▌আল্লাহর জন্য দেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাব্যস্ত করার বিধান
·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। অতঃপর:
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। অতঃপর:
আল্লাহর আসমা ও সিফাত তথা নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করা ইমানের একটি অন্যতম মৌলিক বিষয়। ব্যক্তির ‘আক্বীদাহর শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণীত হয় এই মৌলিক বিষয়ের মাধ্যমে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কোনো অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্যদান, ধরন বর্ণনা ও নিস্ক্রীয়করণ ছাড়াই আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কিছু মূলনীতি অনুসরণ করে থাকে।
যেমন একটি মূলনীতি হলো—আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফিয়্যাহ তথা বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর, এতে বিবেকের কোনো স্থান নেই। অর্থাৎ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ যেসব নাম ও গুণ বর্ণনা করেছে, আমরা কেবল সেসবই সাব্যস্ত করব, কোনোরূপ কমবেশি করব না। যে ব্যক্তি এক্ষেত্রে কমবেশি করে, সে আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে বক্রপথ অবলম্বনকারী বিদ‘আতী। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্য, এবং এটাই তাদের মূলনীতি।
·
দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য, সালাফিয়্যাহর দিকে নিজেকে সম্পৃক্তকারী কিছু দা‘ঈ এই মূলনীতি লঙ্ঘন করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করেছে। আমরা মনে করি, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ব্যাপারে গভীর জ্ঞান অর্জন না করেই এসব বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া এবং ‘উলামায়ে সুন্নাহর বক্তব্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেরাই কুরআন-হাদীস পড়ে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করার নিন্দার্হ প্রবণতা থেকেই এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।
দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য, সালাফিয়্যাহর দিকে নিজেকে সম্পৃক্তকারী কিছু দা‘ঈ এই মূলনীতি লঙ্ঘন করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করেছে। আমরা মনে করি, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ব্যাপারে গভীর জ্ঞান অর্জন না করেই এসব বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া এবং ‘উলামায়ে সুন্নাহর বক্তব্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেরাই কুরআন-হাদীস পড়ে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করার নিন্দার্হ প্রবণতা থেকেই এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের ﷺ সুন্নাহয় আল্লাহর ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ আছে নাকি নেই—তা বর্ণিত হয়নি। তাই আমাদেরকে এ বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা বলব না, এসব বিষয় আল্লাহর আছে। আবার এও বলব না যে, এসব বিষয় আল্লাহর নেই। আল্লাহর ওপর খবরদারি করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করা হলো কঠিন বিদ‘আত এবং ভয়াবহ কাবীরাহ গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না (কোরো না, বলো না, সাক্ষ্য দিয়ো না), যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ, আর অন্তর—এগুলোর প্রত্যেকের বিষয়ে অবশ্যই তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরাহ ইসরা: ৩৬]
·
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ “বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ—যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরিক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’।” [সূরাহ আ‘রাফ: ৩৩]
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ “বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ—যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরিক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’।” [সূরাহ আ‘রাফ: ৩৩]
সম্মানিত পাঠক, হাত (ইয়াদ), চোখ (‘আইন), পা (ক্বাদাম) আল্লাহর সিফাত তথা গুণ। কিন্তু এসব গুণ থেকে আল্লাহর ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করা যায় না। এরকম কাজ সালাফদের কেউ করেননি। তাই যারা এরকম করছেন, তারা বড়ো ধরনের ভুল করছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অবলোকন করে আমরা বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফী হওয়ার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মহান ইমামদের বক্তব্য পেশ করেছি। তারপর আল্লাহর শানে ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ প্রভৃতি শব্দাবলি ব্যবহার করার ব্যাপারে আইম্মায়ে সুন্নাহর বক্তব্য পেশ করেছি। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
·
ইমামু আহলিস সুন্নাহ হাফিয আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত হাদীসসমূহের ব্যাপারে বলেছেন,
ইমামু আহলিস সুন্নাহ হাফিয আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত হাদীসসমূহের ব্যাপারে বলেছেন,
نؤمن بها، ونصدق بها بلا كيف، ولا معنى، ولا نرد شيئا منها، ونعلم أن ما جاء به الرسول حق، ولا نرد على رسول الله ﷺ ولا نصف الله بأكثر مما وصف به نفسه بلا حد ولا غاية، ﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ﴾ [الشورى : ١١] ، ونقول كما قال، ونصفه بما وصف به نفسه، ولا نتعدى ذلك، ولا يبلغه وصف الواصفين، نؤمن بالقرآن كله محكمه ومتشابه، ولا نزيل عنه صفة من صفاته لشناعة شنعت، ولا نتعدى القرآن والحديث، ولا نعلم كيف كنه ذلك إلا بتصديق الرسول ﷺ وتثبيت القرآن.
“আমরা এগুলোর প্রতি ইমান রাখি, কোনো ধরন (কাইফিয়্যাহ) ও অপব্যাখ্যা (তা’উয়ীল) ছাড়াই এগুলোকে সত্যায়ন করি। আমরা এগুলোর কোনো কিছুকেই প্রত্যাখ্যান করি না। আর আমরা জানি যে, রাসূল ﷺ যা আনয়ন করেছেন তা সুনিশ্চিত হক। আমরা রাসূল ﷺ এর ওপর খবরদারি করি না। আল্লাহ নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার চেয়ে বাড়িয়ে (বাড়তি গুণ দিয়ে) আমরা তাঁকে গুণান্বিত করি না; (আর তাঁর গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে) আমরা সেসবের সীমা ও ধরন বর্ণনা করি না। “বস্তুত তাঁর সদৃশ কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরাহ শূরা: ১১) তিনি যেমন বলেছেন, আমরা তেমনই বলে থাকি।
তিনি যে গুণে নিজেকে গুণান্বিত করেছেন, আমরা সে গুণেই তাঁকে গুণান্বিত করি। আমরা এরচেয়ে অগ্রগমন (বাড়তি) করি না। আর তাঁর কাছে গুণ বর্ণনাকারীদের গুণ পৌঁছে না (অর্থাৎ, সৃষ্টিকুলের কেউ আল্লাহর গুণ নিজে থেকে বর্ণনা করতে সক্ষম নয়)। আমরা সমুদয় কুরআনের প্রতি ইমান রাখি, কুরআনের দ্ব্যর্থহীন (মুহকাম) ও দ্ব্যর্থবোধক (মুতাশাবিহ) বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করি। কারও নিন্দা বা সমালোচনার ভয়ে আমরা তাঁর গুণাবলির মধ্য থেকে কোনো একটি গুণকেও বিলোপ করি না। আমরা (এ ব্যাপারে) কুরআন-হাদীসের ওপর অগ্রগমন করি না (অর্থাৎ, আমরা মনে করি, আল্লাহর সমুদয় গুণাবলি সরাসরি কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর)। কুরআনের প্রমাণীকরণ ও রাসূল ﷺ এর সত্যায়ন ব্যতিরেকে আমরা এগুলোর ধরন-প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।” [ইমাম ইবনু কুদামাহ আল-মাক্বদিসী (রাহিমাহুল্লাহ), লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ (ইমাম ফাওযানের ভাষ্য-সহ); পৃষ্ঠা: ৪৭-৫৪]
আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফিয়্যাহ তথা বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর—মর্মে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম, ইমাম ইবনু বায ও ইমাম ‘উসাইমীন-সহ আরও অনেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: মাজমূ‘উ ফাতাওয়া লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৬; বাদায়ে‘উল ফাওয়াইদ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৭০; ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৫১০; শারহুল ক্বাওয়া‘ইদিল মুসলা, পৃষ্ঠা: ৫৯-৬১, ১৪২-১৪৩।
·
১. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] আল্লাহর শানে ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেছেন,
১. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] আল্লাহর শানে ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেছেন,
فإن ذكر لفظ (الجسم) في أسماء الله وصفاتِه بدعة، لم ينطق بها كتاب ولا سنة، ولا قالَها أحد من سلفِ الأمة وأئمتها، لم يقل أحد منهم: إن الله جسم، ولا إن الله ليس بجسم، ولا إن الله جوهر، ولا إن الله ليس بجوهر.
ولفظ (الجسم) لفظٌ مجمل، فمعناه في اللغة هو البدن، ومن قال: إنّ الله مثل بدن الإنسان فهو مفترٍ على الله، ومن قال: إنّ الله يُماثِله شيء من المخلوقات فهو مفترٍ على الله. ومن قال: إن الله ليس بجسمٍ، وأراد بذلك أنه لا يُماثِله شيء من المخلوقات، فالمعنى صحيح وإن كان اللفظ بدعة. وأما من قال: إنَّ الله ليس بجسم، وأراد بذلك أنه لا يُرى في الآخرة، وأنه لم يتكلم بالقرآن العربي، بل القرآن العربي مخلوقٌ أو تصنيفُ جبريل ونحو ذلك، فهذا مفترٍ على الله فيما نفاه عنه.
ولفظ (الجسم) لفظٌ مجمل، فمعناه في اللغة هو البدن، ومن قال: إنّ الله مثل بدن الإنسان فهو مفترٍ على الله، ومن قال: إنّ الله يُماثِله شيء من المخلوقات فهو مفترٍ على الله. ومن قال: إن الله ليس بجسمٍ، وأراد بذلك أنه لا يُماثِله شيء من المخلوقات، فالمعنى صحيح وإن كان اللفظ بدعة. وأما من قال: إنَّ الله ليس بجسم، وأراد بذلك أنه لا يُرى في الآخرة، وأنه لم يتكلم بالقرآن العربي، بل القرآن العربي مخلوقٌ أو تصنيفُ جبريل ونحو ذلك، فهذا مفترٍ على الله فيما نفاه عنه.
“নিশ্চয় আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ শব্দ উল্লেখ করা বিদ‘আত। কেননা কিতাব ও সুন্নাহ এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি; আর না বলেছেন এই উম্মতের সালাফ ও ইমামদের কেউ। তাঁদের কেউ বলেননি, ‘আল্লাহর দেহ আছে’, আর না বলেছেন, ‘আল্লাহর দেহ নেই।’ কেউ বলেননি, ‘আল্লাহ হলেন বস্তু (জাওহার)’, আর না বলেছেন, ‘আল্লাহ বস্তু নন।’
‘জিসম’ বা ‘দেহ’ একটি সংক্ষিপ্ত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ শরীর। যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ হলেন মানুষের শরীরের মতো, সে আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে। আর যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ দেহসম্পন্ন নন। আর সে উক্ত কথার দ্বারা এই উদ্দেশ্য করে যে, সৃষ্টিকুলের কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তাহলে তার কথার অর্থ বিশুদ্ধ বিবেচিত হবে, যদিও উক্ত শব্দ (অর্থাৎ, ‘দেহ’ শব্দটি) বিদ‘আত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ দেহসম্পন্ন নন। আর সে উক্ত কথার দ্বারা এই উদ্দেশ্য করে যে, আল্লাহকে পরকালে দেখা যাবে না, তিনি (নিজে) আরবি কুরআন বলেননি, বরং আরবি কুরআন হলো মাখলুক (সৃষ্ট) অথবা জিবরীলের রচনা, তাহলে আল্লাহ নিজের থেকে যেসব বিষয়কে নাকচ করেছেন, সেসব বিষয়ে সেই ব্যক্তি আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপকারী বলে গণ্য হবে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), জামি‘উল মাসাইল, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২০৬-২০৭; দারু ‘আলামিল ফাওয়ায়েদ, মক্কা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
·
২. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বর্তমান যুগের মুজাদ্দিদ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ শব্দের ব্যাপারে ‘সাফওয়াতুত তাফাসীর’ গ্রন্থের রচয়িতা মুহাম্মাদ ‘আলী সাবূনীকে (জন্ম: ১৯৩০ খ্রি.) রদ (খণ্ডন) করতে গিয়ে বলেছেন,
২. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বর্তমান যুগের মুজাদ্দিদ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ শব্দের ব্যাপারে ‘সাফওয়াতুত তাফাসীর’ গ্রন্থের রচয়িতা মুহাম্মাদ ‘আলী সাবূনীকে (জন্ম: ১৯৩০ খ্রি.) রদ (খণ্ডন) করতে গিয়ে বলেছেন,
ثم ذكر الصابوني-هداه الله-تنزيه الله سبحانه عن الجسم والحدقة والصماخ واللسان والحنجرة، وهذا ليس بمذهب أهل السنة بل هو من أقوال أهل الكلام المذموم وتكلفهم، فإن أهل السنة لا ينفون عن الله إلا ما نفاه عن نفسه، أو نفاه رسولهﷺ، ولا يثبتون له إلا ما أثبته لنفسه أو أثبته له رسولهﷺ، ولم يرد في النصوص نفي هذه الأمور ولا إثباتها، فالواجب الكف عنها وعدم التعرض لها، لا بنفي ولا إثبات، ويغني عن ذلك قول أهل السنة في إثبات صفات الله وأسمائه أنه لا يشابه فيها خلقه، وأنه سبحانه لا ند له ولا كفو له.
“অতঃপর সাবূনী হাদাহুল্লাহ (আল্লাহ তাকে হেদায়েত দিন) ‘দেহ, নয়নতারা, কর্ণকুহর, জিহ্বা ও বাগ্যন্ত্র থেকে মহান আল্লাহ মুক্ত’—বলে উল্লেখ করেছে। এটা আহলুস সুন্নাহর মতাদর্শ নয়। বরং এটা নিন্দনীয় কালামশাস্ত্র চর্চাকারীদের মতবাদ এবং তাদের বাড়াবাড়ি বক্তব্য। আল্লাহ নিজেকে যে বিষয় থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন, অথবা তাঁর রাসূল ﷺ তাঁকে যা থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন, তা ব্যতীত অন্য কিছুকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত আল্লাহ থেকে মুক্ত ঘোষণা করে না।
আর আল্লাহ নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল ﷺ তাঁর জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন, তা ব্যতীত অন্য কিছুকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে না। কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিলসমূহে এসকল বিষয়ের বিদ্যমানতা-অবিদ্যমানতা সম্পর্কে কিছুই বর্ণিত হয়নি (অর্থাৎ, এ সমস্ত বিষয় আল্লাহর আছে কি নেই—তা বর্ণিত হয়নি)। তাই এসব বিষয় থেকে বিরত থাকা এবং সাব্যস্ত বা নাকচ করার মাধ্যমে এসব নিয়ে পর্যালোচনা না করা আবশ্যক (ওয়াজিব)।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর এই বক্তব্যই ওই সকল কাজ থেকে অমুখাপেক্ষী করে যে, তিনি (আল্লাহ) কোনো কিছুর ক্ষেত্রেই তাঁর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নন, বরং তিনি মহাপবিত্র, তাঁর কোনো সমকক্ষ ও শরিক নেই।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৬১; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২০ হিজরি]
·
৩. বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
৩. বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
مسألة الجسمية لم ترد لا في القرآن ولا في السنَّة إثباتاً ولا نفياً ، ولكن نقول بالنسبة للفظ : لا ننفي ولا نثبت ، لا نقول : جسم وغير جسم.
“জিসমিয়্যাহ বা দেহবাদের মাসআলাহ কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত হয়নি। না বলা হয়েছে, ‘এর অস্তিত্ব আছে’, আর না বলা হয়েছে, ‘এর অস্তিত্ব নেই।’ তাই আমরা এই শব্দের ব্যাপারে বলি, ‘আমরা (এটাকে) সাব্যস্ত করি না, আবার নাকচও করি না।’ আমরা বলি না, ‘আল্লাহর দেহ আছে।’ আবার এও বলি না যে, ‘আল্লাহর দেহ নেই’।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুল ‘আক্বীদাতিস সাফফারীনিয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ১৮; মাদারুল ওয়াত্বান, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৬ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
·
৪. সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,
৪. সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,
ولكن كيفيتها لا نعلم، لا نقول: جوارح، ولا نقول: غير جوارح. لأن لفظ (الجارحة) لم يرد نفيها ولا إثباتها في كتاب الله ولا في السنة. نحن لا نتكلم في الجوارح ولا نتكلم بالجوارح. مثل : الجسم. الجسم لم يثبته الله ولم ينفه. فنحن لا نتدخل فيه. نتوقف عما لم يرد نفيه ولا إثباته، نتوقف عنه. فلا نقول : هذه جوارح، ولا أنها غير جوارح، ما ندري. لكنها يد حقيقية لائقة بالله جل وعلا، سمع وبصر لائقان بالله جل وعلا. هذا الذي نقول. أما أنها مثل يد المخلوق، أو سمع المخلوق، أو بصر المخلوق، كما تقول الممثلة؛ أو أن معناها القدرة، أو العلم، أو النعمة، كما تقوله المعطلة — كل هذا باطل.
“কিন্তু এর (আল্লাহর গুণের) ধরন কেমন—তা আমরা জানি না। আমরা বলি না, ‘এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।’ আবার এও বলি না যে, ‘এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নয়।’ কেননা সাব্যস্তকরণ বা নাকচকরণ কোনো দিক থেকেই ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ শব্দ আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহয় বর্ণিত হয়নি। আমরা (আল্লাহর শানে) ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ শব্দ ব্যবহার করি না। যেমন ‘জিসম’ তথা ‘দেহ’। আল্লাহ ‘দেহ’ শব্দকে সাব্যস্ত করেননি, আবার নাকচও করেননি। আমরা এ ব্যাপারে অন্যায় হস্তক্ষেপ করি না। সাব্যস্তকরণ বা নাকচকরণ—কোনো দিক থেকেই যে বিষয়টি বর্ণিত হয়নি, সে ব্যাপারে আমরা তাওয়াক্বকুফ (ক্ষান্ত বা বিরত থাকা) অবলম্বন করি। আমরা এরকম বিষয়ে ক্ষান্ত থাকি। আমরা বলি না, এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। আবার এও বলি না যে, এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নয়।
কেননা আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। কিন্তু (আল্লাহর ‘হাত’ নামক গুণের ব্যাপারে আমরা বলি,) সেটা সত্যিকারার্থেই হাত, যা মহান আল্লাহর জন্য উপযোগী। শ্রবণ ও দর্শন—এমন দুটি গুণ, যা মহান আল্লাহর জন্য উপযোগী। আমরা এটাই বলি। পক্ষান্তরে (আল্লাহর গুণের ব্যাপারে) এরকম বলা যে, তা সৃষ্টিজীবের হাতের মতো, বা সৃষ্টিজীবের শ্রবণের মতো, বা সৃষ্টিজীবের দর্শনের মতো, যেমনটি মুমাসসিলাহ সম্প্রদায় বলে থাকে, অথবা এরকম বলা যে, এসবের অর্থ কুদরত, বা জ্ঞান, বা অনুগ্রহ, যেমনটি মু‘আত্বত্বিলাহ সম্প্রদায় বলে থাকে—এগুলোর সবই বাতিল।” [দ্র.: https://youtu.be/Ae_5Bn_aY88 (শারহুল ফাতাওয়া আল-হামাউয়িয়্যাহর ১৯ নং অডিয়ো ক্লিপ থেকে সংগৃহীত)]
·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহর শানে ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ শব্দদ্বয়ের প্রয়োগ নবআবিষ্কৃত বিদ‘আত। ‘আক্বীদাহ বিশুদ্ধ রাখার জন্য এ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তাই যেসব দা‘ঈ ও বক্তা এই বিদ‘আত প্রচার করেছেন, তাদের উচিত আল্লাহর ওয়াস্তে তওবা করা এবং অনতিবিলম্বে ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়া। দু‘আ করি, আল্লাহ তাঁদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে হক গ্রহণ করার এবং ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়ার তৌফিক দান করুন। আর সর্বোপরি আমাদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaiteউপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহর শানে ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ শব্দদ্বয়ের প্রয়োগ নবআবিষ্কৃত বিদ‘আত। ‘আক্বীদাহ বিশুদ্ধ রাখার জন্য এ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তাই যেসব দা‘ঈ ও বক্তা এই বিদ‘আত প্রচার করেছেন, তাদের উচিত আল্লাহর ওয়াস্তে তওবা করা এবং অনতিবিলম্বে ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়া। দু‘আ করি, আল্লাহ তাঁদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে হক গ্রহণ করার এবং ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়ার তৌফিক দান করুন। আর সর্বোপরি আমাদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
0 Comments