২০১৯ সালের_অক্টোবর মাস,আত-তাহরিক পত্রিকার এর প্রস্ন উত্তর ৪০ টি,


প্রশ্ন (/) : হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই
-হাফীযুর রহমান, মাদারটেক, ঢাকা।
উত্তর : ‘হেযবুত তওহীদ’ বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি ভয়ংকর পথভ্রষ্ট ধর্মীয় সংগঠন। ২০০৮ সালে সংগঠনটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার (উইকিপিডিয়া)। ১৯৯৫ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়ার গ্রামের পন্নী পরিবারের সন্তান মোহাম্মাদ বায়াজিদ খান পন্নী (১৯২৫-২০১২ খ্রি.) দলটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন রাজনীতিক, শিকারী ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। প্রথম যৌবনে তিনি এনায়াতুল্লাহ মাশরেক্বী (১৮৮৮-১৯৬৩ খ্রি.)-এর বৃটিশবিরোধী ‘খাকসার’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংস্রব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরিবিলি জীবন-যাপন শুরু করেন। এক সময় তার ধারণা হয় যে, বর্তমান ইসলাম বিকৃত ইসলাম। এজন্য তিনি মানুষকে ‘প্রকৃত ইসলাম’-এর পথ দেখাতে দলটির সূচনা করেন। বর্তমান যুগে একশ’ বিশ কোটি মুসলমানের মধ্যে কেবল তার অনুসারী ‘পাঁচ লক্ষ’ মানুষকে তিনি ‘প্রকৃত মুসলমান’ মনে করেন (এসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ১১)। তিনি নিজেকে এই যুগের ইমাম বা এমামুয্যামান হিসাবে দাবী করেন। এই দলের অনুসারীদের বিশ্বাস হ’ল, বায়াজিদ খান পন্নীকে আল্লাহ বর্তমান যুগে সমগ্র মানবজাতির ত্রাতা হিসাবে পাঠিয়েছেন (হিজবুত তওহীদের গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৩)।
তাদের মতে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর একশত বছরের মধ্যেই ইসলাম বিকৃত হয়ে যায়। অতঃপর দীর্ঘ তেরশ’ বছর এই উম্মাহকে (হেযবুত তওহীদের) এই পবিত্র কর্মসূচি থেকে মাহরুম, বঞ্চিত রাখার পর আল্লাহ তাঁর অসীম করুণায় তাঁর দেয়া কর্মসূচির পরিচয় মাননীয় এমামুয্যামানকে বোঝার তাওফীক দিয়েছেন (ঐ, পৃ. ৬৯, ৭১)।
তারা অন্য মুসলমানদের সাথে ছালাত আদায় করে না এবং তাদের সাথে কোন ইবাদতেও অংশগ্রহণ করে না। এই দলে যারা যুক্ত হবে তাদের শপথবাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই দলভুক্ত যারা নয় অর্থাৎ বাকি দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান পথভ্রষ্ট ও বিকৃত ইসলামের অনুসারী। অতএব তাদের সাথে কোন ইবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে না। কেবল এই আন্দোলনের সাথে যুক্তদের সাথেই এবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে (ঐ, পৃ. ৭৩)। এই দলটি আলেম-ওলামার প্রতি চূড়ান্ত বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তারা মনে করে যে, হাদীছ, তাফসীর, ফিকহসহ ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির কারণ (ঐ, পৃ. ১৩; আকিদা, পৃ. ২৩)।
তারা মনে করে যে, আল্লাহ ‘হেযবুত তওহীদ’কেই মানবজাতির উদ্ধারকর্তা হিসাবে মনোনীত করেছেন। কাজেই এই সময়ে যারা মুমিন-মুসলিম হতে চায়, আল্লাহর সঠিক দিক-নির্দেশনা, সত্যপথ লাভ করতে চায় তাদের এমামুযযামানের আনুগত্য করা ছাড়া মুক্তি নেই। ‘হেযবুত তওহীদে’র মাধ্যমে গোটা বিশ্বে প্রকৃত ধর্ম প্রচার হবে। এটা আল্লাহরই নির্দেশ (http://www.hezbuttawheed.org)।
পন্নী আল্লাহর পক্ষ থেকে মু‘জেযা প্রাপ্তির দাবী করে প্রকারান্তরে নিজেকে নবী দাবী করেছেন। যেমন তিনি নিজের একটি ১০ মিনিটের ভাষণকে আল্লাহর মু‘জেযা হিসাবে দাবী করেন এবং প্রচার করেন যে, এই মু‘জেযার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে এবং হেযবুত তওহীদকে হক হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বড় রহমত আর কি হতে পারে? যে মো‘জেযা তিনি নবীদের সময় ঘটাতেন একটা একটা করে, এখন তিনি নিজে এক সাথে ৮টা মো‘জেযা ১০ মিনিটের মধ্যে ঘটিয়ে দিলেন’ (আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৯)।
তাদের গঠনতন্ত্রে লেখা হয়েছে, ‘হেযবুত তওহীদে’র সবচেয়ে বড় মাইলফলক হচ্ছে, ২রা ফেব্রুয়ারী ২০০৮ তারিখে মহান আল্লাহ এক মহান অলৌকিক ঘটনা (মো‘জেযা) সংঘটন করেন যার দ্বারা তিনি তিনটি বিষয় সত্যায়ন করেন। যথা : হেযবুত তওহীদ হক (সত্য), এর ইমাম আল্লাহর মনোনীত হক ইমাম, হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে আল্লাহর সত্য দীন প্রতিষ্ঠিত হবে’। শুধু তাই নয় তারা এই ভাষণটিকে কুরআনের মর্যাদা দিয়ে বলে, ‘কোরআন ও ইমামের এই ভাষণটি একই পর্যায়ভুক্ত। যারা বায়াজিদ খান পন্নীর উপর আল্লাহ প্রদত্ত এই মো‘জেযায় বিশ্বাস করবে না এবং এতে সন্দেহ রাখবে, তারা কুরআনকে অবিশ্বাস করার মত অপরাধী এবং তাদের জন্য উভয় জাহানে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি’ (গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৬; আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ১১-১৭, ৩৩, ৯৩; মহাসত্যের আহবান, পৃ. ২৬-২৭)।
তাদের মতে, হাদীছে বর্ণিত দাজ্জাল কোন প্রাণী নয়, বরং দাজ্জাল হ’ল ‘ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতা’। আধুনিক যুগে এমামুয্যামান তথা পন্নী প্রথম এই দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন এবং তিনি প্রমাণ করেছেন যে, পাশ্চাত্য বস্ত্তবাদী ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে সেই দাজ্জাল, যেই দানব ৪৮১ বছর আগেই জন্ম নিয়ে তার শৈশব-কৈশোর পার হয়ে বর্তমানে যৌবনে উপনীত হয়েছে এবং দোর্দন্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে পদদলিত করে চলেছে। আজ মুসলিমসহ সমস্ত পৃথিবী অর্থাৎ মানবজাতি তাকে প্রভূ বলে মেনে নিয়ে তার পায়ে সিজদায় পড়ে আছে (দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!, পৃ. ৫; মহাসত্যের আহবান, পৃ. ১৩)। তারা নিজ দলের সদস্যদেরকে শেষ যামানায় দাজ্জালের বিরুদ্ধে যোদ্ধা ভাবে এবং তাদের পুরুষ ও নারী সদস্যদের যথাক্রমে মোজাহিদ ও মোজাহিদা সম্বোধন করে। শুধু তাই নয়, মুজাহিদ হিসাবে শাহাদত লাভের প্রমাণ হিসাবে তাদের কর্মীদের মৃত লাশ অন্যদের মত শক্ত বা শীতল হয় না বলে তারা দাবী করে।
পন্নীর ভাষ্যমতে, কোন ব্যক্তি ‘হেযবুত তওহীদে’ যোগ দিলেই দুই শহীদের মর্যাদা পাবে, যদি সে শেষ পর্যন্ত থাকে। শুধু তাই নয়, ‘হেযবুত তওহীদে’ যারা সত্যিকারভাবে এসেছে তাদের জন্য জান্নাত নিশ্চিত। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এখন কে কোন জান্নাতে যাবে তা আমলের উপর নির্ভর করবে (আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৫)।
এই দলের নিকট প্রকৃত ইসলাম হ’ল তাওহীদ ও জিহাদ। আর ইবাদত হ’ল খেলাফত। অর্থাৎ প্রকৃত ইবাদত হ’ল আল্লাহর দেয়া দীন (জীবন-ব্যবস্থা) মোতাবেক তাঁর পক্ষ হয়ে শাসন করা। ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত এগুলো প্রকৃত ইবাদতের কাজ নয় বরং এগুলো জীবন পরিচালনার জন্য কিছু বিধান মাত্র (দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!, পৃ. ৮৭)। এই ইবাদত তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের আক্বীদা ও ঈমানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হ’ল জিহাদ। এমনকি ঈমানের মূল শর্তই হ’ল জিহাদ (ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৪২)। তাই সশস্ত্র জিহাদ ত্যাগ করলে সে আর মুমিন থাকে না, বরং দ্বীন থেকেই সে বহিষ্কৃত হয়ে যায়। ছালাতকে তারা মনে করেন জিহাদের প্রশিক্ষণ। এজন্য তারা সামরিক কুচকাওয়াজের মত সটান ও দ্রুতগতিসম্পন্ন নব্য এক ছালাত রীতি চালু করেছে। তারা মনে করে, উম্মতে মুহাম্মাদী সম্পূর্ণ জাতিটাই সামরিক বাহিনী (ঐ, পৃ. ১৩, ১৯, ৩০-৩১, ৩৫)।
হজ্জ সম্পর্কে তাদের ধারণা, এটি কোন ইবাদত নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মুসলমানদের বার্ষিক সম্মেলন। তাদের ভাষায়- ‘হজ্জ কোন তীর্থ যাত্রা নয়, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। এসলামের অন্য সব কাজের মতোই আজ হজ্ব সম্বন্ধেও এই জাতির আকীদা বিকৃত হয়ে গেছে। এই বিকৃত আক্বীদায় হজ্জ আজ সম্পূর্ণরূপে একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার পথ। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে- আল্লাহ সর্বত্র আছেন, সৃষ্টির প্রতি অণু-পরমাণুতে আছেন, তবে তাঁকে ডাকতে, তাঁর সান্নিধ্যের জন্য এত কষ্ট করে দূরে যেতে হবে কেন?’
তারা বলে, দাড়ি-টুপি-বোরকা ইত্যাদি ইসলামের কোন লেবাস নয়। তাদের আক্বীদা হ’ল, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কোন ধর্মকেই বাতিল করেননি, বরং সবগুলোকে সংরক্ষণ ও সত্যায়ন করেছেন। তাই সব ধর্মই সত্য। সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা (http://www.hezbuttawheed.org)।
তারা ইতিমধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট ও পত্রিকা দৈনিক দেশের পত্র ও দৈনিক বজ্রকণ্ঠ প্রভৃতির মাধ্যমে তাদের বিকৃত আক্বীদা ও আমল ব্যাপকভাবে প্রচার করছে এবং বাংলাদেশের বহু মানুষকে পথভ্রষ্ট করে চলেছে। অতএব এদের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকা একান্ত যরূরী।
প্রশ্ন (/) : কবরস্থানে নিজের কবরের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ক্রয় করা যাবে কিযেন সে স্থানে অন্য কারো কবর না হয়?
-রফীকুল ইসলাম, নোয়াপাড়া, যশোর।
উত্তর : নিজের জন্য কবরের স্থান ক্রয় করে রাখা যায় এবং সেখানে দাফন করার অছিয়তও করা যায়। ওছমান, আয়েশা ও ওমর বিন আব্দুল আযীয এ বিষয়ে অছিয়ত করেছিলেন (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৩/৪৪৩; ড. আব্দুল্লাহ সাহীবানী, আহকামুল মাক্বাবেরাহ ফিশ শারী‘আহ ২৭-২৮ পৃ:)।
প্রশ্ন (/) : বর্তমানে নারীদের বোরক্বা হিজাবে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রং বেরঙের কাপড় ব্যবহার করে আকর্ষণীয় করা হয়। এরূপ আকর্ষণীয় সৌন্দর্যমন্ডিত বোরক্বা হিজাব পরা জায়েয হবে কি?
-মাহফূযা বেগম, গোবরচাকা, খুলনা।
উত্তর : বোরক্বার জন্য নির্ধারিত কোন রঙ নেই। সেটা কালো বা সাদা বা যে কোন রঙের হ’তে পারে। তবে শর্ত হ’ল তা যেন সাদাসিধে ও ঢিলেঢালা হয় এবং পরপুরুষের জন্য আকর্ষণ সৃষ্টিকারী না হয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৭/১০৮-১০৯)। সুতরাং বোরক্বা বা হিজাব এমন নকশাদার হবে না বা এতে এমন সাজ-সজ্জা জায়েয হবে না, যা তাক্বওয়া পরিপন্থী এবং পর্দার উদ্দেশ্য বিরোধী। আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমরা তোমাদের উপর পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি বেশভূষার উপকরণ সমূহ। তবে আল্লাহভীতির পোষাকই সর্বোত্তম (আ‘রাফ ৭/২৬)।
প্রশ্ন (/) : সহো সিজদা দেওয়ার বিধান কিকেউ যদি তা দিতে ভুলে যায় এবং অনেকদিন পর তা স্মরণ হয় তার জন্য করণীয় কিসহো সিজদা সালাম ফিরানোর পূর্বে না পরে দেওয়া উত্তম?
-জাহাঙ্গীর আলম, বাড্ডা, ঢাকা।
উত্তর : রাক‘আত সংখ্যা কম হ’লে বা বেশী হ’লে অথবা কত রাক‘আত হয়েছে তা নির্ণয় করতে না পারলে কিংবা তাশাহহুদ ছুটে গেলে সহো সিজদা দেয়া ওয়াজিব (মুসলিম হা/৫৭১; ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ২৮/২৩)। শাওকানী বলেন, ওয়াজিব ছাড়া পড়লে সহো সিজদা ওয়াজিব হবে, সুন্নাত ছাড়া পড়লে সহো সিজদা সুন্নাত হবে (আস-সায়লুল জার্রার ১/২৭৪)। যদি সহো সিজদা দিতে ভুলে যায় তবে পরে স্মরণ হ’লেই সহো সিজদা দিবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩৮৫; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৫৩৭)। আর সহো সিজদা সালামের পূর্বে ও পরে উভয়ই জায়েয আছে। তবে পূর্বে দেওয়াই উত্তম (ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তাহমীদ ১০/২০১-২০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৭/১৪৮; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫২-১৫৩ পৃ.)।
প্রশ্ন (/) : আমার আশুরার ছিয়াম পালনের খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হায়েযের কারণে তা পালন করতে পারিনি। এক্ষণে এর কাযা আদায় করতে পারব কী?
-জেসমীন খাতূন, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : আশূরার ছিয়াম নফল। আর সাধারণভাবে কোন নফল ইবাদতের কাযা আদায় করার বিধান নেই। অতএব হায়েযা মহিলা যদি পূর্ব থেকে অভ্যস্ত থাকে এবং নেক নিয়ত রাখে, তবে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাকে নেক নিয়তের কারণে পূর্ণ ছওয়াব প্রদান করবেন (নিসা ৪/১০০; হাফেয ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৬/১৩৬; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/৪৩)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, মানুষ রোগে অসুস্থ হ’লে অথবা সফরে থাকলে তার আমালনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হ’ত’ (বুখারী হা/২৯৯৬; মিশকাত হা/১৫৪৪)
প্রশ্ন (/) : সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাবেশ ক্লাসের সময় মেয়েদের দ্বারা কুরআন তেলাওয়াত করানো যাবে কি?
-রবীউল ইসলাম, পুঠিয়া, রাজশাহী।
-রবীউল ইসলাম, পুঠিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : প্রথমতঃ সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা থেকে বিরত থাকা যরূরী। কারণ এইসব প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা তাদের পর্দা রক্ষা করতে পারে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১২/১৫৬)। দ্বিতীয়তঃ কুরআন তেলাওয়াত যেহেতু কোমল কণ্ঠে করতে হয়, ফলে এতে দুর্বল ঈমানের লোকেরা আসক্ত হ’তে পারে (আহযাব ৩৩/৩২)। সুতরাং নারী-পুরুষ মিশ্রিত অনুষ্ঠানে বালেগা নারীর তেলাওয়াত জায়েয নয় (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪/৯১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৮৩; উছায়মীন,  মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২১৯)।
প্রশ্ন (/) : ইসলামে রূপচর্চা করার বিধান কিকালো চেহারাকে ফর্সাকারী ক্রীম ব্যবহার করা যাবে কিএটা কি সৃষ্টির পরিবর্তনের পর্যায়ভুক্ত গুনাহ?
-ইসমাঈল হোসেন সিরাজী
নিজবলাইল, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : দেহের কোন অঙ্গের পরিবর্তন না ঘটিয়ে রূপচর্চায় কোন দোষ নেই। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন (মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮)। রং ফর্সাকারী ক্রীম প্রভৃতি সৃষ্টির স্থায়ী পরিবর্তন ঘটায় না। অতএব এতে বাধা নেই। তবে প্লাস্টিক সার্জারী বা অন্য কোন ঔষধের মাধ্যমে শরীরের রঙে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটানো যাবে না (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২/২)। অনুরূপভাবে ভ্রূ উত্তোলন বা চিকন করা, পরচুলা ব্যবহার করা ও অহংকার প্রকাশের উদ্দেশ্যে রূপচর্চা করা যাবে না (নববী, শরহ মুসলিম ১৩/১০৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে পরচুলা লাগিয়ে নিল এবং যে লাগিয়ে দিল উভয়ের উপর আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩০)। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেন এমন সব নারীর উপর যারা অপরের অঙ্গে উল্কি করে এবং নিজের অঙ্গেও করায়, যারা কপাল বা ভ্রূর চুল উপড়িয়ে ফেলে, যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত সরু ও এর ফাঁক বড় করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পাল্টিয়ে দেয়’। এসময় জনৈকা মহিলা ইবনে মাসঊদের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, আমি শুনতে পেলাম আপনি নাকি এরূপ এরূপ নারীদের লা‘নত করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি কেন তাদের উপর লা‘নত করব না, যাদের উপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লা‘নত করেছেন? (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ‘পোষাক’ অধ্যায় হা/৪৪৩১)।
প্রশ্ন (/) : ছাদাক্বাতুল ফিতর বণ্টনের খাত কোনগুলোএটি কি কেবল ফকীর-মিসকীনদের জন্য খাছ?
-মোমতায আলী খান
উপর বিল্লী, তানোর, রাজশাহী।
উত্তর :  একদল বিদ্বানের মতে, ছাদাক্বাতুল ফিতরের হকদার কেবল ফকীর ও মিসকীনরা। কারণ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন ছায়েমকে অনর্থক কথা ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের জন্য খাদ্যস্বরূপ (আবূদাঊদ হা/১৬০৯; মিশকাত হা/১৮১৮; ছহীহুত তারগীব হা/১০৮৫)। ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, শাওকানী, শায়খ উছায়মীন, শায়খ বিন বায প্রমুখ এই মত পোষণ করেছেন (মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৫/৭১; যাদুল মা‘আদ ২/২২; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২০২)। তবে জুমহূর বিদ্বান সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত ছাদাকার ৮টি খাতেই ফিৎরা বণ্টন করাকে জায়েয বলেছেন। কেননা ফিৎরাও যাকাত ও ছাদাকার অন্তর্ভুক্ত। তবে ফকীর-মিসকীনকে এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে (নববী, আল-মাজমু‘ ৬/১৮৬; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৩/৯৮)।
প্রশ্ন (/) : মসজিদে জমি দানকারীর নাম লেখা যাবে কি?
-রেযাউল করীম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : জমিদাতার নাম মসজিদে না লেখাই উত্তম। কারণ এতে রিয়া বা লোক দেখানো আমল হয়ে থাকে। ফলে দাতা ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হ’তে পারেন। তবে রিয়া অথবা আত্মপ্রচার ব্যতীত কেবল মানুষের অবগতি বা পরিচিতির উদ্দেশ্যে নাম লেখা যেতে পারে। যেমনভাবে মসজিদের পরিচয়সূচক কারো নামে মসজিদের নামকরণ করা যায়। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোত্রের নামে মসজিদের নামকরণ করা হ’ত যেমন মসজিদে মু‘আবিয়া মসজিদে বনু যুরায়েক্ব ইত্যাদি (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১/৫১৫; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/২০৮)।
প্রশ্ন (১০/১০) : নতুন বাড়ী উদ্বোধনকালে বিশেষ কোন দো আছে কিএসময় আলেম-ওলামা বা আত্মীয়-স্বজনদের ডেকে দোআর অনুষ্ঠান বা ভোজসভা করা যাবে কি?
-মুখলেছুর রহমান, সাপাহার, নওগাঁ।
উত্তর : বিসমিল্লাহ বলেই নতুন বাড়িতে প্রবেশ করবে। তাছাড়া বাড়ি উদ্বোধনকালে বিশেষ কোন দো‘আ বর্ণিত হয়নি। তবে আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়াস্বরূপ নিম্নের দো‘আসমূহ পাঠ করা যায়। যেমন مَا شَاءَ اللهُ لَا قُوَّةَ إِلا بِاللهِ ‘মা-শা’আল্লাহ লা-কুওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ (আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া কোন শক্তি নেই) (কাহফ ৩৯, আহমাদ হা/৮৪২৬)। এছাড়াও পড়া যেতে পারে الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‘আলহাম্দু লিল্লাহিল্লাযী বিনি‘মাতিহি তাতিম্মুছ ছ-লিহা-তু’ (সে আল্লাহর প্রশংসা, যাঁর অনুগ্রহে সৎ কার্য সুসম্পন্ন হয়) (ইবনু মাজাহ হা/৩৮০৩, সনদ হাসান)। এছাড়া যাবতীয় অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চেয়ে পড়া যায় أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ، ‘আঊ-যু বিকালিমাতিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন’ (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হ’তে পানাহ চাচ্ছি) (বুখারী হা/৩৩৭১)। অনুরূপভাবে শয়তান বিতাড়নের জন্য সূরা বাক্বারাও পাঠ করা যায় (মুসলিম হা/৭৮০)। আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায়স্বরূপ নতুন বাড়ি উদ্বোধনকালে আলেম-ওলামা, নেককার ব্যক্তি বা পাড়া-প্রতিবেশীদের দাওয়াত করে খাওয়ানো যায়। রাসূল (ছাঃ) সফর থেকে মদীনায় ফিরলে একটি উট বা গাভী যবেহ করতেন এবং অভ্যাগতরা তাতে অংশগ্রহণ করতেন (বুখারী হা/৩০৮৯; ইবনু কুদামাহ, আল-কাফী ৩/১২০, মুগনী ৭/২৮৬; মির‘আত ৭/৪১৭; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৮/২০৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১/২১৪)। তবে নতুন বাড়ি উদ্বোধনের নামে বিশেষ দো‘আর অনুষ্ঠান, মীলাদ প্রভৃতি আয়োজন করা বিদ‘আত।
প্রশ্ন (১১/১১) : আমার একটি পালক পুত্র রয়েছে। সে তার পরিবার ঈদুল আযহায় একই কুরবানীতে আমাদের সাথে শরীক তে চায়। এটা কি জায়েয হবেএকই পরিবারভুক্ত পরিবারের সদস্যরা কি তাদের কুরবানীর টাকা একত্র করে একসাথে কুরবানী করতে পারে?
-মামূনুর রশীদ, সাবগ্রাম, বগুড়া।
উত্তর : পালক পুত্র পরিবারের সদস্য নয় এবং সে মাহরামও নয়। সেজন্য সে সামর্থ্যবান হ’লে আলাদাভাবে কুরবানী করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/৩৬০)। আর একান্নবর্তী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা যদি আলাদাভাবে আয় করে এবং সামর্থ্যবান হয়, তবে প্রত্যেকে আলাদাভাবে কুরবানী করতে পারে অথবা পরিবার প্রধানের নিকট সকলের অর্থ জমা করেও একসাথে কুরবানী করতে পারে। এটিই তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে জনমন্ডলী! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী রয়েছে’ (আবূদাঊদ হা/২৭৮৮; আহমাদ হা/১৭৯২০; মিশকাত হা/১৪৭৮)।
প্রশ্ন (১২/১২) : যে গোত্রের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী রয়েছে সেই গোত্রে রহমত নাযিল হয় না’-মর্মে বর্ণিত হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই
-মুহাম্মাদ আজমল, ভূগরইল, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আলবানী, যঈফাহ হা/১৪৫৬)। তবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে জীবন ও জীবিকায় বরকত হয় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৮)। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ঈমানের বহিঃপ্রকাশ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৪৩)। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম (বুখারী হা/৪৯; মুসলিম হা/১৩)। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় দ্রুত ছওয়াব লাভ  হয় (ইবনু হিববান হা/৪৪০; ছহীহাহ হা/৯৭৮)। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯২২)। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি প্রাপ্ত হবে (আবূদাঊদ হা/৪৯০২; ছহীহাহ হা/৯১৮) ইত্যাদি।
প্রশ্ন (১৩/১৩) : বছরের সর্বোত্তম দিন কোনটিকুরবানীর দিন না-কি আরাফার দিন?
-আরীফুল ইসলাম, বদরগঞ্জ, রংপুর।
উত্তর : বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন কুরবানীর দিন। কারণ কুরবানীর দিনই হজ্জে আকবরের দিন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অবশ্যই কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিন (আহমাদ হা/১৯০৯৮; হাকেম হা/৭৫২২; মিশকাত হা/২৬৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৬৪)। তিনি আরো বলেন, ‘কুরবানীর দিন হচ্ছে এই মহান হজ্জের দিন’ (বুখারী হা/১৭৪২; মুসলিম হা/১৩৪৭; আবূদাঊদ হা/১৯৪৫)। আরাফার দিন শ্রেষ্ঠ দিন মর্মে বর্ণিত হাদীছটি বাতিল (যঈফাহ হা/২০৭)। উল্লেখ্য যে, সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হ’ল জুম‘আর দিন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জুম‘আর দিন সকল দিনের নেতা, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) আল্লাহ তা‘আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। (২) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। (৩) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন। (৪) এ দিনে এমন একটা মুহূর্ত আছে যে সময় বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/১০৮৪; ছহীহাহ হা/১৫০২)। এক্ষণে সমন্বয়ের প্রশ্নে ইমাম ইবনু তায়মিয়াকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিদ্বানদের ঐক্যমতে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হ’ল জুম‘আর দিন। আর বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হ’ল কুরবানী দিন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/২৮৮)।
প্রশ্ন (১৪/১৪) : ঘুমপড়াশুনারান্না-বান্না ইত্যাদি কাজের সময় অডিও কুরআন চালু করে রাখা জায়েয হবে কিকেননা এসময় কখনো মনোযোগ থাকে আবার কখনো থাকে না
-মুস্তাফীযুর রহমান, ঢাকা।
উত্তর : এসকল অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াতের অডিও চালু রাখা জায়েয। যেকোন অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করলে ছওয়াবপ্রাপ্ত হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে তাতে অমনোযোগিতা না আসে এবং কুরআনের প্রতি অবমাননা না হয় (আ‘রাফ ৭/২০৪; ছালেহ ফাওযান, আল-মুনতাক্বা ৩/৪৩৭; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৪/১৪৬)।
প্রশ্ন (১৫/১৫) : বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় ঈদের জামাআত মসজিদে হয়েছে। ফলে পূর্বে পুরুষদের জামাআত পরে মহিলাদের জামাআত হয়। এক্ষণে মহিলাদের জামাআতের পূর্বে কুরবানী করা যাবে কি?
-রবীউল ইসলাম, মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : পুরুষদের ঈদের জামা‘আত সম্পন্ন হ’লেই কুরবানী করা যাবে। উক্ত স্থানে মহিলাদের ঈদের জামা‘আত অতিরিক্ত। অতএব সেজন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন (১৬/১৬) : কুরবানীর পশুর চামড়া ছাদাক্বা করা কি আবশ্যিকউক্ত চামড়া খাওয়া যাবে কি?
-এ.কে.এম শামসুর রহমান, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : কুরবানী চামড়া দ্বারা কুরবানী দাতা উপকৃত হ’তে পারবেন অথবা ফকীর-মিসকীনকে ছাদাক্বা করে দিতে পারবেন। কিন্তু এর মূল্য ভক্ষণ করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করল (অর্থাৎ বিক্রয়লব্ধ মূল্য ভোগ করল) তার কুরবানী হ’ল না (হাকেম, বায়হাক্বী; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১১৮)। যদি ছাদাক্বার সুযোগ না থাকে, তবে নিজে যে কোন কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হ’তে পারবে (আল-মাজমূ‘ ৮/৪২১)। আলক্বামা ও মাসরূক (রহঃ) কুরবানীর চামড়াকে পাকিয়ে মুছল্লা বানিয়ে তাতে ছালাত আদায় করতেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪১০৪-০৫)।
আর যবহকৃত হালাল পশুর প্রবাহিত রক্ত ব্যতীত সবই হালাল (আন‘আম ৬/১৪৫)। হানাফী কিতাব সমূহে আরো ছয়টি বস্ত্ত হারাম বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু সেগুলি সব ক্বিয়াসী বা অনুমান নির্ভর। সুতরাং হালাল পশুর চামড়া যদি কেউ খেতে চায়, খেতে পারে। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সবকিছু থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং ক্ষতি করো না (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০)। কেননা এতে খাদ্য গ্রহণের লক্ষ্য ব্যাহত হয় (ফৎহুল ক্বাদীর বাক্বারাহ ২/১৬৮; মায়েদাহ ৫/৮৮; আনফাল ৮/৬৯)।
প্রশ্ন (১৭/১৭) : বছর কুরবানীর চামড়ার মূল্য অল্প হওয়ায় অনেকে তা ফেলে দিয়েছে বা মাটিতে পুঁতে ফেলেছে। কাজ কি সঠিক হয়েছে?
-এম, এ, মান্নান, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : কোন হালাল জিনিস অপচয় করা সিদ্ধ নয় (বনু ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭)। অতএব কুরবানীর চামড়া এভাবে নষ্ট করা মোটেও ঠিক হবে না। বরং অল্প দামে হ’লেও বিক্রয় করা বা সরাসরি ফকীর ও মিসকীনকে দান করতে হবে। নতুবা কমপক্ষে নিজে ব্যবহার করে উপকৃত হ’তে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৪১৫; যাকারিয়া আনছারী, আসনায়াল মাতালিব ১/৫১৫)।
প্রশ্ন (১৮/১৮) : আমার জমির সামনে সরকারী জমি রয়েছে। আমি উক্ত জমিতে চাষাবাদ করি এবং এর ফসল ভোগ করি। এতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই। সরকারের কাছ থেকে জমি ইজারা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তাতে ঘুষ দিতে হয় এবং লম্বা আইন-কানূনের ফাঁদে পড়তে হয়। এক্ষণে আমি উক্ত জমির ফসল ভোগ করতে পারব কি?
-আব্দুল্লাহ, মাইজদি, নোয়াখালী।
উত্তর : সরকারের বাধা না থাকলে উক্ত ভূমি চাষাবাদ করে তার ফসল ভোগ করা জায়েয। কারণ এধরনের জমি হাদীছে ঘোষিত মৃত জমির মত। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন অনাবাদী জমি আবাদ করবে সেটি তার (আবূদাঊদ হা/৩০৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯৭৫)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যে লোক মালিকবিহীন এমন কোন যমীন আবাদ করে, সে-ই তার হকদার (আহমাদ হা/২৪৯২৭; মিশকাত হা/২৯৯১)। উল্লেখ্য যে, সরকারী খাস জমি অনাবাদী থাকলেও তা মালিকানা বিহীন জমির মত নয়। অতএব সরকার যে কোন সময় মালিকানা দাবী করলে তা ছেড়ে দিতে হবে অথবা সরকারের নিকট থেকে নিয়মমাফিক ইজারা নিতে হবে (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৫/৪১৭)।
প্রশ্ন (১৯/১৯) : সরকারী বিধি অনুযায়ী চাকুরীর বয়সসীমা ৫৯ বছর। কিন্তু সার্টিফিকেটে মূল বয়সের চেয়ে আমার বয়স বছর কম লিখিত রয়েছেযা আমি সম্প্রতি জানতে পেরেছি। এক্ষণে অতিরিক্ত পাঁচ বছর চাকুরী করা কি আমার জন্য বৈধ হবে এবং সময়ে প্রাপ্ত বেতন কি আমার জন্য হালাল হবে?
-আযহারুল ইসলাম, পরানপুর, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সরকারী নিয়ম-কানূনের কারণে কিংবা ব্যক্তির মূল বয়স সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ইতিপূর্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হ’ত। অতএব সরকার নির্ধারিত নিয়মেই উক্ত অতিরিক্ত পাঁচ বছর চাকুরী করা বৈধ হবে এবং এর বেতন নেওয়াও বৈধ হবে ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া উক্ত বেতন ব্যক্তির পরিশ্রমলব্ধ আয়ও বটে। তবে বর্তমানে জন্মনিবন্ধন সনদের নীতিমালা তৈরী হওয়ার পর জেনে-শুনে কেউ যদি চাকুরীর বয়স বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সার্টিফিকেটে বয়স কম-বেশী করে, তবে সেটা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার শামিল হবে, যা হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০১; মিশকাত হা/৩৫২০)।
প্রশ্ন (২০/২০) : কোন প্রাণীর ছবি পিছন থেকে আঁকা কি জায়েযঅর্থাৎ প্রাণীর মাথা যদি বিপরীতমুখী হয় এবং সুস্পষ্ট বোঝা না যায়তা কি নাজায়েয হবে?
-আব্দুল গাফফার
পুরাতন বাজার, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : পিছন থেকে মানুষের প্রতিকৃতি অঙ্কনে যদি চোখ, মুখ ও নাকের আকৃতি বোঝা না যায় তবে তা জায়েয হবে। কেননা মাথা না থাকলে তা ছবি হিসাবে গণ্য হয় না (ইবনু কুদামাহ. মুগনী ৮/১১১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/২৭৮-৭৯)। জিব্রীল (আঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘সুতরাং ঐ প্রতিকৃতিগুলোর মাথা কেটে ফেলুন, যা ঘরের দরজায় রয়েছে, তা কাটা হ’লে তখন তা গাছ-গাছড়ার আকৃতি হয়ে যাবে’ (আবূদাঊদ হা/৪১৫৮; মিশকাত হা/৪৫০১; ছহীহাহ হা/৩৫৬)। তিনি আরো বলেন, ‘ছবি হ’ল মাথা। মাথা যখন কেটে ফেলা হবে তখন সেটি ছবি থাকে না’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৬৪; ছহীহাহ হা/১৯২১)। তবে স্মর্তব্য যে, অপ্রয়োজনে কোন প্রাণীর ছবি আকা জায়েয নয়।
প্রশ্ন (২১/২১) : হারানো বস্ত্তর সন্ধান লাভরোগের কারণ চিকিৎসা সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা ইত্যাদি কাজে জিনের সহযোগিতা নেওয়া যাবে কি?
-ইমরান হোসাইন, বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর : জিন অদৃশ্য জাতি, যাদের দেখা যায় না। তারা যেকোন সময় একটি সত্যের সাথে বহু মিথ্যা মিলিয়ে মানুষকে শিরকে লিপ্ত করতে পারে। এছাড়া তাদের মিথ্যার ফলে মানব সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হ’তে পারে। অতএব উক্ত বিষয়সমূহে জিনের সহযোগিতা নেওয়া জায়েয হবে না। ইমাম আহমাদ, শায়খ বিন বায, ছালেহ ফাওযানসহ আধুনিক যুগের ওলামায়ে কেরাম অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন (ইবনুল মুফলেহ, আল-আদাবুশ-শারঈয়া ১/২১৮-১৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৬০৩; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪/১৮; আল-মুনতাক্বা ১/৩৮৮; আল-ফাতাওয়ায যাহাবিয়াহ ১৯৮ পৃ.)। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘আর কিছু মানুষ কোন জিনের কাছে আশ্রয় চাইত। তাতে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা আরও বাড়িয়ে দিত’ (জিন ৭২/০৬)। তবে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, সৎ জিনদের থেকে সহায়তা নেওয়া যায় যেমন সৎ মানুষের নিকট থেকে সহায়তা নেওয়া যায় (মাজমূউল ফাতাওয়া ১৩/৮৭)
প্রশ্ন (২২/২২) : চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক সময় রোগীকে পেথিড্রিন মরফিনের মত মাদকদ্রব্য দিতে হয়। বাধ্যগত অবস্থায় এসব দ্রব্য ব্যবহারে কোন বাধা আছে কি?
-ডা. আশরাফ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর।
উত্তর : বাধ্যগত অবস্থায় ঔষধ হিসাবে এধরনের মাদকদ্রব্য রোগীর জন্য ব্যবহার করা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৫/৭৭-৭৮)। তবে ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে কিছু শর্ত আরোপ করেছেন। যেমন (১) যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুকু ব্যবহার করবে (২) দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক রোগীর উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে অনুমোদন থাকতে হবে (৩) এটি কেবল তখনই ব্যবহার করা যাবে, যখন তা ব্যতীত নিরাময়ের বৈধ কোন ব্যবস্থা থাকবে না (৪) এগুলো ব্যবহার করাতে উপকারের চেয়ে বেশী বা সমান ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা ব্যবহার করা যাবে না (ড. হাসান ফাকী, আহকামুল আদভিয়া ফী শরী‘আতিল ইসলামিয়াহ ২৭৬ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৩/২৩) : ঋতুবতী মহিলা মাইয়েতকে গোসল দিতে পারবে কিবিশেষতঃ মাইয়েত যদি তার ব্যাপারে অছিয়ত করে যায়
-হাবীবুর রহমান, খড়িবাড়ি, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : ঋতুবতী মহিলা কোন মহিলা মাইয়েতকে গোসল দেওয়াতে পারবে। এ ব্যাপারে শরী‘আতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৩৬৯)।
প্রশ্ন (২৪/২৪) : যাকাত বণ্টনের আটটি খাতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক কি?
-ওয়ালিউল্লাহ, কাটাখালী, রাজশাহী।
উত্তর : কুরআনে বর্ণিত আটটি খাত আল্লাহ ধারাবাহিকতার জন্য উল্লেখ করেননি। অতএব কেউ যদি প্রথমে ঋণগ্রস্তকে দিয়ে সূচনা করে তাতে কোন দোষ হবে না। বণ্টনকারী যেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রদান করতে চাইবে, সেখানেই প্রদান করবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৫৬)।
প্রশ্ন (২৫/২৫) : জিন জাতির কি বংশ বিস্তার হয়তাদের স্ত্রী সন্তান আছে কি?
-হাফেয লুৎফর রহমান, আমচত্বর, রাজশাহী।
উত্তর : জিন জাতি বিবাহ করে এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তবে তারা কিভাবে বিবাহ করে ও সন্তান-সন্ততি হয় তা অজ্ঞাত। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে (শয়তান) ও তার বংশধরগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু (কাহফ ১৬/৫০)। অত্র আয়াতে স্পষ্টভাবে জিনদের সন্তানের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, সেখানে রয়েছে আনতনয়না রমণীগণ, যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি’ (আর-রহমান ৫৫/৫৬)। ইবনু হাজার হায়তামী বলেন, এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, জিনদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি রয়েছে (আল-ফাতাওয়াল হাদীছিইয়াহ ৬৬ পৃ:)। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, অত্র আয়াতে দলীল রয়েছে যে, ঈমানদার জিনেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। যামরাহ বিন হাবীবকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, জিন কি জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সেখানে তারা নারী জিনকে বিবাহ করবে। যেমন ঈমানদার পুরুষেরা তাদের নারীদের বিবাহ করবে’ (ইবনু কাছীর, ঐ আয়াতের তাফসীর)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, জিন জাতি তিন প্রকার। একপ্রকার জিনের ডানা আছে, তারা শূন্যে উড়ে বেড়ায়। দ্বিতীয় প্রকারের জিন সাপ ও কুকুরের আকৃতি ধারণ করে। আর তৃতীয় প্রকারের জিন কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে অন্যত্র চলেও যায় (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬১৫৬; মিশকাত হা/৪১৪৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩৩৮৬)।
প্রশ্ন (২৬/২৬) : মৃত প্রাণীর চামড়া দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে কি?
-আতীকুল ইসলাম, বি,এম কলেজ রোড, বরিশাল।
উত্তর : মৃত প্রাণীর চামড়াকে যদি প্রক্রিয়াজাত করা হয় তাহ’লে তা দ্বারা উপকার গ্রহণ করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/৯৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/৭৪-৭৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৯/৬৫৯)। যেমন হাদীছে এসেছে, ‘চামড়া যখন পাকা (দাবাগাত) করা হয়, তখন তা পবিত্র হয়ে যায়’ (মুসলিম হা/৩৬৬; মিশকাত হা/৪৯৮)।
মৃত প্রাণীর চামড়া দ্বারা উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (আবূদাউদ হা/৪১২৭; আহমাদ হা/১৮৮০৫; ছহীহ ইবনু হিববান হা/১২৭৮, সনদ ছহীহ) জুমহূর বিদ্বানগণের মতে তা অপ্রক্রিয়াজাত চামড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
প্রশ্ন (২৭/২৭) : অনেকে বলে থাকেনমুহাররম মাসে বিবাহ -শাদী করা অশুভ বড় ক্ষতির কারণ। একথার সত্য কি?
-আজীবর রহমান, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : মুহাররম মাসে বিবাহ-শাদীতে কোন ক্ষতি বা অশুভ লক্ষণ নেই। বরং শী‘আ রাফেযীরা এই মাসে হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদত উপলক্ষে শোক প্রকাশার্থে বিবাহ-শাদী হারাম বা অপসন্দনীয় ঘোষণা করেছে। এটা সুস্পষ্ট অপসংস্কৃতি এবং সুন্নাহ বিরোধী ধারণা। যেমন জাহেলী যুগে শাওয়াল মাসে বিবাহ-শাদী করাকে অশুভ মনে করা হ’ত। হযরত আয়েশা (রাঃ) এই ধারণাকে খন্ডন করেছেন এই মর্মে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন এবং এ মাসেই আমার সাথে বাসর করেছেন। অথচ তাঁর অনুগ্রহ লাভে আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে? (মুসলিম হা/১৪২৩; মিশকাত হা/৩১৪২; আল-বিদায়াহ ৩/২৫৩)।
প্রশ্ন (২৮/২৮) : মাক্বামে মাহমূদ কিএটা কি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছকোন ব্যক্তি এই অবস্থান লাভের জন্য দো করতে পারবে কি?
-জাহাঙ্গীর আলম, আজীজুল হক কলেজ, বগুড়া।
উত্তর : মাক্বামে মাহমূদ’ বা প্রশংসিত স্থান হ’ল এমন একটি স্থান যেখানে দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ) তাঁর উম্মতের জন্য সুফারিশ করবেন (বুখারী হা/৭৪৪০; মুশকিলুল আছার হা/৮৫০; ছহীহাহ হা/২৩৬৯)। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করবে। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উঠাবেন’ (ইসরা ১৭/৭৯)। এই স্থানে দাঁড়িয়ে সুফারিশের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) স্বয়ং এই স্থানকেই সুফারিশ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘মাক্বামে মাহমূদ হচ্ছে সুফারিশ’ (আহমাদ হা/১০২০৩; সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৩৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭২১)। তিনি আরো বলেন, ‘ক্বিয়ামতের মাঠে মানুষকে উঠানো হবে। আমি ও আমার উম্মত একটি উপত্যকার উপর থাকব। আমার প্রতিপালক আমাকে সবুজ আলখেল্লা পরাবেন। তারপর আমাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন আমি আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বলব। এটাই হচ্ছে মাক্বামে মাহমূদ’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৩৭০, ২৪৬০, ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৪৪৫)। উক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে সুফারিশের জন্য আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পাঠাবেন। আর সে স্থানটিই মাক্বামে মাহমূদ। উক্ত স্থানটি কেবল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্য খাছ, অন্য কারু জন্য নয়। অতএব উক্ত স্থান নিজে লাভ করার জন্য দো‘আ করার সুযোগ নেই। বরং আযানের দো‘আয় ‘ওয়াব‘আছহু মাক্বামাম মাহমূদা নিল্লাযী ওয়াআদতাহ’ বাক্য দ্বারা আমরা আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত এই প্রার্থনা করি যে, আল্লাহ যেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে তাঁর প্রতিশ্রুত এই স্থানটি প্রদান করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযানের এই দো‘আটি পাঠ করবে তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’ (বুখারী হা/৬১৪)।
প্রশ্ন (২৯/৪৬৯) : একটি হাদীছে অসুখের জন্য সূরা ফাতিহাআয়াতুল কুরসীসূরা নাসফালাক্ববাক্বারাআলে-ইমরানহাশরমুমিনূনজীন প্রভৃতি সূরার কিছু কিছু আয়াত পড়ার কথা এসেছে। উক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা কোন অমুসলিমকে ঝাড়-ফুঁক করা যাবে কি?
-হাফীযুর রহমান, কুষ্টিয়া।
উত্তর : প্রথমতঃ উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫৪৯, আহমাদ হা/২১২১২)। তবে পবিত্র কুরআনের যেকোন অংশ পড়ে ফুঁক দেওয়া যাবে। কেননা কুরআনকে আল্লাহ ‘শিফা’ বা ‘আরোগ্য’ বলেছেন (বনু ইসরাঈল ১৭/৮২)। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর কালাম দ্বারা অমুসলিমকে ঝাড়-ফুঁক করায় কোন বাধা নেই (বুখারী  হা/৫৭৩৬)।
প্রশ্ন (৩০/৩০) : ছালাতের সকল দো আরবী ভাষায় পড়তে হবেমাতৃভাষায় পড়লে ছালাত কবুলযোগ্য হবে না- একথা সঠিক কিএর পিছনে দলীল কি?
-জাহিদ আলী, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : ছালাতের ভাষা আরবী। তাই দো‘আও আরবীতেই পাঠ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমাদের এ ছালাতে মানুষের কথাবার্তা সিদ্ধ নয়। এটা হ’ল তাসবীহ, তাকবীর এবং তেলাওয়াতে কুরআন’ (মুসলিম হা/৫৩৭; মিশকাত হা/৯৭৮)। ছালাতের মধ্যে অন্য ভাষায় দো‘আ করার ব্যাপারে কোন দলীল বর্ণিত হয়নি। এর মধ্যে বিশ্ব মুসলিমের ইবাদতের ক্ষেত্রে ঐক্যের সূক্ষ্ম তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। যেমন আযান, সালাম ও দো‘আ সমূহ পাঠ ইত্যাদি। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মানুষের উচিত কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত মাসনূন দো‘আসমূহ পাঠ করা (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৩৪৬)। যদি নিজের বিশেষ কোন প্রার্থনা থাকে, তবে সেটা মাসনূন দো‘আর মাধ্যমেই চাইতে হবে। এজন্য বাংলা ভাষাতে উচ্চারণ করে প্রার্থনার কোন প্রয়োজন নেই। বরং মনের নিয়তই যথেষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার মনের খবর রাখেন।
প্রশ্ন (৩১/৩১) : পিতামাতার ঋণ থাকলে সন্তান কিভাবে তা শোধ করবেনিজের উপার্জিত সম্পদ থেকে সন্তান পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য কি?
-ছফীউল্লাহ, গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর : সন্তান পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। আল্লাহ তা‘আলা মীরাছের আলোচনা শেষে বলেন, মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর (নিসা ৪/১১)। তবে নিজ সম্পত্তি থেকে পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করা সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ৫/২৩২)। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করা পিতা-মাতার খেদমতের অংশ ও অফুরন্ত ছওয়াবের কাজ হওয়ায় সন্তান নিজ দায়িত্বে তা পালন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। কেননা ঋণ অবশ্য পূরণীয় বিষয়। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয়, তবুও সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হয় (নাসাঈ হা/৪৬৮৪; মিশকাত হা/২৯২৯)। জাবের (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মারা গেল। আমরা তার গোসল দিলাম, সুগন্ধি মাখালাম ও কাফন পরালাম। অতঃপর আমরা জানাযার জন্য তাকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট নিয়ে এলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তার কোন ঋণ আছে কি? আমরা বললাম, দুই দীনার ঋণ আছে। তখন তিনি ফিরে গেলেন। তখন আবু ক্বাতাদাহ উক্ত ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিল। অতঃপর আমরা তাঁর নিকটে পুনরায় এলাম এবং আবু ক্বাতাদাহ বলল, উক্ত দুই দীনার পরিশোধের দায়িত্ব আমার উপর রইল। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঋণগ্রস্ত নির্ধারিত হ’ল এবং মাইয়েত দায়মুক্ত হ’ল? আবু ক্বাতাদাহ বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জানাযা পড়ালেন। একদিন পরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ঐ দুই দীনারের অবস্থা কি? আবু ক্বাতাদাহ বললেন, মাত্র গতকালই লোকটি মারা গেছে। পরের দিন রাসূল (ছাঃ) তার নিকটে পুনরায় এলেন। আবু ক্বাতাদাহ বললেন, আমি তার দুই দীনার পরিশোধ করেছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘এখন ঐ মাইয়েতের চামড়া ঠান্ডা হ’ল’ (আহমাদ হা/১৪৫৭৬, ছহীহুল জামে‘ হা/২৭৫৩)। এতে বুঝা যায় যে, কেবল দায়িত্ব নিলেই মাইয়েতের আযাব দূর হবে না, যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হবে (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৫/২৮৫ ‘ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দায়মুক্ত হবে না’ অনুচ্ছেদ)। অতএব পিতার ঋণ শোধ করতে সন্তান বাধ্য না হ’লেও তার বড় কর্তব্য হবে সেটা পরিশোধ করা।
প্রশ্ন (৩২/৩২) : নামের শেষে আলীমুরতাযাহাসানহোসাইনইত্যাদি যুক্ত করে নাম রাখলে গুনাহ হবে কি?
-আহমাদুল্লাহ, টাঙ্গাইল।
উত্তর : উপরোক্ত সবগুলি নামই সুন্দর অর্থ বহন করে। সুতরাং তা রাখায় কোন দোষ নেই। তবে শী‘আদের আক্বীদা অনুযায়ী রোগমুক্তি ও বিশেষ ফযীলতের আশায় এগুলি রাখা হ’লে তা শিরক হবে। শী‘আরা বলে থাকে, আমার জন্য পাঁচজন রয়েছেন যাদের মাধ্যমে আমি সকল দুরারোগ্য ব্যাধি দূর করি। তারা হলেন, মুছতফা, মুরতাযা, তাঁর দুই পুত্র (হাসান-হোসায়েন) ও ফাতেমা’।
প্রশ্ন (৩৩/৩৩) : মাজমাউয যাওয়ায়েদকানযুল উম্মাল মুসনাদে বায্যার গ্রন্থ তিনটির লেখক কিতাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই
-শু‘আইব, হরতকিতলা, নীলফামারী।
উত্তর : (১) মুসনাদে বায্যার’ ১৮ খন্ডে সমাপ্ত একটি হাদীছ গ্রন্থ। গ্রন্থটির প্রকৃত নাম البحر الزخَّار বা ‘কানায় কানায় পূর্ণ সাগর’। পরবর্তীতে মুসনাদ বায্যার নামে খ্যাতি লাভ করে। গ্রন্থটির সংকলক হ’লেন ইরাকের বছরায় জন্মগ্রহণকারী খ্যাতনামা মুহাদ্দিছ আবুবকর আহমাদ ইবনু আমর বিন আব্দুল খালেক আল-বায্যার (মৃ. ২৯২ হিঃ) (যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১০/৫৩২)। এটি মুসনাদ গ্রন্থ হওয়ায় ছাহাবীগণের ধারাক্রম অনুযায়ী গ্রন্থটিকে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হাদীছ রয়েছে। (২) ‘মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ওয়া মামবাউ‘ল ফাওয়ায়েদ’     (مجمع الزوائد ومنبع الفوائد) গ্রন্থটিও একটি হাদীছ সংকলন গ্রন্থ। এর সংকলক হ’লেন আবুল হাসান নূরুদ্দীন আলী ইবনু আবি বকর আল-হায়ছামী (মৃ.৭৩৫-৮০৭হিঃ)। তিনি একজন প্রখ্যাত মিসরীয় মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক ছিলেন। এই গ্রন্থে তিনি কুতুবে সিত্তাহ বহির্ভুত যে সকল হাদীছ মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে বায্যার, মুসনাদে আবু ইয়া‘লা মুছেলী এবং ইমাম ত্বাবারাণী-এর মু‘জাম গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে তা একত্রিত করেছেন। ১২ খন্ডে বিভক্ত এই গ্রন্থে প্রায় ১৯ হাযার হাদীছ রয়েছে (ইবনুল ইমাদ, শাযারাতুয যাহাব ৯/১০৫)। (৩) ‘কানযুল উম্মাল’ একটি সুবিস্তৃত হাদীছ সংকলন গ্রন্থ। এর পুরো নাম كنز العمال في سنن الأقوال والأفعال। এর সংকলক হ’লেন হিন্দুস্তানী মুহাদ্দিছ আলাউদ্দীন আলী ইবনু হিশামুদ্দীন (মৃ. ৯৭৫হিঃ)। তিনি ‘আলী মুত্তাকী হিন্দী’ নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি ভারতের বুরহানপুরে (জৈনপুর) জন্মগ্রহণ করেন এবং হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছ ছিলেন। তিনি মূলতঃ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (মৃ. ৯১১হিঃ) রচিত الجامع الصغير ও الجامع الكبير হাদীছ গ্রন্থ দু’টি সংক্ষেপ ও পুনর্বিন্যাস করে এই গ্রন্থটি রচনা করেন। তিনি হাদীছের সনদ এমনকি বর্ণনাকারী ছাহাবীর নাম বাদ দিয়ে কেবল বিষয় ভিত্তিক হাদীছগুলিকে একত্রিত করেন। ১৮ খন্ডে বিভক্ত এই গ্রন্থে ৪৬,৬২৪টি হাদীছ রয়েছে। যার মধ্যে ছহীহ হাদীছের সাথে অসংখ্য যঈফ ও জাল হাদীছও রয়েছে।
প্রশ্ন (৩৪/৩৪) : জেহরী ছালাতের ইমামের সূরা ফাতিহা পড়ার পর কেউ জামাআতে শামিল লে তার করণীয় কীসে ইমামের ক্বিরাআত শুনবে না সূরা ফাতিহা পাঠ করবে?
-আহসান তালুকদার, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : সূরা ফাতিহা পাঠ করে ইমামের ক্বিরাআত শুনবে। কারণ সূরা ফাতিহা পাঠ ছাড়া ছালাত হবে না (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২)।
প্রশ্ন (৩৫/৩৫) : প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে কুকুরবিড়ালপাখি বা অন্যান্য প্রাণীর ব্যবসা করা বৈধ কি?
-আসাদুল্লাহ, সাহেব বাজার, রাজশাহী।
উত্তর: পশু চরানো, শিকার করা এবং ক্ষেত-খামার ও বাড়ি-ঘর পাহারা দেওয়া এই তিন উদ্দেশ্যে কেবল কুকুর পালন করা যাবে। এতদ্ব্যতীত শুধু প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে বা শখের বশে কুকুর পোষা যাবে না কেননা অন্য উদ্দেশ্যে কোন কুকুর বাড়িতে রাখলে এক ক্বীরাত তথা ওহোদ পাহাড় সমপরিমাণ নেকী কমে যাবে (মুসলিম হা/১৫৭৫, মিশকাত হা/৪০৯৯, ইবনু হাজার ৩/১৯৪-১৯৫)। অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যতীত অন্য সকল কুকুরকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম হা/১৫৭১, মিশকাত হা/৪১০১)। দ্বিতীয়তঃ চোখের উপর সাদা চিহ্ন ওয়ালা কুচকুচে কালো কুকুর কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে না। কারণ এগুলো শয়তান, যাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে (মুসলিম হা/১৫৭২, মিশকাত হা/৪১০০)।
আর পাখি, বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণী প্রতিপালন করা যেতে পারে। তবে তাদের সময়মত খেতে ও পান করতে দিতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৩৮-৪০; বিন বায, ফাতাওয়া ওলামায়িল বালাদিল হারাম ১৭৯৩ পৃ:)। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) আমাদের প্রতি উৎফুল্ল মেযাজ ও সম্প্রীতি প্রদর্শন করতেন। এমনকি আমার ছোট ভাইকেও জিজ্ঞেস করতেন, হে আবু উমায়ের! তোমার ‘নুগায়ের’ অর্থাৎ ছোট্ট বুলবুলিটি কোথায়? উমায়ের-এর একটি ছোট্ট বুলবুলী পাখি ছিল। সেটা নিয়ে সে খেলা করত। পাখিটি মারা গিয়েছিল (তাকে সান্ত্বনা দিয়ে রাসূল (ছাঃ) উক্ত কথা বলেন) (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮৮৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার বলেন, পাখি প্রতিপালন করা জায়েয হওয়ার দলীল এই হাদীছ থেকেই গ্রহণ করা হয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) আবু উমায়েরের উক্ত কাজকে অস্বীকৃতি দেননি (ফাৎহুল বারী ১০/৫৪৮)। অনুরূপভাবে ছাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বিড়াল প্রতিপালনের জন্য রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক ‘বিড়ালের পিতা’ উপাধি পেয়েছিলেন (বুখারী হা/২৫৩০-৩১)। ‘হুরায়রা’ অর্থ ছোট বিড়াল। সুতরাং কুকুর ব্যতীত অন্যান্য প্রাণী প্রতিপালন করা ও ব্যবসা করা বৈধ।
প্রশ্ন (৩৬/৩৬) : যে ব্যক্তি কুরবানীর নিয়ত করেছেসে যদি যিলহজ্জের চাঁদ ওঠার পর চুল-নখ ইত্যাদি কর্তন করেতবে তার বিধান কিতাছাড়া এরূপ চুল-নখ কর্তনের পিছনে হেকমত কি?
-মারজান মারযূক, লাবসা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : কুরবানীর নিয়তকারী নখ ও চুল কাটা থেকে বিরত থাকবে। কেউ যদি ভুলে নখ ও চুল কেটে থাকে তাহ’লে সেটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে না। আর কুরবানীর নিয়তকারী যদি ইচ্ছা করে এই সময়ের মধ্যে নখ ও চুল কর্তন করে তাহ’লে তাকে আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে। তবে সেজন্য কোন ফিদইয়া বা কাফফারা দিতে হবে না (শায়খ বিন বায,  ফাতাওয়া ইসলামিয়া ২/৩১৬)। চুল ও নখ কর্তন না করার হেকমত সম্পর্কে আল্লাহ সর্বাধিক অবগত। তবে বিদ্বানগণের মতে, এতে মক্কায় অবস্থানরত হাজীদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপিত হয়। সেই সাথে কুরবানী হ’ল ক্ষমার মাধ্যম এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়। চুল ও নখ কর্তনের মাধ্যমে শরীরের এসকল অতিরিক্ত অংশকেও আল্লাহর ক্ষমা ও মুক্তির ঘোষণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রশ্ন (৩৭/৩৭) : হিজরী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো যাবে কি?
-আব্দুল হালীম, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : যাবে না। কারণ প্রথমতঃ অমুসলিমদের অনুকরণে এসব দিবস পালিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবূদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়)।
দ্বিতীয়তঃ এ ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরাম বা তাবেঈন থেকে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। সেজন্য নিজ থেকে কাউকে হিজরী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৪৫৪)। তবে কেউ যদি দো‘আ হিসাবে বলে যে, আগামী হিজরী বছর আপনার জন্য কল্যাণকর হৌক! তবে তার জওয়াবে তার মত বা তার থেকে উত্তম কিছু বলা যাবে। কিন্তু এজন্য খাবার তৈরি করা বা কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৪/২৫৩; ফাতাওয়া ইসলাম, প্রশ্ন নং ২১২৯০; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১০/৯৩)
প্রশ্ন (৩৮/৩৮) : নারীরা পিতাভাইসন্তান তথা মাহরাম পুরুষদের সামনে কতটুকু পরিমাণ সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবেজনৈক আলিম বলেনমুখ হস্তদ্বয় ব্যতীত অন্য কিছু তাদের সামনে প্রকাশ করা যাবে না। একথা সঠিক কি?
-বিলকীস আরা, নরেন্দ্রপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : নারীরা তাদের মাহরামদের সামনে তাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে (নূর ২৪/৩১)। ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, মাহরাম পুরুষদের জন্য নারীর ঐ সকল অঙ্গ দেখা জায়েয, যা সাধারণত প্রকাশ পেয়ে যায়। যেমন মাথা, হাঁটু, পা, হাত এবং অনুরূপ অঙ্গগুলো। আর সেগুলো দেখা যাবে না, যা তারা ঢেকে রাখে। যেমন বুক, পিঠ এবং অনুরূপ অঙ্গগুলো (মুগনী, ৯/৪৯১-৯২; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৭১, ২৭৬; আলবানী, তালখীছ আহকামিল জানায়েয ৩০ পৃ:)। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তা শালীনতা বিরোধী না হয়।
প্রশ্ন (৩৯/৩৯) : স্ত্রী পরপুরুষের সাথে অবাঞ্ছিত কথা বলত। স্বামী হুঁশিয়ারী স্বরূপ বলেছিল, যদি এরপর ঐ ব্যক্তির সাথে কথা বল, তাহ’লে তুমি তালাক। কিন্তু স্ত্রী তার সাথে কথা বলা অব্যাহত রাখে। এর ৫/৬ মাস পর স্বামী আবারও অনুরূপ কথা বলে। কিন্তু স্ত্রী তার অভ্যাস পরিবর্তন করেনি। পরে স্বামী তাকে তালাক দেয়। কিন্তু সহবাস বন্ধ করেনি। এক্ষেত্রে স্বামী উক্ত কথা বলার কারণে স্ত্রী কি তালাক হয়েছে? যদি তালাক হয়ে থাকে তবে ক’টি তালাক হয়েছে? এ মুহূর্তে স্ত্রীকে কি পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিতে হবে?
-হাফীযুর রহমান, টঙ্গী, গাযীপুর।
উত্তর : শর্তসাপেক্ষে তালাক প্রদানকালে যদি স্বামী তালাকের নিয়ত করে থাকে তবে দুই বারে দু’টি তালাক হয়েছে এবং একটি তালাক অবশিষ্ট আছে। এক্ষণে যেহেতু শারঈ পন্থায় ইদ্দতের মধ্যে রাজ‘আত করা হয়নি সেহেতু নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিতে পারবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২০/৮৬)। আর যদি তালাকের নিয়ত ছাড়া শাসনের উদ্দেশ্যেও ‘তালাক’ বলে থাকে, তবুও জুমহূর বিদ্বানের মতে তালাক হয়ে যাবে। কেননা তালাক কোন তুচ্ছ বা তামাশার বিষয় নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তিনটি বিষয় রয়েছে যেগুলি বাস্তবে বা ঠাট্টাচ্ছলে করলেও তা ধর্তব্য। আর তা হ’ল বিবাহ, তালাক এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া (আবূদাউদ হা/২১৯৪; মিশকাত হা/৩২৮৪, সনদ হাসান)। অবশ্য ইবনু তায়মিয়াহ ও উছায়মীন (রহঃ) সহ কতিপয় বিদ্বান মতপ্রকাশ করেছেন যে, স্রেফ স্ত্রীকে শাসনের নিয়ত থাকলে এবং প্রকৃতপক্ষে তালাকের নিয়ত না থাকলে তালাক হবে না। সেক্ষেত্রে তাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে (ইবনু ‘তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৮৩; উছায়মীন, ফাতাওয়া আল-মারআতুল মুসলিমাহ ২/৭৫৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/৮৬)।
প্রশ্ন (৪০/৪০) : জুমআর ছানী খুৎবায় দরূদ পাঠ করা কি যরূরী?
-আবুল বাশার, হুজুরীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : জুম‘আর খুৎবায় দরূদ পাঠ করা সুন্নাত। সেটি প্রথম বা দ্বিতীয় খুৎবায় হ’তে পারে। তবে এটি পাঠ করা আবশ্যিক নয়। উছায়মীন বলেন, এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না, যার মাধ্যমে খুৎবায় দরূদ পাঠ করাকে ওয়াজিব বলা যায় (আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৫৩)। তবে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াসহ একদল বিদ্বান দরূদ পাঠকে ওয়াজিব এবং খুৎবার রুকন বলে উল্লেখ করেছেন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৩৯১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৯/১৭৭)। উল্লেখ্য যে, খুৎবায় তাশাহহুদ পাঠ করা ওয়াজিব। তথা খুৎবাতুল হাজত পাঠ করা ওয়াজিব (আলবানী, ছহীহাহ হা/১৬৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। যেমন হাদীছে এসেছে, ‘যেসব খুৎবায় (বক্তৃতায়) তাশাহহুদ পাঠ করা হয় না তা পঙ্গু হাতের সমতুল্য’ (আবূদাঊদ হা/৪৮৪১; মিশকাত হা/৩১৫০; ছহীহাহ হা/১৬৯; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৩৯১)।
নতুন ওয়েব সাইট আসিতেছে-http://esoislamerpothe.netবা ডটকম
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update) -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothecholi.in ,comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments