাদীসের সাথে সংমিশ্রিত হয়ে পড়ে। সর্বপ্রথম ইমাম বুখারী (র) এবং ইমাম মুসলিম (র) সহীহ হাদীস সম্বলিত দু’টি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তাঁরা নির্দিষ্ট শর্ত এবং নিয়ম-নীতির আলোকে তাঁদের গ্রন্থে হাদীস উপস্থাপন করেন। এেেত্র ইমাম বুখারী (র) ইমাম মুসলিম (র)- এর অগ্রগামী ছিলেন। তাঁদের এ গ্রন্থদ্বয় কুর’আন মাজীদের পর সর্বাধিক সহীহ গ্রন্থ। স্বয়ং ইমাম মুসলিম (র) নিজই তাঁর ‘সহীহ মুসলিম’ সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, لَوْ اَنَّ أهْلَ الْحَدِيْثِ يَكْتُبُوْنَ الْحَدِيْثَ مِّئَتَىْ سَنَةٍ، فَمَدَارُهُمْ عَلى هذا "الْمُسْنَدٍ" -‘হাদীসবিদগণ যদি দু’শত বছর ধরেও হাদীস লিপিবদ্ধ করতে থাকেন, তবুও তাঁদের এই ‘মুসনাদ’ গ্রন্থটির ওপরই নির্ভর করতে হবে’।
‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থ প্রণয়নের েেত্র ইমাম মুসলিম (র)-এর অনুসৃত শর্ত
ইমাম মুসলিম (র) ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থ প্রণয়নের েেত্র বিশেষ কিছু শর্তারোপ করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায় তিনি তার গ্রন্থে সহীহ হাদীসই সন্নিবেশিত করেছিলেন। তিনি তাঁর মুকাদ্দামায় বলেন,
সহীহ বর্ণনা এবং রুগ্ন বর্ণনা সমূহের মধ্যে পার্থক্য করা ওয়াজিব।
বিশ্বস্তরাবী এবং তিরস্কৃত রাবীকে চিহিৃত করা ওয়াজিব।
যে হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ এবং বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত ও নিরাপদ সে হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস বর্ণনা করা যাবে না।
ভৎসিত এবং বিদ‘আতী রাবীর বর্ণনা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
তিনি তার এ বক্তব্যের পে কুর’আন ও হাদীস থেকে দলীল উল্লেখ করেছেন।
সহীহ অল্প হাদীসের ওপর নির্ভরশীল হওয়া অধিক রুগ্ন হাদীস গ্রহণ করা থেকে উত্তম।
হাকিম আন্-নায়শাপূরী (র) বলেন, সহীহ গ্রন্থ প্রণয়নে ইমাম মুসলিম (র)-এর শর্ত হচ্ছে, ‘তিনি তার গ্রন্থে শুধু এমন হাদীসই গ্রহণ করবেন যা দু’জন তাবি‘ঈ, দু’জন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন এবং প্রত্যেক স্তরেই রাবীর নূন্যতম সংখ্যা দু’জন হবেন’। হাফিয যাহাবী (র) বলেন, ‘হাকিমের এ দাবী সম্পর্কে আবূ ‘আলী আল-জায়্যানী বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, ঐ সাহাবী অথবা তাবি‘ঈ এমন হবে যার থেকে দু’জন রাবী রিওয়ায়াত করে থাকেন। আর এরই মাধ্যমে তিনি অপ্রশিদ্ধকার বলয় থেকে বের হয়ে আসেন’। অর্থাৎ তিনি এমন রাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করবেন যিনি একজন প্রসিদ্ধ রাবী, অপ্রসিদ্ধ নন।
আস্-সহীহ-এর হাদীসের বিশুদ্ধতা
সমগ্র উম্মত ‘সহীহ মুসলিম’ কে বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, সহীহ গ্রন্থদ্বয়ের হাদীস নবী করীম (সা)-এর হাদীস। আবূ ইসহাক ইবরাহীম ইব্ন মুহাম্মাদ ইস্পারায়ীন (মৃত ৪১৮ হিজরী) বলেন, ‘হাদীস অভিজ্ঞ মনীষীগণ একমত যে, সহীহ গ্রন্থদ্বয়ের সন্নিবেশিত হাদীস সমূহ অকাট্যভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাদীস হিসেবেই প্রমাণিত। কোন কোন হাদীস সম্পর্কে মতপার্থক্য থাকলেও বর্ণনা পরম্পরায় এবং রাবীগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটা হাদীসের মতনের েেত্র কোন প্রভাব সৃষ্টি করেনি। ইব্ন কাসীর (র) বলেন, صَاحِبُ الصَّحِيْحِ الَّذِيْ هُوَ تِلْوُ صَحِيْحِ الْبُخَارِيِّ عِنْدَ أكْثَرِ الْعُلَمَاءِ -‘ইমাম মুসলিম (র) ‘আস্-সহীহ’ গ্রন্থের প্রণেতা, যেটি অধিকাংশ ‘আলিমের মতে ইমাম বুখারী (র)-এর সহীহ গ্রন্থের পরবর্তী স্থানে অভিষিক্ত’। আবূ ‘আলী আন্-নায়শাপূরী (র) বলেন, مَا تَحْتَ أدِيْمِ السَّمَاءِ كِتَابٌ أصَحُّ مِنْ كِتَابِ مُسْلِم بْنِ الْحَجَّاج فِيْ عِلْمِ الْحَدِيْثِ -‘হাদীস শাস্ত্রে আকাশের নিচে মুসলিম ইবনুল-হাজ্জাজের কিতাব অপো অধিক বিশুদ্ধ কোন গ্রন্থ নেই’। উৎ. গঁযধসসধফ তঁনধুৎ ঝরফফয়র বলেন, ঞযব সড়ংঃ রসঢ়ড়ৎঃধহঃ ড়ভ ঃযরং ড়িৎশং রং যরং ঝধযরয যিরপয যধং নববহ ৎবমধৎফবফ রহ পবৎঃধরহ ৎবংঢ়বপঃং ধং ঃযব নবংঃ ড়িৎশ ড়হ ঃযব ংঁনলবপঃ.
সহীহ মুসলিম গ্রন্থটি ১২৬৫ হিজরী সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মিসর, বৈরূত, ভারত, ইসতাম্বুল, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বহু দেশে মুদ্রিত হয়েছে।
বিভিন্ন যুগের ও কালের বিশিষ্ট বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও হাদীস বিশ্লেষণকারীগণের দৃষ্টি সহীহ মুসলিম-এর প্রতি নিবদ্ধ হয়। তাঁরা এ গ্রন্থের ব্যাখ্যা, টীকা-টিপ্পনী, সংপ্তি করণ, কঠিন কঠিন শব্দের বিশ্লেষণ, রিজাল বা রাবীগণের জীবনী ও পর্যালোচনা মূলক গ্রন্থ প্রণয়নে ব্রতী হন। সহীহ মুসলিম-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থের সংখ্যা ৬০-এর ঊর্ধে। এর অধিকাংশই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মহী উদ্দীন ইব্ন শারফ আন্-নববী (র) (৬৩১- ৬৭৭ হিজরী/১২৩৩-১২৭৮ খ্রীষ্টাব্দ)-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থটি। এ শারহটি লèৌ, দিল্লী, মিসর, বৈরুত সহ প্রভৃতি দেশ থেকে বহুবার মুদ্রিত হয়েছে। ভারত থেকে মুদ্রিত ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থটির পাদটীকায় এ শহরটি দু’ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি মিসরের মাকতাবাতুল ঈমান আল-মানসূরাহ্ থেকে ৯ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।
২. কিতাবুল-কুনা ওয়াল-আস্মা (كِتَابُ الْكُني وَالأَسْمَاءِ)
ইবনুল-জাওযী ও শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী কিতাবটির নাম كِتَابُ الأَسَامِيْ وَالْكُنيا বলে উল্লেখ করেছেন। ইব্ন নাদীম (মৃত ৩৮৫ হিজরী/৯৯৫ খ্রীষ্টাব্দ) শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী ও জালালুদ্দীন আস্-সুয়ূতী (৮৪৯-৯১১ হিজরী/১৪৪৫-১৫০৫ খ্রীষ্টাব্দ) এ গ্রন্থটির নাম الأَسْمَاءُ وَالْكُنيا বলে উল্লেখ করেছেন। এ গ্রন্থে ইমাম মুসলিম (র) এমন সব রাবীর নাম বর্ণনা করেছেন যাঁরা ‘কুনয়াত’ বা উপনামে প্রসিদ্ধ রয়েছেন। আবার যে সকল রাবী নামে প্রসিদ্ধ আছেন, তিনি এতে তাঁদের ‘কুনয়াত’ বর্ণনা করেছেন। কেননা রাবী কখনও নামে, কখনও ‘কুনয়াত’ কখনও ‘লকব’- উপাধিতে উল্লিখিত হয়ে থাকেন। তিনি একই ব্যক্তি, ভুল বশতঃ দুই জন বলে প্রতীয়মান হয়ে থাকে। এ গ্রন্থের একটি হস্ত লিখিত কপি দিমাশকের ‘মাকতাবাতু’য্-যাহিরিয়্যাহ’-এ সংরতি আছে। এটি হিজরী পঞ্চম শতাব্দীতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য রাসাইলসহ এটি এক খণ্ডে সমাপ্ত। এর ক্রমিক সংখ্যা (কল নং) مجموع-১ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা-৪৩-১০৪। এর অপর একটি হস্তলিপি ভারতের ‘পাটনা’ লাইব্রেরীতে এবং তৃতীয় কপি তুরষ্কের ‘মাকতাবাহ শহীদ’-এ সংরতি আছে।
৩. আল-মুনফারাদাত-ওয়াল-ওয়াহ্দান (اَلْمُنْفَرَدَاتُ وَالْوَحْدَانُ (فِيْ رُوَاةِ الْحَدِيْثِ)
যে সকল রাবী থেকে শুধু একটি হাদীস বর্ণিত আছে, ইমাম মুসলিম (র) তাঁর এ গ্রন্থে সে সব রাবীর বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। সাহাবী এবং সাহাবীগণের পরবর্তী স্তরের রাবীগণের বর্ণনাও এতে স্থান লাভ করেছে। যেমন মুসায়্যাব (রা) থেকে শুধু একটি হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি তাঁর থেকে তাঁর পুত্র সা‘ঈদ (রা) বর্ণনা করেছেন। এ গ্রন্থটি ভারতের হায়দারাবাদ থেকে ১৩২৩ হিজরী সালে মুদ্রিত হয়েছে। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৪। এর সাথে ইমাম বুখারীর اَلضُّعَفَاء الصَّغِيْر এবং ইমাম নাসাঈ‘ (র)-এর اَلضُّعَفَاءُ وَالْمَتْرُوْكِيْن গ্রন্থটিও মুদ্রিত হয়।
৪. কিতাবুত্-তাময়ীয (كِتَابُ التَّمِيْيرُ)
এ গ্রন্থের একটি হস্তলিপি কপি ‘আয্-যাহিরিয়্যাহ্’ গ্রন্থাগারে সংরতি আছে। এর ক্রমিক নম্বর (কল নং)- ১১ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ১-১৫। এটি হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তবে শেষ অংশটি অস¤পূর্ণ। এর বহির্গিলাপে লিপিবদ্ধ আছে, اَلْجُزْءُ الأَوَّلُ مِنْ كِتَابِ التَّمِيْيْزِ لِمُسْلِمٍ তবে اَلتَّمِيْيْزُ শব্দের ((زا)) অরটি ব্যতীত ‘অন্য অরগুলো ¯পষ্ট নয়। সমকালীন জনৈক কপিকারী শব্দটি উপলদ্ধি করতে না পেরে ভুল বশতঃ এর শিরোনাম লেখে রাখেন, ((رِسَالَةُ فِيْ الْمُصْطَلَحِ))
ইমাম মুসলিম (র)-এ গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে-এর ভূমিকায় বলেন, তোমার প্রতি আল্লাহ্র করুণা বর্ষিত হোক। তুমি উল্লেখ করেছ যে, এমন একদল লোক রয়েছে, যারা হাদীস বিশেষজ্ঞগণের মন্তব্য اهذَا حَدِيْثٌ خَطَأٌ اهذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ এটি ভুল হাদীস, এটি সহীহ হাদীস)-কে অস্বীকার করে থাকে। তুমি আরও উল্লেখ করেছ যে, তারা এ ধরণের মন্তব্যকে ভীষণ আকারে দেখে এবং এটাকে পূর্বসূরী পূণ্যবান ব্যক্তিগণের ‘গীবত’ বলে আখ্যায়িত করে। এমনকি তারা বলে, যে ব্যক্তি সঠিক বর্ণনা থেকে ভুল বর্ণনা পার্থক্য করার দাবী উত্থাপন করে তারা তাকে এমন বস্তুর জ্ঞান লাভের প্রতি লালায়িত মনে করে যে বস্তুর জ্ঞান তার নেই। আর তারা তাকে গায়বের জ্ঞানের দাবীদার মনে করে, যে গায়ব পর্যন্ত তার পৌঁছার মতা নেই।
অতঃপর, মানুষ যা মুখস্ত করে থাকে এ মুখস্ত বস্তু সংরণের েেত্র তারা পর¯পর ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাদের কেউ কেউ নির্ভরশীল হাফিয, আর কেউ কেউ হাদীস মুখস্ত রাখার বিষয়ে অলস, সংরণের েেত্র সন্দেহভাজন অথবা অপরের নিকট থেকে শুনে তার হিফয সংমিশ্রিত হয়ে পড়ে এবং অন্যের নিকট বর্ণনার সময় পার্থক্য করতে সম হয় না।
৫. রিজালু ‘উরওয়াতিব্নি’য্-যুবায়র (رِجَالُ عُرْوَةِ بْنِ الزُّبَيْر)
‘আয্-যাহিরিয়্যাহ’-কুতুব খানায় এ গ্রন্থের একটি কপি সংরতি আছে। এর ক্রমিক নম্বর (কল নং) مجموع ৫৫/১১ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩৯-১৪৭। এটি ৪৬৩ হিজরী সালে খতীব বাগদাদীর হস্তে লিখিত।
৬. কিতাবু’ত্-তাবাকাত (كِتَابُ الطَّبَقَاتِ)
এ গ্রন্থে ইমাম মুসলিম (র) রাসূলুল্লাহ (স)-এর এমন সাহাবীগণের বর্ণনা করেছেন, যাঁরা রাসূলুল্লাহ (স)-কে দেখেছেন এবং তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ গ্রন্থের একটি কপি তুরষ্কের ‘আহ্মদ আস্-সালিস্’ গ্রন্থগারে সংরতি আছে। এর ক্রমিক সংখ্যা ৬২৪/২৬ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা (কল নং)-২৭৯-২৯৭। এটি ৬২৮ হিজরী সালে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
ইমাম মুসলিম (র)-এর রচিত ও সংকলিত আরও যে সকল গ্রন্থের নাম জানা যায় তার একটি তালিকা নিুে প্রদান করা হ’লঃ
১. আল-মুসনাদুল কাবীর ‘আলা আসমাইর-রিজাল (اَلْمُسْنَدُ الْكَبِيْرُ عَلى اَسْمَاءِ الرِّجَالِ) ।
২. আল-জামি‘উল-কাবীর ‘আলাল-আবওয়াব (ألْجَامِعُ الْكَبِيْرُ عَلَى الأَبْوَابِ) ।
৩. আল-‘ইলাল (اَلْعِلَلْ) ।
৪. আল-ওহ্দান (كتاب اَلْوُحْدَانِ) ।
৫. হাদীসে ‘আমর ইব্ন শু‘আইব (حَدِيْثُ عَمَرِو بْنِ شُعَيْبٍ) ।
৬. মাশাইখু মালিক (مَشَايِخُ مَالِكِ) ।
৭. মাশাইখুস্-সাওরী (مَشَايِخُ الثَّوْرِى) ।
১০. লাইসা লাহু ইল্লা রাবীন ওয়াহেদ (لَيْسَ لَهُ إِلاَّ رَاوٍ وَاحِدْ) ।
১১. যিকর আওহামিল-মুহাদ্দিসীন (ذِكْرُ اَوْهَامِ الْمُحَدِّثَيِنَ) ।
১২. তাবাকাতুত্-তাবি‘ঈন (طَبَقَاتُ التَّابِعِيْن) ।
১৩. আল-মুখাদরামীন (اَلْمُخَضْرَمِيْن) ।
১৪. আল-আফরাদ (الأفْراَدُ) ।
১৫. আল-আকরান (الأقْرانُ) ।
১৬. মাশাইখ শু‘বাহ مَشَايِخُ شُعْبَةَ)) ।
১৭. আওলাদুস্-সাহাবাহ (أوْلاَدُ الصَّحَابَةِ) ।
১৮. আফরাদুশ্-শামীইন (اَفْرَادُ الشَّامِيِيِّنْ) ।
১৯. আল-ইনতিফা‘ বি ওহুŸিস্-সিবা‘ (الإنْتِفَاعُ بِأُهُبِ السِّبَاعِ) ।
২০. জানাইযু ইস্তিতরাদান (اَلْجَنَائِزُ اِسْتِطَرَادَا) ।
২১. মুসনাদু হাদীসি মালিক (مُسَنَدُ حَدِيْثِ مَالِكْ)।
২৩. সুওয়ালাতু আহমাদ ইব্ন হাম্বল (سُؤَا لاَتُ اَحْمَدُ بْن حَنْبَلْ) ।
২৪. তাফযীলুস্-সুনান (تَفْضِيْلُ السُّنَنْ)
২৫. কিতাবুল-মা‘রিফাহ (كِتَابُ الْمَعْرِفَةِ) ।
২৬. রুওয়াতুল-ই‘তিবার (رُوَاةُ الإِعْتِبَارِ)।
২৭. কিতাবু-তাফদীলিস্-সুনান (كِتَابُ تَفْضِيْلِ السُّنَنْ) ।
২৮. কিতাবুল-ওখওয়াত (كِتَابُ الأُخْوَةِ) ।
২৯. কিতাবুল-ইনতিফা‘ বিজুলূদিস্-সিবা‘ (كِتَابُ الإِنْتِفَاعْ بِجُلُوْدِ السِّبَاع) ।
৩০. কিতাবুল-মুফরাদ (كِتَابُ الْمُفْرَدْ) ।
৩১. কিতাবুত্-তারীখ (كِتَابُ التَّارِيْخْ) ।
উপসংহার
পরিশেষে একথা বলা যায় যে, ইমাম মুসলিম (র) হাদীস জগতের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। জ্ঞানের এক আলোক-দীপ্ত পরিবেশে তিনি লালিত পালিত হন। অল্প বয়সেই হাদীস অন্বেষণ শুরু করেন। এমনকি পরিণত বয়সেও হাদীস সংগ্রহ থেকে বিরত থাকেননি। তিনি ছিলেন সত্যানুরাগী এবং ন্যায়ের েেত্র বজ্রকঠোর। ল ল হাদীস যাছাই-বাছাই করে তিনি সংকলন করেছেন এক অনবদ্য ও বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ ‘আস্-সহীহ মুসলিম’। যদিও এটিই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান, কিন্তু এর পাশাপাশি তাঁর রয়েছে আরও অনেক গ্রন্থ। কিন্ত গ্রন্থগুলো পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর। তাঁর জীবন ইতিহাস আমাদের প্রেরণার উৎস এবং তাঁর কালজয়ী গ্রন্থাবলী মুসলিম উম্মার দিকদিশারী।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)<> -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaite
0 Comments