🔴আক্বিদাহ যদি সঠিক না হয়, তাহলে সমস্ত কথা ও কাজ বাতিল!!
__________________________
শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “আক্বিদাহ যদি সঠিক না হয়, তাহলে সমস্ত কথা ও কাজ বাতিল।” ফতোয়া ইবনে বাজঃ ১/১৩, আল-ইফতা।
অনেক ভাইয়েরা এই কথাটার দলিল বা উৎস জানতে চেয়েছেন। নীচে আমি আক্বীদাহ শব্দের অর্থ এবং আকীদাহ সঠিক না হলে সমস্ত আমল বাতিল, এই কথার দলিল উল্লেখ করছি।
আরবী ‘আক্বদ’ শব্দ থেকে ‘আক্বীদাহ’, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বন্ধন বা গিঁট, Knot.
ইসলামী পরিভাষায় একজন মুসলিম ব্যক্তির ‘মৌলিক ধর্মীয় বিশাস’ (ইংরেজীতে Creed) এর এক একটি বিষয়, (যেমন আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ ‘রাসুল’ বা আল্লাহর প্রেরিত দূত, জিব্রাঈল আ’লাইহি সালাম আল্লাহর নাযিলকৃত ওয়াহী নিয়ে আসতেন, ‘তাক্বদীর’ বা মানুষের ভাগ্য আল্লাহ নিয়ন্ত্রন করেন এবং তিনি তা লিখেও রেখেছেন, ইত্যাদি) বিষয়গুলোকে আক্বীদাহ বলা হয়। কারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো গিঁটের মতোই মানুষের অন্তরের সাথে জোড়া লেগে থাকে, যা সহজে ভেঙ্গে যায়না বা নষ্ট হয়না।
হামযা ইউসুফ নামক একজন আমেরিকান রিভার্ট মুসলিম, যিনি সূফী মতবাদ গ্রহণ করেছেন, তিনি দাবী করেছেন, “আকিদাহ শিক্ষা করার উপর জোর দেওয়া একপ্রকার ব্যধি।”
নোমান আলী খান নামক অন্য একজন আমেরিকান ‘ইউটিউব বক্তা’ যিনি সুন্নাহ সম্পর্কে কোন জ্ঞান ছাড়াই ক্বুরআন খুলে তাফসীর পড়ানো আরম্ভ করেছেন, তিনি দাবী করেছেন, “আক্বীদাহ কথাটি ক্বুরআনে নেই, সুতরাং আক্বিদাহ শিক্ষা করাকে এতো গুরুত্ব দেওয়া ঠিকনা।”
এটা আসলে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে তাদের মূর্খতাপূর্ণ বক্তব্য ছাড়া আর কিছুইনা। ক্বুরআনে ‘তারাবীহ’ শব্দ নাই, ‘দাজ্জাল’ শব্দ নাই, তাই বলে আমরা কি এইগুলো শিক্ষা করা বাদ দেবো? এটা আসলে মূর্খতা, আপনারা এমন মূর্খতাপূর্ণ কথা-বার্তা থেকে সাবধান থাকবেন।
আমার এই লেখাটা মূলত সেই সমস্ত পথভ্রষ্ট বক্তা ও লিখকদের বিভ্রান্তির জবাব, যারা মনে করে যে, “মুসলমানদের আক্বিদাহ ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় নয়।”
আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা ক্বুরআনুল কারীমে যে জিনিসটাকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তা হচ্ছেঃ বান্দা শিরকমুক্ত থেকে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআ’লার ইবাদত করবে। সেইজন্য আল্লাহ তাআ’লা ক্বুরআনুল কারীমের বিভিন্ন সুরাতে প্রায়ই আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিৎ এবং কাফের মুশরেকদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রত্যাখ্যান করে আয়াত নাযিল করেছেন।
আর একজন মুসলিমের এই বিশ্বাসগুলোকে সমস্ত ইসলামী পন্ডিতগণ ‘আকিদাহ’ নামে উল্লেখ করেছেন এবং এনিয়ে বই লিখেছেন। এটা না বুঝেই একবিংশ শতাব্দীর একশ্রেণীর মুফতি আর মুফাসসির সাহেবরা দাবী তুলেছেন, ক্বুরআনে আকিদাহ শব্দ নাই, সুতরাং আকিদাহ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না! এটা জাহালাত (মূর্খতা), এটা দ্বোয়ালালাহ (পথভ্রষ্টতা)।
‘ক্বুরানুল কারীম’ থেকে আকীদাহ সঠিক না হলে সমস্ত আমল বাতিল, এই কথার প্রমাণঃ
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “(হে নবী!) আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তী সকল (নবী-রাসুলদের) প্রতি এই ওয়াহী করা হয়েছিলো যে, আপনি যদি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেন, তাহলে আপনার সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে, এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে একজন হবেন।” সুরা আল-যুমারঃ ৬৫।
সুতরাং, এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, শিরক করার কারণে মানুষের সমস্ত আমল বর্বাদ হয়ে যাবে। যেটা তিনি অন্যান্য আয়াতেও উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন, “আর (শেষ বিচারের দিন) আমি তাদের আমলগুলোর প্রতি লক্ষ্য করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।” সুরা ফুরক্বানঃ ২৩।
আল্লাহ তাদের আমলগুলোকে ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন, কারণ তাদের ইবাদত বা আমলগুলো ছিলো শিরক মিশ্রিত অথবা বিদআ’ত। আর শিরক মিশ্রিত কোন আমল বা বিদআ’ত আল্লাহ কবুল করেন না। সেই জন্যে আমল করার পূর্বে ‘আক্বিদাহ’ বা ধর্মীয় বিশ্বাস (Creed) সঠিক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। আকীদাহ সংশোধন না করেই বেশি বেশি আমল করলে সম্ভাবনা আছে সেই আমলের মাঝে শিরক ও বিদআ’ত ঢুকে আমল নষ্ট ও ব্যর্থ হয়ে যাবে।
সুন্নাহ বা সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে গিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না।” সহীহ মুসলিম।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতিষীর কাছে যায় এবং তার কথা সত্যি বলে বিশ্বাস করে, তাহলে সে মুহাম্মাদের উপর নাযিলকৃত বিষয় (ক্বুরআনুল কারীমের) সাথে কুফুরী করবে।” সুনানে আবু দাঊদ।
এই দুইটি হাদীস থেকে প্রথমটিতে দেখা যাচ্ছে, কেউ যদি শুধুমাত্র গণকের কাছে তার ভাগ্য নিয়ে ভবিষ্যতবাণী জিজ্ঞাসা করে, তাহলে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবেনা।
এর কারণ হচ্ছে, সে গণক বা জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করুক বা না করুক, গণক যে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞান জানার দাবী করা (বড় শিরক), সে তার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে দূরে থাকেনি। এতোটুকু ঈমানের ঘাটতি থাকার কারণে ৪০ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করা হবেনা। আর যদি গণকের কথা বিশ্বাস করে তাহলে সে যেনো সম্পূর্ণ ক্বুরআনকেই অস্বীকার করে কাফের হয়ে গেলো।
সাহাবীদের বক্তব্যঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পরে সাহাবীদের যুগে ইরাকের বসরা নামক অঞ্চলে কিছু লোক বের হয়েছিলো, যারা মনে করতোঃ ‘তাক্বদীর’ বলতে কিছু নেই, সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে থাকে। তাক্বদীর অস্বীকার করেছিলো বলে এই পথভ্রষ্ট লোকদেরকে ‘ক্বাদরিয়া’ বলা হতো।
যাই হোক সেখান থেকে কিছু তাবেয়ী মুসলমান মক্কায় হজ্জ বা উমরা করতে আসেন এবং এমন সময় তারা সৌভাগ্যক্রমে আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর সাথে মসজিদে দেখা পেয়ে যান। তারা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশে বসেন, এবং তাক্বদীর অস্বীকারকারী ক্বাদরিয়াদের ব্যপারে তাঁকে প্রশ্ন করেন।
আবদুল্লাহ ইবন উমর তাদেরকে বলেন, “তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোন সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি! তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে, তাক্বদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না।” সহীহ মুসলিমঃ ১।
ফযীলাতুশ-শায়খ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন,
“কোন ব্যক্তি যদি বলে আমাদের জন্য ঈমানই যথেষ্ঠ, আক্বিদাহর উপর জোর দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এটা পরস্পর বিরোধী একটা কথা। কোন ব্যক্তির ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না তার আক্বিদাহ সঠিক হচ্ছে। যার আক্বিদাহ সঠিক নয় তার ঈমান নেই এবং তার দ্বীনও সঠিক নয়।”
শায়খ আরো বলেছেনঃ “ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগে তাওহীদ একটা স্থায়ী বিষয়। একমাত্র মুনাফেক ও কাফেররাই তাওহীদের দাওয়াতকে অপ্রয়োজনীয় বা বোঝার মতো মনে করে, আল্লাহু মুস্তাআন।”
সালাফী মানহাজের উপর অত্যাবশ্যকীয় প্রশ্ন এবং উত্তরঃ ৩৪-৩৫ পৃষ্ঠা।
প্রচারেঃ-সৌদি আরব-The Land Of Tawheed🇸🇦♥
শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
0 Comments