Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

▌আনুগত্যের ক্ষেত্রে শির্ক


▌আনুগত্যের ক্ষেত্রে শির্ক
·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। অতঃপর:
শির্কের অন্যতম একটি প্রকার হলো আনুগত্যের শির্ক। আনুগত্য পাওয়ার নিরঙ্কুশ অধিকার কেবল আল্লাহর। এক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে অন্যের আনুগত্য করা শির্কের আওতাভুক্ত। ‘উলামা ও পীর-দরবেশের অন্যায় আনুগত্য যেমন শির্কের অন্তর্ভুক্ত, আমীর-উমারা ও শাসকদের অন্যায় আনুগত্যও তেমনি শির্কের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ বলেছেন, وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰ أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ ۖ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ “আর শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্ররোচনা দেয়, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো, তবে নিশ্চয় তোমরা মুশরিক।” (সূরাহ আন‘আম: ১২১)
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আদী বিন হাতেম (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত আছে, একদা তিনি শুনলেন, রাসূল ﷺ পাঠ করছেন, اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ “তারা (ইহুদি ও খ্রিষ্টান জাতির লোকেরা) আল্লাহর পরিবর্তে তাদের ধর্মীয় নেতা ও পুরোহিতদেরকে রব হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল।” (সূরাহ তাওবাহ: ৩১) তখন আমি নবীজিকে বললাম, ‘আমরা তো তাদের ইবাদত করি না।’ তিন বললেন, ‘আচ্ছা আল্লাহর হালাল ঘোষিত জিনিসকে তারা হারাম বললে, তোমরা কি তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করো না? আবার আল্লাহর হারাম ঘোষিত জিনিসকে তারা হালাল বললে, তোমরা কি তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করো না? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন বললেন, ‘এটাই তাদের ইবাদত।’ [তিরমিযী, হা/৩০৯৫; সনদ: হাসান]
কিন্তু এই শির্কের মানদণ্ড কী, আর কখন অন্যায় আনুগত্য বড়ো শির্ক হয়, কখনই বা ছোটো শির্ক হয়—তা জানা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আমরা ‘উলামাদের থেকে তিনটি বক্তব্য পেশ করছি।
·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন—
وهؤلاء الذين اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابا حيث أطاعوهم في تحليل ما حرم اللّه وتحريم ما أحل اللّه يكونون على وجهين: أحدهما: أن يعلموا أنهم بدلوا دين اللّه فيتبعوهم على التبديل، فيعتقدون تحليل ما حرم اللّه، وتحريم ما أحل اللّه، اتباعًا لرؤسائهم، مع علمهم أنهم خالفوا دين الرسل، فهذا كفر، وقد جعله اللّه ورسوله شركًا وإن لم يكونوا يصلون لهم ويسجدون لهم، فكان من اتبع غيره في خلاف الدين مع علمه أنه خلاف الدين، واعتقد ما قاله ذلك، دون ما قاله اللّه ورسوله مشركًا مثل هؤلاء. والثاني: أن يكون اعتقادهم وإيمانهم بتحريم الحلال وتحليل الحرام ثابتًا، لكنهم أطاعوهم في معصية اللّه، كما يفعل المسلم ما يفعله من المعاصي التي يعتقد أنها معاص، فهؤلاء لهم حكم أمثالهم من أهل الذنوب.
“যারা তাদের পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদেরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে, যেহেতু তারা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করার ক্ষেত্রে এবং আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করার ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করেছে, তারা দুভাগে বিভক্ত। যথা:
এক. তারা জানে যে, ওরা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে। তারা এই পরিবর্তনের ওপরই তাদের আনুগত্য করে। আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা হালাল বলে বিশ্বাস করে, আর আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তারা তা হারাম বলে বিশ্বাস করে; তাদের নেতৃবর্গের আনুগত্য করার জন্য। অথচ তারা জানে যে, ওরা রাসূলগণের দ্বীনের বিরোধিতা করেছে। এটা হলো কুফরি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এটাকে শির্ক সাব্যস্ত করেছেন, যদিও তারা তাদের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ে না, এবং তাদেরকে সিজদাও করে না। যে ব্যক্তি দ্বীনের বিপরীতে অন্যের অনুসরণ করে, এটা জানা সত্ত্বেও যে, বিষয়টি দ্বীন-বিরোধী, এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বক্তব্য ব্যতিরেকে সে যা বলে তার প্রতি বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি তাদের মতোই মুশরিক বলে বিবেচিত হবে।
দুই. হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাস ও ইমান ঠিক রয়েছে। কিন্তু তারা আল্লাহর নাফরমানি করে তাদের আনুগত্য করেছে। যেমনভাবে একজন মুসলিম বিভিন্ন পাপকাজ করে থাকে, যেসব পাপকে সে গুনাহের কাজ বলে বিশ্বাস করে থাকে। এদের বিধান তাদের অনুরূপ পাপীদের বিধানের মতোই।” [ফাতহুল মাজীদ শারহু কিতাবিত তাওহীদ, পৃষ্ঠা: ১১৭-১১৮; দারুল গাদ্দিল জাদীদ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
প্রখ্যাত সালাফী ‘আলিম, বর্তমান যুগের একজন শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ‘আল্লামাহ সালিহ বিন ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৮ হি.] বলেছেন—
“এটি ‘আদী বিন হাতিম (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হাদীস। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট প্রবেশ করলেন, এমতাবস্থায় তাঁর গলায় ঝুলছিল একটি ক্রুশ। নাবী ﷺ যখন তাঁকে দেখলেন—অর্থাৎ তাঁর ইসলাম গ্রহণের শুরুলগ্নে—তখন তিনি বললেন, ‘(গলা থেকে) এই মূর্তি ছুঁড়ে ফেল।’ এরপর নাবী ﷺ ‘আদীর নিকটে এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন—“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে, এবং মারইয়াম-তনয় মাসীহকেও।” (সূরাহ তাওবাহ: ৩১)
তখন ‘আদী বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো তাদের ইবাদত করি না।” ‘আদী এই আয়াত থেকে বুঝেছিলেন যে, বিভিন্ন নিদর্শনমূলক আমল তথা নামাজ, জাকাত, রোজা প্রভৃতি এবং নানাবিধ পরিচিত ইবাদত পালনের মাধ্যমে ওই পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অভিমুখী হওয়া হচ্ছে উদ্দিষ্ট ইবাদত। ফলে নাবী ﷺ ব্যাখ্যা করলেন যে, মূল ইবাদত হলো আনুগত্য করা, আর তোমরা তাদের (পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের) আনুগত্যই করে থাক।
তিনি ﷺ বলেছেন, আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা তোমাদের জন্য হালাল বলে ঘোষণা করলে তোমরাও কি সেটাকে হালাল বলে গণ্য করো না? ‘আদী বললেন, জি, অবশ্যই। তিনি ﷺ বললেন, আর আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তারা তা তোমাদের জন্য হারাম বলে ঘোষণা করলে তোমরাও কি সেটাকে হারাম বলে গণ্য করো না? তিনি বললেন, জি, অবশ্যই। নাবী ﷺ বললেন, ওটাই তাদের ইবাদত।
নাবী ﷺ এর বাণী—“আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা তোমাদের জন্য হালাল বলে ঘোষণা করলে... (ألم يحلّوا لكم ما حرّم الله)।” এখানে আরবি ‘মা’ শব্দটি ‘আল্লাযী’ (একটি সম্বন্ধসূচক বিশেষ্য) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর আসমাউল মাওসূলাত তথা সম্বন্ধসূচক বিশেষ্যসমূহের দাবি হলো তা ব্যাপকার্থবোধক হবে। অর্থাৎ (আরবিতে) বাক্যটি হলো— ألم يحلّوا لكم الذي حرّم الله। এই ব্যাপকতা কখনো কখনো প্রকৃত ব্যাপকতার অর্থ প্রদান করে। তখন এই ব্যাপকতা সবকিছুকে নিজের মধ্যে শামিল করে। এ দিক থেকে হাদীসটির অর্থ হবে—আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তার সবকিছুকেই তারা হারাম সাব্যস্ত করেছে। আবার কখনো কখনো ব্যাপকতার দ্বারা নির্দিষ্টকরণ উদ্দিষ্ট হয়। এ দিক থেকে হাদীসটির অর্থ হবে—আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তার মধ্য থেকে কিছু বিষয়কে তারা হারাম সাব্যস্ত করেছে।
অনুরূপভাবে নাবী ﷺ এর বাণী—“আর আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তারা তা তোমাদের জন্য হারাম বলে ঘোষণা করলে...।” তিনি ﷺ বলেছেন, “আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা তোমাদের জন্য হালাল বলে ঘোষণা করলে তোমরাও কি সেটাকে হালাল বলে গণ্য করো না?” ‘আদী বললেন, “জি, অবশ্যই।” নাবী ﷺ বললেন, “ওটাই তাদের ইবাদত।” হাদীসে উদ্ধৃত দ্বিতীয় বাক্যটি প্রথম বাক্যের মতোই। কেননা হারামকে হালাল সাব্যস্ত করা হালালকে হারাম সাব্যস্ত করার মতোই। একারণে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এই হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দ্বীনকে পরিবর্তন করা কুফর ও বড়ো শির্ক।”
যে ব্যক্তি দ্বীনকে পরিবর্তনকারীর আনুগত্য করে, তার দুটো স্তর রয়েছে। যথা:
প্রথম স্তর: সে দ্বীনকে পরিবর্তনকারীর আনুগত্য করে, এটা জেনে যে, এর বিপরীতে আল্লাহর শরিয়ত রয়েছে। সে জানে যে, আল্লাহর বিধান হলো এরকম। সে হারামকে হালাল করার ক্ষেত্রে, বিধানকে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে তার অনুসরণ করে। সে বিশ্বাস করে যে, বিদ্বান ব্যক্তি যা হালাল করেছেন, তাই হালাল, অপরদিকে আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হারাম নয়, আর আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা হালাল নয়। এক্ষেত্রে সে দ্বীনের মৌলিক বিষয়ের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করে।
যেমন মহান আল্লাহ রুটি হালাল করেছেন, কিন্তু কোনো একজন ‘আলিম রুটিকে হারাম সাব্যস্ত করল, তখন সে ব্যক্তি (‘আলিমের আনুগত্যকারী) বিশ্বাস করল যে, রুটি হারাম, তা ভক্ষণ করা হারাম। অথচ আল্লাহ তা হালাল করেছেন, আর এই ‘আলিম তা হারাম করেছে। আনুগত্যকারী ব্যক্তি এই ‘আলিমের আনুগত্য করে, এই বিশ্বাস রেখে যে, তিনি যা বলেছেন, সেটাই হক ও সঠিক। সে এই বিশ্বাস পোষণ করেছে যে, আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা হারাম। এটি এ ব্যাপারে দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধন।
এর প্রকৃতত্ব হলো—সে আল্লাহর বিধানকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আল্লাহর আনুগত্য করেনি, বরং নির্দিষ্টভাবে এই ব্যাপারে অন্যের আনুগত্য করে, সে এই বিশ্বাস পোষণ করেছে যে, গাইরুল্লাহর বিধান সঠিক, আর আল্লাহর বিধান ভুল। কেননা নাবী ﷺ তার ব্যাপারে বলেছেন, “আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা তোমাদের জন্য হালাল বলে ঘোষণা করলে তোমরাও কি সেটাকে হালাল বলে গণ্য করো না?” তারা (বিদ্বানরা) হালাল বিষয়কে তাদের জন্য হারাম সাব্যস্ত করে, ফলে তারাও (আনুগত্যকারীরা) ওই বিষয়কে হারাম বলে বিশ্বাস করে তাকে হারাম সাব্যস্ত করে।
এই প্রথম স্তরে দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধনের ব্যাপারে যা বলা হলো তা প্রকৃত অর্থেই দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধন, এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, পরিবর্তিত দ্বীন হলো সঠিক ও বৈধ।
দ্বিতীয় স্তর: এটি শাইখুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন। আনুগত্যকারী ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধনের ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করে। কিন্তু সে ওই পরিবর্তিত বিধানকে সঠিক বলে বিশ্বাস করে না। এই ব্যক্তির বিধান হলো তার অনুরূপ পাপী ব্যক্তিদের বিধানের মতোই। হালাল ও হারাম সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে যারা আনুগত্য করে, শাইখুল ইসলাম তাদের মধ্যে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। তিনি তাদেরকে দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে। যথা:
প্রথম শ্রেণি: যারা দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধনের ক্ষেত্রে বিশ্বাস-সহ পরিবর্তনকারীদের আনুগত্য করে। দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধন মানে—একটি নির্দিষ্ট হালাল বিষয়কে তারা হারাম সাব্যস্ত করে পরিবর্তনকারীদের আনুগত্য করে। অর্থাৎ বিষয়টি দ্বীনের মধ্যে হারামে পরিণত হলো। ‘দ্বীন’ কথাটির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আনুগত্য ও শরিয়তপ্রণয়ন। যেমন আল্লাহর শরিয়তে বিষয়টি হালাল, কিন্তু তারা বলল, এটা হারাম। তখন আনুগত্যকারী ব্যক্তি এই মর্মে তাদের আনুগত্য করল যে, শরিয়তে এই বিধান হারাম। আর সে এই বিষয়টিকে ‘ইলতিযাম’ করল। মানে সে এরূপ বলল যে, আমি হুকুমটি হালাল হিসেবে শরিয়ত কর্তৃক সম্বোধিত নই। বরং এখন আমি হুকুমটি হারাম হিসেবে শরিয়ত কর্তৃক সম্বোধিত। এখন এই বিধান মান্য করাই আমার জন্য আবশ্যক। পক্ষান্তরে এটি হালাল মর্মে যে হুকুম আছে, সেটা মান্য করা আমার জন্য আবশ্যক নয়।
দ্বিতীয় শ্রেণি: তারা পরিবর্তনকারীদের আনুগত্য করে। ফলে তারা প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে এবং তাদের আনুগত্য করে হারামকে হালাল করে, আর হালালকে হারাম মনে করে। এই ব্যক্তির বিধান হলো তার অনুরূপ পাপী ব্যক্তিদের বিধানের মতোই। অর্থাৎ সে আনুগত্য করে এবং এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তাই হালাল এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তাই হারাম। এটা তার ভেতরের বিশ্বাস। কিন্তু বাহ্যিকভাবে সে পরিবর্তনকারীদের আনুগত্য করে। এই বিষয়টি পণ্ডিত-বিদ্বানদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে তা সংসারবিরাগী-সন্ন্যাসী ও শাসকদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে।...
হাদীসের মধ্যে এবং শাইখের (ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব) রচিত পরিচ্ছেদের নামকরণে যে বক্তব্য এসেছে, তার দ্বারা ওই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যে হালালকে হারাম করার ক্ষেত্রে অথবা হারামকে হালাল করার ক্ষেত্রে আনুগত্য করে, এই বিশ্বাস রেখে যে, হারামের বিধান হালালে পরিণত হয়েছে এবং হালালের বিধান হারামে পরিণত হয়েছে। যদি সে এই বিশ্বাস পোষণ করে, তাহলে সে আল্লাহর প্রতি কুফরি করল এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাকে রব হিসেবে গ্রহণ করল। কেননা ইবাদতের মূল বিষয় হলো আনুগত্য। যদি হালাল ও হারাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে গাইরুল্লাহর আনুগত্য করা হয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে, গাইরুল্লাহকে বিধান দেওয়ার অধিকারী সাব্যস্ত করা হলো। অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন, “বিধান দেওয়ার মালিক কেবল আল্লাহ।” (সূরাহ আন‘আম: ৫৭)
সম্মানিত শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘তাহকীমুল ক্বাওয়ানীন’ পুস্তাকাটির প্রারম্ভে বলেছেন, “রূহুল আমীন (জিবরাঈল) যেই বিধান নিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের অন্তরে অবতরণ করেছেন—যাতে করে উক্ত বিধান দিয়ে বিশ্ববাসীর মধ্যে ফায়সালা করা হয়, আর হঠকারিতা ও বিদ্বেষের কারণে দুজনের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের সময় উক্ত বিধানের দিকে প্রত্যাবর্তন করা হয়—সেই বিধানের স্থলে অভিশপ্ত আইনকে স্থাপন করা হলো সুস্পষ্ট বড়ো কুফরি। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।’ (সূরাহ নিসা: ৫৯)” (ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ২৮৪; ফতোয়া নং: ৪০৬৫) তিনি তাঁর এই পুস্তিকায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে এটি একটি সূক্ষ্ম আলোচনাসমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা।
তিনি (গাইরুল্লাহর) আইনকে বিচারক নির্ধারণের ব্যাপারে আনুগত্য করাকে বড়ো কুফরি হিসেবে গণ্য করেছেন। কেননা যে ব্যক্তি আইনকে শরিয়তের স্থলে আইনকে স্থাপন করে, এই বিশ্বাস রেখে যে, এই আইন দিয়ে শাসন করা শরিয়তের বিধান দিয়ে শাসন করার মতোই, অথবা এই আইনে কোনো সমস্যা নেই, কিংবা সে সংবিধান থেকে শরিয়তকে পূর্ণরূপে অপসারিত করে, দ্বীনকে পরিবর্তন করে, এবং অন্য শরিয়ত (আইন) আনয়ন করে, তাহলে তার এই কাজ ইসলাম থেকে খারিজকারী—বড়ো কুফর বলে গণ্য হবে। কেননা সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে।
পক্ষান্তরে সে যদি ওই কাজ করে, আর সে বলে যে, আমি একজন পাপী—অর্থাৎ হুকুম দেওয়ার ব্যাপারে সে তাদের আনুগত্য করে, অথবা এসব ব্যাপারে তথা হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করার ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করে, আর বলে যে, ‘আমি পাপী, আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি যে, বিধান দেওয়ার ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই’; কিন্তু সে যে তাদের আনুগত্য করে, তা সুস্পষ্ট—তাহলে সে একজন কাবীরাহ গুনাহগার পাপী এবং ছোটো কুফরিকারী কাফির হিসেবে গণ্য হবে। যেই ছোটো কুফরি ব্যভিচার, মদ্যপান ও চৌর্যবৃত্তির চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ। আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।” [‘আল্লামাহ সালিহ বিন ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু ফাতহিল মাজীদ লি শারহি কিতাবিত তাওহীদ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৬১০-৬১৪; মাকতাবাতু দারিল হিজায, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৩ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন—
“জেনে রেখ, আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হালাল করার ক্ষেত্রে অথবা এর বিপরীত কাজ করার ক্ষেত্রে ‘উলামা ও শাসকদের আনুগত্য তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:
এক. তাদের মতবাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে, তাদের মতবাদকে অগ্রাধিকারযোগ্য গণ্য করে এবং আল্লাহর বিধানের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্যাপারে তাদের আনুগত্য করা। এই কাজের কাজি কাফির। কেননা সে আল্লাহর বিধানকে অপছন্দ করেছে। ফলে আল্লাহ তার আমলকে বিনষ্ট করে দিয়েছেন। আর (বড়ো) কুফরি ব্যতীত সকল আমল বিনষ্ট হয় না। তাই যে ব্যক্তিই আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে অপছন্দ করে, সে ব্যক্তিই কাফির।
দুই. আল্লাহর বিধানের প্রতি সন্তুষ্টি এবং দেশ ও দশের জন্য উক্ত বিধানকেই সঠিক বিবেচনা থাকা সত্ত্বেও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে অন্য বিধানকে চয়ন করে সেই ব্যাপারে তাদের আনুগত্য করা। উদাহরণস্বরূপ সে চাকরি চায়। এই ব্যক্তি কাফির হবে না। কিন্তু সে ফাসিক্ব, তার বিধান অন্যান্য পাপীদের মতোই।
তিন. অজ্ঞতাবশত তাদের আনুগত্য করা। সে এরকম ধারণা করে যে, ওটা আল্লাহর বিধান। এটি দুভাগে বিভক্ত। যথা:
এক. তার জন্য নিজে থেকেই হক জানা সম্ভব ছিল। কিন্তু সে বাড়াবাড়িকারী অথবা শিথিলতাকারী। এই ব্যক্তি পাপী হবে। কেননা কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে আল্লাহ ‘উলামাদের কাছে প্রশ্ন করতে বলেছেন।
দুই. সে নিজে জানে না এবং তার পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। ফলে সে অন্ধের মতো তাদের অনুসরণ করে এবং ধারণা করে যে, এটাই হক। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কেননা সে তাই করেছে, যা করতে সে আদিষ্ট হয়েছে। সে এ ব্যাপারে একজন ওজরগ্রস্ত ব্যক্তি।” [ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ৯-১০; পৃষ্ঠা: ৭৩৯]
·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করার ক্ষেত্রে এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করার ক্ষেত্রে কারও আনুগত্য করা হারাম। অন্যায়ের স্তরভেদে কখনো কখনো তা বড়ো শির্কের পর্যায়ে পৌঁছে। আর অনেকে এই শির্কের মানদণ্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকার কারণে সকল অন্যায় আনুগত্যকারীকে মুশরিকের স্তরে পৌঁছিয়ে দেয়, যা নেহায়েত অন্যায় ও ভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ আমাদেরকে বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করার এবং উক্ত শির্ক থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments