__চিন্তার মানহাজ !!

ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ সাকিব
তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে কোন বিষয়ে জানা বা সঠিক জ্ঞান অর্জন খুব একটা আয়াসসাধ্য কর্ম নয়। মানুষের মেধা ও ইচ্ছাশক্তির সাথে যদি একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা থাকে, তবে সে যে কোন বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের সম্ভাবনা রাখে। কিন্তু সঠিক গন্তব্যে পেঁŠছতে কেবল জ্ঞানার্জনই কি যথেষ্ট? নাকি তাতে আরো বিশেষ কোন পন্থা অবলম্বন করা যরূরী!
বর্তমান যুগে আমরা এমন অনেক যুবক ভাইকে দেখি যারা জ্ঞানার্জন করছে বটে, কিন্তু বিশেষ কোন উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা নিয়ে তারা জ্ঞানার্জন করছে না। অথবা জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে প্রকৃতার্থে তারা কোন সমস্যার সমাধান খুঁজছে না। বরং যেটা তারা পড়ছে বা জানছে তা নিছক বিনোদনের জন্য কিংবা অন্যের সাথে বিতর্ক করার জন্য। আবার এমন কিছু বিষয় নিয়ে তারা জ্ঞানার্জনে ব্যস্ত, যা কিনা বাস্তব জীবনের সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না। অন্যদিকে ভুল পথে জ্ঞানার্জনের ফলে উল্টো তারা পথভ্রষ্টও হচ্ছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ হ’ল জিহাদের নামে জঙ্গীবাদ। হয়তবা এসব তরুণদের মধ্যে আবেগ আছে, ভাল কিছু করার প্রেরণা আছে, কিন্তু জ্ঞানচর্চায় কোন সুশৃংখল ও নিয়মতান্ত্রিক কোন পদ্ধতি তারা অবলম্বন করতে চায় না। দু’একজন বক্তা কিংবা দু’একটি আবেগপূর্ণ লেখনীকে সম্বল করে তারা তাদের চিন্তাধারা গড়ে তোলে। সেখানে না থাকে কোন বিশ্লেষণী শক্তি, আর না থাকে কোন ভারসাম্যতা। ফলে তাদের জ্ঞান তাদেরকে প্রায়শঃই ভুল পথে পরিচালিত করে। এজন্য জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে জ্ঞানকে সঠিক পথে পরিচালনা যরূরী এবং এর জন্য আবশ্যক হ’ল সঠিক চিন্তাধারা। নতুবা জ্ঞানার্জন সত্ত্বেও পথভ্রষ্ট হওয়ার যোর সম্ভবনা থেকে যায়।
সুতরাং জ্ঞানকে যদি সঠিক পথে পরিচালনা করতে হয়, তবে অবশ্যই আমাদেরকে চিন্তার সঠিক গতিপথ নির্ধারণ করতে হবে। বিশ্লেষণী শক্তি অর্জন করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকতে হবে এবং ফলাফল নিয়ে ভাবতে হবে। সৃজনশীলতা থাকতে হবে। সর্বোপরি সারলীকরণ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আর সেটা অর্জন করতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা আবশ্যক। যেমন-   
(১) কুরআন ও হাদীছ অনুযায়ী জ্ঞানকে যাচাই করে নেয়া : এটাই হ’ল জ্ঞানার্জনের মূল সূত্র। দ্বীনের কোন বিষয়ে সঠিক বিষয়টি জানা ও বোঝার জন্য কুরআন ও হাদীছকে যুগপৎভাবে সামনে রাখতে হবে। সেই সাথে ছাহাবীরা কিভাবে সেটি ব্যাখ্যা করেছেন এবং কিভাবে বুঝেছেন তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে (নিসা ৫৯, ১১৫; আশ-শূরা ৫২)অর্থাৎ সালাফদের মানহাজকে সামনে রাখতে হবে। এটাই হ’ল শরী‘আত গবেষণার মূলনীতি। একজন গবেষক যত বড় জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হন না কেন, গবেষণাকালে তিনি যদি এই মূলনীতি মাথায় না রাখেন এবং সেই সাথে নিরপেক্ষতা ও নির্মোহ অবস্থান বজায় রাখতে না পারেন, তবে নিঃসন্দেহে তিনি ভুল করবেন। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা দেখি, মানুষ কোন বিষয়ের সমাধান পূর্ব থেকেই নিজের মনের মধ্যে এঁকে নেন কিংবা নিজস্ব পরিমন্ডল ও পারিপার্শ্বিক প্রভাব থেকে একটা ধারণা বা সিদ্ধান্ত তৈরী করে নেন। অতঃপর তার স্বপক্ষে কুরআন ও হাদীছের দলীল খেঁাজেন। এটা নিরেট স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বার্থদুষ্টতা। এতে কোন ব্যক্তি জ্ঞানবান হওয়া সত্ত্বেও গবেষণা পদ্ধতিতে ভুল থাকায় তিনি স্বভাবতই ভুল পথে পরিচালিত হন (জাছিয়াহ ২৩)
(২) নির্ভরযোগ্য আলেমদের মতামত নেয়া : কোন দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে নিজের জ্ঞানকে সর্বেসর্বা মনে করলেই বিপদ। কোন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা গেছে তা বোধগম্য হওয়ার পরও পুনরায় নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ও তাক্বওয়াশীল আলেমদের সাথে পরামর্শ প্রয়োজন (ইউসুফ ৭৬; নাহল ৪৩-৪৪)বিষয়টি যত বেশী জটিল ও বিতর্কপূর্ণ হবে, তত বেশী আলোচনা-পর্যালোচনার প্রয়োজন। পরিশেষে যেটি কুরআন ও হাদীছের সর্বাধিক অনুকূলে ধারণা হবে সেটিকেই অনুসরণ করতে হবে, যদিও তা নিজের চিন্তাধারার বিপরীত হয় (যুমার ১৮)
(৩) চিন্তায় সামগ্রিকতা থাকা : চিন্তার ক্ষেত্রে আমাদের একটি বড় ত্রুটি হ’ল সমস্যার মূলে না গিয়ে শাখা-প্রশাখা নিয়ে পড়ে থাকা। এতে সমস্যার সমাধান তো হয়ই না, বরং নিত্য-নতুন সমস্যার ডালপালা গজিয়ে উঠতে থাকে। সুতরাং ফলপ্রসূ চিন্তাধারা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সর্বদা মূল সমস্যার প্রতি দৃষ্টি দেয়া। একমুখী বা একদেশদর্শী চিন্তা না করে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করা। যেমন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে যখন আমরা পরস্পর বিপরীত কোন অবস্থার মুখোমুখি হই, তখন যে কোন একটি প্রান্তিকের উপর নির্ভর না করে বিষয়টিকে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করা উচিৎ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আমরা সাধারণতঃ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি এবং আপন স্বার্থ দ্বারা তাড়িত হই। এমনকি অনেকে কুরআন ও হাদীছকে পর্যন্ত নিজের স্বার্থে এবং নিজের মতকে প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহার করে। আর এভাবেই ইখতিলাফ বা মতভেদের সৃষ্টি হয়। যদি স্বীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে মুসলিম উম্মাহর সামগ্রিক স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি থাকত, যদি সাময়িক আবেগের উর্ধ্বে মুসলিম উম্মাহর স্বায়ী কল্যাণের চেতনা তাদের মাঝে জাগ্রত থাকত, সর্বোপরি কুরআন বা হাদীছ তথা দ্বীনের মূল উদ্দেশ্যে যদি তাদেরকে ভাবিত করত, তবে নিঃসন্দেহে তাদের চিন্তাধারা এভাবে ক্ষুদ্র স্বার্থের কাছে বলি হ’ত না। প্রয়োজনে নিজের ক্ষতি বা পরাজয় স্বীকার করে হলেও তারা উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিত।   
(৪) সমাধানমূলক চিন্তা করা : কোন বিষয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে কিংবা আবেগতাড়িত হয়ে জ্ঞানার্জন করা বর্তমান যুগে দ্বীনদার যুবকদের পথভ্রষ্টতার অন্যতম কারণ। সাময়িক কোন প্রেক্ষিতকে কেন্দ্র করে ভাসাভাসা জ্ঞানার্জন করেই তারা বিরাট কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। এদের মধ্যে যারা জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থার সাথে জড়িত, তাদের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তারা কী উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে এবং এর ফলাফলই বা কী- সে সম্পর্কে তাদের ধারণা খুবই অগভীর। কোন প্রকার বিচক্ষণতা ও সমাধানমূলক চিন্তাধারা তাদের মধ্যে কাজ করে না।
অনুরূপভাবে একশ্রেণীর যুবক ছুটছে অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানের পিছনে। রাসূল (ছাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এমন কিছু বিষয় যেমন গাযওয়াতুল হিন্দ, ইমাম মাহদী, দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মাজুজ ইত্যাদি তাদের চূড়ান্ত আকর্ষণের বিষয়। অথচ একজন ঈমানদারের জন্য এসব বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপনই যথেষ্ট। কবে নাগাদ এগুলো বাস্তবে রূপ লাভ করবে তা নির্ণয় করা আমাদের দায়িত্ব নয়। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল কথায় কথায় অলীক কল্পনা আর ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে বেড়ানো, যার কোন বাস্তবতা নেই। এদের মাঝেও কোন সমাধানমূলক চিন্তাধারা দেখা যায় না। কেবল সমস্যা খঁুজেই তারা জীবনপাত করে দেয়। সুতরাং পথভ্রষ্টতা থেকে আত্মরক্ষার জন্য উদ্দেশ্যহীন জ্ঞানার্জন থেকে বেঁচে থাকা অতীব যরূরী। সেই সাথে প্রয়োজন ধ্বংসাত্মক ও সমাধানহীন চিন্তাধারা থেকে ফিরে আসা।   
(৫) চিন্তার ভারসাম্য বজায় রাখা।
দলীল ও বিশ্লেষণী শক্তির ব্যবহারে নিজের চিন্তাকে যেমন শানিত করতে হবে, তেমনি ভিন্ন চিন্তার জন্যও একটি স্পেস বা সুযোগ রাখতে হবে। এছাড়া কোন কথা বা কাজ করার সময় কেন সেটি করলাম, সে বিষয়ে নিজের কাছে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।  ডিসিশন মেকিং থাকতে হবে। এতে চিন্তার ক্ষেত্রে একটি শৃংখলা ও ভারসাম্য তৈরী হবে। কোন হঠকারিতা সেখানে স্থান পাবে না। সেই সাথে আত্মপরতা তথা নিজের মতই চূড়ান্ত ভাবার প্রবণতা থাকবে না ইনশাআল্লাহ। এ প্রসঙ্গে একটি বক্তব্য উল্লেখ করা যায়, যেটি ইমাম শাফেঈর মন্তব্য হিসাবে প্রবাদতুল্য হয়েছে-قولي صواب يحتمل الخطأ، وقول المخالف خطأ يحتمل الصواب ‘আমার কথাটি সঠিক তবে তা ভুল হওয়ারও সম্ভাবনা রাখে এবং বিপক্ষের কথাটি ভুল তবে তা সঠিক হওয়ারও সম্ভাবনা রাখে’। এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তাধারা বজায় রাখলে পারস্পারিক মতভেদগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দূর করা সম্ভব।
পরিশেষে বলব, একটি সভ্য  ও সুশীল সমাজ যেমন গড়ে উঠে জ্ঞানচর্চার উপর, তেমনি জ্ঞানের সঠিক চর্চা ও প্রয়োগ নির্ভর করে সুস্থ, স্বাভাবিক ও গঠনমূলক চিন্তাধারার উপর। সেজন্য চিন্তার মানহাজ সম্পর্কে জানা অতীব যরূরী। বিশেষত আধুনিক সমাজে যখন নানামুখী জ্ঞানচর্চার সুযোগ অবারিত হয়েছে, নানামুখী দল ও মতের সয়লাবে প্লাবিত হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্র, তখন নিজের জ্ঞানচর্চাকে সঠিক পথে রাখার জন্য চিন্তার শৃংখলা ও ইস্তিকামাত ধরে রাখা অপরিহার্য। নতুবা যে কোন সময়ে বাতিলের খপ্পরে পড়ে নিজের আক্বীদা ও আমল বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন!

নতুন ওয়েব সাইট আসিতেছে-http://esoislamerpothe.netবা ডটকম
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments