বিড়ি সিগারেট হারাম হওয়ার স্পষ্ট দলীল শরীয়তে আছে কি? না থাকলে তা হারাম হয় কিভাবে?
শরীয়তের বিধানের সকল কিছুর স্পষ্ট দলীল নেই। আর না থাকলে কোন জিনিস যে হালাল, তা নয়। শরীয়তের স্পষ্ট উক্তিসমুহ থেকে ফকীহগন এমন কিছু নীতি নির্ণয় করেন, যার দ্বারা বলা যায় কোনটা হালাল, আর কোনটা হারাম। যে সকল নীতির মাধ্যমে বিড়ি-সিগারেটকে হারাম করা হয়, তার কিছু নিম্নরুপঃ-
- (ক) এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়। আর ইসলামে অপচয় হারাম।
- (খ) এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম।
- (গ) বেশি পরিমাণ পান করলে, তাতে জ্ঞানশূন্যতা আসতে পারে। আর যাতে নেশা, মাদকতা ও জ্ঞানশূন্যতা আসে, ইসলামে তা হারাম।
- (ঘ) এতে দুর্গন্ধ আছে। এর দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা কষ্ট পায়। সুতরাং তা পবিত্র জিনিস নয়। আর ইসলাম পবিত্র জিনিস খাওয়াকে হালাল এবং অপবিত্র জিনিস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছে।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
অমুসলিমদের জবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া বৈধ কি?
অমুসলিমদের জবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া বৈধ নয়। তবে তাদের মধ্যে আহলে কিতাব (ইয়াহুদি-খ্রিস্টান) দের জবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল, যদি জানা যায় যে, তারা আল্লাহর নাম নিয়ে ছুরি দ্বারা যথানিয়মে জবেহ করে। পক্ষান্তরে যদি জানা যায় যে, তারা জবেহর সময় আল্লাহর নাম নেয় না, অথবা কারেন্টের শক দিয়ে হত্যা করে, অথবা গুলি মেরে হত্যা করে, অথবা গরম পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে, যাতে গোশতের ভিতরে রক্ত জমা থেকে তার ওজন বেশি হয় এবং দেখতেও লোভনীয় ভাল গোশত হয়, তাহলে ওই গোশত খাওয়া হালাল নয়। (ইবনে জিবরীন )
প্রকাশ থাকে যে, ‘মুসলিম’ নামধারী কোন নাস্তিক, কাফের বা মুশরিকের জবেহ করা পশু হালাল নয়। মাজার, কবূরী এবং মতান্তরে কোন বেনামাজির হাতে জবেহ করা পশুর গোশত হালাল নয়। বৈধ নয় কোন ছোট শিশু, নেশাগ্রস্ত বা পাগলা ব্যক্তির জবেহ।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
কোন গোশতের ব্যাপারে ‘ঠিকমত জবেহ করা হয়েছে কি না’ - এই সন্দেহ হলে বাড়িওয়ালা অথবা হোটেল মালিককে জিজ্ঞাসা করা কি জরুরী? নাকি জিজ্ঞাসা না করেও খাওয়া যায়?
যদি প্রবল ধারনায় জানা যায় যে, জবেহকারী ঠিকমত জবেহ করেছে, তাহলে জিজ্ঞাসা করা বিধেয় নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) ইয়াহুদিদের জবেহ করা ছাগলের গোশত খেয়েছেন এবং জিজ্ঞাসাও করেননি যে, তা ঠিকভাবে জবেহ করা হয়েছে কি না? (বুখারি ২৬১৭, ২০৬৯, ২৫০৮, মুসলিম ২১৯০ নং)
একদা একদল লোক নবী (সঃ) কে জিজ্ঞেসা করল, ‘এক নও মুসলিম সম্প্রদায় আমাদের নিকট গোশত নিয়ে আসে। আমরা জানি না যে, তার জবেহকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে কি না।’ তিনি বললেন, “তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তা ভক্ষণ কর।” (বুখারি ২০৫৭, ৫৫০৭ নং)
উক্ত হাদিসে নবী (সঃ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে সন্দেহ দূরীভূত করতে নির্দেশ দেননি। এমন নির্দেশ হলে নিশ্চয় মানুষ বড় সমস্যায় পতিত হতো। (ইবনে উসাইমিন)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
দাঁড়িয়ে পানাহার করা কি হারাম?
দাঁড়িয়ে পানাহার করা হারাম। যেহেতু আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে গিয়ে পান করে থাকলে সে যেন তা বমি করে ফেলে।” (মুসলিম ২০২৬ )
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন যে, কোন লোক যেন দাঁড়িয়ে পান না করে।’ আনাস (রাঃ) কে দাঁড়িয়ে খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আরও খারাপ ও আরও নোংরা।’ (মুসলিম ২০২৪ নং)
হাদিসে দাঁড়িয়ে পান করার ব্যাপারে নবী (সাঃ) ধমক দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, “(তুমি দাঁড়িয়ে পান করলে) তোমার সাথে শয়তান পান করেছে।”
অবশ্য দাঁড়িয়ে পান বৈধ হওয়ার ব্যাপারেও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (বুখারি ১৬৩৭, ৫৬১৫, মুসলিম ২০২৭, ইবনে মাজাহ ৩৩০১ নং প্রমুখ) সুতরাং বসার জায়গা না থাকলে অথবা অন্য কোন অসুবিধায় বা প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পানাহার করা হারাম নয়। (আলবানি, সিঃ সহিহাহ ১৭৫ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
চামচ দিয়ে খাওয়া কি সুন্নত বিরোধী?
মহানবী (সঃ) তিনটি আঙ্গুল যোগে খেতেন। কিন্তু চামচ লাগিয়ে খাওয়া অবৈধ নয়। যেহেতু তা শরই ব্যাপার নয়, বরং তা পার্থিব ব্যবহারিক ব্যাপার। যেমন আধুনিক মাধ্যম বাস-ট্রেন, সাইকেল-গাড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা আবৈধ নয়। (আলবানী )
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
মাছ মারা গিয়ে পানির উপর ভেসে থাকলে তা খাওয়া বৈধ কি না?
মহানবী (সঃ) বলেছেন, “সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত হালাল।” (আহমাদ, সুনান আরবাআহ প্রমুখ, সিলসিলাহ সহিহাহ ৪৮০ নং) এই হাদিস থেকে এই কথা বুঝা যায় যে, মাছ মারা গিয়ে পানির উপর ভেসে উঠলেও তা হালাল। পক্ষান্তরে মাছ মরে গিয়ে পানির উপর ভেসে উঠলে তা খাওয়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে হাদিস সহিহ নয়। (সিলসিলাহ সহিহাহ ১/৮৬৪) বরং পাঁইটে ভাসা আম্বর মাছ সাহাবাদের খাওয়ার ব্যাপারে ঘটনা হাদিসে প্রসিদ্ধ। আর তারা নিরুপায় ছিলেন বলেই নয়, যেহেতু মহানবী (সঃ) ও সেই মাছের কিছু অংশ খেয়েছিলেন।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ এর উপর ‘রাহমানির রাহীম’ যোগ করা বিধয়ে কি?
অনেকে বলছেন, যোগ করে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলা উত্তম। কিন্তু মহানবী (সঃ) এর সুন্নতই সবচেয়ে উত্তম। তিনি কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ বলারই নির্দেশ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন আহার করবে, সে যেন শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। যদি শুরুতে তা ভুলে যায়, তাহলে সে যেন ‘বিসমিল্লাহি আওয়াল্লাহু অ আখেরাহ।” (তিরমিজি ১৮৫৭ নং) (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
ঘোড়ার গোশত খাওয়া বৈধ কি?
সহিহ হাদিসের মতে ঘোড়ার গোশত হালাল। হানাফি মাজহাবের বড় ইমামগণও হালাল বলছেন। আবু জাফর ত্বাহাবি হালাল হওয়ার কথাই প্রাধান্য দিয়েছেন। যেহেতু হারাম হওয়ার দলিলে হাদিস সহিহ নয়। (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
পরিবেশন করার সময় বুজুর্গকে আগে দিতে হবে, নাকি ডান দিক থেকে শুরু করতে হবে?
ডান দিক থেকেই শুরু করতে হবে। অবশ্য বুজুর্গ বা যে চেয়ে খেতে চাইবে তাকে আগে দিতে হবে। (আলবানী, সিসিঃ ১৭৭১ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
কোন কাফের দাওয়াত দিলে খাওয়া বৈধ কি?
কোন কাফেরের দাওয়াতে হালাল খাদ্য খাওয়া অবৈধ না। আল্লাহর ওয়াস্তে তার মনকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য খাওয়া যায়। আমাদের আদর্শ নবী কাফেরদের দাওয়াতে তাদের তৈরি হালাল খাদ্য খেয়েছেন। অবশ্য তাদের পূজা (তদনুরূপ মাজারিদের উরস) উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, মূর্তি বা মাজারে উৎসর্গকৃত খাদ্য, ঠাকুরের প্রসাদ, মাজারের তবরুক ইত্যাদি খাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু তাতে শিরকে মৌন সম্মতি ও সমর্থন প্রকাশ পায়।
(মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্য্যাহ ২৬/১০৯,২৮/৮২, ৮৪)
(মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্য্যাহ ২৬/১০৯,২৮/৮২, ৮৪)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
কাফেরদের প্রস্তুতকৃত খাদ্য খাওয়া বৈধও কি?
কাফেরদের প্রস্তুতকৃত খাদ্য ও পানীয় খাওয়া আবৈধ নয়। যেমন তাদের প্রস্তুত, সেলাই ও ধৌত করা কাপড় ব্যবহার করা বৈধ। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/২০০)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
কোন কাফেরকে ইসলামে নিষিদ্ধ খাবার খেতে দেয়া বৈধ কি?
সহকর্মী বা কার্যক্ষেত্রে কোন অমুসলিমকে এমন জিনিস উপহার বা পানাহার করতে দেয়া বৈধ নয়, যা তাদের ধর্মে বৈধ হলেও ইসলামে অবৈধ। যেমন কোন কাজ করার সময় লেবার কে মদ বা বিড়ি সিগারেট পেশ করাও অবৈধ। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/১১০)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর পানাহার আবদুল হামীদ ফাইযী
এক ব্যাক্তি গাড়ি কিনবে। সে এক গাড়ির ডিলারের কাছে গেল। কিন্তু তার কাছে সেই গাড়ি নেই, যা সে কিনবে। যোগাযোগের মাধ্যমে অন্য ডিলারের কাছ থেকে তাকে গাড়ি নিয়ে দিল নগদ ১ লক্ষ টাকা দামে। তারপর সে তার নিকট থেকে কিস্তি চুক্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিল। কিস্তি দিয়ে অতিরিক্ত ওই ২০ হাজার টাকা খাওয়া কি ওই ডিলারের জন্য হালাল?
ওই ২০ হাজার টাকা হালাল নয়। কারণ তা সুদ। যেহেতু তা এক লক্ষ ধার দিয়ে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার মতোই। পক্ষান্তরে ওই ডিলার যদি ওই গাড়ি কিনে নিজের শো রুমে রেখে ওই ক্রেতাকে কিস্তিতে ওই দামেই বিক্রি করত, তাহলে সুদ হতো না। (ইবনে উসাইমিন)
পানাহারের আদব বিষয়ে কিছু কথা ------
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
পানাহারের আদব বিষয়ে কিছু কথা
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অতি প্রয়োজনীয় বস্ত্ত হল খাদ্য ও পানীয়। জীবন ধারণের জন্য এ খাদ্য হালাল হওয়া অতিব জরুরী। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
‘‘অবশ্যই আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র (মালই) কবুল করে থাকেন। আল্লাহ মু’মিনদেরকে সেই আদেশ করেছেন, যে আদেশ করেছিলেন নবী-রসূলগণকে। তাই তো তিনি নবী-রসূলগণরে উদ্দেশ্যে বলেন,
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
অর্থাৎ, হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্তসমূহ থেকে আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।[1] আর তিনি (মু’মিনদের উদ্দেশ্যে) বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ
আল্লাহর রসূল (সাঃ) একদা কা’ব বিন উজরার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘‘হে কা’ব বিন উজরাহ! সে মাংস কোন দিন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার পুষ্টিসাধন হারাম খাদ্য দ্বারা করা হয়েছে।’’[4]
রসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন-
يَا كَعْبَ بْنَ عُجْرَةَ، إِنَّهُ لاَ يَرْبُو لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلاَّ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ
‘‘হে কা’ব বিন উজরাহ! যে মাংস হারাম খাদ্য দ্বারা প্রতিপালিত হবে, তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।’’[5]
পানাহারের বিভিন্ন আদব রয়েছে ইসলামে। যে সকল আদব পালন করলে মানুষের চরিত্র ও সুম্বাস্থ্য গড়ে ওঠে। সেই আদবের কিছু পরবর্তী অংশে।
[1]. সূরা মু’মিনূন-২৩: ৫১
[2]. সূরা বাক্বারাহ-২:১৭২
[3]. মুসলিম হা/১০১৫, তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা/২৯৮৯, মিশকাত হাদীস একাডেমী হা/২৭৬০
[4]. দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৭৭৬, মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৪৪৮১, সহীহ, ইমাম মুসলিমের শর্তে সনদ শক্তিশালী।
[5]. সহীহ তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা/৬১৪,
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
১। সোনা-চাঁদির পাত্রে খাওয়া বৈধ নয়
যেহেতু এ হল অহংকারী কাফেরদের পাত্র। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমরা সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করো না। কারণ, তা দুনিয়াতে কাফেরদের জন্য এবং আখেরাতে তোমাদের জন্য।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি (সোনা)-চাঁদির পাত্রে পান-(আহার) করে, আসলে সে ব্যক্তি নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্ঢক্ করে পান-(আহার) করে।’’[2]
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৬৩৩, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৬৭
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৬৩৪, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৬৫
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
২। অমুসলিমদের পাত্রে (তাদের দোকান ও হোটেলে) খাওয়া নিষেধ
তবে তাদের পাত্র (দোকান বা হোটেল) ছাড়া যদি মুসলিমদের কোন পাত্র (দোকান বা হোটেল) না পাওয়া যায়, তাহলে নিরুপায় অবস্থায় তাদের সেই পাত্র (ধোয়ার পর তাদের দোকান বা হোটেলে) খাওয়ার অনুমতি রয়েছে।[1]
[1]. বুখারী, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/১৯৩০
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
৩। ঠেস বা হেলান দিয়ে খাওয়া অপছন্দনীয় কাজ
মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আমি হেলান দিয়ে খাই না।’’[1] তিনি হেলান দিয়ে খেতে নিষেধও করেছেন। তিনি (সাঃ) বলেন- لَا تَأْكُلْ مُتَّكِئًا ‘‘হেলান দিয়ে খেয়ো না’’।[2] যেভাবে খেলে হেলান দিয়ে খাওয়া হয়, সেইভাবে খাওয়া মকরূহ। দেওয়াল বা চেয়ারের সাথে পিঠের অথবা মাটির সাথে বাম হাতের হেলান দিয়ে খাওয়া অপছন্দনীয়। যেহেতু অনুরূপ বসা বিনয়ীদের লক্ষণ নয় এবং হেলান দিয়ে খেলে বেশী খাওয়া হয়। আর বেশী খাওয়া ইসলামে বাঞ্ছনীয় নয়। উবুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া নিষেধ। রসূল (সাঃ) বলেন
وَأَنْ يَأْكُلَ الرَّجُلُ وَهُوَ مُنْبَطِحٌ عَلَى بَطْنِهِ
‘‘ কোন ব্যক্তি যেন উবুর হয়ে পেটের উপর ভর করে না খায়’’।[3] সুতরাং খেতে বসার সঠিক ও সুন্নাতী বৈঠক হল নিম্নরূপঃ
إِنَّ اللَّهَ جَعَلَنِي عَبْدًا كَرِيمًا وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا عَنِيدًا
‘‘আল্লাহ আমাকে সম্মানিত বান্দা বানিয়েছেন এবং অহংকারী ও উদ্ধত বানাননি।’’[4]
(খ) উভয় পায়ের রলাকে খাড়া রেখে উভয় পাছার উপর বসা। মহানবী (সাঃ) এরূপ বসে খেজুর খেয়েছেন।[5]
ডান পা-কে খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসে খাওয়া চলে।[6] অবশ্য এরূপ বসে খাওয়া সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়।
সতর্কতার বিষয় যে, দুই পা-কে গুটিয়ে আড়াআড়িভাবে রেখে হাঁটু ভাঁজ করে (বাবু হয়ে) বসে খাওয়াকেও অনেকে হেলান দিয়ে খাওয়ার মধ্যে গণ্য করেছেন।[7] অবশ্য অসুবিধার কারণে অথবা কাপড় খারাপ হওয়ার ভয়ে সেভাবে বসে খাওয়া হারামও নয়।
[1]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৮২৭৯, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৩৯৯
[2]. সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩১২২
[3]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৭৪, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৩৭০, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৩৯৪, সহীহ।
[4]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৭৩, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৬৩, সহীহ।
[5]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৪৪ প্রমুখ
[6]. ফতহুল বারী ৯/৪৫২
[7]. শারহুন নাওয়াবী ১৩/২২৭
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
৪। খাবার সময় খাবার প্রস্ত্তত হয়ে গেলে এবং সলাতের সময় এসে উপস্থিত হলে আগে খাবার খাবেন, তারপর সলাতে যাবেন। যাতে সলাতের একাগ্রতা নষ্ট না হয়।
মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘নামাযের ইকামত হলে এবং রাতের খানা উপস্থিত হলে, আগে খানা খেয়ে নাও।’’[1]
ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-
إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ عَلَى الطَّعَامِ فَلاَ يَعْجَلَنَّ حَتَّى يَقْضِىَ حَاجَتَهُ مِنْهُ وَإِن أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ
‘যখন কেউ খেতে বসবে তখন খাওয়া শেষ না করা পর্যন্ত সে যেন তাড়াহুড়া না করে; যদিও নামাযের ইকামত হয়ে যায় তবুও।’[2]
[1]. আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, সহীহুল জা’মে হা/৩৭৪
[2]. সুনানুল বাইহাক্বী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫২৪২
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
৫। খাবার শুরু করার আগে ও পরে উভয় হাতকে ধুয়ে নিন
অবশ্য এ কেবল আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য। নচেৎ খাবার আগে হাত ধোয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।[1]
অবশ্য খাবার পর হাত ধোয়ার ব্যাপারটাও প্রকৃতিগত রুচির ব্যাপার। তবুও ইসলামে এর নির্দেশ এসেছে। খোদ মহানবী (সাঃ) খাবার পরে কুলি করেছেন এবং হাত ধুয়েছেন।[2]
তিনি (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি হাতে গোশতের গন্ধ ও চর্বি না ধুয়ে তা নিয়েই ঘুমায়, অতঃপর কোন বিপদ ঘটে, তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে।’’[3] এখানে কোন বিপদ বলতে, হাত না ধুয়ে শোওয়ার ফলে চর্বির গন্ধে আরশোলা, ইঁদুর বা অন্য কোন প্রাণী হাত বা আঙ্গুল কাটতে বা কামড়াতে পারে। তাছাড়া এতে কোন রোগ বা শয়তানী স্পর্শ হওয়ারও কারণ থাকতে পারে।
পক্ষান্তরে যদি আপনি নাপাক অবস্থায় গোসল করার আগে খাবার খেতে চান, তাহলে আপনার জন্য ওযূ মুস্তাহাব। আল্লাহর নবী (সাঃ) নাপাক অবস্থায় কিছু খেতে অথবা ঘুমাতে চাইলে আগে ওযূ করে নিতেন।[4] অবশ্য কেবল হাত ধুয়ে খাওয়াও চলবে। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) নাপাকে থেকে যখন ঘুমাবার ইচ্ছা করতেন, তখন ওযূ করে নিতেন এবং যখন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন দুই হাত ধুয়ে নিতেন।[5]
[1]. আল-আদাবুশ শারইয়্যাহ ৩/২১৪
[2]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৭৪৮৬, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৪৯৩
[3]. আহমাদ ৭৫১৫, আবূ দাঊদ হা/৩৮৫২, তিরমিযী হা/১৮৬০, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৯৭, দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২০৬৩
[4]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ২৮৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৩০৫, প্রমুখ
[5]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৪৩৫৩, নাসাঈ হা/ ২৫৬
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
৬। খাবার শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন এবং শেষ করার পর আল্লাহর প্রশংসা করুন
এই আদব পালনে খাবার ঠিকমত দেহে কাজ করা এবং তার অপকারিতা দূর করার ব্যাপারে বড় প্রভাব রয়েছে। ইমাম আহমাদ বলেন, খাবারে ৪টি জিনিস জমা হলে সে খাবার পরিপূর্ণ হয়; খাবার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা, (একাধিক লোকের) অনেক হাত পড়া এবং তা হালাল হওয়া।[1]
আল্লাহর নাম নিয়ে খেতে শুরু করলে শয়তানের প্রভাব ও শরীক হওয়া থেকে বাঁচা যায়। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘অবশ্যই শয়তান (মুসলিমের) খাবার খেতে সক্ষম হয়; যদি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না বলা হয়।---’’[2]
তিনি আরো বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন নিজ বাড়ি প্রবেশ করার সময় এবং খাবার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে, তখন শয়তান (তার সঙ্গীদেরকে) বলে, ‘তোমাদের জন্য রাত্রিযাপনের স্থানও নেই এবং রাতের খাবারও নেই।’ যখন সে বাড়ি প্রবেশ করার সময় আল্লাহর নাম নেয় এবং রাতে খাবার সময় না নেয়, তাহলে শয়তান বলে, ‘তোমরা রাতের খাবার পেলে, কিন্তু রাত্রিযাপনের জায়গা নেই।’ আর যখন সে খাবার সময়েও আল্লাহর নাম না নেয়, তখন শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গাও পেলে এবং খাবারও পেলে।’’[3]
উল্লেখ্য যে, খাবার শুরুতে কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ই বলবেন। তার সঙ্গে ‘আর-রাহমানির রাহীম’ যোগ করবেন না। যেহেতু তার কোন দলীল নেই।
بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ
‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু অআ-খিরাহ।’’
অর্থ: আল্লাহর নামে খাওয়ার শুরু ও শেষ করছি।[4]
খাবার সময় আরো মান্য আদব এই যে, খাবার পর ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বা নির্দিষ্ট দু‘আ পড়তে হয়। যেমনঃ (ক)
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি অআত্বইমনা খাইরাম মিন্হ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দাও এবং এর চেয়ে উত্তম আহার দান কর।[5] (খ) খাবার দুধ হলে বলুন,
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-রিক-লানা ফীহি অযিদনা মিন্হ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দান কর এবং আমাদেরকে এর প্রাচুর্য দাও।[6]
(গ) এই দু‘আটি পাঠ করলে পূর্বেকার গোনাহ মাফ হয়ে যায়।[7]
اَلْحَمْدُ للهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلاَ قُوَّةً
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী অলা ক্বুউওয়াহ।
অর্থঃ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই।[8]
অন্যান্য আরো দু‘আর বই-এ দেখুন। তবে সতর্কতার বিষয় যে, খাওয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে যে দু‘আ পড়বেন, তার অর্থ যেন বুঝেন। নচেৎ আপনার মনে সেই প্রশংসা ও শুক্র স্থান না পেলে মুখে মন্ত্র আওড়িয়ে লাভ কি?
খাবার খেতে খেতে মাঝে মাঝে অথবা প্রত্যেক লোকমা খাওয়ার শেষে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলার স্পষ্ট দলীল নেই। অবশ্য অনেকে সেই হাদীসকে এর দলীল মনে করেন, যাতে মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন যে, বান্দা খাবার খেয়ে তার উপর তাঁর প্রশংসা করুক এবং পানীয় পান করে তার উপর তাঁর প্রশংসা করুক।’’[9]
এখানে ‘খাবার ও পানীয়’ বলতে এক সময়ের খাবার বা পানীয়কে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ বলেছেন, প্রত্যেক লোকমাও বুঝা যেতে পারে।[10] অল্লাহু আ’লাম (আল্লাহ ভাল জানেন)।
[1]. যাদুল মাআদ ৪/২৩২
[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৭, আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৬
[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৮, আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৫
[4]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৭, তিরমিযী হা/১৮৫৮
[5]. আবূ দাঊদ হা:৩৭৩০, তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৫
[6]. আবূ দাঊদ হা:৩৭৩০, তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৫
[7]. সহীহ তিরমিযী ৩/১৫৯
[8]. তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৮, ইবনে মাজাহ তাওহীদ পাবঃ হা:৩২৮৫
[9]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৭৩৪, তিরমিযী হা/১৮১৬, নাসাঈ
[10]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৪৩৭
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
৭। পানাহার করুন ডান হাতে। দুই হাতে খাবার ধরতে হলেও একটার পর একটা ডান হাতে নিয়েই খান। বাম হাতে খাবেন না
কেননা আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার বাম হাত দ্বারা অবশ্যই না খায় এবং পানও না করে। কারণ, শয়তান তার বাম হাত দিয়ে পানাহার করে থাকে।’’
বর্ণনাকারী বলেন, (ইবনে উমার (রাঃ) এর স্বাধীনকৃত দাস তাবেয়ী) নাফে’ (রাঃ) দুটি কথা আরো বেশী বলতেন, ‘‘কেউ যেন বাম হাত দ্বারা কিছু গ্রহণ না করে এবং অনুরূপ তার দ্বারা কিছু প্রদানও না করে।’’[1]
উমার বিন আবী সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি শিশুবেলায় আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর কোলে (বসে খাবার সময়) আমার হাত পাত্রের যেখানে-সেখানে পড়লে তিনি আমাকে বললেন,
« يَا غُلاَمُ سَمِّ اللَّهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ »
‘‘ওহে বৎস! আল্লাহর নাম নাও, তোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং নিজের পাশ্বে থেকে খাও।’’[2]
একদা এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকট বাম হাত দিয়ে কিছু খাচ্ছিল। তিনি তা লক্ষ্য করে তাকে বললেন, ‘‘তুমি ডান হাত দিয়ে খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারি না।’ রসূল (সাঃ) বললেন, ‘‘তুমি যেন না পার। অহংকারই ওকে (আদেশ পালনে বিরত রেখেছে)।’’ সালামাহ বলেন, ‘সুতরাং (এই বদ্দুআর ফলে) সে আর তার হাতকে মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।’[3] কিন্তু যার ডান হাত নেই অথবা ব্যবহার করার ক্ষমতা নেই সে নিরুপায় হয়েই বাম হাত ব্যবহার করবে।
[1]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২০, তিরমিযী হা/১৮০০, মালেক, আবূ দাউদ ৩৭৭৬
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/৫৩৭৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫৩৮৮৮, মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৩৭৫
[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২১
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
৮। খাবার (এক শ্রেণীর হলে) পাত্রের এক ধার থেকে খান, নিজের পার্শ্ব থেকে খান। খাবার পাত্রের মাঝখান হতে খাওয়া উচিত নয়
কারণ, মহানবী (সাঃ) উমার বিন আবী সালামাহ (রাঃ) কে বলেছিলেন, ‘‘ওহে বৎস! আল্লাহর নাম নাও, তোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং নিজের তরফে একধার থেকে খাও।’’[1]
মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন পাত্রের উপর (মাঝখান) থেকে না খায়। বরং পাত্রের নিচে (একধার) থেকে খায়। কারণ বরকত তার উপর (মাঝখান) অংশে নাযিল হয়।’’[2]
[1]. বুখারী, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২২
[2]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৪৩৫, আবূ দাঊদ হা/৩৭৭২, তিরমিযী হা/১৮০৫, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৭৭, দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২০৪৬
ইসলামী জীবন-ধারা পানাহারের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
৯। সুন্নাত হল তিনটি আঙ্গুল (বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা) দ্বারা (রুটি, খেজুর প্রভৃতি) খাবার খাওয়া
আল্লাহর রসূল (সাঃ) তিনটে আঙ্গুল দিয়েই খাবার খেতেন।[1]
0 Comments