জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ২২৫৬তম পর্বে দাঁড়িয়ে পানি পান করলে গুনাহ হবে কি না,
প্রশ্ন : দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর : দাঁড়িয়ে পানি পান করার বিষয়টি রাসুল (সা.) একাধিকবার নিষেধ করেছেন। সুতরাং, উত্তম হচ্ছে বসে পানি পান করা, দাঁড়িয়ে পান না করা।
তবে সাহাবা কেরাম হাঁটাচলা অবস্থায় পানি পান করতেন এবং খেতেন। যদি কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে দাঁড়িয়ে পান করতে পারবেন। কিন্তু অপ্রয়োজনে বসে পান করবেন, দাঁড়িয়ে পান করবেন না।
পানি পান করার সুন্নাহ এবং আদব হলো, বসে পান করা। কিন্তু দাঁড়িয়ে পান করলে এই কাজটি কি হারাম হবে, তিনি কি গুনাগার হবেন? এটা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। শেখ নাসির উদ্দিন আলবানী (রা.) তাঁর গবেষণার মধ্যে রাসুল (সা.)-এর নিষেধাজ্ঞাকে কঠিনভাবে উল্লেখ করেছেন। আল তাহকিক মাহকিক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, সাহাবারা দাঁড়িয়ে পান করেছেন, এমনকি রাসুল (সা.) জমজমে দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন, তা সাব্যস্ত হয়েছে।
এখান থেকে বোঝা যায়, যদি কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, শুধু তাহলে দাঁড়িয়ে পান করা জায়েজ।
হাদিসঃ--পরিচ্ছদঃ ৭৪/১৬. দাঁড়ানো অবস্থায় পান করা।
৫৬১৫. নাযযাল (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কূফা মসজিদের ফটকে ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট পানি আনা হলে তিনি দাঁড়িয়ে তা পান করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে পান করাকে মাকরূহ মনে করে, অথচ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তোমরা আমাকে যেমনভাবে পান করতে দেখলে তিনিও তেমনি করেছেন। [৫৬১৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০০)
প্রকাশ থাকে যে, এখানে পর পর ৩টি হাদীস সহীহ্ সানাদে ইমাম বুখারী (রহ.) স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন। দাঁড়িয়ে পানি পান করার বৈধতার পক্ষে উক্ত ৩টি হাদীস দেখা যাচ্ছে। আমাদের এদেশে কাউকে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে দেখলে তার সম্পর্কে ভীষণ খারাপ ধারণা পোষণ করা হয়, যা একেবারেই অমূলক, অযৌক্তিক বটে। রসূল ﷺ এবং ‘আলী দাঁড়িয়ে পানি পান করেছিলেন বলে সহীহ্ সানাদে এখানে যে ৩টি হাদীসের উল্লেখ রয়েছে তাতে সত্যই প্রমাণিত হয় যে, দাঁড়িয়ে পানি পান করা দূষণীয় নয়। রসূল (ﷺ)-এর ‘আমালকে অস্বীকার করা শয়তানের প্ররোচনা ব্যতীত আর কিছুই নয়। যে কোন অবস্থায়ই রসূল (ﷺ) এর চেয়ে বেশী তাক্বওয়া ও পরহেজগারী দেখানো নিঃসন্দেহে ভন্ডামি। অতএব উপরোক্ত আলোচনা হতে শিক্ষণীয় এই যে, রসূল (ﷺ)-এর অনুগমন অনুসরণ করার মধ্যেই পরহেজগারী সীমাবদ্ধ আছে বলে মানতে হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পরিচ্ছদঃ ৭৪/১৬. দাঁড়ানো অবস্থায় পান করা।
৫৬১৬. নাযযাল ইবনু সাবরা হতে বর্ণিত। তিনি ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি যুহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর তিনি মানুষের নানান প্রয়োজনে কূফা মসজিদের চত্বরে বসে পড়লেন। অবশেষে ‘আসরের সালাত আদায়ের সময় হয়ে গেল। তখন পানি আনা হল। তিনি পানি পান করলেন এবং নিজের মুখমন্ডল ও উভয় হাত ধৌত করলেন। বর্ণনাকারী আদাম এখানে তাঁর মাথা ও দু’ পায়ের কথা উল্লেখ করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন এরপর ‘আলী (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় অযূর উদ্বৃত্ত পানি পান করে নিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ লোকজন দাঁড়িয়ে পান করাকে ঘৃণা করে, অথচ আমি যেমন করেছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তেমন করেছেন। [৫৬১৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পরিচ্ছদঃ ৭৪/১৬. দাঁড়ানো অবস্থায় পান করা।
৫৬১৭. আবূ নু‘আইম (রহ.) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করেছেন। [১৬৩৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
0 Comments